০৪ জুলাই ২০১৪

গরুড়ের অমৃতহরণ, গরুড়ের জন্মরহস্য,গরুড়সহ দেবগণের যুদ্ধ,গরুড়ের অমৃতহরণ-গরুড়ের বিষ্ণুবাহনত্বলাভ,ইন্দ্রের সহিত গরুড়ের মিত্রতা | বিনতার দাস্যমুক্তি

ত্রিংশ অধ্যায়
গরুড়ের অমৃতহরণ
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, মহাবল-পরাক্রান্ত গরুড় পাদস্পর্শ মাত্রেই তরুশাখা ভগ্ন হইল দেখিয়া তৎক্ষণাৎ তাহা ধারণ করিলেন। বিহঙ্গমরাজ শাখাভঙ্গ করিয়া বিস্ময়বিস্ফারিত লোচন ইতস্ততঃ অবলোকন করিতেছেন, ইত্যবসরে দেখিতে পাইলেন, তপঃপরায়ণ বালখিল্য ঋষিগণ অধঃশিরা হইয়া বৃক্ষশাখায় লম্বমান রহিয়াছেন। গরুড় তদ্দর্শনে অতিমাত্র ভীত হইয়া মনে করিলেন, শাখা ভূতলে পতিত হইলে নিশ্চয়ই ঋষিদিগের প্রাণনাশ হইবে; অতত্রব গজ ও কচ্ছপকে নখ দ্বারা দৃঢ়রূপে ধারণ করিয়া ঋষিগণের প্রাণরক্ষার্থে ঐ অতি বিশাল বৃক্ষশাখা চঞ্চুপুট দ্বারা গ্রহণ করিলেন। মহর্ষিগণ গরুড়ের অলৌকিক কর্ম্ম দর্শনে বিস্ময়াবিষ্ট হইয়া কারণ নির্দ্দেশপূর্ব্বক তাঁহার এই নাম রাখিলেন, “যেহেতু, এই বিহঙ্গম অতি গুরুভার গ্রহণ করিয়া অবিচলিতচিত্তে গগনমার্গে উড্ডীন হইল, অতএব অদ্যাবধি ইহার নাম গরুড় বলিয়া প্রসিদ্ধ হইবে।” অনন্তর গরুড় পক্ষ-পবন দ্বারা পার্শ্বস্থ সমস্ত পর্ব্বত বিচালিত করিয়া বায়ুবেগে গমন করিতে লাগিলেন।
গরুড় গজ-কচ্ছপ লইয়া বালখিল্য ঋষিগণের প্রাণরক্ষার্থে এইরূপে নানাদেশ ভ্রমণ করিলেন; কিন্তু কুত্রাপি উপবেশনের উপযুক্ত স্থান পাইলেন না। পরিশেষে গন্ধমাদন পর্ব্বতে উপনীত হইয়া স্বীয় পিতা মহর্ষি কশ্যপকে তপস্যায় অভিনিবিষ্ট দেখিলেন। ভগবান্ কশ্যপ সেই বলবীর্য্যতেজঃ সম্পন্ন, মন ও বায়ুসম বেগবান্, অচিন্তনীয়, অনভিভবনীয়, সর্ব্বভূতভয়ঙ্কর, প্রদীপ্ত অগ্নিশিখার ন্যায় সমুজ্জ্বল, অধৃষ্য, দুর্জ্জয়, সর্ব্বপর্ব্বতবিদারণক্ষম, সমুদ্রশোষণে সমর্থ, সর্ব্বলোকসংহারে পটু, কৃতান্তসম ভীমদর্শন, উত্তুঙ্গ [অতূ্যচ্চ] গিরিশৃঙ্গাকার, দিব্যরূপী, বিহঙ্গমরাজ গরুড়কে অভ্যাগত দেখিয়া এবং তাঁহার অভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া কহিলেন, “হে পুৎত্র! তুমি সহসা সাহসের কর্ম্ম করিও না, তাহাতে অশেষবিধ ক্লেশ পাইবার সম্ভাবনা। সূর্য্যমরীচিমাত্রপায়ী [সূর্যকিরণমাত্রসেবী] বালখিল্যগণ রোষপরবশ হইলে তোমাকে এইদণ্ডে ভস্মসাৎ করিবেন।” এই কথা বলিয়া মহর্ষি কশ্যপ পুৎত্রবাৎসল্যপ্রযুক্ত মহাভাগ বালখিল্য ঋষিদিগকে প্রসন্ন করিতে লাগিলেন। হে মহর্ষিগণ! প্রজাদিগের হিতোদ্দেশে গরুড় এই মহৎ কর্ম্ম সাধন করিতে অধ্যবসায় করিয়াছে, তোমরা অনুজ্ঞা কর।” বালখিল্যগণ মহর্ষি কশ্যপের অভ্যর্থনায় সেই বৃক্ষশাখা পরিত্যাগপূর্ব্বক তপশ্চরণার্থ পর্ব্বতশ্রেষ্ঠ পবিত্র হিমালয়ে প্রস্থান করিলেন।
বালখিল্য গমন করিলে বিনতানন্দন নিজ পিতা কশ্যপকে নিবেদন করিলেন, “ভগবন্! আমি এখন এই বিশাল বৃক্ষশাখা কোথায় নিক্ষেপ করি, আমাকে কোন নির্ম্মানুষ দেশ নির্দ্দেশ করিয়া দিন।” তখন কশ্যপ মানুষশূন্য নিরবচ্ছিন্ন তুষাররাশিসমাকীর্ণ এক পর্ব্বত কহিয়া দিলেন। পক্ষিরাজ শাখা ও গজ-কচ্ছপ লইয়া বায়ুবেগে সেই পর্ব্বত অভিমুখে যাত্রা করিলেন। গরুড় যে শাখা লইয়া গমন করিলেন, উহা এমত স্থুল যে, শতগোচর্ম্মনির্ম্মিত রজ্জু দ্বারাও বন্ধন বা বেষ্টন করা যায় না। পতগেশ্বর গরুড় অনতিবিলম্বে শতসহস্র যোজনান্তরে স্থির সেই মহাপর্ব্বতে উপনীত হইয়া পিতার আদেশানুসারে তদুপরি প্রকাণ্ড বৃক্ষশাখা নিক্ষেপ করিলেন। তদীয় পক্ষপবনে আহত হইয়া গিরিরাজ কম্পিত হইল, তরুগণ পুষ্পবৃষ্টি করিতে লাগিল এবং যে-সকল মণিকাঞ্চনময় শৈলশৃঙ্গ পর্ব্বতের শোভা সম্পাদন করিত, তাহারা বিশীর্ণ হইয়া ইতস্ততঃ পতিত হইতে লাগিল। বৃক্ষশ্রেণী পরস্পরের শাখাঘাতে অভিহত হইয়া সৌদামিনীমণ্ডিত নবীন নীরদের ন্যায় কাঞ্চনময় কুসুমসমূহে সুশোভিত হইল। গৈরিকরাগরঞ্জিত পাদপ-সকল অবিরল ভূতলে পতিত হইয়া অপূর্ব্ব শোভাধারণ করিল। তৎপরে গরুড় সেই গিরিশৃঙ্গে উপবিষ্ট হইয়া গজ-কচ্ছপ ভক্ষণ করিলেন। খগরাজ এইরূপে সেই কূর্ম্ম ও কুঞ্জরকে উপযোগ করিয়া তথা হইতে মহাবেগে উড্ডীন হইলেন।
অনন্তর দেবতাদিগের উপর অতি ভয়ঙ্কর উৎপাত আরম্ভ হইল। ইন্দ্রের বজ্র ভয়ে প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল। অন্তরীক্ষ হইতে ধূম ও অগ্নিশিখার সহিত উল্কাপাত হইতে লাগিল। বসু, রুদ্র, আদিত্য, সাধ্য, মরুৎ ও অন্যান্য দেবগণের অস্ত্র সকল পরস্পর বিক্রম প্রকাশ করিতে আরম্ভ করিল। দেবাসুর-সংগ্রামেও এরূপ অভূতপূর্ব্ব দুর্ঘটনা কদাচ ঘটে নাই। বায়ু প্রবলবেগে প্রবাহিত হইতে লাগিল, শত সহস্র উল্কাপাত হইতে লাগিল এবং মেঘশূন্য নভোণ্ডল অতি গভীররবে গর্জ্জন করিতে আরম্ভ করিল। অধিক কি বলিব, যিনি দেবাদিদেব [পর্জ্জন্যদেব] তিনিও অনবরত শোণিতবর্ষণ করিতে লাগিলেন। দেবতাদিগের গলদেশের মাল্য ম্লান ও তেজোরাশি ক্রমশঃ হ্রাস হইয়া গেল। প্রলয়কালীন অতিভীষণ মেঘের ন্যায় ঘনাবলী মুষলধারে রক্তবৃষ্টি করিতে লাগিল। ধূলিজাল গগনমার্গে উড্ডীন হইয়া দেবগণের মুকুটসকল প্রভাহীন করিল।
অনন্তর দেবরাজ ইন্দ্র ও সমস্ত দেবগণ এইরূপ অতি নিদারুণ উৎপাত দর্শনে ভীত ও বিস্মিত হইয়া বৃহস্পতিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভগবন্! যুদ্ধে আমাদিগকে আক্রমণ করে, এরূপ শত্রু ত’ লক্ষ্য হয় না। তবে কোথা হইতে এতাদৃশ ঘোরতর উৎপাত সহসা উপস্থিত হইল?” বৃহস্পতি কহিলেন, “হে দেবেন্দ্র! তোমারই অপরাধ ও প্রমাদবশতঃ মহাত্মা বালখিল্যগণের তপোবলে বিনতাগর্ভে মহর্ষি কশ্যপের পক্ষিরূপী এক পুৎত্র জন্মিয়াছে। সেই কামরূপী মহাবল বিনতানন্দন অমৃতহরণে সমর্থ। তাহাতে সকলই সম্ভব হয়। সে অনায়াসে অসাধ্য সাধন করিতে পারে।”
ইন্দ্র তদীয় বাক্য শ্রবণ করিয়া অমৃতরক্ষকদিগকে আদেশ করিলেন, “মহাবীর্য্য মহাবল এক পক্ষী অমৃতহরণে উদ্যত হইয়াছে, আমি তোমাদিগকে সতর্ক করিয়া দিতেছি, দেখিও, যেন সে বলপূর্ব্বক অমৃত হরণ করিতে না পারে। বৃহস্পতি কহিয়াছেন, সে অতুল-বলশালী” তাহা শুনিয়া দেবতারা বিস্ময়াবিষ্ট হইয়া অতি সাবধানে অমৃত বেষ্টন করিয়া রহিলেন এবং ইন্দ্রও বজ্রহস্ত হইয়া তথায় অবস্থান করিলেন। বিচিত্র বসন-ভূষণে বিভূষিত, পাপস্পর্শরহিত, নিরুপম, বলবীর্য্যসম্পন্ন, অসুরপুরবিদারণে পটু সুরগণ; কাঞ্চনময়, বৈদূর্য্যমণিময় ও চর্ম্মাত্মক, মহামূল্য প্রভাভাস্বর [তেজধারা দীপ্ত], সুদৃঢ় কবচ; তীক্ষ্ণধার ভয়ঙ্কর বিবিধ অস্ত্র-শস্ত্র; ধূম অগ্নি ও স্ফুলিঙ্গ [অগ্নিকণা] সহিত চক্র; পরিঘ, ত্রিশূল, পরশু, বহুবিধ সুতীক্ষ্ণ শক্তি; নির্ম্মল করবাল [তরোয়াল] এবং উগ্রদর্শন গদা এই সমস্ত অস্ত্র-শস্ত্র লইয়া অমৃতরক্ষার্থে সেইস্থানে অবস্থান করিতে লাগিলেন। তাঁহারা এইরূপে স্ব স্ব অস্ত্র-শস্ত্র গ্রহণপূর্ব্বক যুদ্ধার্থে সুসজ্জিত হইয়া সূর্য্যকিরণ বিকাশিত বিগলিতান্ধকার আকাশমণ্ডলের ন্যায় শোভা পাইয়াছিলেন।

একত্রিংশ অধ্যায়
গরুড়ের জন্মরহস্য
শৌনক কহিলেন, হে সূতনন্দন! ইন্দ্রের কি অপরাধ ও তাঁহার অনবধানতাই বা কিরূপ? বালখিলা ঋষিগণের তপঃপ্রভাবে গরুড়ের সম্ভব ও মহর্ষি কশ্যপের পক্ষিরূপী পুৎত্র, ইহারই বা কারণ কি? ঐ পক্ষিরাজ কিরূপে সর্ব্বভূতের অবধ্য, অনভিভবনীয়, কামবীর্য্য ও কামচারী হইলেন? আমার এই সকল বিষয় শ্রবণ করিতে নিতান্ত কৌতূহল জন্মিয়াছে, যদি পুরাণে বর্ণিত থাকে, কীর্ত্তন কর।
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, মহাশয়! আপনি আমাকে যাহা জিজ্ঞাসা করিতেছেন, পুরাণে এই সমস্ত বর্ণিত আছে, আমি সংক্ষেপে কীর্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ করুন। কোন সময়ে প্রজাপতি কশ্যপ পুৎত্রবাসনায় এক মহাযজ্ঞ আরম্ভ করেন। তাঁহার যজ্ঞানুষ্ঠানকালে ঋষিগণ, দেবগণ ও গন্ধর্ব্বগণ সাহায্যদান করিবার নিমিত্ত তথায় সমাগত হইয়াছিলেন। মহর্ষিকশ্যপ দেবরাজ ইন্দ্রকে এবং বাললিখ্য মুনগণ ও অন্যান্য দেবতাদিগকে যজ্ঞীয় কাষ্ঠভার আহরণ করিতে নিয়োগ করিলেন। ইন্দ্র আপন বীর্য্যানুরূপ প্রচুর কাষ্ঠভার আনয়নকালে পথিমধ্যে দেখিলেন, অঙ্গুষ্ঠ-প্রমাণ বালখিল্যগণ সকলে সমবেত হইয়া বহুকষ্টে একটি পত্রবৃন্ত আহরণ করিতেছেন। তাঁহারা অতি খর্ব্বাকৃতি, দুর্ব্বল ও নিরাহার; সুতরাং জলপূর্ণ এক গোষ্পদে মগ্ন হইয়া ক্লেশ পাইতেছিলেন। বলদৃপ্ত পুরন্দব্রতদ্দর্শনে বিস্ময়াবিষ্ট হইয়া তাঁহাদিগকে উপহাস ও অবমাননা করিলেন এবং লঙ্ঘন করিয়া অতি সত্বর-পদে তথা হইতে প্রস্থান করিলেন। ঋষিগণ এইরূপে অবমানিত হইয়া সাতিশয় রোষাবিষ্ট হইলেন এবং ইন্দ্রের ভয়াবহ এক অতি মহৎ যজ্ঞ আরম্ভ করিলেন। তাঁহারা ঐ যজ্ঞে এই কামনায় আহুতি প্রদান করিতে লাগিলেন যে, আমাদিগের তপঃপ্রস্তাবে ইন্দ্র হইতে অধিকতর শৌর্য্যবীর্য্য-সম্পন্ন, কামরূপী, কামবীর্য্য, কামগামী, সর্ব্বদেবের অধিপতি অন্য এক দারুণ ইন্দ্র উৎপন্ন হউন।
দেবরাজ ইন্দ্র তাহা জানিতে পারিয়া প্রজাপতি কশ্যপের শরণাগত হইলেন। কশ্যপ ইন্দ্রেমুখে সমুদয় বৃত্তান্ত অবগত হইয়া বালখিল্য মুনিগণের নিকট গমন করিয়া কার্য্যসিদ্ধির প্রার্থনা করিলেন। সত্যবাদী বালখিল্য মুনিগণ তৎক্ষণাৎ “অভীষ্টসিদ্ধি হইবে” এই কথা বলিলেন। তখন প্রজাপতি কশ্যপ তাঁহাদিগকে মধুর-সম্ভাষণে পরিতৃপ্ত করিয়া সাদর বচনে কহিতে লাগিলেন, “দেখ, ব্রহ্মার নিয়োগক্রমে ইনি ত্রিভুবনের ইন্দ্র হইয়াছেন, তোমরা আবার ইন্দ্রান্তর প্রার্থনা করিতেছ, তাহা করিলে ব্রহ্মার নিয়ম অন্যথা করা হইবে, কিন্তু তোমাদিগের সঙ্কল্প মিথ্যা হয়, ইহাও আমার অভিপ্রেত নহে; অতএব তোমরা যে ইন্দ্রের নিমিত্ত কামনা করিতেছ, তিনি পতগেন্দ্র হউন। হে ঋষিগণ! দেবরাজ প্রার্থনা করিতেছেন, তোমরা তাঁহার প্রতি প্রসন্ন হও।” এইরূপ অভিহিত হইয়া বালখিল্যগণ কশ্যপকে যথাবিধি পূজা করিয়া প্রত্যুত্তর করিলেন, “হে প্রজাপতে! আমরা ইন্দ্রার্থে এবং তোমার পুৎত্রার্থে এই মহাযজ্ঞের অনুষ্ঠান করিতেছি, এক্ষণে এই কর্ম্মের ভার তোমার প্রতি অর্পিত হইল, তুমিই ইহা প্রতিগ্রহ করিয়া যাহা শ্রেয়স্কর হয়, করি।”
ঐকালে কল্যাণবতী, কীর্ত্তিমতী, ব্রতপরায়ণা, দক্ষসুতা বিনতা দীর্ঘকাল তপোনুষ্ঠান করণানন্তর ঋতুস্নান করিয়া পুৎত্র বাসনায় স্বামিসন্নিধানে আগমন করিলেন। মহর্ষি কশ্যপ বিনতাকে সন্নিহিতা দেখিয়া কহিলেন, “দেবি! অদ্য তোমার মনোরথ পূর্ণ হইবে, বালখিল্য মুনিগণের তপঃপ্রভাবে ও আমার সঙ্কল্পবলে তোমার গর্ভে মহাভাগ ও ভুবনবিজয়ী দুই বীর পুৎত্র জন্মিবে। তাহারা ত্রিভুবন-পূজিত ও ত্রিলোকীর অধীশ্বর হইবে। তুমি প্রমাদশূন্য হইয়া এই সুমহোদয় গর্ভধারণ কর। সর্ব্বলোক সৎকৃত কামরূপী ঐ দুই বিহঙ্গম সমস্ত পক্ষিজাতির উপর ইন্দ্রত্ব করিবে।” অনন্তর মহর্ষি কশ্যপ অতিপ্রীতমনে ইন্দ্রকে কহিলেন, “সেই দুই মহাবীর্য্য বিহঙ্গম তোমার ভ্রাতা ও সহায় হইবে এবং তাহারা তোমার কখন কোন অপচয় করিবে না। তোমার সকল সন্তাপ দূর হউক, তুমিই ইন্দ্র থাকিবে, কিন্তু হে বৎস! তুমি অহঙ্কারপরতন্ত্র হইয়া যেন আর কদাচ ব্রহ্মবাদী ঋষিদিগকে পরিহাস বা অবমাননা করিও না। তাঁহাদিগের বাক্য বজ্রস্বরূপ এবং তাঁহারা অতিশয় কোপনস্বভাব।”
দেবরাজ ইন্দ্র মহর্ষি কশ্যপ কর্ত্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া নিঃশঙ্কচিত্তে সুরলোকে প্রস্থান করিলেন। বিনতাও চরিতার্থ হইয়া পরম পরিতোষ প্রাপ্ত হইলেন। পরে কশ্যপ-বনিতা বিনতা যথাকালে অরুণ ও গরুড় নামে দুই পুৎত্র প্রসব করিলেন। অরুণ অঙ্গবৈকল্য-প্রযুক্ত সূর্য্যের সারথি হইয়াছেন, তদীয় ভ্রাতা গরুড় পক্ষিগণের ইন্দ্রত্বপদে অভিষিক্ত হইয়াছেন। হে ভৃগুনন্দন! সেই বিনতানন্দন গরুড়ের অতি বিচিত্র চরিত্র কীর্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ করুন।

দ্বাত্রিংশ অধ্যায়
গরুড়সহ দেবগণের যুদ্ধ
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, হে দ্বিজেন্দ্র! দেবতারা সকলে সমবেত হইয়া অতি সাবধানে অমৃত রক্ষা করিতেছেন, এই অবসরে গরুড় অতিসত্বর তাঁহাদিগের নিকট উপস্থিত হইলেন। দেবতারা সেই মহাবল গরুড়কে দেখিয়া ভীত ও কম্পিত হইলেন এবং আপনারাই পরস্পর অস্ত্রাঘাত করিতে লাগিলেন। তথায় অপ্রমেয়-বল ও অগ্নির ন্যায় উজ্জ্বল বিশ্বকর্ম্মাও অমৃতরক্ষার্থে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি মুহূর্ত্তকাল গরুড়ের সহিত ঘোরতর সংগ্রাম করিয়া পরিশেষে তদীয় পক্ষ, নখ ও চঞ্চুপুট দ্বারা ক্ষত-বিক্ষত ও মূর্চ্ছিত হইয়া মৃত্যুমুখে পতিত হইলেন। পরে গগনচারী বিহগরাজ পক্ষপবনে ধূলিপ্রবাহ উত্থাপিত করিয়া সমস্ত লোক ও দেবগণকে আচ্ছন্ন করিলেন। দেবতারা ধূলিজালে আকীর্ণ হইয়া মোহপ্রাপ্ত হইলেন এবং তৎকালে অমৃতরক্ষকেরাও অন্ধপ্রায় হইলেন। এইরূপে গরুড় দেবলোক আলোড়িত করিয়া পক্ষতাড়ন ও তুণ্ডপ্রহারে দেবগণকে বিদীর্ণকলেবর করিলেন। তখন সহস্রলোচন ইন্দ্র পবনকে আদেশ করিলেন, “দেখ পবন! তুমি এই রজোবর্ষণ নিরাকরণ [অপসারণ, দূরীকরণ] কর, ইহা তোমারই কর্ম্ম।” বায়ু তৎক্ষণাৎ তাহা অপসারিত করিলেন।
অনন্তর অন্ধকার নিরস্ত হইলে দেবগণ পক্ষিরাজ গরুড়কে প্রহার করিতে আরম্ভ করিলেন। সুরগণ বধ করিতে উদ্যত হইলে মহাবলপরাক্রান্ত গরুড় মহামেঘের ন্যায় সর্ব্বভূত-ভয়ঙ্কর ঘোরতর গর্জ্জন করিতে করিতে নভোমণ্ডলে উত্থিত হইলেন। দেবতারা গরুড়কে অন্তরীক্ষে আরূঢ় দেখিয়া পট্টিশ, পরিঘ,শূল, গদা, প্রজ্বলিত ক্ষুরপ্র ও সূর্য্যাকৃতি চক্র ইত্যাদি নানা শস্ত্র দ্বারা তাঁহাকে আকীর্ণ করিলেন।
পক্ষিরাজ গরুড় দেবগণ কর্ত্তৃক এইরূপে আহত হইয়াও তুমুল সংগ্রাম করিতে কিছুমাত্র বিচলিত বা সঙ্কুচিত হইলেন না; বরং পক্ষদ্বয়ও বক্ষঃস্থলের অধিকতর আঘাতে তাঁহাদিগকে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত করিলেন। সুরগণ এইরূপে গরুড়যুদ্ধে পরাভূত ও রুধিরাক্ত-কলেবর হইয়া পলায়ন করিতে লাগিলেন। গন্ধর্ব্ব ও সাধ্যগণ পূর্ব্বদিকে, রুদ্র ও বসুগণ দক্ষিণদিকে, আদিত্যগণ পশ্চিমদিকে এবং অশ্বিনীকুমার দুইজনে উত্তরদিকে প্রস্থান করিলেন।
অনন্তর পতগেন্দ্র গরুড় অশ্বক্রন্দ, রেণুক, ক্রথন, তপন, উলুক, শ্বসন, নিমেষ, প্ররুজ ও পুলিন এই সমস্ত যক্ষের সহিত ঘোরতর যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। প্রলয়কালে মহাদেব রোষপরবশ হইলে যেরূপ অতি ভীষণ হয়েন, বিনতানন্দনও সেইরূপ অত্যুগ্র হইয়া পক্ষ. নখ ও তুণ্ডাগ্র দ্বারা সকলকে ছিন্ন-ভিন্ন করিলেন। সেই মহাবল মহোৎসাহ বীরপুরুষেরা ক্ষত-বিক্ষত হইয়া রুধিরবর্ষী ধারাধরের [মেঘ] ন্যায় শোভমান হইলেন।
খগেশ্বর সেই সমস্ত যক্ষদিগের প্রাণ-সংহার করিয়া, যেস্থানে অমৃত রহিয়াছে, তথায় উপস্থিত হইলেন এবং দেখিলেন, অমৃতের চতুষ্পার্শ্বে অগ্নি প্রজ্বলিত হইতেছে। সেই অগ্নির শিখা অতি ভয়ঙ্কর এবং তদ্দ্বরা আকাশমণ্ডল আচ্ছন্ন হইয়াছে, দেখিলে বোধ হয় যেন, বিভাবসু বায়ু কর্ত্তৃক প্রেরিত হইয়া সূর্য্যদেবকে দগ্ধ করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। অনন্তর মহাত্মা গরুড় শতাধিক অষ্টসহস্র মুখ নির্গত করিলেন এবং ঐ সকল মুখ দ্বারা নদী পান করিয়া প্রবলবেগে তথায় আগমনপূর্ব্বক নদীজলে ঐ জ্বলন্ত অনল নির্ব্বাণ করিলেন। অগ্নি নির্ব্বাণ হইলে গরুড় তাহার মধ্যে প্রবেশ করিবার নিমিত্ত অন্য এক শরীর ধারণ করিলেন।

ত্রয়স্ত্রিংশ অধ্যায়
গরুড়ের অমৃতহরণ-গরুড়ের বিষ্ণুবাহনত্বলাভ
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, পক্ষিরাজ অতি ভয়ঙ্কর স্বর্ণময় কলেবর ধারণ করিয়া তন্মধ্যে প্রবেশ করিলেন এবং দেখিলেন, অমৃতের নিকট লৌহময় ক্ষুরের ন্যায় তীক্ষ্ণধার একখানি শাণিত চক্র নিরন্তর ভ্রমণ করিতেছে। অগ্নিতুল্য প্রদীপ্ত ও সূর্য্যসম তেজস্বী ঐ ঘোররূপ যন্ত্র অমৃতহরণার্থ আগত ব্যক্তিব্যূহের [ব্যুহাকারে সুরক্ষিত লোকদিগের] কণ্ঠনালী ছেদন করিবার নিমিত্ত নিম্মিত হইয়াছে। গরুড় অঙ্গসঙ্কোচপূর্ব্বক ক্ষণমাত্রেই তাহার মধ্যাবকাশ [মধ্যের সামান্য ফাঁক] দ্বারা প্রবেশ করিয়া দেখিলেন, সেই চক্রের অধঃস্থলে জ্বলন্ত অগ্নির ন্যায় উজ্জ্বল, মহাবীর্য্য, মহাঘোর, নিয়ত ক্রুদ্ধ ও নির্নিমেষনেত্র দুই সর্প অমৃত রক্ষা করিতেছে। তাহাদিগের বিদ্যুতের ন্যায় মুখ হইতে অনবরত অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইতেছে এবং চক্ষুদ্বয় নিরন্তর বিষ উদ্‌গার করিতেছে। তাহাদিগের একতর যাহার প্রতি একবার দৃষ্টিপাত করে, সে তৎক্ষণাৎ ভস্মসাৎ হইয়া যায়। তখন বিহঙ্গমরাজ ধূলিনিক্ষেপপূর্ব্বক ঐ উভয় সর্পের নয়নদ্বয় আচ্ছন্ন করিলেন এবং অদৃশ্যভাবে আকাশ হইতে তাহাদিগের কলেবর ছিন্ন-ভিন্ন করিয়া অমৃতগ্রহণপূর্ব্বক অতি দ্রুতবেগে গগনমণ্ডলে উত্থিত হইলেন। কিন্তু তিনি স্বয়ং অমৃতপান না করিয়া সূর্য্যপ্রভা আবরণপূর্ব্বক অপরিশ্রান্তমনে তথা হইতে প্রস্থান করিলেন।
বিনতানন্দন অমৃত হরণ করিয়া আকাশপথে গমন করিতেছেন, এই অবসরে অবিনাশী দেবাদিদেব নারায়ণের সহিত তাঁহার সাক্ষাৎকার হইল। নারায়ণ গরড়ের লোকাতিশায়িনী ক্রিয়া দর্শনে পরম সন্তুষ্ট হইয়া কহিলেন, “হে বিহঙ্গরাজ! প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে অভিলষিত বর প্রদান করিব।” গরুড় কহিলেন, “আমি আপনার উপরিভাগে অবস্থান করিতে বাসনা করি।” এই বলিয়া পুনর্ব্বার নারায়ণকে কহিলেন, “আর আমি যাহাতে অমৃতপান ব্যতিরেকে অজর ও অমর হইতে পারি, এইরূপ বর প্রদান করুন।” বিষ্ণু কহিলেন, “তোমার অভীষ্ট সিদ্ধ হউক।” তখন গরুড় আপনার অভিলষিত বরলাভ করিয়া নারায়ণকে কহিলেন, “ভগবন্! প্রার্থনা কর, আমিও তোমাকে বর প্রদান করিব।” নারায়ণ মহাবল গরুড়কে কহিলেন, “তুমিও আমার বাহন হও” এবং স্বপ্রদত্ত বরের অন্যথা না হয়, এইজন্য পুনর্ব্বার কহিলেন, “তোমাকে আমার রথের ধ্বজ হইয়া থাকিতে হইবে।” পতগেশ্বর “তথাস্তু” বলিয়া বায়ুবেগে গমন করিলেন।
দেবরাজ ইন্দ্র অমৃতাপহারক পক্ষীকে অন্তরীক্ষে গমন করিতে দেখিয়া রোষভরে বজ্র প্রহার করিলেন। গরুড় বজ্রাঘাতে আহত হইয়াও হাস্যমুখে কহিলেন, “দেখ দেবরাজ! বজ্রাঘাতে আমার কিছুমাত্র ব্যথা জন্মে নাই; কিন্তু যে মুনির অস্থি হইতে এই বজ্রের উৎপত্তি হইয়াছে, তাঁহার, বজ্রাস্ত্রের ও তোমার সম্মানের নিমিত্ত আমি একটি পক্ষ পরিত্যাগ করিতেছি, এই পক্ষের অন্ত নাই।” এই বলিয়া পক্ষিরাজ একটি পক্ষ পরিত্যাগ করিলেন। দেবগণ ঐ উৎসৃষ্ট পক্ষটি অতি সুন্দর দেখিয়া হৃষ্টমনে কহিলেন. “এই পর্ণ (অর্থাৎ পক্ষ) অতি সুন্দর, অতএব অদ্যাবধি গরুড়ের নাম সুপর্ণ হইল।” সহস্রাক্ষ ইন্দ্র এইরূপ অত্যাশ্চর্য্য ব্যাপার দর্শনে বিস্মিত হইয়া মনে করিলেন, এই পক্ষী সামান্য পক্ষী নহে, ইনি অবশ্যই কোন মহাপ্রাণী হইবেন। এইরূপ কল্পনা করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, “ওহে বিহঙ্গম! আমি তোমার অলৌকিক বলবীর্য্য জানিতে এবং অনন্ত কালের নিমিত্ত তোমার সহিত মিত্রত্ব সংস্থাপন করিতে বাসনা করি।”

চতুস্ত্রিংশ অধ্যায়
ইন্দ্রের সহিত গরুড়ের মিত্রতা
গরুড় কহিলেন, “হে দেবরাজ! তোমার স্বেচ্ছাক্রমে অদ্যাবধি তোমার সহিত আমার মিত্রত্ব-সংস্থাপন হইল। আমার বল নিতান্ত দুঃসহ ও একান্ত মহৎ। যদিচ স্বকীয় গুণকীর্ত্তন ও বল-প্রশংসা করা পণ্ডিতমণ্ডলীর অনুমোদিত নহে, বিশেষতঃ অকারণে আত্মপ্রশংসা অতিশয় অন্যায়, তথাপি তুমি আমার সখা এবং আগ্রহাতিশয়সহকারে জিজ্ঞাসা করিতেছ, এই নিমিত্ত কহিতে প্রবৃত্ত হইলাম, শ্রবণ কর। আমার বলের কথা অধিক কি বলিব, আমি পর্ব্বতকাননাদিসহিতা এই সসাগরা বসুন্ধরাকে অক্লেশে একপক্ষে বহন করিতে পারি। আর যদি তুমি ঐ পক্ষ অবলম্বন কর, তবে তোমাকেও লইয়া যাইতে পারি। চরাচর বিশ্বকে বহন করিতে হইলেও আমার কিছুমাত্র পরিশ্রম বোধ হয় না।”
গরুড় এইরূপে স্বীয় বলের পরিচয় প্রদান করিলে সর্ব্বলোকহিতকারী দেবরাজ কহিলেন, “হে বিহঙ্গরাজ! তুমি যাহা কহিলে, তোমাতে সকলই সম্ভব; এক্ষণে আমার সহিত সখ্যসংস্থাপন কর এবং অমৃতে যদি প্রয়োজন না থাকে, তবে আমাকে প্রত্যর্পণ কর; এই অমৃত যাহাদিগকে অর্পণ করিবে, তাহারাই আমাদিগের উপর উপদ্রব করিবে।” গরুড় কহিলেন, “হে সহস্রলোচন! আমি কোন কারণবশতঃ এই অমৃত লইয়া যাইতেছি, প্রার্থনা করিলে ইহার বিন্দুমাত্রও কাহাকে প্রদান করিব না; কিন্তু আমি যেস্থানে ইহা রাখিব, তুমি তৎক্ষণাৎ তথা হইতে অপহরণ করিও।” ইন্দ্র কহিলেন, “হে বিহঙ্গরাজ! আমি তোমার এই কথা শ্রবণ করিয়া যৎপরোনাস্তি সন্তুষ্ট হইলাম, এক্ষণে আমার নিকটে অভিলষিত বর প্রার্থনা কর।” তখন গরুড় কদ্রুপুৎত্রদিগের দৌরাত্ম্য ও মাতার ছলকৃত দাসীভাব স্মরণ করিয়া কহিলেন, “আমি সকলের ঈশ্বর হইয়াও তোমার নিকট বর প্রার্থনা করিতেছি, যেন মহাবল সর্পসকল আমার ভক্ষ্য হয়।” দানবনিসূদন ইন্দ্র “তথাস্তু” বলিয়া দেবদেব যোগীশ্বর মহাত্মা হরির নিকট গমন করিলেন। চক্রপাণি দেবরাজ-মুখে সমস্ত বৃত্তান্ত অবগত হইয়া গরুড়াভিলষিত বিষয়ে অনুমোদন করিলেন।
বিনতার দাস্যমুক্তি
অনন্তর ভগবান্ ত্রিদশেশ্বর গরুড়কে পুনর্ব্বার কহিলেন, “তুমি অমৃত স্থাপন করিলেই আমি তাহা অপহরণ করিব।” এই বলিয়া সাদর-সম্ভাষণে তাঁহাকে বিদায় দিলেন। গরুড় অনতিবিলম্বে স্বীয় জননী-সন্নিধানে প্রত্যাগমনপূর্ব্বক হৃষ্টমনে সর্পদিগকে কহিলেন, “এই আমি অমৃত আহরণ করিয়াছি; এক্ষণে ইহা এই কুশের উপর রাখিতেছি, তোমরা শীঘ্র স্নানপূজা করিয়া পান কর। দেখ, তোমরা যাহা কহিয়াছিলে, তাহা আমি সম্পাদন করিলাম; অতএব অদ্যাবধি আমার মাতা দাস্যবৃত্তি হইতে মুক্ত হউন।” সর্পগণ “তথাস্তু” বলিয়া স্নান করিতে গমন করিল। এই অবসরে দেবরাজ ইন্দ্র অমৃত অপহরণ করিয়া স্বর্গে প্রস্থান করিলেন। সর্পেরা স্নান, পূজা ও মঙ্গলাচরণ সমাপন করিয়া প্রফুল্লমনে অমৃতপান করিতে আসিয়া দেখিল, গরুড় যে কুশাসনে অমৃত রাখিব বলিয়াছিলেন, তথায় অমৃত নাই। পরে বিবেচনা করিল, আমরা যেমন ছলক্রমে বিনতাকে দাসী করিয়াছিলাম, তেমনি ছলে অমৃত হরণ করিয়াছে। তখন নাগগণ এই স্থানে অমৃত রাখিয়াছিল, এই বিবেচনা করিয়া সেই কুশাসন অবলেহন করিতে লাগিল। তাহাতেই তাহাদিগের জিহ্বা দুই খণ্ডে বিভক্ত হইয়াছে এবং পরম পবিত্র অমৃত কুশে সংস্পৃষ্ট হইয়াছিল বলিয়া তদবধি কুশের নাম পবিত্র হইয়াছে। মহাত্মা গরুড় এইরূপে অমৃতের হরণ ও আহরণ করিয়াছিলেন এবং সর্পদিগকে দ্বিজিহ্ব [দুইটি জিহ্বাযুক্ত] করিয়াছিলেন।
অনন্তর খগরাজ পরিতুষ্ট-মনে সেই কাননে বিহার করিয়া ভুজঙ্গমগণ ভক্ষণপূর্ব্বক স্বীয় জননী বিনতাকে আনন্দিত করিলেন। যে ব্যক্তি ব্রাহ্মণগণ-সন্নিধানে এই অপূর্ব্ব উপাখ্যান শ্রবণ বা পাঠ করিবে, সে মহাত্মা খগরাজ গরুড়ের চরিত-কীর্ত্তন-প্রযুক্ত পাপস্পর্শশূন্য হইয়া স্বর্গারোহণ করিবে, সন্দেহ নাই।




Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।