শরীর , ইন্দ্রিয় , মন , বুদ্ধি , প্রাণ ইত্যাদি সবকিছু ভগবানেরই , নিজের নয় । সুতরাং এদের দ্বারা হওয়া ক্রিয়াগুলিকে ভক্তিযোগী কী করে নিজের বলে মনে করবেন ? সেইজন্য তাঁর এই ভাব থাকে , ' ক্রিয়ামাত্রই ভগবানের দ্বারা এবং ভগবানের জন্যই হচ্ছে , আমি তো নিমিত্তমাত্র । ' শ্রীকৃষ্ণই নিজ ( আমার ) ইন্দ্রিয়ের দ্বারা নিজেই সব ক্রিয়া করছেন - এই কথাটি ঠিকভাবে উপলব্ধি করে সমস্ত ক্রিয়াগুলির কর্তা শ্রীকৃষ্ণ এরূপ স্বীকার করা হল উপরের পদগুলির অর্থ ।
শরীরাদি বস্তুসকল নিজের নয় , বস্তুত এগুলি এখানে প্রাপ্ত হয়েছে এবং ছেড়ে চলে যাচ্ছে । এগুলি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্য , ভগবৎ প্রীতার্থে অপরের সেবা করার জন্যই পাওয়া গিয়েছে । এগুলির উপর আমাদের স্বতন্ত্র অধিকার নেই অর্থাৎ এগুলি আমরা নিজ ইচ্ছানুযায়ী রাখতেও পারি না , পরিবর্তন করতেও পারি না । সেইজন্যই এই শরীর ইত্যাদিকে এবং এর দ্বারা হওয়া কর্মসকলকে নিজের বলে মনে করা সততা নয় । অতএব মানুষকে সততার সঙ্গে , যাঁর বস্তু তাঁর ( অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের ) বলে মানতে হবে । কারণ এই সমস্ত বস্তুই তাঁর ।
কর্মযোগী তাঁর সমস্ত ক্রিয়া এবং পদার্থ " জগৎ - সংসার " - কে , জ্ঞানযোগী " প্রকৃতি " - কে এবং ভক্তিযোগী " ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে " - কে অর্পণ করেন । প্রকৃতি এবং সংসার - দুয়েরই প্রভু ভগবান । সুতরাং ক্রিয়া এবং পদার্থ সমস্ত শ্রীকৃষ্ণকে অর্পণ করাই হল শ্রেষ্ঠতা । কোনো প্রাণী , পদার্থ , শরীর , ইন্দ্রিয় , মন , বুদ্ধি , প্রাণ , ক্রিয়া ইত্যাদিতে বিন্দুমাত্র অনুরাগ , আকর্ষণ , আসক্তি , গুরুত্ব , মমতা , কামনা ইত্যাদি না থাকাই হল সর্বতোভাবে আসক্তি ত্যাগ ।
শাস্ত্রীয় দৃষ্টিতে জন্ম - মৃত্যুর কারণ " অজ্ঞান " হলেও সাধনের দৃষ্টিতে আসক্তি - ই জন্ম - মৃত্যুর প্রধান কারণ । অজ্ঞান ( জ্ঞানের অভাব ) আসক্তির ওপরে স্থিত । সেইজন্য আসক্তি চলে গেলে অজ্ঞানও নাশ হয় । এই অনুরাগ বা আসক্তি হতেই কামনা উৎপন্ন হয় । কামনাই সমস্ত পাপের মূল । এইজন্য পাপের মূল কারণ আসক্তি ত্যাগের কথা এখানে বলা হয়েছে । কারণ এটি থাকলে মানুষ পাপের হাত থেকে রক্ষা পায় না আর এটি না থাকলে মানুষ পাপে লিপ্ত হয় না ।
কোনো ক্রিয়া করার সময় ক্রিয়াজনিত সুখ গ্রহণ করলে বা তার ফলে আসক্ত হলে সেই ক্রিয়া হতে সম্বন্ধ ত্যাগ হয় না , বরং আসক্তি দূর হওয়ার পরিবর্তে আরো বেড়ে যায় । কোনো ক্ষুদ্র বা বৃহৎ কর্মের ফলস্বরূপ কোনো বস্তু কামনা করাই যে আসক্তি তাই নয় , এমনকি ক্রিয়ার সময়ও আপনাতে মহত্ব বা ভালোত্ব আরোপ করা আর অন্যদের দিয়ে ভালো বলানোর ভাব পোষণ করাও আসক্তিই ।
সেইজন্য নিজের জন্য কিছু করতে নেই । যে কর্ম দ্বারা নিজের বিন্দুমাত্র সুখ পাবার ইচ্ছা হয় , সেই কৃতকর্ম নিজের জন্য হয়ে যায় । নিজ সুখ - সুবিধা এবং সম্মানের ইচ্ছা সর্বতোভাবে ত্যাগ করে কর্ম করাই উপরিউক্ত পদগুলির অভিপ্রায় ।
এটি অত্যন্ত লক্ষণীয় বিষয় যে , ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হয়ে ভক্তিযোগী সংসারে থেকে ভগবানে নিবেদিতভাবে কর্মসম্পন্ন করলে কর্ম দ্বারা বন্ধনপ্রাপ্ত হন না । যেমন পদ্মপাতা জলে উৎপন্ন হয়ে , জলে থেকেও জল থেকে নির্লিপ্ত থাকে , তেমনি ভক্তিযোগী সংসারে থেকে সমস্ত ক্রিয়া করলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হওয়ায় সংসারে সর্বদা সর্বতোভাবে নির্লিপ্ত থাকেন ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি বিমুখ হয়ে সংসারের কামনা করাই সমস্ত পাপের প্রধান কারণ । কামনা উৎপন্ন হয় আসক্তি থেকে । তাই আসক্তি সর্বতোভাবে দূর হলে কামনা থাকে না । আর তার ফলে পাপ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না । ধূম্রে অগ্নির ন্যায় সকল কর্মেই কোনো না কোনো দোষ যুক্ত থাকে । কিন্তু যিনি আশা , কামনা এবং আসক্তি ত্যাগ করেছেন , তাঁকে এই দোষগুলি স্পর্শ করে না । আসক্তি রহিত হয়ে ভগবানের জন্য কর্ম করলে এর প্রভাবে সঞ্চিত সমস্ত পাপ বিলীন হয়ে যায় । সুতরাং ভক্তিযোগীর কোনোভাবেই পাপের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না ।
" পাপেন " পদটি কর্ম দ্বারা হওয়া সেই পাপ - পূণ্যরূপ ফলের বাচক , যেটি পরবর্তী জন্ম আরম্ভের কারণ হয় । ভক্তিযোগী সেই পাপ - পুণ্যরূপ ফলে কখনো লিপ্ত হন না অর্থাৎ বন্ধনপ্রাপ্ত হন না ।
এখানে সগুণ ঈশ্বরকে ' ব্রহ্ম ' বলার অর্থ হল যে ঈশ্বর সগুণ , নির্গুণ , সাকার , নিরাকার সবই ; কারণ তিনি সমগ্র । সমগ্রর মধ্যে সবই অন্তর্ভুক্ত । শ্রীমদ্ভাগবতেও ব্রহ্ম ( নির্গুণ - নিরাকার ) , পরমাত্মা ( সগুণ - নিরাকার ) এবং ভগবান ( সগুণ - সাকার ) এই তিনকে একই বলা হয়েছে । তাৎপর্য এই যে " সগুণ " - এর মধ্যে ব্রহ্ম , পরমাত্মা এবং ভগবান - এই তিনটিই অন্তর্ভুক্ত , কিন্তু ' নির্গুণ ' - এর মধ্যে কেবল ব্রহ্মকেই ধরা হয় , কারণ নির্গুণে গুণ নিষিদ্ধ । তাই নির্গুণ সীমিত আর সগুণ সমগ্র ।
বৈষ্ণবভক্তগণ সগুণ - সাকার ভগবানের উৎসবকে " ব্রহ্মোৎসব " নামে অভিহিত করেন । অর্জুনও ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে " ব্রহ্ম " নামে অভিহিত করেছেন - " পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান্ " । গীতায় ব্রহ্মকে তিনটি নামে অভিহিত করা হয়েছে __ " ওঁ " , " তৎ " , এবং " সৎ " । নাম - নামীর সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় এটি সগুণ ।
