দেবী দুর্গার নয়টি রূপ। সে গুলো হল --শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী,
চন্দ্রঘণ্টা, কূষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি,
মহাগৌরী,সিদ্ধিদাত্রী।
-
প্রথমং শৈলী পুত্রীতি, দ্বিতীয়ং ব্রহ্মচারিণী।
তৃতীয়ং চন্দ্রঘণ্টেতি, কুষ্মাণ্ডেতি চতুর্থকম্
পঞ্চমং স্কন্দমাতেতি ষষ্ঠং কাত্যায়নী তথা।
সপ্তমং কালরাত্রীতি মহাগৌরীতি অষ্টামম্
নবমং সিদ্ধিদাত্রীতি নবদুর্গাং প্রকীর্তিতার।
উক্তান্যেতানি নামানি ব্রহ্মনৈব মহাত্মনা।
-
---- এভাবে মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত শ্রীশ্রী চণ্ডীর দেবীকবচে ব্রক্ষাবর্ণিত দেবী দুর্গার নয়টি রূপের বর্ণনা করা হয়েছে। এরাই হলো নবদুর্গা। দেবীপক্ষের প্রথম দিনটি থেকে শুরু করে নবমী পর্যন্ত এই নয়টি রূপে পূজিত হন তিনি। নয়টি রূপ হলো ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘন্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রী, মহাগৌরী এবং সিদ্ধিদাত্রী। আর নবদুর্গার এই নয়টি রূপের বর্ণনা করছি।
সতী দেহ ত্যাগের পর, পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা হয়ে পুনরায় জন্মগ্রহণ করেন দেবী পার্বতী। তাই তার নামকরণ করা হয় শৈলপুত্রী। তিনি পার্বতী বা হৈমবতী নামেও পরিচিত। নবদুর্গার প্রথম রূপ হলো এই শৈলপুত্রী। এই রূপে দেবীর হাতে থাকে প্রস্ফুটিত পদ্মফুল আর মাথায় থাকে অর্ধচন্দ্র।
নবশক্তির দ্বিতীয় রূপ হলো ব্রহ্মচারিণী। শিবের সঙ্গে বিয়ের আগে এই রূপে দেবী যোগিনী অথবা তপস্বিনী। মহর্ষি নারীদের প্রভাবে দেবী তপস্যা করেন কয়েক হাজার বছর। এই রূপে তিনি 'অর্পণা' নামেও পরিচিত। দেবীর হাতে থাকে কমণ্ডলু এবং রুদ্রাহ্ম তার অঙ্গভূষণ।
দেবীর তৃতীয় রূপ হলো 'চন্দ্রঘণ্টা'। 'ঘণ্টা' অর্থাৎ দেবীর মুখ। সে অর্থে 'চন্দ্রঘণ্টা' মানে দেবীর মুখ চাঁদের মতোই সুন্দর ও সি্নগ্ধ আলোয় উজ্জ্বল। তার দর্শনেই সকলের মন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু এই রূপে দেবী যুদ্ধোদ্যত। ভক্তদের রক্ষা করতে তিনি অস্ত্রধারণ করেছেন। এই রূপে দেবী 'দশভুজা', আটটি হাত আটটি অস্ত্রে সজ্জিত, বাকি দুই হাতে বরাভয় মুদ্রা।
দেবীর চতুর্থ রূপ হলো 'কুষ্মাণ্ডা', কুষ্মাণ্ডা শব্দটি কু, উষ্ণ, অণ্ড এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়। কু মানে স্বল্প, উষ্ণ মানে গরম এবং অণ্ড বলতে এই বিশ্ব জগৎকে বোঝানো হয়েছে। দেবী নিজ হাসি এবং হাতের পাত্রের রক্ত দিয়ে সৃষ্টি করেন আলোকিত ব্রহ্মাণ্ড। এই রূপে দেবীর গাত্রবর্ণ সূর্য কিরণের মতো উজ্জ্বল। আটটি হাতে দেবী কমণ্ডলু, ধনুক, বাণ, পদ্ম, অমৃতকলস, চক্র, গদা এবং জপমালা ধারণ করেন। স্কন্দমাতা দেবীর পঞ্চম রূপ। পুত্র কার্তিকের অর্থাৎ স্কন্দকে কোলে নিয়ে পদ্মের ওপর উপবিষ্ট দেবী পার্বতী। এ কারণে দেবী স্কন্দমাতা নামে পরিচিত। দেবীর গাত্রবর্ণ স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল। আর পদ্মের ওপর উপবিষ্ট বলে তাকে পদ্মাসনাও বলা হয়। কাত্যায়নী হলো দেবীর ষষ্ঠ রূপ। দেবীর এই রূপের জন্ম নিয়ে দুটি ব্যাখ্যা প্রচলিত। প্রথমটি অনুযায়ী মহর্ষি কাত্যায়নের উপাসনায় খুশি হয়ে তার কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করেন দেবী। তাই তার নাম কাত্যায়নী, দ্বিতীয়টি বলে, মহিষাসুরের অত্যাচার বন্ধ করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ও অন্য দেবতারা মিলে তাদের তেজ দিয়ে তৈরি করেন দেবীকে। মহর্ষি কাত্যায়ন প্রথম তার আরাধনার সুযোগ পান। তাই দেবীর নাম কাত্যায়নী। দেবী কাত্যায়নী দশমীর দিন দানব মহিষাসুরকে বধ করেন। সপ্তম রূপে দেবী ভয়ঙ্করী। এই রূপের নাম কালরাত্রি। দেবীর গায়ের রং ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, গলায় উজ্জ্বল হার, অনেকটা যেন বিদ্যুৎ চমকের মতো! মাথার চুল খোলা, অবিন্যস্ত। দুষ্টের দমন করার জন্যই দেবীর মর্ত্যলোকে আগমন। দেবীর অষ্টম রূপ হলো 'মহাগৌরী'। শিবকে স্বামীরূপে কামনা করে কঠোর তপস্যা করেছিলেন দেবী পার্বতী। তাতে তার গায়ের রং কৃষ্ণবর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব দেবীকে দেখা দেন এবং তপস্যাজনিত ক্লান্তি এবং কালিমা দূর করতে তাকে গঙ্গাজলে স্নান করান। এতেই দেবী গৌরবর্ণা হয়ে ওঠেন। তখন তার নাম হয় মহাগৌরী। দেবীর বস্ত্রও শ্বেত, তার হাতে থাকে ডমরু। দেবীর নবম রূপ সিদ্ধিদাত্রী। এই রূপে সি্নগ্ধা, গন্ধর্ব, যহ্ম, অসুর এবং দেবতাদের দ্বারা পূজিত হন দেবী। কথিত আছে, মহাদেব দেবীর এই রূপের তপস্যা করেই অর্ধ নারীশ্বর হয়েছিলেন।
নবদুর্গা যে রূপেই মর্ত্যলোকে আসুন না কেন তা তার ভক্তদের কাছে কামনীয় ও মঙ্গলময়। দেবী তার রূপ ও গুণে তার ভক্তদের রক্ষা করেছেন সকল অশুভ শক্তির কাছ থেকে।
Written by: Prithwish Ghosh
-
প্রথমং শৈলী পুত্রীতি, দ্বিতীয়ং ব্রহ্মচারিণী।
তৃতীয়ং চন্দ্রঘণ্টেতি, কুষ্মাণ্ডেতি চতুর্থকম্
পঞ্চমং স্কন্দমাতেতি ষষ্ঠং কাত্যায়নী তথা।
সপ্তমং কালরাত্রীতি মহাগৌরীতি অষ্টামম্
নবমং সিদ্ধিদাত্রীতি নবদুর্গাং প্রকীর্তিতার।
উক্তান্যেতানি নামানি ব্রহ্মনৈব মহাত্মনা।
-
---- এভাবে মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত শ্রীশ্রী চণ্ডীর দেবীকবচে ব্রক্ষাবর্ণিত দেবী দুর্গার নয়টি রূপের বর্ণনা করা হয়েছে। এরাই হলো নবদুর্গা। দেবীপক্ষের প্রথম দিনটি থেকে শুরু করে নবমী পর্যন্ত এই নয়টি রূপে পূজিত হন তিনি। নয়টি রূপ হলো ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘন্টা, কুষ্মাণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রী, মহাগৌরী এবং সিদ্ধিদাত্রী। আর নবদুর্গার এই নয়টি রূপের বর্ণনা করছি।
সতী দেহ ত্যাগের পর, পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা হয়ে পুনরায় জন্মগ্রহণ করেন দেবী পার্বতী। তাই তার নামকরণ করা হয় শৈলপুত্রী। তিনি পার্বতী বা হৈমবতী নামেও পরিচিত। নবদুর্গার প্রথম রূপ হলো এই শৈলপুত্রী। এই রূপে দেবীর হাতে থাকে প্রস্ফুটিত পদ্মফুল আর মাথায় থাকে অর্ধচন্দ্র।
নবশক্তির দ্বিতীয় রূপ হলো ব্রহ্মচারিণী। শিবের সঙ্গে বিয়ের আগে এই রূপে দেবী যোগিনী অথবা তপস্বিনী। মহর্ষি নারীদের প্রভাবে দেবী তপস্যা করেন কয়েক হাজার বছর। এই রূপে তিনি 'অর্পণা' নামেও পরিচিত। দেবীর হাতে থাকে কমণ্ডলু এবং রুদ্রাহ্ম তার অঙ্গভূষণ।
দেবীর তৃতীয় রূপ হলো 'চন্দ্রঘণ্টা'। 'ঘণ্টা' অর্থাৎ দেবীর মুখ। সে অর্থে 'চন্দ্রঘণ্টা' মানে দেবীর মুখ চাঁদের মতোই সুন্দর ও সি্নগ্ধ আলোয় উজ্জ্বল। তার দর্শনেই সকলের মন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু এই রূপে দেবী যুদ্ধোদ্যত। ভক্তদের রক্ষা করতে তিনি অস্ত্রধারণ করেছেন। এই রূপে দেবী 'দশভুজা', আটটি হাত আটটি অস্ত্রে সজ্জিত, বাকি দুই হাতে বরাভয় মুদ্রা।
দেবীর চতুর্থ রূপ হলো 'কুষ্মাণ্ডা', কুষ্মাণ্ডা শব্দটি কু, উষ্ণ, অণ্ড এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়। কু মানে স্বল্প, উষ্ণ মানে গরম এবং অণ্ড বলতে এই বিশ্ব জগৎকে বোঝানো হয়েছে। দেবী নিজ হাসি এবং হাতের পাত্রের রক্ত দিয়ে সৃষ্টি করেন আলোকিত ব্রহ্মাণ্ড। এই রূপে দেবীর গাত্রবর্ণ সূর্য কিরণের মতো উজ্জ্বল। আটটি হাতে দেবী কমণ্ডলু, ধনুক, বাণ, পদ্ম, অমৃতকলস, চক্র, গদা এবং জপমালা ধারণ করেন। স্কন্দমাতা দেবীর পঞ্চম রূপ। পুত্র কার্তিকের অর্থাৎ স্কন্দকে কোলে নিয়ে পদ্মের ওপর উপবিষ্ট দেবী পার্বতী। এ কারণে দেবী স্কন্দমাতা নামে পরিচিত। দেবীর গাত্রবর্ণ স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল। আর পদ্মের ওপর উপবিষ্ট বলে তাকে পদ্মাসনাও বলা হয়। কাত্যায়নী হলো দেবীর ষষ্ঠ রূপ। দেবীর এই রূপের জন্ম নিয়ে দুটি ব্যাখ্যা প্রচলিত। প্রথমটি অনুযায়ী মহর্ষি কাত্যায়নের উপাসনায় খুশি হয়ে তার কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করেন দেবী। তাই তার নাম কাত্যায়নী, দ্বিতীয়টি বলে, মহিষাসুরের অত্যাচার বন্ধ করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ও অন্য দেবতারা মিলে তাদের তেজ দিয়ে তৈরি করেন দেবীকে। মহর্ষি কাত্যায়ন প্রথম তার আরাধনার সুযোগ পান। তাই দেবীর নাম কাত্যায়নী। দেবী কাত্যায়নী দশমীর দিন দানব মহিষাসুরকে বধ করেন। সপ্তম রূপে দেবী ভয়ঙ্করী। এই রূপের নাম কালরাত্রি। দেবীর গায়ের রং ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, গলায় উজ্জ্বল হার, অনেকটা যেন বিদ্যুৎ চমকের মতো! মাথার চুল খোলা, অবিন্যস্ত। দুষ্টের দমন করার জন্যই দেবীর মর্ত্যলোকে আগমন। দেবীর অষ্টম রূপ হলো 'মহাগৌরী'। শিবকে স্বামীরূপে কামনা করে কঠোর তপস্যা করেছিলেন দেবী পার্বতী। তাতে তার গায়ের রং কৃষ্ণবর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে শিব দেবীকে দেখা দেন এবং তপস্যাজনিত ক্লান্তি এবং কালিমা দূর করতে তাকে গঙ্গাজলে স্নান করান। এতেই দেবী গৌরবর্ণা হয়ে ওঠেন। তখন তার নাম হয় মহাগৌরী। দেবীর বস্ত্রও শ্বেত, তার হাতে থাকে ডমরু। দেবীর নবম রূপ সিদ্ধিদাত্রী। এই রূপে সি্নগ্ধা, গন্ধর্ব, যহ্ম, অসুর এবং দেবতাদের দ্বারা পূজিত হন দেবী। কথিত আছে, মহাদেব দেবীর এই রূপের তপস্যা করেই অর্ধ নারীশ্বর হয়েছিলেন।
নবদুর্গা যে রূপেই মর্ত্যলোকে আসুন না কেন তা তার ভক্তদের কাছে কামনীয় ও মঙ্গলময়। দেবী তার রূপ ও গুণে তার ভক্তদের রক্ষা করেছেন সকল অশুভ শক্তির কাছ থেকে।
Written by: Prithwish Ghosh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন