দ্রৌপদী-সত্যভামাসংবাদ পর্বাধ্যায়
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহাত্মা পাণ্ডবগণ ও বিপ্রসমুদায় আশ্রমমধ্যে সুখে সমাসীন হইয়াছেন; এমত সময়ে দ্রৌপদী ও সত্যভামা তথায় প্রবেশ করিলেন। পরস্পর প্রিয়বাদিনী সেই কামিনীদ্বয় বহু দিবসের পর পরস্পর সাক্ষাৎকার লাভ করিয়া পরম প্রফুল্ল চিত্তে উপবেশনপূর্ব্বক কুরু ও যদুবংশ সংক্রান্ত নানাবিধ কথোপকথন করিতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে কৃষ্ণপ্রিয়া সত্যভামা একান্তে বসিয়া যাজ্ঞসেনীকে কহিলেন, “হে দ্রৌপদি! তুমি লোকপালসদৃশ সুদৃঢ়কলেবর মহাবীর পাণ্ডবগণের সহিত কিরূপ ব্যবহার করিয়া থাক? তাঁহারা যে কখনই তোমার প্রতি ক্রোধান্বিত হন না; প্রত্যুত ঈদৃশ বশীভূত হইয়াছেন যে, তোমা ভিন্ন আর কাহাকেও মনে করেন না; ইহার কারণ কি? সোমবারাদি ব্রতচর্য্যা, উপবাসাদিরূপ তপঃ, সঙ্গমাদিতে স্নান, মন্ত্র, ঔষধ, কামশাস্ত্রোক্ত বশীকরণ বিদ্যা, অচ্যুত তারুণ্যাদি, জপ, হোম বা অঞ্জনাদি ঔষধ, ইহার কোন্ উপায়ের প্রভাবে পাণ্ডবগণ তোমার এতাদৃশ বশীভূত হইয়াছেন? হে পাঞ্চালি! এক্ষণে তুমি আমাকে এরূপ কোন যশস্ব ও সৌভাগ্যজনক উপায় বল; যদ্দ্বারা আমি কৃষ্ণকে নিরন্তর বশীভূত করিয়া রাখিতে পারি।”
সত্যভামার প্রতি দ্রৌপদীর পাতিব্রতকথন
যশস্বিনী সত্যভামা এই কথা বলিয়া বিরত হইলে পর, পতিব্রতা দ্রৌপদী তাঁহাকে কহিতে লাগিলেন, হে সত্যভামে! তুমি আমাকে যেরূপ ব্যবহারের বিষয় জিজ্ঞাসা করিলে, অসৎ স্ত্রীগণই ঐরূপ আচার করিয়া থাকে; অতএব কিরূপে উহার উত্তর প্রদান করিব; তুমি বুদ্ধিমতী; বিশেষতঃ কৃষ্ণের মহিষী; ঈদৃশ বিষয়ে সংশয় বা প্রশ্ন করা তোমার উচিত নহে। দেখ, স্বামী পত্নীকে মন্ত্রপরায়ণ জানিতে পারিলে গৃহস্থিত সর্পের ন্যায় তাহার নিমিত্ত সতত উদ্বিগ্ন থাকেন। উদ্বিগ্ন ব্যক্তির শান্তি নাই; অশান্ত লোক কখনই সুখ লাভ করিতে সমর্থ হয় না। হে ভদ্রে! স্বামী কদাচ মন্ত্র দ্বারা বশীভূত হন না। জিঘাংসু ব্যক্তিরাই উপায় দ্বারা শত্রুর রোগোৎপাদন বা তাহাকে বিষ প্রদান করিয়া থাকে। লোকে জিহ্বা বা ত্বকদ্বারা যে সমস্ত বস্তু সেবন করে, তৎসমুদায়ে চূর্ণবিশেষ মিশ্রিত করিয়া প্রদান করিলে অবশ্যই প্রাণসংহার হয়।
অনেক পাপপরায়ণ কামিনীগণ স্বামীদিগকে বশ করিবার নিমিত্ত ঔষধ প্রদান করায় তাহাদিগের মধ্যে কেহ জলোদরগ্রস্ত, কেহ বা কুষ্ঠী, কেহ বা পলিত, কেহ বা পুরুষত্বরহিত, কেহ বা জড়, কেহ বা অন্ধ কেহ বা বধির হইয়া গিয়াছে। হে বরবর্ণিনি! কামিনীগণের কদাপি স্বামীর বিপ্রিয়াচরণ কর্ত্তব্য নহে।
অনেক পাপপরায়ণ কামিনীগণ স্বামীদিগকে বশ করিবার নিমিত্ত ঔষধ প্রদান করায় তাহাদিগের মধ্যে কেহ জলোদরগ্রস্ত, কেহ বা কুষ্ঠী, কেহ বা পলিত, কেহ বা পুরুষত্বরহিত, কেহ বা জড়, কেহ বা অন্ধ কেহ বা বধির হইয়া গিয়াছে। হে বরবর্ণিনি! কামিনীগণের কদাপি স্বামীর বিপ্রিয়াচরণ কর্ত্তব্য নহে।
(অসম্পূর্ণ)
স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য
দ্রৌপদী কহিলেন, “সখি! স্বামীর চিত্ত অনুরঞ্জন ও আকর্ষণ করিবার যে অব্যর্থ উপায় বলিতেছি; তদনুরূপ কার্য্য করিলে তোমার স্বামী আর কখন অন্য নারীর মুখাবলোকন করিবেন না। পতিই পরম দেবতা; পতির ন্যায় দেবতা আর কুত্রাপি দৃষ্টিগোচর হয় না; অতএব তাঁহার প্রসাদে সমস্ত মনোরথ সফল হয়; কোপ সমুদায় বিনষ্ট হয়; তাঁহা হইতেই অপত্য, বিবিধ বিষয়োপভোগ, উত্তম শয্যা, বিচিত্র আসন, বসন, গন্ধ, মাল্য, স্বর্গ, পুণ্য লোক ও মহতী কীর্ত্তি লাভ হইয়া থাকে। সুখের সময় সুখ লাভ হয় না; সাধ্বী স্ত্রী প্রথমতঃ দুঃখ ভোগ করিয়া পরিশেষে সুখভাগিনী হন।
“তুমি কৃষ্ণের প্রতি প্রতিদিন অকৃত্রিম প্রণয় প্রকাশপূর্ব্বক রমণীয় বেশ ভূষা, সুচারু ভোজনদ্রব্য, মনোহর গন্ধ মাল্য প্রদান দ্বারা তাঁহার আরাধনা করিলে, তিনি আপনাকে তোমার পরম প্রণয়াস্পদ বিবেচনা করিয়া অবশ্যই তোমার প্রতি অনুরক্ত হইবেন; তাহার সন্দেহ নাই। দ্বারদেশাগত স্বামীর কণ্ঠস্বর শ্রবণ করিবামাত্র গাত্রোত্থানপূর্ব্বক গৃহমধ্যে দণ্ডায়মান থাকিবে; অনন্তর তিনি গৃহপ্রবিষ্ট হইলেই পাদ্য ও আসন প্রদানপূর্ব্বক তাঁহার অভ্যর্থনা করিবে। তিনি কোন কার্য্যের নিমিত্ত দাসীকে নিয়োগ করিলে, তুমি স্বয়ং উত্থিত হইয়া সেই কার্য্য সম্পাদন করিবে। তোমার এই প্রকার সদ্ব্যবহার সন্দর্শনে কৃষ্ণ তোমাকে অবশ্যই সাতিশয় পতিপরায়ণা জ্ঞান করিবেন। পতি তোমার নিকট যাহা কহিবেন; তাহা গোপনীয় না হইলেও তুমি কদাচ প্রকাশ করিবে না; কারণ তোমার সপত্নী যদি কখন সেই কথা কৃষ্ণকে বলে, তাহা হইলে তিনি তোমার প্রতি বিরক্ত হইতে পারেন।
“যে সমস্ত ব্যক্তি স্বামীর প্রণয়পাত্র, সতত অনুরক্ত ও হিতসাধনে নিযুক্ত, বিবিধ উপায় দ্বারা তাঁহাদিগকে ভোজন করাইবে; এবং প্রযত্নাতিশয় সহকারে স্বামীকে দেষ্য, বিপক্ষ, অহিতাচারী ও কুহকীদিগের সহবাস পরিত্যাগ করাইবে। অন্য পুরুষের সমক্ষে মত্ততা ও অনাবধনতা পরিত্যাগপূর্ব্বক মৌনাবলম্বিনী হইয়া স্বীয় অভিপ্রায় সংযত করিয়া রাখিবে। প্রদ্যুম্ন ও শাম্ব তোমার পুত্ত্র হইলেও স্বামীর অসমক্ষে কদাপি তাহাদিগের সহিত একত্র বাস করিও না।
“সৎকুলজাত পুণ্যশীল পতিব্রতা স্ত্রীদিগের সহিত সখ্য করিবে; ক্রূর, কলহপ্রিয়, ঔদরিক, চৌর, দুষ্ট ও চপল অবলাদিগের সহবাস সর্ব্বতোভাবে পরিত্যাগ করিবে এবং সদ্গন্ধচর্চ্চিতকলেবর ও মহার্হ মাল্যাভরণবিভূষিত হইয়া সর্ব্বদা স্বামীর শুশ্রূষাপরতন্ত্র হইবে। এইরূপ সদাচরণে কাল হরণ করিলে, কেহ তোমার প্রতি শত্রুতাচরণ করিতে পারিবে না এবং তোমার মহতী কীর্ত্তি, পরম সৌভাগ্য ও স্বর্গ লাভ হইবে।”
“তুমি কৃষ্ণের প্রতি প্রতিদিন অকৃত্রিম প্রণয় প্রকাশপূর্ব্বক রমণীয় বেশ ভূষা, সুচারু ভোজনদ্রব্য, মনোহর গন্ধ মাল্য প্রদান দ্বারা তাঁহার আরাধনা করিলে, তিনি আপনাকে তোমার পরম প্রণয়াস্পদ বিবেচনা করিয়া অবশ্যই তোমার প্রতি অনুরক্ত হইবেন; তাহার সন্দেহ নাই। দ্বারদেশাগত স্বামীর কণ্ঠস্বর শ্রবণ করিবামাত্র গাত্রোত্থানপূর্ব্বক গৃহমধ্যে দণ্ডায়মান থাকিবে; অনন্তর তিনি গৃহপ্রবিষ্ট হইলেই পাদ্য ও আসন প্রদানপূর্ব্বক তাঁহার অভ্যর্থনা করিবে। তিনি কোন কার্য্যের নিমিত্ত দাসীকে নিয়োগ করিলে, তুমি স্বয়ং উত্থিত হইয়া সেই কার্য্য সম্পাদন করিবে। তোমার এই প্রকার সদ্ব্যবহার সন্দর্শনে কৃষ্ণ তোমাকে অবশ্যই সাতিশয় পতিপরায়ণা জ্ঞান করিবেন। পতি তোমার নিকট যাহা কহিবেন; তাহা গোপনীয় না হইলেও তুমি কদাচ প্রকাশ করিবে না; কারণ তোমার সপত্নী যদি কখন সেই কথা কৃষ্ণকে বলে, তাহা হইলে তিনি তোমার প্রতি বিরক্ত হইতে পারেন।
“যে সমস্ত ব্যক্তি স্বামীর প্রণয়পাত্র, সতত অনুরক্ত ও হিতসাধনে নিযুক্ত, বিবিধ উপায় দ্বারা তাঁহাদিগকে ভোজন করাইবে; এবং প্রযত্নাতিশয় সহকারে স্বামীকে দেষ্য, বিপক্ষ, অহিতাচারী ও কুহকীদিগের সহবাস পরিত্যাগ করাইবে। অন্য পুরুষের সমক্ষে মত্ততা ও অনাবধনতা পরিত্যাগপূর্ব্বক মৌনাবলম্বিনী হইয়া স্বীয় অভিপ্রায় সংযত করিয়া রাখিবে। প্রদ্যুম্ন ও শাম্ব তোমার পুত্ত্র হইলেও স্বামীর অসমক্ষে কদাপি তাহাদিগের সহিত একত্র বাস করিও না।
“সৎকুলজাত পুণ্যশীল পতিব্রতা স্ত্রীদিগের সহিত সখ্য করিবে; ক্রূর, কলহপ্রিয়, ঔদরিক, চৌর, দুষ্ট ও চপল অবলাদিগের সহবাস সর্ব্বতোভাবে পরিত্যাগ করিবে এবং সদ্গন্ধচর্চ্চিতকলেবর ও মহার্হ মাল্যাভরণবিভূষিত হইয়া সর্ব্বদা স্বামীর শুশ্রূষাপরতন্ত্র হইবে। এইরূপ সদাচরণে কাল হরণ করিলে, কেহ তোমার প্রতি শত্রুতাচরণ করিতে পারিবে না এবং তোমার মহতী কীর্ত্তি, পরম সৌভাগ্য ও স্বর্গ লাভ হইবে।”
দ্রৌপদীর প্রতি সত্যভামার বিদায়-সম্ভাষণ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! ভগবান্ জনার্দ্দন মার্কণ্ডেয় প্রভৃতি মহর্ষি ও মহাত্মা পাণ্ডবগণ-সমভিব্যাহারে নানাপ্রকার অনুকূল কথাপ্রসঙ্গে কিয়ৎকাল অতিবাহিত করিয়া তাঁহাদিগের নিকট বিদায় গ্রহণপূর্ব্বক রথারোহণসময়ে সত্যভামাকে আহ্বান করিলেন। সত্যভামা অবিচলিত প্রণয়ভাবে দ্রুপদাত্মজাকে আলিঙ্গন করিয়া কহিলেন, “অয়ি প্রিয়সখি! উৎকণ্ঠিত হইও না; দুঃখ দূর কর; চিন্তিত হইয়া রজনী জাগরণ করিবার আবশ্যকতা নাই; তোমার স্বামিগণ নিজভুজবলে অনতিকালমধ্যেই পুনরায় এই বসুমতী অধিকার করিবেন। তোমার ন্যায় সুশীলা ও সুলক্ষণা কামিনীদিগের কখনই চিরকাল ক্লেশ ভোগ করিতে হয় না; আমি শুনিয়াছি; অবশ্যই তুমি ভর্ত্তৃগণের সহিত নিষ্কণ্টকে রাজ্য ভোগ করিবে।
“হে দ্রুপদনন্দিনি! পাণ্ডবেরা ধৃতরাষ্ট্রতনয়দিগের বধসাধনরূপ বৈরনির্য্যাতন করিয়া রাজ্যাধিকার প্রাপ্ত হইলে, যে সমস্ত দর্পবিমোহিত কুরুকামিনীগণ তোমাকে পদব্রজে পাণ্ডবদিগের সহিত বনে গমন করিতে দেখিয়া উপহাস করিয়াছিল, অচিরাৎ তাহাদিগের সেই গর্ব্ব খর্ব্ব ও সঙ্কল্প ব্যর্থ হইয়াছে দেখিবে। যাহারা নিতান্ত দুঃখের সময় তোমার অপ্রিয় কার্য্য করিয়াছে; তাহাদিগকে নিশ্চয়ই শমনসদনে গমন করিতে হইবে।
“প্রতিবিন্ধ্য, সুতসোম, শ্রুতকর্ম্মা, শতানীক ও শ্রুতসেনপ্রভৃতি তোমার পুত্ত্রেরা সকলেই ক্ষেমাস্পদ, মহাবীর ও কৃতাস্ত্র; ইহারা অভিমন্যুর ন্যায় দ্বারবতী নগরীতে সাতিশয় প্রীত ও অনুরক্ত হইয়া রহিয়াছে এবং সুভদ্রাও তোমার ন্যায় সেই সকল পুত্ত্রের প্রতি সমান স্নেহ করিয়া থাকেন। তিনি সন্তাপশূন্য ও নির্দ্বন্দ্ব হইয়া তোমাদিগের সুখে সুখ ও দুঃখে দুঃখ অনুভব করেন। প্রদ্যুম্নজননীও ইহাদিগের প্রতি সর্ব্বতোভাবে সেইরূপ ব্যবহার করিয়া থাকেন। এবং কৃষ্ণ, ভানুপ্রভৃতি পুত্ত্রগণ অপেক্ষা ইহাদিগকে সমধিক স্নেহ করেন। আমার শ্বশুর ইহাদিগের গ্রাসাচ্ছাদনের নিমিত্ত সর্ব্বদাই যত্নবান্ রহিয়াছেন। বলরাম প্রভৃতি অন্ধক ও বৃষ্ণিবংশীয়েরা উহাদিগের সহিত বয়স্য ভাবে কালযাপন করিতেছেন। হে ভাবিনি! প্রদ্যুম্ন ও তোমার পুত্ত্রগণের পরস্পর সদ্ভাব চিরকাল সমভাবে থাকিবে; তাহার সন্দেহ নাই।”
সত্যভামা দ্রৌপদীকে এবংবিধ নানাবিধ প্রিয় সম্ভাষণপূর্ব্বক প্রদক্ষিণ করিয়া রথে আরোহণ করিলে, কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে সান্ত্বনা করিয়া পাণ্ডবগণের নিকট বিদায় গ্রহণপূর্ব্বক স্বীয় নগরাভিমুখে যাত্রা করিলেন।
“হে দ্রুপদনন্দিনি! পাণ্ডবেরা ধৃতরাষ্ট্রতনয়দিগের বধসাধনরূপ বৈরনির্য্যাতন করিয়া রাজ্যাধিকার প্রাপ্ত হইলে, যে সমস্ত দর্পবিমোহিত কুরুকামিনীগণ তোমাকে পদব্রজে পাণ্ডবদিগের সহিত বনে গমন করিতে দেখিয়া উপহাস করিয়াছিল, অচিরাৎ তাহাদিগের সেই গর্ব্ব খর্ব্ব ও সঙ্কল্প ব্যর্থ হইয়াছে দেখিবে। যাহারা নিতান্ত দুঃখের সময় তোমার অপ্রিয় কার্য্য করিয়াছে; তাহাদিগকে নিশ্চয়ই শমনসদনে গমন করিতে হইবে।
“প্রতিবিন্ধ্য, সুতসোম, শ্রুতকর্ম্মা, শতানীক ও শ্রুতসেনপ্রভৃতি তোমার পুত্ত্রেরা সকলেই ক্ষেমাস্পদ, মহাবীর ও কৃতাস্ত্র; ইহারা অভিমন্যুর ন্যায় দ্বারবতী নগরীতে সাতিশয় প্রীত ও অনুরক্ত হইয়া রহিয়াছে এবং সুভদ্রাও তোমার ন্যায় সেই সকল পুত্ত্রের প্রতি সমান স্নেহ করিয়া থাকেন। তিনি সন্তাপশূন্য ও নির্দ্বন্দ্ব হইয়া তোমাদিগের সুখে সুখ ও দুঃখে দুঃখ অনুভব করেন। প্রদ্যুম্নজননীও ইহাদিগের প্রতি সর্ব্বতোভাবে সেইরূপ ব্যবহার করিয়া থাকেন। এবং কৃষ্ণ, ভানুপ্রভৃতি পুত্ত্রগণ অপেক্ষা ইহাদিগকে সমধিক স্নেহ করেন। আমার শ্বশুর ইহাদিগের গ্রাসাচ্ছাদনের নিমিত্ত সর্ব্বদাই যত্নবান্ রহিয়াছেন। বলরাম প্রভৃতি অন্ধক ও বৃষ্ণিবংশীয়েরা উহাদিগের সহিত বয়স্য ভাবে কালযাপন করিতেছেন। হে ভাবিনি! প্রদ্যুম্ন ও তোমার পুত্ত্রগণের পরস্পর সদ্ভাব চিরকাল সমভাবে থাকিবে; তাহার সন্দেহ নাই।”
সত্যভামা দ্রৌপদীকে এবংবিধ নানাবিধ প্রিয় সম্ভাষণপূর্ব্বক প্রদক্ষিণ করিয়া রথে আরোহণ করিলে, কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে সান্ত্বনা করিয়া পাণ্ডবগণের নিকট বিদায় গ্রহণপূর্ব্বক স্বীয় নগরাভিমুখে যাত্রা করিলেন।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন