শ্রী বৈশম্পায়ন বললেন -- জনমেজয় ! পাণ্ডুর জ্যেষ্ঠপুত্র রাজা যুধিষ্ঠিরকে তাঁর আত্মীয়দের শোকে সন্তপ্ত হয়ে প্রাণবিসর্জন দিতে প্রস্তুত দেখে শ্রীব্যাসদেব তাঁর শোক দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন -- " যুধিষ্ঠির ! এই বিষয়ে অশ্মা ব্রাহ্মণ কথিত এক প্রাচীন ইতিহাস আছে , মন দিয়ে শোনো ।
একবার বিদেহরাজ জনক দুঃখ ও শোকের বশীভূত হয়ে মহামতি বিপ্রবর অশ্মাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে , " যারা নিজেদের কল্যাণ চায় , তাদের কীরূপ আচরণ করা উচিত ? "
অশ্মা বললেন __ " রাজন ! মানুষ যখন জন্মায় , তখন থেকেই দুঃখ ও শোক তার নিত্যসঙ্গী । এগুলি মানুষের জ্ঞানকে এমনভাবে ছিন্নভিন্ন করে যেমন বায়ু মেঘকে করে থাকে । সেইজন্যই মানুষের মনে দৃঢ় ধারণা হয় যে " আমি কুলীন , আমি সিদ্ধ , আমি কোনো সাধারণ মানুষ নই । " সেই ধারণার বশীভূত হয়ে সে পিতা পিতামহ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ খরচ করে ভিখারি হয়ে যায় এবং অন্যের অর্থ হস্তগত করার চিন্তা করতে থাকে । নিজের মর্যাদার বিষয় তার খেয়াল থাকে না । সে অনুচিত পথে ধন জমাতে থাকে । তাই রাজারা তাকে দণ্ডপ্রদান করেন ।
তাই মানুষের সুখ বা দুঃখ যাই আসুক , তা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়াই উচিত । কারণ তা দূর করার কোনো উপায় নেই । অপ্রিয় ঘটনা , প্রিয়জনের বিচ্ছেদ - বিয়োগ , ইষ্ট , অনিষ্ট , সুখ - দুঃখ _ এসবই প্রারব্ধ ( ভাগ্য ) অনুুসারে হয় । তেমনই জন্ম - মৃত্যু ও লাভ - ক্ষতিও দৈবাধীন । চিকিৎসককেও রোগী হতে দেখা যায় , বলবান ব্যক্তিও কখনো কখনো শক্তিহীন হয়ে পড়ে , ধনী ব্যক্তিকেও ভিখারী হতে দেখা যায় । কালের এই গতি বড় রহস্যময় ।
উচ্চবংশে জন্ম , পুরুষার্থ , আরোগ্য , রূপ , সৌভাগ্য , ঐশ্বর্য _ এ সবই প্রারব্ধের অধীন । যে ভিখারী , প্রতিপালনের কষ্ট হলেও কয়েকটি সন্তান তার গৃহে জন্ম নেয় , আর যে সম্পন্ন , একটি সন্তানও তার ভাগ্যে জোটে না । বিধাতার কর্ম বড়ই বিচিত্র । ব্যাধি , অগ্নি , জল , শস্ত্র , ক্ষুধা , তৃষ্ণা , বিপদ , বিষ , জ্বর , মৃত্যু , উচ্চস্থান থেকে পতন __ এ সবই জীবের জন্মানোর সঙ্গেই স্থির হয়ে যায় । সেই নিয়ম অনুসারেই তাকে এই পরিস্থিতিতে যেতে হয় । আজ পর্যন্ত কেউ এর থেকে মুক্তি পায়নি , পাবেও না ।
এইভাবে কালের প্রভাবেই জীবদের অনুকূল ও প্রতিকূল পদার্থের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হয় । বায়ু , আকাশ , অগ্নি , চন্দ্র , সূর্য , দিন , রাত , নক্ষত্র , নদী ও পবর্তকেও কাল ব্যতীত অন্য কে সৃষ্টি করে এবং স্থির রাখে ? শীত - গ্রীষ্ম ও বর্ষার চক্রও কালযোগে পরিবর্তিত হয় । মানুষের সুখ - দুঃখের বিষয়েও একই ব্যাপার । রাজন্ ! মানুষের ওপর যখন জরা - মৃত্যুর আক্রমণ হয় তখন কোনো ওষুধ , মন্ত্র , হোম , যজ্ঞ তাকে রক্ষা করতে পারে না ।
ইহজগতে বহু পিতা - মাতা , স্ত্রী - পুত্র আমাদের হয়েছিল , কিন্তু বাস্তবে চিন্তা করে দেখ , তারা কার এবং আমরা কাদের আপন বলব ? পথ চলার সময় পথচারীদের মতোই আমাদের স্ত্রী - বন্ধু ও সুহৃদগণের সঙ্গে কালযাপন হয় । সুতরাং বিচারশীল মানুষদের মনে মনে চিন্তা করা উচিত যে __ " আমি কোথায় ? " " কোনখানে যাব ? " " আমি কে ? " " এখানে কেন এসেছি " এবং " কার জন্য কেন শোক করছি ? " এই জগৎ - সংসার অনিত্য , চক্রের ন্যায় তা পরিবর্তিত হয়ে চলেছে । জীবন - পথে মাতা - পিতা , ভাই - বোন , মিত্রাদির সমাগম যেমন পাস্থশালায় একত্রিত পথিকদের মতো ।
কল্যাণকারী ব্যক্তিদের শাস্ত্রাজ্ঞা উল্লঙ্ঘন না করে তাতে শ্রদ্ধা রাখা উচিত । পিতৃ - পিতামহের শ্রাদ্ধ - তর্পণ , দেবতাদের পূজা এবং যজ্ঞানুষ্ঠান ঠিকমতো সম্পন্ন করে তবেই ধর্ম - অর্থ - কাম উপভোগ করা উচিত । হায় ! এই সমগ্র জগৎ অগাধ কালসমুদ্রে ভেসে যাচ্ছে । এতে জরা - মৃত্যুর ন্যায় অসংখ্য জন্তু ভর্তি ; কিন্তু জীবের তাতে খেয়ালই নেই । চিকিৎসকগণও অত্যন্ত তীক্ষ্ম - কটু নানা প্রকার ঔষধ দিয়ে থাকেন , তবুও জীব এই মৃত্যু্কে উল্লঙ্ঘন করতে সক্ষম হয় না ।
বড় বড় চিকিৎসকগণও যেমন এই জরা - বৃদ্ধত্ব দূর করতে পারেন না , তেমনই তপস্বী , স্বাধ্যায় - শীল , দানী , বড় বড় যজ্ঞকারী ব্যক্তিগণও জরা - মৃত্যু রোধ করতে পারেন না । দিন - রাত , পক্ষ , মাস , বর্ষ উপস্থিত হয়ে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায় , মৃত্যুর এই দীর্ঘ পথ সকল জীবকেই অতিক্রম করতে হয় ।
সুতরাং এমন কোন মানুষ নেই , যাকে কালের বশীভূত হয়ে যেতে না হয় । নিজ দেহের সঙ্গেই যখন চিরস্থায়ী সম্পর্ক থাকে না , তখন অন্যান্য জনের সঙ্গে কী করে থাকবে ? রাজন্ ! আজ তোমার পিতা - পিতামহ কোথায় গেলেন ? এখন তুমিও তাঁদের দেখতে পাচ্ছ না , তাঁরাও তোমাকে দেখচ্ছেন না । স্বর্গ বা নরককে মানুষ চর্মচক্ষে দেখতে পায় না । সেগুলি দেখার জন্য সৎপুরুষেরা শাস্ত্রের সাহায্য নেন । সুতরাং তুমি শাস্ত্রানুরূপ আচরণই করো ।
মানুষের প্রথম জীবনে ব্রহ্মচর্য পালন করা উচিত । তারপর গৃহস্থাশ্রমে এসে পিতৃ - পিতামহ ও দেবতাদের ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যজ্ঞানুষ্ঠান এবং সন্তান উৎপাদন করবে । এরূপ সূক্ষ্মদর্শী গৃহস্থদের নিজ হৃদয়ের শোক পরিত্যাগ করে ইহলোক , স্বর্গলোক ও পরমাত্মার আরাধনা করা উচিত । যে রাজা শাস্ত্রানুসারে ধর্ম আচরণ ও দ্রব্য সংগ্রহ করেন , সমস্ত জগতে তাঁর সুষশ ছড়িয়ে পড়ে ।
ব্যাসদেব বললেন -- যুধিষ্ঠির ! অশ্মা মুনির কাছে এইভাবে ধর্মরহস্য জেনে রাজা জনকের বুদ্ধি শুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল , তাঁর সমস্ত মনোরথ পূর্ণ হয়েছিল এবং তিনি শোকহীন হয়ে মুনির অনুমতি নিয়ে নিজ ভবনে চলে গিয়েছিলেন । তুমিও তাঁর মতো শোক ত্যাগ করে উঠে দাঁড়াও । মনকে প্রসন্ন করো এবং শাস্ত্রধর্ম অনুসারে জয় করা এই পৃথিবীর রাজ্যশাসন করো ।
জয় রাধে ।
জয় হোক সকল ভক্তবৃন্দের ।
শ্রীমতি রাধারাণী সকলের মঙ্গল করুণ ।
একবার বিদেহরাজ জনক দুঃখ ও শোকের বশীভূত হয়ে মহামতি বিপ্রবর অশ্মাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে , " যারা নিজেদের কল্যাণ চায় , তাদের কীরূপ আচরণ করা উচিত ? "
অশ্মা বললেন __ " রাজন ! মানুষ যখন জন্মায় , তখন থেকেই দুঃখ ও শোক তার নিত্যসঙ্গী । এগুলি মানুষের জ্ঞানকে এমনভাবে ছিন্নভিন্ন করে যেমন বায়ু মেঘকে করে থাকে । সেইজন্যই মানুষের মনে দৃঢ় ধারণা হয় যে " আমি কুলীন , আমি সিদ্ধ , আমি কোনো সাধারণ মানুষ নই । " সেই ধারণার বশীভূত হয়ে সে পিতা পিতামহ থেকে প্রাপ্ত সম্পদ খরচ করে ভিখারি হয়ে যায় এবং অন্যের অর্থ হস্তগত করার চিন্তা করতে থাকে । নিজের মর্যাদার বিষয় তার খেয়াল থাকে না । সে অনুচিত পথে ধন জমাতে থাকে । তাই রাজারা তাকে দণ্ডপ্রদান করেন ।
তাই মানুষের সুখ বা দুঃখ যাই আসুক , তা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়াই উচিত । কারণ তা দূর করার কোনো উপায় নেই । অপ্রিয় ঘটনা , প্রিয়জনের বিচ্ছেদ - বিয়োগ , ইষ্ট , অনিষ্ট , সুখ - দুঃখ _ এসবই প্রারব্ধ ( ভাগ্য ) অনুুসারে হয় । তেমনই জন্ম - মৃত্যু ও লাভ - ক্ষতিও দৈবাধীন । চিকিৎসককেও রোগী হতে দেখা যায় , বলবান ব্যক্তিও কখনো কখনো শক্তিহীন হয়ে পড়ে , ধনী ব্যক্তিকেও ভিখারী হতে দেখা যায় । কালের এই গতি বড় রহস্যময় ।
উচ্চবংশে জন্ম , পুরুষার্থ , আরোগ্য , রূপ , সৌভাগ্য , ঐশ্বর্য _ এ সবই প্রারব্ধের অধীন । যে ভিখারী , প্রতিপালনের কষ্ট হলেও কয়েকটি সন্তান তার গৃহে জন্ম নেয় , আর যে সম্পন্ন , একটি সন্তানও তার ভাগ্যে জোটে না । বিধাতার কর্ম বড়ই বিচিত্র । ব্যাধি , অগ্নি , জল , শস্ত্র , ক্ষুধা , তৃষ্ণা , বিপদ , বিষ , জ্বর , মৃত্যু , উচ্চস্থান থেকে পতন __ এ সবই জীবের জন্মানোর সঙ্গেই স্থির হয়ে যায় । সেই নিয়ম অনুসারেই তাকে এই পরিস্থিতিতে যেতে হয় । আজ পর্যন্ত কেউ এর থেকে মুক্তি পায়নি , পাবেও না ।
এইভাবে কালের প্রভাবেই জীবদের অনুকূল ও প্রতিকূল পদার্থের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হয় । বায়ু , আকাশ , অগ্নি , চন্দ্র , সূর্য , দিন , রাত , নক্ষত্র , নদী ও পবর্তকেও কাল ব্যতীত অন্য কে সৃষ্টি করে এবং স্থির রাখে ? শীত - গ্রীষ্ম ও বর্ষার চক্রও কালযোগে পরিবর্তিত হয় । মানুষের সুখ - দুঃখের বিষয়েও একই ব্যাপার । রাজন্ ! মানুষের ওপর যখন জরা - মৃত্যুর আক্রমণ হয় তখন কোনো ওষুধ , মন্ত্র , হোম , যজ্ঞ তাকে রক্ষা করতে পারে না ।
ইহজগতে বহু পিতা - মাতা , স্ত্রী - পুত্র আমাদের হয়েছিল , কিন্তু বাস্তবে চিন্তা করে দেখ , তারা কার এবং আমরা কাদের আপন বলব ? পথ চলার সময় পথচারীদের মতোই আমাদের স্ত্রী - বন্ধু ও সুহৃদগণের সঙ্গে কালযাপন হয় । সুতরাং বিচারশীল মানুষদের মনে মনে চিন্তা করা উচিত যে __ " আমি কোথায় ? " " কোনখানে যাব ? " " আমি কে ? " " এখানে কেন এসেছি " এবং " কার জন্য কেন শোক করছি ? " এই জগৎ - সংসার অনিত্য , চক্রের ন্যায় তা পরিবর্তিত হয়ে চলেছে । জীবন - পথে মাতা - পিতা , ভাই - বোন , মিত্রাদির সমাগম যেমন পাস্থশালায় একত্রিত পথিকদের মতো ।
কল্যাণকারী ব্যক্তিদের শাস্ত্রাজ্ঞা উল্লঙ্ঘন না করে তাতে শ্রদ্ধা রাখা উচিত । পিতৃ - পিতামহের শ্রাদ্ধ - তর্পণ , দেবতাদের পূজা এবং যজ্ঞানুষ্ঠান ঠিকমতো সম্পন্ন করে তবেই ধর্ম - অর্থ - কাম উপভোগ করা উচিত । হায় ! এই সমগ্র জগৎ অগাধ কালসমুদ্রে ভেসে যাচ্ছে । এতে জরা - মৃত্যুর ন্যায় অসংখ্য জন্তু ভর্তি ; কিন্তু জীবের তাতে খেয়ালই নেই । চিকিৎসকগণও অত্যন্ত তীক্ষ্ম - কটু নানা প্রকার ঔষধ দিয়ে থাকেন , তবুও জীব এই মৃত্যু্কে উল্লঙ্ঘন করতে সক্ষম হয় না ।
বড় বড় চিকিৎসকগণও যেমন এই জরা - বৃদ্ধত্ব দূর করতে পারেন না , তেমনই তপস্বী , স্বাধ্যায় - শীল , দানী , বড় বড় যজ্ঞকারী ব্যক্তিগণও জরা - মৃত্যু রোধ করতে পারেন না । দিন - রাত , পক্ষ , মাস , বর্ষ উপস্থিত হয়ে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায় , মৃত্যুর এই দীর্ঘ পথ সকল জীবকেই অতিক্রম করতে হয় ।
সুতরাং এমন কোন মানুষ নেই , যাকে কালের বশীভূত হয়ে যেতে না হয় । নিজ দেহের সঙ্গেই যখন চিরস্থায়ী সম্পর্ক থাকে না , তখন অন্যান্য জনের সঙ্গে কী করে থাকবে ? রাজন্ ! আজ তোমার পিতা - পিতামহ কোথায় গেলেন ? এখন তুমিও তাঁদের দেখতে পাচ্ছ না , তাঁরাও তোমাকে দেখচ্ছেন না । স্বর্গ বা নরককে মানুষ চর্মচক্ষে দেখতে পায় না । সেগুলি দেখার জন্য সৎপুরুষেরা শাস্ত্রের সাহায্য নেন । সুতরাং তুমি শাস্ত্রানুরূপ আচরণই করো ।
মানুষের প্রথম জীবনে ব্রহ্মচর্য পালন করা উচিত । তারপর গৃহস্থাশ্রমে এসে পিতৃ - পিতামহ ও দেবতাদের ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যজ্ঞানুষ্ঠান এবং সন্তান উৎপাদন করবে । এরূপ সূক্ষ্মদর্শী গৃহস্থদের নিজ হৃদয়ের শোক পরিত্যাগ করে ইহলোক , স্বর্গলোক ও পরমাত্মার আরাধনা করা উচিত । যে রাজা শাস্ত্রানুসারে ধর্ম আচরণ ও দ্রব্য সংগ্রহ করেন , সমস্ত জগতে তাঁর সুষশ ছড়িয়ে পড়ে ।
ব্যাসদেব বললেন -- যুধিষ্ঠির ! অশ্মা মুনির কাছে এইভাবে ধর্মরহস্য জেনে রাজা জনকের বুদ্ধি শুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল , তাঁর সমস্ত মনোরথ পূর্ণ হয়েছিল এবং তিনি শোকহীন হয়ে মুনির অনুমতি নিয়ে নিজ ভবনে চলে গিয়েছিলেন । তুমিও তাঁর মতো শোক ত্যাগ করে উঠে দাঁড়াও । মনকে প্রসন্ন করো এবং শাস্ত্রধর্ম অনুসারে জয় করা এই পৃথিবীর রাজ্যশাসন করো ।
জয় রাধে ।
জয় হোক সকল ভক্তবৃন্দের ।
শ্রীমতি রাধারাণী সকলের মঙ্গল করুণ ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন