বই-এ পড়া, নিশির ডাক এর উৎপত্তি বাঙালী বিশ্বাস থেকে একটু ভিন্ন। আদতে ব্যাপারগুলো সঠিক, তবে 'নিশি' কোন ভূত/প্রেত নয়। এইটি একটি উচ্চাটন বিধি যেইটা আন্দাজ অসম থেকে এসেছে। নিশির ডাক এর বিধি এইরকম: কোনো মুমূর্ষু ব্যক্তি, যার বাঁচার আশা নাই, তার পরিবারের লোকেরা অসম থেকে কাপালিকদের প্রেরণ করে আনেন। এইবার সেই কাপালিক বিধির দিন সন্ধ্যা কাটলে (এতে বোঝা যায় যে ব্যাপারটি ঘৃণ্য, ও অপদেবতাদের তুষ্ট করিয়ে করা, কারণ সন্ধ্যা পবিত্র সময়) কিছু মন্ত্র-পুজা করে, তারপর শহর /গ্রামের এক উচ্চস্থানে (পাহাড় জাতীয়) দাঁড়িয়ে মন্ত্রপূত ধুনো দিতে থাকে, সেই ধুনোর শক্তি নাকি সাংঘাতিক , এবং সেই ধোঁয়া পুরো গ্রামকে ঘুমে আচ্ছন্ন করে দেয়। কাপালিক এবার নিজের যা বিধি সেই করে একটি মাথাকাটা ডাবের জল অভিমন্ত্রিত করে মাঝরাত্রে বের হয়। তার সাথে পাড়ার যতলোক সবার নাম। প্রতিটি গৃহের সামনে গিয়ে সেই কাপালিক তিনবার গৃহস্বামীর নাম ধরে ডাকে, হাতে ডাব। যদি কোনো ভাগ্যহারা তিনবারের ভিতরে সাড়া দেয়, 'খপ' করে ডাবের মাথা বন্ধ করে দেয়া হয়। সেই ডাবের জল মুমূর্ষু ব্যক্তিকে পান করালে সেই ব্যক্তি সুস্থ হয়ে বেঁচে ওঠে এবং যিনি সাড়া দিয়েছিলেন তিনি দেহত্যাগ করেন। কিন্তু এইসব পিশাচসিদ্ধদের কারবার। বড় নোংরা, এবং ভগবান তাদের রসাতলেও স্থান দেন না। আরো শুনেছি, এই পিশাচসিদ্ধরা কখনোই সাধারণ মৃত্যু পায় না, অপঘাতে মরে।
কাপালিকদের সম্পর্কে ভারতীয় সমাজে যে সাধারণ ধারণাটি চালু রয়েছে, তার সারমর্ম এই—
• কাপালিকরা তান্ত্রিকদেরই একটা দলছুট সম্প্রদায়। তান্ত্রিকরা যদি ‘ডার্ক’ হয়ে থাকেন, কাপালিকরা আরও বেশি ছায়াচ্ছন্ন।
• কাপালিক মাত্রেই নরবলি দেন। শবসাধনা করেন।
• কাপালিকরা কালোজাদুর চর্চা করেন। তাঁরা অশুভশক্তির উপাসক।
• কাপালিকরা যে কোনও মানুষের যখন তখন ক্ষতি করতে তৎপর।
কিন্তু একথা স্বীকার করতেই হবে, বাস্তবে কোনও সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীই নিজেকে ‘কাপলিক’ বলে ঘোষণা করেন না। তান্ত্রিকরা তো ননই। পুরাণ অনুযায়ী, ত্রিজগতে একজনই ‘কাপালিক’। তিনি স্বয়ং শিব। ‘শিবপুরাণ’ থেকে জানা যায়, ব্রহ্মার সৃষ্টিতে মহাদেব মোটেই খুশি ছিলেন না। কিন্তু ব্রহ্মা তাঁর সৃষ্টি নিয়ে যথেষ্ট গর্ব পোষণ করতেন। এই গর্ব থেকেই চতুর্মুখ ব্রহ্মার শিরে আরও একটি মুণ্ড দেখা দেয়। শিব এই মুণ্ডটি কেটে ফেলেন। পরে ব্রহ্মা তাঁকে জানান, সব কিছু সৃষ্টি করলেও তিনি দুঃখ-দুর্দশা সৃষ্টি করেননি। জীবজগতের অজ্ঞতাই তাদের দুর্দশার জন্য দায়ী। শিব অনুতপ্ত হন। এবং তাঁর উপরে ব্রহ্মহত্যার পাপ এসে লাগে। প্রায়শ্চিত্তের জন্য তিনি ব্রহ্মকপালে ভিক্ষান্ন গ্রহণ করতে শুরু করেন। সেই থেকে তিনি ‘কাপালিক’ নামে পরিচিত হন।
আরও পড়ুন
শ্মশানভস্ম মাখেন, নগ্ন থাকেন, মৃতদেহ খান, তবু অঘোরীরা পূজিত হন কেন?
কাপালিক নামে ভারতে এক শৈব সম্প্রদায় বিদ্যমান। তাঁরা শিবকে আদর্শ বলে মনে করেন। কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন তাঁদের জীবনযাপনের একমাত্র পন্থা। তাঁরা গৃহত্যাগী, প্রান্তবাসী। অনেক সময়েই তাঁদের শ্মশানে বাস করতে দেখা যায়। এঁদের সাধনার একমাত্র লক্ষ্য আত্মোপলব্ধি।
এই অবসরে জেনে নেওয়া যেতে পারে কারা প্রকৃত কাপালিক।
• কাপালিকরা একধরণের তান্ত্রিক শৈব দর্শনে বিশ্বাসী।
• তাঁদের সামগ্রিক তত্ত্বধারণা ‘ভৈরবতন্ত্র’ নামের এক প্রাচীন গ্রন্থ থেকে গৃহিত।
• কাপালিকরা নরকরোটি বা নরকপাল সঙ্গে রাখেন। তাঁদের ভিক্ষাপাত্রটিও নরকপাল-নির্মিত।
• অঘোরীদের মতো তাঁরাও শ্মশানবাসী। তাঁরাও ভস্ম মাখেন। খাদ্যাখাদ্যভেদ করেন না।
• কাপালিকরা অনেক সময়েই বেদ-এর সিদ্ধান্ত মানেন না।
• তাঁরা আত্মোপলব্ধির জন্য শক্তি উপাসনা করেন। দেবীশক্তিকে তুষ্ট করে ক্ষমতালাভই তাঁদের সাধনপন্থা।
• কাপালিকরা হঠযোগ অভ্যাস করেন। হঠযোগের মাধ্যমে শক্তি আহরণ করতে চান।
• সাম্প্রতিক গবেষণা থেক জানা যাচ্ছে, বৌদ্ধতান্ত্রিক যুগে কাপালিকদের সঙ্গে সিদ্ধাচার্যদের কিছু লেনা-দেনা হয়। এই আদান-প্রদান পরে কাপালিকতন্ত্রকে অন্য আকার দেয়।
কাপলিক সম্প্রদায় ভারতে আজও বর্তমান। তবে তাঁদের সঙ্গে কালো জাদু, অনিষ্টকর ক্রিয়া বা অভিচার ইত্যাদির কোনও সম্পর্ক নেই।
কাপালিকদের সম্পর্কে ভারতীয় সমাজে যে সাধারণ ধারণাটি চালু রয়েছে, তার সারমর্ম এই—
• কাপালিকরা তান্ত্রিকদেরই একটা দলছুট সম্প্রদায়। তান্ত্রিকরা যদি ‘ডার্ক’ হয়ে থাকেন, কাপালিকরা আরও বেশি ছায়াচ্ছন্ন।
• কাপালিক মাত্রেই নরবলি দেন। শবসাধনা করেন।
• কাপালিকরা কালোজাদুর চর্চা করেন। তাঁরা অশুভশক্তির উপাসক।
• কাপালিকরা যে কোনও মানুষের যখন তখন ক্ষতি করতে তৎপর।
কিন্তু একথা স্বীকার করতেই হবে, বাস্তবে কোনও সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীই নিজেকে ‘কাপলিক’ বলে ঘোষণা করেন না। তান্ত্রিকরা তো ননই। পুরাণ অনুযায়ী, ত্রিজগতে একজনই ‘কাপালিক’। তিনি স্বয়ং শিব। ‘শিবপুরাণ’ থেকে জানা যায়, ব্রহ্মার সৃষ্টিতে মহাদেব মোটেই খুশি ছিলেন না। কিন্তু ব্রহ্মা তাঁর সৃষ্টি নিয়ে যথেষ্ট গর্ব পোষণ করতেন। এই গর্ব থেকেই চতুর্মুখ ব্রহ্মার শিরে আরও একটি মুণ্ড দেখা দেয়। শিব এই মুণ্ডটি কেটে ফেলেন। পরে ব্রহ্মা তাঁকে জানান, সব কিছু সৃষ্টি করলেও তিনি দুঃখ-দুর্দশা সৃষ্টি করেননি। জীবজগতের অজ্ঞতাই তাদের দুর্দশার জন্য দায়ী। শিব অনুতপ্ত হন। এবং তাঁর উপরে ব্রহ্মহত্যার পাপ এসে লাগে। প্রায়শ্চিত্তের জন্য তিনি ব্রহ্মকপালে ভিক্ষান্ন গ্রহণ করতে শুরু করেন। সেই থেকে তিনি ‘কাপালিক’ নামে পরিচিত হন।
আরও পড়ুন
শ্মশানভস্ম মাখেন, নগ্ন থাকেন, মৃতদেহ খান, তবু অঘোরীরা পূজিত হন কেন?
কাপালিক নামে ভারতে এক শৈব সম্প্রদায় বিদ্যমান। তাঁরা শিবকে আদর্শ বলে মনে করেন। কঠোর কৃচ্ছ্রসাধন তাঁদের জীবনযাপনের একমাত্র পন্থা। তাঁরা গৃহত্যাগী, প্রান্তবাসী। অনেক সময়েই তাঁদের শ্মশানে বাস করতে দেখা যায়। এঁদের সাধনার একমাত্র লক্ষ্য আত্মোপলব্ধি।
এই অবসরে জেনে নেওয়া যেতে পারে কারা প্রকৃত কাপালিক।
• কাপালিকরা একধরণের তান্ত্রিক শৈব দর্শনে বিশ্বাসী।
• তাঁদের সামগ্রিক তত্ত্বধারণা ‘ভৈরবতন্ত্র’ নামের এক প্রাচীন গ্রন্থ থেকে গৃহিত।
• কাপালিকরা নরকরোটি বা নরকপাল সঙ্গে রাখেন। তাঁদের ভিক্ষাপাত্রটিও নরকপাল-নির্মিত।
• অঘোরীদের মতো তাঁরাও শ্মশানবাসী। তাঁরাও ভস্ম মাখেন। খাদ্যাখাদ্যভেদ করেন না।
• কাপালিকরা অনেক সময়েই বেদ-এর সিদ্ধান্ত মানেন না।
• তাঁরা আত্মোপলব্ধির জন্য শক্তি উপাসনা করেন। দেবীশক্তিকে তুষ্ট করে ক্ষমতালাভই তাঁদের সাধনপন্থা।
• কাপালিকরা হঠযোগ অভ্যাস করেন। হঠযোগের মাধ্যমে শক্তি আহরণ করতে চান।
• সাম্প্রতিক গবেষণা থেক জানা যাচ্ছে, বৌদ্ধতান্ত্রিক যুগে কাপালিকদের সঙ্গে সিদ্ধাচার্যদের কিছু লেনা-দেনা হয়। এই আদান-প্রদান পরে কাপালিকতন্ত্রকে অন্য আকার দেয়।
কাপলিক সম্প্রদায় ভারতে আজও বর্তমান। তবে তাঁদের সঙ্গে কালো জাদু, অনিষ্টকর ক্রিয়া বা অভিচার ইত্যাদির কোনও সম্পর্ক নেই।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন