হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী নরক হল চির অন্ধকারময় তলবিহীন এমন এক স্থান যেখানে সর্বদা মন্দ রাজত্ব করে। পূরাণ গুলির মধ্যে অগ্নি পূরাণ মাত্র ৪ টি নরকের উল্লেখ করে। (এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল এখানে নরকের ধারণা এক হলেও নরকের রূপ ভিন্ন ভিন্ন; অপরাধের প্রকার অনুযায়ী শাস্তি এবং শাস্তির প্রকার অনুযায়ী নরকেরও পৃথক পৃথক নামাঙ্কন ও বর্ণনা করা হয়েছে।) মনুস্মৃতি ২১ প্রকার নরকের উল্লেখ করে। তবে ভাগবত্ পূরাণ, দেবী-ভাগবত্ পূরাণ, বিষ্ণু পূরাণ এবং গরুড় পূরাণ এরা প্রত্যেকেই ২৮ ধরনের ভয়ঙ্কর নরকের কথা বলে। তাই এই ২৮ নরককেই মূল নরক হিসেবে গণ্য করা হয়। এই মূখ্য নরক গুলি ছাড়াও সহস্রাধিক অন্যান্য নরকের কথা স্বীকার করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মে মনে করা হয় কোন মানুষই সম্পূর্ণরূপে পাপী বা পূণ্যবান নয় তাই প্রত্যেকেরই আত্মাকে কোন না কোন নরকে যেতে হয় তবে নরক যেহেতু চিরশাশ্বত নয় সেহেতু শাস্তির সময়কাল শেষ হলেই সেই আত্মা কে মুক্তি দেওয়া হয়।
উপরোক্ত ২৮ টি নরক ও শাস্তির বিবরণ নিচে দেওয়া হল -----
১ তমিস্রা (অন্ধকার) --- স্ত্রী, সন্তান সমেত অন্যের সম্পত্তি হাতিয়ে নিলে -- এখানে অপরাধীকে বেঁধে রেখে খাদ্য এবং জল না দিয়ে ক্ষুধায় মারা হয়। যমদূতেরা তাকে ভর্তসনা ও প্রহার করতে থাকে যতক্ষন না সে ব্যথায় কাতর হয়ে পড়ে।
২ অন্ধতমিস্রা (অন্ধত্বের অন্ধকার) -- বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ ঘটিয়ে স্ত্রীলোকটিকে ভোগ করলে -- পাপী যতক্ষণ না তার চেতনা এবং দৃষ্টিশক্তি হারায় ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে অত্যাচার করা হয় এখানে। এই শাস্তিটির ব্যখ্যা -একটি বৃক্ষ কে একেবারে তার শিকড় থেকে ছেদ করার' সমান রূপে করা হয়।
৩ রৌরব (রুরু নামক হিংস্র জন্তুর নরক) --- হিংসাপরায়ন হয়ে শুধুমাত্র নিজেকে ও পরিবারকে ভালো রেখে কিন্তু অন্যান্য সকলের ক্ষতি করলে -- নরকে রুরু নামক সর্পসম জীবেরা সেই পাপীর শরীরকে ছিন্ন ভিন্ন করে।
৪ মহারৌরব (অতি হিংস্র) -- শুধুমাত্র নিজের সুখের খাতিরে অন্যের পরিবার, আত্মীয় ও সম্পত্তির সর্বনাশ করলে -- এই নরকে ক্রাব্যদ নামক অতীব হিংস্র রুরুগণ অপরাধীর শরীরের মাংস ভক্ষণ করে।
৫ কুম্ভিপাকম্ (পাত্রে ঝলসানো) --- পশু পাখিদের হত্যা করে তাদের পুড়িয়ে আহার্য করলে
-- যমদুতেরা অপরাধীকে একটি পাত্রে ফুটন্ত তেলের মধ্যে ততগুলি বছর ঝলসায় যতবছর না সেই সকল প্রাণীর শরীরে পুনরায় লোম জন্মায়।
৬ কালসূত্র (সময়ের ধাগা/মৃত্যু) --- একজন ব্রাহ্মণকে হত্যা করলে, গুরুজনদের শ্রদ্ধা না করলে
-- এই নরকের তল সম্পূর্ণ তামার তৈরী যা সর্বদা নিচে আগুন এবং উপরে সূর্যের তাপে চরম উত্তপ্ত হয়ে থাকে। পাপী এই তলে নিজের ভেতরে যেমন ক্ষুধা, তৃষ্ণায় জ্বলতে থাকে তেমনি সে শুতে, বসতে, দাঁড়াতে বা দৌড়াতে গেলে বাইরের উত্তপ্ত আঁচ তাকে রেহাই দেয় না।
৭ অসিপত্রবন/অসিপত্রকানন (যে বন এর পাতাগুলি তলোয়ার) --- পবিত্র বেদ এর ধর্মীয় শিক্ষা কে অগ্রাহ্য বা অবহেলা করে বৈধর্মে লিপ্ত হলে -- পাপী যমদূতের কষাঘাত থেকে পালিয়ে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে এই বনের দিকে ধাবিত হয় কিন্তু এখানকার গাছের পাতায় বিদ্ধ হয়। কষাঘাত ও তলোয়ারের ক্ষতের যন্ত্রনায় সে সাহায্যের জন্য চিত্কার করে ওঠে কিন্তু তার সেই চেষ্টা বিফলে যায়।
৮ শুকরামুখা (শুয়োরের মুখে) --- এই নরক রাজা এবং সরকারি ক্ষেত্রে জড়িত থাকা বিষেশ ব্যক্তি দের জন্য সংরক্ষিত যারা নির্দোষ কে শাস্তি এবং ব্রাহ্মণের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়
-- যমদূতেরা পাপীদের থেঁতলে, নিঙরে মারে যেমন ভাবে ইক্ষুদন্ড থেকে নির্যাস বের করা হয়। পাপীরা তীব্র যন্ত্রনায় ছটফট করে চিত্কার করে কাঁদতে থাকে ঠিক যেমন নির্দোষেরা কেঁদে উঠেছিল।
৯ অন্ধকূপম্ (অন্ধকারময় কুয়ো যার মুখটি লুকান) ---- মন্দ উদ্দেশ্য নিয়ে অন্যের ক্ষতি করলে, কীট পতঙ্গ দের হানি পৌছালে -- অপরাধী এখানে পশু, পাখি, সরীসৃপ, পতঙ্গ, জোঁক, কেঁচো এবং এগুলির ন্যায় অন্যান্য প্রভৃতি জীব দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নরকের যত্র তত্র ছুটতে বাধ্য হয়।
১০ কৃমিভোজনম্/কৃমিভক্ষ (কৃমিদেরআহার্য হওয়া) --- নিজের খাবার অতিথিদের, গুরুজনদের, শিশুদের অথবা ইশ্বরের সাথে ভাগ না করে স্বার্থপরের মত শুধু নিজে খেলে এবং পঞ্চ যজ্ঞ সম্পন্ন না করে খেলে; নিজের পিতা, ব্রাহ্মণ বা দেবতাদের ঘৃণার চোখে দেখলে এবং অলংকার নষ্ট করলে -- এই নরক হাজার যোজনা সরোবর যা কৃমিতে পরিপূর্ণ। পাপী ব্যক্তিকে কৃমিতে পরিণত করা হয় যাকে অন্য কৃমিদের খেয়ে বাঁচতে হয়। যার ফলস্বরূপ তাকে নিজেই নিজের শরীরকে হাজার বছর ধরে গিলে খেতে হয়।
১১ সন্দংশন্/সন্দম্স (চিম্টার নরক) ---- কোন ব্রাহ্মণ কে সর্বস্বান্ত করলে বা চরম দারিদ্রতা অবস্থার মধ্যে না থেকেও প্রয়োজন ছাড়া মূল্যবান রত্ন বা সোনা চুরি করলে, ব্রত বা বিশেষ নিয়মের লঙঘন করলে --- এখানে অপরাধীর শরীর উত্তপ্ত লাল লোহার গোলা এবং চিম্টা দিয়ে ছিন্ন ভিন্ন করা হয়।
১২ তপ্তসুর্মি/তপ্তমূর্তি (তপ্ত লাল লৌহ মূর্তি) ---- একজন পুরুষ অথবা নারী যে অপর নারী বা পুরুষ এর সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয় -- তাকে কষাঘাত করা হয় এবং বিপরীত লিঙ্গের তপ্ত লালাভ একটি লৌহমূর্তি কে আলিঙ্গন করতে বাধ্য করা হয়।
১৩ বজ্রকন্টক শাল্মলী (সুতির মত মলিন বৃক্ষ যা ধারণ করে বজ্রের মত কাঁটা) --- জন্তু -জানোয়ারদের সাথে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হলে অথবা মাত্রাতিরিক্ত যৌন ক্রিয়া করে থাকলে
-- যমদূতেরা পাপী কে এই বজ্রকন্টক শাল্মলী বৃক্ষে বেঁধে তার শরীরকে হিঁচড়ে টানতে থাকে যাতে তার শরীর ক্ষত-বিক্ষত এবং ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায়।
১৪ বৈতরণী (অতিক্রম) ---- বিশ্বাস করা হয় এটি একটি নদী যা নরক এবং পৃথিবীর ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। সর্বদা মল, পস্রাব, ঘাম, রক্ত, পুঁজ, চুল, হাড়, অস্থিমজ্জা, নখ, মাংস, মেদ ইত্যাদিতে পরিপুষ্ট হয়ে নরক থেকে প্রবাহিত হয়ে আসা এই নদী পৃথিবীর আগে একটি গন্ডি অবধি সীমাবদ্ধ থাকে। হিংস্র জলজ জন্তুরা এখানে অপরাধীর শরীর থেকে মাংস খুবলে খুবলে ভোজন করে। -- ভাগবৎ এবং দেবী ভাগবৎ পূরাণ অনুসারে রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করা ব্যক্তি, একজন রাজবংশজাত ক্ষত্রিয়, সরকারি পদে নিযুক্ত থাকা ব্যক্তিরা যারা তাদের কর্তব্যকে অবহেলা করে তা পালন করতে অস্বীকার করে তাদের জন্য সংরক্ষিত ঘৃণ্য এই নরক।
১৫ পুয়োদা (পুঁজ মিশ্রিত জল) ----- শুদ্র পতিগণ বা নিম্ন বর্গীয় মহিলা যৌনকর্মীর এবং বেশ্যা মহিলার যৌন সঙ্গিরা যারা পরিচ্ছন্নতা বজায় না রেখে পশুর ন্যায় জীবনযাপন করে এবং সভ্য আচরণ করতে ব্যর্থ হয় তাদের জন্য এই নরক-- পাপীরা পুঁজ, মুত্র, ঘর্ম, শ্লেষ্মা, লালা এবং অন্যান্য বর্জ্য মিশ্রিত এক সমুদ্রে পতিত হয়। সেখানে তাদের ঐ নোংরা জল গিলতে বাধ্য করা হয়।
১৬ প্রাণরোধা (জীবনের রোধ) --- যে সকল দুশ্চরিত্র ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য ব্যক্তিগণ কুকুর বা গাধাকে সঙ্গে নিয়ে আত্ম বিনোদনের জন্য জঙ্গলে পশু শিকারের খেলায় উন্মত্ত হয় -- নরকে তাদের কেই শিকার বানিয়ে যমদূতগণ তিরন্দাজীর খেলা খেলে থাকে।
১৭ বিসাশনা (হত্যাপ্রবণ) ---- ভাগবৎপূরাণ এবং দেবী ৎ পূরাণ এর উল্লেখানুযায়ী কোন ব্যক্তি নিজের পদের তুলনায় অধিক প্রতিপত্তি লাভ করে এবং নিজের সামাজিক অবস্থা বয়ান করতে গর্বে পশু উত্সর্গ করে তাকে অবশেষে হত্যা করলে -- এই নরকে ঐ পাপী ব্যক্তি কে যমদূতেরা অনবরত কষাঘাত করে মারে।
১৮ লালাভক্ষম(লালা খাদ্য রূপে) ---- ভাগবৎ ও দেবী ভাগবৎ পূরাণ অনুসারে একজন ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য স্বামী নিজের যৌন জ্বালা মেটাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্ত্রী কে নিজের বীর্য্যরস পান করাতে বাধ্য করলে -- সেই অপরাধিকে নরকে বীর্য্যরস পরিপূর্ণ একটি নদীতে নিক্ষেপ করা হয় যেখানে সে ঐ বীর্য্য পান করতে বাধ্য হয়।
১৯ সারমেয়দানা (সরমার হিংস্র পুত্রদের নরক) ---- লুন্ঠনকারীরা যারা সম্পত্তির লোভে অন্যের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বিষক্রিয়া ঘটায়; রাজা এবং অন্যান্য সরকারি ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা যারা কৌশলে ব্যবসায়ীদের অর্থ তছরূপ করে, যারা জনহত্যা এবং সমগ্র রাষ্ট্রের ভরাডুবির মত অপরাধে অংশগ্রহণ করে তাদের জন্য এই নরক -- -- এখানে হিংস্র বন্য কুকুর (সারমেয় - সরমার পুত্র-'সরমা' হলেন সংসারের সমস্ত কুকুরদের জননী) তাদের তীক্ষ্ন, ধারালো দাঁত দিয়ে যমদূত গণের আদেশে অপরাধিদের কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।
২০ অভিশ্চি/অভিশ্চিমত (প্রবাহহীন, জলহীন) ----- কোন ব্যক্তি মিথ্যা শপথ নিলে, ব্যবসায় মিথ্যা কথা বললে -- পাপীকে এখানে একশ' যোজন উঁচু একটি পর্বত যার দেওয়াল গুলি থেকে জলপ্রবাহের পরিবর্তে পাথর নির্গত হয় সেখান থেকে নিক্ষেপ করা হয়। যার ফলে তার শরীর অনবরত ভাঙতে থাকে তবে খেয়াল রাখা হয় যে সে যেন মারা না যায়।
২১ অয়হপান (লৌহ-পান) --- কোন ব্যক্তি ব্রত পালন করা কালীন বা একজন ব্রাহ্মণ ব্যক্তি মদ্য পান করলে --- এখানে যমদূতেরা পাপীদের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে গলন্ত লোহা গিলতে বাধ্য করে।
২২ ক্ষারকর্দমা(আম্লিক, লবণাক্ত কাদা): যে ব্যক্তি মিথ্যা অহংকারের বশে অন্য এমন ব্যক্তি যে তাঁর তুলনায় জন্মে, সাধনায়, জ্ঞানে, আচরণে, জাতিতে অথবা আধ্যাত্মিক অবস্থানে অনেক বড় তাকে অসন্মান করে -- এই নরকে যমদূতেরা পাপীকে এমনভাবে নিক্ষেপ করে যাতে সে যেন সরাসরি মাথায় চোট পায় এবং তারপর তার পাপীর ওপর অত্যাচার চালায়।
২৩ রাকষগণা-ভোজনা(রাক্ষসদের খাদ্যে পরিণত): যারা জীবন্ত মানুষের আত্মাহুতি, নরমাংস ভক্ষণপ্রথা পালন করে এই নরকে বন্দী হয় তারা --- তাদের হাতে নিহতরা এখানে রাক্ষস রূপে তাদেরকে ধারালো ছুরি ও অসি দিয়ে কাটে। তাদের রক্ত-মাংস ঐ রাক্ষসেরা মহানন্দে ভোজন করে এবং উদ্দম উল্লাসে নাচ-গান করে ঠিক যেমনভাব পাপীরা তাদের হত্যা করেছিল।
২৪ শূলপ্রথাম্ (তীক্ষ্ন শূল/বাণে বিদ্ধ) ----- কিছু মানুষ নিরীহ পশু বা পক্ষীদের উদ্ধার করার ভান করে আশ্রয় প্রদান করে কিন্তু তারপর সুতো, সুঁচ ইত্যাদি ব্যবহার করে তাদের উত্যক্ত করতে শুরু করে বা তাদেরকে প্রাণহীন খেলনার ন্যায় ব্যবহার করে। একই রকম ভাবে কিছু মানুষও অন্য মানুষের সঙ্গে এমনই আচরণ করে; প্রথমে ছল করে তাদের বিশ্বাস কে জিতে নিয়ে পরে তাদের ত্রিশূল বা বল্লম দিয়ে হত্যা করে -- নরকে এই সমস্ত অপরাধকারিদের শরীরকে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় ক্লান্ত করে ধারালো, সূচাগ্র শূলে বিদ্ধ করা হয়। ক্ষিপ্র, মাংসভোজী শকুন ও সারস জাতীয় পাখিরা তাদের শরীরের মাংস ছিড়ে গলা অবধি ভোজন করে।
২৫ দন্ডসুক(সর্প) --- বিদ্বেষ এবং উন্মত্ততায় পরিপূর্ণ হয়ে কিছু মানুষ অন্যদের সাপের ন্যায় হানি করে ----নরকে এদের পঞ্চ বা সপ্ত ফণাধারি বিশাল সর্প জীবন্ত গলাধঃকরণ করে।
২৬ অবাত-নিরোধনা(গহ্বরে আবদ্ধ ---: অন্যদের অন্ধকার কূপ, ফাটল বা পাহাড়ের গুহার মত স্থানে বন্দি করে রাখলে --- পাপিদের এই নরকে একটি অন্ধকারময় কুয়োর অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয় যার মধ্যে বিষাক্ত গন্ধ ও ধোঁয়া ভরে উঠে তার শ্বাসরোধ করে।
২৭ পরয়াবর্তন (ফিরে যাওয়া) ---- গৃহকর্তা যে ক্রূর দৃষ্টিতে নিজের অতিথি কে/দের স্বাগত জানায় এবং দূর্ব্যবহার করে, এই নরকে তাকে উচিত্ শিক্ষা প্রদান করা হয় --- কঠোর দৃষ্টিধারি শকুন, সারস, কাক ও এই প্রজাতির পক্ষিগণ তার দিকে তাক করে এবং অকস্মাত্ উড়ে এসে তার চোখ দুটো তুলে নিয়ে যায়।
২৮ সূচিমুখা (সূচবিদ্ধ মুখমন্ডল) --- একজন সদা সন্দেহকারী ব্যক্তি যে সর্বদা অন্যদের নিজের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার চিন্তায় সন্দেহ করে; নিজ অর্থবলের অহংকারে পাপ কার্য করে লাভ ও তা জমিয়ে রাখার মত অপরাধ করে --- এই নরকে যমদূতেরা তার সর্বাঙ্গ ধাগা বুনে সেলাই করে।
লেখকঃ প্রীথিশ ঘোষ
উপরোক্ত ২৮ টি নরক ও শাস্তির বিবরণ নিচে দেওয়া হল -----
১ তমিস্রা (অন্ধকার) --- স্ত্রী, সন্তান সমেত অন্যের সম্পত্তি হাতিয়ে নিলে -- এখানে অপরাধীকে বেঁধে রেখে খাদ্য এবং জল না দিয়ে ক্ষুধায় মারা হয়। যমদূতেরা তাকে ভর্তসনা ও প্রহার করতে থাকে যতক্ষন না সে ব্যথায় কাতর হয়ে পড়ে।
২ অন্ধতমিস্রা (অন্ধত্বের অন্ধকার) -- বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ ঘটিয়ে স্ত্রীলোকটিকে ভোগ করলে -- পাপী যতক্ষণ না তার চেতনা এবং দৃষ্টিশক্তি হারায় ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে অত্যাচার করা হয় এখানে। এই শাস্তিটির ব্যখ্যা -একটি বৃক্ষ কে একেবারে তার শিকড় থেকে ছেদ করার' সমান রূপে করা হয়।
৩ রৌরব (রুরু নামক হিংস্র জন্তুর নরক) --- হিংসাপরায়ন হয়ে শুধুমাত্র নিজেকে ও পরিবারকে ভালো রেখে কিন্তু অন্যান্য সকলের ক্ষতি করলে -- নরকে রুরু নামক সর্পসম জীবেরা সেই পাপীর শরীরকে ছিন্ন ভিন্ন করে।
৪ মহারৌরব (অতি হিংস্র) -- শুধুমাত্র নিজের সুখের খাতিরে অন্যের পরিবার, আত্মীয় ও সম্পত্তির সর্বনাশ করলে -- এই নরকে ক্রাব্যদ নামক অতীব হিংস্র রুরুগণ অপরাধীর শরীরের মাংস ভক্ষণ করে।
৫ কুম্ভিপাকম্ (পাত্রে ঝলসানো) --- পশু পাখিদের হত্যা করে তাদের পুড়িয়ে আহার্য করলে
-- যমদুতেরা অপরাধীকে একটি পাত্রে ফুটন্ত তেলের মধ্যে ততগুলি বছর ঝলসায় যতবছর না সেই সকল প্রাণীর শরীরে পুনরায় লোম জন্মায়।
৬ কালসূত্র (সময়ের ধাগা/মৃত্যু) --- একজন ব্রাহ্মণকে হত্যা করলে, গুরুজনদের শ্রদ্ধা না করলে
-- এই নরকের তল সম্পূর্ণ তামার তৈরী যা সর্বদা নিচে আগুন এবং উপরে সূর্যের তাপে চরম উত্তপ্ত হয়ে থাকে। পাপী এই তলে নিজের ভেতরে যেমন ক্ষুধা, তৃষ্ণায় জ্বলতে থাকে তেমনি সে শুতে, বসতে, দাঁড়াতে বা দৌড়াতে গেলে বাইরের উত্তপ্ত আঁচ তাকে রেহাই দেয় না।
৭ অসিপত্রবন/অসিপত্রকানন (যে বন এর পাতাগুলি তলোয়ার) --- পবিত্র বেদ এর ধর্মীয় শিক্ষা কে অগ্রাহ্য বা অবহেলা করে বৈধর্মে লিপ্ত হলে -- পাপী যমদূতের কষাঘাত থেকে পালিয়ে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে এই বনের দিকে ধাবিত হয় কিন্তু এখানকার গাছের পাতায় বিদ্ধ হয়। কষাঘাত ও তলোয়ারের ক্ষতের যন্ত্রনায় সে সাহায্যের জন্য চিত্কার করে ওঠে কিন্তু তার সেই চেষ্টা বিফলে যায়।
৮ শুকরামুখা (শুয়োরের মুখে) --- এই নরক রাজা এবং সরকারি ক্ষেত্রে জড়িত থাকা বিষেশ ব্যক্তি দের জন্য সংরক্ষিত যারা নির্দোষ কে শাস্তি এবং ব্রাহ্মণের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালায়
-- যমদূতেরা পাপীদের থেঁতলে, নিঙরে মারে যেমন ভাবে ইক্ষুদন্ড থেকে নির্যাস বের করা হয়। পাপীরা তীব্র যন্ত্রনায় ছটফট করে চিত্কার করে কাঁদতে থাকে ঠিক যেমন নির্দোষেরা কেঁদে উঠেছিল।
৯ অন্ধকূপম্ (অন্ধকারময় কুয়ো যার মুখটি লুকান) ---- মন্দ উদ্দেশ্য নিয়ে অন্যের ক্ষতি করলে, কীট পতঙ্গ দের হানি পৌছালে -- অপরাধী এখানে পশু, পাখি, সরীসৃপ, পতঙ্গ, জোঁক, কেঁচো এবং এগুলির ন্যায় অন্যান্য প্রভৃতি জীব দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নরকের যত্র তত্র ছুটতে বাধ্য হয়।
১০ কৃমিভোজনম্/কৃমিভক্ষ (কৃমিদেরআহার্য হওয়া) --- নিজের খাবার অতিথিদের, গুরুজনদের, শিশুদের অথবা ইশ্বরের সাথে ভাগ না করে স্বার্থপরের মত শুধু নিজে খেলে এবং পঞ্চ যজ্ঞ সম্পন্ন না করে খেলে; নিজের পিতা, ব্রাহ্মণ বা দেবতাদের ঘৃণার চোখে দেখলে এবং অলংকার নষ্ট করলে -- এই নরক হাজার যোজনা সরোবর যা কৃমিতে পরিপূর্ণ। পাপী ব্যক্তিকে কৃমিতে পরিণত করা হয় যাকে অন্য কৃমিদের খেয়ে বাঁচতে হয়। যার ফলস্বরূপ তাকে নিজেই নিজের শরীরকে হাজার বছর ধরে গিলে খেতে হয়।
১১ সন্দংশন্/সন্দম্স (চিম্টার নরক) ---- কোন ব্রাহ্মণ কে সর্বস্বান্ত করলে বা চরম দারিদ্রতা অবস্থার মধ্যে না থেকেও প্রয়োজন ছাড়া মূল্যবান রত্ন বা সোনা চুরি করলে, ব্রত বা বিশেষ নিয়মের লঙঘন করলে --- এখানে অপরাধীর শরীর উত্তপ্ত লাল লোহার গোলা এবং চিম্টা দিয়ে ছিন্ন ভিন্ন করা হয়।
১২ তপ্তসুর্মি/তপ্তমূর্তি (তপ্ত লাল লৌহ মূর্তি) ---- একজন পুরুষ অথবা নারী যে অপর নারী বা পুরুষ এর সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয় -- তাকে কষাঘাত করা হয় এবং বিপরীত লিঙ্গের তপ্ত লালাভ একটি লৌহমূর্তি কে আলিঙ্গন করতে বাধ্য করা হয়।
১৩ বজ্রকন্টক শাল্মলী (সুতির মত মলিন বৃক্ষ যা ধারণ করে বজ্রের মত কাঁটা) --- জন্তু -জানোয়ারদের সাথে যৌন সংসর্গে লিপ্ত হলে অথবা মাত্রাতিরিক্ত যৌন ক্রিয়া করে থাকলে
-- যমদূতেরা পাপী কে এই বজ্রকন্টক শাল্মলী বৃক্ষে বেঁধে তার শরীরকে হিঁচড়ে টানতে থাকে যাতে তার শরীর ক্ষত-বিক্ষত এবং ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায়।
১৪ বৈতরণী (অতিক্রম) ---- বিশ্বাস করা হয় এটি একটি নদী যা নরক এবং পৃথিবীর ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। সর্বদা মল, পস্রাব, ঘাম, রক্ত, পুঁজ, চুল, হাড়, অস্থিমজ্জা, নখ, মাংস, মেদ ইত্যাদিতে পরিপুষ্ট হয়ে নরক থেকে প্রবাহিত হয়ে আসা এই নদী পৃথিবীর আগে একটি গন্ডি অবধি সীমাবদ্ধ থাকে। হিংস্র জলজ জন্তুরা এখানে অপরাধীর শরীর থেকে মাংস খুবলে খুবলে ভোজন করে। -- ভাগবৎ এবং দেবী ভাগবৎ পূরাণ অনুসারে রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করা ব্যক্তি, একজন রাজবংশজাত ক্ষত্রিয়, সরকারি পদে নিযুক্ত থাকা ব্যক্তিরা যারা তাদের কর্তব্যকে অবহেলা করে তা পালন করতে অস্বীকার করে তাদের জন্য সংরক্ষিত ঘৃণ্য এই নরক।
১৫ পুয়োদা (পুঁজ মিশ্রিত জল) ----- শুদ্র পতিগণ বা নিম্ন বর্গীয় মহিলা যৌনকর্মীর এবং বেশ্যা মহিলার যৌন সঙ্গিরা যারা পরিচ্ছন্নতা বজায় না রেখে পশুর ন্যায় জীবনযাপন করে এবং সভ্য আচরণ করতে ব্যর্থ হয় তাদের জন্য এই নরক-- পাপীরা পুঁজ, মুত্র, ঘর্ম, শ্লেষ্মা, লালা এবং অন্যান্য বর্জ্য মিশ্রিত এক সমুদ্রে পতিত হয়। সেখানে তাদের ঐ নোংরা জল গিলতে বাধ্য করা হয়।
১৬ প্রাণরোধা (জীবনের রোধ) --- যে সকল দুশ্চরিত্র ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্য ব্যক্তিগণ কুকুর বা গাধাকে সঙ্গে নিয়ে আত্ম বিনোদনের জন্য জঙ্গলে পশু শিকারের খেলায় উন্মত্ত হয় -- নরকে তাদের কেই শিকার বানিয়ে যমদূতগণ তিরন্দাজীর খেলা খেলে থাকে।
১৭ বিসাশনা (হত্যাপ্রবণ) ---- ভাগবৎপূরাণ এবং দেবী ৎ পূরাণ এর উল্লেখানুযায়ী কোন ব্যক্তি নিজের পদের তুলনায় অধিক প্রতিপত্তি লাভ করে এবং নিজের সামাজিক অবস্থা বয়ান করতে গর্বে পশু উত্সর্গ করে তাকে অবশেষে হত্যা করলে -- এই নরকে ঐ পাপী ব্যক্তি কে যমদূতেরা অনবরত কষাঘাত করে মারে।
১৮ লালাভক্ষম(লালা খাদ্য রূপে) ---- ভাগবৎ ও দেবী ভাগবৎ পূরাণ অনুসারে একজন ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য স্বামী নিজের যৌন জ্বালা মেটাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে স্ত্রী কে নিজের বীর্য্যরস পান করাতে বাধ্য করলে -- সেই অপরাধিকে নরকে বীর্য্যরস পরিপূর্ণ একটি নদীতে নিক্ষেপ করা হয় যেখানে সে ঐ বীর্য্য পান করতে বাধ্য হয়।
১৯ সারমেয়দানা (সরমার হিংস্র পুত্রদের নরক) ---- লুন্ঠনকারীরা যারা সম্পত্তির লোভে অন্যের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বিষক্রিয়া ঘটায়; রাজা এবং অন্যান্য সরকারি ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা যারা কৌশলে ব্যবসায়ীদের অর্থ তছরূপ করে, যারা জনহত্যা এবং সমগ্র রাষ্ট্রের ভরাডুবির মত অপরাধে অংশগ্রহণ করে তাদের জন্য এই নরক -- -- এখানে হিংস্র বন্য কুকুর (সারমেয় - সরমার পুত্র-'সরমা' হলেন সংসারের সমস্ত কুকুরদের জননী) তাদের তীক্ষ্ন, ধারালো দাঁত দিয়ে যমদূত গণের আদেশে অপরাধিদের কুঁড়ে কুঁড়ে খায়।
২০ অভিশ্চি/অভিশ্চিমত (প্রবাহহীন, জলহীন) ----- কোন ব্যক্তি মিথ্যা শপথ নিলে, ব্যবসায় মিথ্যা কথা বললে -- পাপীকে এখানে একশ' যোজন উঁচু একটি পর্বত যার দেওয়াল গুলি থেকে জলপ্রবাহের পরিবর্তে পাথর নির্গত হয় সেখান থেকে নিক্ষেপ করা হয়। যার ফলে তার শরীর অনবরত ভাঙতে থাকে তবে খেয়াল রাখা হয় যে সে যেন মারা না যায়।
২১ অয়হপান (লৌহ-পান) --- কোন ব্যক্তি ব্রত পালন করা কালীন বা একজন ব্রাহ্মণ ব্যক্তি মদ্য পান করলে --- এখানে যমদূতেরা পাপীদের বুকের ওপর দাঁড়িয়ে গলন্ত লোহা গিলতে বাধ্য করে।
২২ ক্ষারকর্দমা(আম্লিক, লবণাক্ত কাদা): যে ব্যক্তি মিথ্যা অহংকারের বশে অন্য এমন ব্যক্তি যে তাঁর তুলনায় জন্মে, সাধনায়, জ্ঞানে, আচরণে, জাতিতে অথবা আধ্যাত্মিক অবস্থানে অনেক বড় তাকে অসন্মান করে -- এই নরকে যমদূতেরা পাপীকে এমনভাবে নিক্ষেপ করে যাতে সে যেন সরাসরি মাথায় চোট পায় এবং তারপর তার পাপীর ওপর অত্যাচার চালায়।
২৩ রাকষগণা-ভোজনা(রাক্ষসদের খাদ্যে পরিণত): যারা জীবন্ত মানুষের আত্মাহুতি, নরমাংস ভক্ষণপ্রথা পালন করে এই নরকে বন্দী হয় তারা --- তাদের হাতে নিহতরা এখানে রাক্ষস রূপে তাদেরকে ধারালো ছুরি ও অসি দিয়ে কাটে। তাদের রক্ত-মাংস ঐ রাক্ষসেরা মহানন্দে ভোজন করে এবং উদ্দম উল্লাসে নাচ-গান করে ঠিক যেমনভাব পাপীরা তাদের হত্যা করেছিল।
২৪ শূলপ্রথাম্ (তীক্ষ্ন শূল/বাণে বিদ্ধ) ----- কিছু মানুষ নিরীহ পশু বা পক্ষীদের উদ্ধার করার ভান করে আশ্রয় প্রদান করে কিন্তু তারপর সুতো, সুঁচ ইত্যাদি ব্যবহার করে তাদের উত্যক্ত করতে শুরু করে বা তাদেরকে প্রাণহীন খেলনার ন্যায় ব্যবহার করে। একই রকম ভাবে কিছু মানুষও অন্য মানুষের সঙ্গে এমনই আচরণ করে; প্রথমে ছল করে তাদের বিশ্বাস কে জিতে নিয়ে পরে তাদের ত্রিশূল বা বল্লম দিয়ে হত্যা করে -- নরকে এই সমস্ত অপরাধকারিদের শরীরকে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় ক্লান্ত করে ধারালো, সূচাগ্র শূলে বিদ্ধ করা হয়। ক্ষিপ্র, মাংসভোজী শকুন ও সারস জাতীয় পাখিরা তাদের শরীরের মাংস ছিড়ে গলা অবধি ভোজন করে।
২৫ দন্ডসুক(সর্প) --- বিদ্বেষ এবং উন্মত্ততায় পরিপূর্ণ হয়ে কিছু মানুষ অন্যদের সাপের ন্যায় হানি করে ----নরকে এদের পঞ্চ বা সপ্ত ফণাধারি বিশাল সর্প জীবন্ত গলাধঃকরণ করে।
২৬ অবাত-নিরোধনা(গহ্বরে আবদ্ধ ---: অন্যদের অন্ধকার কূপ, ফাটল বা পাহাড়ের গুহার মত স্থানে বন্দি করে রাখলে --- পাপিদের এই নরকে একটি অন্ধকারময় কুয়োর অভ্যন্তরে ঠেলে দেওয়া হয় যার মধ্যে বিষাক্ত গন্ধ ও ধোঁয়া ভরে উঠে তার শ্বাসরোধ করে।
২৭ পরয়াবর্তন (ফিরে যাওয়া) ---- গৃহকর্তা যে ক্রূর দৃষ্টিতে নিজের অতিথি কে/দের স্বাগত জানায় এবং দূর্ব্যবহার করে, এই নরকে তাকে উচিত্ শিক্ষা প্রদান করা হয় --- কঠোর দৃষ্টিধারি শকুন, সারস, কাক ও এই প্রজাতির পক্ষিগণ তার দিকে তাক করে এবং অকস্মাত্ উড়ে এসে তার চোখ দুটো তুলে নিয়ে যায়।
২৮ সূচিমুখা (সূচবিদ্ধ মুখমন্ডল) --- একজন সদা সন্দেহকারী ব্যক্তি যে সর্বদা অন্যদের নিজের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার চিন্তায় সন্দেহ করে; নিজ অর্থবলের অহংকারে পাপ কার্য করে লাভ ও তা জমিয়ে রাখার মত অপরাধ করে --- এই নরকে যমদূতেরা তার সর্বাঙ্গ ধাগা বুনে সেলাই করে।
লেখকঃ প্রীথিশ ঘোষ
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন