আজ আমরা বিশ্বকর্মার বানর রূপের কথা বলবো । বিশ্বকর্মাকে নিয়ে পুরানে অনেক আখ্যান লিখিত আছে । তাঁর মধ্যে থেকে একটি আখ্যান শোনা যাক। ঋষি শাপে একদা দেবশিল্পীকে বানর হতে হয়েছিল । ঘটনা টা ঠিক এই রূপ। বিশ্বকর্মা বিয়ে করেছিলেন স্বর্গের অপ্সরা ঘৃতাচীকে ।ঘৃতাচীদেবী একজন অপ্সরা- তাই তিনি নৃত্যকলা কে নিয়ে থাকতে চান- কিন্তু স্বামী বিশ্বকর্মা ঘোর নারাজ। তিনি বলেন বিবাহের পর ওসব চলবে না। একদা স্বর্গে নৃত্য প্রতিযোগিতা হয়েছিল। স্বামীর অমতে ঘৃতাচী দেবী লুকিয়ে নাচতে গিয়ে বিশ্বকর্মার হাতে লাঞ্ছিতা হলেন। বিশ্বকর্মার এক কন্যা হয়- তার নাম চিত্রঙ্গদা। অপূর্ব সুন্দরী চিত্রাঙ্গদার নৃত্যের প্রতি ঝোঁক ছিল- কিন্তু পিতার বদ মেজাজের জন্য- চিত্রাঙ্গদা চুপি চুপি মায়ের কাছে নৃত্য কলা শিখতো, প্রকাশ্যে শেখার সাহস পেতো না । একসময় সূর্য বংশীয় নৃপতি রাজা সুরথের সাথে চিত্রাঙ্গদার ভালোবাসা হয় । তারা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতেন। কিন্তু দেবতাদের দিব্যদৃষ্টি থাকে। সুতরাং পিতা বিশ্বকর্মার থেকে বেশীদিন লুকিয়ে থাকলো না। মর্তের পিতারা যা করেন- মেয়ের প্রেমিক স্ট্যাটাসে, পয়সায় ছোটো হলে , মেয়ে ভালোবাসায় অন্ধ হলে , মেয়েকে বন্দী করে রাখেন, বিশ্বকর্মা তাই করলেন। এই অবস্থায় মর্তের মেয়েরা যা করে পালিয়ে যায়- চিত্রাঙ্গদাও তাই করলেন।
বিশ্বকর্মা ক্রোধে অন্ধ হয়ে প্রথমে স্ত্রীর সাথে খানিক ঝগড়া করে স্বর্গের দেবতাদের কাছে সাহায্য চাইতে গেলেন। দেবতারা বিশ্বকর্মার বদমেজাজের জন্য সাহায্য করতে চাইলেন না। মর্তের পিতারা যা করে এই সময়, মেয়ের প্রেমিক কে শাস্তি দেবার জন্য নেতা, উচ্চ পদস্থ পুলীশের কাছে যায়- বিশ্বকর্মা সেই মতো প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে গেলেন। ব্রহ্মা বললেন- “মেয়েদের স্বয়ম্বর সভার মাধ্যমে পতি নির্বাচনের অধিকার আমি দিয়েছি, তোমার মেয়ে নিজ পছন্দের পাত্র নির্বাচন করেছে। সে ঠিক কাজ করেছে। ” বিশ্বকর্মা এরপর বৈকুন্ঠে লক্ষ্মী জনার্দনের কাছে গেলেন। মা লক্ষ্মী বললেন- “আমি নিজেই সমুদ্র মন্থনের পর প্রকট হয়ে ভগবান হরির কন্ঠে মাল্য দিয়েছিলাম। আমি কন্যার পতি নির্বাচনের অধিকারকে সমর্থন করি। আমি তোমার কন্যার পক্ষেই আছি।” বিফল হয়ে বিশ্বকর্মা কৈলাশে গেলে গৌরী দেবী জানালেন- “তোমার কন্যা নিজ পাত্র নিজে নির্বাচন করে স্ত্রী ধর্ম পালন করেছে। অতএব আমরা তোমাকে কোনোরূপ সাহায্য করতে পারবো না।” সাহায্য না পেয়ে বিশ্বকর্মা ক্রোধে নিজ মেয়েকে অভিশাপ দিলেন- “বিয়ের পর তুই বিধবা হবি।” চিত্রাঙ্গদা ভাবল তাঁর জন্য রাজার মৃত্যু হবে- তাই এই বিবাহ করা উচিৎ না। এই ভেবে চিত্রাঙ্গদা নদীর জলে ঝাঁপ দিলো। রাজা সুরথ পাগল হয়ে বনে চলে গেলো। মহর্ষি ঋতধ্বজ এর শিষ্যরা চিত্রাঙ্গদাকে নদী থেকে তুলে আশ্রমে নিয়ে গেলো। সুস্থ করলো। মহর্ষি ঋতধ্বজ সব শুনে বিশ্বকর্মা কে অভিশাপ দিলেন- “তুই পিতা না। তুই পশু। তাই তুই পশু যোনিতে বানর হয়ে থাক। যতদিন তুই তোর মেয়েকে রাজা সুরথের সাথে বিবাহ না দিবি, শাপ ফিরিয়ে না নিবি , ততদিন তুই বানর হয়ে থাকবি।”
বিশ্বকর্মা এর পর মর্তে বানর হয়ে জন্মান। ঘৃতাচী দেবীও বানরী হয়ে জন্মান। দুজনের বিবাহ হয়। নল নামে তাঁদের এক পুত্র হয়। বিশ্বকর্মা অবশেষে শাপ তুলে নিয়ে চিত্রাঙ্গদার সাথে সুরথের বিবাহ দেন। এই কাজে মধ্যস্থতা করেন বালক হনুমান আর জাম্বুবান । তখন ঋষি শাপ ও কেটে যায় । নল হলেন ইঞ্জিনিয়ার । যিনি রামসেতু তৈরী করেছিলেন । এই বিদ্যা তিনি তাঁর পিতার কাছে পেয়েছিলেন। নল ছোটোবেলায় খুব চঞ্চল ছিলেন। মুনি ঋষিদের পূজার জিনিস লোটা, আসন, যজ্ঞকাষ্ঠ , জপের মালা, দণ্ড সব নিয়ে নদীতে ফেলে দিতেন । এই অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন কোনো এক মুনি তাঁকে অভিশাপ প্রদান করেন যে – “যা জলে ফেলবে সে সকল ডুবে যাবে না। সব জলের বুকে ভেসে থাকবে।” শাপে বর হয়েছিলো । পরবর্তী কালে ভারত থেকে লঙ্কা যাবার সেতু নির্মাণ করেছিলেন ।
( ক্রমশঃ )
বিশ্বকর্মা ক্রোধে অন্ধ হয়ে প্রথমে স্ত্রীর সাথে খানিক ঝগড়া করে স্বর্গের দেবতাদের কাছে সাহায্য চাইতে গেলেন। দেবতারা বিশ্বকর্মার বদমেজাজের জন্য সাহায্য করতে চাইলেন না। মর্তের পিতারা যা করে এই সময়, মেয়ের প্রেমিক কে শাস্তি দেবার জন্য নেতা, উচ্চ পদস্থ পুলীশের কাছে যায়- বিশ্বকর্মা সেই মতো প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে গেলেন। ব্রহ্মা বললেন- “মেয়েদের স্বয়ম্বর সভার মাধ্যমে পতি নির্বাচনের অধিকার আমি দিয়েছি, তোমার মেয়ে নিজ পছন্দের পাত্র নির্বাচন করেছে। সে ঠিক কাজ করেছে। ” বিশ্বকর্মা এরপর বৈকুন্ঠে লক্ষ্মী জনার্দনের কাছে গেলেন। মা লক্ষ্মী বললেন- “আমি নিজেই সমুদ্র মন্থনের পর প্রকট হয়ে ভগবান হরির কন্ঠে মাল্য দিয়েছিলাম। আমি কন্যার পতি নির্বাচনের অধিকারকে সমর্থন করি। আমি তোমার কন্যার পক্ষেই আছি।” বিফল হয়ে বিশ্বকর্মা কৈলাশে গেলে গৌরী দেবী জানালেন- “তোমার কন্যা নিজ পাত্র নিজে নির্বাচন করে স্ত্রী ধর্ম পালন করেছে। অতএব আমরা তোমাকে কোনোরূপ সাহায্য করতে পারবো না।” সাহায্য না পেয়ে বিশ্বকর্মা ক্রোধে নিজ মেয়েকে অভিশাপ দিলেন- “বিয়ের পর তুই বিধবা হবি।” চিত্রাঙ্গদা ভাবল তাঁর জন্য রাজার মৃত্যু হবে- তাই এই বিবাহ করা উচিৎ না। এই ভেবে চিত্রাঙ্গদা নদীর জলে ঝাঁপ দিলো। রাজা সুরথ পাগল হয়ে বনে চলে গেলো। মহর্ষি ঋতধ্বজ এর শিষ্যরা চিত্রাঙ্গদাকে নদী থেকে তুলে আশ্রমে নিয়ে গেলো। সুস্থ করলো। মহর্ষি ঋতধ্বজ সব শুনে বিশ্বকর্মা কে অভিশাপ দিলেন- “তুই পিতা না। তুই পশু। তাই তুই পশু যোনিতে বানর হয়ে থাক। যতদিন তুই তোর মেয়েকে রাজা সুরথের সাথে বিবাহ না দিবি, শাপ ফিরিয়ে না নিবি , ততদিন তুই বানর হয়ে থাকবি।”
বিশ্বকর্মা এর পর মর্তে বানর হয়ে জন্মান। ঘৃতাচী দেবীও বানরী হয়ে জন্মান। দুজনের বিবাহ হয়। নল নামে তাঁদের এক পুত্র হয়। বিশ্বকর্মা অবশেষে শাপ তুলে নিয়ে চিত্রাঙ্গদার সাথে সুরথের বিবাহ দেন। এই কাজে মধ্যস্থতা করেন বালক হনুমান আর জাম্বুবান । তখন ঋষি শাপ ও কেটে যায় । নল হলেন ইঞ্জিনিয়ার । যিনি রামসেতু তৈরী করেছিলেন । এই বিদ্যা তিনি তাঁর পিতার কাছে পেয়েছিলেন। নল ছোটোবেলায় খুব চঞ্চল ছিলেন। মুনি ঋষিদের পূজার জিনিস লোটা, আসন, যজ্ঞকাষ্ঠ , জপের মালা, দণ্ড সব নিয়ে নদীতে ফেলে দিতেন । এই অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন কোনো এক মুনি তাঁকে অভিশাপ প্রদান করেন যে – “যা জলে ফেলবে সে সকল ডুবে যাবে না। সব জলের বুকে ভেসে থাকবে।” শাপে বর হয়েছিলো । পরবর্তী কালে ভারত থেকে লঙ্কা যাবার সেতু নির্মাণ করেছিলেন ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন