ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়
দেবর্ষি নারদ বললেন ---- হে যুধিষ্ঠির ! দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর বড়ই অদ্ভূত চারটি পুত্র ছিল । তাদের মধ্যে প্রহ্লাদ সর্ব - কনিষ্ঠ হলেও গুণবত্তায় শ্রেষ্ঠ ছিলেন । তিনি দ্বিজভক্ত , সৌম্যস্বভাব , সত্যপ্রতিজ্ঞ , জিতেন্দ্রিয় , সর্বভূতের প্রতি আত্মবৎ দৃষ্টিসম্পন্ন , সর্বজনপ্রিয় এবং জীবকুলের প্রকৃত হিতৈষী ছিলেন ।
মান্যজনের চরণে সেবকের মতো প্রণত থাকতেন । দরিদ্রদের প্রতি তাঁর ছিল পিতৃসম স্নেহ । সমবয়সীদের তিনি ভ্রাতৃসম প্রীতির চক্ষে দেখতেন । আর গুরুজনদের তো ভগবানের মতো ভক্তি করতেন । বিদ্যা , ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্যসম্পন্ন এবং উচ্চকুলজাত হওয়া সত্ত্বেও অহংকার এবং ঔদ্ধত্যের লেশমাত্রও তাঁর মধ্যে ছিল না ।
মহৎ দুঃখেও তিনি তিলমাত্র ভীত হতেন না । ইহলোক এবং পরলোকের সকল বিষয়ে তাঁর প্রভূত দেখা এবং শোনা অর্থাৎ প্রকৃত জ্ঞান ছিল কিন্তু সেসবই তিনি অসার এবং অসত্য বলে মনে করতেন । সেইজন্য তাঁর মনে কোনো বস্তুর প্রতি আকাঙ্ক্ষা ছিল না । তাই তাঁর চিত্তে কোনো প্রকার কামনার উদ্রেক হত না । অসুরকুলে জন্ম হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে আসুরিক প্রবৃত্তির লেশমাত্রও ছিল না ।
ভগবান যেমন অনন্তগুণসম্পন্ন , প্রহ্লাদেরও তেমন গুণাবলির কোনো সীমা ছিল না । যুগে যুগে মহাত্মা এবং কবিবৃন্দ তাঁকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে তাঁর চরিত্র বর্ণনায় ব্রতী হয়েছেন কিন্তু অদ্যাবধি তাঁর মাহাত্ম্যের সীমা নির্ণয় করতে পারেননি ।
হে যুধিষ্ঠির ! সাধারণভাবে দেবগণ অসুরদের শত্রু তবু্ও ভগবদ্ভক্তদের চরিত্রগাথা শোনার জন্য আহূত সভায় তাঁরা অন্যভক্তদের প্রহ্লাদের সঙ্গে তুলনা করে তাঁদের সম্মান প্রদর্শন করেন । অতএব আপনার মতো অজাতশত্রু ভগবদ্ভক্ত যে তাঁর সম্মান করবেন এতে আর সন্দেহ কী ?
তাঁর ( প্রহ্লাদের ) মহিমা বর্ণনা করার জন্য অগণিত গুণরাশির কীর্তন বা শ্রবণের কোনো প্রয়োজন নেই । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে জন্মগত স্বাভাবিক ভালোবাসা - তাঁর মহিমা প্রকাশের জন্য এই একটি গুণই যথেষ্ট ।
হে যুধিষ্ঠির ! প্রহ্লাদ বাল্যকালেই খেলাধুলা ত্যাগ করে ভগবানের ধ্যানে তন্ময় হয়ে নিশ্চলভাবে অবস্থান করতেন । শ্রীকৃষ্ণের অনুগ্রহ তাঁর হৃদয়কে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল যে জাগতিক ( সুখ দুঃখের ) কোনো বোধই তাঁর থাকত না । তাঁর মনে হত যে ভগবান সকল সময় তাঁকে নিবিড় অাশ্লেষে বেঁধে রেখেছেন তাই তাঁর শোওয়া - বসা , খাওয়া - জলপান , হাঁটা - চলা বা কথা বলার সময়েও - এসব বিষয়ের সম্পর্কে কোনো বোধই থাকত না ।
কখনো কখনো " এই বুঝি ভগবান আমায় ছেড়ে চলে গেলেন " - এই মনে করে তাঁর হৃদয় দুঃখে এতটাই কাতর হত যে , তিনি উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করতেন । আবার কখনো অন্তরে ভগবানকে নিবিড়ভাবে অনুভব করে এতই আনন্দিত হতেন যে হা হা করে হেসে উঠতেন । কখনো ভগবচ্চিন্তায় এতই মধুর আবেশে আতিষ্ট হতেন যে তিনি গাই গাইতেন ।
কোনোসময় হঠাৎ উৎকন্ঠিত হয়ে চিৎকার করে উঠতেন । কখনো লোকলজ্জা ত্যাগ করে প্রেমভরে নৃত্য করতেন । আবার কখনো বা ভগবানের লীলা চিন্তনে এমন মগ্ন হয়ে যেতেন যে নিজেকেই হারিয়ে ফেলে ভগবানের অনুকরণ করতে আরম্ভ করতেন । কখনো অন্তরে ভগবানের কোমল স্পর্শ অনুভব করে আনন্দমগ্ন চিত্তে নির্বাক হয়ে শান্তভাবে বসে থাকতেন । সেইসময় তিনি পুলকে রোমাঞ্চিত হতেন । ভাবে বিভোর অর্ধ - নিমীলিত নেত্রে অবিচল প্রেমের আনন্দাশ্রু টলমল করত ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণকমলে এইরকম ঐকান্তিক ভক্তি একমাত্র ভগবদ্ভক্ত নিষ্কিঞ্চন মহাত্মাদের সঙ্গ করলেই লাভ করা যায় । কৃষ্ণপ্রেমে তিনি পরমানন্দে মগ্ন থাকতেন এবং সেইসব দুর্ভাগ্য ব্যক্তি যারা কুসঙ্গে পড়ে মানসিকভাবে অত্যন্ত দীন হীন , তাদেরও বারবার শান্তি প্রদান করতেন ।
যুধিষ্ঠির ! প্রহ্লাদ ভগবানের পরম প্রেমিক ভক্ত , অত্যন্ত ভাগ্যশালী এবং উচ্চকোটির মহাত্মা পুরুষ ছিলেন । হিরণ্যকশিপু এইরকম ধার্মিক পুত্রকে অপরাধী ঘোষণা করে তাঁর অনিষ্ট করার চেষ্টা করতে লাগলেন ।
(C) Joy Shree Radha Madhav
দেবর্ষি নারদ বললেন ---- হে যুধিষ্ঠির ! দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর বড়ই অদ্ভূত চারটি পুত্র ছিল । তাদের মধ্যে প্রহ্লাদ সর্ব - কনিষ্ঠ হলেও গুণবত্তায় শ্রেষ্ঠ ছিলেন । তিনি দ্বিজভক্ত , সৌম্যস্বভাব , সত্যপ্রতিজ্ঞ , জিতেন্দ্রিয় , সর্বভূতের প্রতি আত্মবৎ দৃষ্টিসম্পন্ন , সর্বজনপ্রিয় এবং জীবকুলের প্রকৃত হিতৈষী ছিলেন ।
মান্যজনের চরণে সেবকের মতো প্রণত থাকতেন । দরিদ্রদের প্রতি তাঁর ছিল পিতৃসম স্নেহ । সমবয়সীদের তিনি ভ্রাতৃসম প্রীতির চক্ষে দেখতেন । আর গুরুজনদের তো ভগবানের মতো ভক্তি করতেন । বিদ্যা , ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্যসম্পন্ন এবং উচ্চকুলজাত হওয়া সত্ত্বেও অহংকার এবং ঔদ্ধত্যের লেশমাত্রও তাঁর মধ্যে ছিল না ।
মহৎ দুঃখেও তিনি তিলমাত্র ভীত হতেন না । ইহলোক এবং পরলোকের সকল বিষয়ে তাঁর প্রভূত দেখা এবং শোনা অর্থাৎ প্রকৃত জ্ঞান ছিল কিন্তু সেসবই তিনি অসার এবং অসত্য বলে মনে করতেন । সেইজন্য তাঁর মনে কোনো বস্তুর প্রতি আকাঙ্ক্ষা ছিল না । তাই তাঁর চিত্তে কোনো প্রকার কামনার উদ্রেক হত না । অসুরকুলে জন্ম হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে আসুরিক প্রবৃত্তির লেশমাত্রও ছিল না ।
ভগবান যেমন অনন্তগুণসম্পন্ন , প্রহ্লাদেরও তেমন গুণাবলির কোনো সীমা ছিল না । যুগে যুগে মহাত্মা এবং কবিবৃন্দ তাঁকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে তাঁর চরিত্র বর্ণনায় ব্রতী হয়েছেন কিন্তু অদ্যাবধি তাঁর মাহাত্ম্যের সীমা নির্ণয় করতে পারেননি ।
হে যুধিষ্ঠির ! সাধারণভাবে দেবগণ অসুরদের শত্রু তবু্ও ভগবদ্ভক্তদের চরিত্রগাথা শোনার জন্য আহূত সভায় তাঁরা অন্যভক্তদের প্রহ্লাদের সঙ্গে তুলনা করে তাঁদের সম্মান প্রদর্শন করেন । অতএব আপনার মতো অজাতশত্রু ভগবদ্ভক্ত যে তাঁর সম্মান করবেন এতে আর সন্দেহ কী ?
তাঁর ( প্রহ্লাদের ) মহিমা বর্ণনা করার জন্য অগণিত গুণরাশির কীর্তন বা শ্রবণের কোনো প্রয়োজন নেই । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে জন্মগত স্বাভাবিক ভালোবাসা - তাঁর মহিমা প্রকাশের জন্য এই একটি গুণই যথেষ্ট ।
হে যুধিষ্ঠির ! প্রহ্লাদ বাল্যকালেই খেলাধুলা ত্যাগ করে ভগবানের ধ্যানে তন্ময় হয়ে নিশ্চলভাবে অবস্থান করতেন । শ্রীকৃষ্ণের অনুগ্রহ তাঁর হৃদয়কে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল যে জাগতিক ( সুখ দুঃখের ) কোনো বোধই তাঁর থাকত না । তাঁর মনে হত যে ভগবান সকল সময় তাঁকে নিবিড় অাশ্লেষে বেঁধে রেখেছেন তাই তাঁর শোওয়া - বসা , খাওয়া - জলপান , হাঁটা - চলা বা কথা বলার সময়েও - এসব বিষয়ের সম্পর্কে কোনো বোধই থাকত না ।
কখনো কখনো " এই বুঝি ভগবান আমায় ছেড়ে চলে গেলেন " - এই মনে করে তাঁর হৃদয় দুঃখে এতটাই কাতর হত যে , তিনি উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করতেন । আবার কখনো অন্তরে ভগবানকে নিবিড়ভাবে অনুভব করে এতই আনন্দিত হতেন যে হা হা করে হেসে উঠতেন । কখনো ভগবচ্চিন্তায় এতই মধুর আবেশে আতিষ্ট হতেন যে তিনি গাই গাইতেন ।
কোনোসময় হঠাৎ উৎকন্ঠিত হয়ে চিৎকার করে উঠতেন । কখনো লোকলজ্জা ত্যাগ করে প্রেমভরে নৃত্য করতেন । আবার কখনো বা ভগবানের লীলা চিন্তনে এমন মগ্ন হয়ে যেতেন যে নিজেকেই হারিয়ে ফেলে ভগবানের অনুকরণ করতে আরম্ভ করতেন । কখনো অন্তরে ভগবানের কোমল স্পর্শ অনুভব করে আনন্দমগ্ন চিত্তে নির্বাক হয়ে শান্তভাবে বসে থাকতেন । সেইসময় তিনি পুলকে রোমাঞ্চিত হতেন । ভাবে বিভোর অর্ধ - নিমীলিত নেত্রে অবিচল প্রেমের আনন্দাশ্রু টলমল করত ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণকমলে এইরকম ঐকান্তিক ভক্তি একমাত্র ভগবদ্ভক্ত নিষ্কিঞ্চন মহাত্মাদের সঙ্গ করলেই লাভ করা যায় । কৃষ্ণপ্রেমে তিনি পরমানন্দে মগ্ন থাকতেন এবং সেইসব দুর্ভাগ্য ব্যক্তি যারা কুসঙ্গে পড়ে মানসিকভাবে অত্যন্ত দীন হীন , তাদেরও বারবার শান্তি প্রদান করতেন ।
যুধিষ্ঠির ! প্রহ্লাদ ভগবানের পরম প্রেমিক ভক্ত , অত্যন্ত ভাগ্যশালী এবং উচ্চকোটির মহাত্মা পুরুষ ছিলেন । হিরণ্যকশিপু এইরকম ধার্মিক পুত্রকে অপরাধী ঘোষণা করে তাঁর অনিষ্ট করার চেষ্টা করতে লাগলেন ।
(C) Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন