রাবণকে এই অস্ত্র প্রদানের ঘটনায় দেবতারা চিন্তিত ছিলো। মাতা পার্বতীও রুষ্ট ছিলেন । তিনি বলেছিলেন – “ হে প্রভু। আপনি দুরাচারী নারী নীপিড়ক রাবণকে কেন আশীর্বাদ দিলেন ? আপনি কি বিস্মৃত হয়েছেন যে দেবী কমলার অংশে জন্ম বেদবতী এই রাবণের জন্যই অগ্নিতে প্রবেশ করেছিলেন।” দেবাদিদেব জানালেন – “ হে দেবী। আমি কিছুই অজ্ঞাত নহি। সময় না আসলে কোনো নির্ধারিত কাজ হয় না। রাবন শ্রী বিষ্ণুর অবতার রামচন্দ্রের হস্তেই বধ হবে। কিন্তু তপস্যার ফল প্রদান করা কর্তব্য। কি সে অসুর, মানব, দানব, দেবতাই হোন। রাবণের তপস্যার ফল সে লাভ করেছে। সময় আসলে সে সকল যাবতীয় পাপ কর্মের ফলও ভোগ করবে।” রাবণের মাতা কেকসী ভাবল – ভগবান শঙ্কর যদি এত অল্পেই তুষ্ট হয়ে যান, তাহলে ভগবানকে লঙ্কায় এনে রাখলে আরোও উত্তম। রাবণ অজেয় হবে। অতএব শিবের আরাধনা করে তাঁকে তুষ্ট করতে হবে। কেকসী মহর্ষি বিশ্বশ্রবার কাছে বিশ্বশ্রবা পূজিত জাগ্রত শিবলিঙ্গ প্রার্থনা করলো। বিশ্বশ্রবা এর কারণ জানতে চাইলে কেকসী সব বলল। এই রকম অকল্যাণ জনক বাসনা শুনে বিশ্বশ্রবা রাজী হোলো না। বিশ্বশ্রবা বলল- “তোমার চিন্তাভাবনা ও উদ্দেশ্য ত্রিলোকের অমঙ্গল ডেকে আনবে। তুমি যদি মহৎ উদ্দেশ্যে সেই লিঙ্গ প্রার্থনা করতে তবে অবশ্যই দিতাম ।” কেকসী সেই শিবলিঙ্গ জোর করে তুলে নিয়ে গেলো। বিশ্বশ্রবা অনেক বোঝালো যে শিবলিঙ্গ স্ব স্থান থেকে সড়ানো মহাপাপ। কিন্তু কেকসী শুনলো না ।
সেই শিবলিঙ্গ পূজাকালে ইন্দ্রদেবতা সেই লিঙ্গ হরণ করলো। কেকসী ফিরে গিয়ে রাবণ কে সব জানালো। রাবণ পুনঃ শিব তপস্যায় মগ্ন হোলো। এত কঠিন তপস্যা যে রাবণ নিজ উদর ছিন্ন করে নাড়ি বের করে সেতারের মতো বাজিয়ে শিবের স্তব করতে লাগলো। দশ মাথা ছিন্ন করে যজ্ঞে দিতে লাগলো। ভগবান শিব তুষ্ট হয়ে বর দিতে প্রকট হলেন। রাবন বললেন- “হে আশুতোষ। আপনি সর্বদাই আমার ওপর প্রসন্ন। কৃপা করে আপনি আমাকে দেবী পার্বতী প্রদান করুন। আমি ভদ্রকালী রূপে দেবীর স্থাপনা করে লঙ্কায় বসন্ত ঋতুতে দুর্গা পূজা করবো। আর আপনিও আমার সাথে চলুন। লঙ্কায় নিয়ে গিয়ে আপনাকে পূজা দেবো।” মহাদেব শিব এখন কি করেন। নিজ স্ত্রীকে কিভাবে দান করবেন। আর ভক্তের মনস্কামনা পূর্ণ করতেই হবে। ভগবান শিব বললেন- “তাই হোক।আমার আত্মলিঙ্গ ও দেবী গৌরীকে গ্রহণ করো।” রাবণকে আত্মলিঙ্গ ও দেবী পার্বতী প্রদান করলেন। শিব বললেন- “হে রাবণ। মনে রেখো আমার এই আত্মলিঙ্গ যেখানে ভূমি স্পর্শ করবে সেখানেই স্থাপিত হবে। অতএব লঙ্কা তে নিয়ে গিয়েই আমার আত্মলিঙ্গ ভূমিতে রাখবে।” রাবণ পুস্পক বিমানে দেবী পার্বতী ও মহাদেবের আত্মলিঙ্গ নিয়ে আসতে লাগলেন । মাতার বিহনে কৈলাসে গণেশ, কার্ত্তিক, নন্দী, ভৃঙ্গি গণেরা রোদন করতে লাগলেন। সেই সময় ভগবান বিষ্ণু অভয় দিলেন। তিনি বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ বেশে রাবণের সামনে গেলেন। দেবী পার্বতী রাবণের অজ্ঞাতে বৃদ্ধা কুৎসিত রূপ ধরলেন । বৃদ্ধ রূপী নারায়ণ বললেন- “হে রাবণ। মহাদেব তোমার সাথে ছলনা করছেন। তিনি নিজ স্ত্রীকে তোমাকে দেন নি। দেখো।” রাবণ বৃদ্ধা কুৎসিত রূপী দেবীকে দেখে বললেন- “তুমি প্রস্থান করো। তোমাকে চাই না।” রাবণের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেবী পার্বতী স্বরূপ ধরে কৈলাসে গেলেন। অপরদিকে রাবণের উদরে ভগবান বিষ্ণু গঙ্গা ও যমুনা , সপ্ত পবিত্র নদী প্রবেশ করলেন ।
উদ্দেশ্য ছিলো রাবণের হাত থেকে আত্মলিঙ্গ উদ্ধার । এই ব্যাপারে দেবতারা বিঘ্ন বিনাশক, মঙ্গল মূর্তি গণেশের শরণাপন্ন হলেন । প্রচণ্ড মূত্রবেগ উপস্থিত হওয়াতে রাবণ পুস্পক বিমান থেকে নামলেন। এত মূত্র বেগ অথচ শিবলিঙ্গ নিয়ে শৌচাদি কর্ম করা নিষেধ । সেই সময় বিঘ্ন বিনাশক গজানন এক রাখালের বেশে আবির্ভূত হলেন। রাবণ সেই রাখালের হাতে শিবলিঙ্গ দিয়ে বললেন- “বালক এই শিবলিঙ্গ ধারন করো। ভুলেও একে মাটিতে রাখবে না। প্রাকৃতিক ক্রিয়া সুসম্পন্ন করে আমি এসে তোমাকে পুরস্কার প্রদান করবো।” রাখাল বেশী গণেশ বলল- “এত ওজন আমার সহ্যের বাইরে। আমি তিনবার তোমাকে আহ্বান করবো। এর মধ্যে না আসলে আমি আর ধরে রাখতে পারবো না।” রাবন মূত্র ত্যাগ করতে বসলো। রাখাল রূপী গণেশ তিনবার ডেকে শিবলিঙ্গ মাটিতে রেখে দিলো। সেখানেই স্থাপিত হোলো ভগবান শিবের আত্মলিঙ্গ । রাবণ ফিরে এসে রাখালকে দেখতে পেলো না। ঐ শিবলিঙ্গ অনেক ওঠানোর চেষ্টা করেও বিফল হোলো। রাবণ ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গেলো । ঐ স্থান “বৈদ্যানাথ ধাম” নামে খ্যাত। ভারতের ঝাড়খণ্ডে এই ধাম অবস্থিত । রাবনের মূত্রে সেখানে যে পুষ্করিণী সৃষ্টি হয়েছিলো তা এখনও আছে । এখানে দেবী সতীর হৃদয় পতিত হয়েছিলো। এখানে দেবী দুর্গা রূপে অবস্থান করছেন। দেবীর ভৈরব হলেন এই বৈদ্যনাথ । শ্রাবন মাসে এখানে প্রচুর ভীর ও মেলা হয়। ভারতে আসলে অবশ্যই এই ধাম দর্শন করবেন। এরপর দেবতারা ব্রহ্মা, বিষ্ণু সহিত এই স্থানে এসে ভগবান শিবের পূজা করলেন ।
( ক্রমশঃ )
সেই শিবলিঙ্গ পূজাকালে ইন্দ্রদেবতা সেই লিঙ্গ হরণ করলো। কেকসী ফিরে গিয়ে রাবণ কে সব জানালো। রাবণ পুনঃ শিব তপস্যায় মগ্ন হোলো। এত কঠিন তপস্যা যে রাবণ নিজ উদর ছিন্ন করে নাড়ি বের করে সেতারের মতো বাজিয়ে শিবের স্তব করতে লাগলো। দশ মাথা ছিন্ন করে যজ্ঞে দিতে লাগলো। ভগবান শিব তুষ্ট হয়ে বর দিতে প্রকট হলেন। রাবন বললেন- “হে আশুতোষ। আপনি সর্বদাই আমার ওপর প্রসন্ন। কৃপা করে আপনি আমাকে দেবী পার্বতী প্রদান করুন। আমি ভদ্রকালী রূপে দেবীর স্থাপনা করে লঙ্কায় বসন্ত ঋতুতে দুর্গা পূজা করবো। আর আপনিও আমার সাথে চলুন। লঙ্কায় নিয়ে গিয়ে আপনাকে পূজা দেবো।” মহাদেব শিব এখন কি করেন। নিজ স্ত্রীকে কিভাবে দান করবেন। আর ভক্তের মনস্কামনা পূর্ণ করতেই হবে। ভগবান শিব বললেন- “তাই হোক।আমার আত্মলিঙ্গ ও দেবী গৌরীকে গ্রহণ করো।” রাবণকে আত্মলিঙ্গ ও দেবী পার্বতী প্রদান করলেন। শিব বললেন- “হে রাবণ। মনে রেখো আমার এই আত্মলিঙ্গ যেখানে ভূমি স্পর্শ করবে সেখানেই স্থাপিত হবে। অতএব লঙ্কা তে নিয়ে গিয়েই আমার আত্মলিঙ্গ ভূমিতে রাখবে।” রাবণ পুস্পক বিমানে দেবী পার্বতী ও মহাদেবের আত্মলিঙ্গ নিয়ে আসতে লাগলেন । মাতার বিহনে কৈলাসে গণেশ, কার্ত্তিক, নন্দী, ভৃঙ্গি গণেরা রোদন করতে লাগলেন। সেই সময় ভগবান বিষ্ণু অভয় দিলেন। তিনি বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ বেশে রাবণের সামনে গেলেন। দেবী পার্বতী রাবণের অজ্ঞাতে বৃদ্ধা কুৎসিত রূপ ধরলেন । বৃদ্ধ রূপী নারায়ণ বললেন- “হে রাবণ। মহাদেব তোমার সাথে ছলনা করছেন। তিনি নিজ স্ত্রীকে তোমাকে দেন নি। দেখো।” রাবণ বৃদ্ধা কুৎসিত রূপী দেবীকে দেখে বললেন- “তুমি প্রস্থান করো। তোমাকে চাই না।” রাবণের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দেবী পার্বতী স্বরূপ ধরে কৈলাসে গেলেন। অপরদিকে রাবণের উদরে ভগবান বিষ্ণু গঙ্গা ও যমুনা , সপ্ত পবিত্র নদী প্রবেশ করলেন ।
উদ্দেশ্য ছিলো রাবণের হাত থেকে আত্মলিঙ্গ উদ্ধার । এই ব্যাপারে দেবতারা বিঘ্ন বিনাশক, মঙ্গল মূর্তি গণেশের শরণাপন্ন হলেন । প্রচণ্ড মূত্রবেগ উপস্থিত হওয়াতে রাবণ পুস্পক বিমান থেকে নামলেন। এত মূত্র বেগ অথচ শিবলিঙ্গ নিয়ে শৌচাদি কর্ম করা নিষেধ । সেই সময় বিঘ্ন বিনাশক গজানন এক রাখালের বেশে আবির্ভূত হলেন। রাবণ সেই রাখালের হাতে শিবলিঙ্গ দিয়ে বললেন- “বালক এই শিবলিঙ্গ ধারন করো। ভুলেও একে মাটিতে রাখবে না। প্রাকৃতিক ক্রিয়া সুসম্পন্ন করে আমি এসে তোমাকে পুরস্কার প্রদান করবো।” রাখাল বেশী গণেশ বলল- “এত ওজন আমার সহ্যের বাইরে। আমি তিনবার তোমাকে আহ্বান করবো। এর মধ্যে না আসলে আমি আর ধরে রাখতে পারবো না।” রাবন মূত্র ত্যাগ করতে বসলো। রাখাল রূপী গণেশ তিনবার ডেকে শিবলিঙ্গ মাটিতে রেখে দিলো। সেখানেই স্থাপিত হোলো ভগবান শিবের আত্মলিঙ্গ । রাবণ ফিরে এসে রাখালকে দেখতে পেলো না। ঐ শিবলিঙ্গ অনেক ওঠানোর চেষ্টা করেও বিফল হোলো। রাবণ ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গেলো । ঐ স্থান “বৈদ্যানাথ ধাম” নামে খ্যাত। ভারতের ঝাড়খণ্ডে এই ধাম অবস্থিত । রাবনের মূত্রে সেখানে যে পুষ্করিণী সৃষ্টি হয়েছিলো তা এখনও আছে । এখানে দেবী সতীর হৃদয় পতিত হয়েছিলো। এখানে দেবী দুর্গা রূপে অবস্থান করছেন। দেবীর ভৈরব হলেন এই বৈদ্যনাথ । শ্রাবন মাসে এখানে প্রচুর ভীর ও মেলা হয়। ভারতে আসলে অবশ্যই এই ধাম দর্শন করবেন। এরপর দেবতারা ব্রহ্মা, বিষ্ণু সহিত এই স্থানে এসে ভগবান শিবের পূজা করলেন ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন