১৩ মার্চ ২০১৬

রামায়ন কথা ( আদিকাণ্ড- পর্ব ৭ )

মহান ইক্ষাকু বংশকেই ভগবান নারায়ণ তাঁর আবির্ভাবের কেন্দ্র রূপে বেছে নিয়েছিলেন । কেন ? কারণ সুপিতামাতা বা মহান উদার বংশ না হলে ভগবান সেই কূলে কিভাবে আবির্ভাব হবেন ? ত্যাগী, সত্যবাদী, সংযমী এমন কূলেই ভগবান আবির্ভূত হন । যেমন কশ্যপের সন্তান রূপে ভগবান শ্রীগোবিন্দ , বামন রূপে প্রকট হয়েছিলেন । মহর্ষি জমদাগ্নি সন্তান রূপে ভগবান হরি পরশুরাম রূপে আবির্ভূত হলেন । আবার দেবকী, বসুদেবের উদার চিত্ত- বিশেষ করে বসুদেবের আত্মত্যাগ নিজের সন্তান দের কংসের হাতে তুলে দিয়েছেন কিন্তু প্রতিজ্ঞা ভাঙ্গেন নি । ভগবান অবতার গ্রহণ করেছেন এমন বংশেই । ইক্ষাকু বংশীয় ভগবান রামের পূর্বপুরুষ মহারাজ রঘু ছিলেন এমনই ন্যায় নীতি পরায়ণ । দানে, বীরত্বে, ত্যাগে ছিলেন অটল । একদিন ইন্দ্রদেবতা ও যমদেবতা মিলে মহারাজ রঘুর পরীক্ষা নিচ্ছিল্লেন । ইন্দ্রদেবতা একটি কপোত অপরদিকে যম দেবতা একটি বাজপাখীর রূপ নিলেন । আকাশ মার্গে কপোত , বাজের থাবা দেখে বাঁচতে মহারাজ রঘুর কাছে গিয়ে বললেন- “হে রাজন। আমাকে ঐ বাজের হস্ত থেকে রক্ষা করুন।” মহারাজ রঘু তখন বাজকে বললেন- “হে বাজ। তুমি প্রস্থান করো। এই কপোত এখন আমার শরণ নিয়েছে। আমি একে পরিত্যাগ করতে পারি না।” বাজ রূপী ধর্মরাজ বললেন- “ওহে রাজন। তুমি একে শরণ দিয়ে নিজ ধর্ম পালন করছ। কিন্তু ক্ষুধার্ত ব্যক্তির কাছে থেকে তাঁর মুখের আহার কেড়ে নেওয়া, বা তাকে খেতে বাধা দেওয়া তো পাপ। ঐ কপোত আমার আহার। ঈশ্বর আমাকে এই ভাবেই সৃষ্টি করেছেন। তুমি আমার আহার কেড়ে আমার সাথে অধর্ম করছ।”

মহারাজ রঘু দেখলেন তাইতো। বাজের আহার কেড়ে নেওয়াও অধর্ম, আবার শরণাগত কে বিপদে ঠেলে দেওয়াটাও পাপ । মহারাজ রঘু বললেন- “বল বাজ। এই মুহূর্তে আমি কি করবো ? শরণাগতকে ত্যাগ করা আমার কূলের রীতি নয়। অতএব তাই এই কপোতকে কিছুতেই আমি তোমাকে দিতে পারবো না। তোমাকে অন্য আহার আমি প্রদান করবো । ” বাজ বলল- “মহারাজ। হয় আমাকে ঐ কপোত প্রদান করুন, অন্যথায় ঐ কপোতের ওজনের সমপরিমাণ আপনার দেহের মাংস প্রদান করুন। ইহা ভিন্ন আমার অন্য কিছু চাই না। যদি আপনি আমাকে এই দুটির মধ্যে একটিও না প্রদান করেন তবে আপনার নামে অযশ হবে।” মহারাজ রঘু দাঁড়িপাল্লা আনলেন। একটি দিকে কপোত কে রাখলেন, অপর দিকে নিজের দেহ থেকে চাকু দিয়ে মাংস কেটে রাখতে থাকলেন। কিন্তু কি আশ্চর্য ! কত মাংসের টুকরো রাজা নিজ দেহ থেকে দিলেন, তবুও দাঁড়িপাল্লা সমান আর হয় না। রাজার সর্বাঙ্গ রক্তে প্লাবিত হচ্ছে, তবুও রাজা নিজ দেহের নানান স্থান থেকে ছুড়ি দিয়ে মাংস কেটে দাঁড়িপাল্লায় রাখছেন । শেষে রাজা নিজ হৃৎপিণ্ড উপরে দিতে গেলেন। তখন কপোত আর বাজ স্বরূপ ধরলেন। ইন্দ্র দেবতার কৃপায় রাজা সুস্থ হলেন। ইন্দ্র ও যম বললেন- “মহারাজ রঘু। আমরা আপনার পরীক্ষা নিচ্ছিল্লাম। ধন্য আপনার কূল। ধন্য আপনি। নিজ কর্ম নিজ জীবন দিয়েও পালন করতে চলেছিলেন। আমাদের আশীর্বাদে আপনার নাম যশ ত্রিলোকে বৃদ্ধি পাবে।”

এই ইক্ষাকু বংশে অনরণ্য নামক এক রাজা ছিলেন। বয়সের ভারে তিনি বৃদ্ধ অবস্থায় পৌছেছিলেন । দক্ষিণ ভারতে যখন রাক্ষসদের অত্যাচার শুরু হয়েছিলো, বহু মুনি ঋষি সে সকল স্থান ছেড়ে উত্তর ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরবর্তী কালে সুগ্রীবের দাদা বালি কিছুটা সহায় হয়েছিলেন। বালি নিজেও শেষ জীবনে অধর্ম করলেও তিনি লঙ্কার বহু রাক্ষস দের মেরে মুনি ঋষি দের রক্ষা করেছিলেন। পরবর্তী পর্বে সেগুলো দেখা যাবে । অনরণ্য রাজার সময়ে বালি বা হনুমানের আবির্ভাব হয় নি । বৃদ্ধ রাজা রাবণের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। রাক্ষসদের হাতে অযোধ্যা সেদিন পরাজিত হয়েছিলো। রাজা অনরণ্য নিজেও রাবণের হাতে বধ হলেন। মরবার আগে রাজা অনরণ্য, রাবণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন- “ ইক্ষাকু বংশ কে এত সাধারন ভেবো না দশানন। এই বংশের কোনো একজনের হাতে তুমি নিহত হবে।”

( ক্রমশঃ )
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।