০৫ জানুয়ারী ২০১৮

ঋগ্বেদ সংহিতা - প্রথম মণ্ডলঃবিভিন্ন ঋষিঃ সুক্তঃ ৭৬-১০০

৭৬ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে অগ্নি! তোমার মনস্তুষ্টি করবার কি উপায় আছে? তোমার সুখকর স্তুতিই বা কিরূপ? তোমার ক্ষমতার পর্যাপ্ত যজ্ঞ কে করতে পারে? কিরূপ বুদ্ধি দ্বারাই বা তোমাকে হব্য প্রদান করব?
২। হে অগ্নি! এ যজ্ঞে এস; দেবগণকে আহ্বান করত উপবেশন কর। তুমি আমাদের পুরোগামী হও, কেন না তোমাকে কেউ হিংসা করতে পারে না। সমস্ত আকাশ ও পৃথিবী তোমাকে রক্ষা করুক এবং তুমি দেবগণকে অত্যন্ত প্রীত করবার জন্য পূজা কর।
৩। হে অগ্নি! সমস্ত রাক্ষসগণকে দহন কর এবং হিংসকগণ হতে যজ্ঞ রক্ষা কর। সোমপালক ইন্দ্রকে তোমার হরি নামক অশ্বদ্বয়ের সঙ্গে এ যজ্ঞে আন; আমরা সুফলদাতা ইন্দ্রকে আতিথ্য প্রদর্শন করব।
৪। যে অগ্নি মুখ দ্বারা হব্য বহন করেন, তাকে অপত্যাদিফলযুক্ত স্তোত্র দ্বারা আহ্বান করি। হে অগ্নি! তুমি অন্য দেবগণের সাথে উপবেশন কর এবং হে যজনীয় অগ্নি! তুমি হোতার ও পোতার কর্ম নির্বাহ কর; তুমি ধনের নিয়ন্তা ও জনয়িতা হয়ে আমাদের প্রবুদ্ধ কর।
৫। তুমি মেধাবী গণের মধ্যে মেধাবী হয়ে যেরূপ মেধাবী মনুর যজ্ঞে হব্য দ্বারা দেবগণের পূজা করেছিলে, সেরূপ হে হোমনিষ্পাদক সত্য অগ্নি! তুমি এ যজ্ঞে দেবগণকে আনন্দ কারী জ্বহু দ্বারা পূজা কর।


৭৭ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। যে অগ্নি অমর, সত্যবান, দেবগণের আহ্বানকারী ও যজ্ঞসম্পাদক, ও যিনি মনুষ্যগণের মধ্যে বর্তমান থেকে দেবগণকে হবিযুক্ত করেন, সে অগ্নির অনুরূপ হব্য কি রূপে প্রদান করব? তেজস্বী অগ্নিকে সকল দেবগণের উপযুক্ত কি স্তুতি করব।
২। যে অগ্নি যজ্ঞে অত্যন্ত সুখকারী ও যথার্থদর্শী ও দেব গণের আহ্বানকারী, তাকেই স্তোত্র দ্বারা আমাদের অভিমুখী কর। যখন অগ্নি মনুষ্যের নিমিত্ত দেবগণের নিকট গমন করেন, তখন তিনি দেবগণকে অবগত হন ও মনের সঙ্গে পূজা করেন।
৩। অগ্নি যজ্ঞের কর্তা, অগ্নি বিশ্বের উপসংহর্তা এবং উৎপাদয়িতা; অগ্নি সখার ন্যায় অলব্ধ ধন প্রদান করেন। দেবাভিলাষী প্রজাগণ সে দর্শনীয় অগ্নির নিকট গমন করে অগ্নিকেই যজ্ঞের প্রথম দেব বলে স্তুতি করে।
৪। অগ্নি নেতৃদের মধ্যে উৎকৃষ্ট নেতা ও শত্রুগণের বিনাশকারী। অগ্নি আমাদের স্তুতি ও অন্নযুক্ত যজ্ঞ কামনা করুন এবং যে ধনশালী ও বলশালী যজমানগণ অন্ন প্রদান করে অগ্নির মননীয় স্তোত্র ইচ্ছা করে, অগ্নি তাদেরও স্তুতি কামনা করুন।
৫। যজ্ঞসম্পন্ন ও সর্বজ্ঞ অগ্নি এ প্রকারে মেধাবী গোতমাদি ঋষি গণ কর্তৃক স্তুত হয়েছিলেন; অগ্নি তাদের দ্যুতিমান সোমরস পান করিয়েছেন ও অন্ন ভোজন করিয়েছেন। অগ্নি আমাদের সেবা জ্ঞাত হয়ে পুষ্টি প্রাপ্ত হন।

HYMN LXXVII. Agni.


৭৮ সুক্ত।।

অনুবাদঃ হে প্রজ্ঞাযুক্ত ও সর্বদর্শী অগ্নি! গোতম বংশীয়গণ তোমাকে স্তুতি করেছে। দ্যুতিমান স্তোত্র দ্বারা আমরা তোমার স্তুতি করি।
২। ধনাকাঙ্ক্ষী হয়ে গোতম স্তুতি দ্বারা যে অগ্নির সেবা করেন, সে অগ্নিকে দ্যুতিমান স্তোত্র দ্বারা পুনঃ পুনঃ স্তুতি করি।
৩। অঙ্গিরার ন্যায় সর্বাপেক্ষা অধিকতর অন্নদাতা অগ্নিকে আহ্বান করি ও দ্যুতিমান স্তোত্র দ্বারা স্তুতি করি।
৪। হে অগ্নি! তুমি দস্যুগণকে স্থান ভ্রষ্ট কর, তুমি সর্বাপেক্ষা শত্রুহস্তা, তোমাকে দ্যুতিমান স্তোত্র দ্বারা স্তুতি করি।
৫। আমরা বহুগণ বংশীয়, আমরা অগ্নিকে মাধুর্যযুক্ত বাক্য প্রয়োগ করি ও দ্যুতিমান স্তোত্র দ্বারা স্তুতি করি।








৭৯ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। সুবর্ণকেশ বিশিষ্ট অগ্নি (বিদ্যুৎরূপে) হননশীল মেঘকে কম্পিত করেন ও বায়ুর ন্যায় শীঘ্রগামী তিনি সুন্দর দীপ্তিযুক্ত হয়ে মেঘ হতে বারি বর্ষণ করতে জানেন। ঊষা সেটি জানে না, উষা অন্ন সম্পন্ন সরল নিজকর্মরত প্রজার মেঘকে তাড়িত করে, কৃষ্ণবর্ণ মেঘ বর্ষণশীল ও গর্জন করেছে এবং সুখকর ও হাস্যযুক্ত বৃষ্টি বিন্দুর সাথে আগমন করছে। বৃষ্টি পতিত হচ্ছে মেঘ গর্জন করছে।
৩। যখন অগ্নি জগৎকে বৃষ্টির জল দ্বারা পুষ্ট করেন এবং জলের ব্যবহারের সরল উপায় সমূহ দেখিয়ে দেন, তখন অর্যমা, মিত্র, বরুণ ও সকল দিকগামী মরুৎগণ মেঘের উদকোৎপত্তি স্থানের আচ্ছাদন উদ্ঘাটিত করেন।
৪। হে বলের পুত্র অগ্নি! তুমি বহু গোযুক্ত অন্যের ঈশ্বর; হে সর্বভূতজ্ঞ। আমাকে প্রভূত অন্ন দাও।
৫। দীপ্তিযুক্ত নিবাসস্থানদাতা ও মেধাবী অগ্নি স্তোত্রদ্বারা প্রশংসনীয়। হে বহুমুখ অগ্নি! আমাদের যাতে ধনযুক্ত অন্ন হয়, সেরূপে দীপ্তি প্রকাশ কর।
৬।হে উজ্জ্বল অগ্নি! দিনে ও রাতে স্বয়ং অথবা লোকদ্বারা রাক্ষস প্রভৃতি তাড়িয়ে দাও। হে তীক্ষ্মমুখ অগ্নি! রাক্ষসকে দহন কর।
৭। হে অগ্নি! তুমি সকল যজ্ঞে স্তুতিভাজন, আমাদের গায়ত্তী দ্বারা তুষ্ট হয়ে আমাকে রক্ষণকার্য দ্বারা পালন কর।
৮। হে অগ্নি! আমাদের দারিদ্র্যনাশক, সকলের বরণীয় এবং সকল সংগ্রামে দুস্তর ধন প্রদান কর।
৯। হে অগ্নি! আমাদের জীবন ধারণের জন্য সুন্দর জ্ঞানযুক্ত ও সুখহেতুভূত এবং সকল আয়ুর পুষ্টিকারক ধন প্রদান কর।
১০। হে ধনাভিলাষী গৌতম! তীক্ষ্মজ্বালাযুক্ত অগ্নিকে বিশুদ্ধ স্তুতি সম্পাদন কর।
১১। হে অগ্নি! যে শত্রু আমাদের সমীপে বা দূরে থেকে আমাদের হানি করে, সে বিনষ্ট হোক; তুমি আমাদের বর্ধন কর।
১২। সহস্রাক্ষ সর্বদর্শী অগ্নি রাক্ষসগণকে তাড়িত করেন; আমাদের দ্বারা স্তুত হয়ে দেবগণের আহ্বানকারী অগ্নি তাদের স্তুতি করেন।

টীকাঃ
১। ঊষার সাথে তুলনা করে অগ্নির অধিকতর সুখ্যাতি করাই কবির উদ্দেশ্য; ঊষার নিন্দা করা উদ্দেশ্য নয়। সায়ণ। বেদার্থযত্নে এ অংশটি এরূপ অনুবাদ করেছেন, Like the daily Ushao (he is) pure in his brightoess endowed with knowledge glorious, full of engery and truthful.








৮০ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে বলশালী ও বজ্রযুক্ত ইন্দ্র! তুমি এ হর্যকর সোমরস পান করলে স্তোতা (১) তোমার বুদ্ধিকর স্তুতি করেছিল; তুমি বলদ্বারা পৃথিবীর নিকট হতে অহিকে তাড়িত করেছিলে এবং স্বীয় প্রভুত্ব প্রকটিভ করেছিলে।
২। হে ইন্দ্র! সেচনযুক্ত, হর্ষ কর এবং শোনপক্ষীর আনীত (২) অভিষুত সোমরস তোমাকে হর্ষযুক্ত করেছে; হে অজ্রিন! তুমি সে বল দ্বারা অন্তরীক্ষের নিকট হতে বৃত্তকে বিনাশ করেছিলে এবং স্বীয় প্রভুত্ব প্রকটিত করেছিলে।
৩। হে ইন্দ্র! গমন কর, শত্রুগণের অভিমুখী হও তোমার বজ্র অপ্রতিহতগতি, তোমার বল পুরুষবিজয়ী, অতএব তুমি বৃত্তকে বধ কর, তন্নিরুদ্ধ জল লাভ কর এবং স্বীয় প্রভূত্ব প্রকটিত কর।
৪। হে ইন্দ্র! তুমি ভূলোকে শত্রুকে বধ করেছ দ্যুলোকেও বধ করেছ। মরুৎগণ কর্তৃক সংযুক্ত ও জীবগণের তৃপ্তিকর বৃষ্টির জল পাতিত করে স্বীয় প্রভূত্ব প্রকটিত কর।
৫। ক্রুদ্ধ ইন্দ্র, অভিমুখ হয়ে কম্পমান বৃত্রের উন্নত হনু প্রদেশে প্রহার করলেন, বৃষ্টির জল প্রবাহিত হতে দিলেন এবং স্বীয় প্রভূত্ব প্রকটিত করলেন।
৬। ইন্দ্র শতধারাযুক্ত বজ্র দ্বারা বৃত্রের কপোলদেশে আঘাত করলেন, তিনি হৃষ্ট হয়ে স্তোতৃগণকে অন্নের উপায় যোগাতে ইচ্ছা করলেন এবং স্বীয় প্রভুত্ব প্রকটিত করেলেন।
৭। হে মেঘবাহন বজ্রযুক্ত ইন্দ্র! শত্রুগণ তোমার বীর্য তিরস্কার করতে পারে না, কেন না তুমি মায়াবী, মায়াদ্বারা মৃগরুপধারী বৃত্রকে বধ করেছ এবং স্বীয় প্রভুত্ব প্রকটিত কর।
৯। সহস্র মনুষ্য যুগপৎ ইন্দ্রকে অর্চনা করেছিল; বিংশ মনুষ্য তার স্তুতি করেছিল; শতসংখ্যক ঋষি পুনঃ পুনঃ ইন্দ্রের স্তব করেছিল। ইন্দ্রের নিমিত্ত হব্য অন্ন ঊর্ধে ধৃত হয়েছিল ইন্দ্র স্বীয় প্রভূত্ব প্রকটিত করেছিলেন।
১০। ইন্দ্র বৃত্রের বল স্বীয় বল দ্বারা নাশ করেছিলেন। অভিভবসাধন আয়ুধদ্বারা বৃত্রের আয়ুধ নাশ করেছিলেন। এ ইন্দ্রের প্রভূত বল, যেহেতু তিনি বৃত্তকে বধ করে তন্নিরুদ্ধ বারি নির্গত করেছিলেন এবং স্বীয় প্রভূত্ব প্রকটিত করেছিলেন।
১১। হে বজ্রযুক্ত ইন্দ্র! তোমার কোপভয়ে এ আকাশ ও পৃথিবী কম্পিত হয়েছিল; যেহেতু তুমি মরুৎগণের সাথে মিলিত হয়ে বৃত্রকে বধ করে স্বীয় প্রভুত্ব প্রকটিত করেছিলে।
১২। বৃত্র স্বীয় কম্পন বা গর্জনের দ্বারা ইন্দ্রকে ভীত করে না, ইন্দ্রের লৌহময় ও সহস্র ধারাযুক্ত বজ্র বৃত্তকে আক্রমণ করল; ইন্দ্র স্বীয় প্রভূত্ব প্রকটিত করলেন।
১৩। হে ইন্দ্র। যখন তুমি বৃত্রকে প্রহার করেছিলে এ তার বজ্রকে প্রহার করেছিলে তখন তুমি অহির বধে কৃতসঙ্কল্প হলে, তোমার বল আকাশে ব্যাপ্ত হয়েছিল; তুমি স্বীয় প্রভুত্ব প্রকটিত করেছিলে।
১৪। হে বজ্রযুক্ত ইন্দ্র! তুমি গর্জন করলে স্থাবর ও জঙ্গম কম্পিত হয়, বজ্র নির্মাতা ত্বষ্টাও তোমার কোপভয়ে কম্পিত হয়, তুমি স্বীয় প্রভুত্ব প্রকটিত করেছ।
১৫। সর্বব্যাপী ইন্দ্রকে আমরা অবগত হতে পারি না; স্বীয় সামর্থ্যের সাথে অতিদূরে অবস্থিত ইন্দ্রকে (কে জানতে পারে)? যেহেতু সে ইন্দ্রে দেবগণ ধন, বীর্য ও বল স্থাপন করেছিলেন; তিনি স্বীয় প্রভুত্ব প্রকটিত করেছেন।
১৬। অথর্বা ঋষি ও পিতা মনু ও (অর্থবার পুত্র) দধাঙৃ ঋষি যে যে যজ্হ করেছিলেন, সে যজ্ঞে প্রযুক্ত হব্য অন্ন ও স্তোত্রসমূহ পূর্বতন যজ্ঞের ন্যায় ইন্দ্রতেই প্রাপ্ত হয়েছিল; ইন্দ্র স্বীয় প্রভূত্ব প্রকটিত করেছিলেন।

টীকাঃ
১। রক্ষা যজ্ঞের একজন স্তোতা। ১০ সুক্তের ১ ঋকের টীকা ও ১৫ সুক্তের ৫ ঋকের টীকা সহ ১৮ সুক্তের ১ ঋকের টীকা ও ৩৬ সুক্তের ৭ ঋকের টীকা দেখুন।
২। শোন পক্ষী সোম এনেছিল তা ঋগ্বেদের তৃতীয় মন্ডলের ৪৩ সুক্তে চতুর্থ মন্ডলের ২৬ সুক্তে এবং অষ্টম মন্ডলের ৭১, ৮৪ ও ৮৯ সুক্তে পাওয়া যায়। সায়ণ শোন অর্থে গায়ত্রী করেছেন। কিন্তু শোন পক্ষী যে গায়ত্রী, ঋগ্বেদে তার কোনও উল্লেখ নেই। এটি অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালের কল্পনা।








৮১ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। বৃত্রহন্তা ইন্দ্র মানুষদের স্তুতি দ্বারা বলে ও হর্ষে প্রবর্ধিত হয়েছেন। সে ইন্দ্রকে আমরা মহৎ ও ক্ষুদ্র সংগ্রামে আহ্বান করি; তিনি আমাদের সংগ্রামে রক্ষা করুন।
১। হে বীর! তুমি একাকী হলেও সেনাসদৃশ; তুমি প্রভূত শত্রুগণের ধন দান কর; তুমি ক্ষুদ্রকেও বর্ধন কর; সোমরসদাতা যজমানকে তুমি ধন প্রদান কর, কেন না তোমার অক্ষয় ধন আছে।
৩। যখন যুদ্ধ হয়, তখন শত্রুগণের জেতাই ধন প্রাপ্ত হয়। হে ইন্দ্র! তুমি শত্রুগণের গর্বনাশকারী অশ্ব রথে সংযোজিত কর, কাকেও বিনাশ কর, কাকেও ধন দান কর, হে ইন্দ্র তুমি আমাদের ধনশালী কর (১)।
৪। ইন্দ্র যজ্ঞ দ্বারা মহান ও ভয়ঙ্কর এবং সোমপান দ্বারা আপন বল বর্ধন করেছেন। তিনি সুদর্শন সুন্দর নাসিকাযুক্ত ও হরিনামক অশ্বযুক্ত; তিনি আমাদের সম্পদের জন্য দৃঢ়বদ্ধ হস্তে লৌহময় বজ্র স্থাপন করলেন।
৫। ইন্দ্র স্বীয় তেজের দ্বারা পৃথিবী ও অন্তরীক্ষ পরিপূরিত করেছেন; দ্যুলোকে উজ্জ্বল নক্ষত্র সকল স্থাপিত করেছেন; হে ইন্দ্র! তোমার ন্যায় কেউ উৎপন্ন হয় নি ও হবে না; তুমি বিশেষরূপে সমস্ত জগৎ ধারণ কর।
৬। যে পালনকারী ইন্দ্র যজমানকে মানুষের অন্ন প্রদান করেন তিনি আমাদের সেরূপ অন্ন প্রদান করুন। হে ইন্দ্র! আমাদের ধন বিভাগ করে দাও কারণ তোমার অসংখ্য ধন, যাতে আমি তার একাংশ প্রাপ্ত হতে পারি।
৭। সরলকর্মা ইন্দ্র সোমপানে হৃষ্ট হলে আমাদের গোযুথ প্রদান করেন। হে ইন্দ্র! তুমি বহু শতসংখ্যক ধন আমাদের দেবার নিমিত্ত উভয় হস্তে গ্রহণ কর; আমাদের তীক্ষবুদ্ধিযুক্ত কর ও ধন প্রদান কর।
৮। হে শুর! তুমি আমাদের বলের ও ধনের নিমিত্ত আমাদের সঙ্গে সোমরস পান করে তৃপ্ত হও। তোমাকে প্রভূত ধনশালী বলে জানি এজন্য আমাদের অভিলাষ জ্ঞাত করাই; তুমি আমাদের রক্ষা কর।
৯। হে ইন্দ্র! তোমারই লোকসমূহ সকলের বরণীয় হব্য বর্ধন করে। যে সকল লোক হব্য প্রদান করে না, হে অখিলপতি হে ইন্দ্র! তাদের ধন তুমি দর্শন কর, হে ইন্দ্র! তাদের ধন আমাদের প্রদান কর।

টীকাঃ
১। রহুগণের পুত্র গৌতম কুরু ও সুঞ্জয় রাজাদের পুরোহিত ছিলেন। সে রাজাদের শত্রুগণের সাথে যুদ্ধ হলে গৌতম ঋষি এ সুক্ত দ্বারা ইন্দ্রকে স্তুতি করে আপন পক্ষের জয় প্রার্থনা করেছিলেন। সায়ণ।








৮২ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে ধনবান ইন্দ্র! নিকটে এসে আমাদের স্তুতি শ্রবণ কর; তুমি এখন পূর্ব হতে ভিন্ন প্রকৃতি হয়ো না; তুমিই আমাদের প্রিয় ও সত্য বাকযুক্ত করেছ; সে বাক্য দ্বারা তোমাকে কামনা করি, অতএব তোমার অশ্ব শীঘ্র যোজিত কর।
২। তোমার প্রদত্ত অন্ন ভোজন করে লোকে পরিতৃপ্ত হয়েছে এবং নিজ নিজ প্রিয় শরীর কম্পিত করেছে, দীপ্তিমান মেধাবীগণ সর্বোৎকৃষ্ট স্তুতি দ্বারা তোমার স্তুতি করেছে, হে ইন্দ্র! তোমার অশ্ব শীঘ্র যোজিত কর।
৩। হে মঘবন! তুমি সকলকে অনুগ্রহ দৃষ্টিতে দর্শন কর; তোমার স্তুতি করি, তুমি স্তুত হয়ে, রথ ধনে পুরিত করে তোমাকে যারা কামনা করছে তাদের নিকট যাও। হে ইন্দ্র! তোমার অশ্ব শীঘ্র যোজিত কর।
৪। যে রথ অভীষ্ট বস্তু বর্ষণ করে ও গাভী প্রদান করে এবং ধান্য মিশ্রিত পূর্ণ পাত্র প্রদান করে, ইন্দ্র সে রথে আরোহণ করুন; তোমার অশ্ব শীঘ্র যোজিত কর।
৫। হে শতক্রতু! তোমার রথের দক্ষিণ পার্শ্বস্থ ও বাম পার্শ্বস্থ অশ্ব সংযুক্ত হোক, তুমি সোমপানে হৃষ্ট হয়ে সে রথ দ্বারা তোমার প্রিয়া জায়ার (১) নিকট গমন কর। তোমার অশ্বদ্বয় শীঘ্র যোজিত কর।
৬। তোমার কেশযুক্ত অশ্বদ্বয়কে আমি স্তোত্র দ্বারা (রথে) সংযোজিত করি বাহুদ্বয়ে অশ্ববন্ধক রশ্মি ধারণ করে গৃহে গমন কর। এ অভিষূত তীব্র সোমরস তোমাকে হৃষ্ট করেছে, হে বজ্রিন! তুমি (সোম পান জনিত) তুষ্টিযুক্ত হয়ে পত্নীর সাথে সম্যক হর্ষলাভ কর।

টীকাঃ
১। এরূপে ইন্দ্রের স্তুতিতে ইন্দ্রের জায়ার কোন কোন স্থানে উল্লেখ আছে। ২২ সুক্তের ১২ ঋকে ইন্দ্রের জায়াকে ইন্দ্রাণী বলা হয়েছে। কিন্তু এ ছাড়া ঋগ্বেদ সংহিতায় ইন্দ্রের স্ত্রীর বিশেষ কোনাও পরিচয় নেই। যেখানে ইন্দ্রকে শচীপতি বলা হয়েছে, সেখানে সে শব্দের অর্থ যজ্ঞের পালনকর্তা; শচী ইন্দ্রের পত্রী এরুপ কথা ঋগ্বেদ-সংহিতায় দেখা যায় না। পৌরণিক সময়ে এ বৈদিক‍ ‘‍‌শচীপতি’ শব্দ হতে ইন্দ্রের পত্নী শচী এ কথা সৃষ্ট হয়েছিল এবং শচীর অনেক অর্ণনা ো আখ্যান সৃষ্ট হয়েছিল।






৮৩ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে ইন্দ্র! যে মানুষ তোমার রক্ষণের দ্বারা রক্ষিত, সে অশ্ব বৃক্ত গৃহে বাস করে সর্ব প্রথমেই গাভী প্রাপ্ত হয়। নদীসমূহ যেরূপ সবদিকে বয়ে স্বভাবতই সমুদ্রকে পরিপুরিত করে, তুমিও সেরূপ তোমার রক্ষিত মানুষকে প্রভূত ধনে পূর্ণ কর।
২। যেরূপ দ্যুতিমান জল বজ্ঞপাত্রে গমন করে, সেরূপ উপরিস্থিত দেবগণ যজ্ঞপাত্র দর্শন করেন; তাদের দৃষ্টি কিরণের ন্যায় বিতত। অনেক পুরুষ যেরূপ একটি কন্যাকে বিবাহের জন্য অভিলাষ করে, দেবগণ সেরূপ সোমপূর্ণ দেবাভিলাষী পাত্রকে অভিলাষ করে।
৩। যে হব্য ও ধান্য যজ্ঞপাত্রে তোমাকে অর্পিত হয়েছে, হে ইন্দ্র! তুমি তাতে মন্ত্রবচন সংযুক্ত করেছ। যজমান যুদ্ধে গমন না করে তোমার কার্যে রত থাকে এবং পুষ্টিলাভ করে, কেননা সোমাভিষবদাতা উৎকৃষ্ট বল লাভ করে।
৪। অঙ্গিরাগণ অগ্নে ইন্দ্রের নিমিত্ত অন্ন সম্পাদিত করেছিলেন, পরে অগ্নি প্রজ্বলিত করে সুন্দর যাগ দ্বারা ইন্দ্রের পূজা করেছিলেন। যজ্ঞের নেতা অঙ্গিরাগণ অশ্বযুক্ত ও গাভীযুক্ত ও অন্য পশুযুক্ত সমস্ত ধন লাভ করেছিলেন।
৫। অথবা ঋষি যজ্ঞ দ্বারা প্রথমে অপহৃত গাভীগণের পথ বার করেছিলেন, পরে ব্রতপালনকারী কমনীয় সূর্য রূপ ইন্দ্র দৃষ্ট হয়েছিলেন অথবা ঐ গাভী সকল প্রাপ্ত হলেন; কবির পুত্র উশনা ইন্দ্রের সহায় হয়েছিলেন। আমরা শত্রু দমনের নিমিত্ত সমূৎপন্ন এবং অমর ইন্দ্রের পূজা করি।
৬। সুন্দর ফলযুক্ত যজ্ঞের জন্য যখন কুশচ্ছেদন হয়, যখন-স্তোত্রনিষ্পাদক হোতা দ্যুতিমান যজ্ঞে স্তুতি ঘোষিত করে, যখন সোমনিসান্দী প্রস্তা শাস্ত্রীর স্তুতিকারী স্তোতার ন্যায় শব্দ করে, তখন ইন্দ্র হর্যযুক্ত হন।





৮৪ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে ইন্দ্র! তোমার জন্য সোমরস অভিষুত হয়েছে; হে বলবান শত্রুদের ধর্ষণকারী ইন্দ্র। আগমন কর। সূর্য যেরূপ অন্তরীক্ষকে কিরণ দ্বারা পূরিত করেন, সেরূপ প্রভূত সামর্থ তোমাকে পূরিত করুক।
২। ইন্দ্রের অশ্বদ্বয় অহিংসিত বল ইন্দ্র ঋষিগণের ও অন্যান্য লোকের স্তুতি ও যজ্ঞের সমীপে বহন করুক।
৩। হে বৃত্রহস্তা! রথে আরোহণ কর, যেহেতু তোমার অশ্বদ্বয় মন্ত্র দ্বারা রথে সংযোজিত হয়েছে। সোমনিস্যন্দ প্রস্তর শব্দের দ্বারা তোমার মন আমাদের অভিমুখী করুক।
৪। হে ইন্দ্র! তুমি এ অতিশয় প্রশংসনীয় হর্যকর ও অমর সোমপান কর। যজ্ঞগৃহে এ দীপ্তিমান সোমধারা তোমারই দিকে বয়ে যাচ্ছে।
৫। শীঘ্র ইন্দ্রের পূজা কর, তার স্তুতি কর, অভিষূত সোমরস তাঁকে হৃষ্ট করুক, প্রসংসনীয় ও বলবান ইন্দ্রকে নমস্কার কর।
৬। হে ইন্দ্র! যখন তুমি অশ্বদ্বয় রথে যোজিত কর, তখন তোমার অপেক্ষা উৎকৃষ্ট রথী আর নেই। তোমার সদৃশ বলসম্পন্ন কেউ নেই, তোমার ন্যায় শোভনীয় অশ্বযুক্ত কেউ নেই।
৭। যে ইন্দ্র কেবল হব্যদাতা যজমানকে ধন প্রদান করেন, তিনি সমস্ত জগতের নির্বিরোধী স্বামী।
৮। যে হব্য প্রদান করে না, তাকে মন্ডলাকার সর্পের ন্যায় ইন্দ্র কখন পা দিয়ে দলন করবেন? ইন্দ্র কখন আমাদরে স্তুতি শ্রবণ করবেন?
৯। হে ইন্দ্র! যে অভিষুত সোম দ্বারা তোমার সেবা করে, তুমি তাকে ধন দান কর।
১০। সৌবর্ণ দগাভী সকল সুস্বাদু এবং এ প্রকারে সর্ব যজ্ঞে ব্যাপ্ত মধুর সোমরস পান করে। সে গাভীগণ শোভার নিমিত্ত অভীষ্টদাতা ইন্দ্রের সাথে গমন করতৎ হর্ষ প্রাপ্ত হয়। ঐ গাভী সকল ইন্দ্রের রাজত্ব লক্ষ্য করে অবস্থিতি করে।
১১। ইন্দ্রের স্পর্শাভিলাষী উক্ত নানাবর্ণের গাভী সকল সোমের সাথে তাদের দুগ্ধ মিশ্রিত করে। ইন্দ্রের প্রিয় ধেনু সকল শত্রু বিনাশী বজ্রকে শত্রুগণের মধ্যে প্রেরণ করে। ঐ গাভী সকল ইন্দ্রের রাজত্ব লক্ষ করে অবস্থিতি করে।
১২। এ প্রকৃষ্ট জ্ঞানযুক্ত গাভী সকল স্বীয় দুগ্ধরূপ অন্নদ্বারা ইন্দ্রের বলের পূজা করে। তারা (যুদ্ধাভিলাষী শত্রুগণের) পূর্ব হতে অবগতির জন্য ইন্দ্রের শত্রুবধাতি বহু কার্য ঘোষিত করে। ঐ গাভী সকল ইন্দ্রেররাজত্ব লক্ষ্য করে অবস্থিতি করে।
১৩। অপ্রতিদ্বন্দ্বী ইন্দ্র দধীচি ঋষির অস্থি দ্বারা বৃত্রগণকে নবগুণ নবতি বার বধ করেছিলেন (১)।
১৪। ইন্দ্র পর্বতে লুক্কায়তি দধীচির অশ্বমস্তক পাবার ইচ্ছা করে সে মস্তক শর্ষণাবৎ সরোবরে (২) প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
১৫। এরূপ আদিত্যরশ্মি এ গমনশীল চুন্দ্রমন্ডলের অন্তর্হিত সূর্য তেজ পেয়েছিল (৩)
১৬। অদ্য কে ইন্দ্রের গমনশীল রথে বীর্যযুক্ত, তেজোময় দুঃসহক্রোধযুক্ত অশ্ব সংযোজনা করতে পারে? সে অশ্বগণের মুখে বাণ আবদ্ধ আছে তারা শত্রুদের হৃদয়ে পাদক্ষেপ করে ও মিত্রদের সুখ প্রদান করে। যে এ অশ্বগণের ক্রি{য়া প্রশংসা করে, তারা দীর্ঘ জীবন প্রাপ্ত হয়।
১৭। শত্রুভয়ে কে নির্গত হয়? কে শত্রুদ্বারা নষ্ট হয়? কে ভীত হয়? রক্ষকরূপে সমীপস্থিত ইন্দ্রকে কে জানে? কে বা পুত্রের নিমিত্ত, নিজের নিমিত্ত, ধনের নিমিত্ত, শরীর রাক্ষর নিমিত্ত, বা পরিজন রক্ষার নিমিত্ত ইন্দ্রের নিকটে প্রার্থনা করে (৪)?
১৮। কে অগ্নির স্তুতি করে? কে নিত্য ঋতু উপলক্ষ্য করে পাত্রস্থিত হব্যঘৃত দ্বারা পূজা করে? ইন্দ্র ভিন্ন অন্য দেবগণ কোন যজমানকে প্রশংসনীয় ধন শীঘ্র প্রদান করেন? যজ্ঞরত এবং দেবপ্রসাদযুক্ত কোন যজমান ইন্দ্রকে সম্যক জানে?
১৯। হে বলবান দেব ইন্দ্র! তুমি স্তুতিরত মানুষকে প্রশংসা কর। হে মঘবন! তোমা ভিন্ন আর কেউ সুখদাতা নেই, অতএব তোমার স্তুতি করি।
২০। হে নিবাসস্থানদাতা ইন্দ্র! তোমার ভূতগণ ও সহায়করূপ মরুৎগণ আমাদের যেন কখন বিনাশ না করে। হে মানুষের হিতকারী ইন্দ্র! আমরা মন্ত্র জানি, তুমি আমাদের ধন এনে দাও।

টীকাঃ
১। দধীচির অস্থি নিয়ে ত্বষ্টা বজ্র নির্মাণ করলে সে বজ্র দ্বারা ইন্দ্র অসুরদের নাশ করেন, এরূপ পৌরাণিক গল্প আছে। দধীচির অস্থি দ্বারা ইন্দ্র বৃত্রদের হনন করেছেন, তা বেদে আমরা এ স্থলে পেলাম। ১১৬ সুক্তের ১২ ঋকের টীকা দেখুন।
২। শর্ষাণাবদ্ধ বৈ নাম কুরুক্ষেত্রস্য জঘনার্থে সরঃ। সায়ণ।
৩। ত্বষ্টৃতেজ অর্থাৎ সূর্যতেজ। তদেতেন উপেক্ষিতব্যং আদিত্যতঃ অস্য দীপ্তি র্ভবতি। নিরুক্ত
২।৬। অতএব সূর্য কিরণ চন্দ্রে প্রতিফলিত হয়ে চন্দ্রের আলোক হয় এ কথা ঋগ্বেদের সময় অথবা যাস্কের সমসয় জানা ছিল।
৪। অর্থাৎ ইন্দ্র স্বয়ংই এ সমস্ত আমাদের দেন। এখানেও কঃ অর্থে প্রজাপতি করে সায়ণ দ্বিতীয় একটি ব্যাখ্যা করেছেন।






৮৫ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। মরুৎগণ গমন কালে স্বীয় শরীর স্ত্রীলোকের ন্যায় অলঙ্কৃত করেন। তারা গমনশীল রুদ্রের পুত্র এবং হিতকর কার্য দ্বারা আকাশ ও পৃথিবীর বন্ধন সাধন করেন। বীর ও বর্ষণশীল মরুৎগণ যজ্ঞে হব্য প্রাপ্ত হন।
২। ঐ মরুৎগণ দেবগণের দ্বারা অভিষিক্ত হয়ে মহত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন। রুদ্রপুত্রগণ আকাশে স্থান পেয়েছেন; অর্চনীয় ইন্দ্রের অর্চনা করে ও ইন্দ্রকে বীর্যশাল করে পুশ্নিপুত্র মরুৎগণ ঐশ্বর্য প্রাপ্ত হয়েছিল।
৩। গাভীর পুত্র মরুৎগণ (১) তখন অসংস্কারের দ্বারা আপনাদের শোভাযুক্ত করেন, তখন দীপ্ত মরুৎগণ স্বীয় শরীরে উজ্জ্বল অলঙ্কার ধারণ করেন, তারা সমস্ত শত্রু নাশ করেন এবং তাদের মার্গ অনুসরণ করে বৃষ্টি ঝরে।
৪। সুন্দর যজ্ঞযুক্ত মরুৎগণ আয়ুধের দ্বারা বিশেষরূপে দীপ্তিমান হয়েছেন; তারা স্বয়ং অবিচলিত হয়ে পর্বতাদিকেও উৎপাদিকেও উৎপাটিত করেন; যখন তোমরা রথে বিন্দু চিহ্নিত মৃগ সংযোজিত কর, তখন হে মরুৎগণ! তোমরা মনের ন্যায় বেগগামী এবং বৃষ্টিসেচনব্রতে নিযুক্ত হও।
৫। অন্নের জন্য মেঘকে বর্ষ ণার্থে প্রেরণ করে যখন বিন্দুচিহ্নিত মৃগ রথে সংযোজিত কর, তখন উজ্জ্বল অরুযের নিকট হতে বারিধারা (২) বিমুক্ত হয় এব{ং চম{র্ আধারের জলের ন্যায় জলদ্বারা সমস্ত ভূমি আর্দ্র হয়।
৬। হে মরুৎগণ! তোমাদের বেগবান ও লঘুগামী অশ্ব তোমাদের এ যজ্ঞে বহন করুক; তোমরা শীঘ্রগামী, হস্তে (ধন নিয়ে) এস। হে মরুৎগণ। বিস্তীর্ণ কুশের উপর উপবেশন কর এবং মধুর সোমরস পান করে তৃপ্ত হও।
৭। মরুৎগণ নিজ বলে নির্ভর করে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়েছেন, মহিমা দ্বারা স্বর্গে স্থান পেয়েছেন এবং বিস্তীর্ণ বাসস্থান করেছেন। যাদের জন্য বিষ্ণ সোমরস রক্ষা করেন, সে মরুৎগণ পক্ষীর ন্যায় শীঘ্র আগমন করে এ প্রীতিকর কুশে উপবেশন করুন।
৮। শুরদের ন্যায়, যুদ্ধার্থীদের ন্যায়, যশঃপ্রিয় পুরুষদের ন্যায় শীঘ্রগামী মরুৎগণ সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছেন; বিশ্বভূবন সে মরুৎগণকে ভয় করে, তারা নেতা ও রাজার ন্যায় উগ্নরূপ।
৯। শোভনকর্মা ত্বষ্টা যে সুনির্মিত, হিরস্ময় ও অনেক ধারাযুক্ত বজ্র ইন্দ্রকে দিয়েছিলেন, ইন্দ্র সে বজ্র সংগ্রামে কার্যসাধন করবার জন্য ধারণ করে বৃত্তবধ করেছিলেন এবং বারিয়াশি বর্যিত করেছিলেন।
১০। মরুৎগণ স্বীয় বল দ্বারা কূপ উপরে উঠিয়ে (৩) পথনিরোধক পর্বতকে বিভেদ করেছিলেন। শোভন দানশীল মরুৎগণ বীণা বাজিয়ে (৪) সোমপানে হৃষ্ট হয়ে রমণীয় বন দিয়েছিলেন।
১১। মরুৎগণ সে গোতমের দিকে যুপ বক্রভাবে প্রেরণ করলেন; এবং তুষিত গোতম ঋষির জন্য জল সিঞ্চন করলেন। বিচিত্র দীপ্তিযুক্ত মরুৎগণ রক্ষণের জন্য আগমন করেন এবং জীবনোপায় জলদ্বারা মেধাবী গোতমের তৃপ্তিসাধন করেছিলেন।
১২। হে মরুৎগণ। তোমাদের স্তোতাকে দেয় যে সুখ তিন জগতে আছে, তোমরা তা হব্যদাতাকে প্রদান কর। সে সমস্ত আমাদের দাও। হে অভীষ্ট প্রদ! আমাদের বীরযুক্ত ধন দাও।



টীকাঃ
১। ২ ঋকে মরুৎগণকে পৃশ্নিমাতরঃ অর্থাৎ পৃশ্নির পুত্র এবং ৩ ঋকে তাদের গোমাতরঃ অর্থাৎ গাভীর পুত্র বলা হয়েছে, এ গোশব্দ দ্বারা পৃশ্নিই বুঝাচ্ছে। সায়ণ উভয় পৃশ্নি ও গো অর্থে পৃথিবী করেছেন। কিন্তু ২৩ সুক্তে ১০ ঋকের টীকায় পৃশ্নির অর্থ দেখুন।
২। অরুষস্য অর্থ আরোচমানস্য সূর্যস্য বৈদ্যুতাগ্নের্বা। সায়ণ। আচার্য মক্ষমূলর রক্তবর্ণ মেঘ অর্থ করেছেন। ৬ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।
৩। অবতঃ কূপঃ। সায়ণ। গৌতম ঋষি পিপাসিত হয়ে জল চেয়েছিলেন, মরুৎগণ দুরস্থ একটা কুপ উঠিয়ে গৌতম ঋষি পিপাসিত হয়ে জল চেয়েছিলেন, মরুৎগণ দুরস্থ একটা কূপ উঠিয়ে গৌতম ঋষির নিকটে নিয়ে গিয়েছিলেন। সায়ণ। কূপ ইটয়ে গৌতম ঋষিকে জল দেওয়া সম্বন্ধে ১১৬ সুক্তের ৯ ঋক দেখুন।
৪। বীণাবিশেষং ধমন্তো বাদয়ন্তঃ। সায়ণ। কিন্তু নক্ষমূলর বাণ অর্থে Voice করেছেন। There is no authority for vana meaning either lyre or flute in the Vedas-Max Muller.




৮৬ সুক্ত।। অনুবাদঃ
১। হে উজ্জ্বল মরুৎগণ! অন্তরীক্ষ হতে আগমন করে তোমরা যার গৃহে সোমপান কর, সে জন অমিশয় সুরক্ষক সম্পন্ন।
২। হে যজ্ঞবাহী মরুৎগণ! যজ্ঞরত যজমানের স্তুতি অথবা মেধাবীর আহ্বান শ্রবণ কর।
৩। যে যজমানের ঋত্বিকগণ মরুৎগণকে (হব্য প্রদান দ্বারা) উৎসাহিত করেছে, সে যজমান বহুগাভী যুক্ত গোষ্ঠে গমন করেন।
৪। যজ্ঞের দিবসে বীর মরুৎগণের নিমিত্ত যজ্ঞে সোম অভিযুত হয়, এবং মরুৎগণের হর্যের নিমিত্ত স্তোত্র উচ্চারিত হয়।
৫। সর্বশত্রু বিজয়ী মরুৎগণ স্তোতার স্তুতি শ্রবণ করুন এবং স্তোতা প্রভূত অন্ন প্রাপ্ত হোন।
৬। হে মরুৎগণ! আমরা, সর্বজ্ঞ মরুৎগণ কর্তৃক রক্ষিত হয়ে, তোমাদের বহুবৎসর হব্য প্রদান করছি।
৭। হে যজনীয় মরুৎগণ! যার হব্য তোমরা গ্রহণ কর, সে সৌভাগ্যশালী হোক।
৮। হে প্রকৃত বলসম্পন্ন নেতা মরুৎগণ! তোমাদের স্তুতি পরায়ণ ও শ্রমের দ্বারা স্বেদযুক্ত এবং তোমাদের অভিলাষী স্তোতৃগণের অভিলাষ অবগত হও।
৯। হে প্রকৃত বলসম্পন্ন মরুৎগণ! তোমরা উজ্জ্বল মাহাত্ম্য প্রকাশ কর এবং তা দিয়ে রাক্ষদের তাড়িত কর।
১০। সর্বব্যাপী অন্ধকারকে নিবারণ কর; রাক্ষসাদি সকল ভক্ষককে বিদুরিত কর; অভিলষিত যে জ্যোতি আমরা


৮৭ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। মরুৎগণ শত্রুঘাতী প্রকৃষ্ট বল সম্পন্ন, জয়ঘোষযুক্ত, আনতিরহিত, অবিযুক্ত, ঋজীষী ও যজমানের সেবিত এবং মেঘাদির নেতা মরুৎগণ আভরণ দ্বারা নক্ষত্রপূর্ণ আকাশের ন্যায় প্রকাশিত হলেন।
২। হে মরুৎগণ! পক্ষীর ন্যায় কোনও পথ দিয়ে শীঘ্র ধাবমান হয়ে সন্নিকৃষ্ট নভঃ প্রদেশে যখন তোমরা গমনশীল মেঘসমূহকে সমবেত কর, তখন তোমাদের মেঘ সকল তোমাদের রথে সংশ্লিষ্ট হয়ে বারিবর্ষণ করে; অতএব, তোমরা পূজকের উপর মধু সদৃশ স্বচ্ছ বারি সিঞ্চন কর।
৩। যখন মরুৎগণ শুভপ্রদ বৃষ্টির জন্য মেঘ সকলকে সজ্জিত করেন, তখন মরুৎগণ মেঘ সকলকে উৎক্ষিপ্ত করে নিয়মিত করছে দেখে পৃথিবী বিরহিতা স্ত্রীর ন্যায় (১) কম্পিত হন; সেরূপ বিহারশীল, গমনশীল ও দীপ্তায়ুধ মরুৎগণ পর্বতাদি কম্পিত করে স্বকীয় মহিমা প্রকটিত করেন।
৪। মরুৎগণ স্বয়ং পরিচালিত এবং বিন্দু চিহ্নিত মৃগ তাদের অশ্ব। তারা তরুণ বীর্যশালী এবং ক্ষমতাপন্ন, তোমরা সত্য, ঋণ হতে মুক্তিদাতা, আনন্দিত এবং জলবর্ষণকারী; তোমরা আমাদের যজ্ঞের রক্ষক।
৫। আমাদের পুরাতন পিতা বহুগণ কর্তৃক উপদিষ্ট হয়ে আমরা বলছি যে সোমের আহুতির সাথে স্তুতিবাক্য মরুৎগণকে প্রাপ্ত হয়; তারা ইন্দ্রের স্তুতি করে বৃত্র হনন কার্যে উপস্থিত ছিলেন এবং যজ্ঞার্হ নাম ধারণ করেছেন।
৬। ঐ মরুৎগণ প্রাণীগণের উপভোগের নিমিত্ত দীপ্তিমান সূর্যকিরণের সাথে বৃষ্টিবারি সিঞ্চন করতে ইচ্ছা করেন; তারা স্তুতিমান ঋত্বিগণের সাথে সুখকর হব্য ভক্ষণ করেন; স্তুতিযুক্ত বেগগামী ও নির্ভীক মসরুৎগণ সর্বপ্রিয় মরুৎসম্বন্ধীয় স্থান প্রাপ্ত হয়েছেন।

টীকাঃ
১। বিথুরা ইব। ভর্ত্রা বিযুক্তা জায়া। সায়ণ। কিন্তু মক্ষমুলর অনুবাদ করেছেন as if broken. There is no authority for Sayan’s explanation of Vithura-Iva, the earth trembles like a widow. Vithura occurs several times in the Rig Veda, but never in the sense of widow. –Max Muller.


৮৮ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে মরুৎগণ! তোমরা বিদ্যুৎযুক্ত, শোভন গমন বিশিষ্ট, আয়ুধ সম্পন্ন ও অশ্বসংযুক্ত মেঘে আরোহণ করে আগমন কর। হে শোভনকর্মা মরুৎগণ! প্রভূত অন্নের সাথে পক্ষীর ন্যায় আমাদের নিকট আগমন কর।
২। মরুৎগণ অরুণ ও পিঙ্গল রথবাহক অশ্ব দ্বারা দেবগণের কোন স্তোতার নিকট শুভ সম্পাদনার্থে আগমন করছেন? সুবর্ণের ন্যায় দীপ্তিমান আয়ুধযুক্ত মরুৎগণ রথ চক্র দ্বারায় ভূমি ক্ষত করছেন।
৩। হে মরুৎগণ! ঐশ্বর্য লাভার্থ তোমাদের শরীরে শত্রুগণের আক্রোশকারী আয়ুধ আছে। মরুৎগণ বন বৃক্ষ সমূহের ন্যায় যজ্ঞ উর্ধ করেন। হে সুজাত মরুৎগণ! তোমাদের নিমিত্ত প্রভূত ধনশালী যজমানগণ (সোমনিস্যন্দী) প্রস্তর ধন যুক্ত করে।
৪। হে গৃঞ্জ সদৃশ মরুৎগণ! তোমাদরে দিবস আগত হয়েছে, সবং উদকনিস্পাদ্য যজ্ঞকে দ্যুতিমান করেছে। গোতম ঋষিগণ স্তোত্রের সাথে হব্য দান করে পানের নিমিত্ত কুপ উন্নমিত করেছেন।
৫। মরুৎগণ লৌহদংষ্ট্রা, ইতস্ততঃ ধাবমান বরাহ সদৃশ! সে মরুৎগণকে দেখে গোতম ঋষি যে স্তোত্র উচ্চারিত করেছিলেন, এ সে স্তুতি (১)।
৬। হে মরুৎগণ! যোগ্য স্তুতি তোমাদের প্রত্যেককে স্তুতি করে, ঋত্বিকগণের বাণী এখন অনায়াসে এ ঋকসমূহ দ্বারা তোমাদের স্তুতি করেছে, কেন না তোমরা আমাদের হস্তে বহুবিধ অন্ন স্থাপিত করেছ।



টীকাঃ
১। ৪ ও ৫ ঋকে মরুৎগণকে গৃধ্রের সাথে ও বরাহের সাথে তুলনা করা হয়েছে। সায়ণ এ উপমায় সম্মত নন। তিনি ঋকদ্বয়ের অন্য অর্থ করেছেন।




৮৯ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। কল্যাণকর, অহিংসিত, অপ্রতিরুদ্ধ ও শত্রুবিনাশকারী যজ্ঞ সকল সর্বদিক হতে আগমন করুক; যারা আমাদের পরিত্যাগ না করে প্রতিদিন রক্ষা করেন সে দেবগণ সর্বদা আমাদের বর্ধিত করুন।
২। ঋজু লোকপ্রিয় দেবগণের কল্রাণকর অনুগ্রহ আমাদের অভিমুখে আগমন করুন এবং তাদের দান আমাদের অভিমুখে আগমন করুক। আমরা যেন সে দেবগণের বন্ধুত্ব প্রাপ্ত হই, তারা আমাদের জীবন বর্ধন করুন।
৩। তাহাদরে পূর্বের বাক্যের দ্বারা আহ্বান করি। ভগ, মিত্র, অদিতি, দক্ষ, অস্রিধ (১), অর্যমা, সোম এবং অশ্বিদ্বয়কে আহ্বান করি সৌভাগ্যশালিনী সরস্বতী আমাদের সুখ সম্পাদিত করুন।
৪। বায়ু আমাদের নিকট সুখোৎপাদক ভেষজ আনুন। জননী পৃথিবীও পিতা দ্যুলোকও আনুন। সোমনিস্যন্দী সুখোৎপাদক প্রস্তরও সেই ভেষজ আনুন। ধ্যান দ্বারা প্রাপ্তব্য, হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা আমাদের প্রার্থনা শ্রবণ কর।
৫। আমরা সে ঐশ্বর্যশালী, স্থাবর জঙ্গমের অধিপতি যজ্ঞতোষ ইন্দ্রকে আমাদের রক্ষার নিমিত্ত আহ্বান করি। পূষা যেরূপ আমাদের ধন বর্ধনের জন্য রক্ষক আছেন, অহিংসিত পূষা সেরূপ আমাদের মঙ্গলের জন্য রক্ষক হোন।
৬। প্রভূত স্তুতিভাজন ইন্দ্র ও সর্বজ্ঞ পূষা আমাদের মঙ্গল প্রদান করুন।
৭। মরুৎগণ বিন্দুচিহ্নিত মৃগযুক্ত, পৃশ্নিপুত্র, শোভনীয় গতিযুক্ত, যজ্ঞগামী ও অগ্নিজিহ্বায় অবস্থিত (৩) বুদ্ধিসম্পন্ন ও সূর্যের ন্যায় দীপ্তিমান মরুৎ দেবগণ আমাদের রক্ষার জন্য এ স্থানে আসুন।
৮। হে দেবগণ! আমরা যেন কর্ণে কল্যাণকর বাক্য শ্রবণ করত সমর্থ হই। হে যজনীয় দেবগণ! আমরা চক্ষে যেন কল্রাণকর বস্তু দেখতে সমর্থ হই। আমরা যেন দৃঢ়াঙ্গশরীরযুক্ত হয়ে তোমাদের স্তুতি করে দেবগণ দ্বারা নির্দিষ্ট আয়ু প্রাপ্ত হই।
৯। হে দেবগণ। মনুষ্যের পক্ষে শত বছর আয়ু কল্পিত হয়েছে; ঐ সময়ে তোমরা শরীরে জরা উৎপাদন করে থাক, ঐ সময় পুত্রগণ পিতা হন। সে নির্দিষ্ট আয়ুর মধ্যে আমাদের বিনাশ করো না।
১০। অদিতি আকাশ, অদিতি অন্তরীক্ষ, অদিতি মাতা, তিনি পিতা, তিনি পুত্র, অদিতি সকল দেব, অদিতি পঞ্চ লোক, (৪) অদিতি জন্ম ও জন্মের কারণ।



টীকাঃ
১। অস্রিধং শোষণরহিতং সর্বদৈকরূপেণ বর্ত্তমানং মরুদগং। সায়ণ।
২। মূলে তার্ক্ষ্যঃ অরিষ্টনেমিঃ আছে। সায়ণ অর্থ করেছেন অহিংসিত রথমেমিযুক্ত গরুড়। কিন্তু বিষ্ণুর বাহন গরুড় ঋগ্বেদের সময় কল্পিত হয়নি এবং গরুড়কে নেমিযুক্ত বলে কেন বর্ণনা করবে বুঝা যায় না। পুরাণে কোন কোন স্থলে কশ্যপ বা প্রজাপতির নাম অরিষ্টনেমি এরূপ দেখা যায়; এ স্থানেও তার্ক্ষ্যঃ অরিষ্টনেমিঃ অর্থে তৃক্ষের পুত্র কশ্যপ হওয়া সম্ভব।
৩। সকল দেবগণই হব্য প্রাপ্তির জন্য অগ্নির হ্বিয়া অবস্থান করেন। সায়ণ।
৪। অদিতিঃ পঞ্চজনাঃ এ পঞ্চজন কে তা সায়ণ এরূপ লিখেছেন পঞ্চজনা নিষাদপঞ্চামাশ্চাত্বারো বর্ণাঃ। যদ্বা গন্ধর্বাঃ পিতরো দেবা অসুরা রক্ষাংসি। যাস্ক বলেছেন গন্ধর্বাঃ পিতরো দেবা অসুরা রক্ষাংসীত্যেতে চত্বারো বর্ণা নিষাদপঞ্চম ইত্যোপমন্যাবঃ। নিরুক্ত
৩।
৭। এ অর্থ সঙ্গত মনের হয় না। ঋগ্বেদে অনেক স্থানে পঞ্চক্ষিতি বা পঞ্চকৃষ্টি বা পঞ্চজন শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তার অর্থ পাঞ্চাব প্রদেশ ও পঞ্চনদকলবাসী সমস্ত আর্য জাতি। প্রথম মন্ডলের ৭ সুক্তের ৯ ঋক ও দ্বিতীয় মন্ডলের ২ সুক্তের ১০ ঋকের টীকা দেখুন।




৯০ সুক্ত। ।



অনুবাদঃ
১। বরুণ ও মিত্র (উত্তম পথ) অবগত হয়ে আমাদের অকুটিল গতিতে নি{েয় যান এবং দেবগণের সাথে সমান প্রীতিযুক্ত অর্যমাও (আমাদের) নিয়ে যান।
২। তারা ধন বিতরণ করেন, তারা মূঢ়তাশূন্য হয়ে স্বীয় তেজের দ্বারা সকল দিন স্বীয় কার্য পালন করেন।
৩। সে অমরগণ আমাদের শত্রু বিনাশ করে আমাদের সুখ প্রদান করুন; আমরা মরণশীল মানুষ।
৪। স্বর্গীয় ইন্দ্র, মরুৎগণ, পূষা ও ভগ দেবগণ উৎকৃষ্ট ফল প্রাপ্তির জন্য আমাদের পথ দেখিয়ে দিন।
৫। হে পূষা, বিষ্ণু ও মরুৎগণ! তোমরা আমাদের যজ্ঞ পশুপ্রাপক কর এবং আমাদের বিনাশ রহিত কর।
৬। বায়ু সকল যজমানের জন্য মধু বর্ষণ করে, নদীসমূহ মধুক্ষরণ করে; ওষধি সকলও মাধুর্যযুক্ত হোক।
৭। আমাদের রাত্রি ও ঊষা মধুর হোক; পার্থিব জনপদ মাধুর্য বিশিষ্ট হোক; যে আকাশ সকলের পালয়িতা সে আক্লাশও মধুযুক্ত হোক।
৮। বনস্পতি আমাদের প্রতি মধুর হোক; সূর্য ও মধুর হোক; ধেনুসকল মধুর হোক।
৯। মিত্র, বরুণ অর্যমা, বৃহস্পতি, ইন্দ্রও বিস্তীর্ণ পাদক্ষেপী বিষ্ণু আমাদের সুখকর হোক।




৯১ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে সোম! আমরা বুদ্ধিদ্বারা তোমাকে বিশেষরূপে অবগত আছি, তুমি আমাদের সরল পথে নিয়ে যাও; হে ইন্দ্র! (অর্থাৎ হে সোম!) তোমাকর্তৃক নীত হয়ে আমাদের পিতৃগণ দেবগণ মধ্যে রত্ন প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
২। হে সোম তুমি স্বীয় যজ্ঞ দ্বারা শোভনীয় যজ্ঞযুক্ত, স্বীয় বল দ্বারা শোভনীয় বলযুক্ত, তুমি সর্বজ্ঞ। তুমি অভিষ্ট ফল বর্ষণ দ্বারা বর্ষণকারী এবং তুমি মহিমায় মহান যজমানের অভিমত ফল প্রদর্শন করে যজমানদত্ত অন্ন দ্বারা প্রভূতান্নযুক্ত।
৩। হে সোম! রাজা বরুণের কার্য সমুদয় তোমারই, তোমার তেজ বিস্তীর্ণ ও গভীর মিত্রের ন্যায় তুমি সকলের সংশোধক, অর্যমার ন্যায় তুমি সকলের বর্ধক।
৪। হে সোম! তোমার যে তজ দ্যুলোকে, পৃথিবীতে, পর্বতে, ওষধিতে এবং জলে আছে, সে তেজযুক্ত হয়ে, হে সুমনা এবং ক্রোধহীন, রাজন! আমাদের হব্য গ্রহণ কর।
৫। হে সোম! তুমি সৎলোকের অধিপতি, তুমি রাজা, তুমি বৃত্রহন্তা, তুমিই শোভনীয় যজ্ঞ। ৬; স্তোত্রপ্রিয় এব{ং ওষধি সকলের পালয়িতা সোম। যদি তুমি আমাদের জীবনৌষধ কামনা কর, তা হলে আমরা মরব না।
৭। হে সোম! তুমি যজ্ঞকারী বৃদ্ধ বা তরুণ যজ্ঞকারীর জীবনের জন্য উপভোগযোগ্য ধন দাও!
৮। হে রাজন সোম! আমাদের দুৎখদানে অভিলাষী সকল লোক হতে রক্ষা কর; তোমার মত ব্যক্তির সখা কখন বিনাশপ্রাপ্ত হয় না।
৯। হে সোম! যজমানের সুখজনক তোমার যে সকল রক্ষণ আছে তা দিয়ে আমাদের রক্ষা কর। ১০১। হে সোম! তুমি আমাদের এ যজ্ঞ ও এ স্তুতি গ্রহণ করে এস এবং আমাদের বর্ধন কর।
১১। হে সোম! আমরা স্তুতিজ্ঞ, স্তুতিদ্বারা তোমাকে বর্ধিত করি, তুমি সুখদ হ{েয় এস।
১২। হে সোম! তুমি আমাদের ধনবর্ধক, রোগহস্তা, ধনদাতা, সম্পদ বর্ধক ও সুমিত্রযুক্ত হও।
১৩। হে সোম। গাভী যেরূপ সুন্দর তৃণে তৃপ্ত হয়, মনুষ্য যেরূপ স্বীয় গৃহে তৃপ্ত হয়, সেরূপ তুমি আমাদের হৃদয়ে তৃপ্ত হয়ে অবস্থান কর।
১৪। হে দেব সোম! যে মানুষ বন্ধুত্ব প্রযুক্ত তোমার স্তুতি করে, হে অতীতজ্ঞ ও দক্ষ সোম! তুমি তাকে অনুগ্রহ কর।
১৫। হে সোম! আমাদের অভিশাপ হতে রক্ষা কর ও পাপ হতে রক্ষা কর, সুখদান করে আমাদের হিতকারী হও।
১৬। হে সোম! তুমি বর্ধিত হও, তোমার বীর্য সকল দিক হতে ত্বৎসংযুক্ত হোক, তুমি আমাদের অন্নদাতা হও।
১৭। অত্যন্ত মদযুক্ত, হে সোম! সমস্ত লতাবয়ব দ্বারা বর্ধিত হও, শোভন অন্নযুক্ত হয়ে তুমি আমাদের সখা হও।
১৮। হে সোম! তুমি শত্রুহন্তা, তোমাতে রস ও যজ্ঞের অন্ন ও বীর্য সংযুক্ত হোক, তুমি বর্ধিত হ{েয় আমাদের অমরত্বের জন্য স্বর্গে উৎকৃষ্ট অন্ন ধারণ কর।
১৯। যজমানগণ তোমার হব্যদবারা যে তেজের পূজা করে, সে সমস্ত তেজ আমাদের যজ্ঞকে ব্যাপ্ত করুক। ধনবর্ধক, পাপত্রাতা, বীর যুক্ত ও পুত্রগণের রক্ষাকর্তা সোম। তুমি আমাদের গৃহে এস।
২০। যে সোমকে হব্য প্রদান করে, সোম তাকে গাভী, শীঘ্রগামী অশ্ব প্রদান করেন এবং লৌকিক কার্য কুশল, গৃহকার্য কুশল যাগানুষ্ঠান পর, মাতার অদৃত এবং পিতৃনাম উজ্জ্বলকারী পুত্র প্রদান করেন। ২১। হে সোম! তুমি যুদ্ধে অজেয়, সেনার মধ্যে জয়শীল স্বর্গের প্রাপয়িতা, বৃষ্টিদাতা, বলের রক্ষক, যজ্ঞে অবস্থাতা, সুন্দর নিবাসযুক্ত, সুন্দর যশযুক্ত এবং জয়শীল তোমাকে চিন্তা করে হর্যযুক্ত হই। ২২। হে সোম! তুমি এ সমস্ত ওষধি উৎপাদিত করেছ ও বৃষ্টির জল সৃষ্টি করেছ, তুমি সমস্ত গাভী সৃষ্টি করেছ। তুমি এ বিস্তীর্ণ অন্তরীক্ষকে বিস্তীর্ণ করেছ ও তার অন্ধকার জ্যোতি দ্বারা বিনষ্ট করেছ। ২৩। হে বলবান সোম দেব! তোমার কান্তিযুক্ত বুদ্ধি দ্বারা আমাদের ধনের অংশ প্রদান কর। কোন শত্রু তোমার হিংসা না করুক, যুধ্যমান দুপক্ষের মধ্যে তুমি বলিষ্ঠ, সংগ্রামে আমাদের দৌরাত্ম্য হতে রক্ষা কর।




৯২ সুক্ত।।


অনুবাদঃ
১। ঊষা দেবতাগণ আলোকে প্রকাশ করেছেন এবং অন্তরীক্ষের পূর্ব দিকে জ্যোতি প্রকাশিত করেন। যোদ্ধাগণ যেরূপ আয়ুধ সকলের সংস্কার করে, সেরূপ স্বীয় দীপ্তি দ্বারা জগতের সংস্কার করে গমনশীল, দীপ্তিমান এবং মাতৃগণ প্রতিদিন গমন করেন।
২। অরূণ ভানুকিরণ অনায়াসে উদিত হওয়ার পর রথ যোজনযোগ্য শুভ্রবর্ণ গাভীসকলকে ঊষা দেবতাগণ রথে যোজিত করলেন এবং পূর্বের ন্যায় সমস্ত প্রাণীকে জ্ঞানসুক্ত করলেন; তৎপরে দীপ্তিযিুক্ত ঊষা দেবতা সকল শুভ্রবর্ণ সূর্যকে আশ্রয় করলেন।
৩। নেত্রী ঊষা দেবতাগণ উজ্জ্বল অস্ত্রধারী যোদ্ধাদের ন্যায় এবং উদ্যোগ দ্বারাই দূরদেশে পর্যন্ত স্বীয় তেজের দ্বারা ব্যাপ্ত করেন। তারা শোভন কর্মকারী, সোমদায়ী, (দক্ষিণা) দাতা যজমানকে সকল অন্ন প্রদান করেন।
৪। ঊষা নর্তকীর ন্যায় রূপ প্রকাশ করছেন এবং গাভী যেরূপ (দোহনকালে) স্বীয় উধঃপ্রকাশ করে, সেরূপ ঊষাও স্বীয় বক্ষ প্রকাশিত করছেন। গাভী যেরূপ গোষ্ঠে শীঘ্র গমন করে, সেরূপ ঊষাও পূর্ব দিকে গমন করে বিশ্ব ভূবন প্রকাশ করতঃ অন্ধকার বিশ্লিষ্ট করছেন।
৫। ঊষার উজ্জ্বল তেজ প্রথমে পূর্ব দিকে দৃষ্ট হয় পরে সকল দিকে ব্যাপ্ত হয় এবং বিপুল অন্ধকার অপসারিত করে। পুরোহিত যেরূপ যজ্ঞে আজ্যদ্বারা যুপকাষ্ঠ অঞ্জিত করে, সেরূপ ঊষা স্বীয় রূপ প্রকাশ করছেন; স্বর্গ দুহিতা ঊষা দীপ্তিমান সূর্যের সেবা করছেন।
৬। আমরা নৈশ অন্ধকারের পারে এসেছি। ঊষা সমস্ত প্রাণীকে চৈতন্যযুক্ত করেছেন। দীপ্তিমতী ঊষা তোষামোদকারীর ন্যায় প্রীতি পাবার জন্য (স্বীয় দীপ্তি দ্বারাই) যেন হাসছেন। আলোক-বিকসিতাঙ্গী ঊষা আমাদের সুখের জন্য অন্ধকার বিনাশ করেছেন।
৭। গোতমবংশীয়গণ দীপ্তিমতী এবং সুনত বাক্যের উৎপাদয়িত্রী আকাশদুহিতার স্তুতি করেন। হে ঊষা! তুমি আমাদের পুত্রপৌত্রাদিযুক্ত, দাসপরিজনযুক্ত, অশ্বযুক্ত এবং গাভীযুক্ত অন্ন প্রদান কর।
৮। হে ঊষা! আমি যেন যশোযুক্ত বীরযুক্ত দাসবিশিষ্ট এবং অশ্বযুক্ত ধন প্রাপ্ত হই। হে সুভগে! তুমি সুন্দর যজ্ঞে স্তোত্র দ্বারা প্রীত হয়ে আমাদের অন্ন দান করে সে প্রভূত ধন প্রকাশিত কর।
৯। উজ্জ্বল ঊষা সমস্ত ভূবন প্রকাশিত করে, আলোক দ্বারা পশ্চিমদিকে বিস্তৃত হয়ে প্রকাশিত হচ্ছেন এবং সমস্ত জীবকে স্ব স্ব ব্যাপারে প্রবর্তিত করবার জন্য জাগিয়ে দেন; তিনি ধীশক্তি সম্পন্ন প্রাণীদের বাক্য শ্রবণ করেন।
১০। ব্যাধ পত্নী যেরূপে চলনশীল পক্ষীর পক্ষ ছেদন করে হিংসা করে, সেরূপ পুনঃ পুনঃ আবির্ভূত নিত্য এবং একরূপধারিণী ঊষা দেবী (দিনে দিনে) সমস্ত প্রাণীর জীবন হ্রাস করেন।
১১। ঊষা আকাশ প্রান্তকে (অন্ধকার হতে) বিযুক্ত করে সকলের নিকট জ্ঞাত হন এবংভগিনী নিশাকে অন্তর্হিত করেন। প্রণয়ী সূর্যের স্ত্রী ঊষা দেবী মনুষ্যগণের আয়ু (দিনে দিনে) হ্রাস করে বিশেষরূপে প্রকাশিত হন।
১২। (পশু পালক) যেরূপ পশু বিচরণ করায়, সুভগ্য এবং পূজনীয়া ঊষা সেরূপ (তেজ) বিস্তার করছেন এবং তেজ বিস্তার করে নদীর ন্যায় মহতী ঊষা (সমস্ত জগৎ) ব্যাপ্ত করছেন। তিনি দেবগণের যজ্ঞের অনুষ্ঠান করে সূর্যকিরণের সথে দৃষ্ট হন।
১৩। হে অন্নযুক্ত ঊষা! আমাদের বিচিত্র ধন প্রদান কর, যে ধনের দ্বারা আমরা পুত্র ও পৌত্রকে পালন করতে পারি।
১৪। হে গাভীযুক্ত, অশ্বযুক্ত, দ্যুতিমান এবং সুনত বাক্যযুক্ত ঊষা! অদ্য এ স্থানে ধনযুক্ত (যজ্ঞ অনুষ্ঠানার্থে) আমাদরে জন্য উদয় হও।
১৫। হে অন্নযুক্ত ঊষা! অদ্য অরুণ বর্ণ অশ্বসংযোজনা কর এবং আমাদের জন্য সমস্ত সৌভাগ্য আন। ১৬ হে দস্র অশ্বিদ্বয়! আমাদের গৃহ গাভীপূর্ণ ও রমনীয় বনপূর্ণ করার জন্য সমান মনোযোগী হয়ে তোমাদের রথ আমাদের গৃহাভিমুখে প্রবর্তিত কর।
১৭। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা আকাশ হতে প্রশংসনীয় জ্যোতি প্রেরণ করেছ তোমরা আমাদের জন্য বলপ্রদ অন্ন আন।
১৮। দ্যুতিমান আরোগপ্রদ সুবর্ণ রথযুক্ত এবং দস্র অশ্বিদ্বয়কে সোমপান করাবার জন্য অশ্বগণ ঊষাকালে জাগরিত হয়ে এস্থলে আনুক।




৯৩ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে অভীষ্টবর্ষী অগ্নি ও সোম! আমাদের এ আহ্বান শ্রবণ কর, স্তুতি গ্রহণ কর এবং হব্যদাতাকে সুখ প্রদান কর।
২। হে অগ্নি ও সোম! যে তোমাদের স্তুতি অর্পণ করছে, তাকে বলবান গো ও সুন্দর অশ্ব দান কর।
৩। হে অগ্নি ও সোম, যে তোমাদের আহুতি ও হব্য প্রদান করে, সে পুত্রপৌত্তাদির সাথে বীর্যযুক্ত সমস্ত আয়ু প্রাপ্ত হোক।
৪। হে অগ্নি ও সোম! তোমাদের যে বীর্যের দ্বারা পণির নিকট হতে গোরুপ অন্ন অপহৃত করেছিলে যে বীর্য দ্বারা বৃষয়ের পুত্রকে (১) বধ করে সকলের উপকারের জন্য একমাত্র জ্যোতিপূর্ণ সূর্যকে প্রাপ্ত হয়েছ, তা আমাদরে বিদিত আছে।
৫। হে অগ্নি ও সোম! তোমরা সমানকর্ম যুক্ত হয়ে আকাশে এ উজ্জ্বল নক্ষত্রগ্রহাদি ধারণ করেছ। তোমরা দোষাক্রান্ত নদী সকলকে প্রকটিত দোষ হতে মুক্ত করেছ।
৬। হে অগ্নি ও সোম! তোমোদের মধ্যে একজন (অর্থাঃ অগ্নিকে মাতরিশ্বা আকাশ হতে এনেছ (২) এবং আর এক জনকে (অর্থাঃ সোমকে) অদ্রির উপর হতে শ্যেনপক্ষী বলপূর্বক আহরণ করেছিল (৩) তোমরা স্তোত্রের দ্বারা বর্ধিত হয়ে যজ্ঞের নিমিত্ত ভূমি বিস্তীর্ণ করেছ।
৭। হে অগ্নি ও সোম! প্রদত্ত হব্য ভক্ষণ কর; আমাদের প্রতি অনুগ্রহ কর। হে অভীষ্টবর্ষী। আমাদের সেবা গ্রহণ কর; আমাদের প্রতি সুখপ্রদ ও রক্ষণযুক্ত হও এবং যজমানের রোগ ও ভয় দূর কর।
৮। হে অগ্নি ও সোম! যে যজমান দেবপরায়ণ অন্তঃকরণের সাথে হব্যদ্বারা অগ্নি ও সোমের পূজা করে তার ব্রত রক্ষা কর, তাকে পাপ হতে রক্ষা কর এবং সেই যাগ রত ব্যক্তিকে প্রভূত সুখ দাও।
৯। হে অগ্নি ও সোম! তোমরা সকল দেবগণমধ্যে প্রশংসনীয়, তোমরা সমানধনযুক্ত এবং একত্র আহ্বানযোগ্য, তোমরা আমাদের স্তুতি গ্রহণ কর।
১০। হে অগ্নি ও সোম! যে তোমাদের ঘৃত প্রদান করে, তাকে প্রভূত ধন দাও।
১১। হে অগ্নি ও সোম! আমাদরে এ হব্য গ্রহণ কর এবং একত্রে এস।
১২। হে অগ্নি ও সোম! আমাদের অশ্ব পালন কর। ক্ষীরাদি হব্যের জনয়িত্রী আমাদের গাভী সকল বর্ধিত হোক, আমরা ধনযুক্ত আমাদের ফল প্রদান কর এবং আমাদের যজ্ঞ ধনযুক্ত কর।



টীকাঃ
১। বৃষযস্য শেষঃ। সায়ণ। বৃষয় অর্থে ত্বষ্টা অস্থুর করেছেন, শেষ অর্থে পুত্র, বৃষয়স্য শেষঃ অর্থে ত্বষ্টা অসুরের পুত্র বৃত্র। যারা গ্রীক: ইলিয়ড বেদের পণির গল্পের রূপান্তর মনে করেন, তারা হলিয়েণের Brises নাম বেদের বৃষয় নামের প্রতিরূপ মনে করেন। In the Veda, before the bright powers reconquer the light that has been stolen by Pani, they are said to have conquered the offspring of Brisaya. That daughter of Brises is restored to Achilles when his glory begins to set, just as all the first loves of solar heroes return to them in the last moments of their earthly career. Max Muller’s Science of Language.
২। ৬০ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।
৩। ৮০ সুক্তের ২ ঋকের টীকা দেখুন।




৯৪ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। আমরা বুদ্ধিদ্বারা পূজনীয় সর্বভূতজ্ঞ অগ্নির রথের ন্যায় এ স্তুতি প্রস্তুত করি। অগ্নিভজনে আমাদের বুদ্ধি উৎকৃষ্ট হয়, হে অগ্নি! তুমি আমাদের বন্ধু থাকলে আমরা হিংসিত হব না।
২। হে অগ্নি! যার নিমিত্ত তুমি যজ্ঞ কর, তার অভিলাষ পূর্ণ হয়। সে উৎপীড়িত না হয়ে বাস করে, মহাবীর্য ধারণ করে এবং বর্ধিত হয়। দারিদ্র্য তাকে প্রাপ্ত হতে পারে না। হে অগ্নি! তুমি বন্ধু থাকলে আমরা হিংসিত হব না।
৩। হে অগ্নি! আমরা যেন তোমাকে সম্যক প্রজ্বলিত করতে সমর্থ হই। তুমি আমাদের যজ্ঞ সাধিত কর, যেহেতু দেবগণ (তোমাতে) প্রক্ষিপ্ত হব্য ভক্ষণ করেন। তুমি আদিত্যগণকে আন, আমরা তাদের কামনা করি। হে অগ্নি! তুমি বন্ধু থাকলে আমরা হিংসিত হব না।
৪। হে অগ্নি! আমরা ইন্ধন সংগ্রহ করি। তোমাকে জানিয়ে হব্য প্রদান করি। তুমি আমাদের আয়ু বৃদ্ধির জন্য যজ্ঞ সম্পন্ন কর। হে অগ্নি! তুমি বন্ধু থাকলে আমরা হিংসিত হব না।
৫। তার রশ্মি সকল প্রাণীগণকে রক্ষা করে বিচরণ করে। দ্বিপদ ও চতুষ্পদ জন্তুগণ তার কিরণে বিচরণ করে। তুমি বিচিত্র দীপ্তিযুক্ত এবং সকল বস্তু প্রদর্শন কর। তুমি ঊষা হতেও মহৎ। হে অগ্নি! তুমি বন্ধু থাকলে আমরা হিংসিত হব না।
৬। হে অগ্নি! তুমি অধুর্যু তুমি মুখ্য হোতা, তুমি প্রশান্তা পোতা, তুমি জন্ম হতেই পুরোহিত (১)। ঋত্বিকের সমস্ত কার্য তুমি অবগত আছ, অতএব তুমি যজ্ঞ সম্পূর্ণ কর। হে অগ্নি! তুমি বন্ধু থাকলে আমরা হিংসিত হব না।
৭। হে অগ্নি! তুমি সুন্দর তথাপি সকল দিকেই সদৃশ। তুমি দুরস্থ তথাপি নিকটে দীপামান হও। হে দেব অগ্নি! তুমি রাতের অন্ধকার ভেদ করে প্রকাশিত হও। হে অগ্নি! তুমি বন্ধু থাকলে আমরা হিংসিত হব না।
৮। হে দেবগণ! সোমাভিষবকারী যজমানের রথ সর্বাগ্রবর্তী কর, আমাদের অভিশাপ শত্রুগণকে অভিভূত করুক, আমাদের এ বাক্য অবগত হও এবং পূর্ণ কর, হে অগ্নি! তুমি আমাদের বন্ধু থাকলে আমরা হিংসিত হব না।
৯। তোমার সাংঘাতিক অস্ত্র দ্বারা দৃষ্ট ও দুবৃদ্ধি লোকদের বিনাশ কর, দূরবর্তী বা নিকটবর্তী শত্রুগণকে বিনাশ কর, অনন্তর তোমার স্তুতিকারী যজমানের জন্য সুগম পথ করে যাও। হে অগ্নি! তুমি বন্ধু থাকলে আমরা হিংসিত হব না।
১০। হে অগ্নি! যখন তোমার দীপ্যমান লোহিত বর্ণ এবং বায়ুগতি অশ্বদ্বয় রথে সংযোজিত কর, তখন তুমি বৃষভের ন্যায় রব কর এবং বনের বৃক্ষসকলকে ধূমরূপ কেতু দ্বারা ব্যাপ্ত কর। হে অগ্নি!। তুমি বন্ধু থাকলে আমরা হিংসিত হব না।
১১। পক্ষীগণও তোমার শব্দ শ্রবণ করে ভীত হয়। তোমার কতকগুলি শিখা তৃণদগ্ধ করে যখন সকল দিকে বিস্তুত হয় তখন সমস্ত অরণ্য তোমার ও তোমার রথের সুগম হয়। হে অগ্নি! তুমি বন্ধু থাকলে আমরা হিংসিত হব না।
১২। মিত্র ও বরুণ এ স্তোতাকে ধারণ করুন, অন্তরীক্ষচারী মরুৎগণের ক্রোধ অত্যন্ত অধিক। আমাদের সুখী কর ও এ মরুৎগণের মন পুনরায় প্রসন্ন হোক। হে অগ্নি! তুমি বন্ধু থাকলে আমরা হিংসিত হব না।
১৩। হে দ্যুতিমান অগ্নি! তুমি সকল দেবগণের পরম বন্ধু তুমি শোভনীয় এবং হজ্ঞে সকল ধনের নিবাস স্থান, তোমার বিস্তীর্ণ যজ্ঞ গৃহে আমরা যেন অবস্থান করি। হে অগ্নি! তুমি আমাদের বন্ধু আমরা যেন হিংসিত না হই।
১৪। স্বকীয় স্থানে প্রজ্জ্বলিত সোমরস দ্বারা আহত হয়ে যখন তুমি পুজিত হও তখন তুমি সুখ সম্ভোগ কর। তুমি আমাদের সুখকর হয়ে হব্যদাতাকে রমণীয় ফল ও ধন দান কর, হে অগ্নি! তুমি আমাদের বন্ধু থাকলে আমরা হিংসিত হব না।
১৫। হে শোভন ধনযুক্ত, অখন্ডণীয় অগ্নি! যে সর্ব যজ্ঞে বর্তমান যজমানকে তুমি পাপ হতে নিষ্কৃতি প্রদান কর এবং কল্যাণ কর বল প্রদান কর (সে সমৃদ্ধ হয়)। আমরা তোমার স্তোতা, আমরাও যেন পুত্তপৌত্রাদির সাথে তেমার ধনযুক্ত হই।
১৬। হে দেব অগ্নি! তুমি সৌভাগ্য অবগত আছ, একাজে তুমি আমাদের আয়ু বর্ধিত কর। মিত্র, বরুণ, অদিতি, সিন্ধু, পৃথিবী এবং দ্যৌঃ আমাদের রক্ষা করুন।



টীকাঃ
১। যজ্ঞের প্রধান কয়েক জন পুরোহিতের নাম এ ঋকে পাওয়া যায়। অধ্বর্যু হব্য দান করতেন, হোতা দেবগণকে আহ্বান করতেন, পোতা যজ্ঞ শোধন করেন, দোষাদি হলে তার নিবারণ করেন। ৩৬ সুক্তের ৭ ঋকের টীকা দেখুন।




৯৫ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। বিভিন্নরূপ বিশিষ্ট দিন রাত শোভনীয় প্রয়োজন বশতঃ বিচরণ করছে, তারা পরস্পর পরস্পরের বৎসকে পালন করে (১)। সূর্য একের নিকট হতে অন্ন প্রাপ্ত হন, অগ্নি অপরের নিকট শোভনীয় দীপ্তিযুক্ত হয়ে প্রকাশিত হন।
২। দশ অঙ্গুলি একত্র হয়ে অবিরত কাষ্ঠ ঘর্ষণ করে ত্বষ্টার গর্ভ স্বরূপ ও সর্বভূতে বর্তমান (২) অগ্নিকে উৎপন্ন করে। সে অগ্নি তীক্ষ্মতেজা, যশস্বী ও সকল জনপদে দীপ্যমান। এ অগ্নিকে সকল স্থানে নিয়ে যায়।
৩। সে অগ্নির তিনটি জন্মস্থান অলঙ্কৃত করে। সমুদ্রে এক, আকাশে এক এবং অন্তরীক্ষে এক (৩)। তিনি (সূর্য রূপে) ঋতুগণ বিভাগ করে পৃথিবীর সকল প্রাণীর হিতার্থ পূর্ব প্রদেশে যথাক্রমে সম্পাদন করেছেন (৪)।
৪। অন্তর্হিত অগ্নিকে তোমাদের মধ্যে কে জানে? সে অগ্নি পুত্র হয়েও হব্যদ্বারা তার মাতাদের জন্মদান করেন (৫)। মহৎ ও মেধাবি ও হব্যযুক্ত অগ্নি অনেক জলের গর্ভরূপ এবং সমুদ্র হতে নির্গত হন (৬)।
৫। কুটিল মেঘের পার্শ্বদেশে যশস্বী বিদ্যুতাগ্নি ঊর্ধ্বে জলে শোভনীয় দীপ্তির সাথে প্রকাশিত হয়ে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হন, অগ্নি ত্বষ্টার সাথে (৭) উৎপন্ন হলে উভয় পৃথিবী ভীত হন এবং সে সিংহের অভিমুখে এসে তাকে সেবা করেন।
৬। উভয় পৃথিবী (৮) সুন্দরী স্ত্রীর ন্যায় তাকে সেবা করে এবং শব্দায়মান গাভীর ন্যায় নিকটে থেকেতাকে বৎসের ন্যায় যত্ন করেন। দক্ষিণ ভাগে অবস্থিত ঋত্বিকগণ যে অগ্নিকে হব্য দ্বারা সেচন করেন, তিনি সকল বলের মধ্যে বলাধিপতি হয়েছিলেন।
৭। তিনি সবিতার ন্যায় তার রশ্মিরূপ উভয় বাহু বার বার বিস্তার করেন এবং সে ভয়ংকর অগ্নি উভয় পৃথিবীকে অলঙ্কৃত করে কর্ম সাধন করেন। তিনি সকল বস্তু হতে দীপ্ত ও সারভূত রস ঊর্ধ্বে আকর্ষণ করেন এবং মাতৃদের নিকট হতে আচ্ছাদক নূতন বসন সৃষ্টি রেন (৯)।
৮। যখন তিনি অন্তরীক্ষে গমনশীল জলদ্বারা সংযুক্ত হয়ে দীপ্ত ও উৎকৃষ্ট রূপ ধারণ করেন, তখন সে মেধাবী সর্ব লোকধারক অগ্নি সকল জলের মূলভূত অন্তরীক্ষ তেজদ্বারা আচ্ছাদন করেন। উজ্জ্বল অগ্নি দ্বারা বিস্তারিত সে দীপ্তি তেজসংহতি রূপ হয়েছিল।
৯। তুমি মহৎ, তোমার সর্ব পরাজয়ী দীপ্যমান ও বিস্তীর্ণ তেজ অন্তরীক্ষে ব্যাপ্ত আছে। হে অগ্নি! তুমি আমাদের দ্বারা প্রজ্বালিত হয়ে তোমার নিজের সমস্ত অহিংসিত ও পালনক্ষম তেজদ্বারা আমাদের পালন কর।
১০। অগ্নি আকাশগামী ঊর্মি সমূহ প্রবাহরূপে ঢেলে দেন এবং সে নির্মল উর্মিসমূহ দ্বারা পৃথিবী ব্যাপ্ত করে দেন; তিনি জঠরে সকল অন্ন ধারণ করেন এবং সে জন্য সে বৃষ্টিজাত নূতন শস্যের মধ্যে বাস করেন।
১১। হে বিশুদ্ধকারী অগ্নি! তুমি কাষ্ঠে বৃদ্ধি পেয়ে আমাদের ধনযুক্ত অন্ন দানার্থ দীপ্তিমান হও। মিত্র, বরুণ, অদিতি, সিন্ধু, পৃথিবী ও দ্যৌঃ আমাদের রক্ষা করুন।

টীকাঃ
১। সূর্য রাতরে গর্ভে অস্তর্হিত থেকে রাতের চরম ভাগে প্রকাশ পায়, অতএব সূর্য রাতের পুত্র। অগ্নি দিবাভাগে বর্তমান থাকলেও জ্যোতি রহিত, অতএব অস্তর্হিতের ন্যায় থাকে, দিনের শেষে যুক্ত হয়ে জ্যোতি প্রাপ্ত হয়, অতএব অগ্নি দিনের পুত্র। সায়ণ। রাতের যা কর্তব্য অর্থাৎ স্বপুত্র সূর্যকে রস পান করান, তা দিন করে এবং দিনের যা কর্তব্য অর্থাৎ স্বপুত্র অগ্নিকে রস পান করান, তা রাত করে। সায়ণ।
২। সায়ণ ত্বষ্ট, অর্থ বায়ু করেছেন।
৩। অর্থাৎ সমুদ্রে বাড়াবানলের জন্ম, আকাশে সূর্য রূপ অগ্নির জন্ম এবং অন্তরীক্ষে বিদ্যুৎরূপ অগ্নির জন্ম। সায়ণ।
৪। দিক ও কালের স্বভাবতঃ কোন ভেদ নেই, পূর্বাদি দিক নির্ণয় এবং বসন্তাদি কাল নির্ণয় সূর্যের গতি দ্বারাই নিষ্পন্ন হয়, অতএব সূর্যই সে দিক ও কাল ভেদের কর্তা। সায়ণ।
৫। বিদ্যুৎরূপ অগ্নি মেঘস্থ জলের পুত্রস্থানীয়, অথচ অগ্নি হব্যদ্বারা সে মাতারূপ বৃষ্টির জলকে জন্ম দেয়। সায়ণ।
৬। অর্থাৎ বিদ্যুৎরূপে অগ্নি মেঘস্থ অনেক জলের গর্ভ অর্থাৎ সন্তান স্থানীয় আবার সূর্যরূপ অগ্নি সমুদ্র হতে নির্গত হন। সায়ণ।
৭। মূলে ত্বষ্টুঃ আছে, সায়ণ অর্থ করেছেন দীপ্তাৎ।
৮। অথবা দিন ও রাত উভয় কাষ্ঠ, যার ঘর্ষণে অগ্নি উৎপন্ন হয়। সায়ণ।
৯। অর্থাৎ মাতৃস্থানীয় বৃষ্টিজলের নিকট হতে নুতন বসন দ্বারা সমস্ত জগতের আচ্ছাদক তেজ সৃষ্টি করেন। সায়ণ।



৯৬ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। অগ্নি বলদ্বারা (কাষ্ঠ ঘর্ষণে) উৎপন্ন হয়ে তৎক্ষাণাৎ পুরাতনের ন্যায় প্রকৃতই সকল মেধাবীর বজ্ঞ গ্রহণ করেন, মেঘের জল ও শব্দ সে বিদ্যুৎরূপ অগ্নিকে মিত্র বলে গ্রহণ করেন। দেবগণ সে ধনদাতা অগিনকে (দূতরূপে) নিয়োগ করেছেন।
২। তিনি অয়ূর পুরাতন স্তুতিগর্ভ উকথে তুষ্ট হয়ে মনুদের সন্তুতি সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি আচ্ছাদনকারী তেজদ্বারা আকাশ ও অন্তরীক্ষ ব্যাপ্ত করেছেন। দেবগণ সে ধনদাতা অগ্নিকে দূতরূপে নিয়োগ করেছেন।
৩। হে মানুষগণ! স্বামীর (অগ্নির) নিকট গিয়ে সকলে তার স্তুতি কর। তিনি দেবগণের মধ্যে মূখ্য, যজ্ঞের সাধনকর্তা, হব্যদ্বারা আহুত এবং স্তোত্রদ্বারা তুষ্ট হন; তিনি অন্নের পুত্র, প্রজাদের ভরণকারী এবং দানশীল। দেবগণ সে ধনদাতা অগ্নিকে দূতরূপে নিয়োগ করেছেন।
৪। সে অন্তরীক্ষস্থ মাতরিশ্বা (১) অনেক বরণীয় পুষ্টি দান করেন। তিনি স্বর্গদাতা, সকল লোকের রক্ষক এবং দ্যাবা পৃথিবীর উৎপাদক। অগ্নি আমার তনয়কে গমনের পথ দেখিয়ে দিন। দেবগণ সে ধনদাতাকে (অগ্নিকে) দূতরূপে নিয়োগ করেছেন।
৫। রাত ও দিন পরস্পরের বর্ণ পরস্পর পূনঃপুনঃ বিনাশ করেও ঐক্যভাবে একই শিশুকে পুষ্টি দান করে। সে দীপ্তিমান অগ্নি আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে প্রভা বিকাশ করেন। দেবগণ সে ধনদাতা অগ্নিকে দূতরূপে নিয়োগ করেছেন।
৬। অগ্নি ধনের মূল, নিবাসহেতু, অর্থের দাতা, যজ্ঞের কেতু এবং উপাসকের অভিলাষ সিদ্ধিকারক। অমরত্বভাজী দেবগণ এ ধনদাতা অগ্নিকে দূতরূপে নিয়োগ করেছেন।
৭। অগ্নি পূর্বকালে এবং বর্তমানকালে সকল ধনের আবাস স্থান, যা কিছু জন্মেছে বা জন্মাবে তার নিবাস স্থান, যা কিছু বিদ্যমান আছে এবংভবিষ্যতে যে ভুরি ভূরি পদার্থ উৎপন্ন হবে তার রক্ষক। দেবগণ সে ধনদাতা অগ্নিকে দূতরূপে নিয়োগ করেছেন।
৮। ধনদাতা অগ্নি জঙ্গম ধনের অংশ আমাদের দান করুন, ধনদাতা স্থাবর ধনের অংশ আমাদের দান করুন, ধনদাতা আমাদের বীরযুক্ত অন্ন দান করুন, ধনদাতা আমাদের দীর্ঘ আয়ু দান করুন।
৯। হে বিশুদ্ধকারি অগ্নি! এরূপে কাষ্ঠে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে তুমি আমাদের ধনযুক্ত অন্ন দেবার জন্য প্রভা বিকাশ কর। মিত্র, বরুণ, অদিতি, সিন্ধু, পৃথিবী ও দ্যৌঃ আমাদের রক্ষা করুন।

টীকাঃ
১। মূলে মাতরিশ্বা আছে। মাতরি সর্বস্য জগতো নির্মাতর্ষন্তরীক্ষে শ্বসন বর্ধমানঃ। সায়ণ। এস্থলে মাতরিশ্বা অর্থে বায়ু নয়, মাতরিশ্বা অগ্নির বিশেষণ, তা সায়ণ স্বীকার করেন। ৬০ সুক্তের ১ ঋকের মাতরিশ্বা সম্বন্ধে টীকা দেখুন।


৯৭ সুক্ত। ।

অনুবাদঃ
১। হে অগ্নি! আমাদের পাপ বিনষ্ট হোক, আমাদের ধন প্রকাশ কর, আমাদের পাপ বিনষ্ট হোক।
২। শোভনীয় ক্ষেত্রের জন্য, শোভনীয় মার্গের জন্য এবং ধনের জন্য তোমাকে অর্চনা করি, আমাদের পাপ বিনষ্ট হোক।
৩। এ স্তোতৃদের মধ্যে কুৎস যেরূপ উৎকৃষ্ট স্তোতা, সেরূপ আমাদের স্তোতৃগণও উৎকৃষ্ট, আমাদের পাপ বিনষ্ট হোক।
৪। হে অগ্নি! যেহেতু তোমার স্তোতৃগণ, পুত্রপৌত্রাদি লাভ করে, অতএব আমরাও (তোমার স্তুতি করে) পুত্রপৌত্রাদি লাভ করব, আমাদের পাপ বিনষ্ট হোক।
৫। যেহেতু শত্রুবিজয়ী অগ্নির দীপ্তিসমূহ সর্বত্র গমন করে, অতএব আমাদের পাপ বিনষ্ট হোক।
৬। হে অগ্নি! তোমার মুখ স্বরূপ শিখা সকল দিকে, তুমি আমাদের রক্ষক হও, আমাদের পাপ বিনষ্ট হোক।
৭। হে সর্বতোমুখ অগ্নি! নৌকায় যেরূপ নদী পার হওয়া যায়, সেরূপ আমাদের শত্রুসমূহ হতে পার করে দাও, আমাদের পাপ বিনষ্ট হোক।
৮। নৌকায় দ্বারা যেরূপ নদী পার হওয়া যায়, আমাদের কল্যাণের জন্য তুমি সেরূপ আমাদের শত্রু হতে পার করিয়ে পালন কর; আমাদের পাপ বিনষ্ট হোক।



HYMN XCVII. Agni.










৯৮ সুক্ত।।



অনুবাদঃ
১। আমরা যেন শ্বৈানরের অনুগ্রহে থাকি, তিনি ভূবনসমূহের সেবিতব্য রাজা। বৈশ্বানর এই (কাষ্ঠদ্বয়) হতে জন্মগ্রহণ করেই এ বিশ্ব অবলোকন করেন এবং সূর্যের সাথে একত্রে গমন কেরন।
২। অগ্নি আকাশে (সূর্য রূপে) বর্তমান, পৃথিবীতে (গার্হপত্যাদি অগ্নিরূপে) বর্তমান এবং সমস্ত শস্যে বর্তমান (তা পরিপক্ক করবার জন্য) তাতে প্রবেশ করেছেন। সে বলযুক্ত বৈশ্বানর অগ্নি দিবা এবং রাত্রে আমাদের শত্রু হতে রক্ষা করুন।
৩। হে বৈশ্বানর! তোমার সম্বন্ধে এ (যজ্ঞে) সফল হোক; আমরা যেন বহু মূল্য ধন প্রাপ্ত হই; মিত্র, বরুণ, অদিতি, সিন্ধু, পৃথিবী ও দ্যৌঃ আমাদের সে ধন রক্ষা করুন।




৯৯ সুক্ত ।।



অনুবাদঃ
১। আমরা সর্বভূতজ্ঞ অগ্নির উদ্দেশে সোম অভিষব করি। যারা আমাদের প্রতি শত্রুর ন্যায় আচরণ করে, তিনি তাদের ধন দহন করুন। যেরূপ নৌকাদ্বারা নদী পার করা হয়, সেরূপ তিনি আমাদের সমস্ত দুঃখ পার করিয়ে দিন; অগ্নি আমাদের পাপসমূহ পার করিয়ে দিন।







১০০ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। যে ইন্দ্র, অভীষ্টদাতা ও বীর্যযুক্ত এবং দিব্যলোক ও পৃথিবীর সম্রাট, যিনি বৃষ্টিদান করেন সংগ্রামে আহ্বানের যোগ্য, তিনি মরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
২। সূর্যের ন্যায় যার গতি অন্যের অপ্রাপ্য, যিনি সংগ্রামে শত্রুহন্তা ও রিপুশোষক, যিনি স্বকীয় গমনশীল সখা (মরুৎগণের) সাথে অভীষ্ট দ্রব্য প্রভূতরূপে দান করেন, তিনি মরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
৩। সুর্যের কিরণের ন্যায় যার সতেজ ও দুষ্প্রাপণীয় কিরণ সমূহ বৃষ্টি জল দোহন করে চারদিকে প্রসারিত হয়, সে শত্রু পরাজয়ী এবং স্বপৌরুষে লদ্ধবিজয় ইন্দ্র মরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
৪। তিনি অঙ্গিরাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অঙ্গিরা, অভীষ্টদাতাদের মধ্যে প্রধান অভীষ্টদাতা, সখাদের মধ্যে উৎকৃষ্ট সখা হয়ে অর্চনীয়দের মধ্যে বিশেষ অর্চনাভ্যজন এবং স্তুতিভাজনদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্তুতিভাজন হয়েছেন। তিনি মরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
৫। ইন্দ্র রুদ্রদের সহায়তায় বলিষ্ঠ হয়ে, মানুষের সংগ্রামে শত্রুদের পরান্ত করে তার সহবাসী মরুৎগণের সাথে অন্নোৎপাদক বৃষ্টি প্রেরণ করে, মরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
৬। শত্রুহন্তা, সংগ্রামকর্তা, সৎলোকের অধিপতি এবং বহু লোকের আহুত (১) ইন্দ্র অদ্য আমাদের লোকেদের সূর্যের আলো ভোগ করতে দিন (২) তিনি মরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
৭। সহায়ভূত মরুৎগণ তাকে সংগ্রামে শব্দ দ্বারা উত্তেজিত করেন মানুষগণ তাকে ধনের রক্ষক করুন, তিনি সকল ফলদায়ী কর্মের ঈশ্বর। তিনি মরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
৮। নেতৃগণ যুদ্ধে রক্ষার্থ এবং ধন লাভার্থ সে নেতা ইন্দ্রের শরণ গ্রহণ করে, কেন না ইন্দ্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধক অন্ধকারে আলোক প্রদান করেন। তিনি মুরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
৯। তিনি বাম হস্তদ্বারা হিংসকদের নিবারণ করেন এবং দক্ষিণ হস্তদ্বারা যজমানদত্ত হব্য গ্রহণ করেন। তিনি স্তোতৃদ্বারা স্তুত হয়ে ধন প্রদান করেন। তিনি মরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
১০। তিনি সহায় মরুৎগণের সাথে ধন দান করেন, তিনি অদ্য সকল মানুষ কর্তৃক তার রথদ্বারা পরিচিত হচ্ছেন। তিনি নিজ বল দ্বারা অশংসনীয় শত্রুদের অভিভূত করেছেন। তিনি মরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
১১। তিনি অনেকের দ্বারা আহূত হয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হয়ে, অথবা যারা বন্ধু নয় তাদের নিয়ে সংগ্রামে গমন করেন এবং সে শরণাগত পুরুষদের ও তাদের পুত্র ও পৌত্রের জয় সাধন করেন। তিনি মরুৎগণের সঙ্গে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
১২। তিনি বজ্রধারী, দুস্থ্যুহস্তা, ভীম, উগ্র, সহস্রজ্ঞানযুক্ত, বহু স্তুতিভাজন এবং মহৎ, তিনি সোমরসের ন্যায় পঞ্চমশ্রেণীর বলদাতা (৩)। তিনি মরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
১৩। তার বজ্র অতিশয় শব্দ করে, তিনি শোভনীয় জল দান করেন, তিনি সুর্যের ন্যায় দীপ্তিমান, তিনি গর্জন করেন, তিনি সদয় কর্মে রত; ধন ও ধনদান তাকে সেবা করে। তিনি মরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
১৪। সকল বলের পরিমাণ স্বরূপ যার বল উভয় পৃথিবীকে সকল সময়ে সকল দিকে পালন করছে, তিনি আমাদের যজ্ঞ দ্বারা পরিতুষ্ট হয়ে আমাদের পার করে দিন। তিনি মরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
১৫। দেবগণ বা মানুষ বা জল সমূহ যে দেবের বলের অন্ত পায়নি, তিনি নিজ বল দ্বারা পৃথিবী ও আকাশ হতেও অতিরিক্ত হয়েছেন। তিনি মরুৎগণের সাথে আমাদের রক্ষণে তৎপর হোন।
১৬। দীর্ঘাবয়ব, অলঙ্কারধারী ও আকাশবাসী রোহিতবর্ণ ও শ্যামবর্ণ অশ্বদ্বয় ঋৃজাশ্ব নামক রাজর্ষিকে ধন প্রদানের জন্য অভীষ্ট ইন্দ্রের যুক্ত রথাগ্রধারণ করে হর্যযুক্ত নহুষের প্রজাদের (৪) মধ্যে প্রকাশিত হচ্ছে।
১৭। হে কামবর্ষী ইন্দ্র! বৃষাগিরের পুত্র ঋজ্রাশ্ব, অশ্বরীষ, সহদেব, ভয়মান ও সুরাধা (৫) তোমার প্রীতিহেতু তোমার স্তোত্র উচ্চারণ করছে।
১৮। তিনি অনেকের দ্বারা আহূত হয়ে এবং গমনশীল মরুৎগণের দ্বারা যুক্ত হয়ে পৃথিবী নিবাসী দস্যু ও শিম্যুদের প্রহার করে হননকারী বজ্রদ্বারা বধ করলেন, পরে আপন শেতবর্ণ মিত্রদের সাথে ক্ষেত্র ভাগ করে নিলেন (৬) শোভনীয় বজ্রযুক্ত ইন্দ্র সূর্য এবং জল সমুদয় প্রাপ্ত হলেন।
১৯। সর্বকালে বর্তমান ইন্দ্র আমাদের পক্ষ হয়ে বলুন, আমরাও অকুটিল গতি বিশিষ্ট হয়ে অন্ন ভোগ করি। মিত্র, বরুণ, অদিতি, সিন্ধু, পৃথিবী ও দ্যৌঃ আমাদের রক্ষা করুন।



টীকাঃ
১। শত্রুগণ গো অপহরণ করলে ঋজ্রাশ্বাদি ঋষিগণ তাদরে সঙ্গে যুদ্ধার্থ নির্গত হয়ে এ সুক্ত দ্বারা ইন্দ্রকে স্তব করেছিলেন। সায়ণ।
২। অর্থাৎ ইন্দ্র অদ্য আমাদের লোককে সুর্যের আলোক দান করুন এবং শত্রুদের দৃষ্টিতে অন্ধকার সংযোগ করুন। সায়ণ। শবসা পঞ্চজন্যঃ অর্থাৎ বলের দ্বারা পঞ্চ শ্রেণীর রক্ষক। সায়ণ। সে পঞ্চশ্রেণী কি? সায়ণ দুটি অর্থ করেছেন যথা গন্ধর্বা অপ্সরসো দেবা অসুরা রক্ষাংসি পঞ্চজনাঃ। নিষাদপঞ্চমাশ্চত্বারো বর্ণা বা। এ দুটির কোনও অর্থই ঠিক নয়। পঞ্চজন অর্থ পাঞ্চাব নিবাসী সমস্ত আর্যজাতি সমূহ। ৮৯ সুক্তের ১০ ঋকের টীকা দেখুন।
৪। নহুষীষু বিক্ষু শব্দের অর্থ নহুষ সম্বন্ধীয় প্রজা। সায়ণ নহুষাঃ অর্থ মনুষ্যাঃ করেছেন এবং বিক্ষু অর্থ সেনালক্ষনাসু প্রজাসু করেছেন। অতএব তিনি ঋকের ভাব এরূপ করেছেন যে অশ্ব যুক্ত হয়ে সংগ্রামে আসেন। মনুষ্য সৈন্যেরা তা দেখছে। কিন্তু নহুষ একজন রাজার নাম ৩১ সুক্তের ১১ ঋক দেখুন।
৫। এ সুক্তের ঋষিগণ।
৬। সায়ণ দস্যু অর্থ শত্রু, শিম্যু অর্থ রাক্ষ এবং শ্বেতবর্ণ মিত্র অর্থ অলঙ্কার দ্বারা দীপ্তাঙ্গ মরুৎগণ এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু এ শ্বেতবর্ণ আর্যদের সাথে দস্যু আদিম জাতিদের সঙ্গে যুদ্ধের উল্লেখ আছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সে আদিম জাতিদের পরাস্ত করে আর্যগণ তাদের ক্ষেত্র কেড়ে নিয়ে আপনাদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিলেন।


(C) https://www.ebanglalibrary.com
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।