এই দুইয়ের সম্পর্ক দুপ্রকারের । সংসারের সঙ্গে শুধু মেনে নেওয়া সম্পর্ক আর ভগবানের সঙ্গে সম্পর্ক বাস্তবিক । সাংসারিক সম্পর্ক মানুষকে পরাধীন করে , গোলাম বানায় , ভগবানের সম্পর্ক মানুষকে স্বাধীন করে , চিন্ময় করে ।
কোনো বিষয়ে নিজের মধ্যে কোনো বৈশিষ্ট্য দেখা হল প্রকৃতপক্ষে পরাধীনতা । মানুষ যদি বিদ্যা , বুদ্ধি , ধন - সম্পত্তি , ত্যাগ , বৈরাগ্য ইত্যাদি কোনো বিষয়ের জন্য নিজেকে বিশিষ্ট বলে মনে করে তাহলে প্রকৃতপক্ষে তা ওই বিদ্যা ইত্যাদিরই পরাধীনতা , দাসত্ব হয়ে থাকে ।
যেমন , কেউ যদি অর্থের জন্য নিজেকে বিশিষ্ট বলে মনে করে , তাহলে সেই বৈশিষ্ট্য অর্থেরই , মানুষটির নয় । সে নিজেকে অর্থের মালিক মনে করলেও , আসলে সে অর্থের গোলাম ।
সংসারের বৈশিষ্ট্যই হল যে সাংসারিক কোনো বস্তু নিয়ে যে ব্যক্তি নিজেকে বিশেষ কিছু বলে মনে করে , সেই বস্তুটিই তাকে তুচ্ছ করে দেয় , পদদলিত করে রাখে । কিন্তু যিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আশ্রিত হয়ে সর্বদা তাঁর ওপর নির্ভর করে থাকেন , তিনি নিজস্ব কোনো বৈশিষ্ট্য দেখেন না , বরং ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরই অলৌকিকত্ব , বিশেষত্ব ও বিচিত্র - ভাব প্রত্যক্ষ করেন ।
ভগবান তাঁকে তাঁর মাথার মণি করে রাখুন , বা নিজের প্রভু করে নিন , তাহলেও তার কোনো বিষয়ে অহংভাব আসে না । এরূপ ভক্তের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের বিশেষ আবির্ভূত হয় । কারও কারও মধ্যে এই বিশেষ ভাব এত বেশি দেখা যায় যে তাঁর শরীর , ইন্দ্রিয় , মন , বুদ্ধি ইত্যাদি প্রাকৃত বস্তুগুলিও চিন্ময় হয়ে ওঠে । তাঁর মধ্যে জড়ত্বের একান্তই অভাব হয়ে যায় ।
এরূপ ভগবানের কত প্রেমিক ভক্ত ভগবান শ্রীকৃষ্ণে মিশে গেছেন , শেষকালে তাঁদের দেহও পাওয়া যায়নি । যেমন , ভক্তিমতি মীরা সশরীরে ভগবানের বিগ্রহে লীন হয়ে গিয়েছিলেন । কেবল চিহ্নরূপে তাঁর শাড়ির একটি ছোট টুকরো বিগ্রহের মুখে আটকে ছিল , আর কিছুই ছিল না । এইভাবে সন্ত তুকারামও সশরীরে বৈকুন্ঠে গমন করেছিলেন ।
জ্ঞানমার্গে শরীর চিন্ময়ত্ব লাভ করে না । কারণ জ্ঞানী অসৎ - এর সঙ্গে সম্বন্ধ বিচ্ছেদ করে , অসৎ - এর থেকে পৃথক হয়ে স্বয়ং চিন্ময় - তত্ত্বে স্থিত হন । কিন্তু ভক্ত যখন ভগবানের সম্মুখীন হন , তখন তাঁর দেহ - মন - প্রাণ - ইন্দ্রিয় সবই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখীন হয়ে যায় । তাৎপর্য হল এই যে , যাঁর দৃষ্টিতে চিন্ময় - তত্ত্ব ছাড়া জড়ত্বের কোনো পৃথক অস্তিত্ব নেই , সেই চিন্ময়তা তাঁর শরীর ইত্যাদিতে পরিব্যাপ্ত হয় এবং শরীরাদি চিন্ময়ত্ব লাভ করে । সাধারণ লোকে তাঁর শরীরে জড়ত্ব দেখলেও , বাস্তবে তাঁর শরীর চিন্ময় হয়ে যায় ।
সর্বতোভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হলে শ্রীকৃষ্ণের কৃপা শরণাগতের জন্য বিশেষভাবে প্রকটিত হয় , কিন্তু জগৎকে স্নেহপূর্বক পালনকারিণী এবং শ্রীকৃষ্ণে অভিন্ন বাৎসল্যময়ী মাতা লক্ষ্মীদেবীর প্রভুর শরণাগতদের প্রতি কত স্নেহ , কত ভালোবাসা , তার বর্ণনা কেউ করতে পারে না ।
সর্বতোভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হলে শ্রীকৃষ্ণের কৃপা শরণাগতের জন্য বিশেষভাবে প্রকটিত হয় , কিন্তু জগৎকে স্নেহপূর্বক পালনকারিণী এবং শ্রীকৃষ্ণে অভিন্ন বাৎসল্যময়ী মাতা লক্ষ্মীদেবীর প্রভুর শরণাগতদের প্রতি কত স্নেহ , কত ভালোবাসা , তার বর্ণনা কেউ করতে পারে না । লৌকিক ব্যবহারেও দেখা যায় যে পতিব্রতা স্ত্রী পিতৃভক্ত পুত্রকে অত্যন্ত ভালোবাসেন ।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে , আমরা জড় জগতে মায়ার দ্বারা আবদ্ধ । ফলে আমাদের বিবেক- বুদ্ধিও মায়ার দ্বারা আবদ্ধ । তাই জড় বুদ্ধি যদি যখন আমরা বিচার করি তা সবসময় সঠিক হয় না । ভ্রমবশত আমাদের নানা প্রকার বস্তুতে দৃষ্টি আকর্ষণ হওয়ায় আমাদের বুদ্ধিও ভ্রষ্ট হয় । তাই মনে রাখা উচিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সকল কিছুর ঊর্ধ্বে আর আমরা তাঁর সেবকমাত্র । তাই সর্বস্ব শ্রীকৃষ্ণকে সমর্পণ করে একাগ্রতার সাথে জীবন অতিবাহিত করা উচিত ।
(c) Joy Shree Radha Madhav
কোনো বিষয়ে নিজের মধ্যে কোনো বৈশিষ্ট্য দেখা হল প্রকৃতপক্ষে পরাধীনতা । মানুষ যদি বিদ্যা , বুদ্ধি , ধন - সম্পত্তি , ত্যাগ , বৈরাগ্য ইত্যাদি কোনো বিষয়ের জন্য নিজেকে বিশিষ্ট বলে মনে করে তাহলে প্রকৃতপক্ষে তা ওই বিদ্যা ইত্যাদিরই পরাধীনতা , দাসত্ব হয়ে থাকে ।
যেমন , কেউ যদি অর্থের জন্য নিজেকে বিশিষ্ট বলে মনে করে , তাহলে সেই বৈশিষ্ট্য অর্থেরই , মানুষটির নয় । সে নিজেকে অর্থের মালিক মনে করলেও , আসলে সে অর্থের গোলাম ।
সংসারের বৈশিষ্ট্যই হল যে সাংসারিক কোনো বস্তু নিয়ে যে ব্যক্তি নিজেকে বিশেষ কিছু বলে মনে করে , সেই বস্তুটিই তাকে তুচ্ছ করে দেয় , পদদলিত করে রাখে । কিন্তু যিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আশ্রিত হয়ে সর্বদা তাঁর ওপর নির্ভর করে থাকেন , তিনি নিজস্ব কোনো বৈশিষ্ট্য দেখেন না , বরং ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরই অলৌকিকত্ব , বিশেষত্ব ও বিচিত্র - ভাব প্রত্যক্ষ করেন ।
ভগবান তাঁকে তাঁর মাথার মণি করে রাখুন , বা নিজের প্রভু করে নিন , তাহলেও তার কোনো বিষয়ে অহংভাব আসে না । এরূপ ভক্তের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণের বিশেষ আবির্ভূত হয় । কারও কারও মধ্যে এই বিশেষ ভাব এত বেশি দেখা যায় যে তাঁর শরীর , ইন্দ্রিয় , মন , বুদ্ধি ইত্যাদি প্রাকৃত বস্তুগুলিও চিন্ময় হয়ে ওঠে । তাঁর মধ্যে জড়ত্বের একান্তই অভাব হয়ে যায় ।
এরূপ ভগবানের কত প্রেমিক ভক্ত ভগবান শ্রীকৃষ্ণে মিশে গেছেন , শেষকালে তাঁদের দেহও পাওয়া যায়নি । যেমন , ভক্তিমতি মীরা সশরীরে ভগবানের বিগ্রহে লীন হয়ে গিয়েছিলেন । কেবল চিহ্নরূপে তাঁর শাড়ির একটি ছোট টুকরো বিগ্রহের মুখে আটকে ছিল , আর কিছুই ছিল না । এইভাবে সন্ত তুকারামও সশরীরে বৈকুন্ঠে গমন করেছিলেন ।
জ্ঞানমার্গে শরীর চিন্ময়ত্ব লাভ করে না । কারণ জ্ঞানী অসৎ - এর সঙ্গে সম্বন্ধ বিচ্ছেদ করে , অসৎ - এর থেকে পৃথক হয়ে স্বয়ং চিন্ময় - তত্ত্বে স্থিত হন । কিন্তু ভক্ত যখন ভগবানের সম্মুখীন হন , তখন তাঁর দেহ - মন - প্রাণ - ইন্দ্রিয় সবই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখীন হয়ে যায় । তাৎপর্য হল এই যে , যাঁর দৃষ্টিতে চিন্ময় - তত্ত্ব ছাড়া জড়ত্বের কোনো পৃথক অস্তিত্ব নেই , সেই চিন্ময়তা তাঁর শরীর ইত্যাদিতে পরিব্যাপ্ত হয় এবং শরীরাদি চিন্ময়ত্ব লাভ করে । সাধারণ লোকে তাঁর শরীরে জড়ত্ব দেখলেও , বাস্তবে তাঁর শরীর চিন্ময় হয়ে যায় ।
সর্বতোভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হলে শ্রীকৃষ্ণের কৃপা শরণাগতের জন্য বিশেষভাবে প্রকটিত হয় , কিন্তু জগৎকে স্নেহপূর্বক পালনকারিণী এবং শ্রীকৃষ্ণে অভিন্ন বাৎসল্যময়ী মাতা লক্ষ্মীদেবীর প্রভুর শরণাগতদের প্রতি কত স্নেহ , কত ভালোবাসা , তার বর্ণনা কেউ করতে পারে না ।
সর্বতোভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হলে শ্রীকৃষ্ণের কৃপা শরণাগতের জন্য বিশেষভাবে প্রকটিত হয় , কিন্তু জগৎকে স্নেহপূর্বক পালনকারিণী এবং শ্রীকৃষ্ণে অভিন্ন বাৎসল্যময়ী মাতা লক্ষ্মীদেবীর প্রভুর শরণাগতদের প্রতি কত স্নেহ , কত ভালোবাসা , তার বর্ণনা কেউ করতে পারে না । লৌকিক ব্যবহারেও দেখা যায় যে পতিব্রতা স্ত্রী পিতৃভক্ত পুত্রকে অত্যন্ত ভালোবাসেন ।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে , আমরা জড় জগতে মায়ার দ্বারা আবদ্ধ । ফলে আমাদের বিবেক- বুদ্ধিও মায়ার দ্বারা আবদ্ধ । তাই জড় বুদ্ধি যদি যখন আমরা বিচার করি তা সবসময় সঠিক হয় না । ভ্রমবশত আমাদের নানা প্রকার বস্তুতে দৃষ্টি আকর্ষণ হওয়ায় আমাদের বুদ্ধিও ভ্রষ্ট হয় । তাই মনে রাখা উচিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সকল কিছুর ঊর্ধ্বে আর আমরা তাঁর সেবকমাত্র । তাই সর্বস্ব শ্রীকৃষ্ণকে সমর্পণ করে একাগ্রতার সাথে জীবন অতিবাহিত করা উচিত ।
(c) Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন