বিভিন্ন শাস্ত্র গ্রন্থে গুরু তত্ত্ব ও গুরু মহিমা সম্বন্ধে যা যা বর্ণনা করা হয়েছে, তা সম্বন্ধে সংক্ষিপ্তভাবে বিবৃত হলো।
> রুদ্রযামলে –
অনন্তর গুরু ও শিষ্যের কর্ত্তাব্যাকর্ত্তব্য কথিত হইতেছে। – রুদ্রযামলে কথিত আছে, যে, – কদাচ গুরুর আজ্ঞা লঙ্ঘন করিবে না এবং সহসা কোন বাক্যের প্রত্যুত্তর প্রদান করাও উচিত নহে। দিবানিশি দাসের ন্যায় গুরুর আজ্ঞা প্রতিপালন করিবে।।
> সারসংগ্রহে –
লিখিত আছে, যে, – সদ্ গুরু আশ্রিত শিষ্যকে একবৎসর পর্য্যন্ত পরীক্ষা করিয়া তৎপরে মন্ত্র প্রদান করিবে। কিন্তু স্বপ্নলব্ধ মন্ত্রে কালাকাল বিবেচনার আবশ্যক নাই। যেরূপ অমাত্যকৃত পাপ রাজায় এবং পত্নীকৃত পাপ পতিতে সংক্রান্ত হয়, তদ্রূপ গুরুও শিষ্যকৃত পাপে অভিভূত হইয়া থাকেন। এক বৎসরে ব্রাহ্মণ, দুই বৎসরে ক্ষত্রিয়, তিন বৎসরে বৈশ্য এবং চারি বৎসরে শূদ্রশিষ্য-যোগ্যতা প্রাপ্ত হয়।।
> তারাপ্রদীপে –
লিখিত আছে, যে, – মন্ত্রের অক্ষর সকলকে দেবতাস্বরূপ এবং সেই দেবতাকে গুরুস্বরূপ বিবেচনা করিবে, কদাচ তাহাদিগের ভেদজ্ঞান করিবে না ।।
> রুদ্রযামলে –
লিখিত আছে, যে, – যদি গুরুর দ্রব্য গ্রহণে অভিলাষ করে অথবা গুরুপত্নী গমন করে, তাহা হইলে সেই ব্যক্তি মহাপাতকে লিপ্ত হয়, কোনরূপ প্রায়শ্চিত্তে তাহার পাপের শান্তি হয় না। যে ব্যক্তি গুরুর নিন্দা শ্রবণ করে, তাহার সেই দিনকৃত পূজা দেবী গ্রহন করেন না।
> কুলার্ণবে –
কথিত আছে, যে, – যদি কোন স্থানে গুরুর নিন্দা শ্রুতিগোচর হয়, তাহা হইলে কর্ণদ্বয় আবৃত করিয়া তৎক্ষণাৎ তথা হইতে দূরে গমন করিবে, যেন আর সেই সকল দুর্বাক্য কর্ণগোচর হইতে না পারে।
> নিত্যানন্দে –
লিখিত আছে, যে, – মনুষ্যবৎ জ্ঞান করিবে না, যদি গুরুকে মনুষ্য বলিয়া জ্ঞান করা যায়, তাহা হইলে কি মন্ত্রজপ, কি পূজা কিছুতেই সিদ্ধিলাভের সম্ভাবনা নাই। যদি গুরু একগ্রামে অবস্থিতি করেন, তাহা হইলে শিষ্য প্রতিদিন ত্রিসন্ধ্যা তাঁহাকে প্রণাম করিবে, গুরু এক ক্রোশ দূরে অবস্থিত হইলে প্রতিদিন একবার তাঁহার নিকট গিয়া প্রণাম করিবে। গুরু অর্দ্ধযোজন দূরে থাকিলে শিষ্য পঞ্চ পর্ব্বে গিয়ে বন্দনা করিবে, যদি এক যোজন হইতে দ্বাদশ যোজন মধ্যে অবস্থিতি করেন, তাহা হইলে যোজনসংখ্যক মাসে গিয়া প্রণাম করিবে। যদি গুরুদেব অতি দূরদেশে থাকেন, তাহা হইলে প্রতি বর্ষে বর্ষে এক এক বার গিয়া শিষ্য তাঁহার চরণ বন্দনা করিবে।।
> যামলে –
জামলে লিখিত আছে, যে, – যে ব্যক্তি গুরুর নিন্দা করে, সে গতশ্রী ও গতায়ু হইয়া শতকোটি কল্প নরকে নিমগ্ন থাকে।।
> পুরশ্চরণরসোল্লাসে –
লিখিত আছে, যে, – গুরুকে সর্বদা শিবময় ভাবনা করিবে। গুরু পুত্রকে গণেশসদৃশ, বধূকে লক্ষ্মী ও সরস্বতী ন্যায় এবং গুরুর কুল ভৈরবগণ সদৃশ বিবেচনা করিতে হয়।
> বৃহন্নীলতন্ত্রে –
লিখিত আছে, যে, – গুরুর অভাবে গুরুপত্নীর অর্চ্চনা করিবে। তাঁহার অভাবে গুরুপুত্র, গুরুপুত্রের অভাবে গুরুকন্যা, গুরুকন্যার অভাবে গুরুস্নুষা এবং এই সকলের অভাবে গুরুবংশীয় অপরের পূজা করিবে। যদি তদ্ধংশীয়গণেরও অভাব হয়, তাহা হইলে গুরুর মাতামহ, মাতূল ও মাতুলানীর পূজা করিতে হয়।।
> গুরুগীতা –
লিখিত আছে, যে, – যে ব্যক্তি প্রতিদিন ভক্তিসহকারে গুরুর পাদোদক পান করেন, তিনি সার্দ্ধত্রিকোটি তীর্থের ফল প্রাপ্ত হন ।।
> গুপ্তসাধনতন্ত্রে –
কথিত আছে, যে, – যে ব্যক্তি ত্রিসন্ধ্যা গুরুর পাদোদক পান করেন, সংসাররূপ মোহপথে তাঁহাকে আর পুনরাগমন করিতে হয় না এবং যে ব্যক্তি ভক্তিসহকারে গুরুপাদোদক শিরোপরি ধারণ করেন, তিনি সর্ব্বতীর্থের ফল প্রাপ্ত হন ।।
> যোগিনীতন্ত্রে –
কথিত আছে, যে, – গুরুর উচ্ছিষ্ট ও গুরুপুত্রের উচ্ছিষ্ট ভক্তিসহকারে ভোজন করিবে, যদি তাহাতে ঘৃণা বোধ করে, তাহা হইলে অধোগতি প্রাপ্ত হয় ।।
> কুলার্ণবে –
লিখিত আছে, যে, – গুরুর পাদুকা, ছত্র, শয্যা ও ভূষণাদি দর্শন মাত্র নমস্কার করিবে, সেই সমস্ত দ্রব্য কদাচ নিজে ভোগ করিবে না ।।
> গুরুগীতা –
কথিত আছে, যে, – গুরু যেরূপ উপদেশ প্রদান করিবেন, তাহাতেই মনঃশুদ্ধি করিবে। গুরু সৎই বলুন আর অসৎই বলুন তাঁহার আজ্ঞা লঙ্ঘন করা উচিত নহে। গুরুর নিকট কদাচ মিথ্যা বাক্য প্রয়োগ করিবে না ।।
> পিচ্ছিলাতন্ত্রে –
লিখিত আছে, যে, – যে ব্যক্তি ধর্ম্মবিমোহিত হইয়া পৈতৃক কুরুকুল পরিত্যাগ করে, সেই ব্যক্তি যে পর্য্যন্ত চন্দ্রসূর্য ধরাতলে অবস্থিত থাকে, তাবৎ কাল ঘোর নরকে পতিত হয় ।
> জামলে –
লিখিত আছে, যে, – গুরু, গুরুপুত্র, গুরুপত্নী ও গুরুর বন্ধুগণের দোষ কদাচ প্রকাশ করিবে না; ইঁহাদিগের কোন দ্রব্য ভক্ষণ করা উচিত নহে। কিন্তু তাঁহারে আপন ইচ্ছানুসারে প্রদান করিলে তাহা ভক্ষণ করিতে পারে।।
> কুলাগমে –
লিখিত আছে, যে, – যদি পূজাকালে গুরু, গুরুপত্নী বাঁ গুরুপুত্র সমাগত হন, তাহা হইলে পূজা পরিত্যাগ পূর্ব্বক তাঁহাদিগেরই অর্চ্চনা করিবে; ইহাই শাস্ত্রের সিদ্ধান্ত। সেই দিন শিষ্যের পক্ষে কোটি সূর্য্যগ্রহণের তুল্য। হে দেবি ! চন্দ্রগ্রহণ দিবসের ন্যায় সেই দিন শিষ্যের পক্ষে পরম শুভপ্রদ জানিবে।।
গুরুর দর্শনমাত্র সর্ব্বপাপ দূরীভূত হয়। হে দেবি ! গুরুকে দর্শন করিবা মাত্র তৎক্ষণাৎ দান করিবে। গুরুর প্রীতি সাধন হইলে দেবতার প্রীতি সাধন হয় এবং দেবতা সন্তুষ্ট হইলে মন্ত্র সিদ্ধি হইয়া থাকে।।
> মুন্ডমালাতন্ত্রে –
লিখিত আছে, যে, – গুরুর পূজা না করিয়া যে ব্যক্তি ইষ্টদেবতার অর্চ্চনা করে, ভৈরব স্বয়ং তাহার মন্ত্রের তেজ হরণ করেন।।
> রুদ্রযামলে –
লিখিত আছে, যে, -শিষ্য গুরুর সহিত কোন দ্রব্যের ক্রয় বিক্রয় বাঁ গুরুকে ঋণদান অথবা গুরুর নিকট হইতে ঋণ গ্রহণ করিবে না।।
Written by:Prithwish Ghosh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন