মৃত্যুর পরে শরীরে ধীরে ধীরে পচন ধরতে শুরু করে -- এ কথা সবারই জানা। কিন্তু মৃত্যুর পর মুহূর্ত থেকে পচন ধরা পর্যন্ত কী কী শারীরিক পরিবর্তন হয় বা কোন কোন পথ ধরে শরীরে পচন ধরতে শুরু করে, আসুন তা জেনে নিই -----
চিকিৎসা শাস্ত্র মতে, মৃত ঘোষণার অর্থ এই নয় যে শরীরের প্রতিটি কোষের মৃত্যু হয়েছে। হৃদযন্ত্র পাম্প করা বন্ধ করলে, কোষ গুলো অক্সিজেন পায় না। অক্সিজেন পাওয়া বন্ধ হলে পেশিীগুলো শিথিল হতে শুরু করে। পাশাপাশি অন্ত্র এবং মূত্রস্থলী খালি হতে শুরু হয়।শরীরের মৃত্যু ঘটলেও, অন্ত্র, ত্বক বা অন্য কোনও অংশে বসবাসকারী কোটি কোটি ব্যাক্টেরিয়া তখনও জীবিত থাকে। মৃত্যুর পর শরীরের অভ্যন্তরে যা ঘটে, সে সবের পিছনেই এই কোটি কোটি ব্যাক্টেরিয়ার অবদান থাকে।
মৃত্যুর পর সর্বপ্রথম শরীরের তাপমাত্রা প্রতি ঘণ্টায় ১.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট কমতে থাকে। এক্ষেত্রে শরীরের নিম্নাংশে রক্ত এবং তরল পদার্থ জমা হয়। ব্যক্তির ত্বকের আসল রঙের ভিত্তিতে তা ধীরে ধীরে গাঢ় বেগুনি-নীল রঙে পরিবর্তিত হতে শুরু করে। এরপর অত্যধিক ক্যালসিয়াম ক্ষরণের ফলে পেশী গুলো শক্ত হয়ে যায়। ২৪-৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এই অবস্থা থাকে।
এরপর শরীরে পচন ধরতে শুরু করে। রক্ত চলাচল বন্ধ হলে কার্বন-ডাই অক্সাইডের গঠন শুরু হয়, অম্লের মাত্রা বাড়তে থাকে। এর ফলে কোষগুলোতে ভাঙন ধরে। দুই-তিন দিনে শরীর পচতে শুরু করে। পরিপাকনালীতে থাকা ব্যাক্টেরিয়া এবং আণুবীক্ষণিক প্রাণীরা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তলপেট সবুজ বর্ণ ধারণ করে এবং তাতে গ্যাস তৈরি হয় আর তার চাপে শরীরের মলমূত্র নিষ্কাশিত হয়। 'পিউট্রেসিন' এবং 'ক্যাডাভেরিনের' মতো জৈবিক যৌগ শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়লে, দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করে। এই গন্ধই মৃতদেহের অন্যতম বৈশিষ্ট।
'নেক্রোসিস' পদ্ধতিতে এরপর শরীরের রং কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে। মৃতদেহের দুর্গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে ভিড় জমায় উচ্ছিষ্ট-ভোগী পোকা-মাকড়। মৃত শরীরকে খাদ্যভাণ্ডার হিসেবে ব্যবহার করা ছাড়াও, এই সমস্ত পরজীবী কীট সেখানে ডিমও পাড়ে। ডিম ফুটে বেরোনো শূককীট মাত্র এক সপ্তাহে শরীরের ৬০ শতাংশ নিকেশ করতে পারে। এভাবেই কেটে যায় প্রথম সাতদিন। এর পর ধীরে ধীরে প্রাণহীন মানবদেহ ক্রমে মাংস-চামড়ার খোলস ত্যাগ করে পরিণত হয় হাড় সর্বস্ব কঙ্কালে।
-
এই হ'ল আমাদের সাধের মানবদেহের স্বাভাবিক পরিণতি।
Written by: Prithwish Ghosh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন