"গঙ্গা গীতা চ সাবিত্রী সীতা সত্যা পতিব্রতা।
ব্রহ্মা বলির্ব্রহ্মবিদ্যা ত্রিসন্ধ্যা মুক্তিগেহিনী।।
অর্ধমাত্রা চিদানন্দা ভবগ্নী ভ্রান্তিনাশিনী।
বেদত্রয়ী পরানন্দা তত্ত্বার্থ জ্ঞানমঞ্জরী।।"
এই শ্লোকদ্বয়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে শ্রীগীতার আঠারটি নাম, যা গীতার গুহ্যনাম হিসেবে পরিচিত। অনেকেই জানেনা, এই আঠারটি গুহ্যনামের মহাত্ম। বন্ধুদের জ্ঞাতার্থে সেই গুহ্যনাম মাহাত্ম উল্ল্যেখ করার চেষ্টা করছি।
০১) গঙ্গা:- এর অর্থ হলো, গঙ্গায় ডুব দিলে কোনো ব্যাক্তি তার সকল পাপ নাশ করতে পারে। তাই সবার প্রথমে গঙ্গার নাম নেয়া হয়।
০২) গীতা:- যে ব্যাক্তি গীতাপাঠ করে, সেই মুহুর্তেই তার সকল পাপ নাশ হয়। তাই এখানে গীতার কথা বলা হয়েছে।
০৩) সাবিত্রী:- তিনি এতোটাই সতী ছিলেন যে, সে তাঁর মৃত স্বামীর প্রান ফিরিয়ে এনেছিলেন। তাই এখানে সাবিত্রীর নাম বলা হয়েছে।
০৪) সীতা:- ভগবান রামের স্ত্রী,মাতা সীতা এতোটাই পবিত্র ছিলেন যে, রাবণ শত চেষ্টার পরেও তা নষ্ট করতে পারে নি। তাই সীতা নাম মহাপবিত্র বলা হয়।
০৫) সত্যা:- সত্যা বলতে আমাদের আত্মার কথা বলা হয়েছে। আত্মা যেমন অমর গীতাও তেমনি অমর।
০৬) পতিব্রতা:- পতিব্রতা বলতে ভগবানের প্রতি আনুগত্য থাকা। কারন একমাত্র ভগবান পুরুষ, আর সবই প্রকৃতি। অর্থাৎ তিনি সকলের পতি আর আমরা সকলেই তাঁর পত্নী।
০৭) ব্রহ্মাবলী:- ব্রহ্মশক্তী থেকে নির্গত শক্তীকে বলা হয় ব্রহ্মাবলী। যা অবিনশ্বর, যে শক্তির বিনাশ নেই।
০৮) ব্রহ্মবিদ্যা:- ব্রহ্মবিদ্যাকে আমরা ব্রহ্মাবলীর অনুরুপ বলতে পারি।
০৯) ত্রিসন্ধ্যা:- ত্রিসন্ধ্যা মানে হলো তিন কালের সমষ্ঠী। যথা, ইহকাল, বর্তমান কাল ও পরকাল।
১০) মুক্তিগেহিনী:- গীতা পাঠ করলেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই গীতা মুক্তির স্বরুপ হিসেবে এই নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
১১) অর্ধমাত্রা:- গীতায় ভগবান বলেছেন, গীতা তাঁর অর্ধক, যার আশ্রয়ে তিনি এ বিশ্বব্রহ্মান্ড নিয়ন্ত্রন করেন। তাই এই অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে।
১২) চিদানন্দা:- চিৎ বা জ্ঞান জগতের যে আনন্দ তাই চিদানন্দা।
১৩) ভবগ্নী:- অগ্নি যেমন সোনাকে পুড়িয়ে খাঁটি সোনায় পরিবর্তন করে। ঠিক তেমনি গীতাই পারে আমাদের ভব সংসারের সকল পাপ দুর করতে।
১৪) ভ্রান্তিনাশিনী:- আমরা আমাদের চারপাশের জিনিস দেখে, মায়ার প্রভাবে বিভ্রান্ত হই। আর একমাত্র গীতাই পারে আমাদের এই ভ্রান্তি নাশ করতে।
১৫) বেদত্রয়ী:- ত্রিবেদের সমন্বয়ে গঠীত শক্তিই হলো বেদত্রই।
১৬) পরানন্দা:- অপরের দোষ না দেখে, তার ভাল দিক দেখার মধ্যে যে আনন্দ। গীতায় তার কথাই বলা হয়েছে।
১৭) তত্ত্বার্থ:- গীতা পৃথিবীর তত্ত্ব ও তথ্য সমৃদ্ধ সকল জ্ঞান তথা বিজ্ঞানের আধার।
১৮) জ্ঞানমঞ্জরী:- একজন মানুষ বা জীবন জগতের জন্য যে সকল জ্ঞানের প্রয়োজন, তার সকল কিছুই গীতায় মঞ্জুরীকৃত আছে। তাই শ্রীগীতা জ্ঞানমঞ্জরী।
এই হলো শ্রীমদ্ভগবদ গীতার আঠারটি গুহ্যনামের সংক্ষিপ্ত মাহাত্ম। আশাকরি কৌতুহলী ভক্ত পাঠকেরা বিষয়টি জেনে ও অন্যকে জানিয়ে আনন্দিত হবে।
।জয় শ্রীমদ্ভগবদ গীতার জয়।
.
# পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী আর সকল বৈষ্ণব ভক্ত পার্যদদের শ্রীচরণে নিবেদন, সকলের জীবন শ্রীগীতার আদর্শে মঙ্গলময়, কল্যানময়, প্রেমময়, ভক্তিময়, মুক্তিময়, শান্তিময়, সুন্দরময় এবং আনন্দময় করে রাখুন সর্বক্ষণ।(দেবেন্দ্র)
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে!!"
!!জয় হোক সকল ভক্তদের!!
!!জয় শ্রীকৃষ্ণ!! জয় রাধে!!
1 Comments:
দাদা দারুন ভাবে বুঝে গেছি আঠারোটা হুহ্যনামের অর্থ❤️। ধন্যবাদ দাদা🙏। আপনার জীবন যাপন শুভ হোক💕।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন