ভগবান রাম ধীরে ধীরে বড় হচ্ছিল্লেন দশরথ রাজার গৃহে । হামাগুড়ি ছেড়ে ভগবান রাম ধীরে ধীরে হাঁটা শিখলেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেমন তাঁর মুখে বিশ্বরূপ দেখিয়েছিলেন মাতা যশোদাকে, তেমনি তুলসীদাস গোস্বামী মহারাজ একটি তেমন কাণ্ডের উল্লেখ করেছেন । একদা কৌশল্যা দেবী শ্রী সূর্য নারায়ণকে ভোগ নিবেদন করে এসে দেখেন তাঁর আদরের রাম দোলনাতে শয়ন করে মৃদু মৃদু হাসছে । ভগবান রামের সেই অনুপম হাসিতে ত্রিভুবন মোহিত হয়ে যায় । পুনঃ কৌশল্যা দেবী ঠাকুর ঘরে গিয়ে দেখেন শিশু রাম সেই নারায়ণকে প্রদত্ত নৈবদ্য সেবা নিচ্ছেন । এই দৃশ্য দেখে রানী ভয় পেয়ে এসে দেখেন শিশু রাম আগের মতোই দোলনাতে শয়ন করে হাস্য করছেন, পুনঃ ঠাকুর ঘরে গিয়ে দেখেন শিশু রাম সেই নৈবদ্য খাচ্ছেন । বার কয়েক এই দৃশ্য দেখে রাণী ভয় পান। তখন শ্রীরাম , রাণীকে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড দর্শন করান । পুনঃ যোগমায়া শক্তি অবলম্বনে কৌশল্যার সেই স্মৃতি বিলুপ্ত করেন । মাতা কৌশল্যা শিশু রামকে ক্রোড়ে নিয়ে বাৎসল্য, স্তন্য দুগ্ধ প্রদান করেন । শিশুরা যেমন মায়ের ক্রোড়ে অবস্থান করেন, মা তাহাদের চন্দ্র দর্শন করে ঘুমপাড়ানি সঙ্গীত গুনগুন করে গেয়ে চলেন, তেমনি মাতা কৌশল্যা শিশু রামকে নিয়ে সেই চন্দ্র দর্শন করাতেন । শিশু রামকে দেখে রোহিনীপতি নিশানাথ প্রনাম জানিয়ে চন্দ্রালোকের মাধ্যমে ভগবানের চরণ স্পর্শ করতেন । একটু একটু করে চার ভ্রাতা হাঁটা শিখছিলেন । রাজা দশরথের হাত ধরে শিশু রামচন্দ্র হাঁটছেন, আবার পড়ে যাচ্ছেন। রাজা এসে রামচন্দ্রকে ক্রোড়ে নিয়ে তাঁর ক্রন্দন সামলাচ্ছেন । পদ্ম পুস্পের ন্যায় রামচন্দ্রের নয়ন থেকে মুক্তাধারার মতো পতিত অশ্রুবিন্দু রাজা দশরথ মুছিয়ে পুত্রকে স্নেহে চুম্বন করছেন । সন্ত তুলসী দাস গোস্বামী সুন্দর একটি ভজন গেয়েছেন-
ঠুমকি চলত রামচন্দ্র বাজত পৈঁজানিয়াঁ ।
কিলকিলাই উঠত ধায়, গিরত ভূমি লটপটায় ;
ধায়ী মাতু গোদ লেত দশরথকী রানিয়াঁ ।
তুলসীদাস অতি আনন্দ হেরত মুখারবিন্দ ;
রঘুবরকী ছবি সমান রঘুবর ছবি বাণিয়াঁ ।।
অঙ্গ রজঃ অঙ্গলাই, বিবিধ ভাঁতি সোঁ দুলার ।
তন মন ধন বার বার কহত মৃদু বাণিয়াঁ ।।
শ্রীরামচন্দ্র অল্প অল্প হাঁটা শিখছেন । তাঁর চরণের মল, কোমোরের বন্ধনী বেজে উঠতো। হাঁটা শিখতে শিখতে বাচ্চা পড়ে যায়। সেই মতো রামচন্দ্র পড়ে গেলে , দশরথের তিন রাণী ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসতেন । কে আগে ক্রোড়ে নেবে , তাঁর জন্যই এই ছুটে আসা, ব্যাকুলতা । প্রথম স্নেহ কৈকয়ী দিতেন ।
চার ভ্রাতার দন্ত দেখা দিলো। শিশু রামের হালকা রক্তাভ অধর দ্বয়ের মধ্যে মুক্তা বিন্দুর মতো দন্ত দেখা দিলো । অতএব অন্নপ্রাশন প্রয়োজন । অযোধ্যা রাজ্যে চার ভ্রাতার অন্নপ্রাশন হল । কুলগুরু বশিষ্ঠ ও অনেক মুনি ঋষি শিষ্য সমেত পদার্পণ করলেন । যজ্ঞাদি, পূজা, দান , বিতরণ, বিশাল ভোজের ব্যবস্থা করা হল। কুলগুরু সূর্যনারায়নের পূজা করে চার ভ্রাতার মুখে অন্ন দিলেন । রাজার হস্ত থেকে অন্ন নিলেন রামচন্দ্র । এভাবে অন্নপ্রাশন সমাপ্ত হল । শিশু রামকে দেখতে ভীর উপচে পড়লো । মাতা কৌশল্যা বিবিধ খাদ্য- ক্ষীর, নবনী, মাখন, সর, দুগ্ধ , দধি , লাড্ডু, মোদক বিবিধ মিষ্টান্ন শ্রীরামের মুখে দিতেন । রাণী কৈকয়ী মাঝে মাঝে ভরত কে বিস্মৃত হয়ে রামচন্দ্রকে অনেক আদর বাৎসল্য প্রদান করতেন । কৈকয়ীর দাসী মন্থরা এসব দেখে হিংসায় জ্বলতে লাগলো ।
( ক্রমশঃ )
ঠুমকি চলত রামচন্দ্র বাজত পৈঁজানিয়াঁ ।
কিলকিলাই উঠত ধায়, গিরত ভূমি লটপটায় ;
ধায়ী মাতু গোদ লেত দশরথকী রানিয়াঁ ।
তুলসীদাস অতি আনন্দ হেরত মুখারবিন্দ ;
রঘুবরকী ছবি সমান রঘুবর ছবি বাণিয়াঁ ।।
অঙ্গ রজঃ অঙ্গলাই, বিবিধ ভাঁতি সোঁ দুলার ।
তন মন ধন বার বার কহত মৃদু বাণিয়াঁ ।।
শ্রীরামচন্দ্র অল্প অল্প হাঁটা শিখছেন । তাঁর চরণের মল, কোমোরের বন্ধনী বেজে উঠতো। হাঁটা শিখতে শিখতে বাচ্চা পড়ে যায়। সেই মতো রামচন্দ্র পড়ে গেলে , দশরথের তিন রাণী ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসতেন । কে আগে ক্রোড়ে নেবে , তাঁর জন্যই এই ছুটে আসা, ব্যাকুলতা । প্রথম স্নেহ কৈকয়ী দিতেন ।
চার ভ্রাতার দন্ত দেখা দিলো। শিশু রামের হালকা রক্তাভ অধর দ্বয়ের মধ্যে মুক্তা বিন্দুর মতো দন্ত দেখা দিলো । অতএব অন্নপ্রাশন প্রয়োজন । অযোধ্যা রাজ্যে চার ভ্রাতার অন্নপ্রাশন হল । কুলগুরু বশিষ্ঠ ও অনেক মুনি ঋষি শিষ্য সমেত পদার্পণ করলেন । যজ্ঞাদি, পূজা, দান , বিতরণ, বিশাল ভোজের ব্যবস্থা করা হল। কুলগুরু সূর্যনারায়নের পূজা করে চার ভ্রাতার মুখে অন্ন দিলেন । রাজার হস্ত থেকে অন্ন নিলেন রামচন্দ্র । এভাবে অন্নপ্রাশন সমাপ্ত হল । শিশু রামকে দেখতে ভীর উপচে পড়লো । মাতা কৌশল্যা বিবিধ খাদ্য- ক্ষীর, নবনী, মাখন, সর, দুগ্ধ , দধি , লাড্ডু, মোদক বিবিধ মিষ্টান্ন শ্রীরামের মুখে দিতেন । রাণী কৈকয়ী মাঝে মাঝে ভরত কে বিস্মৃত হয়ে রামচন্দ্রকে অনেক আদর বাৎসল্য প্রদান করতেন । কৈকয়ীর দাসী মন্থরা এসব দেখে হিংসায় জ্বলতে লাগলো ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন