দশমহাবিদ্যার মধ্যে তারা দেবী দ্বিতীয় মহাবিদ্যা। তারার মূর্তিকল্পনা কালী অপেক্ষাও প্রাচীনতর।মায়ের এই রূপটি নীলবর্ণা লোলজিহ্বা করালবদনা,একজটা-বিভূষণা। অর্ধচন্দ্র পাঁচখানি শোভিত কপাল। ত্রিনয়নী লম্বোদরী বাঘছাল পরিহিতা। মা উত্তরমুখী ও তাঁর বাম চরণ শিবের বুকে। নীলপদ্ম খড়্গ ছুরি ও সমুণ্ড খর্পর রয়েছে চারিহাতে - শিবের উপর দাঁড়িয়ে আছেন মা।মায়ের আট যোগিনী মাকে ঘিরে থাকেন - মহাকালী,রুদ্রানী ,উগ্রা ,ভীমা,ঘোরা ,ভ্রমরী,মহারাত্রি,ভৈরবী। চৈত্র মাসের শুক্লা নবমীতে কালরাত্রির দিনে মায়ের পূজা হয়। মেরুর পশ্চিমকূলে চোল বলে এক হ্রদে মায়ের আবির্ভাব। ত্রিযুগ ধরে ইনি সেখানে তপস্যা করেন, তারা সত্বগুণাত্মিকা তত্ত্ববিদ্যাদায়িনী। তারা ভক্তদের ভবসাগর পার করিয়ে দেন। তিনি তাঁর নাম তারা। তিনি ভক্তদের দৈহিক (দেহ সম্পর্কিত),দৈবিক (ভাগ্য সম্পর্কিত) এবং ভৌতিক (তথা পার্থিব সম্পর্কিত) সকল বিপদ থেকে রক্ষা করেন। তারামায়ের ভক্তরা অল্প প্রচেষ্টাতেই ধর্ম,অর্থ,কম,মোক্ষ লাভ করেন। তারা মা নির্গুণ, নিরাকারা, জ্ঞানময়ী, ব্রহ্মময়ী, পুর্নময়ী এবং শুন্যময়ী। মা শুচী অসুচীর অতীত, বামাচারে তাঁর সাধনা করতে হয়। তারা মা মায়াপ্রপঞ্চর অতীত, আবার তা সত্বেও এর মধ্যেই বিরাজ করেন কারণ মায়া তাঁরই সৃষ্টি। মা প্রতিটি ভক্তের হৃদস্মশানে অধিষ্ঠিত থাকেন। ভক্ত যখন তাঁর সাধনা করেন তখন জ্ঞানাগ্নি রূপে প্রকট হন মা এবং ভক্তকে হাত ধরে নিয়ে যান অমৃতের লোকে মোক্ষের ঠিকানায়। তারা সাধনায় মা প্রথমে দেন ভোগসুখ ও অবশেষে মোক্ষ। তারাসাধ্নার মাধ্যমে সাধকের অবিদ্যা নাশ হয়, মোহ থেকে লাভ হয় মুক্তি এবং সবশেষে মোক্ষ,অর্থাত সাধককে আর ফিরে আসতে হয়না এই দুঃখময় সংসারে। তারা মা বাকশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলে তাঁকে নীল সরস্বতী বলা হয়। উগ্র বিপদ থেকে ভক্তদের রক্ষা করার জন্যে তিনি উগ্রতারা নামেও খ্যাত। তারার বিভিন্ন রূপান্তর - উগ্রতারা, নীল সরস্বতী, একজটা তারা, কুরুকুল্লা তারা, খদির বাহিনী তারা, মহাশ্রী তারা, বশ্যতারা, সিতাতারা, ষড়ভূজ সিতাতারা, মহামায়া বিজয়বাহিনী তারা ইত্যাদি। বৌদ্ধ ধর্মেও তারা দেবীর পূজা প্রচলিত। জেনে রাখা ভাল, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বলভদ্রদেবের বিগ্রহ কিন্তু এই তারা যন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত যেমন জগন্নাথ প্রতিষ্ঠিত দক্ষিনাকালির যন্ত্রের উপর এবং সুভদ্রা প্রতিষ্ঠিতা ভুবনেশ্বরী যন্ত্রের উপর।
লেখকঃ প্রীথিশ ঘোষ
লেখকঃ প্রীথিশ ঘোষ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন