০৫ জানুয়ারী ২০১৮

ঋগ্বেদ সংহিতা - প্রথম মণ্ডলঃবিভিন্ন ঋষিঃ সুক্তঃ ৬১-৭৫

৬১ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। ইন্দ্র বলবান, ত্বরান্বিত ও গুণ দ্বারা মহৎ স্তুতির উপযুক্ত এবং অপ্রতিহতগতি। বুভুক্ষিতকে যেরূপ অন্নদান করে, আমি ইন্দ্রকে তার গ্রহণ যোগ্য স্তুতি পূর্ববর্তী যজমানপ্রদত্ত যজ্ঞান্ন প্রদান করি।
২। তাঁকে অন্নের ন্যায় হব্য দান করছি, শত্রু পরাজয় সাধনস্বরূপ স্তুতিশব্দ সম্পাদন করেছি। অন্য স্তোতাগণও সে পুরাতন স্বামীকে হৃদয়ের সাথে মনের সাথে এবং জ্ঞানদ্বারা স্তুতি সম্পাদন করে।
৩। সেই উপমানভূত বরণীয় ধনদাতা ও বিজ্ঞ ইন্দ্রকে বর্ধন করবার জন্য আমি মুখ দ্বারা উৎকৃষ্ট ও নির্মুল স্তুতিবচনযুক্ত অতি মহৎ শব্দ করছি।
৪। যেরূপ পথ নির্মাণকর্তা রথস্বামীর নিকট রথ চালায় সেরূপ আমি ইন্দ্রের উদ্দেশে স্তোত্র প্রেরণ করি; স্তুতিভাজন ইন্দ্রকে শোভনীয় স্তুতিবাক্য প্রেরণ করি; মেধাবী ইন্দ্রকে বিশ্বব্যাপী হব্য প্রেরণ করি।
৫। অশ্বকে যেরূপ রথে সংযোজিত করে আমি সেরূপ অন্ন প্রাপ্তির ইচ্ছায় স্তুতিরূপ মন্ত্র বাগিন্দ্রিয়ে ধারণ করি; সে বীর, দানশীল অন্নবিশিষ্ট এবং নগরবিদারী ইন্দ্রকে বন্দনা করতে প্রবৃত্ত হই।
৬। ত্বষ্ট ইন্দ্রের জন্য যুদ্ধার্থে শোভনকর্ম ও সুপ্রেরণীয় বজ্র নির্মাণ করেছিলেন, ঐশ্বর্যবান ও অপরিমিত বলবান ইন্দ্র শত্রুবিনাশে উদ্যত হয়ে সে হননকারী বজ্র দ্বারা বৃত্রের মর্ম ভেদ করেছিলেন।
৭। জগতের নির্মাণকর্তা ইন্দ্রের এ মহৎ যজ্ঞে যে অভিষব দেওয়া হয়েছে, ইন্দ্র তাতে সোমরূপ অন্ন সদ্যই পান করেছেন এবং শোভনীয় হব্যরূপ অন্ন ভক্ষণ করেছেন। তিনি বিষ্ণু (১) শত্রুর পরিপক্ক ধন অপহরণকারী, শত্রুপরাজয়ী ও বজ্রক্ষেপক; তিনি বরাহকে অর্থাৎ মেঘকে প্রাপ্ত হয়ে তাকে ভেদ করেছিলেন।
৮। ইন্দ্র অহিকে হনন করলে গমনশীল দেবপত্নীগণও তাকে স্তুতি করেছিলেন। ইন্দ্র বিস্তৃত আকাশ ও পৃথিবী অতিক্রম করেছিলেন। তারা ইন্দ্রের মহিমা অতিক্রম করতে পারে না। ইন্দ্রের মাহাত্ম্য দ্যুলোক ও ভূলোক ও অন্তরীক্ষ অপেক্ষাও অধিক। তিনি নিজ আবাসে স্বকীয় তেজে বিরাজ করেন, সকল কার্যে সমর্থ হন। তার শত্রু সুযোগ্য, তিনি যুদ্ধগমনে নিপূণ এবং মেঘরূপ শত্রুদের যুদ্ধে আহ্বান করেন।
১০। ইন্দ্র স্বকীয় বলদ্বারা জলশোষক বৃত্রকে বজ্র দ্বারা ছেদন করেছিলেন; এবং গাভীসমূহের ন্যায় বৃত্রদ্বারা অবরুদ্ধ জগতের রক্ষণশীল জলসমূদয় ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি হব্যদাতাকে তার অভিলাষানুসারে অন্ন দান করেন।
১১। ইন্দ্রের ক্ষমতাহেতু সমুদ্র ও নদীসকল শোভা পাচ্ছে, কেননা ইন্দ্র বজ্র দ্বারা তাদের সীমা নির্দেশ করে দিয়েছেন। আপনাকে ঐশ্বর্যবান করে এবং হব্যদাতাকে ফল প্রদান করে, ইন্দ্র ত্বরান্বিত হয়ে তুবীতি ঋষির জন্য একটি অবস্থানযোগ্য স্থান সৃষ্টি করলেন (২);
১২। ইন্দ্র ক্ষিপ্রকারী, সকলের ঈশ্বর এবং অপরিমিত বলশালী। হে ইন্দ্র! তুমি এ বৃত্রকেই বজ্র প্রহার কর, গরুর ন্যায় বৃত্রের শরীরের সন্ধিগুলি তির্যক অবস্থিত বজ্র দ্বারা কর্তন কর (৩), যেন বৃষ্টি এবং জল বিচরণ করতে পারে।
১৩। যিনি মন্ত্রদ্বারা স্তুত্য সে ক্ষিপ্রগামী ইন্দ্রের পূর্ব কর্ম সকল বর্ণনা কর। তিনি যুদ্ধের জন্য অস্ত্র সকল নিক্ষেপ করে শত্রুদের হনন করে তাদের সম্মুখে গমন করেন।
১৪। এই ইন্দ্রের ভয়ে পর্বতগণ নিশ্চল হয়ে থাকে, ইন্দ্র প্রাদুর্ভুত হলে আকাশ ও পৃথিবী কম্পিত হয়। নোধাঋষি সে কমনীয় ইন্দ্রের রক্ষণকার্য অনেক সুক্ত দ্বারা বার বার প্রার্থনা করে সদ্যই বীর্য লাভ করেছিলেন।
১৫। তিনি একাকী বহুবিধ ধনের স্বামী। তিনি যে স্তোত্র এ স্তোতৃদের নিকট যাচ্ঞা করেছেন সে স্তোত্র তাকে দাও। স্বশ্বপুত্র সূর্যের যুদ্ধের সময় সোমাভিষবকারী এতশ ঋষিকে ইন্দ্র রক্ষা করেছিলেন (৪)।
১৬। হে অশ্বযুক্ত রথেশ্বর ইন্দ্র! গোতমগণ তোমাকে যজ্ঞে উপস্থিত করবার জন্য স্তুতিরূপ মন্ত্রসমূহ রচনা করেছে; সে স্তোতৃদের বহুবিধ বুদ্ধি প্রদান কর। যিনি বুদ্ধি দ্বারা ধন পেয়েছেন, সে ইন্দ্র প্রাতে শীঘ্র আগমন করুন।

টীকাঃ
১। মূলে বিষ্ণু আছে। জগতো ব্যাপকঃ। সায়ণ।
২। ভুবীত ঋষি জলমগ্ন হচ্ছিলেন, ইন্দ্র তাকে উদ্ধার করে ভূমিতে স্থাপন করেছিলেন। সায়ণ।
৩। মুলে গোঃ ন পর্ব বিরদা আছে। যথা মাংসস্য বিকর্ত্তারঃ লৌকিকা পুরুষাঃ পশোরবয়বান ইতস্ততো তদ্বৎ। সায়ণ। বৃত্রাসুরের শরীরের সন্ধি সকল তির্যকভাবে বজ্রদ্বারা ছেদন করুন, যেরূপ মাংসচ্ছেদক ব্যক্তিরা গোপশুর অবয়ব সকল ছেদন করে পৃথক করে। রমানাথ সরস্বতী।
৪। স্বশ্ব নামে এক রাজা পুত্রকামনা করে সূর্যকে উপাসনা করেছিলেন, সূর্য স্বয়ং তার পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার সাথে এতশ নামক মহর্ষির যুদ্ধ হয় । সায়ণ।






৬২ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। বলবান স্তুতিভাজন ইন্দ্রের উদ্দেশে আমরা অঙ্গিরার ন্যায় সুখকর স্তোত্র মনে ধারণ করি। তিনি শোভনীয় স্তোত্র দ্বারা স্তুতিকারী ঋষির অর্চনাভাজন। সে প্রখ্যাত নেতাকে আমরা স্তোত্র দ্বারা পূজা করি।
২। যে স্তোত্র উচ্চৈঃস্বরে গীত হতে পারে এরূপ মহৎ স্তোত্র তোমরা সে মহান বলবান ইন্দ্রের উদ্দেশে অর্পণ কর। তার সহায়তায় আমাদের পূর্বপুরুষ অঙ্গিরাগণ, পদচিহ্ন দেখে পূজা করতঃ পণি অসুর দ্বারা অপহৃত গাভী উদ্ধার করেছিলেন।
৩। ইন্দ্র ও অঙ্গিরা গাভী অন্বেষণ করলে সরমা স্বীয় তনয়ের নিমিত্ত অন্ন প্রাপ্ত হয়েছিল (১)। তখন বৃহস্পতি ইন্দ্র (২) অসুরকে বধ করলেন ও গাভী উদ্ধার করলেন। দেবগণও গাভীদের সাথে হর্ষসূচক শব্দ করতে লাগল।
৪। হে শক্তিমান ইন্দ্র! সপ্ত সংখ্যক ও সঙ্গতি অভিলাষী নবগ্ব ও দশগ্ব (৩) মেধাবীগণের সুখশ্রাব্য স্বরযুক্ত স্তোত্র দ্বারা তুমি স্তুত হবে। তোমার স্বরে পর্বত ভীত হয় এবং শস্যোৎপাদক মেঘও ভীত হয়।
৫। হে দর্শনীয় ইন্দ্র! তুমি অঙ্গিরাগণের দ্বারা স্তুত হয়ে ঊষা ও সূর্যের কিরণ দ্বারা অন্ধকার বিনাশ করেছ। হে ইন্দ্র! তুমি পৃথিবীর সানুপ্রদেশ সমতল করেছ এবং অন্তরীক্ষের মূল প্রদেশ দৃঢ় করেছ।
৬। ইন্দ্র পৃথিবীর উপরে স্থাপিত মধুর উদকপূর্ণ যে চারটি নদী জলপূর্ণ করেছেন, তা সে দর্শনীয় ইন্দ্রের অতিশয় পূজ্য ও সুন্দর কর্ম।
৭। যে ইন্দ্রকে (যুদ্ধরূপ) প্রযত্ন দ্বারা প্রাপ্ত হওয়া যায় না কিন্তু স্তোতার স্তুতিদ্বারা পাওয়া যায়, সে ইন্দ্র একত্র সংলগ্ন দ্যাব্য পৃথিবীকে দ্বিধা করে স্থাপন করেছেন এবং সে শোভনকর্মা ইন্দ্র সুন্দর ও উৎকৃষ্ট নভস্থলে সূর্যের ন্যায় এ দ্যাবা পৃথিবীকে ধারণ করেছেন।
৮। বিভিন্নরূপা, নিত্যজাতা ও যুবতীর ন্যায় রজনী ও ঊষা দ্যাবা পৃথিবীতে বহুকাল হতে পরুপরাক্রমে আগমন করতঃ বিচরণ করেছেন; রাত্রি কৃষ্ণবর্ণ ও ঊষা দীপ্তিমান শরীরযুক্ত।
৯। যে ইন্দ্র শোভনীয় কর্ম সম্পাদন করেন, যিনি বলের পুত্র এবং উৎকৃষ্ট কর্মযুক্ত, তিনি যজমানদের পুরাতন বন্ধুত্ব পোষণ করেন। হে ইন্দ্র! তুমি অপরিপক্ক গাভীদেরও পক্ক দুগ্ধ দান করেছ এবং গাভী কৃষ্ণবর্ণ বা লোহিত বর্ণ হলেও তন্মধ্যে শুক্রবর্ণ দুগ্ধ দান করেছ।
১০। যে স্থির অঙ্গুলি সকল চিরকাল সন্নদ্ধ হয়ে অবস্থান করেও আলস্য রহিত হয়ে স্বীয় বলদ্বারা বহুসহস্র ব্রত পালন করেছে, সে সেবা পরায়ণ ভগ্নীগণ দেবপত্মীর ন্যায় লজ্জারহিত ইন্দ্রের সেবা করে (৪)।
১১। হে দর্শনীয় ইন্দ্র! তুমি মন্ত্র ও নমস্কার দ্বারা স্তুত হও। যে মেধাবীগণ সনাতন কর্ম বা ধন কামনা করে তারা বহু প্রয়াসে তোমাকে প্রাপ্ত হয়। হে বলবান ইন্দ্র! যেরূপ আকাঙ্ক্ষিণী পত্নী আকাঙ্ক্ষী পতিকে প্রাপ্ত হয় সেরূপ স্তুতি তোমাকে স্পর্শ করে।
১২। হে দর্শনীয় ইন্দ্র! চিরকাল হতে যে ধন তোমার হস্তে আছে তা কখন নাশ বা ক্ষয় প্রাপ্ত হয় না। হে ইন্দ্র! তুমি বুদ্ধিমান, দীপ্তিমান, এবং যজ্ঞবিশিষ্ট। হে কর্মবান ইন্দ্র! তোমার কর্ম দ্বারা আমাদরে ধন দাও।
১৩। হে ইন্দ্র! তুমি সকলের আদি; হে সুনেত্র বলবান ইন্দ্র! তুমি রথে অশ্ব যোজনা কর; গৌতম ঋষির পুত্র নোযা আমাদের নিমিত্ত তোমার এ নুতন স্তোত্র রচনা করেছেন। অতএব যিনি কর্ম দ্বারা ধন প্রাপ্ত হয়েছেন, সে ইন্দ্র প্রাতঃকালে শীঘ্র আগমন করুন।

টীকাঃ
১। সরমা দেবকুক্কুরী। পণি গাভী সকল অপহরণ করলে ব্যাধ যেরূপ মৃগের অন্বেষণে কুক্কুর পাঠায় সেরূপ ইন্দ্র সরমাকে গাভীর উদ্দেশে পাঠালেন। সরমা বলল ইন্দ্র! যদি আমাদের শিশুকে সে গাভীর দুগ্ধ দাও তবে যাব। ইন্দ্র সম্মত হলেন। পরে সরমা গিয়ে সে গাভীর অনুসন্ধান করলে ইন্দ্র তা উদ্ধার করলেন। সায়ণ। ৬ সুক্তের ৫ ঋকের টীকা দেখুন।
২। বৃহস্পতিঃ শব্দের অর্থ বৃহতাং দেবানাং অধিপতিরিন্দ্রঃ। সায়ণ।
৩। নবগ্বৈঃ ও দশগ্বৈঃ শব্দর অর্থ, যে নবভিঃ মাসেঃ সমাপ্য গতা স্তেনবগ্বাঃ যে তু দশভিমাসৈঃ সমাপ্য জন্মুস্তে দশগ্বাঃ সায়ণ।
৪। অহ্রয়াণং এর অর্থ প্রশস্তগতি অথবা লজ্জারহিত হয়। সায়ণ। অঙ্গুলিরূপ ভগ্নীগণ পত্নীর ন্যায় ইন্দ্রকে সেবা করছে, অতএব লজ্জারহিত অর্থটি ভাল হয়।








৬৩ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে ইন্দ্র! তুমি সর্বাগ্রগণ্য; ভয়ের সময়ে তোমার শত্রু শোষণকারী বল দ্বারা তুমি দ্যাবা পৃথিবী ধারণ করেছিলে। বিশ্বের সমস্ত ভূত ও পর্বতসমূহ এবং অন্য যে সমস্ত মহৎ ও দৃঢ় পদার্থ আছে, তারাও নভঃস্থলে সূর্যরশ্মির ন্যায় তোমার ভয়ে কম্পিত হয়েছিল।
২। হে ইন্দ্র! তুমি যখন তোমার বিবিধ গতিযুক্ত অশ্ব রথে সংযোজিত কর, তখন স্তোতা তোমার হস্তে বজ্র স্থাপন করে, তুমি সে বজ্র দ্বারা শত্রুর অনভীপ্সিত কর্ম করে শত্রুদের বিনাশ কর। হে বহু লোকের আহূত ইন্দ্র! তুমি তা দিয়ে অনেক নগর ধ্বংস কর।
৩। হে ইন্দ্র তুমিই সত্য, তুমি এ সকল শত্রুর ধর্ষণকারী; তুমি ঋভূগণের অধিপতি, নরের হিতকারী; ও শত্রুহস্তা। সাংঘাতিক ও তুমুল সংগ্রামে তুমি দীপ্তিমান তরুণ কুৎসের (১) সহায় হয়ে শুষ্ণকে বধ করেছিলে।
৪। হে বৃষ্টি বর্ষণকারী, বজ্রী ইন্দ্র। তুমি যখন শত্রুকে বধ করেছিলে; হে শুর, অভীষ্ট বর্ষণাভিলাষী ও শত্রুবিজয়ী ইন্দ্র! তুমি যখন সংগ্রামে দস্যুদিগকে পরাঙ্মুখ করতঃ ধ্বংস করেছিলে, তখন তুমি কুৎসের সহায় হয়ে তাকে প্রসিদ্ধ যশ প্রেরণ করেছিলে।
৫। হে ইন্দ্র! তুমি কোন দৃঢ় ব্যক্তির হানি করতে ইচ্ছা কর না; তথাপি মনুষ্যগণ শত্রুদের দ্বারা উপদ্রুত হলে তুমি তাদরে অশ্ব বিচরণের জন্য চারিদিক খুলে দাও এবং হে বজ্রী! কঠিন বজ্র দ্বারা শত্রুদের বিনাশ কর।
৬। হে ইন্দ্র! যে সংগ্রামে যোদ্ধাগণ লাভ ও ধনপ্রাপ্ত হয় তাতে মনুষ্যেরা তোমাকে (সায়ার্থ) আহ্বান করে। হে বলবান ইন্দ্র! সংগ্রামে তোমার এ রক্ষণকার্যআমাদরে দিকে প্রসারিত হোক যেহেতু যোদ্ধাগণ তোমার রক্ষণ ভাজন।
৭। হে বজ্রিন! তুমি পুরুকুৎসের সহায় হয়ে যুদ্ধ করে সেই সপ্ত নগর ধ্বংস করেছ, তুমি সুদাস রাজার নিমিত্ত অংহা নামক শত্রুর ধন, যজ্ঞ কুশের ন্যায় আনায়াসে কর্তন করেছ। পরে হে রাজন! সে হব্যদাতা সুদাসকে সে ধন দিয়েছ (২)
৮। হে দেব! তুমি আমাদরে বিচিত্র অন্ন সমস্ত ভূমিতে জলের ন্যায় বর্ধিত কর। হে শুর! সকল দিকে যেমন জল ক্ষরিত হতে দিয়েছ, সেরূপ সে অন্ন দ্বারা আমাদের জীবন প্রদান করেছ।
৯। হে ইন্দ্র! তুমি অশ্বযুক্ত; গৌতমগণ তোমার উদ্দেশে ভক্তি পূর্বক মন্ত্রসমূহ উচ্চারণ করেছে; তুমি আমাদের বহুবিধ অন্ন প্রদান কর। যিনি কর্মদ্বারা ধন প্রাপ্ত হয়েছেন সে ইন্দ্র প্রাত:কালে শীঘ্র আসুন।

টীকাঃ
১। কুৎস সম্বন্ধে ৩৩ সুক্তের ১৪ ঋকের টীকা দেখুন। কিন্তু এখানে কুৎসা একজন যোদ্ধা বলে বর্ণিত হয়েছেন। The Dasyus are described as the enemies of Kutsa. Agreeably to the apparent sense of Dasyu, barbarian or one not Hindu Kutsa would be a prince who bore an active part in the subjugation of the orginal tribes of India. Wilson.
২। সুদাস সম্বন্ধে ৪৭ সুক্তের ৬ ঋকের টীকা দেখুন। পুরুকুৎসা রাজা মান্ধাতার পুত্র এরূপ পুরাণে দেখা যায়।








৬৪ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে নোধা! বর্ষণকারী, শোভনযজ্ঞ ও ফলসাধক মরুৎগণের উদ্দেশে সুন্দর স্তোত্র প্রেরণ কর। যে বাক্যদ্বারা বৃষ্টিধারার ন্যায় যজ্ঞস্থলে দেবগণকে অভিমুখ করা যায়, আমি ধীর ও কৃতাঞ্জলি হয়ে মনের সাথে সে বাক্যসমূহ প্রয়োগ করি।
২। মরুৎগণ অন্তরীক্ষ হতে উৎপন্ন হয়েছেন; তারা দর্শনীয়,পৌরুষসম্পন্ন এবং রুদ্রের পুত্র; তারা শত্রুবিজয়ী, পাপরহিত সকলের শোধক, সূর্যের ন্যায় দীপ্ত, সত্ত্বসমূহের ন্যায় বলপরাক্রমশালী, বৃষ্টিবিন্দুযুক্ত ও ঘোররূপ।
৩। রুদ্রের পুত্রগণ যুবা ও জরারহিত এবং যারা দেবগণকে হব্য দেন না (১) তাদের হন্তা; তারা অপ্রতিহতগতি এবং পর্বতের ন্যায় দৃঢ়াঙ্গ। তারা স্তোতৃগণকে অভীষ্ট দিতে ইচ্ছা করেন। পৃথিবীর ও দিব্যলোকের সমস্ত বস্তু দৃঢ় হলেও মরুৎগণ স্বকীয় বলে তা প্রচলিত করেন।
৪। শোভার নিমিত্ত মরুৎগণ নানাবিধ অলঙ্কার দ্বারা স্বশরীর অলঙ্কৃত করেন, শোভার নিমিত্ত বক্ষে সুন্দর হার ধারণ করেন এবং অংশ দেশে আয়ুধসমূহ ধারণ করেন। নেতা মরুৎগণ অন্তরীক্ষ হতে স্বকীয় বলের সাথে প্রাদুর্ভূত হয়েছেন।
৫। স্তোতৃগণকে ধনাধিপতি করে, মেঘাদিকে কম্পিত করে, হিংসককে বিনাশ করে মরুৎগণ স্বকীয় বলে বায়ু ও বিদ্যুৎ সৃষ্টি করেন; পরে মরুৎগণ সকলদিকে গমন করে ও সকলকে কম্পিত করে দ্যুলোকের উধঃঅর্থাৎ মেঘ দোহন করেন এবং জল দ্বারা তুমি সিঞ্চন করেন।
৬। যেরূপ ঋত্বিকগণ যজ্ঞে ঘৃত সিঞ্চন করেন; তারা অশ্বের ন্যায় বেগবান মেঘকে বর্ষণের নিমিত্ত বিনীত করেন এবং গর্জনকারী ও অক্ষয় মেঘকে দোহন করেন।
৭। হে মরুৎ! তোমরা মহৎ, প্রাজ্ঞ, সুন্দর দীপ্তিসম্পন্ন পর্বতের ন্যায় বলবান, এবং শীঘ্রগতি; তোমরা করযুক্ত গজের ন্যায় বন ভক্ষণ কর, যেহেতু তোমরা অরুণ বর্ণ শিখায় প্রচন্ড বল ধারণ করেছ।
৮। প্রকৃষ্ট জ্ঞানসম্পন্ন মরুৎগণ সিংহের ন্যায় নিনাদ করেন; সর্বজ্ঞ মরুৎগণ হরিণের ন্যায় সুন্দর; তারা শত্রুর বিনাশকারী, স্তোতার প্রীতিকারী এবং অহির ন্যায় ক্রোধযুক্ত এরূপ মরুৎগণ তাদের বাহন মৃগের সাথে (২) এবং আয়ুধের সঙ্গে শত্রুপীড়িত যজমানদের রক্ষা করতে যুগপৎ আসছেন।
৯। হে দল বদ্ধ মানুষের হিতকারী এবং শৌর্যশালী মরুৎগণ! তোমরা বলদ্বারা বিনাশক্ষম কোপযুক্ত হয়ে আকাশ ও পৃথিবী শব্দপূর্ণ কর। হে মরুৎগণ! তোমাদের তেজ নির্মল রূপের ন্যায় অথবা দর্শনীয় বিদ্যুতের ন্যায় রথের সারথি স্থানে অবস্থিতি করে।
১০। সর্বজ্ঞ, ধনাধিপতি, বলযুক্ত, মহৎ, শত্রুবিনাশকারী, অনন্তশক্তিধারী, বৃহৎ খাদ্যযুক্ত, নেতা মরুৎগণ বাহুতে ইষু ধারণ করেন।
১১। বৃষ্টি বর্ধনকারী মরুৎগণ সুবর্ণময় রথচক্র দ্বারা পথিস্থিত মেঘ সকলকে স্থান হতে উত্তোলিত করেন; তারা যজ্ঞবান দেবতাদের যজ্ঞস্থলে গমন করেন, স্বয়ংই শত্রুদের আক্রমণ করেন; নিশ্চল পদার্থ সঞ্চালন করেন; অন্যের অসাধ্য দ্রব্য এবং দীপ্তিমান আয়ুধ ধারণ করেন।
১২। শত্রুক্ষয়কারী, সকল বস্তুর শোধক, বৃষ্টিপ্রদ এবং সর্বদর্শী রুদ্রের পুত্র মরুৎগণকে আমরা স্তোত্র দ্বারা স্তুতি করি। ধুলিপ্রেরক ক্ষমতাশালী, ঋজীষ সোমপায়ী এবং অভীষ্টবর্ষী মরুৎগণের নিকট ধনের জন্য গমন কর।
১৩। হে মরুৎগণ! তোমরা যাকে আশ্রয় প্রদান করতঃ রক্ষা কর, সে পুরুষ বলে সকলকে অতিক্রম করে; সে অশ্ব দ্বারা অন্ন ও মানুষ দ্বারা ধন প্রাপ্ত হয়; সে সুন্দর যজ্ঞ করে ও ঐশ্বর্যশালী হয়।
১৪। হে মরুৎগণ! তোমরা যজমানদের সর্বকর্মকুশল, সংগ্রামে অজেয়, দীপ্তিমান, শত্রুবিনাশকারী, বলবান, প্রশংসাভাজন এবং সর্বজ্ঞ পুত্র প্রদান কর। এরূপ পুত্র এ পৌত্রকে আমরা শত বৎসর পোষিত করি।
১৫। হে মরুৎগণ! আমাদের স্থায়ী, বীর্যযুক্ত ও শত্রুবিজয়ী ধন দাও। এরূপ শতসহস্র ধনযুক্ত হলে আমাদের রক্ষার নিমিত্ত যারা কর্মের দ্বারা ধন প্রাপ্ত হয়েছেন এরূপ মরুৎগণ আসুন।

টীকাঃ
১। অভোগ্ধনঃ শব্দের অর্থ যে দেবান, হবির্ভির্ন ভোজয়ন্তি তেষাং হন্তারঃ। সায়ণ। কিন্তু আচার্য মক্ষমূলর এ রূপ লিখেছেন Abhog, not nurturing is a name of the rainless cloud.২। পুষতীভিঃ অর্থ মরুৎগণের বাহন বিচিত্রকায় হরিণরূপ মেঘ। পৃষত্য ইতি মরুতাং বাহনস্য আখ্যা। পূষতঃ শ্বেতবিন্দ্বঙ্কিতা মৃগা ইতি ঐতিহাসিকাঃ। নানাবর্ণা মেঘমালা ইতি নৈরুক্তাঃ। সায়ণ।




৬৫ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে অগ্নি! পশু অপহরণকারী চোরের ন্যায় তুমিও গুহায় অবস্থান কর মেধাবী ও সমান প্রীতিযুক্ত দেবগণ তোমার পদচিহ্ন লক্ষ্য করে অনুসরণ করেছিলেন; তুমি স্বয়ং হব্য সেবা কর ও দেবতাদের নিমিত্ত হব্য বহন কর; যজনীয় সমস্ত দেবগণ পলায়িত অগ্নির পলায়ন কার্যাদি অন্বেষণ করতে লাগলেন, পরে সকল দিকে অন্বেষণ হল, ভূমি স্বর্গের ন্যায় হল। অগ্নি যজ্ঞের কারণ স্বরূপ, উদকগর্ভে প্রাদুর্ভূত এবং স্তোত্রদ্বারা প্রবর্ধিত; উদকসমূহ সে অগ্নিকে গোপন করবার জন্য বর্ধিত হল।
৩। অগ্নি (অভিমত ফলের) পুষ্টির ন্যায় রমনীয়, ক্ষিতির ন্যায় বিস্তীর্ণ, পর্বতের ন্যায় সকলের ভোজয়িতা, জলের ন্যায় সুখকর। তিনি সংগ্রামে পরিচালিত অশ্বের ন্যায় ও সিন্ধুর ন্যায় শীঘ্রগামী। এরূপ অগ্নিকে কে নিবারণ করতে সমর্থ?
৪। ভ্রাতা যেরূপ ভগ্নীর হিতকর, সেরূপ অগ্নি সিন্ধুর বন্ধু; রাজা যেরূপ শত্রুকে নাশ করে, সেরূপ অগ্নি বন ভক্ষণ করেন; বায়ুচালিত হ{েয় অগ্নি যখন বন দগ্ধ করতে প্রবৃত্ত হন, তখন ভূমির সমস্ত (ঔষধিরূপ) লোম ছেদন করেন।
৫। জল মধ্যে উপবিষ্ট হংসের ন্যায় অগ্নি জলে ভিতর প্রাণধারণ করেন; ঊষা কালে জাগরিত হয়ে আলোক দ্বারা সকলকে চেতন্য প্রদান করেন এবং সোমের ন্যায় সকল ওষধি বর্ধিত করেন। তিনি শয়ান পশুর ন্যায় জলের মধ্যে সংকুচিত হয়ে ছিলেন, পরে বর্ধিত হলে তাহার প্রভা সুদুর বিস্তৃত হল।








৬৬ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। অগ্নি ধনের ন্যায় বিচিত্র, সূর্যের ন্যায় সকল বস্তুর দর্শয়িতা, প্রাণ বায়ুর ন্যায় জীবনরক্ষক ও পুত্রের ন্যায় হিতকারী; অগ্নি অশ্বের ন্যায় লোককে ধারণ করেন ও দুগ্ধবতী গাভীর ন্যায় উপকারী। দীপ্ত ও আলোক যুক্ত অগ্নি বন দগ্ধ করেন।
২। অগ্নি রমনীয় গৃহের ন্যায় ধন রক্ষণে সমর্থ, পক্ক যবের ন্যায় লোক বিজয়ী, ঋষির ন্যায় দেবগণের স্তোতা এবং লোকের প্রশংসনীয় এবং অশ্বের ন্যায় হর্ষযুক্ত। এরূপ অগ্নি আমাদরে অন্ন প্রদান করুন।
৩। দুষ্প্রাপ্যতেজা অগ্নি যজ্ঞকারীর ন্যায় ধ্রুব ও গৃহস্থিত জায়ার ন্যায় গৃহের ভূষণ। যখন অগ্নি বিচিত্র দীপ্তিমান হয়ে প্রজ্জ্বলিত হন, তখন তিনি শুভ্রবর্ণ আদিত্যের ন্যায়। তিনি প্রজাগণের মধ্যে রথের ন্যায় দীপ্তিযুক্ত ও সংগ্রামে প্রভাযুক্ত।
৪। প্রেরিত সেনার ন্যায় অথবা ধানুকীর দীপ্তিমুখ ইষুর ন্যায় অগ্নি শত্রুগণের ভয় সঞ্চার করেন; যা জন্মেছে ও যা জন্মাবে সে সমস্তই অগ্নি (১); অগ্নি কুমারীগণের প্রণয়ী ও বিবাহিতা স্ত্রীর পতি (২)।
৫। গাভীগণ যেরূপ গৃহে গমন করে সেরূপ আমরা জঙ্গম ও স্থাবর অর্থাৎ পশু ও ব্রীহি আদি উপহারের সাথে প্রদীপ্ত অগ্নির নিকট গমন করি। অগ্নি জল প্রবাহের ন্যায় ইতস্ততঃ জ্বালা প্রেরণ করেন ও নভস্থলে দর্শনীয় অগ্নির রশ্মি মিলিত হয়।

টীকাঃ
১। যমঃঅর্থ অগ্নি। যমোহগ্নিরুচ্যতে। সায়ণ। অথবা ইন্দ্র ও অগ্নি একেবারে উৎপন্ন হয়েছিলেন সেজন্য অগ্নিকে যম (অর্থাৎ যমজ) বলা হয়েছে। সায়ণ। কেননা বিবাহ সময়ে লাজাদি দ্রব্য দ্বারা অগ্নির হোম নিষ্পন্ন হলেই কন্যা আর কন্যা থাকে না, বিবাহিতা হয়। সায়ণ। বিবাহিতা নারী অগ্নির অর্চনা ও সেবায় সহায়তা করেন, এজন্য বোধ হয় অগ্নিকে বিবাহিত নারীর পতি বলা হয়েছে।








৬৭ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। রাজা যেরূপ জরা রহিত ব্যক্তিত্তে আদর করেন সেরূপ অরণ্যজাত ও নরের সহিৎ অগ্নি যজমানকে অনুগ্রহ করেন। অগ্নি রক্ষকের ন্যায় কার্যসাধক, কর্মীর ন্যায় ভদ্র, দেবগণের আহ্বানকারী ও হব্যের বহনকারী। তিনি শোভনকর্ম হোন।
২। অগ্নি সমস্ত হব্য রূপ ধন স্বীয় হস্তে ধারণ করে গুহার মধ্যে লুকিয়ে গেলে দেবগণ ভীত হয়েছিলেন, নেতা এবং কর্মধারয়িতা দেবগণ যখন হৃদয়ের কৃত মন্ত্র দ্বারা অগ্নির স্তুতি করলেন, তখন তারা অগ্নিকে পেলেন।
৩। অগ্নি অজাত পুরুষের ন্যায় পৃথিবী ও অন্তরীক্ষ ধারণ করে আছেন এবং সত্য মন্ত্র দবারা আকাশ ধারণ করেছেন। হে বিশ্বায়ু অগ্নি! পশুদের প্রিয় (বিচরণ) ভূমি রক্ষা কর এবং সঞ্চরণের অযোগ্য গুহাতে গমন কর।
৪। যে পুরুষ গুহাস্থিত অগ্নিকে জানে এবং যে যজ্ঞের ধারয়িতা অগ্নির নিকট উপস্থিত হয় এবং যারা যজ্ঞ সম্পাদন করতঃ অগ্নির স্তুতি করে, অগ্নি তাদরে শীঘ্রই ধনের কথা বলে দেন।
৫। যে অগ্নি ওষধিগণ মধ্যে তাদের নিজ নিজ গুণ নিহিত করেছেন ও মাতৃস্থানীয় ওষধিগণ মধ্যে উৎপন্ন পুষ্পফলাদি স্থাপিত করেছেন, ধীরগণ জল মধ্যস্থিত এবং জ্ঞানদাতা সে বিশ্বায়ু অগ্নিকে গৃহের ন্যায় পূজা করে কর্ম করে।



৬৮ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হব্যবাহক অগ্নি হব্য মিশ্রিত করে আকাশে উপস্থিত হয়ে ও স্থাবর জঙ্গম বস্তুকে ও রাতকে স্বীয় প্রভা দ্বারা প্রকাশিত করেন। অগ্নি সমস্ত দেবগণ মধ্যে দ্যুতিমান এবং স্থাবর জঙ্গমাদিতে ব্যাপ্ত আছেন।
২। হে দেব অগ্নি! তুমি শুষ্ক কাষ্ঠ হতে জ্বলন্ত হয়ে প্রাদুর্ভূত হলে সকল যজমানগণ তোমার কর্ম অনুষ্ঠান করে। তুমি অমর, স্তোত্র দ্বারা তোমাকে সেবা করে তারা সকলে প্রকৃত দেবত্ব লাভ করে।
৩। অগ্নি যজ্ঞস্থলে আগত হলে তার স্তুতি ও যজ্ঞ করা হয়; অগ্নি বিশ্বায়ু সকল (যজমানগণ) তার যজ্ঞ সম্পাদন করে। হে অগ্নি! যে তোমাকে হব্য দান করে বা যে তোমার কর্ম করতে শিক্ষা করে তুমি তার কৃত অনুষ্ঠান অবগত হয়ে তাকে ধন প্রদান কর।
৪। হে অগ্নি! তুমি মনুর অপতাগণের মধ্যে দেবগণের আহ্বানকারীরূপে অবস্থিতি কর; তুমিই তাদের ধনের স্বামী, তারা স্বীয় শরীরে পুত্রোৎপাদনার্থ শক্তি ইচ্ছা করেছিল এবং মোহ ত্যাগ করে পুত্রগণের সাথে চিরকাল জীবিত থাকে।
৫। পুত্র যেরূপ পিতার আজ্ঞা পালন করে, যজমানগণ সত্বর হয়ে সেরূপ অগ্নির শাসন শ্রবণ করে ও তার আদিষ্ট কর্ম করে। প্রভূত অন্নযুক্ত অগ্নি যজমানদের যজ্ঞের দ্বারভূত ধন প্রদান করেন। অগ্নি যজ্ঞরত গৃহে আসক্ত এবং আকাশকে নক্ষত্রযুক্ত করেছেন।






৬৯ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। শুভ্রবর্ণ অগ্নি ঊষার প্রণয়ী সূর্যের ন্যায় সকল পদার্থে প্রকাশক এবং দ্যুতিমান সূর্যের জ্যোতির ন্যায় স্বতেজে (দ্যাবা পৃথিবী) একত্রে পরিপুরিত করেন। হে অগ্নি! তুমি প্রাদুর্ভূত হয়ে কর্ম দ্বারা সমস্ত জগত পরিব্যাপ্ত কর; তুমি দেবগণের পুত্র হয়েও তাদরে পিতা।
২। মেধাবী, দর্পরহিত ও কর্তব্যাকর্তব্য জ্ঞানযুক্ত অগ্নি গাভীর স্থনের ন্যায় সমস্ত অন্ন সুস্বাদু করেন। জনপদে লোকহিতকর পুরুষের ন্যায় অগ্নি যজ্ঞে আহূত হয়ে এবং যজ্ঞস্থলে উপবেশন করে প্রীতি দান করেন।
৩। অগ্নি পুত্রের ন্যায় জন্মগ্রহণ করে গৃহে আনন্দ বিকাশ করেন এবং অশ্বের ন্যায় হর্ষযুক্ত হয়ে সংগ্রামে শত্রুগণকে অতিক্রম করেন। যখন মানুষের সাথে আমি একস্থাননিবাসী দেবতাগণকে আহ্বান করি, তখন হে অগ্নি! তুমি সকল দেবের দেবত্ব প্রাপ্ত হও।
৪। কেউ তোমার ব্রতাদি ধ্বংস করে না, যেহেতু তুমি সে সকল ব্রতের যজমানদের যজ্ঞফলরূপ সুখ প্রদান কর। যদি কেউ তোমার ব্রত নাশ করে, তা হলে সদৃশ নেতা মরুৎগণের সাথে তুমি সে বাধকগণকে পলায়িত কর।
৫। অগ্নি ঊষার প্রণয়ীসূর্যের ন্যায় আলোকবিশিষ্ট ও নিবাস হেতু এবং তার রূপ লোকের পরিচিত, তিনি এ (উপাসককে) অবগত হোন। তার লশ্মি স্বয়ং হব্য বহন করে যজ্ঞ গৃহদ্বারে ব্যাপ্ত হয়, পরে দর্শনীয় নভস্থলে গমন করে।

H




৭০ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। যে শোভনীয় দীপ্তিযুক্ত অগ্নি জ্ঞান দ্বারা প্রাপ্তব্য, যিনি সমস্ত দেবকার্য ও মনুষ্যের জন্মরূপ কর্মের বিষয় অবগত থেকে সকল কার্যে ব্যাপ্ত আছেন, তার নিকট প্রভূত অন্ন যাচ্ঞা করি।
২। যে অগ্নি জলের মধ্যে ও বনের মধ্যে ও স্থাবর পদার্থের মধ্যে ও জঙ্গমের মধ্যে অবস্থান করেন, তাকে কি যজ্ঞ গৃহে কি পর্বতের উপর, লোকে হব্য প্রদান করে। প্রজাবৎসল রাজা যেরূপ প্রজার হিতকর কাজ করেন, অমরঅগ্নিও সেরূপ আমাদের হিতকর কার্য সম্পাদন করেন।
৩। যে যজমান মন্ত্র দ্বারা অগ্নির পর্যাপ্ত স্তুতি করে, নিশায় প্রদীপ্ত অগ্নি তাকে ধন প্রদান করেন; হে সর্বজ্ঞ অগ্নি। তুমি দেবতাগণের ও মনষ্যগণের জন্ম অবগত আছ, অতএব সমস্ত ভূতজাতকে পালন কর।
৪। ঊষা ও রাত ভিন্নরূপ হয়ে অগ্নিকে বর্ধন করেন; স্থাবর ও জঙ্গম পদার্থ যজ্ঞ বেষ্টিত অগ্নিকে বর্ধন করে। দেবগণের আহ্বানকারী সে অগ্নি দেবযজন স্থানে উপবিষ্ট হয়ে সকল যজ্ঞকর্ম সত্য ফলযুক্ত করে আরাধিত হন।
৫। হে অগ্নি! আমাদের ব্যবহারযোগ্য গোসমূহকে উৎকৃষ্ট কর; সকল লোক আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য উপায়নরূপ ধন আহরণ করুক। মনুষ্যগণ বহু দেবযজন স্থানে তোমার বিবিধ পূজা করে এবংবুদ্ধ পিতার নিকট হতে পুত্রের ন্যায় তোমার নিকট হতে ধন প্রাপ্ত হয়।
৬। অগ্নি সফলকর্মা লোকের ন্যায় ধন অধিকার করেন, ধানুকীর ন্যায় শুর, শত্রুর ন্যায় ভয়স্কর এবং সংগ্রামে প্রজ্বলিত।






৭১ সুক্ত।। অনুবাদঃ
১। স্ত্রী যেরূপ স্বামীকে প্রীত করে সেরূপ একস্থানবর্তিনী ও আকাঙ্ক্ষিণী ভগিনীরূপ অঙ্গুলিগণ আকাঙ্ক্ষী অগ্নিকে হব্য প্রদান দ্বারা প্রীত করে। ঊষা প্রথমে কৃষ্ণবর্ণ ও পরে শুভ্রবর্ণ; সে ঊষাকে রশ্মিগণ যেরূপ সেবা করে সেরূপ অঙ্গুলি সকল অগ্নির সেবা করে।
২। অঙ্গিরা নামক আমাদের পিতৃগণ মন্ত্র দ্বারা অগ্নির স্তুতি করে বলবান ও দুঢ়াঙ্গ পণি (নামক অসুরকে) স্তুতি শব্দ দ্বারাই বিনাশ করেছিলেন এবং আমাদের নিমিত্ত মহৎ দ্যুলোকের পথ করেছিলেন। পরে তারা সুখকর দিবস, আদিত্য ও গো সমূহ প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
৩। অঙ্গিরা মহর্ষিগণ যজ্ঞ স্বরূপ অগ্নিকে ধনের ন্যায় ধারণ করেছিলেন। পরে যে সকল যজমানের ধন আছে এবং যারা অন্য বিষয়াভিলাষ ত্যাগ করে অগ্নিকে ধারণ করেন ও অগ্নি সেবায় রত থাকেন, তারা হব্য দ্বারা দেব ও মনুষ্যগণের শ্রীবুদ্ধি সম্পাদন করে অগ্নির অভিমুখে গমন করেন (১)।
৪। মাতরিশ্বা (২) মথিত অগ্নি শুভ্রবণ হয়ে সকল যজ্ঞগৃহে প্রাদুভূত হন; তখন সুহৃৎ রাজা প্রবল রাজার নিকটে যেরূপ স্বীয় লোককে দূত কর্মে নিয়োজিত করে, সেরূপ ভৃগু ঋষির ন্যায় যজ্ঞসম্পাদক যজমান অগ্নিকে দূত কর্মে নিযুক্ত করেন।
৫। যজমান যখন মহান ও পালনকারী দেবকে হব্যরূপ রস প্রদান করেন, তখন হে অগ্নি! স্পর্শনকুশল শত্রুগণ তা জেনে পলায়ন করে। ইষুবিক্ষেপী অগ্নি পলায়মান রাক্ষসগণের প্রতি তার শত্রু বিনাশক ধনু হতে দীপ্তিমান বাণ নিক্ষেপ করেন; এবং দীপ্যমান অগ্নি স্বীয় দুহিতা ঊষাতে (৩) স্বীয় দীপ্তি স্থাপন করেন।
৬। হে অগ্নি! স্বীয়, যজ্ঞগৃহে যে যজমান মর্যাদার সাথে তোমাকে সমস্তাৎ প্রজ্বলিত করে এবং অনুদিন কামনা করে তোমাকে অন্ন প্রদান করে, হে দ্বিবর্হা (৪) অগ্নি! তুমি তার অন্ন বর্ধিত কর। যুদ্ধার্থী যে পুরুষকে রথের সাথে যুদ্ধে প্রেরণ কর, সে ধন প্রাপ্ত হোক।
৭। যেরূপ মহতী সপ্ত নদী (৫) সমুদ্র অভিমুখে প্রধারবত হয়, সেরূপ হব্যের অন্ন অগ্নিকে প্রাপ্ত হয়। আমাদের জ্ঞাতি আমাদের অন্নের ভাগ পান না (অর্থাৎ আমাদের প্রচুর অন্ন নেই); অতএব হে অগ্নি! তুমি প্রকৃষ্ট ধন জেনে দেবগণকে জ্ঞাপিত কর।
৮। অগ্নির বিশুদ্ধ ও দীপ্তিমান তেজ অন্নলাভার্থ নৃপতিকে প্রাপ্ত হোক; অগ্নি গর্ভনিষিক্ত রেতঃ হতে বলবান অনিন্দনীয় যুবা ও শোভনকর্মা পুত্র উৎপন্ন করুন ও যাগাদি কর্মে প্রেরণ করুন।
৯। মনের ন্যায় শীঘ্রগামী যে সূর্য স্বর্গীয় মার্গে একাকী গমন করেন, তিনি সদ্যই অনেক ধন প্রাপ্ত হন; শোভমান এবং সুবাহু মিত্র ও বরুণ আমাদের গাভীগণের প্রীতিকর অমৃতবৎ দুগ্ধ রক্ষা করতঃ অবস্থান করেন।
১০। হে অগ্নি! আমাদের পৈতৃক সৌহদ্য বিনাশ করো না, যেহেতু তুমি অতীতদর্শী এবং বর্তমান বিষয়ও জান। সূর্য রশ্মি যেরূপ অন্তরীক্ষকে আচ্ছাদিত করে, সেরূপ জরা আমাকে বিনাশ করছে; বিনাশহেতু জরা যাতে না আসতে পারে সেরূপ কর।

টীকাঃ
১। This and the preceding stanza are corroborative of the share borne by the Angirasas in the organisation, if not in the origination of the worship of fire. Wilson. পন্ডিতবর মিউয়রও বিবেচনা করেন যে, মনু, অঙ্গিরা ভৃগু অথর্বা, দধীচি প্রভৃতি কয়েকটি ঋষিবংশ দ্বারা ভারতবর্ষে অগ্নিহোমাদি অনেকটা বিস্তারিত হয়েছিল।
২। ব্যানবৃত্তিরূপেণ অবস্থিতো মুখ্যপ্রাণঃ। সায়ণ। কিন্তু মাতরিশ্বা সম্বন্ধে ৬০ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।
৩। দুহিতরি দুহিতৃবৎ সমনন্তরভাবিনাং। সায়ণ। রাত্রি অগ্নির সযয়, ঊষা রাত্রের পর উৎপন্ন, এ জন্য ঊষাকে অপ্নির দুহিতা বলা হয়েছে। ১৩ সুক্তের ১ ও ২ ঋকে এরূপ উপমা দেখুন।
৪। দ্বিহা দ্বয়োম ধ্যমোত্তমস্থানয়োবৃংহিতো বর্ধিতঃ। সায়ণ।
৫। ঋগ্বেদে স্থানে স্থানে সপ্তনদীর উল্লেখ পাওয়া যায়, সেগুলি সিন্ধুনদী ও তার ছয়টি শাখা। ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের ৭৫ সুক্তের ৫ ঋকে দশটি নাম আছে যথা- গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী, শতুদ্রী, পরুষ্ণী, মরুদ্ধধা, অসিক্নী, বিতস্তা, আর্জীকীয়া ও সুযোমা। এ তালিকার শতুদ্রী আদি ছয়টি নদী সিন্ধু নদীর শাখা এবং সুযোমা সিন্ধু নদীর আর একটি নাম মাত্র।








৭২ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। জ্ঞানী ও নিত্য অগ্নির মন্ত্র আরম্ভ কর; তিনি নরের হিতসাধক ধন হস্তে ধারণ করেন। অগ্নি স্তোতৃগণকে অমৃত প্রদান করে থাকেন; অগ্নিই সর্বোৎকৃষ্ট ধনের অধিপতি।
২। সকল অমর দেবগণ মোহশূন্য মরুৎগণ অনেক কামনা করেও আমাদের প্রিয় ও সর্বস্থানব্যাপী অগ্নিকে প্রাপ্ত হন নি; পদব্রজে গমন করতে করতে শ্রান্ত হয়ে এবং অগ্নির কার্য সমূহ লক্ষ্য করে তাঁরা অবশেষে অগ্নির সদনে উপস্থিত হলেন।
৩। হে দীপ্তিমান অগ্নি! দীপ্তিমান মরুৎগণ তিন বছর তোমাকে ঘৃতের দ্বারা পূজা করেছিলেন; পরে মরুৎগণ যজ্ঞ প্রয়োগযোগ্য নাম ধারণ করলেন ও উৎকৃষ্ট জন্ম গ্রহণ করে (অমর) শরীর ধারণ করলেন।
৪। যজ্ঞার্হ দেবগণ বৃহৎ দ্যুলোকে ও পৃথিবীতে বর্তমান থেকে রুদ্রের উপযুক্ত স্তোত্র করেছিলেন; মরুৎগণ ইন্দ্রের সাথে উত্তম স্থানে নিহিত অগ্নিকে জেনে তাকে লাভ করেছিলেন।
৫। হে অগ্নি! দেবগণ তোমাকে সম্যক জ্ঞাত হয়ে উপবিষ্ট হলেন এবং পত্নীদের সাথে সম্মুখস্থ জানুযুক্ত অগ্নির (১) পূজা করলেন; পরে সুহৃং অগ্নিকে দর্শন করে তোমার দ্বারা রক্ষিত হয়ে সুহৃৎ দেবগণ আপনাদের শরীর শোষণ করতৎ যজ্ঞ করলেন।
৬। যজমানগণ তোমাতে নিহিত এক বিংশতি নিগুঢ় পদ জেনেছে এবং তা দিয়ে তোমাকে অর্চনা করে; তুমিও যজমানগণের প্রতি সেরূপ স্নেহযুক্ত হয়ে তাদের পশু ও স্থাবর জঙ্গম রক্ষা কর।
৭। হে অগ্নি! সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় অবগত হয়ে প্রজাগণের জীবন ধারণার্থে ক্ষুন্নিবৃত্তি কর; আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে যে মার্গে দেবগণ গমন করেন তা অবগত হয়ে তুমি অনলস দূতরূপে হব্য বহন কর।
৮। শোভন কর্মযুক্তা মহতী সপ্ত নদী তোমার প্রসাদে দ্যুলোক হতে নির্গত হয়েছেন, যজ্ঞবিৎ অঙ্গিরাগণ ধনের গমনপথ তোমার নিকট জেনেছিলেন। তোমার প্রসাদে সরমা তাদের নিকট হতে প্রচুর গোদুগ্ধ লাভ করেছিল, তা দিয়ে মনুষ্যগণ পালিত হয়।
৯। আদিত্যগণ অমরত্বসিদ্ধির জন্য উপায় উদ্ভাবন করতৎ পতন প্রতিরোধের জন্য যে সমস্ত কার্য সংস্থাপিত করেছেন, অদিতিরূপ জননী পৃথিবী, সমস্ত জগৎ ধারণের নিমিত্ত সে মহানুভব পুত্রদের সাথে যে বিশেষ মহত্ত্বপ্রকাশ প্রাপ্ত হয়েছিলেন, হে অগ্নি! তুমি হব্য ভক্ষণ করেছিলে এটি তার কারণ।
১০। এ অগ্নিতে (যজমানগণ) সুন্দর যজ্ঞসম্পদ স্থাপন করেছেন এবং যজ্ঞের চক্ষুরূপ ঘৃত দিয়েছেন। পরে অমরগণ আগমন করেন, তা দেখে হে অগ্নি! তোমার উজ্জ্বল শিখা বেগবতি নদীর ন্যায় সকল দিকে প্রসারিত হয় এবং দেবগণও তা জানতে পারেন।

টীকাঃ
১। জানযুক্তং ত্বাং নমস্যন অপূজয়ন। সায়ণ। কিন্তু পন্ডিতবর উইলসন, অনুবাদ করেছেন The gods ** with their wives paid reverential adoratioa to thee upon their knees.






৭৩ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। পৈত্রিক ধনের ন্যায় অগ্নি অন্নদাতা; শাস্তাভিজ্ঞ ব্যক্তির শাসনের ন্যায় অগ্নি নেতা; উপবিষ্ট অতিথির ন্যায় প্রীতিভাজন; এবং হোতার ন্যায় যজমানের গৃহ বর্ধিত করেন।
২। দ্যুতিমান সূর্যের ন্যায় যথার্থদর্শী অগ্নি স্বীয় কর্ম দ্বারা সমস্ত সংগ্রাম হতে রক্ষা করেন; যজমানগণের প্রশংসিত অগ্নি প্রকৃতির স্বরূপের ন্যায় পরিবর্তন রহিত; আত্মার ন্যায় সুখকর; এরূপ অগ্নি যজমানগণ কর্তৃক ধারণীয়।
৩। দ্যুতিমান সূর্যের ন্যায় অগ্নি সমস্ত জগৎ ধারণ করেন; অনুকুলমিত্র বিশিষ্ট রাজার ন্যায় অগ্নি পৃথিবীতে বাস করেন; লোকে অগ্নির সম্মুখে পিতার গৃহে পুত্রের ন্যায় উপবেশন করে; অগ্নি পতিসেবিতা এবং অনিন্দনীয়া নারীর ন্যায় শুদ্ধ।
৪। হে অগ্নি! লোকে নিরুপদ্রব স্থানে স্বীয় গৃহে অনবরত কাষ্ঠ দ্বারা প্রজ্বলিত করে তোমাকে সেবা করে, বহু যজ্ঞে অন্ন প্রদান করে, তুমি বিশ্বয়ু হয়ে আমাদের ধন প্রদান কর।
৫। হে অগ্নি! ধনযুক্ত যজমানগণ অন্ন লাভ করুক, যে বিদ্বানগণ তোমার স্তব করে ও হব্যদান করে, তারা দীর্ঘ আয়ু প্রাপ্ত হোক। আমরা সংগ্রামে যেন শত্রুর অন্ন প্রাপ্ত হই, পরে যশের জন্য দেবগণকে তাদের অংশ অর্পণ করি।
৬। নিত্যদুগ্ধা ও তেজস্বিনী গভীগণ অগ্নিকে কামনা করে যজ্ঞস্থানে অগ্নিকে দুগ্ধ পান করায়। প্রবাহিনী নদী সকল অগ্নির নিকট অনুগ্রহ যাচ্ঞা করে পর্বতসমীপে দূরদেশ হতে প্রবাহিত হয়।
৭। হে দ্যুতিমান অগ্নি! যজ্ঞার্হ সমস্ত দেবগণ তোমার অনুগ্রহ যাচ্ঞা করে তোমার উপর হব্য স্থাপন করেছেন; পরে (ভিন্ন ভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য) ঊষা ও রাত্রিকে ভিন্নরূপ করেছেন: রাতকে কৃষ্ণবর্ণ ও উষাকে অরূণ বর্ণ করলেন।
৮। তুমি যে মানুষদের অর্থলাভাথ যজ্ঞকর্মে প্রেরণ কর, তারা ও আমরা ধনী হব। তুমি আকাশ ও পৃথিবী ও অন্তরীক্ষ পরিপূরিত করছ এবং সমস্ত জগৎ ছায়ার ন্যায় রক্ষা করছ।
৯। হে অগ্নি! তোমার দ্বারা রক্ষিত হয়ে আমরা আমাদের অশ্ব দ্বারা শত্রুর অশ্ব বধ করব; আমাদের যোদ্ধা দ্বারা শত্রুর যোদ্ধা ও আমাদের বীরগণ দ্বারা শত্রুর বীরগণকে বধ করব; আমাদের বিদ্বান পুত্রগণ পৈত্রিক ধনের স্বামী হয়ে শত বছর জীবন ভোগ করুক।
১০। হে মেধাবী অগ্নি! আমাদের স্তোত্র সকল তোমার মনের ও অন্ত:করণের প্রিয় হোক। দেবগণের সন্তজনীয় অন্ন তোমাতে স্থাপন করে আমসরা যেন তোমার দারিদ্র্যবিনাশী ধন রক্ষা করতে পারি।








৭৪ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। যে অগ্নি দূরে থেকেও আমাদের স্তুতি শ্রবণ করেন, তাকে আমরা যজ্ঞে আগমনপূর্বক স্তুতি করি।
২। বিনাশকারী শত্রুগণ সঙ্গত হলে চিরন্তন অগ্নি হব্যদাতা যজমানের নিমিত্ত ধন রক্ষা করেন।
৩। অগ্নি উৎপন্ন হলেই সকল লোকে তার স্তব করুক; অগ্নি শত্রুহস্তা ও যুদ্ধে শত্রুধন জয় করেন।
৪। হে অগ্নি! যে যজমানের যজ্ঞগৃহে তুমি দেবগণের দূত হয়ে তাদের ভোজনার্থ হব্য বহন কর এবং যজ্ঞ শোভনীয় কর।
৫। হে বলের পুত্র অঙ্গিরা! মনুষ্য সকল সে যজমানকেই শোভন দেবযুক্ত, শোভন হব্যযুক্ত ও শোভন যজ্ঞযুক্ত বলে থাকে।
৬। হে জ্যোতির্ময় অগ্নি! তুমি দেবগণকে এ যজ্ঞে স্তুতি গ্রহণার্থ আমাদের সমীপে নিয়ে এস ও ভোজন করবার নিমিত্ত হব্য প্রদান কর।
৭। হে অগ্নি! যখন তুমি দেব গণের দূতরূপে গমন কর, তখন তোমার গমনশীল রথে অশ্বের শব্দ শ্রুত হয় না।
৮। যে পুরুষ পূর্ব হতে নিকৃষ্ট, সে তোমাকে হব্য দান করে তোমার দ্বারা রক্ষিত ও অন্নযুক্ত হয়ে লজ্জারহিত (অর্থাৎ ঐশ্বর্যশালী) হয়।
৯। হে দ্যুতিমান অগ্নি, যে যজমান দেবগণকে হব্য প্রদান করে, তাকে বহুল দীপ্ত ও উত্তম বীর্যযুক্ত ধন দান কর।






৭৫ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে অগ্নি! মুখে হব্য গ্রহণ করে দেবগণের অতিশয় প্রীতি কর ও অতি বিস্তীর্ণ আমার স্তোত্র গ্রহণ কর।
২। হে অঙ্গিরাশ্রেষ্ঠ এবং মেধাবীশ্রেষ্ঠ। আমরা তোমার প্রীতিকর ও গ্রহণযোগ্য স্তুতি সম্পাদন করি।
৩। হে অগ্নি! মনুষ্যের মধ্যে কে তোমার (যোগ্য) বন্ধু? কে তোমার যজ্ঞ করতে সমর্থ? তুমি কে? কোন স্থানে অবস্থান কর?
৪। হে অগ্নি! তুমি সকল লোকের বন্ধু, তুমি প্রিয়মিত্র। তুমি সখাগণের স্তুতিভাজন সখা।
৫। হে অগ্নি! আমাদের নিমিত্ত মিত্র ও বরুণকে অর্চনা কর ও দেবগণকে পূজা কর। বৃহৎ যজ্ঞ সম্পাদন কর ও স্বকীয় (যজ্ঞ) গৃহে গমন কর।

(C) https://www.ebanglalibrary.com
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।