মহান ইক্ষাকু বংশকেই ভগবান নারায়ণ তাঁর আবির্ভাবের কেন্দ্র রূপে বেছে নিয়েছিলেন । কেন ? কারণ সুপিতামাতা বা মহান উদার বংশ না হলে ভগবান সেই কূলে কিভাবে আবির্ভাব হবেন ? ত্যাগী, সত্যবাদী, সংযমী এমন কূলেই ভগবান আবির্ভূত হন । যেমন কশ্যপের সন্তান রূপে ভগবান শ্রীগোবিন্দ , বামন রূপে প্রকট হয়েছিলেন । মহর্ষি জমদাগ্নি সন্তান রূপে ভগবান হরি পরশুরাম রূপে আবির্ভূত হলেন । আবার দেবকী, বসুদেবের উদার চিত্ত- বিশেষ করে বসুদেবের আত্মত্যাগ নিজের সন্তান দের কংসের হাতে তুলে দিয়েছেন কিন্তু প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গেন নি । ভগবান অবতার গ্রহণ করেছেন এমন বংশেই । ইক্ষাকু বংশীয় ভগবান রামের পূর্বপুরুষ মহারাজ রঘু ছিলেন এমনই ন্যায় নীতি পরায়ণ । দানে, বীরত্বে, ত্যাগে ছিলেন অটল । একদিন ইন্দ্রদেবতা ও যমদেবতা মিলে মহারাজ রঘুর পরীক্ষা নিচ্ছিল্লেন । ইন্দ্রদেবতা একটি কপোত অপরদিকে যম দেবতা একটি বাজপাখীর রূপ নিলেন । আকাশ মার্গে কপোত , বাজের থাবা দেখে বাঁচতে মহারাজ রঘুর কাছে গিয়ে বললেন- “হে রাজন। আমাকে ঐ বাজের হস্ত থেকে রক্ষা করুন।” মহারাজ রঘু তখন বাজকে বললেন- “হে বাজ। তুমি প্রস্থান করো। এই কপোত এখন আমার শরণ নিয়েছে। আমি একে পরিত্যাগ করতে পারি না।” বাজ রূপী ধর্মরাজ বললেন- “ওহে রাজন। তুমি একে শরণ দিয়ে নিজ ধর্ম পালন করছ। কিন্তু ক্ষুধার্ত ব্যক্তির কাছে থেকে তাঁর মুখের আহার কেড়ে নেওয়া, বা তাকে খেতে বাধা দেওয়া তো পাপ। ঐ কপোত আমার আহার। ঈশ্বর আমাকে এই ভাবেই সৃষ্টি করেছেন। তুমি আমার আহার কেড়ে আমার সাথে অধর্ম করছ।”
মহারাজ রঘু দেখলেন তাইতো। বাজের আহার কেড়ে নেওয়াও অধর্ম, আবার শরণাগত কে বিপদে ঠেলে দেওয়াটাও পাপ । মহারাজ রঘু বললেন- “বল বাজ। এই মুহূর্তে আমি কি করবো ? শরণাগতকে ত্যাগ করা আমার কূলের রীতি নয়। অতএব তাই এই কপোতকে কিছুতেই আমি তোমাকে দিতে পারবো না। তোমাকে অন্য আহার আমি প্রদান করবো । ” বাজ বলল- “মহারাজ। হয় আমাকে ঐ কপোত প্রদান করুন, অন্যথায় ঐ কপোতের ওজনের সমপরিমাণ আপনার দেহের মাংস প্রদান করুন। ইহা ভিন্ন আমার অন্য কিছু চাই না। যদি আপনি আমাকে এই দুটির মধ্যে একটিও না প্রদান করেন তবে আপনার নামে অযশ হবে।” মহারাজ রঘু দাঁড়িপাল্লা আনলেন। একটি দিকে কপোত কে রাখলেন, অপর দিকে নিজের দেহ থেকে চাকু দিয়ে মাংস কেটে রাখতে থাকলেন। কিন্তু কি আশ্চর্য ! কত মাংসের টুকরো রাজা নিজ দেহ থেকে দিলেন, তবুও দাঁড়িপাল্লা সমান আর হয় না। রাজার সর্বাঙ্গ রক্তে প্লাবিত হচ্ছে, তবুও রাজা নিজ দেহের নানান স্থান থেকে ছুড়ি দিয়ে মাংস কেটে দাঁড়িপাল্লায় রাখছেন । শেষে রাজা নিজ হৃৎপিণ্ড উপরে দিতে গেলেন। তখন কপোত আর বাজ স্বরূপ ধরলেন। ইন্দ্র দেবতার কৃপায় রাজা সুস্থ হলেন। ইন্দ্র ও যম বললেন- “মহারাজ রঘু। আমরা আপনার পরীক্ষা নিচ্ছিল্লাম। ধন্য আপনার কূল। ধন্য আপনি। নিজ কর্ম নিজ জীবন দিয়েও পালন করতে চলেছিলেন। আমাদের আশীর্বাদে আপনার নাম যশ ত্রিলোকে বৃদ্ধি পাবে।”
এই ইক্ষাকু বংশে অনরণ্য নামক এক রাজা ছিলেন। বয়সের ভারে তিনি বৃদ্ধ অবস্থায় পৌছেছিলেন । দক্ষিণ ভারতে যখন রাক্ষসদের অত্যাচার শুরু হয়েছিলো, বহু মুনি ঋষি সে সকল স্থান ছেড়ে উত্তর ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরবর্তী কালে সুগ্রীবের দাদা বালি কিছুটা সহায় হয়েছিলেন। বালি নিজেও শেষ জীবনে অধর্ম করলেও তিনি লঙ্কার বহু রাক্ষস দের মেরে মুনি ঋষি দের রক্ষা করেছিলেন। পরবর্তী পর্বে সেগুলো দেখা যাবে । অনরণ্য রাজার সময়ে বালি বা হনুমানের আবির্ভাব হয় নি । বৃদ্ধ রাজা রাবণের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। রাক্ষসদের হাতে অযোধ্যা সেদিন পরাজিত হয়েছিলো। রাজা অনরণ্য নিজেও রাবণের হাতে বধ হলেন। মরবার আগে রাজা অনরণ্য, রাবণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন- “ ইক্ষাকু বংশ কে এত সাধারন ভেবো না দশানন। এই বংশের কোনো একজনের হাতে তুমি নিহত হবে।”
( ক্রমশঃ )
মহারাজ রঘু দেখলেন তাইতো। বাজের আহার কেড়ে নেওয়াও অধর্ম, আবার শরণাগত কে বিপদে ঠেলে দেওয়াটাও পাপ । মহারাজ রঘু বললেন- “বল বাজ। এই মুহূর্তে আমি কি করবো ? শরণাগতকে ত্যাগ করা আমার কূলের রীতি নয়। অতএব তাই এই কপোতকে কিছুতেই আমি তোমাকে দিতে পারবো না। তোমাকে অন্য আহার আমি প্রদান করবো । ” বাজ বলল- “মহারাজ। হয় আমাকে ঐ কপোত প্রদান করুন, অন্যথায় ঐ কপোতের ওজনের সমপরিমাণ আপনার দেহের মাংস প্রদান করুন। ইহা ভিন্ন আমার অন্য কিছু চাই না। যদি আপনি আমাকে এই দুটির মধ্যে একটিও না প্রদান করেন তবে আপনার নামে অযশ হবে।” মহারাজ রঘু দাঁড়িপাল্লা আনলেন। একটি দিকে কপোত কে রাখলেন, অপর দিকে নিজের দেহ থেকে চাকু দিয়ে মাংস কেটে রাখতে থাকলেন। কিন্তু কি আশ্চর্য ! কত মাংসের টুকরো রাজা নিজ দেহ থেকে দিলেন, তবুও দাঁড়িপাল্লা সমান আর হয় না। রাজার সর্বাঙ্গ রক্তে প্লাবিত হচ্ছে, তবুও রাজা নিজ দেহের নানান স্থান থেকে ছুড়ি দিয়ে মাংস কেটে দাঁড়িপাল্লায় রাখছেন । শেষে রাজা নিজ হৃৎপিণ্ড উপরে দিতে গেলেন। তখন কপোত আর বাজ স্বরূপ ধরলেন। ইন্দ্র দেবতার কৃপায় রাজা সুস্থ হলেন। ইন্দ্র ও যম বললেন- “মহারাজ রঘু। আমরা আপনার পরীক্ষা নিচ্ছিল্লাম। ধন্য আপনার কূল। ধন্য আপনি। নিজ কর্ম নিজ জীবন দিয়েও পালন করতে চলেছিলেন। আমাদের আশীর্বাদে আপনার নাম যশ ত্রিলোকে বৃদ্ধি পাবে।”
এই ইক্ষাকু বংশে অনরণ্য নামক এক রাজা ছিলেন। বয়সের ভারে তিনি বৃদ্ধ অবস্থায় পৌছেছিলেন । দক্ষিণ ভারতে যখন রাক্ষসদের অত্যাচার শুরু হয়েছিলো, বহু মুনি ঋষি সে সকল স্থান ছেড়ে উত্তর ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরবর্তী কালে সুগ্রীবের দাদা বালি কিছুটা সহায় হয়েছিলেন। বালি নিজেও শেষ জীবনে অধর্ম করলেও তিনি লঙ্কার বহু রাক্ষস দের মেরে মুনি ঋষি দের রক্ষা করেছিলেন। পরবর্তী পর্বে সেগুলো দেখা যাবে । অনরণ্য রাজার সময়ে বালি বা হনুমানের আবির্ভাব হয় নি । বৃদ্ধ রাজা রাবণের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। রাক্ষসদের হাতে অযোধ্যা সেদিন পরাজিত হয়েছিলো। রাজা অনরণ্য নিজেও রাবণের হাতে বধ হলেন। মরবার আগে রাজা অনরণ্য, রাবণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন- “ ইক্ষাকু বংশ কে এত সাধারন ভেবো না দশানন। এই বংশের কোনো একজনের হাতে তুমি নিহত হবে।”
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন