১৩ মার্চ ২০১৬

রামায়ন কথা ( আদিকাণ্ড ১৬ )

রাবণের সাথে একবার কিস্কিন্ধ্যার সম্রাট বালির যুদ্ধ হয়েছিলো। বালিকে ইন্দ্রদেবতা বর দিয়েছিল যে- যুদ্ধে শত্রু যখন বালির চোখে তাকাবে তখন শত্রুর অর্ধেক শক্তি বালির দেহে আসবে। আর অনায়েসে সেই শত্রু পরাজিত হবে । রাবণ একদা বালির রাজ্য আক্রমণ করে । কারন সেই সময় পরাক্রমী বালির নাম সুদূর লঙ্কাতে পৌছেছিলো। রাবণের বালির আস্ফালন সহ্য হচ্ছিল্ল না । একদিন রাবণ বালির রাজ্য আক্রমণ করলো। বানরদের সাথে রাক্ষসদের যুদ্ধ বাঁধলো। বালির হাতে অল্প সময়ে রাক্ষস কূল বিপর্যস্ত হল । রাবণের সাথে বালির যুদ্ধ হল। রাবণ পরাজিত হল, সেই সময় সূর্যাস্ত প্রায়। বালি সন্ধ্যাবন্দনা আদি কর্ম করবেন। বালি লেজে পেঁচিয়ে রাবণকে সাতবার জলে ডুবালো আর সাতবার তুলল । রাবণ প্রায় অর্ধমৃত দশা । রাবণের শোচনীয় অবস্থা দেখে দেবতারা প্রসন্ন হয়ে বালিকে আশীর্বাদ করতে লাগলো । এই অবস্থায় রাবণ, বালির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলল- “আমাকে প্রাণদান করুন কিস্কিন্ধ্যা নরেশ । আমি আপনার রাজ্য আর কদাপি আক্রমণ করবো না। আপনার সাথে আমি মিত্রতা করতে ইচ্ছুক।” বালি রাবণের মিত্রতা স্বীকার করে রাবণকে ছেড়ে দিলো। সেই থেকে রাবণের মনে ধিকিধিকি আগুন জ্বলতে লাগলো যে কিভাবে বালির সর্বনাশ করা যায় ।

রাবণ তার মন্ত্রীদের সাথে শলাপরামর্শ করলো । রাক্ষসেরা বুদ্ধি দিল- এমন বুদ্ধি করতে যাতে বালি আর সুগ্রীবের ভাতৃত্ব বন্ধন নষ্ট হয়। এভাবে বালি শক্তিহীন হলে তাকে ধ্বংস করা সহজ হবে । রাবণের প্রেরিত কিছু বলশালী রাক্ষস বালির রাজ্যে এসে উপদ্রব শুরু করলো। মুনি ঋষিদের ধার্মিক কাজে বাধা দিলে তারা গিয়ে বালিকে নালিশ জানালো । বালি সেই সব বলশালী রাক্ষসদের বধ করে মুনি ঋষিদের অভয় দিয়ে বললেন- “আপনারা শান্তিতে ধার্মিক ক্রিয়াকলাপ করতে পারবেন। যদি কোন রাক্ষস বাধা উৎপত্তি করে তবে তাকে বধ করব।” অপরদিকে রাব তখন দুন্দুভি আর মায়াবি নামক দুই রাক্ষসকে বালির পেছনে লেলিয়ে দেয় । দুই রাক্ষস এসে কিস্কিন্ধ্যায় মহাউপদ্রব সৃষ্টি করে। বালি গদা নিয়ে আসে । প্রথমে মায়াবি নামক রাক্ষস বালির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় । যুদ্ধে হেরে মায়াবি পলায়ন করে । দুন্দুভি রাক্ষস প্রবল যুদ্ধ শুরু করে। পর্বত চূড়া সম উচ্চ উচ্চ প্রস্তর বিশাল বৃক্ষ তুলে বালির পানে নিক্ষেপ করতে থাকলে বালি সেগুলো টুকরো টুকরো করে ফেলে নিজ গদা দ্বারা । অবশেষে দুন্দুভি শিং উচিয়ে তেঁরে আসে । বালির সাথে যুদ্ধ বাঁধে । বালি দুন্দুভিকে তুলে একটি পর্বতে আছাড় মারে। সেই আছাড়ে দুন্দুভির মস্তক চূর্ণ হয়। এরপর বালি দুন্দুভির মৃতদেহ ঋষমূক পর্বতে ছুড়ে ফেলেন । সেই পর্বতে মহর্ষি মতঙ্গ মুনির আশ্রম ছিলো । মহর্ষি যখন যজ্ঞ করছিলেন তখন তার আশ্রমে দুন্দুভির মৃতদেহ এসে পড়ে। মতঙ্গ মুনি অভিশাপ প্রদান করেন- “বালি তুমি আমার আশ্রম অপবিত্র করেছ । তোমাকে শাপ দিচ্ছি ভবিষ্যতে যদি তুমি ঋষমূক পর্বতের সীমানাতেও যদি চরণ রাখো, সেই মুহূর্তে তুমি ভস্মীভূত হবে।”

বালি এই অভিশাপের কথা জানতো। জীবনে সে আর ঋষমূক পর্বতে আসবার সাহস করেনি । রাবন একবার যমালয় আক্রমণ করেছিলো । দুজনের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ চলছিলো । একদিকে রাবণ অপরদিকে যমরাজ । যমরাজ ও রাবণ উভয়েই ছিলো বীর । এই যুদ্ধের কথা প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে পৌছালো । ব্রহ্মার বরে রাবণ যমের হাতে বধ্য ছিলো না। কিন্তু সাক্ষাৎ মৃত্যুর দেবতা যমের সাথে লড়াই । এই ক্ষেত্রে কিছু একটা হতে পারে । যমালয় আক্রমণের বুদ্ধি নারদ মুনি, রাবণকে দিয়েছিলেন। নারদ মুনি বলেছিলেন- “রাবণ তোমার রাক্ষসেরা মরে নরকে গিয়ে যমালয়ে শাস্তি ভোগ করছে। তাদের শাস্তি দিয়েছেন স্বয়ং যম ।” শুনে রাবণ যমালয় আক্রমণ করে ফেলেন । ব্রহ্মা তখন ভগবান শিবের শরণ নিলেন । ভগবান শিব মধ্যস্থতা করে বন্ধ করলেন এই যুদ্ধ ।

( ক্রমশঃ )
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।