২০ জুলাই ২০১৩
"গায়ত্রী মন্ত্রের বর্ননা"
ওঁ ভূভবঃ স্বঃ
তত্ সবিতুর্বরেন্যং
ভর্গো দেবস্য ধীমহি ।
ধিয়ো যো নং প্রচোদয়াত্ ।।ওঁ।।
অনুবাদ :যিনি ত্রিলোকের স্রষ্টা অথ্যাৎ সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রসবিতা, সে সচ্চিদানন্দঘন নিরাকার পরমব্রহ্মের বরনীয় জ্যোতি কে আমরা ধ্যান করি। তিনি আমাদের মন ও বুদ্ধিকে শুভ কার্যে
প্রেরনা দান করুন।
তাত্পর্যঃ বলা যায় ভূ ভুবঃ স্বঃ অথ্যাৎ পৃথিবী ,অন্তরীক্ষ ,বিশ্বব্রহ্মন্ডে ,এবং সর্বত্র সেই পরমপুরুষ নিরাকার পরমেশ্বরের প্রভাব বা জ্যোতি বিদ্যমান ।তাকে ঘিরেই আমাদের জন্ম ,মৃত্যু ,জীবন সব। তাই তার কাছে আমাদের প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের জীবনকে সাত্ত্বিক ভাবে অতিবাহিত করার
জন্যে কৃপা করেন । ঋক ,সাম ,যজুঃ এই তিন বেদেই আমরা মন্ত্রটি পাই যথাক্রমে ঋকবেদ ৩/৬২/১০
যজুঃবেদ ৩/৩৫,৩০/২সামবেদ উত্তর আর্চিক ৬/৩/১০। এই মন্ত্রের দেবতা সবিতা ।
দ্রষ্ট্রা ঋষি বিশ্বামিত্র ,ছন্দ গায়ত্রী এবং এটাই বেদের সর্ব শ্রেষ্ঠ মন্ত্র এবং ছন্দ ।
১৯ জুলাই ২০১৩
মা আদিশক্তি দুর্গা পূজা
মা আদিশক্তি দুর্গা পূজার মধ্য দিয়ে হিন্দু
জাতি ও হিন্দু সমাজের ও হিন্দু সংহতি শক্তি গঠনের ইঙ্গিত দেখা যায় । সংহতির ও ঐক্যের এক
বড় দৃষ্টান্ত মা দুর্গার মধ্যেই আছে । দেবী সুক্তে দেবী স্বয়ং বলেছেন-
অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসূনাং চিকিতুষী প্রথমা
যজ্ঞিয়নাম্ ।
তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরত্রা ভূরিস্ত্রাতাং
ভূর্য্যাবেশয়ন্তীম্ ।।
( এর অর্থ – আমি রাষ্ট্রী , রাষ্ট্রের অধীশ্বরী , রাজ্য রক্ষার্থে যে সম্পদের প্রয়োজন আমি তাহার বিধান কর্তা
। সংসারে শান্তি লাভের
জন্য যে ব্রহ্মজ্ঞান প্রয়োজন ,আমি তাহাই জানি । আমি এক হইয়াও বহু
রুপা । সর্ব জীবে আমি প্রবিষ্ট
হইয়া আছি । দৈবী সম্পদ শালী দেবতারা যাহা সাধন করেন সকলই আমার উদ্দ্যেশে সম্পন্ন হয় )
মা দুর্গার দক্ষিণে লক্ষ্মী ও গণেশ ও বামে
সরস্বতী ও কার্ত্তিক । গণেশ হলেন গণশক্তির প্রতীক। গণেশ হলেন শূদ্র শক্তির প্রতীক । কর্মের তত্ত্ব এখানে বিদ্যমান । গণেশ বলতে শ্রম শক্তিকে
বোঝায় । গণেশ গণদেবতা বা জাতির সমষ্টির প্রতীক ।
নবপত্রিকা কি এবং কেন ?
দুর্গা পূজার সময় যদি আমরা মণ্ডপে গিয়ে শ্রী গণেশ কে দেখি, ত দেখতে পাই
তাঁর পার্শ্বে লাল পেড়ে শাড়িতে ঘোমটা তে ঢাকা একটি কলা বৃক্ষ দেখি ।
অনেকে এটি কে কলা বৌ ও শ্রী গণেশের স্ত্রী হিসাবে বলে থাকেন । কিন্তু আদৌ
এটি শ্রী গণেশের বৌ নয় । এটিকে ‘নবপত্রিকা’ বলা হয় । এটি মা দুর্গা ।
অর্থাৎ গণেশের জননী । গণেশের স্ত্রীর নাম রিদ্ধি ও সিদ্ধি ।
নবপত্রিকার আক্ষরিক অর্থ বোঝায় নয়টি পাতা । কিন্তু এখানে নয়টি উদ্ভিদ
দিয়ে নবপত্রিকা গঠন করা হয় । এই নয়টি উদ্ভিদ মা দুর্গার নয়টি শক্তির
প্রতীক । এই নয়টি উদ্ভিদ হল- কদলী বা রম্ভা ( কলা গাছ ), কচু, হরিদ্রা (
হলুদ ), জয়ন্তী , বিল্ব ( বেল ), দাড়িম্ব ( দাড়িম ), অশোক, মান ও ধান ।
একটি সপত্র কলাগাছের সাথে অপর আট টি সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে দুটি বেলের
সাথে সাদা অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়িয়ে ঘোমটা
দিয়ে বধূর আকার দেওয়া হয় । তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে দুর্গা দেবীর ডান
পাশে রাখা হয় । এটি গণেশের ডান পাশে দেখা যায় ।
আসুন এবার নয়
টি উদ্ভিদের অধিষ্টাত্রী দেবীর সম্বন্ধে জানি । কলা গাছ এর অধিষ্টাত্রী
দেবী ব্রহ্মাণী , কচু গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা, হরিদ্রা গাছের
অধিষ্টাত্রী দেবী উমা, জয়ন্তী গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কার্ত্তিকী, বিল্ব
গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা, দাড়িম্ব গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী
রক্তদন্তিকা, অশোক গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা, মান গাছের অধিষ্টাত্রী
দেবী চামুন্ডা ও ধান গাছের অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী। দুর্গা পূজোর প্রথম
দিন সপ্তমীর দিন সকালে পুরোহিত নিজেই নবপত্রিকা কে নিয়ে নিকটস্থ কোন নদী
বা পুকুরে স্নান করাতে নিয়ে যান । সাথে মহিলারা উলু ধ্বনি ও শঙ্খ ধ্বনি
করতে করতে যান, ঢাকী রাও ঢাক বাজাতে বাজাতে যান । শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী
স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয়। তারপর পূজামণ্ডপে নিয়ে
এসে নবপত্রিকাকে দেবীর ডান দিকে একটি কাষ্ঠসিংহাসনে স্থাপন করা হয়।
পূজামণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপূজার মূল অনুষ্ঠানটির
প্রথাগত সূচনা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো
হয়। এরপর বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা প্রতিমাস্থ দেবদেবীদের সঙ্গেই পূজিত
হতে থাকেন । বিশেষভাবে লক্ষণীয় হল, নবপত্রিকা প্রবেশের পূর্বে পত্রিকার
সম্মুখে দেবী চামুণ্ডার আবাহন ও পূজা করা হয়। পত্রিকাস্থ অপর কোনো দেবীকে
পৃথকভাবে পূজা করা হয় না।
নবপত্রিকা কি ভাবে দুর্গা পূজার সাথে
মিশে গেলো – তা নিয়ে পণ্ডিত গনের নানা মত । মার্কণ্ড পুরানে নবপত্রিকা
পূজার বিধান নেই । দেবী ভাগবতে নব দুর্গার উল্লেখ থাকলেও নবপত্রিকার উল্লেখ
নেই । কালিকা পুরানে এই নিয়ম না থাকলে সপ্তমী তে পত্রিকা পূজার কথা আছে ।
কৃত্তিবাসী রামায়নে এর উল্লেখ পাওয়া যায় । – “বাঁধিলা পত্রিকা নব
বৃক্ষের বিলাস।”
সম্ভবত শবর জাতি গণ কোন এক সময় নয়টি গাছ দিয়ে
নব দুর্গার পূজা করতেন। সেই থেকে এই রীতি হয়তো দুর্গা পূজোতে প্রবেশ করেছে
। আবার শস্য দেবীকে দুর্গা দেবীর সাথে মিশিয়ে দেবার জন্য এই রীতির আয়োজন
। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি লিখেছেন, “আমি নবপত্রিকার উৎপত্তি ও
প্রয়োজন বিন্দুমাত্র বুঝিতে পারি নাই। নবপত্রিকা নবদুর্গা, ইহার দ্বারাও
কিছুই বুঝিলাম না। দেবীপুরাণে নবদুর্গা আছে, কিন্তু নবপত্রিকা নাই।...
নবপত্রিকা দুর্গাপূজার এক আগন্তুক অঙ্গ হইয়াছে।... বোধ হয় কোনও প্রদেশে
শবরাদি জাতি নয়টি গাছের পাতা সম্মুখে রাখিয়া নবরাত্রি উৎসব করিত। তাহাদের
নবপত্রী দুর্গা-প্রতিমার পার্শ্বে স্থাপিত হইতেছে।
written by Sumon Basak
“মানবতা, সনাতন ধর্ম ও বর্তমান হিন্দু ছেলে-মেয়ে"
“মানবতা” বলে আলাদা কোন ধর্ম আছে কিনা আমার জানা নেই। বরং, আমাদের সনাতন ধর্মই হচ্ছে মানব ধর্ম। সনাতন মানে চিরস্থায়ী, চিরকালের ধর্ম। সনাতন ধর্মই পশুকে মানুষ ও মানুষকে দেবতায় উন্নীত করে।
ফেসবুকে অনেক হিন্দু ছেলে-মেয়ে আছে, যাদের religious view হচ্ছে “মানবতা বা Humanity”। ২য় বিশ্বযুদ্ধ ঘটানোর দায়ে লজ্জিত জার্মানরা প্রায় ৪৫ বছর ধরে নিজেদের জার্মান বলে পরিচয় দিতে লজ্জিত বোধ করেছে। তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, “আমরা কেন নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করছি? আমরা কি অতীতে কোন মানবতাবিরোধি কাজ করে দেখিয়েছি? হিন্দু হিসেবে পরিচয় দিলে কি আমাদের বন্ধু তালিকা সংকুচিত হয়ে যাবে? হাল ফ্যাশনের সাথে তাল মিলানো কি অসম্ভব হয়ে পড়বে? যারা নিজেরা হাফ ডজন বার প্রার্থনা করবে আর হিন্দুদের বলবে মানবতাবাদি হতে, এমন বন্ধু কিংবা পরিপার্শ্ব থেকে দূরে থাকাই ভাল!!!
ফেসবুকে অনেক হিন্দু ছেলে-মেয়ে আছে, যাদের religious view হচ্ছে “মানবতা বা Humanity”। ২য় বিশ্বযুদ্ধ ঘটানোর দায়ে লজ্জিত জার্মানরা প্রায় ৪৫ বছর ধরে নিজেদের জার্মান বলে পরিচয় দিতে লজ্জিত বোধ করেছে। তাহলে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, “আমরা কেন নিজেদের হিন্দু বলে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করছি? আমরা কি অতীতে কোন মানবতাবিরোধি কাজ করে দেখিয়েছি? হিন্দু হিসেবে পরিচয় দিলে কি আমাদের বন্ধু তালিকা সংকুচিত হয়ে যাবে? হাল ফ্যাশনের সাথে তাল মিলানো কি অসম্ভব হয়ে পড়বে? যারা নিজেরা হাফ ডজন বার প্রার্থনা করবে আর হিন্দুদের বলবে মানবতাবাদি হতে, এমন বন্ধু কিংবা পরিপার্শ্ব থেকে দূরে থাকাই ভাল!!!
"বর্ণ প্রথার সংস্কার জরুরি কেন"
সনাতন সন্দেশশুক্রবার, জুলাই ১৯, ২০১৩অন্যান্য, জীবন দর্শন, জীবনাচরন, বর্ন ভেদ, যৌক্তিক ব্যাখ্যা
কোন মন্তব্য নেই
বর্ণ প্রথা শ্রী ভগবানের সৃষ্টি। কিন্তু তিনি তা গুণ কর্ম অনুসারে নির্ণয় করতে বলেছেন , বর্তমান হিন্দু সমাজের রীতি অনুসারে জন্ম অনুসারে তা নির্ণয় করতে বলেন নি। বেদ বা গীতায় জন্মসুত্রে বর্ণ নির্ণয়ের পক্ষে কোনও স্পষ্ট নির্দেশ -ও নেই ।
হিন্দু সমাজের ব্যবহারিক জগতের বিধি বিধান দেশ কাল পরিস্থিতিতে মাঝে মাঝে পরিবর্তন হয়। এমন -ই এক সামাজিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সময় কিছু মানুষ জন্মানুসারে বর্ণ নির্ণয়ের প্রথা সুরু করেন। যারা সুরু করেছিলেন বা যারা কঠোর ভাবে তা মানতেন ,তাঁরা কেউ কেউ সুবিধাবাদি হলেও, সবাই খারাপ ছিলেন না। সুবিধাবাদী লোক গুলো ছাড়া বাকী যারা এই প্রথার প্রবর্তক ছিলেন তাঁরা আধুনিক অর্থনীতির ''শ্রম বিভাজন " নীতি প্রচলন করে সমাজ থেকে বেকারি উতখাত করতে চেয়েছিলেন।
১৬ জুলাই ২০১৩
"সনাতন ধর্মে জন্মান্তরবাদ"
সনাতন ধর্ম যতগুলো স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে, তার মধ্য জন্মান্তরবাদ অন্যতম। আমাদের ধর্ম বিশ্বাস করে, জীবের মৃত্যুর পর জীবাত্মা একদেহ পরিত্যাগ করলে কর্মফল ভোগ করার জন্য অন্য দেহ ধারণ করে এ জগতেই পুনরায় জন্মগ্রহণ করে। যেমন একই ব্যক্তি পুরাতন ছিন্ন বস্ত্র ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, সেইরূপ জীবাত্মাও জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ গ্রহন করে। বেদ, উপনিষদ এবং ভগবৎ গীতার মতে, এই জীবাত্মা স্বরূপতঃ ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু জাগতিক বস্তুর প্রতি আসক্তিবশতই আত্মাকে দেহ ধারণ করতে হয়।
মূলত, জীবাত্মার একাধিক জন্মগ্রহণের কারণ হল তার ভোগাকাঙ্ক্ষা। সনাতন ধর্ম পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে বিধায় প্রত্যেক জীবের কর্মফল পূর্ববর্তী জন্মের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে বলে ধারনা করা হয়।
১২ জুলাই ২০১৩
"সনাতন ধর্মে প্রতিমা বিসর্জন"
সনাতন সন্দেশশুক্রবার, জুলাই ১২, ২০১৩অন্যান্য, আদ্যশক্তি, প্রশ্নোত্তর, যৌক্তিক ব্যাখ্যা
কোন মন্তব্য নেই
সনাতন ধর্ম বিশ্বাস করে, “মানুষের দেহ পাঁচটি উপাদান
দিয়ে তৈরি”। যথাঃ আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও মাটি। তাই মৃত্যুর পর এই দেহ আগুনে দাহ
করা হয় অথবা মাটি দেওয়া হয়। যে উপাদান দিয়ে এই দেহ তৈরি, মৃত্যুর পর আবার সেই একই
উপাদানে মিশে যায়।
ঈশ্বর সর্বত্রই বিরাজিত। প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি প্রাণীর
মধ্যই তিনি আছেন। তবে, পঞ্চ উপাদানে গড়া এই মানব দেহের প্রতীকী হিসেবেই
আমরা পূজার সময় প্রতিমা তৈরি করি মাটি দিয়ে। পরবর্তীতে সেই মাটির প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাকে ঈশ্বর জ্ঞানে পূজা করি। এই প্রতিমা পূজার সর্বশেষ
ধাপ হচ্ছে বিসর্জন। জলের মাধ্যমেই যেন মাটির প্রতিমা পুনরায় প্রকৃতিতে মিশে যায়,
সেই জন্যই আমরা গঙ্গার জলে প্রতিমা বিসর্জন দেই।
১১ জুলাই ২০১৩
"সনাতন ধর্মে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া"
সনাতন সন্দেশবৃহস্পতিবার, জুলাই ১১, ২০১৩অন্যান্য, জীবন দর্শন, জীবনাচরন, হিন্দুত্ববাদ.
কোন মন্তব্য নেই
অন্ত মানে শেষ। ইষ্টি মানে যজ্ঞ। সুতরাং ‘অন্তেষ্টি’ শব্দের অর্থ শেষ যজ্ঞ। এই শেষযজ্ঞ বলতে বোঝায়
অগ্নিতে মৃতদেহ আহুতি দেওয়া। সোজা কথায় পচনশীল মৃতদেহটি সযন্তে দাহ করা। অন্তেষ্টিক্রিয়ার
সুনির্দিষ্ট মন্ত্র ও বিধি-বিধান আছে। দাহকারী কে কে হতে পারে, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তার ক্রমও নির্দিষ্ট আছে। দাহের অধিকারী জ্যেষ্ঠপুত্র, অভাবে অন্যপুত্রগণ, অভাবে শাস্ত্র
নির্দেশিত অন্য কোন ব্যাক্তি স্নান করে শবদেহ শ্মশানে এনে প্রথমে অন্নপাক করতে হবে। মৃত দেহকে কখনও বস্ত্রশূন্য
করতে নেই। শবদেহে ঘি মাখিয়ে স্নান করাতে হবে।
গয়াতীর্থ বিষ্ণুর মাহাত্ম্য জড়িত। কুরুক্ষেত্র,
গঙ্গা, যমুনা, কৌশিকী, চন্দ্রভাগা প্রভৃতি
নদী সকল পাপ নাশ করে। ভদ্রা অবকাশ, গন্ডকী, সরযু প্রভৃতি পবিত্র নদী।
"পরমেশ্বর শ্রী ভগবান ও পরমেশ্বরী শ্রী ভগবতী স্বরূপত এক"
পরমেশ্বর শ্রী ভগবান ও পরমেশ্বরী শ্রী ভগবতী স্বরূপত এক। রুচি ও অধিকার ভেদে
এক এক জন সেই 'একমেবাদ্বিতীয়ম" এর পুরুষ রূপকে, কেউ
নারী রূপকে, কেউ বা রুপাতী ব্রহ্ম পরমাত্মাকে ইষ্ট বা সাধ্য বলে গ্রহন করেন। একই শাস্ত্রকার
বা আচার্য বা বিশিষ্ট দেবতা বিভিন্ন শাস্ত্রে তাই উপাসকের
প্রকৃতি
ভেদে ভিন্ন ভিন্ন আদেশ দিয়েছেন। এই
কারনেই সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা 'ব্রহ্ম সংহিতায়" শ্রী দুর্গা শ্রী
কৃষ্ণের নির্দেশে চলেন এমন কথা বলেন আবার
মহামুনি ব্যাসদেব রচিত শ্রী শ্রী চণ্ডী তে সম্পূর্ণ উলটো কথা বলেন। সেখানে শ্রী ভগবতীর মহিমার সামনে ভগবানের
অক্ষমতার কথা কাতর কণ্ঠে নিবেদন করেন
শ্রী ব্রহ্মা। এ প্রসঙ্গে
চণ্ডীর প্রথম অধ্যায়ের ৭৩ থেকে ৮৭ শ্লোকের
অংশ বিশেষ আলোচনা করছি।
০৭ জুলাই ২০১৩
"হিন্দুর ইতিহাস"- সৌজন্যে নচিকেত প্রপাঠক
বাংলাদেশি হিন্দুর ইতিহাস
শিক্ষার ‘পরিবেশ পরিচিতি সমাজ’
বা অন্যান্য বোর্ড বইয়ে হিন্দুদের
যেভাবে উপস্থাপনা করা হয় তাতে
যেকোন হিন্দু শিশু পূর্ব পুরুষের লজ্জায় লজ্জিত হয়ে জীবনের প্রথমেই
বিশাল ধাক্কা খায়। আর পশ্চিম
বঙ্গের বাম সরকার তো ভোট ব্যাঙ্ক রক্ষায় সারকুলার ই দিয়ে দিয়েছে,’Muslim rule should not
attract any criticism. Destruction of temples by muslim invaders and rulers
should not be mentioned’.Circular no.syl/89/1;Dated 28.04.1989).Ministry of
education,west Bengal.
অগত্যা ভরসা উইকিপিডিয়া,encyclopedia তথা ইন্টারনেট এবং নিরপেক্ষ বই। কিন্তু এ ব্যস্ত যুগে অতো মনোযোগী পাঠক হওয়া কঠিন। তাই কজন বাঙ্গালি হিন্দু আজ জানে যে ইংরেজ দের আগে প্রায় পুরো ভারত বর্ষ ছিল হিন্দু মারাঠাদের অধীনে। আমার এ লেখায় আমি চেষ্টা করব সব তথ্যের লিংক দিতে।লেখাটা দুই ভাগে বিভক্ত । একভাগে খুব সংক্ষেপে ইতিহাস বর্ণনা আর আরেক ভাগে হিন্দু জাতিগুলর সামরিক পরিচয় দান।
হিন্দুর সামরিক ইতিহাস বলা শুরু করতে চাই তখন থেকে যখন থেকে তা বাইরের সভ্যতার সাথে দীর্ঘ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।তাই শক,হুন,গ্রীকদের সাথে সংঘর্ষ এ ক্ষেত্রে বাদ(শক,হুনরা আস্তে আস্তে ভারতে মিশে গিয়েছে) ।৬৩৪ সালে ইরান বিজয় এর পর ৬৩৮ সাল থেকে হযরত উমার এর নির্দেশে আরবরা বেশ কয়েক বার সিন্ধু আক্রমন করে পরাজিত হয়।
অগত্যা ভরসা উইকিপিডিয়া,encyclopedia তথা ইন্টারনেট এবং নিরপেক্ষ বই। কিন্তু এ ব্যস্ত যুগে অতো মনোযোগী পাঠক হওয়া কঠিন। তাই কজন বাঙ্গালি হিন্দু আজ জানে যে ইংরেজ দের আগে প্রায় পুরো ভারত বর্ষ ছিল হিন্দু মারাঠাদের অধীনে। আমার এ লেখায় আমি চেষ্টা করব সব তথ্যের লিংক দিতে।লেখাটা দুই ভাগে বিভক্ত । একভাগে খুব সংক্ষেপে ইতিহাস বর্ণনা আর আরেক ভাগে হিন্দু জাতিগুলর সামরিক পরিচয় দান।
হিন্দুর সামরিক ইতিহাস বলা শুরু করতে চাই তখন থেকে যখন থেকে তা বাইরের সভ্যতার সাথে দীর্ঘ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।তাই শক,হুন,গ্রীকদের সাথে সংঘর্ষ এ ক্ষেত্রে বাদ(শক,হুনরা আস্তে আস্তে ভারতে মিশে গিয়েছে) ।৬৩৪ সালে ইরান বিজয় এর পর ৬৩৮ সাল থেকে হযরত উমার এর নির্দেশে আরবরা বেশ কয়েক বার সিন্ধু আক্রমন করে পরাজিত হয়।
“ওঁ-কার তত্ত্ব”
আমাদের সকল কাজের শুরুতেই “ওঁ তৎ সৎ ” উচ্চারণ করে শুরু
করা উচিৎ।
ওঁ -প্রণব(ব্রহ্ম), তৎ-জীব, সৎ-জগৎ। ব্রহ্মের শ্রেষ্ঠ
প্রকাশ বেদ। জীবের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ ব্রহ্মজ্ঞ। জগত কর্মময়। কর্মের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ
যজ্ঞ। সুতরাং, “ওঁ তৎ সৎ” মন্ত্রে বেদ, ব্রহ্মজ্ঞ ও যজ্ঞকে বোঝায়। তাই, আমাদের সকল
কাজের শুরুতেই “ওঁ তৎ সৎ ” উচ্চারণ করে শুরু করা উচিৎ। এছাড়া আমাদের সনাতন ধর্মে
ওঁ-কার কে বলা হয় পবিত্রতা ও মঙ্গলতার প্রতীক। প্রণব বা ওঁ-কারই বেদের নির্যাস ও
ব্রহ্মবস্তু।
এই সম্পর্কে গীতায় (৭ অধ্যায় /৮ নং শ্লোক) ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
“আমি জলের রস, চন্দ্র-সূর্যের কিরণ, বেদের ওঁ(প্রণব),
আকাশে শব্দ ও মানুষের মধ্য পুরুষত্ব রূপে বিরাজ করি।”
যোগদর্শনের শ্রেষ্ঠ আচার্য পতঞ্জলি যোগসূত্রে
সমাধিপাদে(১ম, ২৭-২৮) বলেছেন,
“তস্য বাচকঃ প্রণবঃ। তজ্জপস্তুদর্থভাবনম্।”- প্রণব
ঈশ্বরের নাম। তাঁর জপ ও চিন্তা করনীয়।
ওঁ বা প্রণব হচ্ছে মন্ত্রের প্রাণ। পূজা বা ধ্যানের সময়
মন্ত্র উচ্চারণে “প্রণব” না থাকলে মন্ত্রের ক্রিয়া হয় না, প্রাণশক্তি নেই বলে।
অথচ, পূজার সময় অনেক পুরোহিতরা মন্ত্রের শুরুতে “ওঁ” উচ্চারন না করে; “নমো” বলে
মন্ত্র শুরু করান। যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, একটি ভুল পদ্ধতি।
অনেকেই জেনে বা না জেনে ওঁ এবং ঔঁ-কারের ভিন্ন অর্থ,
ব্যাখ্যা প্রয়োগ করে থাকে। এদের মাঝে পার্থক্য কি? পার্থক্য শুধু বাংলা ও সংস্কৃত
ভাষায়। ওঁ- কার বাংলায় এবং ঔঁ-কার সংস্কৃতিতে। শ্রী শ্রী স্বামী স্বরুপানন্দ পরমহংসদেব
বলেছেন- “ওঁ, ওম, ঔং, অউম, ঔঁ” এই পাঁচ প্রকার উচ্চারণের মধ্য বস্তুগত বা অর্থগত
কোনো পার্থক্য নেই।
ওঁ-ই সৃষ্টির আদি শব্দ। নির্গুণ-নিস্ক্রিয় ব্রহ্মের এ
সক্রিয় ভাব। এই সক্রিয় ভাব হতেই সৃষ্টির বিকাশ। তাই, যেকোনো কাজের শুরুতেই “ওঁ তৎ
সৎ ” উচ্চারণ করুন এবং পূজার সময় প্রথমে “ওঁ” উচ্চারণ করে মন্ত্রপাঠ শুরু
করুন।
-----------------------------------
কৃতজ্ঞতাঃ শ্রী জয় রায়
# বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুনঃ
গীতাধ্যান- ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী
জ্ঞানমঞ্জুরি- শ্রী শিবশঙ্কর চক্রবর্তী
হিন্দুর গর্ব রসায়নে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী বেঙ্কটরামন রামকৃষ্ণন...
রাইবোজমের ত্রিমাত্রিক গঠন এবং তার ক্রিয়াপদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য ২০০৯-এ রসায়নে নোবেল পেয়েছিলেন রামকৃষ্ণন, আমেরিকার টমাস এ স্টেইটজ এবং ইজরায়েলের আদা ই ইয়োনাথ। সহকর্মীদের মধ্যে ‘বেঙ্কি’ নামে পরিচিত ৫৮ বছরের রামকৃষ্ণন বর্তমানে কেমব্রিজের এমআরসি ল্যাবরেটরি অফ মলিকিউলার বায়োলজি স্ট্রাকচারাল স্টাডিজ ডিভিশনের বিজ্ঞানী।
ভেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণান ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কাড্ডালোর জেলার চিদাম্বরামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা সি. ভি. রামকৃষ্ণান ও মাতা রাজলক্ষ্মী। পিতা-মাতা উভয়েই বরোদা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। গুজরাটের ভাদোদারায় তিন বছর বয়সে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭১ সালে পদার্থবিদ্যায় বিএসসি ডিগ্রী অর্জন করেন।
জন্মসূত্রে ব্রিটেনের নাগরিক না হয়ে ‘নাইটহুড’ পাওয়া বিরল সম্মানের অধিকারী হয়েছেন ২০১২ সাল। ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, মলিকিউলার বায়োলজিতে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবেই তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে ।
http://www.facebook.com/AamiHindu
জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের অগ্রদূত মেঘনাদ সাহা...
জন্ম ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকার
কাছে শ্যাওড়াতলী গ্রামে। গরীব ঘরে জন্ম। বাবা জগন্নাথ সাহা ছিলেন মুদি। অর্থাভাবে বহুপ্রতিকুলতা সত্বেও ঢাকা মিডল স্কুলে
প্রথম স্থান অর্জন করেন। বঙ্গভঙ্গ
আন্দোলনে জড়িত হওয়ার অপরাধে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন। প্রেসিডেন্সী কলেজে সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও প্রশান্ত চন্দ্র
মহালনবিশের সহপাঠী
এবং আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ও আচার্য আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ছাত্র
।
শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে নয় – সমগ্র বিজ্ঞানের জগতে আধুনিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি গড়ে উঠেছে যে ক’জন মানুষের মৌলিক তত্ত্বের ওপর – অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা তাঁদের অন্যতম। ১৯২০ সালে মেঘনাদ সাহার তাপীয় আয়নায়নের সমীকরণ (আয়নাইজেশান ইকুয়েশান) প্রকাশিত হবার পর থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে যত গবেষণা হয়েছে তাদের প্রায় সবগুলোই সাহার সমীকরণ দ্বারা প্রভাবিত।
নরওয়ের বিখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী সেভিন রোজল্যান্ড অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত “থিওরেটিক্যাল এস্ট্রোফিজিক্স” বইতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন এ’কথা। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের পারমাণবিক তত্ত্ব থেকে শুরু করে বিগ-ব্যাং তত্ত্বের পরীক্ষণ পর্যন্ত সহজ হয়ে উঠেছে যে যন্ত্রের উদ্ভাবনের ফলে – সেই সাইক্লোট্রনের উদ্ভাবক নোবেল বিজয়ী আর্নেস্ট লরেন্স সহ অসংখ্য বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অর্জন করেছেন মেঘনাদ সাহা তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে।
নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী আর্নল্ড সামারফেল্ড, নীল্স বোর, ম্যাক্স বর্ন, আলবার্ট আইনস্টাইন, আর্থার এডিংটন, এনরিকো ফার্মি, আর্থার কম্পটন প্রমুখ দিকপাল মুগ্ধতার সাথে স্বীকার করেছেন মেঘনাদ সাহার অনন্য প্রতিভার কথা । ভারতবর্ষের বিজ্ঞানচর্চার সাথে বিশ্বের পরিচয় ঘটিয়ে দেয়ার ব্যাপারে এবং ভারতের বিজ্ঞান-গবেষণাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার ব্যাপারে মেঘনাদ সাহার অবদান অনস্বীকার্য।
গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে রয়েল সোসাইটির ফেলোশিপ পাবার পাশাপাশি মেঘনাদ সাহা নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন চার বার। ভারতীয় উপমহাদেশে বিশ্বমাপের বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে মেঘনাদ সাহার অক্লান্ত পরিশ্রমে।
দেশে নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞান পড়ানো শুরু হয়েছে মেঘনাদ সাহার হাতে। নিরলস চেষ্টা ও পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স। ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স, ইন্ডিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটি, ইন্ডিয়ান সায়েন্স নিউজ এসোসিয়েশান – সবগুলো সংগঠনই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে।
বাংলাদেশ ও ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই মেঘনাদ সাহার ‘টেক্সট বুক অব হিট’ বইটা পড়েছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মেঘনাদ সাহা মূলত পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন না। তিনি বিএসসি ও এমএসসি পাশ করেছেন মিশ্র গণিতে। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় পদার্থবিজ্ঞান শুধু শিখেছেন তাই নয় – ক্রমশঃ পৌঁছে গেছেন এই বিষয়ের শিখরে।
উপমহাদেশে প্রথম সাইক্লোট্রন স্থাপিত হয় মেঘনাদ সাহার প্রচেষ্টায়। অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার পরও থেমে থাকেন নি তিনি। সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করে গেছেন তিনি। দরিদ্র অশিক্ষিত মা-বাবার সন্তান হয়েও মেধা, পরিশ্রম ও নিষ্ঠার জোরে একজন মানুষ যে কত বড় হয়ে উঠতে পারেন মেঘনাদ সাহা তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
মেঘনাদ সাহা সম্পর্কে আলবার্ট আইনস্টাইনের উক্তি:
“ Dr. M.N. Shaha has won an honoured name in the whole scientific world ”
শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে নয় – সমগ্র বিজ্ঞানের জগতে আধুনিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি গড়ে উঠেছে যে ক’জন মানুষের মৌলিক তত্ত্বের ওপর – অধ্যাপক মেঘনাদ সাহা তাঁদের অন্যতম। ১৯২০ সালে মেঘনাদ সাহার তাপীয় আয়নায়নের সমীকরণ (আয়নাইজেশান ইকুয়েশান) প্রকাশিত হবার পর থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে যত গবেষণা হয়েছে তাদের প্রায় সবগুলোই সাহার সমীকরণ দ্বারা প্রভাবিত।
নরওয়ের বিখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী সেভিন রোজল্যান্ড অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত “থিওরেটিক্যাল এস্ট্রোফিজিক্স” বইতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন এ’কথা। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের পারমাণবিক তত্ত্ব থেকে শুরু করে বিগ-ব্যাং তত্ত্বের পরীক্ষণ পর্যন্ত সহজ হয়ে উঠেছে যে যন্ত্রের উদ্ভাবনের ফলে – সেই সাইক্লোট্রনের উদ্ভাবক নোবেল বিজয়ী আর্নেস্ট লরেন্স সহ অসংখ্য বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অর্জন করেছেন মেঘনাদ সাহা তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে।
নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী আর্নল্ড সামারফেল্ড, নীল্স বোর, ম্যাক্স বর্ন, আলবার্ট আইনস্টাইন, আর্থার এডিংটন, এনরিকো ফার্মি, আর্থার কম্পটন প্রমুখ দিকপাল মুগ্ধতার সাথে স্বীকার করেছেন মেঘনাদ সাহার অনন্য প্রতিভার কথা । ভারতবর্ষের বিজ্ঞানচর্চার সাথে বিশ্বের পরিচয় ঘটিয়ে দেয়ার ব্যাপারে এবং ভারতের বিজ্ঞান-গবেষণাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার ব্যাপারে মেঘনাদ সাহার অবদান অনস্বীকার্য।
গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে রয়েল সোসাইটির ফেলোশিপ পাবার পাশাপাশি মেঘনাদ সাহা নোবেল পুরষ্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন চার বার। ভারতীয় উপমহাদেশে বিশ্বমাপের বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে মেঘনাদ সাহার অক্লান্ত পরিশ্রমে।
দেশে নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞান পড়ানো শুরু হয়েছে মেঘনাদ সাহার হাতে। নিরলস চেষ্টা ও পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স। ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স, ইন্ডিয়ান ফিজিক্যাল সোসাইটি, ইন্ডিয়ান সায়েন্স নিউজ এসোসিয়েশান – সবগুলো সংগঠনই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে।
বাংলাদেশ ও ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই মেঘনাদ সাহার ‘টেক্সট বুক অব হিট’ বইটা পড়েছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মেঘনাদ সাহা মূলত পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন না। তিনি বিএসসি ও এমএসসি পাশ করেছেন মিশ্র গণিতে। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় পদার্থবিজ্ঞান শুধু শিখেছেন তাই নয় – ক্রমশঃ পৌঁছে গেছেন এই বিষয়ের শিখরে।
উপমহাদেশে প্রথম সাইক্লোট্রন স্থাপিত হয় মেঘনাদ সাহার প্রচেষ্টায়। অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবার পরও থেমে থাকেন নি তিনি। সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করে গেছেন তিনি। দরিদ্র অশিক্ষিত মা-বাবার সন্তান হয়েও মেধা, পরিশ্রম ও নিষ্ঠার জোরে একজন মানুষ যে কত বড় হয়ে উঠতে পারেন মেঘনাদ সাহা তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
মেঘনাদ সাহা সম্পর্কে আলবার্ট আইনস্টাইনের উক্তি:
“ Dr. M.N. Shaha has won an honoured name in the whole scientific world ”