বিশ্বামিত্র মুনি একাকী অযোধ্যায় গেলেন । শয্যাগত রাজা দশরথ একাকী
বিশ্বামিত্রকে আসতে দেখে মহা আতঙ্কগ্রস্ত হল। ভাবল রাম লক্ষণের প্রাণ চলে
গেছে। রাণীরা ভয় পেলো। বিশ্বামিত্র মুনি খুশীর সংবাদ প্রদান করলেন । বললেন-
“রাজন! আপনি ভরত, শত্রুঘ্ন ও আপনার আত্মীয় স্বজন নিয়ে সত্বর মিথিলায় চলুন।
রাম, লক্ষণ সেখানেই আছেন।” শুনে যেনো উৎসবের রোল
পড়ে গেলো সমগ্র অযোধ্যায় । রাণীরা খুশীতে দাস দাসীদের অলঙ্কারাদি অর্থ
উপহার দিলেন । দুন্দুভি, শিঙা, ন্যাকড়া, করতাল , ঢোল বাজতে লাগলো । অযোধ্যা
নগরীতে আনন্দের হিল্লোল বয়ে গেলো । রাজা দশরথ অবিলম্বে আত্মীয় স্বজন,
কুটুম্ব, বান্ধব, পাত্র, মিত্র নিয়ে চললেন মিথিলার উদ্দেশ্যে । হাজার
হস্তী, লক্ষ ঘোড়াসোয়ার , লক্ষ রথ, লক্ষ সেনা নিলেন বরযাত্রী রূপে । ভরত,
শত্রুঘ্নকে বর বেশে সাজানো হল। সোনার উঞ্জীস, হীরক মালা, স্বর্ণ খচিত ধুতি,
হীরক- মণি- মুক্তা খচিত পাদুকা পড়ে ভরত, শত্রুঘ্ন রথে উঠলেন। তিন রাণী ধান
দূর্বা দিয়ে বরযাত্রী প্রেরণ করলেন। উলুধ্বনি, শঙ্খের ধ্বনিতে ও বিবিধ
বাজনায় আকাশ- বাতাস ভরে উঠলো। অযোধ্যার লক্ষ কোটি মানব সাথে বরযাত্রী রূপে
মিথিলায় রওনা দিলো । আতস বাজি, হাউই, ফুলঝুরি আদি শব্দবাজি দিয়ে যেনো
চতুর্দিকে আলোকময় হয়ে উঠলো । নর্তক নর্তকী আগে আগে নৃত্য করতে করতে চলল।
বরযাত্রীরা আনন্দে উল্লাসে চলতে লাগলেন । মিথিলায় পৌছাতে দুই ভ্রাতাকে বরন
করে নিলেন সুনয়না দেবী ও জনকের ভ্রাতা কুশধ্বজ এর পত্নী ।
মার্গশীর্ষ তে শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে মৃগশিরা নক্ষত্রে এই বিবাহ স্থির হয়েছিলো । এই উৎসব “বিবাহ উৎসব” নামে নেপালে এখনও পালিত হয় । বিবাহের দিন উপস্থিত হল। চার ভ্রাতা অতি উত্তম বস্ত্রে সুসজ্জিত হলেন । মিথিলা রাজবাড়ীতে বিবিধ বাজনা বাজতে লাগলো । ঢোল, ন্যাকরা, মৃদঙ্গ, দুন্দুভি, শিঙা, শঙ্খ বাঁজতে লাগলো । স্বর্ণ দ্বারা পরিহিত উঞ্জিস, হীরা- মণি যুক্ত মাল্য , স্বর্ণ দ্বারা খচিত ধুতি পড়ে চার ভ্রাতাকে দেবদূত মনে হতে লাগলো। বর দেখতে মিথিলাবাসীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়লো। সকলে এমন ঠেলাঠেলি করতে লাগলো- যেনো স্বর্গ থেকে ঈশ্বর অমৃত ভাণ্ড নিয়ে বিতরণ করতে উপস্থিত হয়েছেন । চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখেও মনের আশা মেটে না। যত দেখা যায় তত দেখার ইচ্ছার তিনগুন বৃদ্ধি পায় । চার কন্যা উত্তম রেশমি বস্ত্রে সুসজ্জিতা হলেন। নক্ষত্র মণ্ডলের দ্যুতির ন্যায় অলঙ্কারাদি দ্বারা চার বোন সজ্জিতা হলেন । মহর্ষি শতানন্দ ঠিক করলেন গোধূলী লগ্নে রাম সীতার বিবাহ দেবেন, অন্য লগ্নে বাকী তিন ভ্রাতার বিবাহ হবে । কিন্তু দেবতারা দেখলেন গোধূলী লগ্নে বিবাহ হলে রাম সীতার বিচ্ছেদ অসম্ভব । একদিকে যেমন নারদ মুনির শাপ ফলবে না তেমনি রাবণ বধ হবে না। অতএব ঐ লগ্ন নষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন । ইন্দ্রাদি দেবগণ তখন চন্দ্রদেবকে সুন্দরী নর্তকীর বেশে সভায় পাঠালেন । নিশানাথ শশীদেব এক অপূর্ব সুন্দরী নর্তকী সেজেছিলেন । যাঁর ঘুঙুরে মিষ্টি সুরে ত্যাগী পুরুষেরও ব্রহ্মচর্য খণ্ডন হয়। অপূর্ব চাউনি কটাক্ষে কামবাণে জর্জরিত করতে পারে। নরম গোলাপী ঠোট এর মধ্যে বিদ্যুত তরঙ্গ প্রবাহিত। সেই তরঙ্গ বোধ হয় সে মদন দেবের থেকে হরণ করে এনেছে। কালো অমাবস্যার রজনীর ন্যায় কেশ, ফনাধারী নাগিনীর ন্যায় তার কোমল পৃষ্ঠে খেলা করে । সেই নর্তকী এসে সভামাঝে নৃত্য আরম্ভ হল। নৃত্য দেখতে দেখতে সকলেই তন্ময় হয়ে গেলো। গোধূলী লগ্ন পার হয়ে গেলো। হঠাত সেই নর্তকী সভামাঝে অদৃশ্য হলেন । তখন সকলে সচেতন হলেন ।
অন্য লগ্নে চার ভ্রাতার বিবাহ একত্রে ঠিক হল । যথা সেই ক্ষণ আবির্ভূত হল। রামচন্দ্রের সাথে সীতার, ভরতের সাথে মাণ্ডবীর, লক্ষণের সাথে ঊর্মিলার, শত্রুঘ্নের সাথে শ্রুতকীর্তির বিবাহ সম্পন্ন করতে লাগলেন পুরোহিত শতানন্দ। রাজা দশরথ, রাজা জনক দুই মিত্রতে পরস্পরে শুভেচ্ছা কুশল বিনিময় করতে লাগলেন । ভগবানের বিবাহ তে স্বর্গ থেকে দেবতারা সস্ত্রীক মানবের ছদ্দবেশে নেমে এলেন । প্রজাপতি ব্রহ্মা- সরস্বতী দেবী, শিব- গৌরী, নারদ মুনি সকলে ছদ্দবেশে আসলেন । রাজা জনক অভ্যর্থনা জানালেন । মুনি ঋষিরা উপস্থিত হয়েছিলো। পবিত্র মন্ত্র উচ্চারন করে চারভ্রাতার বিবাহ হল। সকল উপস্থিত লোকেরা- সূপ, সুবাসিত অন্ন, পলান্ন, দৈবরা, ঘৃতান্ন, ক্ষীরমঞ্জরী, রসমঞ্জরী, দুগ্ধকদম, শিরা, পুরি, কচুরি, পিষ্টক, জিলাপী, লড্ডু, মোদক, বরফি, অষ্টাকি , মতিচুর, হালুয়া, ক্ষীর, নবনী, উত্তম দহি , ক্ষীরমণ্ড , বোঁদক, গজা- খাঁজা, সারিশি ( ক্ষীর মণ্ড উত্তম রূপে পাক করে চিনি গুর মিশ্রিত করে এক ধরণের মিষ্ট), কদমরস ( এক ধরণের মিষ্ট ), পায়সান্ন , প্যাঁডা, দৈরসা (নারকেল, বাদাম, কাজু, কিসমিস মিশ্রিত ময়াদার মণ্ড এলাচ মিশ্রিত মিষ্ট দুধে ঘন করে জ্বাল করা ) , অম্বল, কর্পূর- মশলাদি সজ্জিত তাম্বুল ( তামিল রামায়ন ) এমন ও আরোও অনেক ব্যাঞ্জন পেট পুড়ে ভোজন করে আবার অনেকে ভোজোনান্তে বাধা ছাঁদা করে নিয়ে গেলো । সকলে খেয়ে ধন্য ধন্য করতে লাগলো। নানারকম গান, বাজনা, নৃত্য ইত্যাদি মিথিলা রাজ্যে অনুষ্ঠিত হতে লাগলো। রাজা প্রচুর দান ধ্যান করলেন ।
( ক্রমশঃ )
মার্গশীর্ষ তে শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথিতে মৃগশিরা নক্ষত্রে এই বিবাহ স্থির হয়েছিলো । এই উৎসব “বিবাহ উৎসব” নামে নেপালে এখনও পালিত হয় । বিবাহের দিন উপস্থিত হল। চার ভ্রাতা অতি উত্তম বস্ত্রে সুসজ্জিত হলেন । মিথিলা রাজবাড়ীতে বিবিধ বাজনা বাজতে লাগলো । ঢোল, ন্যাকরা, মৃদঙ্গ, দুন্দুভি, শিঙা, শঙ্খ বাঁজতে লাগলো । স্বর্ণ দ্বারা পরিহিত উঞ্জিস, হীরা- মণি যুক্ত মাল্য , স্বর্ণ দ্বারা খচিত ধুতি পড়ে চার ভ্রাতাকে দেবদূত মনে হতে লাগলো। বর দেখতে মিথিলাবাসীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়লো। সকলে এমন ঠেলাঠেলি করতে লাগলো- যেনো স্বর্গ থেকে ঈশ্বর অমৃত ভাণ্ড নিয়ে বিতরণ করতে উপস্থিত হয়েছেন । চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখেও মনের আশা মেটে না। যত দেখা যায় তত দেখার ইচ্ছার তিনগুন বৃদ্ধি পায় । চার কন্যা উত্তম রেশমি বস্ত্রে সুসজ্জিতা হলেন। নক্ষত্র মণ্ডলের দ্যুতির ন্যায় অলঙ্কারাদি দ্বারা চার বোন সজ্জিতা হলেন । মহর্ষি শতানন্দ ঠিক করলেন গোধূলী লগ্নে রাম সীতার বিবাহ দেবেন, অন্য লগ্নে বাকী তিন ভ্রাতার বিবাহ হবে । কিন্তু দেবতারা দেখলেন গোধূলী লগ্নে বিবাহ হলে রাম সীতার বিচ্ছেদ অসম্ভব । একদিকে যেমন নারদ মুনির শাপ ফলবে না তেমনি রাবণ বধ হবে না। অতএব ঐ লগ্ন নষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন । ইন্দ্রাদি দেবগণ তখন চন্দ্রদেবকে সুন্দরী নর্তকীর বেশে সভায় পাঠালেন । নিশানাথ শশীদেব এক অপূর্ব সুন্দরী নর্তকী সেজেছিলেন । যাঁর ঘুঙুরে মিষ্টি সুরে ত্যাগী পুরুষেরও ব্রহ্মচর্য খণ্ডন হয়। অপূর্ব চাউনি কটাক্ষে কামবাণে জর্জরিত করতে পারে। নরম গোলাপী ঠোট এর মধ্যে বিদ্যুত তরঙ্গ প্রবাহিত। সেই তরঙ্গ বোধ হয় সে মদন দেবের থেকে হরণ করে এনেছে। কালো অমাবস্যার রজনীর ন্যায় কেশ, ফনাধারী নাগিনীর ন্যায় তার কোমল পৃষ্ঠে খেলা করে । সেই নর্তকী এসে সভামাঝে নৃত্য আরম্ভ হল। নৃত্য দেখতে দেখতে সকলেই তন্ময় হয়ে গেলো। গোধূলী লগ্ন পার হয়ে গেলো। হঠাত সেই নর্তকী সভামাঝে অদৃশ্য হলেন । তখন সকলে সচেতন হলেন ।
অন্য লগ্নে চার ভ্রাতার বিবাহ একত্রে ঠিক হল । যথা সেই ক্ষণ আবির্ভূত হল। রামচন্দ্রের সাথে সীতার, ভরতের সাথে মাণ্ডবীর, লক্ষণের সাথে ঊর্মিলার, শত্রুঘ্নের সাথে শ্রুতকীর্তির বিবাহ সম্পন্ন করতে লাগলেন পুরোহিত শতানন্দ। রাজা দশরথ, রাজা জনক দুই মিত্রতে পরস্পরে শুভেচ্ছা কুশল বিনিময় করতে লাগলেন । ভগবানের বিবাহ তে স্বর্গ থেকে দেবতারা সস্ত্রীক মানবের ছদ্দবেশে নেমে এলেন । প্রজাপতি ব্রহ্মা- সরস্বতী দেবী, শিব- গৌরী, নারদ মুনি সকলে ছদ্দবেশে আসলেন । রাজা জনক অভ্যর্থনা জানালেন । মুনি ঋষিরা উপস্থিত হয়েছিলো। পবিত্র মন্ত্র উচ্চারন করে চারভ্রাতার বিবাহ হল। সকল উপস্থিত লোকেরা- সূপ, সুবাসিত অন্ন, পলান্ন, দৈবরা, ঘৃতান্ন, ক্ষীরমঞ্জরী, রসমঞ্জরী, দুগ্ধকদম, শিরা, পুরি, কচুরি, পিষ্টক, জিলাপী, লড্ডু, মোদক, বরফি, অষ্টাকি , মতিচুর, হালুয়া, ক্ষীর, নবনী, উত্তম দহি , ক্ষীরমণ্ড , বোঁদক, গজা- খাঁজা, সারিশি ( ক্ষীর মণ্ড উত্তম রূপে পাক করে চিনি গুর মিশ্রিত করে এক ধরণের মিষ্ট), কদমরস ( এক ধরণের মিষ্ট ), পায়সান্ন , প্যাঁডা, দৈরসা (নারকেল, বাদাম, কাজু, কিসমিস মিশ্রিত ময়াদার মণ্ড এলাচ মিশ্রিত মিষ্ট দুধে ঘন করে জ্বাল করা ) , অম্বল, কর্পূর- মশলাদি সজ্জিত তাম্বুল ( তামিল রামায়ন ) এমন ও আরোও অনেক ব্যাঞ্জন পেট পুড়ে ভোজন করে আবার অনেকে ভোজোনান্তে বাধা ছাঁদা করে নিয়ে গেলো । সকলে খেয়ে ধন্য ধন্য করতে লাগলো। নানারকম গান, বাজনা, নৃত্য ইত্যাদি মিথিলা রাজ্যে অনুষ্ঠিত হতে লাগলো। রাজা প্রচুর দান ধ্যান করলেন ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন