রাণী কৌশল্যা, সুমিত্রা , মন্ত্রী সুমন্ত্র ও রাজার পাত্র মিত্র দেখলেন
রাজা অসুস্থ । হঠাত এত খুশীর সময়ে রাজা অসুস্থ কেন হলেন বুঝলেন না ।
অপরদিকে কৈকয়ীর অদ্ভুত রূপ, আচরণ দেখে রাজবাটির সকলেই অবাক আশ্চর্য হলেন।
কৈকয়ী কারো সাথে কথা বলে না। কেবল দ্বার এটে মন্থরার সাথে পরামর্শ করে ।
সম্পূর্ণ অলঙ্কার বিবর্জিতা অলক্ষ্মীর
ন্যায় কৈকয়ীকে দেখে এক হিংস্র সর্বগ্রাসীর ন্যায় বোধ হয় । কৌশল্যা, রাণী
সুমিত্রা সকলে রাজার কাছে জানতে চান কি হয়েছে ? রাজা দশরথ আর কতক্ষণ চুপচাপ
থাকেন। একসময় বলেই দিলেন তাঁর প্রতিজ্ঞার কথা, কৈকয়ীর ইচ্ছা । কৌশল্যা,
সুমিত্রা রাজার মন্ত্রী সেনাপতি এই ভেবে অবাক হন । কুলগুরু বশিষ্ঠ এই শুনে
আশ্চর্য হলেন । শুনে সকলেই ভয়গ্রস্ত হয়। রামচন্দ্র তো নয়নের মণি । নয়ন আছে
দেখেই পৃথিবী সুন্দর, নয়নহীনের কাছে সব অন্ধকার। রামচন্দ্র অযোধ্যা ত্যাগ
করলে এই অন্ধকার জীবন রেখে কি লাভ ? দুর্ভাগা সে যে নয়ন থাকতেও
রামচন্দ্রকে দর্শন করে না। অন্ধ যদি রামচন্দ্রের স্পর্শ, বাক্য শ্রবণের
সান্নিধ্যে আসে তবে সে ধন্য আর ভাগ্যবাণ- সেই যথার্থ জীবিত । কৈকয়ী কেন
সকলের প্রাণ কে কেড়ে নিয়ে ‘জীবিত শবদেহ’ বানাতে চাইছে ? কৈকয়ী কেন সকলকে
অন্ধ বানাতে চাইছে ? কৈকয়ী সুস্থ তো, নাকি কৈকয়ীর ছদ্দবেশে রঘুবংশের কোন
প্রাচীন শত্রু ? নাকি নিশাচর রাক্ষসী কৈকয়ীর ছদ্দবেশে? নাকি কোন দুষ্ট
মায়াবলে কৈকয়ীর মধ্যে থেকে সকল প্রকার শুভ চিন্তা হরণ করেছে? কৌশল্যা,
সুমিত্রা বোঝাতে গেলো কৈকয়ীকে । রাণী দ্বয় বলল- “কৈকয়ী। তুমি সর্বদা রামকে
নিজ পুত্র বলে আদর স্নেহ করতে ? আজ তোমার সেই আদর যত্ন কোথায় লুপ্ত হল?
তবে সেগুলো কি কেবল তোমার অভিনয়?”
কৈকয়ী বলল- “নিজ পুত্রের সুরক্ষা করা মাতার প্রধান কর্তব্য ? আমি কি এমন অন্যায় আবদার করেছি ? ভরতের সুরক্ষা প্রদান করা আমার প্রধান কর্তব্য । কেন রাম রাজা হবে? ভরত কোন অংশে কম ? ভরত কি যোগোত্যাহীন ? কেন কৌশল্যা তুমি রাজমাতা হবে? আমি হবো না কেন? আমি নিজ পুত্রের জীবন সুরক্ষিত করবার কর্ম করেছি। আমি কোনরূপ আন্যায় আবদার করি নি।” রাজা দশরথ অনেক বোঝালো, “এমন অন্যায় আবদার ফিরিয়ে নাও । এমন কদাপি করো না। রাম তোমাকেই মা রূপে নিজ গর্ভধারিণী কৌশল্যা থেকেও অধিক উচ্চাসনে স্থাপন করে, সেই রামের সাথে অন্যায় করতে তোমার বিবেকে বাধে না ?” কৈকয়ী বলল- “মহারাজ ! আমাকে ভুললে চলবে না ভরত আমার গর্ভজাত। রাম যতই আমাকে মাতৃভক্তি করুক, কিন্তু ভরত আমার গর্ভের। আমি রামকে গর্ভে ধারন করি নি। সে আমার সতীনের গর্ভজাত- একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না? তবে সতীনের পুত্রের উপর ভরসা কি? যদি রাজা হবার পর যদি সে আমাকে আর আমার গর্ভের সন্তান ভরতকে বিতারিত করে তবে আমাদের গতি কি হবে? আপনি নিজেও তো অন্যায় করেছেন। আপনি রামকে এতই স্নেহ করেন যে ভরত আপনার পুত্র – এটা বিস্মৃত হয়েছেন। কেন আপনি ভরতের অনুপস্থিতিতে রামের রাজ্যাভিষেক করালেন ? এর অর্থ কি? আপনি জীবিত থাকতেই যদি এমন অন্যায় হয় , তবে আগামীকালে আমার আর আমার গর্ভজাত পুত্র ভরতের জীবন যে অন্ধকারময় হবে- এতে সন্দেহ কি? ভরত আমার গর্ভজাত, রাম নয় ।” রাজা দশরথ বললেন- “কুটিল নাগিনী। তোমার গর্ভ থেকে ভরতের ন্যায় সর্প উৎপন্ন হবে, এতে আর সন্দেহ কি? রামের ন্যায় রত্ন কদাপি তোমার গর্ভ থেকে উৎপন্ন হতে পারে না। বোধ হয় ভরত মাতুলালয়ে যাবার পূর্বে তোমাকে কুবুদ্ধি দিয়েছে। সেও কি বিস্মৃত হয়েছে যে রামচন্দ্র তার ভ্রাতা ভরতকে কত স্নেহ করে? তোমরা জননী- পুত্র উভয়েই সর্বনাশের হোতা। ভুল করেছি আমি তোমাকে বর দেবার প্রতিজ্ঞা করে। তোমাদের শাস্তি প্রদান করা উচিৎ।”
পুনঃ দশরথ শান্ত হয়ে বললেন- “হে কৈকয়ী! তোমার প্রথম ইচ্ছা আমি পূর্ণ করবো। কিন্তু রামকে বনবাসে প্রেরণ করতে বোলো না। রাম বিনা অযোধ্যা অন্ধকার, এই রাজমহল অন্ধকার, আমি অন্ধকার। সে বরং এখানেই থাক।” কৈকয়ী বলল- “মহারাজ। সেও সম্ভব না। আমি জানি এতে আপনার এবং আপনার বড় রাণীর কষ্ট হবে। ক্লেশ আমিও ভোগ করবো। কারণ রামচন্দ্র আমারও সন্তান । কিন্তু মহারাজ আমি ভরতের রাজ আসন নিষ্কণ্টক করতে চাই। আমি চাই না রাম বিদ্রোহ ঘটিয়ে ভরতকে হত্যা করে পুনঃ সিংহাসন অধিষ্ঠান করুন। অযোধ্যা, মিথিলা, নিষাদ রাজ্যে রামচন্দ্রের জনপ্রিয়তা অত্যাধিক। এই অবস্থায় গোপোনে ষড়যন্ত্র করে রামচন্দ্র যে কোন মুহূর্তে আমার সন্তানকে হত্যা করতে পারে। মহারাজ! সিংহাসন এমন , যাঁর জন্য মানুষ তো দূর দেবতারাও অপরাধ করেন। আপনি কি বিস্মৃত হয়েছেন স্বয়ং দেবতাদের সম্রাট ইন্দ্র , তাঁর বিমাতা দিতির গর্ভস্থ সন্তান কে হত্যা করেছিলো। সেজন্য এই সব ব্যবস্থা । অতএব আপনি রামচন্দ্রকে সব বলে এখুনি বনে প্রেরণ করুন। আর ভরতকে মাতুলালয় থেকে এনে রাজা করে দিন। আপনার বয়স হয়েছে। এবার আপনি আপনার পুত্র ভরতকে রাজা বানিয়ে বিশ্রাম নিন। ” শুনে কৌশল্যা, সুমিত্রা কৈকয়ীকে অনেক বকা ঝকা করতে লাগলো। অনেক কাকুতি মিনতি করলো। কৈকয়ী নিজ জেদে অটল। কিছুতেই মানলো না । দশরথ কৈকয়ীকে বলল- “তুমি মহাপাপিষ্ঠা। তোমার মনে বিষ। বিষাক্ত নাগিনী যেভাবে বিষ উদ্গীরন করে, সেইভাবেই তুমি বিষবাক্য নির্গত করছ। আমি তোমাকে রানীদিগের মধ্যে সর্বাধিক প্রেম নিবেদন করতাম। আজ জানলাম আমি মহামূর্খ । তোমার ন্যায় কুটিলা রমণীকে বিবাহ করাই আমার সব থেকে বড় ভুল। তুমি দূর হও। তোমার মুখ যে দেখবে তার হৃদয়ের সকল মানবতা ধ্বংস হবে।”
( ক্রমশঃ )
কৈকয়ী বলল- “নিজ পুত্রের সুরক্ষা করা মাতার প্রধান কর্তব্য ? আমি কি এমন অন্যায় আবদার করেছি ? ভরতের সুরক্ষা প্রদান করা আমার প্রধান কর্তব্য । কেন রাম রাজা হবে? ভরত কোন অংশে কম ? ভরত কি যোগোত্যাহীন ? কেন কৌশল্যা তুমি রাজমাতা হবে? আমি হবো না কেন? আমি নিজ পুত্রের জীবন সুরক্ষিত করবার কর্ম করেছি। আমি কোনরূপ আন্যায় আবদার করি নি।” রাজা দশরথ অনেক বোঝালো, “এমন অন্যায় আবদার ফিরিয়ে নাও । এমন কদাপি করো না। রাম তোমাকেই মা রূপে নিজ গর্ভধারিণী কৌশল্যা থেকেও অধিক উচ্চাসনে স্থাপন করে, সেই রামের সাথে অন্যায় করতে তোমার বিবেকে বাধে না ?” কৈকয়ী বলল- “মহারাজ ! আমাকে ভুললে চলবে না ভরত আমার গর্ভজাত। রাম যতই আমাকে মাতৃভক্তি করুক, কিন্তু ভরত আমার গর্ভের। আমি রামকে গর্ভে ধারন করি নি। সে আমার সতীনের গর্ভজাত- একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না? তবে সতীনের পুত্রের উপর ভরসা কি? যদি রাজা হবার পর যদি সে আমাকে আর আমার গর্ভের সন্তান ভরতকে বিতারিত করে তবে আমাদের গতি কি হবে? আপনি নিজেও তো অন্যায় করেছেন। আপনি রামকে এতই স্নেহ করেন যে ভরত আপনার পুত্র – এটা বিস্মৃত হয়েছেন। কেন আপনি ভরতের অনুপস্থিতিতে রামের রাজ্যাভিষেক করালেন ? এর অর্থ কি? আপনি জীবিত থাকতেই যদি এমন অন্যায় হয় , তবে আগামীকালে আমার আর আমার গর্ভজাত পুত্র ভরতের জীবন যে অন্ধকারময় হবে- এতে সন্দেহ কি? ভরত আমার গর্ভজাত, রাম নয় ।” রাজা দশরথ বললেন- “কুটিল নাগিনী। তোমার গর্ভ থেকে ভরতের ন্যায় সর্প উৎপন্ন হবে, এতে আর সন্দেহ কি? রামের ন্যায় রত্ন কদাপি তোমার গর্ভ থেকে উৎপন্ন হতে পারে না। বোধ হয় ভরত মাতুলালয়ে যাবার পূর্বে তোমাকে কুবুদ্ধি দিয়েছে। সেও কি বিস্মৃত হয়েছে যে রামচন্দ্র তার ভ্রাতা ভরতকে কত স্নেহ করে? তোমরা জননী- পুত্র উভয়েই সর্বনাশের হোতা। ভুল করেছি আমি তোমাকে বর দেবার প্রতিজ্ঞা করে। তোমাদের শাস্তি প্রদান করা উচিৎ।”
পুনঃ দশরথ শান্ত হয়ে বললেন- “হে কৈকয়ী! তোমার প্রথম ইচ্ছা আমি পূর্ণ করবো। কিন্তু রামকে বনবাসে প্রেরণ করতে বোলো না। রাম বিনা অযোধ্যা অন্ধকার, এই রাজমহল অন্ধকার, আমি অন্ধকার। সে বরং এখানেই থাক।” কৈকয়ী বলল- “মহারাজ। সেও সম্ভব না। আমি জানি এতে আপনার এবং আপনার বড় রাণীর কষ্ট হবে। ক্লেশ আমিও ভোগ করবো। কারণ রামচন্দ্র আমারও সন্তান । কিন্তু মহারাজ আমি ভরতের রাজ আসন নিষ্কণ্টক করতে চাই। আমি চাই না রাম বিদ্রোহ ঘটিয়ে ভরতকে হত্যা করে পুনঃ সিংহাসন অধিষ্ঠান করুন। অযোধ্যা, মিথিলা, নিষাদ রাজ্যে রামচন্দ্রের জনপ্রিয়তা অত্যাধিক। এই অবস্থায় গোপোনে ষড়যন্ত্র করে রামচন্দ্র যে কোন মুহূর্তে আমার সন্তানকে হত্যা করতে পারে। মহারাজ! সিংহাসন এমন , যাঁর জন্য মানুষ তো দূর দেবতারাও অপরাধ করেন। আপনি কি বিস্মৃত হয়েছেন স্বয়ং দেবতাদের সম্রাট ইন্দ্র , তাঁর বিমাতা দিতির গর্ভস্থ সন্তান কে হত্যা করেছিলো। সেজন্য এই সব ব্যবস্থা । অতএব আপনি রামচন্দ্রকে সব বলে এখুনি বনে প্রেরণ করুন। আর ভরতকে মাতুলালয় থেকে এনে রাজা করে দিন। আপনার বয়স হয়েছে। এবার আপনি আপনার পুত্র ভরতকে রাজা বানিয়ে বিশ্রাম নিন। ” শুনে কৌশল্যা, সুমিত্রা কৈকয়ীকে অনেক বকা ঝকা করতে লাগলো। অনেক কাকুতি মিনতি করলো। কৈকয়ী নিজ জেদে অটল। কিছুতেই মানলো না । দশরথ কৈকয়ীকে বলল- “তুমি মহাপাপিষ্ঠা। তোমার মনে বিষ। বিষাক্ত নাগিনী যেভাবে বিষ উদ্গীরন করে, সেইভাবেই তুমি বিষবাক্য নির্গত করছ। আমি তোমাকে রানীদিগের মধ্যে সর্বাধিক প্রেম নিবেদন করতাম। আজ জানলাম আমি মহামূর্খ । তোমার ন্যায় কুটিলা রমণীকে বিবাহ করাই আমার সব থেকে বড় ভুল। তুমি দূর হও। তোমার মুখ যে দেখবে তার হৃদয়ের সকল মানবতা ধ্বংস হবে।”
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন