কর্মের আক্ষরিক অর্থ হল কার্য, ক্রিয়া অথবা করণ এবং বলা যেতে পারে এটি হল "কারণ এবং করণের (কার্যের) নৈতিক ধর্ম"। উপনিষদ্ মতে একজন মানুষ (অর্থাত্ জীবত্মা) সংস্কার (লব্ধ জ্ঞান) অর্জন করে তার শারিরীক ও মানসিক কর্মের মধ্যে দিয়ে। মানুষের মৃত্যুর পর সমস্ত সংস্কারগুলি যথাযথ ভাবে তার লিঙ্গ-শরীরে (যে শরীর রক্ত-মাংসের শরীর থেকে সুক্ষ অথচ আত্মার থেকে স্থূল) বিদ্যমান থাকে এবং পরজন্মে তার সুনির্দিষ্ট কক্ষপথ তৈরী করে। সুতরাং, একটি সর্বজনীন, নিরপেক্ষ, এবং অব্যর্থ কর্মের ধারণা মানুষের পুনর্জন্মলাভের সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যক্তিত্ব, বৈশিষ্ট্য, এবং পরিবার সম্পর্কিত ধারণার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও ভাগ্য প্রভৃতি ধারণাগুলিকে কর্ম একত্রে সংযুক্ত করেছে।
কার্য, কারণ, জন্ম, মৃত্যু এবং পুনর্জন্মের বৃত্তাকার পরম্পরাই হল সংসার। দেহধারণ এবং কর্মফল ধারণা সম্পর্কে হিন্দুধর্মে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ চিন্তার প্রকাশ দেখা যায়। শ্রীমদ্ভগ্বতগীতায় বলা হয়েছে --
-
বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
নবানি গৃহ্নাতি নরোহপরাণি।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণা
ন্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী। -- (শ্রীমদ্ভগ্বতগীতা, দ্বিতীয় অধ্যায়, ২২)
-
[ব্যখ্যা: মানুষ যেমন জীর্ণ-শীর্ণ পুরোনো বস্ত্রগুলি ত্যাগ করে অন্য নতুন বস্ত্র গ্রহণ করে, সেইরূপ জীবাত্মা পুরোনো শরীর ত্যাগ করে অন্য নতুন শরীর গ্রহণ করে। (শ্রীমদ্ভগ্বতগীতা, দ্বিতীয় অধ্যায়, ২২)]
-
যেখানে সংসার ক্ষণিকের আনন্দ দেয়, যা মানুষকে আরেকটি বিনাশশীল শরীর পরিগ্রহ করতে উত্সাহী করে। সেখানে মোক্ষ এই সংসারের গণ্ডী থেকে মুক্ত হয়ে চির আনন্দ ও শান্তির বিশ্বাস প্রদান করে। হিন্দুধর্মের বিশ্বাস যে অনেকগুলি জন্মান্তরের পর অবশেষে জীবাত্মা মহাজাগতিক আত্মায় (ব্রহ্ম/পরমাত্মা) মিলিত হতে ব্যাকুল হয়।
জীবনের চরম লক্ষ্যকে (চরম লক্ষ্য বলতে এখানে মোক্ষ অথবা নির্বাণ অথবা সমাধি) বিভিন্ন ভাবে বোঝানো হয়েছে: যেমন ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্মতার বোধ; যেমন ঈশ্বরের সঙ্গে অবিছ্যেদ্য সম্পর্কের বোধ; যেমন সমস্ত বস্তুর সম্পর্কে অদ্বৈত বোধ; যেমন আত্ম বিষয়ক বিশুদ্ধ নিস্বার্থতা ও জ্ঞান; যেমন নিখুঁত মানসিক শান্তিলাভ; এবং যেমন পার্থিব বাসনার থেকে অনাসক্তি বোধ। এই ধরনের উপলব্ধি মানুষকে সংসার এবং পুনর্জন্মের বন্ধন থেকে মুক্ত করে। আত্মার অবিনশ্বরতায় বিশ্বাস থাকার ফলে, মৃত্যুকে পরমাত্মার তুলনায় নেহাত্ই তুচ্ছ মনে হয়। অতঃপর, একজন ব্যক্তি যার কোন ইচ্ছা বা উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাকি নেই এবং জীবনের কোন দায়িত্বই বাকি নেই অথবা একটিও রিপু দ্বারা আক্রান্ত নয়, সে প্রায়োপবেশন (যার আক্ষরিক অর্থ হল মৃত্যু কামনায় উপবাসের মাধ্যমে দেহত্যাগ) দ্বারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে।
Written by: Prithwish Ghosh
কার্য, কারণ, জন্ম, মৃত্যু এবং পুনর্জন্মের বৃত্তাকার পরম্পরাই হল সংসার। দেহধারণ এবং কর্মফল ধারণা সম্পর্কে হিন্দুধর্মে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ চিন্তার প্রকাশ দেখা যায়। শ্রীমদ্ভগ্বতগীতায় বলা হয়েছে --
-
বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায়
নবানি গৃহ্নাতি নরোহপরাণি।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণা
ন্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী। -- (শ্রীমদ্ভগ্বতগীতা, দ্বিতীয় অধ্যায়, ২২)
-
[ব্যখ্যা: মানুষ যেমন জীর্ণ-শীর্ণ পুরোনো বস্ত্রগুলি ত্যাগ করে অন্য নতুন বস্ত্র গ্রহণ করে, সেইরূপ জীবাত্মা পুরোনো শরীর ত্যাগ করে অন্য নতুন শরীর গ্রহণ করে। (শ্রীমদ্ভগ্বতগীতা, দ্বিতীয় অধ্যায়, ২২)]
-
যেখানে সংসার ক্ষণিকের আনন্দ দেয়, যা মানুষকে আরেকটি বিনাশশীল শরীর পরিগ্রহ করতে উত্সাহী করে। সেখানে মোক্ষ এই সংসারের গণ্ডী থেকে মুক্ত হয়ে চির আনন্দ ও শান্তির বিশ্বাস প্রদান করে। হিন্দুধর্মের বিশ্বাস যে অনেকগুলি জন্মান্তরের পর অবশেষে জীবাত্মা মহাজাগতিক আত্মায় (ব্রহ্ম/পরমাত্মা) মিলিত হতে ব্যাকুল হয়।
জীবনের চরম লক্ষ্যকে (চরম লক্ষ্য বলতে এখানে মোক্ষ অথবা নির্বাণ অথবা সমাধি) বিভিন্ন ভাবে বোঝানো হয়েছে: যেমন ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্মতার বোধ; যেমন ঈশ্বরের সঙ্গে অবিছ্যেদ্য সম্পর্কের বোধ; যেমন সমস্ত বস্তুর সম্পর্কে অদ্বৈত বোধ; যেমন আত্ম বিষয়ক বিশুদ্ধ নিস্বার্থতা ও জ্ঞান; যেমন নিখুঁত মানসিক শান্তিলাভ; এবং যেমন পার্থিব বাসনার থেকে অনাসক্তি বোধ। এই ধরনের উপলব্ধি মানুষকে সংসার এবং পুনর্জন্মের বন্ধন থেকে মুক্ত করে। আত্মার অবিনশ্বরতায় বিশ্বাস থাকার ফলে, মৃত্যুকে পরমাত্মার তুলনায় নেহাত্ই তুচ্ছ মনে হয়। অতঃপর, একজন ব্যক্তি যার কোন ইচ্ছা বা উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাকি নেই এবং জীবনের কোন দায়িত্বই বাকি নেই অথবা একটিও রিপু দ্বারা আক্রান্ত নয়, সে প্রায়োপবেশন (যার আক্ষরিক অর্থ হল মৃত্যু কামনায় উপবাসের মাধ্যমে দেহত্যাগ) দ্বারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে।
Written by: Prithwish Ghosh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন