স্থান—বেলুড়,
ভাড়াটিয়া মঠ-বাটী
কাল—ফেব্রুআরি, ১৮৯৮
বেলুড়ে গঙ্গাতীরে শ্রীযুক্ত নীলাম্বর মুখোপাধ্যায়ের বাগানবাটী ভাড়া করিয়া
আলমবাজার হইতে ঐ স্থানে মঠ উঠাইয়া আনা হইয়াছে। সে বার ঐ বাগানেই
শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মতিথিপূজা১ হয়। স্বামীজী নীলাম্বরবাবুর বাগানেই অবস্থান
করিতেছিলেন।
জন্মতিথিপূজায় সে-বার বিপুল আয়োজন! স্বামীজীর আদেশমত ঠাকুরঘর পরিপাটী
দ্রব্যসম্ভারে পরিপূর্ণ। স্বামীজী সেদিন স্বয়ং সকল বিষয়ের তত্ত্বা- বধান
করিয়া বেড়াইতেছিলেন। পূজার তত্ত্বাবধান শেষ করিয়া স্বামীজী শিষ্যকে বলিলেন,
‘পৈতে এনেছিস্ তো?’
শিষ্য। আজ্ঞে হাঁ। আপনার আদেশমত সব প্রস্তুত। কিন্তু এত পৈতার যোগাড় কেন,
বুঝিতেছি না।
স্বামীজী। দ্বি-জাতিমাত্রেরই( উপনয়ন-সংস্কার অধিকার আছে। বেদ স্বয়ং তার
প্রমাণস্থল। আজ ঠাকুরের জন্মদিনে যারা আসবে, তাদের সকলকে পৈতে পরিয়ে দেবো।
এরা সব ব্রাত্য (পতিত)হয়ে
গেছে। শাস্ত্র বলে, প্রায়শ্চিত্ত করলেই ব্রাত্য আবার উপনয়ন- সংস্কারের
অধিকারী হয়। আজ ঠাকুরে শুভ জন্মতিথি, সকলেই তাঁর নাম নিয়ে শুদ্ধ হবে। তাই
আজ সমাগত ভক্তমন্ডলীকে পৈতে পরাতে হবে। বুঝলি?
শিষ্য। আমি আপনার আদেশমত অনেকগুলি পৈতা সংগ্রহ করিয়া আনিয়াছি। পূজান্তে
আপনার অনুমতি অনুসারে সমাগত ভক্তগণকে ঐগুলি পরাইয়া দিব।
স্বামীজী। ব্রাহ্মণেতর ভক্তদিগকে এরূপ গায়ত্রী-মন্ত্র (এখানে শিষ্যকে
ক্ষত্রিয়াদি দ্বিজাতির গায়ত্রী-মন্ত্র বলিয়া দিলেন)দিবি। ক্রমে দেশের সকলকে
ব্রাহ্মণপদবীতে উঠিয়ে নিতে হবে; ঠাকুরের ভক্তদের তো কথাই নেই।
হিন্দুমাত্রেই পরম্পর পরম্পরের ভাই। ‘ছোঁব না, ছোঁব না’ বলে এদের আমরাই হীন
করে ফেলেছি। তাই দেশটা হীনতা, ভীরুতা, মূর্খতা ও কাপুরুষতার পরাকাষ্ঠায়
গিয়েছে। এদের তুলতে হবে, অভয়বাণী শোনাতে হবে। বলতে হবে—‘তোরাও আমাদের মতো
মানুষ, তোদেরও আমাদের মতো সব অধিকার আছে।’ বুঝলি?
শিষ্য। আজ্ঞে হাঁ।
স্বামীজী। এখন যারা পৈতে নেবে, তাদের গঙ্গাস্নান করে আসতে বল্। তারপর
ঠাকুরকে প্রণাম করে সবাই পৈতে পরবে।
স্বামীজীর আদেশমত সমাগত প্রায় ৪০।৫০ জন ভক্ত ক্রমে গঙ্গাস্নান করিয়া অসিয়া,
শিষ্যের নিকট গায়ত্রী-মন্ত্র লইয়া পৈতা পরিতে লাগিল। মঠে হুলস্থূল। পৈতা
পরিয়া ভক্তগণ আবার ঠাকুরকে প্রণাম করিল, এবং স্বামীজীর পাদপদ্মে প্রণত হইল।
তাহাদিগকে দেখিয়া স্বামীজীর মুখারবিন্দ যেন শতগুণে প্রফুল্ল হইল।
(স্বামি-শিষ্য-সংবাদ পৃষ্ঠা নং::৭৪)
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন