০৩ জানুয়ারী ২০১৮

প্রশ্ন: মায়া কি ? মানুষ মায়ায় কেন পড়ে ?

 ☜ মায়া হল ভগবানের একটি শক্তি । যা মানুষকে জড়জগতে আবদ্ধ করে রাখে । তার থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায় না । সে মায়া সব ভুলিয়ে দেয় । মায়ার কারণে মানুষ সংসারে আবদ্ধ হয়ে পরে । আর এটা আমার , আমি এই করতে থাকে । যার কারণে সে কর্ম্মবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়ে । যার কারণে তাকে বারবার জন্মগ্রহণ করতে হয় সেই কর্ম্মফল ভোগ করার জন্য । মানুষ পরিবারের জন্য শ্রম করে । নিজের সন্তান স্ত্রী মা বাবা ভাই বোন সবার জন্য । কত পরিশ্রম করে । জীবন সংসারে কঠোর সংগ্রাম করতে থাকে । মায়ার কারণে সে ভগবানকে ভুলে যায় । কি জন্য এই মনুষ্য দেহ লাভ করেছে তা বুঝতে পারে না । ভোগ , লোভ , লালসা , কামনা , বাসনা , হিংসা , অহংকার অর্থাৎ এই সমস্ত পাপ করতেই থাকে । এখন আপনি বলবেন আমি তো পরিবারের সুখের জন্য করছি যা আমার কর্ত্তব্য । কিন্তু যখন আপনি অক্ষম হবেন তখন সেই পরিবার আপনাকে দেখবে না ।

 ☜ যাদের জন্য এত পরিশ্রম তারাই সময় শেষ হলে আপনাকে আর ভালবাসবে না । যখন আপনার  ☜কর্ম্মক্ষমতা কমে যাবে । তখন বুঝতে পারবেন সারা জীবন গাধার মত পরিবারের জন্য এত কিছু করলেন কিন্তু জীবনের শেষ মুর্হূতে কেউ আপনাকে দেখছে না । আপনি এই সংসারের মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন , যিনি আপনার হৃদয়ে পরমাত্মা রূপে আছেন , যিনি আপনার শ্বাস প্রশ্বাস , যিনি আপনাকে সঠিক পথে নিয়ে আসে , সে পরমেশ্বর ভগবানকে আপনি ভুলে গেলেন । ডাকার সময় তো কত ছিল । কিন্তু সংসারের মোহে আপনি ডাকতে পারলেন না । পরিবারের সুখের জন্য নিজে কিছু করতে পারলেন না ।

 ☜ বেদান্তে বলা হয়েছে যে " মায়া " শব্দের উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত " মা " অর্থাৎ নয় , এবং ' ইয়া ' অর্থাৎ সেটা শব্দদ্বয় থেকে! বেদান্তের এই রহস্যময় জ্ঞানের মূলে আছে ব্রক্ষান্ডের পরম সত্য , যা সাধারণ মানুষের উপলদ্ধির বাইরে । সাধারণ মানুষের চিরাচরিত জ্ঞান এবং বাস্তবতা হলো সেই পরম সত্যের এক ভগ্নাশ মাত্র । অথচ এটাকেই আমরা " সম্পূর্ণ জ্ঞান " হিসাবে ভাবি । এই অসম্পূর্ণাতাকেই বোঝাতেই " মায়া ' শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে অর্থাৎ যা ঘটছে সেটা সম্পূর্ণ নয় ।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতায় অর্জ্জুনকে বলেছিলেন যে আমার এই মায়া অতিক্রম করা অত্যন্ত কঠিন । কিন্তু চেষ্টা করলে অসম্ভম নয় । মানুষ তিনগুণ দ্বারা আবদ্ধ হয়ে কর্ম্ম করছে , স্বত্ত্বগুণ ,রজগুণ এবং তমোগুণ । এই তিনগুণের উদ্ধে যেতে পারলে মানুষ মুক্তিলাভ করতে পারবে । আর তাকেই যোগী বলা হয় । আর যিনি তিনগুণের উদ্ধে যান তিনি মুক্তি লাভ করে ভগবানের ধাম প্রাপ্ত হোন ।

 ☜ মায়া থেকে বাঁচতে হলে কি করতে হবে ?

এই সংসার হল অনিত্য অর্থাৎ মায়াবদ্ধ । যার কারণে একে অপরের সাথে জড়িয়ে পড়ে । পরিবার, সমাজ ইত্যাদি সকলের সাথে কর্ম্ম করতে থাকে । কিন্তু ভগবানের ধাম হল ' নিত্য ' যেখানে গেলে আর এই জন্ম - মৃত্যু - জরা - ব্যাধিতে পড়তে হয় না । সেখানে ভগবান নিত্য বিরাজমান । প্রকৃত আনন্দ হল সেখানে আর এখানে দুদিনের সুখের জন্য কত পরিশ্রম করতে হচ্ছে । বিনিময়ে কি পাচ্ছি আমরা ? যখন কোন বিষয় অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে তখন দুঃখ কষ্ট উপস্থিত হয় । তাই যতটুকু পাওয়া সম্ভব ততটুকুতে সন্তুষ্ঠু থাকাই উত্তম । কেননা অতিরিক্ত চাইতে গেলে শুধু কষ্ট ছাড়া আর কিছু পাওয়া যাবে না । তাই এই মানবজন্মে মুক্তি লাভ করতে চাইলে আজকে থেকে ভগবানের ভজন সাধনে মন দিতে হবে । আর যারা এখন ছোট ছেলে মেয়ে তাদের মা বাবার উচিত এখন থেকে ভগবানের কথা বলা । ভগবদ্গীতা পড়ে শুনানো , রামায়ণ , মহাভারতের সঠিক কথা তাদের বলুন তাহলে দেখবেন তাদের আগ্রহ কেমন বেড়ে যায় । শুধু জাগতিক শিক্ষা দিলে তো আর সব হয়ে গেল না । পারমাত্মিক জ্ঞানও দিতে হবে । তাদের মন্দিরে নিয়ে যান ।

 ☜ নিরন্তর ভগবানকে স্মরণ করতে হবে । তার আগে নিজে নিজেকে নিজের মনকে , বুদ্ধিকে , আশাকে, ইচ্ছাকে , বুদ্ধিকে , জ্ঞানকে নিজের সমস্ত কিছু ভগবানের প্রতি সমর্পন করতে হবে । আর তা হলে ভক্তি আসবে । নিয়মিত ভগবানকে স্মরণ করতে হবে । ভগবানের নাম কীর্তন জপ করতে হবে । গীতা পাঠ করতে হবে । একাগ্রচিত্তে ভগবানকে ডাকতে হবে । আপনি কর্ম্ম করেন কিন্তু কর্ম্মের ফলের আশা করবেন না । যদি ফলের আশা না করে শুধুমাত্র আপনার কর্ত্তব্য কর্ম্ম করেন তাহলে আপনাকে ফল ভোগ করতে হবে না । ফল তো ঈশ্বর দান করেন । তাই সবকিছু ভগবানের প্রতি সমর্পন করে দিয়ে কেবল মাত্র ভগবানের উদ্দেশ্যে কর্ম্ম করেন । মনে রাখবেন সবকিছু নিয়তি নিধারণ করে রেখেছেন আপনি কেবল নিমির্ত্ত মাত্র । কিন্তু কখনো কর্ম্ম ত্যাগ করবেন না । কারণ যিনি কর্ম্ম ত্যাগ করেন তিনি প্রকৃত যোগী নন ।

 ☜ তাই প্রতিদিন হরিনাম জপ করুন । গীতা পাঠ করুন । একাদশী পালন করুন । ভগবানকে প্রতিমুর্হূতে স্মরণ করুন । তাহলে মন শান্ত হবে /তখন বুঝতে পারবেন কেন কর্ম্ম করতে হবে ? কিভাবে করতে হবে ? কার উদ্দেশ্যে করতে হবে ? এবং কার জন্য করতে হবে ?

(C) Anup Mondal
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।