০৫ জানুয়ারী ২০১৮

ঋগ্বেদ সংহিতা - প্রথম মণ্ডলঃবিভিন্ন ঋষিঃ সুক্তঃ ৩১-৪৫

৩১ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরা ঋষিদের আদি ঋষি ছিলে (১) দেব হ{েয় দেবগণের মঙ্গলময় সখ। হয়েছ; তোমার কর্মে মেধাবী, জ্ঞাতকর্মা ও উজ্জ্বলাষুধ মরুৎগণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
২। হে অগ্নি! তুমি অঙ্গিরাদের মধ্যে প্রথম ও সর্বোত্তম; তুমি মেধাবী এবং দেবগণের যজ্ঞভূষিত কর; তুমি সমস্ত জগতের বিভূ; তুমি মেধাবান ও দ্বিমাতু (২) তুমি মনুষ্যের উপকারার্থে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সকল স্থানেই বর্তমান আছে।
৩। হে অগ্নি! তুমি মাতরিবার অগ্রগামী (৩), তুমি শোভনীয় যজ্ঞের ইচ্ছায় পরিচর্যাকারী যজমানের নিকট আবিভূত হও; তোমার সামর্থ দেখে আকাশ ও পৃথিবী কম্পিত হয়; তোমাকে হোতারূপে বরণ করাতে তুমি যজ্ঞে সে ভার বহন করেছ; হে নিবাসহেতু! তুমি পূজ্য দেবগণের যজ্ঞ সম্পাদন করেছ।
৪। হে অগ্নি! তুমি মনুকে স্বর্গলোকের কথা বলেছিলে (৪) পুরুরবা রাজা সুকৃতি করলে তুমি তার প্রতি অধিকতর ফল দান করেছিলে (৫) যখন তোমার পিতৃরূপ কাষ্ঠদ্বয়ের ঘর্ষণে উৎপন্ন হও, তখন তোমাকে বেদির পূর্বদেশে আনে, পরে পশ্চিম দিকে নিয়ে যায়।
৫। হে অগ্নি! তুমি অভীষ্টবর্ষী ও পুষ্টিবর্ধক; যজমান স্রচ উন্নত করবার সময় তোমার যশ কীর্ত্তন করে যে যজমান বষট শব্দ উচ্চারণ করে আহুতি সমর্পণ করে, হে একমাত্র অন্নদাতা অগ্নি! তুমি প্রথমে তাকে, তারপর সকল লোককে আলোক দান কর।
৬।হে বিশিষ্ট জ্ঞানযুক্ত অগ্নি! তুমি বিপথগামী পুরুষকে তার উদ্ধার যোগ্য কার্যে নিযুক্ত কর; যুদ্ধ চতুর্দিকে বিস্তুত হয়ে সম্যকরূপে আরম্ভ হলে তুমি অল্প সংখ্যক বীরত্বরহিত পুরুষদের দ্বারা প্রধান প্রধান বীরদেরও হনন কর।
৭। হে অগ্নি! তুমি সে মনুষ্যকে দিনে দিনে অন্নের জন্য উৎকৃষ্ট ও মরণ রহিত পদে ধারণ কর; যে উভয়রূপে জন্মের জন্য অতিশয় তৃষাযুক্ত হয়, সে অভিজ্ঞ যজমানকে সুখ ও অন্ন দান কর।
৮। হে অগ্নি! আমরা ধন দানের জন্য তোমাকে স্তুতি করি, তুমি যশোষুক্ত ও যজ্ঞ সম্পাদক পুত্র দান কর; নুতন পুত্রদ্বারা যজ্ঞ কর্ম বৃদ্ধি করব। হে দ্যু ও পৃথিবী, দেবগণের সাথে আমাদের সম্যকরূপে রক্ষা কর।
৯। হে দোবরাহত অগ্নি! তুমি সকল দেবগণের মধ্যে জাগরুক; তোমার মাতা পিতার সমীপে বর্তমান থেকে আমাদরে পুত্র দান করে অনুগ্রহ কর; যজ্ঞ কর্তার প্রতি প্রসন্নমতি হও; হে কল্যাণরূপ অগ্নি! তুমি সকল ধন বপন করেছ।
১০। হে অগ্নি! তুমি আমাদরে প্রতি প্রসন্নমতি, তুমি আমাদের পিতাস্বরূপ তুমি পরমায়ু দাতা, আমরা তোমার বন্ধু। হে অহিংসনীয় অগ্নি! তুমি শোভনপুরুষযুক্ত ও ব্রতপালক, শত ও সহস্র ধন তোমাকে প্রাপ্ত হয়।
১১। হে অগ্নি! দেবগণ প্রথমে তোমাকে নহুষের (৬) মনুষ্যরুপধারী সেনাপতি করেছিলেন, এবং ইহলোকে (৭) মনুর ধর্মোপদেষ্টা করেছিলেন। পুত্র যেন পিতৃতুল্য হয়।
১২। যে বন্দনীয় অগ্নি! আমরা ধনযুক্ত, তুমি পালনকার্য সমূহ দ্বারা আমাদরে রক্ষা কর এবং পুত্রদের দেহও রক্ষা কর। আমার পুত্রের পুত্র তোমার ব্রতে নিরন্তর নিযুক্ত আছে, তুমি তার গাভী সমূহ রক্ষা করেছ।
১৩। হে অগ্নি! তুমি যজমানের পালক, যজ্ঞ বাধাশূন্য করবার জন্য নিকটে থেকে চতুরক্ষ রূপে দীপ্যমান রয়েছে। তুমি অহিংসক ও পোষক, তোমাকে যে হব্য দান করে সে স্ত্রোতার মন্ত্র তুমি মনের সাথে াগ্রহণ কর।
১৪। হে অগ্নি! স্তুতিবাদক ঋত্বিক, যাতে স্পৃহনীয় ও পরমধন লাভ করে তুমি তা ইচ্ছা কর। পোষণীয় যজমানের প্রতি তুমি প্রসন্নমতি পিতা স্বরূপ এরূপ লোকে বলে থাকে। তুমি অতিশয় অভিজ্ঞ অর্ভক যজমানকে শিক্ষা দাও এবং দিক সবল নির্ণয় করে দাও।
১৫। হে অগ্নি! যে যজমান ঋত্বিকদের দক্ষিণা দান করেছে, তুমি সে পুরুষকে স্যুত বর্মের ন্যায় সম্পূর্ণরূপে রক্ষা কর। যে যজমান সুস্বাদু অন্নদ্বারা অতিথিদের সুখী করে স্বগৃহে পশু বলিযুক্ত যজ্ঞ অনুষ্ঠান করে, সে স্বর্গের উপমা স্থল হয়।
১৬। হে অগ্নি! আমাদরে এ যজ্ঞ কার্যে ভ্রম ক্ষমা কর এবং অনেক দূর হতে এ বিপথে এসে পড়েছি তা ক্ষমা কর। সোমাভিষবকারী মনুষ্যদের প্রতি তুমি সহজে অধিগম্য ও পিতাস্বরূপ, প্রসন্নমতি ও কর্মনির্বাহক এবং তাদের প্রত্যক্ষ দর্শন দাও।
১৭। হে বিশুদ্ধ অগ্নি! হে অঙ্গিরা! মনু ও অঙ্গিরা এবং যযাতি ও অন্যান্য পূর্ব পুরুষের ন্যায় তুমি সম্মুখবর্তী হয়ে (যজ্ঞ) দেশে গমন কর, দেবসমূহকে আন ও কুশের উপর উপবেশন করাও এবং অভীষ্ট হব্যদান কর।
১৮। হে অগ্নি! এ মন্ত্র দ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হও, আমাদের শক্তি ও জ্ঞান অনুসারে আমরা এ রচনা করলাম; এ দ্বারা আমাদরে বিশেষ ধন প্রদান কর এবং আমাদের অন্নযুক্ত শোভনীয় বৃদ্ধি প্রদান কর।

টীকাঃ
১। অঙ্গিরসানাং ঋষিণাং সর্বেষাং জনকত্বাৎ। সায়ণ। অঙ্গিরাগণ কারা? যাস্ক বলেন, অঙ্গিরা অঙ্গার মাত্র। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ অনুসারে ও অঙ্গিরাঋষিগণ প্রথমে যজ্ঞাগ্নির অজ্ঞার মাত্র ছিলেন। কিন্তু অঙ্গিরার কথা সমস্তই উপমাএরূপ বোধ হয় না। অঙ্গিরা নামে প্রকৃত একটি প্রাচীন ঋষিবংশ ছিল এবং সে ঋষিগণ ভারতবর্ষে অগ্নির পূজা অনেকটা প্রচার করেছিলেন। ৭১ সুক্তের ৩ ঋকের টীকা দেখুন।
২। দুই কাষ্ঠের ঘর্ষণে উৎপন্ন এ জন্য। দ্বয়োররণ্যোরুৎপন্নঃ। সায়ণ।
৩। অগ্নিবায়ুবাদিত্যঃ এ বচনে বায়ুর পূর্বে অগ্নির নাম আছে। সায়ণ। কিন্তু ঋগ্বেদে মাতরিবা অর্থে বায়ু নয়, মাতরিশ্বা অগ্নির রূপ বিশেষ। ৬০ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।
৪। পূর্ন কর্মদ্বারা স্বর্গ পাওয়া যায় একথা অগ্নি মনুকে বলেছিলেন। সায়ণ। মনু বিবস্বানের পুত্র ও সবর্ণার গর্ভে জাত। যাস্ক।
৫। পুরুরবা রাজা ঘর্ষণ দ্বারা অগ্নি উৎপন্ন করে তা থেকে তিন প্রকার যজ্ঞ অগ্নি প্রস্তুত করেছিলেন এরূপ আখ্যান বিষ্ণুপুরাণে আছে।
৬। পুরুরবারপৌত্র নহুষ দর্পের জন্য স্বর্গচ্যুত হয়েছিলেন এরূপ বিষ্ণুপুরাণে লিখিত আছে, কিন্তু অগ্নি নহুষের সেনাপতি হয়ছিলেন এরূপ কথা দেখা যায় না। (৭) ইলা মনুর কন্যা বলে পুরাণে বর্ণিত। ফরাসী পন্ডিত বর্ণফু এ ঋকে ইলা অর্থে বাক্য এবং মনু অর্থে মনুষ্য করেছেন। তাঁর অনুবাদ এই Les dieux ont fait de la parole I’institutrice de I’homme.কিন্তু অনেক স্থলে ইলা অর্থে পৃথিবী বলে নির্দেশ করা হয়েছে। ৩ মন্ডলের ২৪ সুক্ত ৪ ঋক ও ২৭ সুক্তের ১০ ঋক দেখুন।






৩২ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। বজ্রধারী ইন্দ্র প্রথমে যে পরাক্রমের কর্ম সম্পাদন করেছিলেন, তার সে কর্মসমূহ বর্ননা করি। তিনি হিকে (মেঘকে) হনন করেছিলেন, তৎপর বৃষ্টি বর্ষন করেছিলেন, বহনশীল পর্বতীয় নদী সমূহের (পথ) ভেদ করে দিয়েছিলেন (১)।
২। ইন্দ্র পর্বতাশ্রিত আহিকে (২) হনন করেছিলেন; ত্ষ্টা ইন্দ্রের জন্য সূদুর পাতী বজ্র নির্মান করেছিলেন; তারপর যেরূপ গাভী সবেগে বৎসের দিকে যায়, ধারাবাহী জল সেরূপ সবেগে সমুদ্রাভিমূখে গমন করেছিলেন।
৩। ইন্দ্র বৃষের ন্যায় বেগের সাথে সোম গ্রহণ করেছিলেন; ও তা দিয়ে অিহদিগের মধ্যে প্রথমজাতকেহ হনন করেছিলেন।
৪। যখন তুমি অহিদিগের মধ্যে প্রথমে জাততে হনন করলে, তখন তুমি মায়াবীদিগের মায়া বিনাশ করার পর সূর্য ও ঊষাকাল ও আকাশে প্রকাশ করে আর শত্রু রাখলে না।
৫। জগতের আবরণীকারী বৃত্রকে ইন্দ্র মহাধ্বংসকারী বজ্র দ্বারা ছিন্নবাহন করে বিনাশ করলেন, কুঠারছিন্ন বৃক্ষস্কন্ধের ন্যায় অহি পৃথিবী স্পর্শ করে পড়ে আছে।
৬। দর্পষুত বৃত্ত আপনার সমতুল্য যোদ্ধা নেই মনে করে মহাবীর ও বহু বিনাশী ও শত্রু বিজয়ী ইন্দ্রকে যুদ্ধে আহ্বান করেছিলেন। ইন্দ্রের বিনাশকার্য হতে রক্ষা পেল না। ইন্দ্রশত্রু বৃত্ত নদীতে পতিত হয়ে নদীসমূহকে পিষ্ট করে ফেলল।
৭। হস্ত-পদ-শুন্য বৃত্ত ইনদ্রকে যুদ্ধে আহআন করলে, ইন্দ্র তার সানু তুল্য পৌঢ় স্কন্ধে বজ্র আঘাত করলেন; যেরূপ পুরুষত্বহীন ব্যক্তি পুরুষত্ব সম্পন্ন ব্যক্তির সাদৃশ্য লাভ করতে বৃথা যত্ন করে, বত্রও সেরূপে বৃথা যত্ন করল; বুসঊথানে ক্ষূত হয়ে বৃত্ত ভূমিতে পড়ল।
৮। ভগ্নকূলকে অতিক্রম করে নদ যেরূপ বয়ে যায়, মনোহর জল সেরূপ পতিত বৃত্রদেহকে অতিক্রম করে যাচ্ছে; বৃত্ত জীবন্দশায় নিজ মহিমাদ্বারা যে জলকে বন্ধ করে রেখেছিল, অহি এখন সে জলের পদের নীচে শয়ন করল।
৯। বৃত্রের মাতা তির্যকভাবে রইল, তখন ইন্দ্র তার অধোভাগে অস্ত্রাঘাত করলেন, তখন মাতা উপরে ও পুত্র নীচে রইল, তারপর বঃসের সাথে ধেনুর ন্যায় বৃত্তের মাতা দনু শুয়ে পড়ল।
১০। স্থিতি রহিত বিশ্রাম রহিত জলের মধ্যে নিহিত, নাম শুন্যা শরীরের উপর দিয়ে জল বয়ে যাচ্ছে; ইন্দ্রশত্রু দীর্ঘ নির্দায় পতিত রয়েছে।
১১। পনির দ্বারা গাভী সকল যেরুপ গুপ্ত ছিল, বৃত্তপত্নী সমূহ অহি রক্ষিত হয়ে সেরুপ নিরুদ্ধ হয়েছিল; জেলর বহন দ্বারা রুদ্ধ ছিল, বৃত্তকে হনন করে ইন্দ্র সে দ্বার খুলে দিয়েছেন।
১২। হে ইন্দ্র! যখন সেই এক দেব বৃত্ত (৩) তোমরবজ্রের প্রতি আঘাত করেছিল, তখন তুমি অশ্বপুচ্ছে ন্যায় হয়ে আঘাত নিবারণ করেছিলে; তুমি গহাভী জয় করেছ, সোমরস জয় করেছ এবং সপ্তসিন্ধু প্রবাহ ছেড়ে দিয়েছ।
১৩। ইন্দ্র ও অহি যখন যুদ্ধ করেছিলেন এবং অহি যে বিদ্যুৎ বা মেঘ গর্জন, বা জলবর্ষন বা বজ্র ইন্দ্রের প্রতি প্রয়োগ করেছিল, তা ইন্দ্রকে স্পর্শ করল না; এবং ইন্দ্র অন্যান্য মায়াও জয় করেছিলেন।
১৪। হে ইন্দ্র! অহীকে হনন করবার সময় যখন তোমার হৃদয়ে ভয় সঞ্চার হয়েছিল, তখন তুমি তখন তুমি অহির অন্য কোন হস্তার জন্য প্রতীক্ষা করেছিলে, যে ভীত হয়ে শ্যেন পক্ষীর ন্যায় নবনবতি নদ ও জল পর হয়েঢ গিয়েছিলে?
১৫। বজ্রবাহু ইন্দ্র স্থাবর ও জঙ্গমদের এবং শান্ত পশু ও শৃঙ্গী পশুদের রাজা হলেন; তিনি মনুষ্যদের রাজা হয়ে নিবাস করেছেন, এবং যেরূপ চক্রের নেমি মধ্যস্থা কাষ্ঠ সমূহকে ধান করে, সেরুপ ইন্দ্র সকলকে আপনার মধ্যে ধারণ করেছিলেন (৪)।

টীকাঃ
১। পুরাণে যে বৃত্ত নামক অসূরের সাথে ইন্দ্রের যুদ্ধ সম্বন্ধীয় আখ্যান আছে, তার উৎপত্তি আমরা এই সূত্রে পাই। মেঘের নাম বৃত্র বা অহি, ইন্দ্র মেঘকে বজ্র দ্বারা আঘাত করে বৃষ্টি বর্ণণ করেছেন, এরূপে উপলদ্ধি করে ঋগ্বেদে ঋষিগণ উপমা ও কল্পনাপূর্ণ কবিতা লিখেছেন, তা হতে পৌরাণিক বৃত্র অসুরের গল্প উৎপন্ন। বৃত্রের সাথে বৃত্রহস্তার ধুনদ্ধর গল্প প্রাচীন আর্যদের মধ্যে প্রচলিত ছিল, সুতরাং হিন্দু ভিন্ন অন্যান্য আর্য জাতির মধ্যেও এ গল্প দেখা যায়। ইরানীয়দিগের অবস্থায় বৃত্তহস্তার অনেক উপাসনা আছে। আবার গ্রীকদের মধ্যে সেরূপ পাওয়া যায়। “Ahi reappears in the Greek Echis Echidna, the dragon which crushes its victim with its coil.”-Cox’s Introduciion to Mythology and Falklore, P-34, note. “But besides Kerberos there is another dog conquered by Hereules, and he (like Kerberos) is born of Thy on and Echidna. The second dog is known by the name of Orthros, the exact copy, I believe, of the Vedie Vritra That the vedic hritra should reappear in Grecce in the shape of a dog need not suprise us. Thus he discover in Hercules in victor of Orthros a real writrahan.”-Max Muller’s Chips from a German workshop.
২। “অহিং মেঘং। সায়ণ। অহি ও বৃত্র একই, ৫ ঋক দেখুন।
৩। বৃত্রকে এখানে দেব বলা হয়েছে। ২৪ সুক্তের ১৪ ঋকের টীকা দেখুন।
৪। ইন্দ্র পণিকে জয় করে দেবগণের গাভী উদ্ধার করেন, এ সম্বন্ধে একটি গল্প আছে তা প্রাত:কালে অন্ধকার বিনাশ ও আলোক প্রকাশ সম্বন্ধে উপমা দেওয়া হয়েছে মাত্র।
৬। সুক্তের ৫ ঋকের টীকা দেখুন। ইন্দ্র বৃত্র বা অহিকে হনন করেন বলে বৃত্রহনন বলা আছে, তাও মেঘ হতে বৃষ্টিপাতন সম্বন্ধে উপমা ঘটিত গল্প। ইউরোপীয় দুজন পণ্ডিত বিবেচনা করেন বৃষ্টিপাতন প্রাত:কালে আলোক প্রকাশ এ দুটি প্রকৃতির কার্য দেখেই আর্যগণ প্রথমে ধর্মজ্ঞান লাভ করেন। সে মতদ্বয়কে মক্ষমূলর Solar Theotho এবং Deteorological Theory বলেছেন। কিন্তু এ মতদ্বয় ইউরোপীয়গণ উদ্ভাব করেন নি। খষ্টের বহুশতাব্দি পূর্বে যাস্ক তার নিরুক্তে বৈদিক উপাখ্যানগুলির এ মুল নির্দেশ করে গেছেন। বৃত্র অর্থে জল অবরোধকারী মেঘ মাত্র নিরুক্ত ২।১৬। অশ্বিদ্বয় বৃকমুখ হতে বর্ত্তিকা পক্ষীকে উদ্ধার করেন, তার অর্থ রাতের অন্ধকার হতে আলোক প্রকাশ হয়, নিরুক্ত ৫।২১।



৩৩ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। এস আমরা গাভী অভিলাষে ইন্দ্রের নিকট গমন করি; তিনি হিংসারহিত এবং আমাদের প্রকৃষ্ট বৃদ্ধি বর্ধন করেন; অনন্তর তিনি এই গোরূপ ধনসম্বন্ধে আমাদের উৎকৃষ্ট জ্ঞান প্রদান করেন।
২। শোন পক্ষী যেরূপ পূর্ব সেবিত নীড়ের দিকে ধাবিত হয়, সেরূপ আমি উপমান স্থানীয় স্তোত্র দ্বারা পূজা করে ধনপ্রদ ও অপ্রতিহত ইন্দ্রের দিকে ধাবমান হই, ইন্দ্র যুদ্ধকালে স্তোতাদের আরাধ্য।
৩। সমগ্র সেনানায়ক পৃষ্ঠভাগে ইষুধি সংযোজিত করেছেন। আর্য (১) ইন্দ্র যাঁকে ইচ্ছা করেন, তাঁর নিকট গাভী প্রেরণ করেন। হে প্রকৃষ্টবৃদ্ধিযুক্ত ইন্দ্র! আমাদের প্রভূত ধন দান করে আমাদের নিকট ব্যাপারীর মত হয়ে মূল্য নিও না।
৪। হে ইন্দ্র! শক্তিমান মরুৎগণসমীপে থাকরেও তুমি একক ধনবান দস্যুকে কঠিন বজ্র দ্বারা বধ করেছিলে। যজ্ঞবিরোধী সনকেরা তোমার ধনু হতে বিনাশ উদ্দেশ করে আগমন করত মরণ প্রাপ্ত হয়েছিল।
৫। হে ইন্দ্র! সে যজ্ঞরহিত ও যজ্ঞানুষ্ঠাতাদের বিরোধীগণ মস্তক ফিরিয়ে পালিয়েছে। হে হর্ষশ্বসম্পন্ন, পলায়ন রহিত উগ্র ইন্দ্র! তুমি দিব্যলক হতে এবং আকাশ ও পৃথিবী হতে ব্রতরহিতদের উঠিয়ে দিয়েছ।
৬। তারা দোষরহিত (ইন্দ্রের) সেনার সাথে যুদ্ধ ইচ্ছা করেছিলে; সচ্চরিত্র মনুষ্যেরা (ইন্দ্রকে) প্রোৎসাহিত করেছিল। পুরুষের সাথে যুদ্ধে লিপত নপুংসকেরা যেরূপ পলায়ন করে, সেরূপ তারা নিরাকৃত হয়ে আপনাদের শক্তিহীনতা জেনে ইন্দ্রের নিকট হতে সহজ পথ দিয়ে দূরে পলায়নকরল।
৭। হে ইন্দ্র! তুমি সেই রোদনকারী বা হাস্যপরায়ণদের অন্তরীক্ষের প্রান্তে যুদ্ধ দান করেছ; দস্যুকে দিব্যলোক হতে এনে সম্পূণ রূপে দগ্ধ করেছ এবং সোমাভিষবকারী ও স্তুতিকারীর স্তুতিরক্ষা করেছ।
৮। সেই বৃত্রের অনুচরেরা পৃথিবী আচ্ছাদন করেছিল এবং হিরণ্য ও মণিদ্বারা শোভমান হয়েছিল। কিন্তু সেই শত্রুগণ ইন্দ্রকে জয় করতে পারল না, ইন্দ্র সে বাধকদের সূর্য দ্বারা তিরোহিত করলেন।
৯। হে ইন্দ্র! যেহেতু তুমি মহিমাদ্বারা দ্যুলোক ও ভুলোক সর্বতোভাবে বেষ্টন করে, সমস্ত ভোগ করেছ, অতএব তুমি মন্ত্র দ্বারা দস্যুকে নি:সারিত করেছ; সে মন্ত্র অর্থ গ্রহণে অক্ষম যজমানদেরও রক্ষা করবার মানস কর।
১০। যখন জল দিব্যলোক হতে পৃথিবীর অন্ত প্রাপ্ত হল না এবং ধনপ্রদ ভূমিকে উপকারী দ্রব্য দ্বারা পূর্ণ করল না, তখন বর্ষণকারী ইন্দ্র হস্তে বজ্র ধারণ করলেন এবং দ্যুতিমান বজ্র দ্বারা অন্ধকার রূপ মেঘ হতে পতনশীল জল নি:শেষিতরূপে দোহন করলেন।
১১। প্রকৃতি অনুসারে জল প্রবাহিত হল; কিন্তু বৃত্র নৌকাগম্য নদী সমূহের মধ্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হল; তখন ইন্দ্র স্থিরসঙ্কল্প বৃত্রকে অতিবলযুক্ত প্রাণসংহারক্আয়ুধদ্বারা কয়েক দিনে হনন করলেন।
১২। ইন্দ্র ইলীবিশের প্রবল সৈন্য বিদ্ধ করেছিলেন ও শৃঙ্গযুক্ত শুষ্ণকে বিবিধ প্রকারে তাড়না করেছিলেন (২)। হে মঘবন! তোমার যে পরিমাণ বেগ আছে, যে পরিমাণ বল আছে, তদ্বারা যুদ্ধকাঙ্ক্ষী শত্রুকে বজ্র দ্বারা হনন করেছিলো।
১৩। ইন্দ্রের কার্য সাধনকারী বজ্র শত্রুকে লক্ষ্য করে পতিত হয়েছিল। ইন্দ্র তীক্ষ্ম ও শ্রেষ্ঠ আয়ুধ দ্বারা বৃত্রের নগর সমূহ বিবিধরপে ভেদ করেছিলেন; তার পরে তিনি বজ্র দ্বারা বৃত্রকে আঘাত করেছিলেন বেং তাকে সংহার করে আপন উৎসাহ সম্যকরূপে বৃদ্ধি করেছিলেন।
১৪। হে ইন্দ্র! তুমি যে কুৎসের স্তুতি কামনা কর, সে কুৎসকে রক্ষা করেছ; তুমি যুদ্ধরত ও শ্রেষ্ঠ দশদ্যুকে রক্ষা করেছ; তোমার অশ্বের খুর হতে পতিত ধুলি দ্যুলোক স্পর্শ করে; বৈত্রেয় মনুষ্যগণের অগ্রণী হবেন বলে উত্থিত হয়েছিল (৩)।
১৫। হে মঘবন! শমতা গুণবিশিষ্ট, শ্রেষ্ঠ ও জলনিমষ্ন শ্বিত্রাপুত্রকে ক্ষেত্র প্রাপ্তির জন্য তুমি রক্ষা করেছিলে; যারা আমাদের সাথে বহুকাল যুদ্ধ করছে, সেই শত্রুকাঙ্ক্ষীদেরও তুমি বেদনা ও দুঃখ প্রদান কর (৪)।

টীকাঃ
১। ইন্দ্র সম্বন্ধে মুলে অর্য শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে; অর্থ স্বামীরূপ। সায়ণ। ঋ অর্থ চাষ করা, অতএব অর্য বা আর্য শব্দের মুল অর্থ কৃষিব্যবসায়ী। প্রাচীন আর্যগণ হিন্দু, ইরানীয়, গ্রীক, লাটীন, কেল্ট, টিউটন প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন জাতিতে বিভক্ত হবার পূর্বেই আর্য নাম ধারণ করেছিলেন। আর্যদের প্রতিবেশী গণ মেষপালনরত ছিলেন এবং এক স্থানে না থেকে ইতন্তত: ভ্রমণ করতেন; তারা নিজের ত্বরিত গতির গৌরব করেই বোধ হয় তুরাণীয় নাম ধারণ করেছিলেন। আর্যগণ ভিন্ন জাতিতে বিভক্ত হবার পর যে যে স্থলে গিয়েছেন, তাতে আর্য নামের নিদর্শন পাওয়া যায়। আচার্য মক্ষমুলর বিবেচনা করেন ইরান, আরমেনীয়, আলবেনীয়, ককেসসের উপত্যকায় আইরন, গ্রীসের উত্তরে আরীয়, জনর্মানদের মধ্যে আরিয়াই এবং এরিন বা আয়রলন্ড, আর্যনামের পরিচয় বহন করছে। See Science of Language
২। সায়ণ ইলিবিশ ও শুষ্ণ এ দুটিই বৃত্রের বিশেষণ করেছেন। ইলীবিশস্য ইলায়া ভূমেব্বিলে শয়ানস্য বৃত্রস্য। শুষ্ণং জগতঃ শোসকং বৃত্র।
৩। কুৎস গোত্র প্রবর্তক এক জন ঋষি। সায়ণ। দুশদ্যু দশদিকে দীপ্যমান ঋষি। সায়ণ। শ্বৈত্রেয় শ্বিত্রা নামক নারীর পুত্র। সায়ণ।
৪। ভারতবর্ষের উর্বর ক্ষেত্র নিয়ে আর্যদের সাথে আদিম জাতিদের অনেক শতাব্দী বিবাদ ও যুদ্ধ চলেছিল; সে যুদ্ধে রোধ হয় কুৎস, দশদ্যু ও শ্বৈত্রেয় প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। ৬৩ সুক্তের ৩ ঋকের টীকা দেখুন।





৩৪ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে মেধাবী অশ্বিদ্বয়! তোমরা অদ্য তিন বার আমাদরে জন্য এস। তোমাদের রথ বহুব্যাপী, তোমাদের দানও বহু ব্যাপী? যেরূপ রশ্মিযুক্ত দিবস ও হিমযুক্ত রাত্রের মধ্যে পরস্পর নিয়মরূপ সম্বন্ধ আছে, সেরূপ তোমাদের উভয়ের মধ্যেও আছে। তোমরা অনুগ্রহ করে মেধাবী ঋত্বিকদের বশবর্তী হও।
২। তোমাদের মধুর খাদ্যবাহী রথে তিনটি দৃঢ় চক্র আছে; তা সকল দেবগণ চন্দ্রের ভার্ষা বেনার সাথে যাত্রা করবার সময় জেনেছে (১); সে রথের উপর অবলম্বনের জন্য তিনটি স্তম্ভ স্থাপিত আছে। হেজ অশ্বিদ্বয়! সে রথে রাত্রে তিন বার ও দিনে তিন বার গমন কর।
৩। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা এক দিনে তিন বার যজ্ঞানুষ্ঠানের দোষ সংশোধনকর; অদ্য তিন বার যজ্ঞের হব্য মধুর রস দ্বারা সিক্ত কর। রাত্রে দিনে তিন বার বলকারী অন্ন দ্বারা আমাদের ভরণ কর।
৪। হে অশ্বিদ্বয়! আমাদরে গৃহে তিন বার এস; আমাদরে অনুকুল ব্যাপারে নিযুক্ত জনের নিকট তিন বার এস; তোমরা রক্ষণীয় জনের নিকট তিন বার এস; আমাদের তিন প্রকার শিক্ষা দাও; আমাদের তিন বার আনন্দজনক ফল প্রদান কর; যেরূপ ইন্দ্র জল দান করেন, সেরূপ তিন বার আমাদরে অন্ন দাও।
৫। হে অশ্বিদ্বয়! তিন বার আমাদরে ধন প্রদান কর; দেব যুক্ত কর্মানুষ্ঠানে তিন বার আগমন কর; তিন বার আমাদরে বুদ্ধি রক্ষা কর; তিন বার আমাদের সৌভাগ্য সম্পাদন কর; তিন বার আমাদের অন্ন প্রদান কর; তোমাদের ত্রিচক্র রথে সূর্যের দুহিতা আরুঢ়া হয়েছেন।
৬। হে অশ্বিদ্বয়! আমাদের দিব্যলোকের ঔষধি তিন বার প্রদান কর; পার্থিব ঔষধি তিন বার প্রদান কর; অন্তরীক্ষ হতে ঔষধি তিন বার প্রদান কর; শংযুর (২) ন্যায় আমার সন্তানকে সুখ দান কর। হে শোভনীয় ঔষধিপালক! তোমরা তিনটি ধাতু বিষয়ক (৩) সুখ প্রদান কর।
৭। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা আমাদের পূজনীয়, প্রতিদিন তিন বার পৃথিবীতে আগমন করে তিনটি কক্ষাযুক্ত কুশোপরি শয়ন কর। হে নাসত্য রথীদ্বয়! আত্মারূপ বায়ু যেরূপ শরীর সমূহে আগমন করে তোমরা সেরূপ তিনটি যজ্ঞস্থানে আগমন কর (৪)
৮। হে অশ্বিদ্বয়! সপ্ত মাতৃ জল দ্বারা (৫) তিনটি সোমাভিষব প্রস্তুত হয়েছে। তিনটি কলস প্রস্তুত হয়েছে, হব্য প্রস্তুত হয়েছে। তোমরা তিন জগৎ হতে উর্ধ্বে গমন করে দিবারাত্র সমন্বিত আকাশের সূর্যকে রক্ষা করেছিলে।
৯। হে নাসত্য অশ্বিদ্বয়! তোমার ত্রিকোণ রথের তিনটি চক্র কোথায়? তিনটি সনীড় বন্ধুর কোথায় (৬)? বলবান গর্ন্দভ কখন তোমাদের রথে যুক্ত হয়ে আমাদরে যজ্ঞে আনবে?
১০। হে নাসত্য অশ্বিদ্বয়! এসহবাদান করছি; তোমাদের মধুপায়ী মুখ দ্বারা মধুর হব্য পান কর; ঊষাকালের পূর্বেই সূর্য তোমাদের বিচিত্র ও ঘৃতবৎ রথযজ্ঞে আগমনার্থে প্রেরণ করেছেন।
১১। হে নাসত্য অশ্বিদ্বয়! ত্রিগুণ একাদশ দেব (৭) গণের সাথে মধু পানার্থে এখানে এস, আমাদরে আয়ু বর্ধন কর; পাপ খনডন কর; বিদ্বেষীদের প্রতিষেধ কর; আমাদের সঙ্গে অবস্থান কর।
১২। হে অশ্বিদ্বয়! ত্রিকোণ রথ দ্বারা আমাদের সম্মুখে বীরযুক্ত ধন আন; রক্ষার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান করছি, তোমরা শ্রবণ করছ, আমাদরে বৃদ্ধি সাধন কর ও সংগ্রামে বলদান কর।

টীকাঃ
১। যখন সোমের বেনার সাথে বিবাহ হয়, তখন নানাবিধ খাদ্যযুক্ত তিন চক্রযুক্ত প্রৌঢ়রথে আরোহণ করে অশ্বিদ্বয় গিয়েছিলেন তা সকল দেব জেনেছেন। সায়ণ।
২। বৃহস্পতির পুত্র শংযুকে অশ্বিদ্বয় পালন করেছিলেন। সায়ণ।
৩। বাত, পিত্ত ও শ্লেষ্ম এই শরীরের তিনটি ধাতু। সায়ণ।
৪। ঘৃত, পশু ও সোমরসরূপ তিনটি বেদী। সায়ণ।
৫। সপ্ত সংখ্যকা। গঙ্গাদ্যা নদ্যো মাতরৎ উৎপাদিকা যেষাং জলবিশেষাণাং তে। সায়ণ
৬।Wher, Nasatyas are the three wheels of your triangular car? where the three fastenings and props (of the awning)?- Wilson
৭। এ ঋকে ও বেদের অন্যান্য স্থলে ৩৩ দেবের উল্লেখ আছে। এ ৩৩ জন দিক দেবকে? তৈত্তিরীয় সংহিতায় আছে যে আকাশে ১১, পৃথিবীতে ১১ এবং অন্তরীক্ষে ১১ জন দেব। তে, সং,
১।৭।১০।১ শর্ত পথব্রাহ্মণে বলে ৮ বসু, ১১ রুদ্র, ১২ আদিত্য দ্যু অর্থাৎ আকাশ এবং পৃথিবী এই ৩৩ জন দেবতা। শ,ব্রা,
৭।৫।৭।২। ঐতরেয় ব্রাহ্মণ বলে যে ১১ প্রবাজ দেব, ১১ অনুযাজ দেব ও ১১ উপযাজ দেব, এই ৩৩ দেবতা। ঐ.ব্র.
২।১৮। বিষ্ণুপুরাণে বলে ১১ রুদ্র, ১২ আদিত্য, ৮ বসু, এবং প্রজাপতি ও বষটকার এই ৩৩ জন দেবতা। যাস্কের মতে দেব ৩ জন মাত্র, তাহা ১ সুক্তের ১ ঋকের টীকায় দেখান হয়েছে। এ ৩৪ সুক্তের ১১ ঋকে ৩৩ জন দেবের উল্লেখ পেলাম। পরে পুরাণাদি গ্রন্থে ৩৩ কোটি দেবের উল্লেখ পাওয়া যায়। ফলতঃ ভিন্ন ভিন্ন ঐশ্বরিক কার্য বাদৃশ্যকে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়া দেবের সংখ্যা বদি্ধি করা হয়েছে। এ কার্য সমূহের কর্তা ও নিয়স্তা যে কেবল এক ঈশ্বর তাহা ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের ৮২ সুক্ত, ১২১ সুক্ত ১২৯ সুক্ত এবং অন্যান্য স্থানে বর্ণিত হয়েছে।

HYMN XXXIV. Aśvins.








৩৫ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। রক্ষার জন্য অগ্নিকে প্রথমে আহ্বান করি, রক্ষার জন্য মিত্র ও বরুণকে এ স্থানে আহ্বান করি, জগতের বিশ্রামহেতুভূত রাতকে আব্হান করি, রক্ষার জন্য দেব সবিতাকে আহ্বান করি।
২। অন্ধকারপূর্ণ অন্তরীক্ষ দিয়ে বারবার ভ্রমণ করে, দেব ও মনুষ্যকে সচেতন করে, দেব সবিতা হিরস্ময় রথ দ্বারা ভূবন সমুদয় দেখতে দেখতে ভ্রমণ করছেন।
৩। দেব সবিতা ঊর্ধ্বগামী ও অধোগামী পথ দিয়ে গমন করেন; সেই অর্চনাভাজন দেব দুটি শ্বেত অশ্ব দ্বারা গমন করেন; তিনি সমস্ত পাপ বিনাশ করতে করতে দুর দেশ হতে আসছেন।
৪। যজনীয় ও বিচিত্ররশ্মি সবিতা জগৎ সমূহের অন্ধকার বিনাশার্থে তেজ ধারণ করে নিকটস্থ সুবর্ণ বিচত্রিত, সুবর্ণ শঙ্কুযুক্ত বৃহৎ রথে আরোহণ করলেন।
৫। শ্যাব নামক শ্বেত পদযুক্ত অশ্বগণ সুবর্ণযুগ বিশিষ্ট রথ বহন করে জনসমূহের নিকট আলোক প্রকাশ করছেন; দেব সবিতার সমীপে জনসমূহ ও জগৎসমূহ উপস্থিত আছে।
৬। দ্যুলোক প্রভূতি তিনটি লোক আছে দুটি, দ্যুলোক ও ভূলোক সূর্যের সমীপস্থ একটি (অন্তরীক্ষ) যমের ভবনে গমনকারীদের পথ। (১) রথ যেরূপ আণির উপর অবলম্বন করে, অমর চন্দ্র নক্ষত্রাদি সবিতাকে সেরূপ অবলম্বন করে আছে। যিনি সবিতাকে জানেন তিনি এ বিষয়ে বলুন।
৭। গভীর কম্পন বিশিষ্ট অসুর, সূপর্ণ রশ্মি (২) অন্তরীক্ষাদি (তিন লোক) ব্যাপ্ত করছে। এক্ষণে সূর্য কোথায় কে জানে? কোন দিব্য লোকে তার রশ্মি বিস্তুত হয়েছে?
৮। সবিতা পৃথিবীর অষ্ট দিক প্রকাশিত করেছেন, এবং প্রাণীদের তিন জগৎ ও সপ্তসিন্ধু প্রকাশিত করেছেন। সে হিরষ্ময় চক্ষু বিশিষ্ট সবিতা হবদাতা যজমানকে বরণীয় দ্রব্য দান করে এ স্থানে আসুন।
৯। হিরণ্যপাণি বিবিধদর্শনযুক্ত সবিতা উভয় লোকের মধ্যে গমন করছেন, রোগাদি নিরাকরণ করছেন, সূর্যের নিকট যাচ্ছেন (৩) এবং তমোনাশক তেজ দ্বারা আকাশ ব্যাপ্ত করছেন।
১০। হিরণাহস্ত অসুর, সুনেতা, হর্ষদাতা, ও ধনবান সবিতা অভিমুখ হয়ে আসুন; সে দেব রাক্ষস ও ষাতুধান (৪) দের নিরাকরণ করে প্রতিরাতি স্তুতি প্রাপ্ত হয়ে অবস্থানকরেন।
১১। হে সবিতা! তোমার পথ পূর্বসিদ্ধ, ধুলি রহিত ও অন্তরীক্ষে সুনির্মিত; সে সুগম পথ সমূহ দিয়ে এসে অদ্য আমাদের রক্ষা কর; হে দেব! আমাদের কথা (দেবগণের নিকট) অধিক করে বল।

টীকাঃ
১। প্রেতপুরুষগণ অন্তরীক্ষ দিয়ে যমলোকে গমনকরে। সায়ণ! পুরণে যম অর্থ কি তা আমরা সকলেই জানি, কিন্তু ঋগ্বেদে প্রথমে কাকে যম বলত? বিবস্বানের দ্বারা সরণ্যুর গর্ভে অশ্বিদ্বয়ের জন্ম হয় এবং যম ও তাঁর ভগ্নী যমীরও জন্ম হয়। বিবস্বান, অর্থে আকাশ, সরণ্যু অর্থে ঊষাকাল। তাদের যমজ সন্তান কারা? আচার্য মক্ষমুলয়ের মতে দিন ও রাতকে প্রথম ঋষিগণ যম ও যমী নাম দিয়েছিলেন। ঋষিগণ, যেরূপ পূর্বদিককে জীবনের উৎপত্তিস্থল মনে করতেন, পশ্চিম দিককে সেরূপ জীবনের অবসান মনের করতেন। সূর্য পূর্বদিকে উদিত হয়ে পশ্চিম দিকে অন্তর্হিত হতেন, অর্থাৎ জীবনের পথ ভ্রমণ করে পরলোকের পথ দেখাতেন। এ রূপে যম পরলোকের রাজা, এই অনুভব উদয় হল। Science of Language. (২) সায়ণ অসুর অর্থে প্রাণদায়ী ও সুপর্ণ অর্থে সূর্য রশ্মি করেছেন। কিন্তু অসুর সম্বন্ধে ২৪ সুক্তের ১৩ ঋকের টীকা দেখুন।
৩। সায়ণ বলেন সূর্য ও সবিতা এক দেব হলেও ভিন্ন ভিন্ন রূপ, সুতরাং একে অন্যের নিকট গমন করতে পারেন। ২২ সুক্তের ৫ ঋকের টীকা দেখুন।
৪। বেদের ষাতুধান একপ্রকার মায়াবী পাপমতি জীব ইরানীদের জেন্দ অবস্থায় তাদের নাম ষাতুমান।






৩৬ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। তোমরা বহু সংখ্যক প্রজা, তোমরা দেবতা কামনা করছ, তোমাদের জন্য মহৎ অগ্নিকে সুক্ত বাক্য দ্বারা প্রার্থনা করি, অন (ঋষিগণও) সে অগ্নির স্তব করে থাকেন।
২। লোকে বলবর্ধনকারী অগ্নিকে অবলম্বন করেছে; হে অগ্নি আমরা হব্য নিয়ে তোমার পরিচর্যা করি; তুমি অন্ন দানে তৎপর হয়ে অদ্য এ কর্মে আমাদের প্রতি প্রসন্নমনা হও এবং আমাদরে রক্ষক হও।
৩। হে অগ্নি! তুমি দেবগণের হোতা এবং সর্বজ্ঞ, আমরা তোমাকে বরণ করি। তুমি মহৎ এবং নিত্য, তোমার দীপ্তি বিস্তুত হচ্ছে, তোমার রশ্মি আকাশ স্পর্শ করছে।
৪। হে অগ্নি! তুমি পুরাতন দুত। বরুণ ও মিত্র ও অর্যমা তোমাকে সম্যকরূপে দীপ্তিমান করছেন। যে মনুষ্য তোমাকে (হব্য) ান করে সে তোমার সহায়তায় সমস্ত ধন জয় করে।
৫। হে অগ্নি! তুমি হর্যদাতা তুমি দেবগণকে আহ্বান কর; তুমি প্রজাদের গৃহপতি, তুমি দেবগণের দূত। দেবগণ যে সকল অমোঘ ব্রত সম্পাদন করেন তা সমস্তই তোমাতে মিলিত হয়।
৬। হে যুবা অগ্নি! তুমি সৌভাগ্যসম্পন্ন; তোমাকে লক্ষ্য করে সমস্ত হব্য প্রক্ষেপ করা হয়। তুমি আমাদের প্রতি প্রসন্নমনা হয়ে অদ্যই বা অন্য সময়ে শোভনীয় বীর্যশালী দেবগণকে অর্চনা কর।
৭। যজমানেরা নমস্কারপূর্বক সেই স্বয়ং দীপ্তিমান অগ্নিকে এরূপে উপাসনা করেন। শত্রু বিজিগীষু মানুষেরা হোত্রদের দ্বারা (১) অগ্নকে প্রদীপ্ত করে।
৮। দেবগণ প্রহার করে বৃত্রকে হনন করেছেন, উভয় জগৎ এবং অন্তরীক্ষ নিবাসার্থে বিস্তুত করেছেন। অগ্নি ধনবান, তিনি গোজয়ার্থে যুদ্ধে শব্দায়মান অশ্বের ন্যায় সর্বতোভাবে আহুত হয়ে কম্বকে অভীষ্ট দ্রব্য বর্ষণ করুন।
৯। হে প্রশস্ত অগ্নি! উপবেশন কর, তুমি মহৎ এবং দেবতাদের অতিশয় কামনা কর, তুমি দীপ্তিপূর্ণ হও। হে মেধাবী উৎকৃণ্ট অপ্নি। গমনশীল ও দর্শনীয় ধুম উৎপাদন কর।
১০। হে হব্যব্যাপী অগ্নি! তুমি অতিশয় পূজাভাজন, সকল দেবগণ মনুর জন্য তোমাকে এই যজ্ঞস্থানে ধারণ করেছিলেন; তুমি ধন দ্বারা প্রীতি সম্পাদন কর, অর্চনাভাজন অতিথি সমেত কব তোমাকে ধারণ করেছেন, বর্ষণকারী ইন্দ্র তোমাকে ধারণ করেছেন অন্য স্তোতাও তোমাকে ধারণ করেছেন।
১১। অর্চনাভাজন অতিথিপ্রিয় কব অগ্নিকে আদিত্য হতেও অধিক দীপ্তিমান করেছেন। সে অগ্নির গমনশীল রশ্মি দীপ্তিমান রয়েছে। এ ঝকসমূহ সে অগ্নিকে বর্ধন করে, আমরাও বর্ধন করি।
১২। হে অন্নবান অগ্নি! আমাদের ধন পূরণ কর। তোমার দ্বারা দেবগণকে প্রাপ্ত হওয়া যায়, তুমি প্রসিদ্ধ অন্নের ঈশ্বর, তুমি মহৎ, আমাদের সুখী কর।
১৩। সবিতা দেবের ন্যায় আমাদের রক্ষণের জন্য উন্নত হও, উন্নত হয়ে অন্নদাতা হও, কেন না বিচিত্র যজ্ঞ সম্পাদকদের দ্বারা আমরা তোমাকে আহ্বান করছি।
১৪। উন্নত হয়ে আমাদের জ্ঞান দ্বারা পাপ হতে রক্ষা কর; কল রাক্ষস দহন কর; আমাদের উন্নত কর, যেন আমরা জগতে বিচরণ করতে পারি বং আমাদের হব্যরূপ ধন দেবগণের সদনে বহন কর, যেন আমরা জীবিত থাকতে পারি।
১৫। হে বৃহৎরশ্মি যুবা অগ্নি! আমাদের রাক্ষস হতে রক্ষা কর; যে ধন দান করে না এরূপ ধূর্ত লোক হতে রক্ষা কর; হিংসক পশু হতে রক্ষা কর এবং জিঘাংসাপরায়ণ শত্রু হতে রক্ষা কর।
১৬। হে তপ্তরশ্মিযুক্ত অগ্নি! যেরূপ কঠিন দন্ড দ্বারা লোকে (ভান্ডাদি) নষ্ট করে, সেরূপ যারা ধন দান করে না তাদের সর্বদা সংহার কর। অন্য যে রিপু আমাদের বিরুদ্ধাচারী, অন্য যে মনুষ্য আয়ুধ দ্বারা আমাদের প্রহার করে, তারা যেন আমাদের প্রভু না হয়।
১৭। শোভনীয় বীর্যের জন্য অগ্নিকে যাচ্ঞা করা হয়েছে; অগ্নি কবকে সৌভাগ্য দান করেছেন; অগ্নি আমার মিত্রদের রক্ষা করেছেন; অর্চনাভাজন অতিথি বিশিষ্ট ঋষিকে রক্ষা করেছেন; এবং ধনাদি দানার্থে অন্য যে কেউ অগ্নির স্তুতি করেছে তাকে রক্ষা করেছেন।
১৮। সদ্যুদমনকারী অগ্নির সাথে তুবশু ও যদু উগ্রাদেবকে দুরদেশ হতে আহ্বান করি; অগ্নি নববাস্তত্ব ও বৃহদ্রথ ও তুর্বীতিকে এ স্থানে আনুন (২)
৯। হে অগ্নি! তুমি জ্যোতিরূপ, বিবিধ জাতীয় মানুষের জন্য মনু তোমাকে স্থাপন করেছিলেন; হে অগ্নি! তুমি যজ্ঞের জন্য উৎপন্ন হয়ে, হব্য দ্বারা তৃপ্ত হয়ে, কবের প্রতি দীপ্তিমান হয়েছ; মানুষেরা তোমাকে নমস্কার করে।
২০। অগ্নির অর্চিৎ প্রদীপ্ত, বলবান ও ভয়স্কর, এবং তাকে প্রত্যয় করা যায় না। হে অগ্নি! রাক্ষসদের যাতুধানদের এবং বিশ্বভক্ষক শত্রুকে দহনকর।

টীকাঃ
১। সে হে ত্রগণ কারা? সপ্ত হোত্রী প্রাচী বষটকুম্বন্তি। সায়ণ। সে সাত জন ঋত্বিক বা পুরোহিত এই যথা (১) যজমান, যিনি যজ্ঞের অনুষ্ঠান করেন, (২) হোতা, বিনি মন্ত্র পাঠ করেন, (৩) উদগাতা, যিনি মন্ত্র গান করেন, (৪) পোতা যিনি হব্য প্রস্তুত করেন, (৫) নেষ্টা, যিনি হব্য অগ্নিতে প্রক্ষেপ করেন, (৬) ব্রন্ধা যিনি সমুদায় তত্ত্ববধারণ করেন (৭) রক্ষ যিনি দ্বার রক্ষা করেন।
২। এ ছয় জনকে সায়ণ রাজষি বলে বর্ণনা করেছেন। পুরাণে যদু ও তুর্বশু যযাতি নরপতির পুত্রদ্বয়। তুর্বীতি সম্বন্ধে ৬১ সুক্তের ১১ ঋকের টীকা দেখুন




৩৭ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে কবগোত্রোম্ভব ঋষিগণ, ক্রীড়াশীল ও শত্রুরহিত মরুৎ সমূহের উদ্দেশ্যে গাও; তারা রথে শোভা পাচ্ছেন।
২। তারা স্বকীয় দীপ্তিযুক্ত হয়ে এবং বিন্দুচিহ্নিত মৃগরূপ বাহনের সাথে ও যুদ্ধ গর্জন ও আয়ুধ ও নানারূপ অলঙ্কারের সাথে জন্ম গ্রহণ করেছেন।
৩। তদের হস্তস্থিত কশা যে শব্দ করছে তা শুনতে পাচ্ছি; সে কশা ষুদ্ধে বল বৃদ্ধি করে।
৪। যারা তোমাকে বল সমর্থন করেন, শত্রুবর্ষণ করেন, যারা দীপামান যশ:পূর্ণ ও বলবান, সেই মরুৎগণকে হবির উদ্দেশে স্তব কর।
৫। যে মরুৎগণ পৃশ্নিরূপ ধেনুর মধ্যে অবস্থিত, তাদের বিনাশরহিত, ক্রীড়াশীল ও প্রসহনশীল তেজ প্রশংসা কর; বৃষ্টি আস্বাদনে সে তেজ বৃদ্ধি পেয়েছে।
৬। দ্যুলোক ও ভুলোকের কম্পনকারী হে বীরগণ! তোমাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ কে? তোমরা বৃক্ষাগ্রের ন্যায় চারদিক পরিচালিত কর।
৭। হে মরুৎগণ! তোমাদের উগ্র ও ভীষণ গতির ভয়ে মনুষ্যগণ অবনত হয়েছে, কেন না তোমাদের গতিতে বহু পর্বযুক্ত গিরিও চালিত হয়।
৮। তাদের গতিক্রমে পদার্থ সমূহ বিক্ষিপ্ত হতে লাগল; পৃথিবীও বৃদ্ধ ও জীর্ণ নরপতির ন্যায় ভয়ে কম্পিত হয়।
৯। তাদের জন্মস্থান আকাশ অবিচলিত; তাদের জননী স্বরূপ আকাশ হতে বলনির্গত হতে পারে; যেহেতু তাদের বল উভয় লোকের সর্বত্র বর্তমান আছে।
১০। তারা শব্দের উৎপাদক, তারা গমন কালে জল বিস্তার করেন এবং গাভীদের হম্বারবপূর্বক জানু পর্যন্ত সে জলে প্রেরণ করেন।
১১। যে মেঘ প্রসিদ্ধ, দীর্ঘ ও পৃথু এবং জল বর্ষণ করে না ও কারও দ্বারা হিংসনীয় নয়, তাকেও মরুৎগণ স্বকীয় গতি দ্বারা চালিত করেন।
১২। হে মরুৎগণ! যেহেতু তোমাদের বল আছে, মনুষ্যদের নত করেছ, মেঘদেরও নত করেছ।
১৩। যখন মরুৎগণ গমন করেন, তখনই মার্গে সর্বতোভাবে ধ্বনি করেন, তাদের ধ্বনি সকলেই শুনতে পায়।
১৪। বেগবান বাহন দ্বারা শীঘ্র এস কম্বেরা তোমাদের পরিচর্যা প্রস্তুত করেছ; তাদের প্রতি তৃপ্ত হও।
১৫। তোমাদের তৃপ্তির জন্য হব্য রয়েছে, আমরা সমস্ত পরমায়ু জীবিত থাকবার জন্য তোমাদের ভৃতা হয়ে আছি।






৩৮ সুক্তঃ

অনুবাদঃ
১। হে মরুৎগণ! তোমরা স্তুতিপ্রিয় এবং তোমাদের জন্য কুশ ছিন্ন হয়েছে। পিতা পুত্রকে যেরূপ দুটি হস্ত দ্বারা ধারণ করে, আমাদের সেরূপ ধারণ করবে?
২। তোমরা এখন কোথায়? কখন তোমরা আগমন করবে? আকাশ হতে এস, পৃথিবী হতে যেও না; যজমানের গাভীসমূহের ন্যায় তোমাকে কোথায় ডাকছে?
৩। তোমাদের নুতন ধন কোথায়? তোমাদের শোভনীয় দ্রব্য কোথায়? তোমাদের সমস্ত সৌভাগ্য কোথায়?
৪। হে পৃশ্নি পুত্রগণ! যদি তোমরা মনুষ্য হতে তোমাদের স্তোতা অমর হত।
৫। তৃণের মধ্যে মৃগ যেরূপ সেবা রহিত হয় না, তোমার স্তোতাও সেরূপ তোমার সেবা রহিত হত না, কদাচ যমের পথে যেত না।
৬। নি:ঋতি (১) অতিশয় বলবতী এবং তাকে বিনাশ করা যায় না। যেন সে নি: ঋতি আমাদের না বধ করে; যেন সে আমাদের তৃষ্ণার সাথে বিলুপ্ত হয়।
৭। দীপ্তিমান ও বলবান রুদ্রীয়গণ সত্যই (২) মরুভূমিতেও বায়ুরহিত বৃষ্টি দান করেন।
৮। প্রস্রূত স্তনবতী ধেনুর ন্যায় বিদ্যুৎ গর্জন করছে; গাভী যেরূপ বৎসের সেবা করে, বিদ্যুৎ সেরূপ মরুৎগণের সেবা করছে, সুতরাং মরুৎগণ বৃষ্টি দান করলেন।
৯। মরুৎগণ উদকধারী পর্জন্য (৩) দ্বারা দিবাকালেও অন্ধকার করছেন, পৃথিবী জলসিক্ত করছেন।
১০। মরুৎ গণের গর্জনে সমস্ত পৃথিবীর গৃহাদি সমস্তাৎ কম্পিত হয়, মনুষ্যগণ কম্পিত হয়।
১১। হে মরুৎগণ! দৃঢ় পদ অশ্ব দ্বারা বিচিত্র তটযুক্ত নদীর তীর দিয়ে অপ্রতিহত গতিতে গমন কর।
১২। তোমার রথের নেমি সমুদয় দৃঢ় হোক, রথ অশ্বগণও দৃঢ় হোক, তোমাদের বলগা দৃঢ় হোক।
১৩। ব্রন্ধণস্পতি (৪) ও অগ্নি এবং দর্শনীয় মিত্রের স্তুতির জন্য দেবতাস্বরূপ প্রকাশকারী বাক্য দ্বারা আমাদের সম্মুখে তাদের বর্ণন কর।
১৪। মুখে শ্লোক রচনা কর, পর্জন্যের ন্যায় তা বিস্তার কর; উকথস্তুতি বিশিষ্ট গায়ত্রীচ্ছন্দে রচিত (সুক্ত) পাঠ কর।
১৫। দীপ্তিমান স্তুতিযোগ্য এবং অর্চনোপেত রুৎগণকে বন্দনা কর; আমাদের এ কার্যে যেন তারা বর্ধনশীল হন।

টীকাঃ
১। অর্থাৎ পাপ। ২৪ সুক্তের ৯ ঋকের টীকা দেখুন।
২। রুদ্র সম্বন্ধে ৪৩ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।
৩। পর্জন্য অর্থে মেঘ। সায়ণ। এরপর ৮৩ ও অন্যান্য সুক্তে পর্জন্যকে দেব বলে স্তুতি করা হয়েছে।
৪। ব্রহ্মণস্পতি সম্বন্ধে ১৮ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।








৩৯। সুক্ত ।।

১। হে কম্পনকারী মরুৎগণ। যখন দুরে হতে আলোকের ন্যায় তোমাদরে মাননীয় তেজ এ স্থানে নিক্ষেপ কর, তখন তোমরা কার যজ্ঞ দ্বারা, কার স্তোত্র দ্বারা আকৃষ্ট হও, কোথায় কোন যজমানের নিকট গমন কর?
২। তোমাদের আয়ুধ সমূহ শত্রুদের প্রতিরোধের জন্য দৃঢ় হোক; শত্রুদের প্রতিরোধার্থ কঠিন হোক; তোমাদের বল স্তুতিভাজন হোক; আমাদের নিকট ছন্মচারী মানুষের বল যেন স্তুতি ভাজন না হয়।
৩। হে নরসমূহ! যখন স্থির বস্তুকে তোমরা ভগ্ন কর, গুরু বস্তুকে যখন পরিচালিত কর, তখন পৃথিবীর বন বৃক্ষের মধ্য দিয়ে ও পর্বতের পার্শ্ব দিয়ে তোমরা গমন কর।
৪। হে শত্রুহিংসক মরুৎগণ! ্যুলোকে তোমাদের শত্রু নেই, পৃথিবীতেও নেই হেরুদ্রপুত্রগণ (১) ! তোমরা একত্রিত হও, (শত্রুদের) ধর্ষণার্থে তোমাদের বল শীঘ্র বিস্তুত হোক।
৫। মরুৎগণ পর্বত সমূহকে বিশেষরূপে কম্পিত করছেন, বনস্পতিদের বিযুক্ত করছেন। হে দেব মরুৎগণ! সমস্ত দলের সাথে তোমরা উন্মত্তের ন্যায় সর্বস্থানে গমন কর।
৬। তোমরা বিন্দু চিহ্নিত মৃগ রথে সংযুক্ত করেছ। লোহিত মৃগ প্রষ্টি (২) হয়ে রথ বহন করছে। পৃথিবী তোমাদের আগমন শ্রবণ করছে, মানুষেরা ভীত হয়েছে।
৭। হে রুদ্র পুত্র মরুৎগণ! পুত্রের জন্য শীঘ্র তোমাদের রক্ষণাবেক্ষণ প্রার্থনা করি। পূর্বে আমাদের রক্ষনের জন্য যেরূপ এসেছিলে, সেরূপ ভীতিযুক্ত কবের নিকট শীঘ্র এস।
৮। যে কোন শত্রু তোমাদের দ্বারা কিম্বা মানুষ কর্তৃক উত্তেজিত হয়ে আমাদের সম্মুখীন হয়, তার খাদ্য এবং বল হরণ কর, তোমাদের সহায়তা হরণ কর।
৯। হে মরুৎগণ! তামরা সম্পুর্ণরূপে যজ্ঞভাজন এবং প্রকৃষ্ট জ্ঞানযুক্ত, তোমরা কম্বকে ধারণ কর বিদ্যুৎ যেরূপ বৃষ্টি নিয়ে আসে, তোমরাও সম্পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষনের সাথে আমাদের নিকট এস।
১০। হে শোভনীয় দানসম্পন্ন মরুৎগণ! তোমরা সম্পূর্ণ তেজ ধারণ কর; কম্পনকারীগণ! তোমরা সম্পূর্ণ বল ধারণ কর; ঋষিদ্বেষী ক্রোধপরবশ শত্রুর প্রতি ইষুর ন্যায় তোমার ক্রোধ প্রেরণ কর।

টীকাঃ
১। রুদ্রাস শব্দের অর্থ রুদ্রপুত্রা মরুতঃ। রুদ্র সম্বন্ধে ৪৩ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।
২। বাহনত্রয় মধ্যবর্তী যুগবিশেষঃ সায়ণ। মক্ষমুলর প্রষ্টি অর্থ Leader করেছেন।








৪০ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে ব্রহ্মণস্পতি! উত্থান করঃ দেবতা কামনা করে আমরা তোমাকে যাচ্ঞা করছি। শোভনীয় দানযুক্ত মরুৎগণ নিকট দিয়ে গমন করুন, হে ইন্দ্র! তুমি সঙ্গে থেকে সোমরস সেবন কর।
২। হে বলপুত্র! (শত্রুদের মধ্যে) প্রক্ষিপ্ত ধনের জন্য মনুষ্য তোমাকে স্তুতি করে; হে মরুৎগণ! যে মনুষ্য তোমাদের স্তুতি করে, সে শোভনীয় অশ্বযুক্ত ও শোভনীয় বীর্যযুক্ত ধন লাভ করে।
৩। ব্রহ্মণস্পতি আমাদের নিকট আসুন, সুনৃতা দেবী (১) আসুন, দেবগণ শত্রুকে দূরে প্রেরণ করুন, আমাদের হিতকারী ও হবাযুক্ত যজ্ঞে নিয়ে যান।
৪। যে মনুষ্য ঋত্বিককে গ্রহণযোগ্য ধন দান করে সে ক্ষয় রহিত অন্নলাভ করে; তার জন্য আমরা ইলার নিকট যাচ্ঞা করব। ইলা সুবীরা, তিনি শত্রুকে হনন করেন, তাকে কেহ হনন করতে পারে না।
৫। ব্রহ্মণস্পতি নি:সন্দেহই পবিত্র মন্ত্র উচ্চারণ করেন (২)। সে মন্ত্রে ইন্দ্র, বরুণ, মিত্র ও অর্যমা দেবগণ অবস্থিতি করেন।
৬। হে দেবগণ সুখের উৎপত্তি হেতু এবং হিংসা দোষ রহিত সে মন্ত্র আমরা উচ্চারণ করি। হে নেতৃগণ! যদি তোমরা এ বাক্য কামনা কর তা হলে সকল কমনীয় বাক্য তোমাদের নিকট উপনীত হবে।
৭। যিনি দেবগণকে কামনা করেন, তার নিকট ব্রহ্মণস্পতি ভিন্নকে আসে? যিনি যজ্ঞের জন্য কুশ ছিন্ন করেন, তার নিকট ব্রহ্মণস্পতি ভিন্ন কে আসে? হব্যদাতা যজমান ঋত্বিকদের সাথে যজ্ঞ স্থানে প্রন্থান করেছেন, অন্ত:স্থিত বহু ধনোপেত গৃহে গমন করেছেন।
৮। ব্রহ্মণস্পতি আপন শরীরে বল সংগ্রহ করুন, রাজগনের সাথে তিনি শত্রু হনন করেন, ভয়ের সময় তিনি স্বস্থানে স্থির থাকেন। তিনি বজ্রধারী, মহা যুদ্ধে কিম্বা স্বল্প যুদ্ধে তাকে প্রোৎসাহ অথবা নিরুৎসাহ করে এরূপ কেউ নেই।

টীকাঃ
১। সুনৃতা দেবী প্রিয়সত্যরূপাবাপ্দেবতা। সায়ণ।
২। ব্রহ্ম অর্থ প্রার্থনা বা মন্ত্র এবং ব্রহ্মণস্পতি প্রার্থনা স্বরূপ দেব, তা এ সুক্তে স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে। ১৮ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।






৪১ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। প্রকৃষ্ট জ্ঞানযুক্ত বরুণ ও মিত্র ও অর্যমা (১) যাকে রক্ষা করেন, কেউ তার হিংসা করতে পারে না।
২। তারা যে লোককে নিজের হস্ত দ্বারা ধনপূর্ণ করেন ও হিংসক হতে রক্ষা করেন, সে লোক কারও দ্বারা হিংসিত না হয়ে বুদ্ধি প্রাপ্ত হয়।
৩। বরুণাদি রাজগণ সে লোকদের জন্য শত্রুদের দূর্গ বিনাশ করেন, শত্রুদেরও বিনাশ করেন; পরে সে লোকদের পাপ সমূহ অপনয়ন করেন।
৪। হে আদিত্যগণ! তোমাদের যজ্ঞে আসবার পথ সুখগম্য ও কন্টকরহিত; এ যজ্ঞে তোমাদের জন্য মন্দ খাদ্য প্রস্তুত হয়নি।
৫। হে নেতা আদিত্যগণ! যে যজ্ঞে তোমরা ঋজুপথ দিয়ে আস, সে যজ্ঞ তোমাদের উপভোগ্য হোক।
৬। হে আদিত্যগণ! সে (তোমাদের অনুগৃহীত) মানুষ কারও দ্বারা হিংসিত না হয়ে সমস্ত রমণীয় ধন সম্মুখেই প্রাপ্ত হয় এবং নিজের সদৃশ অপত্য প্রাপ্ত হয়।
৭। হে সখাগণ! মিত্র ও অর্যমা ও বরুণের মহত্বের অনুরূপ স্তোত্র কি প্রকারে সাধন করব?
৮। হে মিত্রাদিদেবগণ! দেবাকাঙ্ক্ষী যজমানকে যে হনন করে, এবং যে কটু বলে, তার বিরুদ্ধে আমি তোমাদরে নিকট অভিযোগ করি না; আমি ধন দ্বারা তোমাদের পরিতৃপ্ত করি।
৯। অক্ষক্রীড়ায় যে লোক চার কপর্দক হস্তে ধারণ করে, সে কপর্দক ক্ষেপণ পর্যন্ত যেরূপ তাকে অপর পক্ষ ভয় করে সেরূপ যজমান পরের নিন্দা করতে ভয় করে।

টীকাঃ
১। মিত্র ও বরুণ সম্বন্ধে ২ সুক্তের ৭ ঋকের টীকা দেখুন। বরুণ ও মিত্রের সাথে অর্যমাকে অনেক স্থানে স্তুতি করা হয়। অর্যমাকে? ৯০ সুক্তের ১ ঋকের টীকায় সায়ণ বলেন অর্যমা অহোরাত্রবিভাগস্য কর্তা সূর্যঃ। অন্য এক স্থানে সায়ণ লিখেছেন যে মিত্র ও বরুণ দিন ও রাত। অর্যমা উভয়োর্ম ধ্যবত্তী দেবঃ। ১৪ সুক্তের ৩ ঋকের টীকা দেখুন।








৪২ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে পূষা (১) পথ পার করিয়ে দাও, পাপ বিনাশ কর; হে মেঘপুত্র দেব! আমাদরে অগ্নে যাও।
২। হে পুষা! আঘাতকারী, অপহরণকারী ও দৃষ্টাচারী যে কেউ আমাদের (বিপরীত পথ) দেখিয়ে দেয়, তাকে পথ হতে দূর করে দাও।
৩। সেই মার্গ প্রতিবন্ধক, তস্কর কুটিলাচারীকে পথ হতে দুরে তাড়িয়ে দাও।
৪। যে কেউ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয়ই হরণ করে এবং অনিষ্ট সাধন ইচ্ছা করে, হে পূষা! তার পরসন্ত্রাপক দেহ তোমার পদের দ্বারা দলিত কর।
৫। হে শত্রুবিনাশী ও জ্ঞানবান পূষা! যেরূপ রক্ষণাদ্বারা পিতৃগণকে কউৎসাহিত করেছিলে, তেমার সে রক্ষণা প্রার্থনা করছি।
৬। হে সর্বধনসম্পন্ন, অনেক সুবর্ণায়ুধযুক্ত লোকগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ পূষা! তুমি অনন্তর ধনসমূহ দানে পরিণত কর।
৭। বিঘ্নকারী শত্রুদের অতিক্রম করে আমাদের নিয়ে যাও, সুখগম্য শোভনীয় পথদ্বারা আমাদরে নিয়ে যাও: হে পূষা! তুমি এ পথে আমাদের রক্ষণের উপায় কর।
৮। শোভনীয় তৃণযুক্ত দেশে আমাদরে নিয়ে যাও, পথে যেন নতুন সন্তাপ না হয়। হে পূষা! তুমি এ (পথে) আমাদের রক্ষনের উপায় কর।
৯। (আমাদের অনুগ্রহ করতে) সক্ষম হও, আমাদের গৃহ ধনে পরিপূর্ণ কর, অভষ্টবস্তুদান কর, আমাদের তীক্ষ্মতেঙ্গা কর, আমাদের উদর পূরণ কর; হে পূষা! তুমি এ পথে আমাদের রক্ষণের উপায় কর।
১০। আমরা পূষাকে নিন্দা করি না, সুক্ত দ্বারা স্তুতি করি, আমরা দর্শনীয় পূষার নিকট ধন যাচ্ঞা করি (২)।

টীকাঃ
১। সায়ণ বলেন পূষা অর্থে জগৎ পোষকপৃথিব্যাভিমানিদেবঃ। এটি সায়ণের ভ্রম। যাস্ক নিরুক্তকে লিখেছেন, সর্বোষাং ভূতানাং গোপায়িতা আদিত্যঃ। অর্থাঃ পূষা সূর্য। এ অর্থই সঙ্গত এবং সকল পনিডতদের সম্মত। The sun as viewed by shephards. Max Muller. মেঘ হতে অনেক সময় সূর্য বার হন, এ জন্য পূষাকে মেঘপুত্র বলা হয়েছে।
২। এ সুক্তের কোন কোন ঋক, বিশেষ করে ৮ ঋক হতে প্রতীয়মান হয় যে সে সময়ের হিন্দু আর্যদের মধ্যে কেন কোন অংশ মেঘপালক ব্যবসায় অবলম্বন করে সুন্দর তৃণ অন্বেষণে স্থানে স্থানে ভ্রমণ করত। পূষা বিশেষরূপে তাদেরই রক্ষক, অতএব তিনি ভ্রমণে পথদর্শক। সে কালে ভ্রমণে কি রূপ বিপদ আপদ ছিল তাও এ সুক্ত হতে জানা যায়।






৪৩ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। প্রকৃষ্ট জ্ঞান যুক্ত অভীষ্ট বর্বণকারী ও অতিশয় মহৎ রুদ্র (১) আমাদরে হৃদয়ে অধিষ্ঠান করছেন, কবে তার উদ্দেশে সুখকর স্তোত্র পাঠ করব?
২। যা দিয়ে অদিতি আমাদরে জন্য, পশুর জন্য মানুষের জন্য, গাভীর জন্য এবং আমাদের অপত্যের জন্য রুদ্রীয় প্রদান করেন।
৩। যা দিয়ে মিত্র ও বরুণ ও রুদ্র ও সমান প্রীতিযুক্ত সকল দেবগণ আমাদরে অনুগ্রহ করেন।
৪। রুদ্র স্তুতিপালক, যজ্ঞপালক এবং উদকরূপ ঔষধিযুক্ত, তার নিকট আমরা (বৃহস্পতি পুত্র) শংযুর ন্যায় সুখ যাচ্ঞা করি।
৫। যে রুদ্র সূর্যের ন্যায় দীপ্তিমান ও হিরণ্যের ন্যায় উজ্জ্বল, যিনি দেবগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও নিবাসের হেতু।
৬। আমাদরে অশ্ব, মেঘ, মেঘী, পুরুষ স্ত্রী ও গোজাতিকে সুগম্য সুখ প্রদান করেন।
৭। হে সোম! আমাদরে প্রচুর পরিমাণে শত মানুষের ধন দান কর এবং মহৎ ও প্রভূত বলযুক্ত অন্ন দান কর।
৮। সোমপ্রতিবন্ধকেরা ও শত্রুগণ আমাদরে যেন হিংসা না করে। যে সোম! আমাদরে অন্ন দান কর।
৯। হে সোম! তুমি অমর ও উত্তম স্থান প্রাপ্ত, তুমি শির:স্থানীয় হয়ে যজ্ঞগৃহে তোমার প্রজাদরে কামনা কর; যে প্রজাগণ তেমাকে বিভূষিত করে, তুমি তাদের জান।

টীকাঃ
১। ২৭ সুক্তের ১০ ঋকে রুদ্রকে অগ্নির রূপ বলে বর্ণিত হয়েছে, আমরা তা দেখেছি। সে ঋক সম্বন্ধে যাস্ক নিরুক্ততে বলেন অগ্নিরপি রুদ্র উচ্যতে। সায়ণ বলেন রুদ্রায় ক্ররায় অগ্নয়ে। অতএব উভয় যাস্ক ও সায়ণের মতে রুদ্র শব্দের অর্থ অগ্নি। ৩৯ সুক্তের ৪ ঋকে মরুৎগণকে রুদ্রাসঃ বলে বর্ণনা করা হয়েছে তাও আমরা দেখেছি। সায়ণ। রুদ্রাসঃ অর্থে রুদ্রপুত্রা মরুতঃ করেছেন। অতএব রুদ্র মরুৎগণের পিতা। রুদ্র ধাতুর একটি অর্থ শব্দ করা অথবা গর্জন করা বা রোদন করা অতএব রুদ্র অগ্নিরূপী ঋড়ের পিতা শব্দায়মান দেব। এ হতে স্পষ্টই প্রতীয়মান হচ্ছে যে রুদ্রের আদিম অর্থ বজ্র বা বজ্রধারী মেঘ। এক্ষণে আমরা ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও রুদ্রের আদিম বৈদিক অর্থ পেলাম। ঋগ্বেদে ব্রহ্মণস্পতি অর্থে স্তুতি দেব ১৮ সুক্ত দেখুন, বিষ্ণু অর্থে সূর্য দেব ব২২ সুক্ত দেখুন, রুদ্র অর্থে বজ্রদেব। সকল ঐশ্বরিক কাজের এক ঈশ্বরকে ঋগ্বেদে বিশ্বকর্মা বা হিরণ্যগর্ভ নাম দেওয়া হয়েছে ১০ মন্ডলের ৮২ ও ১২১ সুক্ত দেখুন। ঋগ্বেদ রচনার বহুকাল পর এই এক ঈশ্বরের সৃষ্টি, পালন, ও বিনাশ এ তিনটি কাজ পৃথক পৃথক নির্দেশ করবার জন্য ঋষিগণ তিনটি নামের অন্বেষণ করলেন। তারা নতেন নাম উদ্ভাবন না করে প্রাচীন বৈদিক নামই গ্রহণ করলেন। স্তুতি দেব ব্রহ্মণস্পতির নাম নিয়ে ঈশ্বরের সৃষ্টি কার্যকে ব্রহ্মা নাম দিলেন। সূর্যদেব বিষ্ণুর নাম নিয়ে ঈশ্বরের পালন কার্যকে বিষ্ণুর নাম দিলেন। বজ্রদেব রুদ্রের নাম নিয়ে ঈশ্বরের বিনাশ কার্যকে রুদ্র নাম দিলেন।




৪৪ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে অগ্নি! তুমি অমর এবং সর্ব ভূতজ্ঞ তুমি ঊষার নিকট হতে নিবাসযুক্ত ও বিচিত্র ধন হব্যদাতা যজমানকে এনে দাও; অদ্য ঊষাকালে জাগরিত দেবগণকে নিয়ে এস।
২। হে অগ্নি! তুমি দেবগণের সেবিত দূত, তুমি হব্য বহন কর, তুমি যজ্ঞের রথী; তুমি অশ্বিদ্বয় ও ঊষার সাথে শোভনীয় বীর্যমুক্ত ও প্রভূত ধন আমাদের দান কর।
৩। অগ্নি দূত, নিবাসের হেতু, অনেকের প্রিয়, ধুমরূপ ধ্বজাযুক্ত প্রসিদ্ধ জ্যেতি দ্বারা অলঙ্কৃত এবঃ ঊষাকালে যজমানদের যজ্ঞ সেবন করেন; সে অপ্নিকে অদ্য আমরা বরণ করি।
৪। অপ্নি শ্রেষ্ঠ, যবিষ্ঠ সদ্য অতিথি, সকলের আহুত, হব্যদাতার প্রতি প্রীত এবং সর্বভূতজ্ঞ; ্র্ষাকালে দেবগণের অভিমুখে গনার্থ আমি তাকে স্তুতি করি।
৫। হে অমর বিশ্বপালক, হব্যবাহী ও যজ্ঞাহ অগ্নি! তুমি বিশ্বের ত্রাণকর্তা, মরণরহিত ও যজ্ঞনির্বাহক; আমিস তোমাকে স্তুতি করব।
৬। হে যুবতম অগ্নি! তুমি স্তোতার স্তুতিভাজন ও তোমার শিখা আনন্দদায়ী, তুমি আহুত হয়ে আমাদরে অভিপ্রায় উপলব্ধি কর। প্রস্কন্ব জীবিত থাকে এ জন্য তার আয়ুঃ বৃদ্ধি করে দাও, সে দেবপরায়ণ জনকে সম্মান কর। তুমি হোমনিষ্পাদক ও সর্বজ্ঞ, তোমাকে লোকে দীপ্তিমান করে; হে অগ্নি! তুমি অনেকের আহুত, প্রকৃষ্ট জ্ঞানযুক্ত দেবগণকে শীঘ্র এ যজ্ঞে নিয়ে এস।
৮। হে শোভনীয় যজ্ঞযুক্ত অগ্নি! রাত্রের পর প্রভাতে সবিতা ঊষা অশ্বিদ্বয় ভগ ও অগ্নিকে নিয়ে এস; হব্যবাহী, কবেরা সোম অভিষব করে তোমাকে জ্বালাচ্ছে।
৯। হে অগ্নি! তুমি লোকদের যজ্ঞের পালক, তুমি দেবগণের দূত, ঊষাকালে জাগরিত সূর্যদশী দেবগণকে অদ্য সোমপানার্থে নিয়ে এস।
১০। হে প্রভাত সম্পন্ন ধনবান অগ্নি! তুমি সকলের দর্শনীয়, তুমি পূর্বগামী ঊষার পর দীপ্ত হও; তুমি গ্রামসমূহে রক্ষক, যজ্ঞসমূহে পুরোহিত, ও বেদীর পূর্বে মানুষ।
১১। হে অগ্নি! তুমি যজ্ঞের সাধন, তুমি দেবগণের আহ্বানকারী ঋত্বিক, তুমি প্রকৃষ্ট জ্ঞানযুক্ত এবং শত্রুদের আয়ুঃক্ষয়কারী, তুমি দেবগণের দূত ও অমর আমরা মনুর ন্যায় তোমাকে জজ্ঞঝস্থানে স্থাপন করি।
১২। নিত্রদের পূজক হে অগ্নি! যখন যজ্ঞমধ্যে পুরোহিত রূপে তুমি দেবগণের দূতের কর্ম সম্পাদন কর, তখন তোমার সমুদ্রের প্রকষ্টধ্বনিযুক্ত ঊর্মি সমূহের ন্যায় অর্চিঃমূহ দীপ্তিমান হয়।
১৩। হে অগ্নি! তোমার কর্ণ শ্রবণসমর্থ, আমাদরে বচন শ্রবণ কর; মিত্র ও অর্যমা ও অন্য যে দেবগণ প্রাত:কালে দেবযজ্ঞে গমন করেন, তোমার সহগামী সে হব্যবাহী দেবগণের সাথে এ যজ্ঞ লক্ষ্য করে কুশে উপবেশন করুন।
১৪। মরুৎগণ দানশীল, অগ্নি জিহ্ব এবং যজ্ঞবর্ধন করেন, তারা আমাদরে স্তোত্র শ্রবণ করুন, ধৃতব্রত বরুণ অশ্বিদ্বয় ও ঊষার সাথে সোমপান করুন।






৪৫ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে অগ্নি! তুমি এ যজ্ঞে বসুদের, রদ্রদের, এবং আদিতাদের অর্চনা কর এবং শোভনীয় যজ্ঞযুক্ত ও জলসেককারী মনুজাত জনকেও অর্চনা কর।
২। হে অগ্নি! বিশিষ্ট প্রজ্ঞাসম্পন্ন দেবগণ হবাদাতাকে ফলদান করেন; হে অগ্নি! তোমার রোহিত নামক অশক্ব আছে এবং তুমি স্তুতিভাজন, তুমি সে ত্রয়স্ত্রিংশ (১) দেবগণকে এ স্থানে নিয়ে এস।
৩। হে অগ্নি! তুমি প্রভূতকর্মা এবং সর্বভূতজ্ঞ। প্রিয়মেধা অত্রি, বিরূপ ও অঙ্গিরা নামক ঋষিদের আহ্বান যেরূপ শ্রবণ করেছিলে সেরূপ প্রস্কম্বের আহ্বান শ্রবণ কর।
৪। অগ্নি যজ্ঞ সমূহের মধ্যে বিশুদ্ধ আলোক দ্বারা দীপ্যমান হন পৌঢ়কর্মা প্রিয়মেধাগণ রক্ষার জন্য অগ্নিকে আহ্বান করেছিলেন।
৫। কম্বের পুত্রেরা যে স্তুতি দ্বারা রক্ষার জন্য তোমাকে আহ্বান করছেন, হে ঘৃতাহুত ফলপ্রদ অগ্নি! সে স্তুতি সমূহ শ্রবণ কর।
৬। হে অগ্নি! তুমি প্রভূত ও বিবিধ অন্নযুক্ত এবং বহুলোকের প্রিয়; তোমার দীপ্তিরূপ কেশ আছে; মানুষেরা তোমাকে হব্য বহনের জন্য আহ্বান করে।
৭। হে অগ্নি! তুমি আহ্বানকারী ঋত্বিক এবং বহুধন দাতা, তোমার কর্ন শ্রবণসমর্থ, তোমার খ্যাতি বহু বিস্তুত; মেধাবীগণ তোমাকে যজ্ঞে স্থাপন করেছেন।
৮। হে অগ্নি! তুমি আহ্বানকারী ঋত্বিক এবং বহুধন দাতা, তোমার কর্ণ শ্রবণসমর্থ, তোমার খ্যাতি বহু বিস্তৃত; মেধাবীগণ তোমাকে যজ্ঞে স্থাপন করেছেন।
৮। হে অগ্নি!হব্যাদাতার জন্য হব্য ধারণ করে মেধাবী ঋত্বিকেরা সোম অভিযুত করে অন্নের নিকট তোমাকে আহ্বান করছে; তুমি মহান ও প্রভাসম্পন্ন।
৯। হে অগ্নি! তুমি বল দ্বারা উৎপন্ন, তুমি ফলদাতা এবং নিবাস হেতু; অদ্য এ স্থানে প্রাতে আগমনকারী দেবগণকে ও দৈব্য জনকে সোম পানার্থে কুশের উপর আনয়ন কর।
১০। হে অগ্নি! সম্মুখস্থ দৈব্য জনকে (২) দেবগণের সাথে সমান আহ্বান দ্বারা অর্চনা কর; হে দানশীল দেবগণ! এ সোম তোমাদের জন্য কল্য প্রস্তুত হয়েছে, এ পান কর।

টীকাঃ
১। ৩৪ সুক্তের ১১ ঋকের টীকা দেখুন।
২। প্রথম, নবম ও দশম ঋকে যে মনুজাত দেবতারূপ প্রাণীর উল্লেখ আছে তারা কে? সম্ভবতঃ ৩ ঋকে উল্লিখিত ঋষিগণ।

(C) https://www.ebanglalibrary.com
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।