(C) Joy Shree Radha Madhav
শরীরাদি বস্তুসকল নিজের নয় , বস্তুত এগুলি এখানে প্রাপ্ত হয়েছে এবং ছেড়ে চলে যাচ্ছে । এগুলি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্য , ভগবৎ প্রীতার্থে অপরের সেবা করার জন্যই পাওয়া গিয়েছে । এগুলির উপর আমাদের স্বতন্ত্র অধিকার নেই অর্থাৎ এগুলি আমরা নিজ ইচ্ছানুযায়ী রাখতেও পারি না , পরিবর্তন করতেও পারি না । সেইজন্যই এই শরীর ইত্যাদিকে এবং এর দ্বারা হওয়া কর্মসকলকে নিজের বলে মনে করা সততা নয় । অতএব মানুষকে সততার সঙ্গে , যাঁর বস্তু তাঁর ( অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের ) বলে মানতে হবে । কারণ এই সমস্ত বস্তুই তাঁর ।
কর্মযোগী তাঁর সমস্ত ক্রিয়া এবং পদার্থ " জগৎ - সংসার " - কে , জ্ঞানযোগী " প্রকৃতি " - কে এবং ভক্তিযোগী " ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে " - কে অর্পণ করেন । প্রকৃতি এবং সংসার - দুয়েরই প্রভু ভগবান । সুতরাং ক্রিয়া এবং পদার্থ সমস্ত শ্রীকৃষ্ণকে অর্পণ করাই হল শ্রেষ্ঠতা । কোনো প্রাণী , পদার্থ , শরীর , ইন্দ্রিয় , মন , বুদ্ধি , প্রাণ , ক্রিয়া ইত্যাদিতে বিন্দুমাত্র অনুরাগ , আকর্ষণ , আসক্তি , গুরুত্ব , মমতা , কামনা ইত্যাদি না থাকাই হল সর্বতোভাবে আসক্তি ত্যাগ ।
শাস্ত্রীয় দৃষ্টিতে জন্ম - মৃত্যুর কারণ " অজ্ঞান " হলেও সাধনের দৃষ্টিতে আসক্তি - ই জন্ম - মৃত্যুর প্রধান কারণ । অজ্ঞান ( জ্ঞানের অভাব ) আসক্তির ওপরে স্থিত । সেইজন্য আসক্তি চলে গেলে অজ্ঞানও নাশ হয় । এই অনুরাগ বা আসক্তি হতেই কামনা উৎপন্ন হয় । কামনাই সমস্ত পাপের মূল । এইজন্য পাপের মূল কারণ আসক্তি ত্যাগের কথা এখানে বলা হয়েছে । কারণ এটি থাকলে মানুষ পাপের হাত থেকে রক্ষা পায় না আর এটি না থাকলে মানুষ পাপে লিপ্ত হয় না ।
কোনো ক্রিয়া করার সময় ক্রিয়াজনিত সুখ গ্রহণ করলে বা তার ফলে আসক্ত হলে সেই ক্রিয়া হতে সম্বন্ধ ত্যাগ হয় না , বরং আসক্তি দূর হওয়ার পরিবর্তে আরো বেড়ে যায় । কোনো ক্ষুদ্র বা বৃহৎ কর্মের ফলস্বরূপ কোনো বস্তু কামনা করাই যে আসক্তি তাই নয় , এমনকি ক্রিয়ার সময়ও আপনাতে মহত্ব বা ভালোত্ব আরোপ করা আর অন্যদের দিয়ে ভালো বলানোর ভাব পোষণ করাও আসক্তিই ।
সেইজন্য নিজের জন্য কিছু করতে নেই । যে কর্ম দ্বারা নিজের বিন্দুমাত্র সুখ পাবার ইচ্ছা হয় , সেই কৃতকর্ম নিজের জন্য হয়ে যায় । নিজ সুখ - সুবিধা এবং সম্মানের ইচ্ছা সর্বতোভাবে ত্যাগ করে কর্ম করাই উপরিউক্ত পদগুলির অভিপ্রায় ।
এটি অত্যন্ত লক্ষণীয় বিষয় যে , ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হয়ে ভক্তিযোগী সংসারে থেকে ভগবানে নিবেদিতভাবে কর্মসম্পন্ন করলে কর্ম দ্বারা বন্ধনপ্রাপ্ত হন না । যেমন পদ্মপাতা জলে উৎপন্ন হয়ে , জলে থেকেও জল থেকে নির্লিপ্ত থাকে , তেমনি ভক্তিযোগী সংসারে থেকে সমস্ত ক্রিয়া করলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হওয়ায় সংসারে সর্বদা সর্বতোভাবে নির্লিপ্ত থাকেন ।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি বিমুখ হয়ে সংসারের কামনা করাই সমস্ত পাপের প্রধান কারণ । কামনা উৎপন্ন হয় আসক্তি থেকে । তাই আসক্তি সর্বতোভাবে দূর হলে কামনা থাকে না । আর তার ফলে পাপ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না । ধূম্রে অগ্নির ন্যায় সকল কর্মেই কোনো না কোনো দোষ যুক্ত থাকে । কিন্তু যিনি আশা , কামনা এবং আসক্তি ত্যাগ করেছেন , তাঁকে এই দোষগুলি স্পর্শ করে না । আসক্তি রহিত হয়ে ভগবানের জন্য কর্ম করলে এর প্রভাবে সঞ্চিত সমস্ত পাপ বিলীন হয়ে যায় । সুতরাং ভক্তিযোগীর কোনোভাবেই পাপের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না ।
" পাপেন " পদটি কর্ম দ্বারা হওয়া সেই পাপ - পূণ্যরূপ ফলের বাচক , যেটি পরবর্তী জন্ম আরম্ভের কারণ হয় । ভক্তিযোগী সেই পাপ - পুণ্যরূপ ফলে কখনো লিপ্ত হন না অর্থাৎ বন্ধনপ্রাপ্ত হন না ।
এখানে সগুণ ঈশ্বরকে ' ব্রহ্ম ' বলার অর্থ হল যে ঈশ্বর সগুণ , নির্গুণ , সাকার , নিরাকার সবই ; কারণ তিনি সমগ্র । সমগ্রর মধ্যে সবই অন্তর্ভুক্ত । শ্রীমদ্ভাগবতেও ব্রহ্ম ( নির্গুণ - নিরাকার ) , পরমাত্মা ( সগুণ - নিরাকার ) এবং ভগবান ( সগুণ - সাকার ) এই তিনকে একই বলা হয়েছে । তাৎপর্য এই যে " সগুণ " - এর মধ্যে ব্রহ্ম , পরমাত্মা এবং ভগবান - এই তিনটিই অন্তর্ভুক্ত , কিন্তু ' নির্গুণ ' - এর মধ্যে কেবল ব্রহ্মকেই ধরা হয় , কারণ নির্গুণে গুণ নিষিদ্ধ । তাই নির্গুণ সীমিত আর সগুণ সমগ্র ।
বৈষ্ণবভক্তগণ সগুণ - সাকার ভগবানের উৎসবকে " ব্রহ্মোৎসব " নামে অভিহিত করেন । অর্জুনও ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে " ব্রহ্ম " নামে অভিহিত করেছেন - " পরং ব্রহ্ম পরং ধাম পবিত্রং পরমং ভবান্ " । গীতায় ব্রহ্মকে তিনটি নামে অভিহিত করা হয়েছে __ " ওঁ " , " তৎ " , এবং " সৎ " । নাম - নামীর সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় এটি সগুণ ।
(C) Joy Shree Radha Madhav
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন