রামায়নে একাধিক অভিশাপের ঘটনা দেখা যায় । এবার ইন্দ্রলোকের কথা শোনা যাক । মহর্ষি দুর্বাসা একদিন ইন্দ্রলোকে পদার্পণ করেছেন । সেখানে একটি বিশেষ যজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছিলো । দেবরাজ মহেন্দ্র, অপ্সরা পুঞ্জস্থলাকে যজ্ঞের আয়োজন ও মহর্ষি দুর্বাসার সেবা করতে আদেশ দিয়েছিলেন । বয়সে ষোড়শী নবীনা অপরূপা সুন্দরী পুঞ্জস্থলা ছিলেন চঞ্চল মতির । একেবারে চঞ্চলা মন, অল্প বয়সী ছোটো মেয়েদের মতোন লম্ফ ঝম্ফ দিয়ে চলা এমন । মহর্ষি দুর্বাসার কাজে গাফিলতিও ঘটালেন । কিন্তু দুর্বাসা ক্ষমা করলেন । শাস্ত্রে মহর্ষি দুর্বাসাকে অত্যাধিক ক্রোধী বলা হয়েছে। সামান্য কারণে তিনি ভয়ানক শাপ প্রদান করেন । এনারই অভিশাপে মাতা লক্ষ্মী দেবী পাতালে প্রবেশ করেছিলেন। যাই হোক একদিন যজ্ঞ চলাকালীন অপ্সরা পুঞ্জস্থলা দুর্বাসা মুনির পূজার উপকরণ ডিঙিয়ে চলে গেলেন। হিন্দু ধর্ম মতে খাবার, শায়িত ব্যাক্তি, গুরুদেব ব্রাহ্মণ গুরুজন বা তাদের ছায়া বা পাদুকা, পূজার উপকরণ ডিঙানো ঘোর অপরাধ । দুর্বাসা রেগে শাপ দিলেন- “বানরের মতো লাফিয়ে কোনো কিছু না দেখেই তুমি বিচরণ করো। এমন চঞ্চল মন নিয়ে স্বর্গে তোমার স্থান নেই। যাও পৃথিবীতে গিয়ে বানর কূলে জন্ম নাও।” এমন অভিশাপ শুনে অপ্সরা পুঞ্জস্থলা অনেক ক্ষমা প্রার্থনা করলেন । দুর্বাসা মুনি খুশী হয়ে বর দিলেন – “তুমি বানরী হয়ে জন্মাবে। তবে তোমার গর্ভে স্বয়ং ভগবান মহেশ্বর অবতার নেবেন। সেই অবতারে তিনি হরিভক্তি প্রচার করবেন। আবার রাক্ষস দলন করবেন। জগতে তুমি তাঁর মাতা রূপে পূজানীয়া হবে।”
অপ্সরা পুঞ্জস্থলা বানরী হয়ে জন্ম নিলো। তাঁর বিয়ে হোলো কেশরী নামক এক বানরের সাথে। ঝাড়খণ্ডে এমন একটি জায়গা আছে যেখানে কেশরী বানরের রাজ্য ছিলো বলে বলা হয় । কেশরী বীর ছিলো। সেও রাক্ষস বধ করেছিলো। পরবর্তী কালে ভগবান শিবের অবতার হনুমান এর জন্ম হয় এই দম্পতির ঘরে । মহর্ষি গৌতমের সুন্দর স্ত্রী ছিলেন অহল্যা দেবী। অহল্যা দেবীর রূপে মুগ্ধ হয়ে দেবতাদের রাজা ইন্দ্র একদিন অহল্যা দেবীকে শয্যাসঙ্গিনী হবার প্রস্তাব দিলেন । অহল্যা দেবী ঘৃনা ভরে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেন । কিন্তু ইন্দ্র দেবতার কু মানসিকতা দূর হোলো না । একদিন ফন্দী এটে রাত্রির তৃতীয় প্রহরে ইন্দ্র দেবতা বণ মোরোগের ডাক ডাকলেন । মুনি ভাবলেন ব্রাহ্ম মুহূর্ত উপস্থিত । হিন্দু ধর্ম মতে ব্রাহ্ম কালে শয্যা ত্যাগ করা নিয়ম । মুনি স্নানে গেলেন কুমণ্ডলু নিয়ে । অপরদিকে ঘরে অহল্যা একা। ইন্দ্রদেবতা মুনি গৌতমের ছদ্দবেশ নিয়ে গৃহে প্রবেশ করে অহল্যাকে ভোগ করলেন। অহল্যা দেবী বুঝতে পারেন নি । তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় অহল্যা দেবী ইন্দ্রের জালে পা দিলেন । মুনি ঘাটে গিয়ে দেখলেন তার সাথে ছলনা হয়েছে। দ্রুত ফিরে এসে আশ্রমে তাঁরই মতোন একজনকে দেখে অবাক হলেন । অহল্যাও অবাক আর ভয় ভীত হয়েছিলো। ইন্দ্র স্বরূপ ধরতেই , গৌতম মুনি শাপ দিলেন- “হে অধার্মিক ইন্দ্র। তুমি দেবতাদের রাজা হবার যোগ্য নও । দেবতা হয়েও তুমি এমন ঘৃন্য কাজ করেছো। তোমাকে শাপ দিচ্ছি, তোমার শরীরে সহস্র যোনি উৎপন্ন হোক।” ইন্দ্রের দেহে সহস্র যোনি উৎপন্ন হোলো। লজ্জায় ইন্দ্র কাউকে আর মুখ দেখাতে পারলো না ।
গৌতম মুনি এবার একটি অন্যায় কাজ করলেন। নীরিহ নির্দোষী, চক্রান্তের শিকার অহল্যাকে অভিশাপ দিয়ে বললেন- “তুমি প্রস্তরে পরিণত হও। যবে ভগবান নারায়ণ মানব অবতার নিয়ে এখানে এসে তোমার ওপর চরণ রাখবেন –সেদিনই তুমি মুক্তি পাবে।” সেই থেকে অহল্যা সেই পরিত্যক্ত আশ্রমে পাষাণ হয়ে থাকতে লাগলেন । ইন্দ্র দেবতা পড়ে আরাধনা করে বর পেয়েছিলেন। তাঁর দেহের সহস্র যোনি সহস্র চোখে পরিণত হোলো । এখানে একটি তত্ত্ব কথা আছে । ‘ব্যাঞ্জর’ বা অনাবাদী জমিকে ‘অহল’ অর্থাৎ হাল দেওয়া হয়নি বলা হয়। ইন্দ্র বৃষ্টির দেবতা। এমন অনাবাদী জমিতে ভরপুর বৃষ্টিকে কেউ ইন্দ্র দ্বারা অহল্যা ধর্ষণ বলেছেন । ইন্দ্র দেবতার সহস্র চোখ। যখন বৃষ্টি হয় তখন আমরা কল্পনা করে বলি আকাশের শত চোখ দিয়ে জল পড়ছে। ইন্দ্র হলেন বৃষ্টির দেবতা। তাই এখানে ইন্দ্রের সহস্র চোখের বর্ণনা করা হয়েছে । যে আখ্যান মানে মানুক, আর যে তত্ত্ব কথা মানে মানুক ক্ষতি নেই। ক্ষতি তখন হয় যখন একজনের মতবাদ অন্যের ওপর জোর করে চাপানোর চেষ্টা হয় । সুতরাং যে যেটা মানে মানুক ।
( ক্রমশঃ )
অপ্সরা পুঞ্জস্থলা বানরী হয়ে জন্ম নিলো। তাঁর বিয়ে হোলো কেশরী নামক এক বানরের সাথে। ঝাড়খণ্ডে এমন একটি জায়গা আছে যেখানে কেশরী বানরের রাজ্য ছিলো বলে বলা হয় । কেশরী বীর ছিলো। সেও রাক্ষস বধ করেছিলো। পরবর্তী কালে ভগবান শিবের অবতার হনুমান এর জন্ম হয় এই দম্পতির ঘরে । মহর্ষি গৌতমের সুন্দর স্ত্রী ছিলেন অহল্যা দেবী। অহল্যা দেবীর রূপে মুগ্ধ হয়ে দেবতাদের রাজা ইন্দ্র একদিন অহল্যা দেবীকে শয্যাসঙ্গিনী হবার প্রস্তাব দিলেন । অহল্যা দেবী ঘৃনা ভরে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেন । কিন্তু ইন্দ্র দেবতার কু মানসিকতা দূর হোলো না । একদিন ফন্দী এটে রাত্রির তৃতীয় প্রহরে ইন্দ্র দেবতা বণ মোরোগের ডাক ডাকলেন । মুনি ভাবলেন ব্রাহ্ম মুহূর্ত উপস্থিত । হিন্দু ধর্ম মতে ব্রাহ্ম কালে শয্যা ত্যাগ করা নিয়ম । মুনি স্নানে গেলেন কুমণ্ডলু নিয়ে । অপরদিকে ঘরে অহল্যা একা। ইন্দ্রদেবতা মুনি গৌতমের ছদ্দবেশ নিয়ে গৃহে প্রবেশ করে অহল্যাকে ভোগ করলেন। অহল্যা দেবী বুঝতে পারেন নি । তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় অহল্যা দেবী ইন্দ্রের জালে পা দিলেন । মুনি ঘাটে গিয়ে দেখলেন তার সাথে ছলনা হয়েছে। দ্রুত ফিরে এসে আশ্রমে তাঁরই মতোন একজনকে দেখে অবাক হলেন । অহল্যাও অবাক আর ভয় ভীত হয়েছিলো। ইন্দ্র স্বরূপ ধরতেই , গৌতম মুনি শাপ দিলেন- “হে অধার্মিক ইন্দ্র। তুমি দেবতাদের রাজা হবার যোগ্য নও । দেবতা হয়েও তুমি এমন ঘৃন্য কাজ করেছো। তোমাকে শাপ দিচ্ছি, তোমার শরীরে সহস্র যোনি উৎপন্ন হোক।” ইন্দ্রের দেহে সহস্র যোনি উৎপন্ন হোলো। লজ্জায় ইন্দ্র কাউকে আর মুখ দেখাতে পারলো না ।
গৌতম মুনি এবার একটি অন্যায় কাজ করলেন। নীরিহ নির্দোষী, চক্রান্তের শিকার অহল্যাকে অভিশাপ দিয়ে বললেন- “তুমি প্রস্তরে পরিণত হও। যবে ভগবান নারায়ণ মানব অবতার নিয়ে এখানে এসে তোমার ওপর চরণ রাখবেন –সেদিনই তুমি মুক্তি পাবে।” সেই থেকে অহল্যা সেই পরিত্যক্ত আশ্রমে পাষাণ হয়ে থাকতে লাগলেন । ইন্দ্র দেবতা পড়ে আরাধনা করে বর পেয়েছিলেন। তাঁর দেহের সহস্র যোনি সহস্র চোখে পরিণত হোলো । এখানে একটি তত্ত্ব কথা আছে । ‘ব্যাঞ্জর’ বা অনাবাদী জমিকে ‘অহল’ অর্থাৎ হাল দেওয়া হয়নি বলা হয়। ইন্দ্র বৃষ্টির দেবতা। এমন অনাবাদী জমিতে ভরপুর বৃষ্টিকে কেউ ইন্দ্র দ্বারা অহল্যা ধর্ষণ বলেছেন । ইন্দ্র দেবতার সহস্র চোখ। যখন বৃষ্টি হয় তখন আমরা কল্পনা করে বলি আকাশের শত চোখ দিয়ে জল পড়ছে। ইন্দ্র হলেন বৃষ্টির দেবতা। তাই এখানে ইন্দ্রের সহস্র চোখের বর্ণনা করা হয়েছে । যে আখ্যান মানে মানুক, আর যে তত্ত্ব কথা মানে মানুক ক্ষতি নেই। ক্ষতি তখন হয় যখন একজনের মতবাদ অন্যের ওপর জোর করে চাপানোর চেষ্টা হয় । সুতরাং যে যেটা মানে মানুক ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন