এবার একটু বালির কথা শোনা যাক । বালি আর সুগ্রীব এর ভাতৃপ্রেম সকলেই বিদিত ছিলেন । বালির স্ত্রীর নাম তারা, সুগ্রীবের স্ত্রীর নাম রুমা । বালি ইন্দ্র দেবতার বর পুত্র ছিলেন, সুগ্রীব সূর্য দেবতার বর পুত্র ছিলেন। দুন্দুভি রাক্ষস বধ বধ করার সময় তাঁর সহযোগী রাক্ষস মায়াবী পলায়ন করেছিলো । পুনঃ একদিন মায়াবী রাক্ষস কিস্কিন্ধ্যায় এসে মহা উপদ্রব সৃষ্টি করলো। বানর দের বধ করতে লাগলো । খবর পেয়ে বালি গদা হস্তে ভীষণ মূর্তি ধরে ছুটলো। পেছন পেছন সুগ্রীব ও কিছু বানর ছুটলো । মায়াবী রাক্ষস মায়াবিদ্যায় পটু ছিলো । কিন্তু বালির সাথে যুদ্ধে পেরে উঠছিলো না। বালির গদায় আহত হয়ে মায়াবী রক্তবমন করতে লাগল । মায়াবী যুদ্ধে হেরে আরবল্লী পর্বতের একটি গুহায় ঢুকল । বালি গদা হাতে সেই গুহায় ঢুকতে গেলে সুগ্রীব বাধা দিয়ে বলল- “অগ্রজ, পলায়মান শত্রুর ওপর আঘাত যুদ্ধ নিয়মের বিরোধী। আপনি ফিরে চলুন।” বালি সে কথায় কান না দিয়ে গুহার ভেতরে একা প্রবেশ করল । দুজনে এমন যুদ্ধ হল গুহার ভেতরে যে মনে হল গোটা পর্বত টাই ভেঙে পড়বে । দুজনের যুদ্ধে পর্বতে কম্পন সৃষ্টি হয়ে ধস নামল । গুহার মধ্যে থেকে রক্ত নদীর ধারা বের হল। মায়াবী গুহার ভেতরে বালির গলার নকল করে আর্তনাদ করতে লাগল। সুগ্রীব ভাবল বালি বুঝি সেই রাক্ষসের হাতে মারা পরেছে। এবার যদি সেই রাক্ষস বের হয়ে আসে তবে গোটা কিস্কিন্ধ্যা ধ্বংস করবে। এই ভেবে সুগ্রীব একটা বড় পাথর চাপা দিয়ে গুহার মুখ বন্ধ করে রাজ্যে ফিরে এলো ।
রাজ্যে ফিরে সব বলতেই বালির পত্নী তারা কান্নায় ভেঙে পড়ে শাখা পলা সিঁদুর বিসর্জন দিয়ে বিধবার বেশ ধরল । বালির দেহ আনাও সম্ভব না। দেহ আনতে হলে পাথর সড়িয়ে আনতে হবে, আর তাহলে সেই রাক্ষস পুনঃ এসে উৎপাত আরম্ভ করবে । বালির কুশপুতুল পুড়িয়ে অঙ্গদ সকল প্রকার ভাবে পিতৃ শ্রাদ্ধ পালন করল । ফাঁকা রাজ আসনে কে বসবে ? অঙ্গদ এখনও শিশু । সুগ্রীব রাজা হয়ে অঙ্গদকে যুবরাজ ঘোষিত করে রাজ্য চালাতে লাগল । বছর ভরে যুদ্ধ করার পর বালি সেই গুহার ভেতরে মায়াবীকে বধ করলো । বালির শরীরে এত বল ছিলো যে সে হাত দিয়ে পাথর সড়িয়ে গুহা থেকে বের হল। রাজ্যে ফিরে সুগ্রীবকে রাজার আসনে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল- “তুই ভাই নামে কলঙ্ক । আমি সেখানে যুদ্ধ করছিলাম, আর তুই রাজ্য পাবার লোভে আমাকে পাথর চাপা দিয়ে গুহা মুখ বন্ধ করে এসে রাজা হয়েছিস। কি ভেবেছিলি যে আমি ঐ বদ্ধ গুহায় মারা যাবো?” জীবিত দাদাকে দেখে সুগ্রীব এসে ভ্রাতাকে আলিঙ্গন করে বলল- “অগ্রজ । আপনাকে জীবিত দেখে আমি আনন্দিত হয়েছি। আমি ভেবেছিলাম আপনি বুঝি ঐ রাক্ষসের হস্তে মারা গেছেন। যাতে ঐ রাক্ষস বের হতে না পারে সেই জন্য গুহা মুখ রুদ্ধ করেছিলাম।” বালি ত ঐ সকল কথা বিশ্বাস করলো না। উলটে বলল- “সুগ্রীব । যদি এতই তোর রাজা হবার ইচ্ছা তো আমাকে বলতিস তোকে এই রাজ্য দান করতাম । আমি স্বয়ং দশানন কে সাতবার জলে ডুবানোর ক্ষমতা রাখি । আর ঐ সামান্য রাক্ষস আমাকে বধ করবে? বেরিয়ে যা আমার রাজ্য হতে ।” বালি সুগ্রীবকে তাড়িয়ে দিল। সুগ্রীব গিয়ে ঋষমূক পর্বতে আশ্রয় নিলো । বালি সুগ্রীবের স্ত্রী রুমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে লাগলো । রুমা রাজী হল না, বালি তখন রুমাকে কারাবন্দী করল ।
একদিনের কথা । ভগবান শিব একজন মাদারী ( বাদর খেলা যে দেখায় তাকে মাদারী বলে ) সেজে আর হনুমান কে এক বাঁদর সাজিয়ে অযোধ্যা তে গেলো । রামের ইষ্ট শিব আবার শিবের ইষ্ট রাম । অযোধ্যা নগরীতে নেমে ডুগডুগি বাজিয়ে শিব বাদর খেলা দেখাতে লাগলো । রাজবাটিটে বাঁদর নাচানো দেখাতে গেলেন স্বয়ং পশুপতি । চার ভ্রাতা সেই খেলা দেখে আনন্দিত হলেন । শিশু রাম , দশরথকে অনুরোধ জানালেন তাঁকে ঐ বাঁদর টি দিতে । দশরথ রাজা মাদারীকে বললেন- “কত মূল্যে তুমি বাঁদর টি দেবে ?” মাদারী রূপধারী হর জানালেন- “মহারাজ। এর কোনো মূল্য লাগবে না। খালি একটি প্রতিজ্ঞা করতে হবে, যেনো সারা জীবন আপনার পুত্র এই বাঁদর টিকে তাঁর সেবক রূপে রাখেন।” রামচন্দ্র বচন দিলেন। মাদারী রূপী শিব সেইখানে বাঁদর টি দিয়ে চলে গেলেন । চার ভ্রাতা যখন খেলা খেলতো তখন বাণর রূপী হনুমান তাঁদের সাথে খেলা করতেন । ভগবান রাম খুবুই স্নেহ করতেন হনুমানকে । আর হনুমান মহারাজ সর্বদা রামচন্দ্রের আগেপিছে ঘুরতেন। প্রভুর খেলা সামগ্রী যেমন কন্দু, ঘুড়ির লাটাই, তির ইত্যাদি এনে এনে দিতেন । গাছে উঠে সুগন্ধি পুস্প বা মিষ্ট ফল পেরে পেরে দিতেন । সুগ্রীবের অবস্থার কথা রামচন্দ্র যোগবলে জেনেছিলেন। তিনি হনুমানকে সুগ্রীবের কাছে ঋষমূক পর্বতে গিয়ে অবস্থান করতে বলেছিলেন। আর বলেছিলেন- যথা সময়ে আবার দেখা হবে ।
( ক্রমশঃ )
রাজ্যে ফিরে সব বলতেই বালির পত্নী তারা কান্নায় ভেঙে পড়ে শাখা পলা সিঁদুর বিসর্জন দিয়ে বিধবার বেশ ধরল । বালির দেহ আনাও সম্ভব না। দেহ আনতে হলে পাথর সড়িয়ে আনতে হবে, আর তাহলে সেই রাক্ষস পুনঃ এসে উৎপাত আরম্ভ করবে । বালির কুশপুতুল পুড়িয়ে অঙ্গদ সকল প্রকার ভাবে পিতৃ শ্রাদ্ধ পালন করল । ফাঁকা রাজ আসনে কে বসবে ? অঙ্গদ এখনও শিশু । সুগ্রীব রাজা হয়ে অঙ্গদকে যুবরাজ ঘোষিত করে রাজ্য চালাতে লাগল । বছর ভরে যুদ্ধ করার পর বালি সেই গুহার ভেতরে মায়াবীকে বধ করলো । বালির শরীরে এত বল ছিলো যে সে হাত দিয়ে পাথর সড়িয়ে গুহা থেকে বের হল। রাজ্যে ফিরে সুগ্রীবকে রাজার আসনে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল- “তুই ভাই নামে কলঙ্ক । আমি সেখানে যুদ্ধ করছিলাম, আর তুই রাজ্য পাবার লোভে আমাকে পাথর চাপা দিয়ে গুহা মুখ বন্ধ করে এসে রাজা হয়েছিস। কি ভেবেছিলি যে আমি ঐ বদ্ধ গুহায় মারা যাবো?” জীবিত দাদাকে দেখে সুগ্রীব এসে ভ্রাতাকে আলিঙ্গন করে বলল- “অগ্রজ । আপনাকে জীবিত দেখে আমি আনন্দিত হয়েছি। আমি ভেবেছিলাম আপনি বুঝি ঐ রাক্ষসের হস্তে মারা গেছেন। যাতে ঐ রাক্ষস বের হতে না পারে সেই জন্য গুহা মুখ রুদ্ধ করেছিলাম।” বালি ত ঐ সকল কথা বিশ্বাস করলো না। উলটে বলল- “সুগ্রীব । যদি এতই তোর রাজা হবার ইচ্ছা তো আমাকে বলতিস তোকে এই রাজ্য দান করতাম । আমি স্বয়ং দশানন কে সাতবার জলে ডুবানোর ক্ষমতা রাখি । আর ঐ সামান্য রাক্ষস আমাকে বধ করবে? বেরিয়ে যা আমার রাজ্য হতে ।” বালি সুগ্রীবকে তাড়িয়ে দিল। সুগ্রীব গিয়ে ঋষমূক পর্বতে আশ্রয় নিলো । বালি সুগ্রীবের স্ত্রী রুমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে লাগলো । রুমা রাজী হল না, বালি তখন রুমাকে কারাবন্দী করল ।
একদিনের কথা । ভগবান শিব একজন মাদারী ( বাদর খেলা যে দেখায় তাকে মাদারী বলে ) সেজে আর হনুমান কে এক বাঁদর সাজিয়ে অযোধ্যা তে গেলো । রামের ইষ্ট শিব আবার শিবের ইষ্ট রাম । অযোধ্যা নগরীতে নেমে ডুগডুগি বাজিয়ে শিব বাদর খেলা দেখাতে লাগলো । রাজবাটিটে বাঁদর নাচানো দেখাতে গেলেন স্বয়ং পশুপতি । চার ভ্রাতা সেই খেলা দেখে আনন্দিত হলেন । শিশু রাম , দশরথকে অনুরোধ জানালেন তাঁকে ঐ বাঁদর টি দিতে । দশরথ রাজা মাদারীকে বললেন- “কত মূল্যে তুমি বাঁদর টি দেবে ?” মাদারী রূপধারী হর জানালেন- “মহারাজ। এর কোনো মূল্য লাগবে না। খালি একটি প্রতিজ্ঞা করতে হবে, যেনো সারা জীবন আপনার পুত্র এই বাঁদর টিকে তাঁর সেবক রূপে রাখেন।” রামচন্দ্র বচন দিলেন। মাদারী রূপী শিব সেইখানে বাঁদর টি দিয়ে চলে গেলেন । চার ভ্রাতা যখন খেলা খেলতো তখন বাণর রূপী হনুমান তাঁদের সাথে খেলা করতেন । ভগবান রাম খুবুই স্নেহ করতেন হনুমানকে । আর হনুমান মহারাজ সর্বদা রামচন্দ্রের আগেপিছে ঘুরতেন। প্রভুর খেলা সামগ্রী যেমন কন্দু, ঘুড়ির লাটাই, তির ইত্যাদি এনে এনে দিতেন । গাছে উঠে সুগন্ধি পুস্প বা মিষ্ট ফল পেরে পেরে দিতেন । সুগ্রীবের অবস্থার কথা রামচন্দ্র যোগবলে জেনেছিলেন। তিনি হনুমানকে সুগ্রীবের কাছে ঋষমূক পর্বতে গিয়ে অবস্থান করতে বলেছিলেন। আর বলেছিলেন- যথা সময়ে আবার দেখা হবে ।
( ক্রমশঃ )
1 Comments:
সনাতনধর্ম এমন এক মহা দর্শন,যা বুঝতে গেলে সেরম বুদ্ধি ও মন লাগবে।এ এক এমন মহা সত্য যার অনুসারী সংখ্যায় বাড়ল কি কমল,সত্য সত্যই থাকবে।এ ধর্মানুসারী সেরকম না বাড়ার কারণ হল ১/বহু মানুষ ব্রম্ভচর্য পালন করেন,
২/কাউকে জোর করে স্বমতে আনেনা
৩/অন্য ধর্মের হিংস্রতায় বহুজন ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং হচ্ছে
৪/বহু বছর ধরে উপযুক্ত সংগঠনের অভাব থাকা,এখন বহু সংগঠন হচ্ছে।
মানুষের চিন্তাভাবনা যত প্রসারিত হবে এ ধর্মের অনুসারী তত বাড়বে,বর্তমানে সে প্রমান কিছুক্ষেত্রে দেখাও যাচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন