এক গ্রামে এক রাজপুত ছিল । তার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে একটি ছেলে ছাড়া আর কেউ বেঁচে ছিল না । সে সেই রাজপুতের বাড়িতে কাজ করতে লাগল । প্রত্যেক দিন ভোরে সে গোরু বাছুর চরাতে যেত আর ফিরে এসে খাবার খেত । এইভাবে দিন কাটছিল ।
একদিন দুপুরে সে গোরু চরিয়ে ফিরে এলে রাজপুতের পরিচারিকা তাকে ঠাণ্ডা রুটি খেতে দিল । তখন ছেলেটি বলল " একটু দই / ঘোল পেলে ভালো হত । " পরিচারিকা বলল -- " যা - যা তোর জন্য আবার এসব করতে পারব না । যা , এমনিই খেয়ে নে , না খেলে তোর যা ইচ্ছা কর । " সেই ছেলেটির তখন খুব রাগ হলো , সে ভাবল যে আমি এত রোদে গোরু চরিয়ে এলাম , একটু দই চাইলাম তো মুখ ঝাম্ টা দিল । সে ক্ষিধে নিয়েই সেখান থেকে চলে গেল ।
গ্রামের কাছেই একটি শহর ছিল । সেই শহরে একটি সাধুদের দল এসেছিল । ছেলেটি সেইখানে চলে গেল । সাধুরা তাকে খেতে দিল আর জিজ্ঞাসা করল - " তোমার সংসারে কে কে আছে ? " সে বলল , " কেউ নেই । " তখন সাধুরা বলল - " তুমি সাধু হয়ে যাও । " ছেলেটি সাধু হয়ে গেল । পরে সে পড়াশোনা করার জন্য কাশী গেল । সেখানে লেখাপড়া শিখে খুব বিদ্বান হলো । কয়েক বছর পরে সে মণ্ডলেশ্বর ( মোহন্ত ) নির্বাচিত হল । মণ্ডলেশ্বর হবার পর একদিন তার সেই পুরানো শহর থেকে নিমন্ত্রণ এলো । সেই সাধুটি তখন নিজের মণ্ডলীর সাধুদের নিয়ে সেখানে এলেন ।
যে রাজপুতের কাছে তিনি আগে কাজ করতেন , সেই রাজপুত বৃদ্ধ হয়েছিলো । সেই রাজপুত তাঁর কাছে এসে সৎসঙ্গ করলেন এবং প্রার্থনা জানালেন - " মহারাজ ! একবার আমার কুটিরে পদার্পণ করুন , যাতে আমার কুটির পবিত্র হয় । " মণ্ডলেশ্বর সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন ।
মণ্ডলেশ্বর তাঁর মণ্ডলীর সাধুদের নিয়ে রাজপুতের গৃহে গেলেন । খাবার সময় হলে পংক্তি ভোজনের ব্যবস্থা হলো এবং সকলে মিলে খেতে বসলেন । গীতার পঞ্চদশ অধ্যায় পাঠ করা হলো এবং তারপরে সকলে খেতে শুরু করলেন । মহারাজের সামনে নানাপ্রকার সুখাদ্য থরে থরে সাজানো ছিল । সেই রাজপুত মণ্ডলেশ্বর মহারাজের কাছে এলেন , তাঁর সঙ্গে তাঁর পরিচারক হাতে হালুয়ার পাত্র নিয়ে এলো ।
রাজপুতও মহারাজকে অনুরোধ করতে লাগলেন যাতে তিনি অনন্তঃ একটু হালুয়া তাঁর হাত থেকে নেন । মহারাজ তাইতে হেসে ফেললেন । তাঁর হাসি দেখে রাজপুত আশ্বর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন , " আপনি হাসছেন কেন ? " মহারাজ বললেন , " আমার একটা পুরানো কথা মনে পড়ে হাসি পেল । " রাজপুত জিজ্ঞাসা করলেন , " কি কথা , আমাকে বলুন ! "
মহারাজ তখন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন , " ওহে , তোমরা একটু অপেক্ষা করো , বসো , জমিদার একটি পুরোনো কথা জানতে চাইছেন , তাই বলি শোনো । " মহারাজ রাজপুতকে জিজ্ঞাসা করলেন , " আপনার জ্ঞাতির একজন আপনার সঙ্গে থাকত , সেই পরিবারের কেউ আছে কি ? " রাজপুত বললেন , " একটি ছেলে শুধু ছিল , সে কিছুদিন গোরু চরাত , তারপর কি জানি কোথায় চলে গেল ! অনেকদিন হয়ে গেল , আর সে ফিরে এলো না । "
মহারাজ বললেন , " আমিই সেই ছেলে ! কাছেই এক সাধুমণ্ডল এসেছিলো , আমি সেখানেই গিয়েছিলাম । পরে কাশী চলে যাই , সেখানে লেখাপড়া শিখে পরে মণ্ডলেশ্বর হয়েছি । এই সেই দালান , এখানেই একদিন আপনার বাড়ির পরিচারিকা আমাকে সামান্য একটু দই দিতে আপত্তি করেছিল । আজ সেই আমিই আর এই সেই দালান , আপনিও সেই একই ব্যক্তি , যিনি নিজের হাতে আমাকে মোহনভোগ দিয়ে বলছেন যে দয়া করে আমি যেন আপনার হাত থেকে একটু মোহন ভোগ খাই ! "
" চাইলে পাওয়া যায় না ঘোল , তবু হলাম ধন্য ।
গলায় বাধে মোহন ভোগ এতো সাধু সঙ্গের পুণ্য ।। "
সাধুদের শরণ গ্রহণ করলে এমনই হয় যে , যেখানে সামান্য ঘোল পাওয়া যায় না , সেখানে মোহন ভোগও গলায় আটকে যায় । যদি কেউ ভগবানের শরণ গ্রহণ করেন তাহলে তিনি সাধুদেরও বরণীয় হয়ে ওঠেন । লক্ষপতি বা কোটিপতি হলে নয় , ভগবানের শরণাগত হলে , ভগবানের ভক্ত হলে তবেই স্বাধীন হওয়া যায় এবং তা একমাত্র মনুষ্যজন্মেই সম্ভব ।
মনে রাখা দরকার যে , আমরা একজন ব্যক্তির বাইরে দেখে বিচার করি কিন্তু তার মধ্যে কি আছে তা আমরা জানি না । তাই যে যেমনই হোক না কেন কাউকে নিচু বা খারাপ মনে করা উচিত নয় । যেমন আজ যে সাধারণ সে হয়ত একজন ডাক্তার হবে আর চিকিৎসা করার জন্য তার কাছে যেতে হবে । যার জন্ম যেমনই হোক না কেন মানুষ তার কর্ম্মে পরিচিত হয় ।
(c) Joy Shree Radha Madhav
একদিন দুপুরে সে গোরু চরিয়ে ফিরে এলে রাজপুতের পরিচারিকা তাকে ঠাণ্ডা রুটি খেতে দিল । তখন ছেলেটি বলল " একটু দই / ঘোল পেলে ভালো হত । " পরিচারিকা বলল -- " যা - যা তোর জন্য আবার এসব করতে পারব না । যা , এমনিই খেয়ে নে , না খেলে তোর যা ইচ্ছা কর । " সেই ছেলেটির তখন খুব রাগ হলো , সে ভাবল যে আমি এত রোদে গোরু চরিয়ে এলাম , একটু দই চাইলাম তো মুখ ঝাম্ টা দিল । সে ক্ষিধে নিয়েই সেখান থেকে চলে গেল ।
গ্রামের কাছেই একটি শহর ছিল । সেই শহরে একটি সাধুদের দল এসেছিল । ছেলেটি সেইখানে চলে গেল । সাধুরা তাকে খেতে দিল আর জিজ্ঞাসা করল - " তোমার সংসারে কে কে আছে ? " সে বলল , " কেউ নেই । " তখন সাধুরা বলল - " তুমি সাধু হয়ে যাও । " ছেলেটি সাধু হয়ে গেল । পরে সে পড়াশোনা করার জন্য কাশী গেল । সেখানে লেখাপড়া শিখে খুব বিদ্বান হলো । কয়েক বছর পরে সে মণ্ডলেশ্বর ( মোহন্ত ) নির্বাচিত হল । মণ্ডলেশ্বর হবার পর একদিন তার সেই পুরানো শহর থেকে নিমন্ত্রণ এলো । সেই সাধুটি তখন নিজের মণ্ডলীর সাধুদের নিয়ে সেখানে এলেন ।
যে রাজপুতের কাছে তিনি আগে কাজ করতেন , সেই রাজপুত বৃদ্ধ হয়েছিলো । সেই রাজপুত তাঁর কাছে এসে সৎসঙ্গ করলেন এবং প্রার্থনা জানালেন - " মহারাজ ! একবার আমার কুটিরে পদার্পণ করুন , যাতে আমার কুটির পবিত্র হয় । " মণ্ডলেশ্বর সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন ।
মণ্ডলেশ্বর তাঁর মণ্ডলীর সাধুদের নিয়ে রাজপুতের গৃহে গেলেন । খাবার সময় হলে পংক্তি ভোজনের ব্যবস্থা হলো এবং সকলে মিলে খেতে বসলেন । গীতার পঞ্চদশ অধ্যায় পাঠ করা হলো এবং তারপরে সকলে খেতে শুরু করলেন । মহারাজের সামনে নানাপ্রকার সুখাদ্য থরে থরে সাজানো ছিল । সেই রাজপুত মণ্ডলেশ্বর মহারাজের কাছে এলেন , তাঁর সঙ্গে তাঁর পরিচারক হাতে হালুয়ার পাত্র নিয়ে এলো ।
রাজপুতও মহারাজকে অনুরোধ করতে লাগলেন যাতে তিনি অনন্তঃ একটু হালুয়া তাঁর হাত থেকে নেন । মহারাজ তাইতে হেসে ফেললেন । তাঁর হাসি দেখে রাজপুত আশ্বর্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন , " আপনি হাসছেন কেন ? " মহারাজ বললেন , " আমার একটা পুরানো কথা মনে পড়ে হাসি পেল । " রাজপুত জিজ্ঞাসা করলেন , " কি কথা , আমাকে বলুন ! "
মহারাজ তখন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন , " ওহে , তোমরা একটু অপেক্ষা করো , বসো , জমিদার একটি পুরোনো কথা জানতে চাইছেন , তাই বলি শোনো । " মহারাজ রাজপুতকে জিজ্ঞাসা করলেন , " আপনার জ্ঞাতির একজন আপনার সঙ্গে থাকত , সেই পরিবারের কেউ আছে কি ? " রাজপুত বললেন , " একটি ছেলে শুধু ছিল , সে কিছুদিন গোরু চরাত , তারপর কি জানি কোথায় চলে গেল ! অনেকদিন হয়ে গেল , আর সে ফিরে এলো না । "
মহারাজ বললেন , " আমিই সেই ছেলে ! কাছেই এক সাধুমণ্ডল এসেছিলো , আমি সেখানেই গিয়েছিলাম । পরে কাশী চলে যাই , সেখানে লেখাপড়া শিখে পরে মণ্ডলেশ্বর হয়েছি । এই সেই দালান , এখানেই একদিন আপনার বাড়ির পরিচারিকা আমাকে সামান্য একটু দই দিতে আপত্তি করেছিল । আজ সেই আমিই আর এই সেই দালান , আপনিও সেই একই ব্যক্তি , যিনি নিজের হাতে আমাকে মোহনভোগ দিয়ে বলছেন যে দয়া করে আমি যেন আপনার হাত থেকে একটু মোহন ভোগ খাই ! "
" চাইলে পাওয়া যায় না ঘোল , তবু হলাম ধন্য ।
গলায় বাধে মোহন ভোগ এতো সাধু সঙ্গের পুণ্য ।। "
সাধুদের শরণ গ্রহণ করলে এমনই হয় যে , যেখানে সামান্য ঘোল পাওয়া যায় না , সেখানে মোহন ভোগও গলায় আটকে যায় । যদি কেউ ভগবানের শরণ গ্রহণ করেন তাহলে তিনি সাধুদেরও বরণীয় হয়ে ওঠেন । লক্ষপতি বা কোটিপতি হলে নয় , ভগবানের শরণাগত হলে , ভগবানের ভক্ত হলে তবেই স্বাধীন হওয়া যায় এবং তা একমাত্র মনুষ্যজন্মেই সম্ভব ।
মনে রাখা দরকার যে , আমরা একজন ব্যক্তির বাইরে দেখে বিচার করি কিন্তু তার মধ্যে কি আছে তা আমরা জানি না । তাই যে যেমনই হোক না কেন কাউকে নিচু বা খারাপ মনে করা উচিত নয় । যেমন আজ যে সাধারণ সে হয়ত একজন ডাক্তার হবে আর চিকিৎসা করার জন্য তার কাছে যেতে হবে । যার জন্ম যেমনই হোক না কেন মানুষ তার কর্ম্মে পরিচিত হয় ।
(c) Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন