০৫ জানুয়ারী ২০১৮

ঋগ্বেদ সংহিতা - প্রথম মণ্ডলঃবিভিন্ন ঋষিঃ সুক্তঃ ৪৬-৬০

৪৬ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। প্রিয় ঊষা এর পূর্বে দেখা দেন নি, ঐ তিনি আকাশ হতে অন্ধকার দূর করছেন। হে অশ্বিদ্বয়! তোমাদের প্রভূত স্তুতি করি।
২। যে দর্শনীয় সমুদ্রপুত্র দেবদ্বয় মনের দ্বারা ধন দান করেন এবং আমরা যজ্ঞ সম্পাদন করলে নিবাসস্থান প্রদান করেন।
৩। হে অশ্বিদ্বয়! তেমাদের রথ যখন প্রশংসিত স্বর্গলোকে আশ্বগণ দ্বারা নীত হয়, তখন আমরা আমাদরে স্তুতি উচ্চারণ করি।
৪। হে নরদ্বয়! পুরণকারী, পালনকারী, যজ্ঞদর্শী ও জলশোষক সূর্য আমাদের হবা দ্বারা দেবগণকে পূরণ করেন।
৫। হে নাসত্যদ্বয়! আমাদরে প্রিয় স্তুতি গ্রহণ করে তোমাদের বৃদ্ধি পরিচালক যে তীব্য সোম আছে তা পান কর।
৬। হে অশ্বিদ্বয়! যে জ্যোতির্ময় অন্ন অন্ধকার বিনাশ করে আমাদরে তৃপিত দান করে, সে অন্ন আমাদরে প্রদান কর।
৭। হে অশ্বিদ্বয়! স্তুতি সমূহের পারে গমনার্থে নৌকারূপে এস, আমাদরে অভিমুখে তোমাদের রথ সংযোজিত কর।
৮। তোমাদের আকাশ অপেক্ষাও বিস্তীর্ণ যান সমুদ্রের ঘাটে রয়েছে, ভূমিতে রথ রয়েছে; সোমরস তোমাদের যজ্ঞ কর্মে মিশ্রিত হয়েছে।
৯। হে কবগণ! অশ্বিদ্বয়কে জিজ্ঞাসা কর, দিব্যলোক হতে সুর্যরশ্মি আসে, বৃষ্টির উৎপত্তি স্থানে অর্থাৎ অন্তরীক্ষে আমাদের নিবাস হেতু জ্যেতিঃ আবিভূত হয়; হে অশ্বিদ্বয়। তোমাদের রূপ এর মধ্যে কোন স্থানে রাখতে ইচ্ছা কর?
১০। সূর্যের প্রভা ঊষাকালের আলোক উৎপন্ন করেছিল, সূর্য উদিত হয়ে হিরণ্যের ন্যায় হয়েছিলেন, অগ্নি কৃষ্ণবর্ণ হয়ে আপন ঝজহ্বা দ্বারা প্রকাশ পেয়েছিলেন।
১১। রাত্রের পারে গমনার্থ সূর্যের সুন্দর পথ নির্মিত হয়েছিল, সূর্যের বিস্তুত দীপ্তি দৃষ্ট হয়েছিল।
১২। অশ্বিদ্বয় হর্ষ নিমিত্ত সোমপান করেন। স্তুতিকারক তাদের পুন:পুন: রক্ষণ কার্য বিভূষিত করেন।
১৩। হে সুখদাতা অশ্বিদ্বয়! তোমরা যেরূপ মনুতে নিবাস করেছিলে সেরূপ নিবাস করে সোমপান নিমিত্ত এবং স্তুতির জন্য আগমন কর।
১৪। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা চতুর্দিকবিচারী; তোমাদের শোভা অনুসরণ করে ঊষা আগমন করুন; রাতে সম্পাদিত যজ্ঞের হব্য তোমরা গ্রহণ কর।
১৫। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা উভয়ে পান কর, উভয়েই প্রশস্ত রক্ষণ কার্য দ্বারা আমাদের সুখ দান কর।






৪৭ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে যজ্ঞবর্ধয়িতা অশ্বিদ্বয়! এ অতিশয় মধুর সোম তোমাদের জন্য অভিযুক্ত হয়েছে। এটি কল্য প্রস্তুত হয়েছে, পান কর এবং হব্যদাতা যজমানকে রমনীয় ধন দান কর।
২। হে অশ্বিদ্বয়! তোমাদের ত্রিবন্ধন যুক্ত ও ত্রিকোণ ও সুরূপ রথে আগমন কর; কবপুত্রেরা যজ্ঞে তোমাদের স্ত্রোত্র পাঠ করছে, তাদের আহ্বান সাদরে শ্রবণ কর।
৩। হে যজ্ঞবর্ধয়িতা অশ্বিদ্বয়। অতিশয় মধুর সোম পান কর; তার পরহে দস্রদ্বয়! অদ্য রথে ধন নিয়ে হব্যদাতার নিকট গমন কর।
৪। হে সর্বজ্ঞ অশ্বিদ্বয়! কক্ষ্যাত্রয়ে স্থিত যজ্ঞকুশে থেকে মধুর রস দ্বারা যজ্ঞ সিক্ত কর; হে অশ্বিদ্বয়! দীপ্তিমান কবপুত্রেরা সোম অভিষব করে তোমাদের আহবান করছে।
৫। হে অশ্বিদ্বয়! তোমরা উভয়ে যে অভীষ্ট রক্ষণকার্য দ্বারা কবকে রক্ষা করেছিলে, হে শোভনকর্ম পালক। সে রক্ষণকার্য দ্বারা আমাদের রক্ষা কর; হে যজ্ঞ বর্ধক! সোম পান কর।
৬। হে দস্রদ্বয়! তোমরা রথে ধন নিয়ে দুস্যসকে (১) অন্ন এনে দিয়েছিলে, সেরূপ অন্তরীক্ষ হতে অথবা দ্যুলোক হতে অনেকের বাঞ্ছিত ধন আমাদরেকে দান কর।
৭। হে নাসতাদ্বয়! তোমরা দুরেই থাক অথবা নিকটেই থাক, সূর্যোদয় কালে সূর্যরশ্মির সাথে নিজ সুনির্মিত রথে আমাদের নিকট এস।
৮। তোমরা সর্বদা যাগসেবী; তোমাদের সপ্ত অশ্ব তোমাদরে নিকটে এনে সবনাভিমুখে নিয়ে যাক; হে নরদ্বয়! শুভকর্মকারী ও দানশীল যজমানকে অন্ন দান করে তোমরা কুশে উপবেশন কর।
৯। হে নাসত্যদ্বয়! তোমরা যে রথে ধন নিয়ে হব্যদাতকে সর্বদা দান করছ, সেই সুর্য রশ্মিপরিবেষ্টিত রথে মধুর সোমপানার্থ আগমন কর।
১০। আমরা রক্ষার জন্য উকথ দ্বারা ও স্তোত্রদ্বারা প্রভূতধনশালী অশ্বিদ্বয়কে আমাদের অভিমুখে আহ্বান করছি; হে অশ্বিদ্বয়! কবপুত্রদের প্রিয় সদনে তোমরা সর্বদাই সোম পান করেছ।

টীকাঃ
১। সুদাসে শোভনদানযুক্ত রাজ্ঞে পিজবনপুত্রায়। সায়ণ। সুদাস পিজবন রাজার পুত্র এবং ঋগ্বেদে উল্লিখিত সকল রাজগণের মধ্যে সুদাসই প্রসিদ্ধ। ভারত আদি দশ জাতি তাকে আক্রমণ করেছিল, কিন্তু সুদাস তাদের পরাস্ত করেন। ৩ মন্ডলের ৩৩ সুক্ত এবং ৭ মন্ডলের ১৮ ও ৮৩ সুক্ত দেখুন। সেই ভারত জাতি কি পরে আবার কুরক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছিল? না সুদাসের ভারতদের সাথে যুদ্ধই বহুকাল পরে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ বলে মহাভারতে বর্ণিত হয়েছে।






৪৮ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে দেবদুহিতা ঊষা! আমাদরে ধন দান করে প্রভাত কর; হে বিভাবরি! প্রভূত অন্ন দান করে প্রভাত কর; হে দেবি! দানশীল হয়ে ধনদান করে প্রভাত কর।
২। ঊষা অশ্বযুক্তা, গোসম্পন্না এবং সকল ধনপ্রদাত্রী; প্রজাদের নিবাসের জন্য তার অনেক সম্পত্তি আছে; হে ঊষা! আমাকে সুনৃত বাক্য, বল এবং ধনবানদের ধন দাও।
৩। ঊষা পুরাকালে প্রভাত করতেন, অদ্যও প্রভাত করেছেন; ধনলুদ্ধ লোক যেরূপ সমুদ্রে নৌকা প্রেরণ করে, ঊসার আগমনে যে রথসমূহ সজ্জিত হয়, ঊষা তা সেরূপে প্রেরণ করেন।
৪। হে ঊষা! তোমার আগমন হলে বিদ্বান লোকে দানে মনোনিবেশ করে এবং অতিশয় মেধাবী কবঋষি দানশীল মানবদের প্রসিদ্ধ নাম ঊষাকালেই উচ্চারণ করেন।
৫। ঊষা গৃহকার্যনেত্রী গৃহিনীর ন্যায় সকলকে পালন করে আগমন করেন; তিনি জঙ্গম প্রাণীদের (১) জাগরিত করেন, পদযুক্ত প্রাণীদের গমন করান এবং পক্ষীদের উড়িয়ে দেন।
৬। তুমি সমীচীন চেষ্টাবান পুরুষকে কার্যে প্রেরণ কর, তুমি ভিক্ষুকদেরও প্রেরণ কর, তুমি নীহারবর্ষী এবং অধিকক্ষণ অবস্থান কর না; হে অন্নযুক্ত যজ্ঞসম্পন্না ঊষা! তুমি প্রভাত হলে, উড্ডীয়মান পক্ষীগণ আর কুলায়ে অবস্থান করে না।
৭। তিনি রথ যোজিত করেছেন; এ সৌভাগ্যবতী ঊষা দূর হতে সূর্যের উদয় স্থানের উপরস্থ দিব্যলোক হতে শত রথ দ্বারা মানুষের নিকট আসছেন।
৮। তার প্রকাশ হবার জন্য সকল প্রাণী নমস্কার করছে; কেন না সে নেত্রী জ্যোতি: প্রকাশ করেন এবং সে ধনবতী স্বর্গদুহিতা বিদ্বেষীদের এবং শোষণকারীদের দুর করেন।
৯। হে স্বর্গদুহিতে! আহলাদকর জ্যোতির সাথে প্রকাশিত হও, দিনে দিনে আমাদের প্রভূত সৌভাগ্য এনে দাও এবং অন্ধকার দূর কর।
১০। হে নেত্রী ঊষা! সমস্ত প্রাণীর চেষ্টিত ও জীবন তোমাতেই আছে, কেন না তুমি অন্ধকার দূর কর। হে বিভাবরি! তুমি বৃহৎ রথে এস; হে বিচিত্র ধনযুক্তে! আমাদের আহ্বান শ্রবণ কর।
১১। হে ঊষা! মনুষ্যের যে বিচিত্র অন্ন আছে তা তুমি গ্রহণ কর; এবং যে যজ্ঞনির্বাহকেরা তোমাকে স্তুতি, করে সে শুভকর্মাদের হিংসারহিত যজ্ঞে আনয়ন কর।
১২। হে ঊষা! তুমি অন্তরীক্ষ হতে সকল দেবগণকে সোমপানাথে আনয়ন কর। হে ঊষা! তুমি আমাদের অশ্বগোযুক্ত এবং প্রশংসনীয় ও বীর্যসম্পন্ন অন্ন প্রদান কর।
১৩। যে ঊষার জ্যোতি শত্রুদের বিনাশ করে কল্যাণরূপে দৃষ্ট হয়, তিনি আমাদের সকলের বরণীয়, সুরুপ এবং সুখগম্য ধন প্রদান করুন।
১৪। হে পূজনীয় ঊষা! তোমাকে পূর্ব ঋষিগণ রক্ষণ এবং অন্নের জন্য আহ্বান করেছিলেন, তুমি ধন ও দীপ্তিযুক্ত তেজ্যেবিশিষ্ট হয়ে আমাদের স্তুতিতে তুষ্ট হও।
১৫। হে ঊষা! তুমি অদ্য জ্যোতি দ্বারা আকাশের দ্বারদ্বয় খুলে দিয়েছ, অতএব আমাদের হিংসক রহিত ও বিস্তীর্ণ গৃহ দান কর, এবং গেযুক্ত অন্ন দান কর।
১৬। হে ঊষা! আমাদের প্রভূত ও বহুবিধ রূপযুক্ত ধন দান কর এবং গাভী দান কর। হে পূজনীয় ঊষা! আমাদের সর্বশত্রুনাশক যশ দান কর। হে অন্নযুক্ত ক্রিয়াসম্পন্ন ঊষা! আমাদের অন্ন দান কর।

টীকাঃ
১। মুলে জরয়ন্তী বৃজনং আছে, অর্থ গমনশীলং জঙ্গমং প্রাণিজাতং জরয়ন্তী রাং পাপয়ন্তী। সায়ণ। কিন্তু পন্ডিতবর বেনফে এবং বলেনসন এ স্থানে জরয়ন্তী অর্থ জাগরিত করেন এরূপ অর্থ স্থির করেছেন, তদনুসারে মিউয়ার অনুবাদ করেছেন She hastens on arousing footed creatures.





৪৯ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে ঊষা। দীপ্যমান আকাশের উপর হতে শোভনীয় মার্গ দ্বারা আগমন কর; অরুণবর্ণ গাভীসমূহ (১) তোমাকে সোমযুক্ত যজমানের গৃহে নিয়ে আসুক।
২। হে ঊষা! তুমি যে সুরূপ সুখকর রথে অধিষ্ঠান কর, হে স্বগদুহিতে। তা দিয়ে অদ্য হব্য দাতা যজমানের নিকট এস।
৩। হে অজুনি (২) ঊষা! তোমার আগমনের সময় দ্বিপদ ও চতুপদ ও পক্ষযুক্ত পক্ষীগণ আকাশ প্রান্তের উপরিভাগে গমন করে।
৪। হে ঊষা! তুমি অন্ধকার বিনাশ করে রশ্মিদ্বারা জগৎকে প্রকাশ কর; কবপুত্রগণ ধনপ্রার্থী হয়ে তোমাকে স্তুতি বচন দ্বারা স্তব করেছে।

টীকাঃ
১। মুলে অরুণপসরঃ আছে। অর্থ অরুণবর্ণা গাবঃ সায়ণ। প্রাতঃকালের কিরণসমূহকে অথবা সে কিরণে রঞ্জিত মেঘমন্ডলকে ঋগ্বেদে অনেক স্থলে গাভী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। ৬ সুক্তের ৫ ঋকের টীকা দেখুন।
২। অর্জুনি শুভ্রবর্ণ। সায়ণ। ঊষার এই বিশেষণ অর্জুনি হতে গ্রীকদিগের মধ্যে Argy noris এবং সম্ভবত Argos ও Acadia উৎপন্ন হয়েছে। ৩০ সুক্তের ২২ ঋকের টীকা দেখুন।








৫০ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। সূর্য দীপ্তিমান ও সকল প্রাণীদের জানেন, তার অশ্বগণ (১) তাকে সমস্ত জগতের দর্শনের জন্য ঊর্ধ্বে বহন করেছে।
২। সমস্ত জগতের প্রকাশক সূর্যের আগমনে নক্ষত্রগণ তস্করের ন্যায়রাতের সঙ্গে চলে যায়।
৩। দীপ্যমান অগ্নির ন্যায় সূর্যের প্রজ্ঞাপক রশ্মিসমূহ সকল লোককে এক এক করে দেখছে ।
৪। হে সূর্য! তুমি মহৎপথ ভ্রমণ কর, তুমি সকল প্রাণীদের দর্শনীয়, তুমি জ্যেতির কারণ, তুমি সমস্ত দীপ্যমান অন্তরীক্ষে প্রভা বিকাশ করছ।
৫। তুমি দেবলোকগণের সম্মুখে উদয় হও, মনুষ্যদের সম্মুখে উদয় হও, তুমি সমস্ত স্বর্গলোকের দৃষ্টির জন্য উদয় হও।
৬। হে শোধনকারী অনিষ্টনিবারক (২) ! তুমি যে আলোক দ্বারা প্রাণীগণের পোষণকারীরূপে জগৎকে দষ্টি কর;
৭। সে আলোর দ্বারা রাতের সাথে দিনকে উৎপাদন করে এবং প্রাণীদের অবলোকন করে তুমি বিস্তীর্ণ দিবালোক ভ্রমণ কর।
৮। হে দীপ্তিমান সর্ব প্রকাশক সূর্য। হরিৎ নামক সপ্ত অশ্ব রথে তোমাকে বহন করে, জ্যেতিই তোমার কেশ।
৯। সূর্য রথবাহক সাতটি অশ্বীকে যোজিত করলেন, সেই স্বয়ংযুক্ত অশ্বীদের দ্বারা তিনি গমন করেছেন (৩)।১০। অন্ধকারের উপর উত্থিত জ্যোতি দৃষ্টি করে আমরা সমস্ত দেবগণের মধ্যে দ্যুতিমান সূর্যের নিকট গমন করি; তিনিই উৎকৃষ্ট জ্যোতিঃ।
১১। হে অনুকুল দীপ্তিযুক্ত সূর্য! অদ্য উদয় হয়ে এবং উন্নত আকাশে আরোহণ করে আমার হৃদরোগ এবং হরিমাণ রোগ নাশ কর।
১২। আমরা আমাদের হরিমাণ রোগ শুক ও শারিকা পক্ষীতে স্থাপন করি, আমাদের হরিমাণ হরিদ্রায় স্থাপন করি।
১৩। এই আদিত্য সমস্ত তেজের সাথে উথিত হয়েছেন, তিনি আমার অনিষ্টকারী রোগ বিনাশ করেছেন আমি সে অনিষ্টকারীকে বিনাশ করি না। (৪)

টীকাঃ
১। মুলে কেতবঃ শব্দ আছে। অর্থ সূর্যাশ্বাঃ যদ্বা সূর্যরুময়ঃ। সায়ণ। কিরণ সমূহকে ঋগ্বেদে অনেক স্থলে অশ্বের সাথে তুলনা করা হয়েছে ৩ সুক্তের ১ ঋকের টীকা ও ১৪ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।
২। মুলে বরুণ শব্দ আছে, অর্থ অনিষ্টকারক সূর্য। সায়ণ। অত্র বরুণশব্দেন আদিত্য এবং উচাতে। সায়ণ।
৩।৮। ও ৯ ঋকে সূর্যের সাতটি অ্বের কথা আছে, তার অর্থ বোধ হয় সূর্যালোকে নিহিত সপ্তবর্ণ রশ্মি।
৪।১১।১২ ও ১৩ ঋক একটি চিত্র পীড়া আরোগ্যের জন্য সূর্যের উদ্দেশে এ মন্ত্রগুলি পড়তে হয়। কথিত আছে যে সূর্য প্রস্কব মুনি দ্বারা এরূপে স্তুত হয়ে সে মুনির শ্বেতি রোগ ভাল করে দিয়েছিলেন।

HYMN L. Sūrya.








৫১ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। যাঁকে অনেতে আহ্বান করে, যিনি স্তুতিভাজন এবং ধনের অর্ণব সে মেষ (১) ইন্দ্রকে স্তুতি দ্বারা হৃষ্ট কর। যার কর্ম সূর্য রশ্মির ন্যায় মানষদের হিতসাধন করে সে ক্ষমতাপন্ন ও মেধাবী ইন্দ্রকে ধন সম্ভোগার্থ অর্চনা কর।
১। ইন্দ্রের আগমন শোভাবিশিষ্ট তিনি অন্তরীক্ষ পূরণ করেন; তিনি বলসম্পন্ন দর্পস্থারী ও শতক্রতু। ঋভুগণ রক্ষণে ও বর্ধনে তৎপর হয়ে তার সম্মুখে এসে সহায়তা করেছিলেন এবং উৎসাহ বাক্যদ্বারা প্রোৎসাহ করেছিলেন (২) ।
৩। তুমি অঙ্গিরাঋষিদের জন্য মেঘ খুলে দিয়েছ; শতদবার যন্ত্রে প্রক্ষিপ্ত অত্রিকে তুমিই পণ দেখিয়েছিলে; তুমি বিমদ ঋষিকে অন্নযুক্ত ধন দিয়েছিলে (৩) এবং যুদ্ধে বর্তমান স্তোতার জন্য তুমি আপন বজ্র চালন করে তাকে রক্ষা কছিলে।
৪। তুমি জলধারী মেঘ খুলে দিয়েছ, তুমি পর্বতে বৃত্রাদি দানবদের ধন অপহরণ করে রেখেছ। হে ইন্দ্র! তুমি হত্যাকারী বৃত্রকে বধ করেছিলে এবং তারপর সূর্যকে লোকের দর্শনার্থ আকাশে আরোহণ করিয়ে দিয়েছিলে।
৫। যারা যজ্ঞ অন্ন আপনাদের মুখে স্থাপন করেছিল (৪) হে ইন্দ্র ! সে মায়াবীদের তুমি মায়া দ্বারা পরাস্ত করেছিলে। তুমি মানুষের প্রতি প্রসন্নমনা; তুমি পিপ্রু নগর ধ্বংস করেছিলে এবং ঋজিশ্বান নামক (৫) স্তোতাকে দস্যুদের হস্তে হত্যা হতে সম্যকরূপে রক্ষা করেছিলে।
৬। তুমি শুষ্ণ (অসুরের) সাথে যুদ্ধে কুৎস ঋষিকে রক্ষা করেছিলে, তুমি অতিথিদের রক্ষার্থ শম্বরকে হনন করেছিলে। তুমি মহান অর্বুদকে পদ দ্বারা আক্রমণ করেছিলে; (৬) অতএব তুমি দস্যু হত্যার জন্যই জন্মগ্রহণ করেছ।
৭। তোমাতে সমস্ত বল নি:সংশয়রূপে নিহিত আছে। তোমার মন সোমপানে হৃষ্ট হয়। তোমার হস্তদ্বয়ে বজ্র আছে তা আমরা জানি, অতএব শত্রুর সমস্ত বীর্য ছেদন কর।
৮। হে ইন্দ্র! কারা আর্য এবং কারা দস্যু তা অবগত হও। কুশযুক্ত যজ্ঞের বিরোধীদের শাসন করে বশীভূত কর (৭)। তুমি শক্তিমান, অতএব যজ্ঞ সম্পাদকদের সহায় হও। আমি তোমার হর্য জনক যজ্ঞে তোমার সেই কর্ম প্রশংসা করতে ইচ্ছা করি।
৯। ইন্দ্র যজ্ঞবিমুখদের যজ্ঞপ্রিয় যজমানদের বশীভূত করে ও অভিমুখস্তোতাদের দ্বারা স্তুতি পরামুখদের ধ্বংস করে অবস্থিতি করেন। বম্র ঋষি বর্ধনশীল ও স্বর্গব্যাপী ইন্দ্রের স্তুতি করতে করতে সঞ্চিত যজ্ঞাদ্রব্যসমূহ নিয়ে গিয়েছিলেন (৮)।
১০। হে ইন্দ্র! যখন উশনার (৯) বলদ্বারা তোমার বল তীক্ষ্ম হয়েছিল তখন তোমার বল বিশুদ্ধ তীক্ষ্মতা দ্বারা দ্যু ও পৃথিবীকে ভীত করেছিল। হে ইন্দ্র! তোমার মন মানুষের প্রতি প্রসন্ন, তুমি এরূপ বলপূর্ণ হলে তোমার ইচ্ছামাত্রে সংযোজিত ও বায়ুর ন্যায় বেগবিশিষ্ট অশ্বগণ তোমাকে আমাদের যজ্ঞের অন্নের অভিমুখে নিয়ে আসুক।
১১। যখন ইন্দ্র কমনীয় উশনার সাথে স্তুত হন তখন তিনি বক্রগতি অশ্বদ্বয়ে অধিষ্ঠান করেন। উগ্র ইন্দ্র গমনশীল মেঘসমূহ হতে প্রবাহরূপে জল নির্গত করেছেন এবং শুষ্ণের বিস্তীর্ণ নগর সমূহ ধ্বংস করেছেন।
১২। হে ইন্দ্র! তুমি সোমপানর্থ রথে আরোহণ করে গমন কর। যে সোমে তুমি হৃষ্ট হও, শার্যাত (১০) সে সোম প্রস্তুত করেছেন; অতএব অন্য যজ্ঞে তুমি যেরূপ অভিযুত সোম কামনা কর, সেরূপ শার্যাতের সোমও কামনা কর তা হলে বদব্যলোকে অবিচল যশ প্রাপ্ত হবে।
১৩। হে ইন্দ্র! তুমি অভিযবকারী ও স্তুত্যাকাঙ্ক্ষী বৃদ্ধ কক্ষীবান (রাজ্যকে) যুবতী বৃচয়া নান্মী স্ত্রী প্রদান করেছিলে (১১)। হে শোভন কর্মা ইন্দ্র তুমি বৃষণশ্চ রাজার মেনা নাম্নী কন্যা হয়েছিলে (১২)। এ সকল বিষয় অভিষবণ কালে বর্ণনা করা কর্তব্য।
১৪। শোভনকর্মা লোকদের নির্ধনতায় (রক্ষা করবার জন্য) ইন্দ্রকে সেবা করা হয়েছে; প্রজাদের (১৩) স্তোত্র দ্বারস্থিত যুপের ন্যায় অচল। ধনদাতা ইন্দ্র (যজমানদের জন্য) অশ্ব ইচ্ছা করেন, গো ইচ্ছা করেন, রথ ইচ্ছা করেন এবং অন্য ধন ইচ্ছা করে অবস্থিতি করেন।
১৫। হে ইন্দ্র! তুমি বৃষ্টিদান কর, তুমি নিজ তেজে বিরাজ করছ, তুমি প্রকৃত বলসম্পন্ন ও অতিশয় মহৎ, আমরা তোমাকে এ স্তুতি বাক্য প্রয়োগ করছি, যেন আমরা এ সংগ্রামে সমস্ত বীরগণদ্বারা যুক্ত হয়ে তোমার দত্ত শোভনীয় দৃহে বিদ্বান পুত্রাদির সাথে বাস করি।

টীকাঃ
১। মেঘং শত্রুভঃ স্পর্ধমানং। সায়ণ।
২। ঋভুদিগের সম্বন্ধে ২০ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন। কিন্তু সায়ণের মতে এখানে ঋভূগণ অর্থ মরুৎগণ।
৩। বিমদ ঋষি সম্বন্ধে জ১১৬ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন। অত্রি সম্বন্ধে ১১২ সুক্তের ৭ ঋকের টীকা দেখুন ও ১১৬ সুক্তের ৮ ঋক দেখুন। অঙ্গিরা ঋষি সম্বন্ধে ৩১ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।
৪। কৌশিতকী শাখাধ্যায়ীরা বলেন অসুরগণ অগ্নিকে অবহেলা করে আপন মুখে হব্য দিয়েছিল। বাজসনেয়ীরা বলেন দেবগণের সঙ্গে অসুরদের বিদ্বেষ হওয়ায় অসুরগণ বলল আমরা কাকেও হব্য দেব না এ বলে তারা আপন সুখে হব্য দান করল।
৫। ১১ সুক্তের ৭ ঋকের টীকা এবং ৫৩ সুক্তের ৮ ঋকের টীকা দেখুন।
৬। সায়ণ অতিথির অর্থ করেন অতিথিবৎসল দিবোদাস রাজা। ১১২ সুক্তের ১৪ ঋকের টীকা দেখুন। শম্বর ও শুষ্ণ ও অর্বুদ সম্বন্ধে ১১ সুক্তের ৭ ঋকের টীকা দেখুন। কুৎস সম্বন্ধে ৩৩ সুক্তের ১৪ ঋকের টীকা ও ৬৩ সুক্তের ৩ ঋকের টীকা ও ১০৬ সুক্তের ৬ ঋকের টীকা দেখুন।
৭। এ ঋকে আর্য ও দস্যু, উভয় শব্দই ব্যবহৃত হয়েছে। আর্যগণ দেবগণের যজ্ঞ করত, দস্যুগণ, ভারতবর্ষের আদিম অসত্য জাতিগণ যজ্ঞ করত না।
৮।১১২। সুক্তের ১৫ ঋকের টীকা দেখুন।
৯। উশনা বা শুক্রাচার্য পুরাণমতে অসুরদের দুত বা গুরু। তৈরত্তরীয় সংহিতায় আছে অগ্নিদে বানাং দুত আসীৎ উশনা কাব্যোহসুরাণাম। কিন্তু ঋগ্বেদে উশনা ইন্দ্রের হিতকারী, ইন্দ্রকে বজ্র দান করেছিলেন। ১২১ সুক্তের ১২ ঋক দেখুন।
১০।কৌশিতকীয় ইতিহাসে বলে, ভুগুবংশীয় চ্যবন ঋষি শর্ষাতি রাজর্ষির কন্যার পাণি গ্রহণ করেন। তদুপলক্ষে একটি যজ্ঞ হয় এবং তথায় ইন্দ্র ও অশ্বিদ্বয় উপস্থিত ছিলেন। চ্যবনঋষি অশ্বিদ্বয়ের গ্রহণীয় হব্য নিজে গ্রহণ করেছিলেন। তা দেখে ইন্দ্র ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন, তাকে ইন্দ্রকে বিনয় করে তাকে পুনরায় সোম দেওয়া হয়েছি।
১১। কক্ষীবান রাজার জন্ম সম্বন্ধে ১৮ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন। সে রাজ্য অনেকবার রাজসুয় যজ্ঞ করেন এবং তার কৃত যজ্ঞে পরিতৃষ্ট হয়ে ইন্দ্র তাকে বুচয়া নান্মী তরুণী স্ত্রী প্রদান করেন। সায়ণ।
১২। সায়ণ ব্রাহ্মণ হতে এ গল্পটি উদ্ধৃত করেছেন। যথা, ইন্দ্র বৃযণশ্চ রাজার কন্যা মেনা হয়েছিলেন, পরে মেনাকে প্রাপ্তযৌবনা দেখে ইন্দ্র স্বয়ং তার সাথে সহবাস অভিলাষ করেছিলেন।পৌরাণিক মেনা হিমালয়ের পত্নী।
১৩। পজ্রা ইতি অঙ্গিরসাং আখ্যা। সায়ন।








৫২ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। শত স্তোতা একেবারে যার স্তুতি কার্যে প্রবৃত্ত হয়, যিনি স্বর্গ জানিয়ে দেন, সে মেষ ইন্দ্রকে সম্যকরূপে পূজা কর। তার রথ গমনশীল অম্বের ন্যায় বেগে যজ্ঞের দিকে গমন করে, আমি রক্ষার হেতু ইন্দ্রকে সে রথে উঠবার জন্য অনেক স্তুতি দ্বারা অনুরোধ করছি।
২। যখন যজ্ঞান্নপ্রিয় ইন্দ্র জল বর্ণষ করে নদী প্রতিরোধকারী বৃত্রকে হত করলেন, তখন তিনি ধারাবাহী জলের মধ্যে পর্বতের ন্যায় অচল হয়ে লোকদের সহস্ররূপে রক্ষা করে প্রভূত বলপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
৩। তিনি আবরণকারী শত্রুদের জয় করেন, তিনি জলবৎ অন্তরীক্ষে ব্যাপ্ত আছেন, তিনি সকলের আহলাদের মূল এবং সোমপানে বর্ধিত হয়েছেন; আমি মনীষী ঋত্বিকদের সাথে সে প্রবৃদ্ধ ধনসম্পন্ন ইন্দ্রকে শোভন কর্মযোগ্য অন্ত:করণের সাথে আহ্বান করছি, কেননা তিনি অন্ন পূরণ করেন।
৪। সমুদ্রের আত্মীয়ভূত ও অভিমুখগামী নদীসমূহ যেরূপ সমুদ্রকে পূরণ করে, সেরূপ কুশস্থিত সোমরস দিব্যলোকে ইন্দ্রকে পূরণ করে; শত্রুশোষণকারী ও অপ্রতিহত ও শোভনরূপ মরুৎগণ বৃত্রহনন সময়ে সে ইন্দ্রের সহায় হয়ে নিকটে উপস্থিত ছিলেন।
৫। গমনশীল জল যেরূপ নিন্মদেশে যায়, ইন্দ্রের সহজায়ভূত মরুৎগণ হৃষ্ট হয়ে সেরূপ যুদ্ধে লিপ্ত ইন্দ্রের সম্মুখে বৃষ্টিযুক্ত বৃত্রের অভিমুখে গেলেন। ত্রিত (১) যেরূপ পরিধি সমুদয় ভেদ করেছিলেন, ইন্দ্র সেরূপ যজ্ঞের অন্ন দ্বারা প্রোৎসাহিত হয়ে বলকে ভেদ করেন।
৬। জল রুদ্ধ করে যে বৃত্র অন্তরীক্ষের উপরিপ্রদেশে শয়ান ছিল এবং অন্তরীক্ষে যার ব্যাপ্তি অসীম, হে ইন্দ্র! যখন তুমি সে বৃত্রের হনুদ্বয় শব্দায়মান বজ্র দ্বারা আঘাত করেছিলে তখন তোমর শত্রু বিজয়িনী দীপ্তি বিস্তৃত হয়েছিল এবং তোমার বল প্রদীপ্ত হয়েছিল।
৭। ঊর্মি সমূহ যেরূপ হ্রদপ্রাপ্ত হয় সেরূপ যে স্তোত্রসমূহ তোমাকে বর্ধন করে সে সমস্ত তোমাকে প্রাপ্ত হয়। ত্বষ্টা তোমার যোগ্য বল বৃদ্ধি করেছেন এবং তার পরাভবকারী বল দ্বারা বজ্র তক্ষ্মি করেছেন।
৮। হে সিদ্ধকর্মা ইন্দ্র! তুমি অশ্বযুক্ত হয়ে মানুষের নিকট অগমনার্থ বৃত্তকে হত করেছ, বৃষ্টিবর্ষণ করেছ, হসতদ্বয়েলৌহ বজ্র গ্রহণ করেছ, এবং আমাদের দর্শ নার্থ কআকাশে সূর্য স্থাপন করেছ।
৯। স্তোতৃগণ বৃত্রের ভয়ে স্ত্রোত্র রচনা করেছে, সে স্ত্রোত্র বৃহৎ আহ্লাদজনক, বলযুক্ত এবং স্বর্গের সোমপান স্বরূপ; তখন স্বর্গরক্ষক মরুৎগণ মানুষের জন্য যুদ্ধ করে এবং মানুষগণকে পালন করে ইন্দ্রকে প্রোৎসাহিত করেছিলেন।
১০। হে ইন্দ্র! তুমি অভিষুত সোমপান করে হৃষ্ট হলে যখন তোমার বজ্র দ্যু ও পৃথিবীর বাধনকারী বৃত্রের মসতক বেগে ছিন্ন করেছিল, তখন বলবান আকাশও সে অহির শব্দে ভয়ে কম্পিত হয়েছিল।
১১। যদি পৃথিবী দশগুণ হত, যদি মানুষ সকল নিত্য কাল জীবিত থাকত, হে মঘবন! তা হলেই তোমার ক্ষমতা প্রকৃত রূপে প্রসিদ্ধ হত; তোমার বলসাধিত ক্রিয়া আকাশের ন্যায় মহৎ।
১২। হে শত্রু বিনাশক ইন্দ্র! এই ব্যাপ্ত অন্তরীক্ষের উপরে থেকে তুমি নিজ ভুজ বলে আমাদের রক্ষার জন্য ভূলোক সৃষ্টি করেছ; তুমি বলের পরিমাণ স্বরূপ; তুমি সুগন্তব্য অন্তরীক্ষ ও স্বর্গ ব্যাপ্ত করে আছ।
১৩। তুমি বিস্তীর্ণ পৃথিবীর পরিমাণ স্বরূপ; তুমি দর্শনীয় দেবগণের বৃহৎ স্বর্গের পালনকারী; তুমি প্রকৃতই নিজ মহত্ত্ত দ্বারা সমস্ত অন্তরীক্ষ ব্যাপ্ত করে আছ; অতএব তোমার সদৃশ অন্য কেউ নেই।
১৪। দ্যু ও পৃথিবী যে ইন্দ্রের ব্যাপ্তি প্রাপ্ত হয় নি, অন্তরীক্ষের উপরস্থ প্রবাহ যার তেজের অন্ত পায়নি, হে ইন্দ্র! তুমি একা অন্য সমস্ত ভূতজাতকে তোমার অধীন করেছ।
১৫। মরুৎগণ এ সংগ্রামে তোমাকে অর্চনা করেছিলেন; যখন তুমি অশ্রিযুক্ত বজ্র দ্বারা বৃত্রের মুখের উপর আঘাত করেছিলে, তখন সকল দেবগণ যুদ্ধে তোমাকে আনন্দিত দেখে আনন্দিত হয়েছিলেন।

টীকাঃ
১। সায়ণ তৈত্তিরীয় সংহিতা অনুসারে ত্রিত সম্বন্ধে এরূপ লিখেছেন, দেবগণের হব্যের চিহ্ন বিমোচনার্থ অগ্নি জল হতে একত, দ্বিত, ও ত্রিত নামে তিন জন পুরুষ সৃষ্টি করেন। ** ত্রিত উদক পানে প্রবৃত্ত হয়ে কূপে পড়েছিলেন, অসুরেরা তাকে প্রতিরোধ করবার জন্য পরিধি অর্থাৎ কূপের আচ্ছাদন সৃষ্টি করল, ত্রিত তা ভেদ কারছিলেন। ইন্দ্র যেরূপ অহি বা বৃত্তের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন, ত্রৈতন বা ত্রিতত্ত সেরূপ করেছিলেন, তা ঋগ্বেদের স্থানে স্থানে পাওয়া যায়। ত্রিত বা ত্রৈতন যে আর্যদের অতি পুরাতন দেব তা ইরানীয় অবস্থায় দেখা যায়। ঋগ্বেদে অহিহস্তা ইন্দ্র যেরূপ উপাস্য অবস্থায় অজি হস্তা থেতন সেরূপ উপাস্য। ঋগ্বেদের ত্রিত আপ্তা বংশীয় (১০৫ সুক্তের ৯ ঋক দেখুন) অবস্থার থতন ও আথা বংশীয়। আবার ইরানীয়দের জেন্দ অবস্থা রচনার প্রায় দু হাজার বছর পর এ ত্রৈত্যনর গল্প ইরানীয়দের ইতিহাসে প্রবেশ করল। পারস্যদের প্রধান কবি ফেরদৌসী নিজ শাহনামা নামক কাব্যে লিখেছেন যে জোহক নামে পারস্যদেশের ত্রিমস্তক সম্পন্ন রাজ্য ছিলেন এবং পফরুদীন তাকে বিজয় করেন। এ জোহক জেন্দ অবস্থায় অজি দহক এবং বেদের অহি এবং এই ফেরুদীন জেন্দ অবস্থার থ্রেতন এবং বেদের ত্রতন। উপাখ্যানের উৎপত্তি কি বিস্ময়কর! গ্রীকদের ধর্মোপাখ্যানে ও প্রাচীন আর্য ত্রিত দেবের পরিচয় পাওয়া যায় গ্রীকদের প্রধান দেব Zeus এবং তার কন্যা Athene (সংস্কৃত অহনা) কখন কখন ত্রিত কন্যা (Tritogeneia) নামে বর্ণিত হতেন। অতএব প্রতীয়মান হচ্ছে যে আপ্তাবংশীয় অহি হস্তা ত্রিত বা ত্রৈতন আর্যদের অতি প্রাচীন উপাস্য দেব ছিলেন, পরে হিন্দুগণ যখন ইন্দ্রকেই অহিহন্তা বলে অধিক উপাসনা করতে লাগলেন, তখন ত্রিত কেবল একজন বীর মানুষ বলে পরিগণিত হলেন। ১০৬ সুক্তের ৬ ঋকের টীকা এবং ১৫৮ সুক্তের ৫ ঋকের টীকা দেখুন।










৫৩ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। আমরা মহাত্মা ইন্দ্রের উদ্দেশে শোভনীয় বাক্য প্রয়োগ করি এবং পরিচর্যারত যজমানের গৃহে শোভনীয় স্তুতি প্রয়োগ করি। ইন্দ্র সুগ্ধ ব্যক্তিদের ধনের ন্যায় শত্রুর ধন অতি সত্বর অধিকার করেছেন, ধনদাতাদের প্রতি অসমীচীন স্তুতি শোভা পায় না।
২। হে ইন্দ্র! তুমি অশ্ব দান কর, গো দান কর, যবাদি ধান্য দান কর এবং তুমি নিবাস হেতুভুত ধনের প্রভু ও পালক। তুমি শিক্ষার নেতা, তুমি বহুদিনের পুরাতন দেব, তুমি কামনা ব্যর্থ করনা, তুমি সখাদের মধ্যে সখা। তারই উদ্দেশে আমরা এ স্তুতি পাঠ করি।
৩। হে প্রজ্ঞাবান, প্রভূতকর্মা ও অতিশয় দীপ্তিমান ইন্দ্র! সকল দিকে যে ধন আছে তা তোমারই তা আমরা জানি। হে শত্রুদের পরাভবকারী ইন্দ্র! সে ধন গ্রহণ করে আমাদের দান কর; যে স্তোতৃগণ তোমাকে কামনা করে, তাদের অভিলাষ ব্যর্থ করো না।
৪। হে ইন্দ্র! এ দীপ্ত হব্যসমূহ ও এ সোমরস সমূহে তুষ্ট হয়ে গো এবং অশ্বযুক্ত ধন দান করে আমাদের দারিদ্র্য দূর করে প্রসন্নমনা হও। এ সোমরসে তুষ্ট ইন্দ্রের সাহায্যে আমরা দস্যুকে ধ্বংস করে এবং শত্রু হতে মুক্তি লাভ করে সম্যকরূপে অন্ন ভোগ করব।
৫। হে ইন্দ্র! আমরা যেন ধন পাই, অন্ন পাই এবং অনেকের আহলাদকর ও দীপ্তিমান বল পাই। যেন তোমার দীপ্তিমান সুমতি আমাদের সহায় হয়, সে সুমতি বীর শত্রুদের শোষণ করে, স্তোতৃদের গো আদি পশু দান করে এবং অন্ন দান করে।
৬। হে সজনপালক ইন্দ্র! বৃত্রহননের সয় তোমার আনন্দদায়ী সহায় মরুৎগণ তোমাকে হৃষ্ট করেছিল; হে বর্ষণকারী ইন্দ্র! সে হব্য সমুদয় ও সোমরস সমুদয় তোমাকে হ্রষ্ট করেছিল, যে সময়ে তুমি শত্রুদের দ্বারা অপ্রতিহত হয়ে স্তুতিকারক ও হব্যদাতা যজমানের জন্য দশ সহস্র উপদ্রব বিনাশ করেছিলে।
৭। হে ইন্দ্র! তুমি শত্রুবর্ষণকারীরূপে যুদ্ধ হতে যুদ্ধাস্তরে গমন কর, বলদ্বারা নগরের পর নগর ধ্বংস কর। হে ইন্দ্র! তুমি নথী ঋষির সহায়ে (১) দুর দেশে মনুচি নামক মায়াবীকে বধ করেছিলে।
৮। তুমি অতিথিপ্ব নামক রাজার জন্য করঞ্জ ও পর্ণর নামক শত্রুদ্বয়কে তেজস্বী বর্তনী দ্বারা বধ করেছ; তারপর তুমি অনুচর রহিত হয়ে ঋজিশ্বান নামক রাজার দ্বারা চারদিকে বেষ্টিত বঙ্গৃদ নামক শত্রুর শত নগর তভদ করেছিলে (২)।
৯। সহায় রহিত সুশ্রবা নামক রাজার সাথে যুদ্ধ করবার জন্য যে বিংশ নরপতি ও ৬০,০৯৯ অনুচর এসেছিল, হে প্রসিদ্ধ ইন্দ্র! তুমি শত্রুদের অলঙ্ঘ্য রথচক্র দ্বারা তাদের পরাজিত করেছিলে (৩)।
১০। হে ইন্দ্র! তুমি তোমার রক্ষাসমূহ দ্বারা সুশ্রবা রাজাকে রক্ষা করেছিলে, তুর্বযান রাজাকে তোমার পরিত্রাণ সাধন সমূহ দ্বারা রক্ষা করেছিলে; তুমি কুৎস, অতিথিব ও আয়ুকে এ মহৎ যুবক রাজার অধীন করেছিলে (৪)।
১১। হে ইন্দ্র! আমরা তোমার সখা স্বরূপ যজ্ঞ সমাপ্তিতে বর্তমান আছি ও দেবগণের দ্বারা পালিত হচ্ছি; আমাদের সকলই মঙ্গল। আমর তোমার স্তুতি করি এবং তোমার প্রসাদে শোভনীয় সুত্র পাই ও প্রকৃষ্টরূপে দীর্ঘ জীবন ধারণ করি।

টীকাঃ
১। মুলে নম্যা সখ্যা আছে। শত্রুষু নমনশীলেন সখ্যা সহায়ভূতের বজেণ। সায়ণ। কিন্তু বেদার্থযত্ন এবং রমানাথ সরুবতী অর্থ করেছেন নমী নামক ঋষির সাহায্যে। এ অর্থই প্রকৃত, কেননা ঋগ্বেদের ৬ মন্ডলের ২০ সুক্তের ৬ ঋকে এবং ১০ মন্ডলের ৪৮ সুক্তের ৯ ঋকে দেখা যায় যে ইন্দ্র নমী ঋষির হিতার্থ নমুচি নামক অসুরকে বিনাশ করেছিলেন। নমুচি সম্বন্ধে ১১ সুক্তের ৭ ঋকের টীকা দেখুন।
২। অতিথিপ্ব ৫১ সুক্তের ৬ ঋকের টীকা দেখুন। ঐ সুক্তের ৫ ঋকের ঋজিশ্বানের উল্লেখ দেখুন। করঞ্জ ও পর্ণয় ও বঙ্গদকে সায়ণ অসুর বলে বর্ণনা করেছেন, আর কোন পরিচয় দেননি।
৩। এ ঘটনা সম্বন্ধে সায়ণের টীকায় আর কোনও বিবরণ নেই। বায়ু পুরাণে সু্শ্রবা একজন প্রজাপতি।
৪। কুৎস সম্বন্ধে ৬৩ সুক্তের ৩ ঋকের ও ১০৬ সুক্তের ৬ ঋকের টীকা দেখুন। পুরাণে পুরুরবার পুত্র আয়ুঃ; এ ঋকে আয়ু নাম আছে, বিসর্গ নেই। তুর্বযান সম্বন্ধে সায়ণ এখানে কিছু বলেন নি, কিন্তু ৬ মন্ডলের ১৮ সুক্তের ২৩ ঋকের টীকার সায়ণ বলেছেন যে তুর্বযান দিবোদাস হতে পারে।








৫৪ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে মঘবন! এ পাপে এ যুদ্ধ সমূহে আমাদের প্রক্ষেপ করো না, কেন না তোমার বলের অন্ত পরিমাণ করা যায় না। তুমি অন্তরীক্ষে থেকে অতিশয় শব্দ করে নদীর জলকে শব্দিত করছ। পৃথিবী ভয় প্রাপ্ত হবে না কেন?
২। শক্তিসম্পন্ন ও প্রজ্ঞাবান ইন্দ্রকে অর্চনা কর; তিনি স্তুতি শ্রবণ করেন, তাকে পূজা করে স্তুতি কর। যিনি শত্রুবিজয়ী বল দ্বারা দ্যু ও পৃথিবী উভয়কে অলঙ্কৃত করেন, যিনি বর্ষণকারী, সে বর্ষণসামর্থ্য দ্বারা বৃষ্টি দান করেন।
৩। যিনি শত্রু বিঝয়ী ও নিজ বলে দৃঢ়মনা, সে দীপ্তিমান ও মহৎ ইন্দ্রের উদ্দেশে সুখকর স্তুতি বাক্য উচ্চারণ কর। কেননা তিনি প্রভূতষশশালী ও অসুর (১) এবং শত্রুদের দুর করেন; তিনি অশ্বদ্বয় দ্বারা সেবিত, অভীষ্টবর্ষী বেগবান।
৪। হে ইন্দ্র! তুমি মহৎ আকাশের উপরি প্রদেশ কম্পিত করেছ। তুমি নিজের শত্রুবিনাশী ক্ষমতা দ্বারা শম্বরকে স্বয়ং বধ করেছ; তুমি হৃষ্ট উল্লাসিত মনে তীক্ষ্ম ও রশ্মিযুক্ত বজ্র দলবদ্ধ মায়াবীদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছ।
৫। হে ইন্দ্র! তুমি শব্দ করে বায়ুর উপর এবং শোষক ও পরিপাককারী সূর্যের মস্তকে জল বর্ষণ করেছ। তোমার মন পরিবর্তন রহিত এবং শত্রু বিনাশে রত, তুমি অদ্য যে কার্য সম্পাদন করলে তাতে কে তামার উপরে আছে?
৬। তুমি নর্য, তুর্বশ, যদু নামক রজাদের রক্ষা করেছ; হে শতক্রতু! তুমি বর্ষ কুলের তুবীতি নামক রাজাকে রক্ষা করেছ; তুমি আবশ্যকীয় ধন নিমিত্ত যুদ্ধে তাদের রথ ও অশ্ব (২) রক্ষা করেছ; তুমি শম্বরের নবনবতি নগ ধ্বংস করেছ।
৭। যিনি ইন্দ্রকে হব্য দান করে ইন্দ্রের স্তুতি প্রচার করেন, অথবা হব্যের সাথে উকথ পাঠ করেন, তিনিই বিরাজ, করেন, তিনি সাধুগণকে পালন করেন এবং আপনাকে বর্ধন করেন; ফলদাতা ইন্দ্র তার জন্য আকাশ হতে মেঘের জল বর্ষণ করেন।
৮। ইন্দ্রের বল অতুল, তার বুদ্ধিও অতুল। হে ইন্দ্র। যারা তোমাকে হব্যদান করে তোমার মহৎ বল অতুল, তার বুদ্ধিও অতুল। হে ইন্দ্র! যারা তোমাকে হব্যদান করে তোমার মহৎ বল এবং স্থুল পৌরুষ বৃদ্ধি করে, সে সোমপায়ী গণ যজ্ঞকর্মদ্বারা প্রবৃদ্ধ হোক।
৯। এ সোমরসমূহ প্রস্তর দ্বারা অভিষুত ও পরে স্থাপিত এবং ইন্দ্রের পানের যোগ্য; হে ইন্দ্র! এ সকল তোমারই জন্য হয়েছে, তুমি এ গ্রহণ কর, অভিলাষ তৃপ্তি কর এবং তৎপরে আমাদের ধন প্রদান করতে মনোনিবেশ কর।
১০। অন্ধকার বৃষ্টির ধারা রোধ করেছিল, বৃত্রের জঠরের ভিতর মেঘ ছিল; বৃত্রের দ্বারা নিহিত হয়ে যে জলসমুদয় ক্রমান্বয়ে অবস্থিত ছিল ইন্দ্র তা নিন্ম ভূপ্রদেশে প্রেরণ করলেন।
১১। হে ইন্দ্র! আমাদরে বর্ধনশীল যশ দান কর, মহৎ শত্রুপরাজয়ী প্রভূত বল দান কর, আমাদের ধনবান করে রক্ষা কর, বিদ্বানদের পালন কর এবং আমাদের ধন ও শোভনীয় অপত্য ও অন্ন দান কর।

টীকাঃ
১। মুলে অসুয় শব্দ আছে। সায়ণ তার তিন প্রকার অর্থ করেছেন অসুরঃ শতনাং নিরসিতা। যদ্বা অসুৎ প্রাণো বলং বা তদ্বান। অথবা অসবঃ প্রাণ্াঃ তেন চাপঃ লক্ষ্যন্তে** তান রাতি দদাতি ইতি অসুরঃ। অর্থাঃ অসুর অর্থ শত্রু বিনাশক অথবা বলবান অথবা বৃষ্টিদাতা। অসুর সম্বন্ধে ২৪ সুক্তের ১৪ ঋকের টীকা দেখুন। আমরা সে টীকায় বলেছি যে প্রথমে আর্যগণ উপাস্যদের দেব ও অসুর উভয় নামেই সম্বোধন করতেন, পরে আর্যগণ দুভাগে বিভক্ত হলে, ইরাণীয় আর্যগণ উপাস্যগণকে অহুর বলে পূজা করতেন ও পাপমতি জীবদের দেব বলে ঘৃণা করতেন এবং হিন্দু আর্যগণ উপাস্যদের দেব বলে পূজা করতেন, এবং পাপমতি দানব প্রভৃতিকে অসুর বলে ঘৃণা করতেন। ঋগ্বেদে অনেক স্থলে দেখতে পাই দেবগণকে অসুর বলে সম্বোধন করা হয়েছে কেন না তখনও দেব ও অসুর এ দুই শব্দের সম্পূর্ণরপ ভিন্ন অর্থ হয়নি হিন্দুগণ অসুর অর্থে দেবশত্রু করেন নি। এমন কি ঋগ্বেদের প্রারম্ভে অসুর শব্দ কেবল দেবগণের সম্বন্ধেই প্রয়োগ হয়েছে, দানবদের সম্বন্ধে প্রয়োগ হয়নি; ঋগ্বেদের মধ্যে ও শেষভাগে অসুর শব্দ কখন দানবদের সম্বন্ধে প্রয়োগ হয়েছে। প্রথম মন্ডলে অসুর শব্দ কেবল দ্বাদশ বার প্রয়োগ হয়েছে এবং সে সকল স্থলেই দেব বা পুরোহিতদের সম্বন্ধে কোনও এক স্থলেও দানবদের সম্বন্ধে এ শব্দের প্রয়োগ নেই।


২। মুলে রথমেতশং আছে, অর্থ রথ ও অশ্ব, অথবা রথ ও এতশ নামক দুজন মুনি। সায়ণ। পুরাণে তুবশু ও যদু যযাতি রাজার পুত্র; নর্য ও তুবীতির উল্লেখ নেই। তুবীশু সম্বন্ধে ৬১ সুক্তের ১১ ঋকের টীকা দেখুন। এতশ সম্বন্ধে ৬১ সুক্তের ১৫ ঋকের টীকা দেখুন।

৫৫ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। ইন্দ্রের প্রভাব আকাশ অপেক্ষাও বিস্তীর্ণ হয়েছিল, পৃথিবীও মহত্ত্ব বিষয়ে ইন্দ্রের সমতুল্য হতে পারে নি। ভয়স্কর ও বলবান ইন্দ্র মানুষদের জন্য শত্রুকে দগ্ধ করেন; বৃষ যেরূপ শৃঙ্গ ঘর্ষণ করে, ইন্দ্র সেরূপ তীক্ষ্মতার জন্য বজ্র ঘর্ষণ করছেন।
২। অন্তরীক্ষব্যাপী ইন্দ্র সমুদ্রের ন্যায় স্বীয় বিস্তীর্ণ তা দ্বারা বহুব্যাপী জল সমুদয় গ্রহণ করেন। তিনি সোমপানার্থ বৃষের ন্যায় বেগে ধাবমান হন এবং সে যোদ্ধা পুরাকাল হতে আপন বীরত্বের প্রশংসা ইচ্ছা করেন।
৩। হে ইন্দ্র! তুমি নিজের সম্ভোগার্থ মেঘ বিভিন্ন করনি; তুমি মহৎ ধনপতিদের উপর আধপত্য কর। সে দেব ইন্দ্র নিজ বীর্য দ্বারা বিশেষরূপে পরিচিত হয়েছেন, সমস্ত দেবগণ উগ্র ইন্দ্রকে তার কর্মের জন্য সম্মুখে স্থান দিয়েছেন।
৪। সে ইন্দ্রই অরণ্যে স্তুতিকারী ঋষিদের দ্বারা স্তুত হন; তিনি লোকদের মধ্যে স্বীয় বীর্য প্রকটিত করে চারভাবে অবস্থিতি করেন। যখন হবাদাতা ধনবান যজমান ইন্দ্রদ্বারা রক্ষিত হয়ে স্তুতি বাক্য উচ্চারণ করে, তখন সে অভষ্টবর্ষী ন্দ্রি যজ্ঞে রত করেন।
৫। সে ুদ্ধে ইন্দ্র মনুষাদের জন্য সর্ববিশুদ্ধকারী বল দ্বারা মহৎ সংগ্রামসমূহে লিপ্ত হন। যখন তিনি হজননসাধন বজ্র ক্ষেপণ করেন, তখন দীপ্তিমান ইন্দ্রকে সকলে বলবান বলে শ্রদ্ধা করেন।
৬। শোভনকর্ম ইন্দ্র যশ কামনা করে, সুনির্মিত (অসুর) গৃহ সকল বলদ্বারা বিনাশ করে পৃথিবীর সমান বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে, জ্যোতিষ্কদের আবরণ রহিত করে, যজমানের উপকারার্থ বহনশীল বৃষ্টিজল দান করেন।
৭। হে সোমপায়ী ইন্দ্র! তোমার মন দানে রত হোক। হে স্তুতিপ্রিয় তোমার হরিনামক অশ্বদ্বয়কে আমাদরে যজ্ঞের অভিমুখী কর! হে ইন্দ্র! তোমার সারথিগণ অশ্বসংযমে অতিশয় পটু, এজন্য তোমার প্রতিকুলমনা শত্রুগণ আয়ুধ নিয়ে তোমাকে পরাজিত করতে পারে না।
৮। হে ইন্দ্র! তুমি হস্তদ্বয় অনন্ত ধন ধাণ কর, তুমি যশস্বী ও শরীরে অপরাজিত বল ধারণ কর। কূপ সমুদয় যেরূপ জলার্থী লোক দ্বারা বেষ্টিত থাকে, তোমার অঙ্গ সমুদয় বীরত্বের কর্মসমূহদ্বারা বেষ্টিত; তোমার শরীরে বহু কর্ম বিদ্যমান রয়েছে।








৫৬ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। অশ্ব যেরূপ অশ্বীর দিকে বেগে ধাবমান হয় সেরূপ প্রভূতাহারী ইন্দ্র সে যজমানের প্রভূত পাত্রস্থিত খাদ্যের দিকে ধাবমসান হয়েছেন। তিনি সুবর্ণময় অশ্বযুক্ত ও রশ্মিযুক্ত রথ থামিয়ে পান করছেন, তিনি মহৎ কার্যে সুদক্ষ।
২। ধনার্থী বণিকেরা যেরূপ সকল দিকে ব্যেপে রয়েছে। নারীগণ যেরূপ (পুষ্পচয়নার্থ) পর্বত আরোহণ করে, হে স্তোতা! তুমিও প্রবৃদ্ধ যজ্ঞের প্রতিপালক বলবান ইন্দ্রের নিকট একটি তেজ:পূর্ণ স্তোত্রদ্বারা সেরূপ শীঘ্র আরোহণ কর।
৩। ইন্দ্র ক্ষিপ্রকারী ও মহান; তার দোষশূন্য ও শত্রুবিনাশক বল পুরুষোচিত সংগ্রামে গিরির শৃঙ্গের ন্যায় দীপ্তিমান হয়। শত্রুদমনকারী লৌহধারী ইন্দ্র (সোমপানে) হৃষ্ট হলে সে বল দ্বারা মায়াবী শূষ্ণকে কারাগৃহে নিগড়বদ্ধ করে রেখেছিলেন।
৪। যেরূপ সূর্য ঊষাকে সেবা করেন, দীপ্তিমান বল সেরূপ তোমার রক্ষণের জন্য তোমার স্ত্রোত্র দ্বারা বর্ধিত ইন্দ্রকে সেবা করে। সে ইন্দ্র পরাভবকারী বলদ্বারা অন্ধকাররূপ বৃত্তকে দমন করেন এবং শত্রুদের ক্রন্দন করিয়ে বিশেষরূপে ধ্বংস করেন।
৫। হে শত্রুহসতা ইন্দ্র! যখন তুমি বৃত্ত দ্বারা অবরুদ্ধ জীবনধারক ও বিনাশরহিত জল আকাশ হতে সকল দিকে বিতরণ করলে তখন হৃষ্ট হয়ে সংগ্রামে বৃত্তকে হনন করেছিলে এবং জলের সমুদ্রের ন্যায় মেঘকে নিষ্মমুখ করে দিয়েছিলে।
৬। হে ইন্দ্র! তুমি মহান, তুমি বল দ্বারা আকাশ হতে পৃথিবীর প্রদশ সমূহে জীবনদারক বৃষ্টি দান কর; তুমি হৃষ্ট হয়ে মেঘ হতে জল বার কের দিয়েছ এবং গুরু পাষাণ দ্বারা বৃত্রকে ধ্বংস করেছ।






৫৭ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ অতিশয় দানশীল ও মহৎ ও প্রভূতধনযুক্ত অমোঘ বলসম্পন্ন ও প্রকান্ড দেহ বিশিষ্ট ইন্দ্রের উদ্দেশে আমি মননীয় স্তুতি সম্পাদন করছি। নিম্ন প্রদেশাভিমুখ জলরাশির ন্যায় তার বল কেউ ধারণ করতে পারে না, তিনি স্তোতৃদের বল সাধনের জন্য সর্বব্যাপী সম্পদ প্রকাশ করেন।
২। হে ইন্দ্র! এ বিশ্বজগৎ তোমার যজ্ঞে রত ছিল; জল যেরূপ নিম্নে যায়, হব্যদাতাদের অভিযুত সোমরস সমূহ তোমার দিকে প্রবাহিত হয়েছিল। ইন্দ্রের শোভনীয় সুবর্ণময় ও হননশীল বজ্র পর্বতে নিদ্রিত ছিল না।
৩। হে শুভ্র ঊষা! ভয়স্কর ও অতিশয় স্তুতিভাজন ইন্দ্রকে এ যজ্ঞে এক্ষণে যজ্ঞন্ন প্রদান কর। তারা বিশ্বধারক, প্রসিদ্ধ ও ইন্দ্রত্বচিহ্নযুক্ত জ্যোতি অশ্বের ন্যায় তাকে যজ্ঞান্ন প্রাপ্তির জন্য ইতস্ত্রতঃ বহন করছে।
৪। হে প্রভূতধনশালী ও বহু লোকের স্তুত ইন্দ্র! আমরা তোমাকে অবলম্বন করে যজ্ঞ সম্পাদন করছি, আমরা তোমারই। হে স্তুতিভাজন! তুমি ভিন্ন অন্য কেউ স্তুতি পায় না; পৃথিবী যেরূপ (স্বকীয় প্রাণীদের ধারণ করেন) তুমিও সেরূপ আমাদের সে স্তুতি বাক্য গ্রহণ কর।
৫। হে ইন্দ্র! তোমার বীর্য মহৎ আমরা তোমারই। হে মঘবন! এ স্তোতার কামনা পূর্ণ কর। বৃহৎ আকাশ তোমার বীর্য মেনে নিয়েছে। এ পৃথিবীও তোমার বলে নত হয়েছে।
৬। হে বজ্রযুক্ত ইন্দ্র! তুমি যে বিস্তীর্ণ মেঘকে বজ্র দ্বারা পর্বে পর্বে কেটে দিয়েছ; সে মেঘে আবৃত জলবয়ে যাবার জন্য নিম্ন দিকে ছেড়ে দিয়েছ; কেবল তুমিই বিশ্বব্যাপী বল ধারণ কর।








৫৮ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। মহাবলে জাত (১) ও মরণ রহিত অগ্নি শীঘ্রই ব্যথাদান করেন। দেবগণের আহবানকারী ইন্দ্র যখন যজমানের হব্যবাহক দূত হয়েছিলেন তখন সমীচীন পথ দ্বারা গিয়ে অন্তরীক্ষ নির্মাণ করেছিলেন (২); তিনি যজ্ঞে হব্যদ্বারা দেবগণের পরিচর্যা করেন।
২। জরারহিত অগ্নি তৃণ গুল্মাদিরূপ আপন খাদ্য মিশ্রিত ও ভক্ষণ করে শীঘ্রই কাষ্ঠে আরোহণ করেন। দহনার্থ ইতস্ততঃ গামী অগ্নির পৃষ্ঠদেশ স্থিত জ্বালা অম্বের ন্যায় শোভা পায় এবং আকাশের উন্নত শব্দায়মান মেঘের ন্যায় শব্দ করে।
৩। অগ্নি হব্য বহন করেন এবং রুদ্র ও বসুদের সম্মুখে স্থান পেয়েছেন। তিনি দেবগণের আহ্বানকারী এবং যজ্ঞস্থানে উপস্থিত থাকেন। তিনি ধন জয় করেন এবং মরণ রহিত। দীপ্তিমান অগ্নি যজমানদের স্তুতি লাভ করে রথের ন্যায় গমন করে প্রজাদিগের গৃহে বার বার বরণীয় ধন প্রদান করেন।
৪। অগ্নি বায়ু দ্বারা প্রেতি হয়ে মহা শব্দের সাথে এবং জ্বলন্ত জিহ্বা ও প্রসারিত তেজের সাথে অনায়াসে বৃক্ষ সমূহে স্থান পায়; হে অগ্নি! যখন তুমি বন বৃক্ষ সমূহ শীঘ্র দগ্ধ করবার জন্য বৃষের ন্যায় ব্যগ্ন হও, হে দীপ্তিজ্বাল জরারহিত অগ্নি! তখন তোমার গমনামার্গ কৃষ্ণ বর্ণ হয়।
৫। অগ্নি বাহু দ্বারা প্রেরিত হয়ে, শিখারূপে অস্ত্র ধারণ করে মহা তেজের সাথে অশোষিত বৃক্ষ রস আক্রমণ করে, গোযুথের মধ্যে বৃষের ন্যায় সমস্ত পরাজয় করে চারিদিকে বিস্তৃত হন; স্থাবর ও জঙ্গম সকলে বহু বিচারী অগ্নিকে ভয় করে।
৬। হে অগ্নি! মনুষ্যদের মধ্যে ভৃগুগণ দিব্য জন্ম প্রাপ্তির জন্য তোমাকে শোভনীয় ধনের ন্যায় ধারণ করেছিলেন। তুমি সহজে লোকের আহ্বান শ্রবণ কর এবং (দেবগণকে) আহ্বান কর তুমি যজ্ঞস্থানে অতিথি স্বরূপ এবং বরণীয় মিত্রের ন্যায় সুখদাতা। জ৭। সাত জন আহ্বানকারী ঋত্বিক যজ্ঞসমূহে যে পরম যজ্ঞাহ এবং দেবগণের আহ্বানকারী অগ্নিকে বরণ করেন, সে সর্বধন দাতা অগ্নিকে আমি যজ্ঞান্নের দ্বারা পরিচর্যা করি এবং তার নিকট রমনীয় ধন যাচ্ঞা করি।
৮। হে বলপুত্র। হে অনকুলদীপ্তিযুক্ত অগ্নি! তুমি স্তুতিকারকের গৃহস্বরূপ হও। হে ধনবান অগ্নি! ধনবান যজমানদের প্রতি কল্যাণ স্বরূপ হও। হে অগ্নি! স্তুতি কারকদের পাপ হতে রক্ষা কর। প্রজ্ঞাধনসম্পন্ন অগ্নি এ প্রাতে শীঘ্র আগমন করুন।

টীকাঃ
১। অর্থাৎ কাষ্ঠদ্বয় বলদ্বারা ঘর্ষণ করলে অগ্নি জন্মায়। সায়ণ।
২। অন্তরীক্ষ পূর্ব অবধিই ছিল। কিন্তু অন্ধকারে অপ্রকাশ ছিল; এখন অগ্নির তেজে প্রকাশ পেয়ে যেন নতুন সৃষ্ট হল। সায়ণ।








৫৯ সুক্ত ।।

অনুবাদ:
১। হে অগ্নি! অন্য অগ্নিসমূহ তোমার শাখামাত্র, তোমাতে সকল অমরগণ হাষ্ট হন; হে বৈশ্বানর! তুমি মানুষদের নাভিম্বরূপ, তুমি নিখাত স্তম্ভের ন্যায় লোকদের ধারণ কর।
২। অগ্নি স্বর্গের মস্তক, পৃথিবীর নাভি এবঙ দ্যু ও পৃথিবীর অধিপতি হয়েছিলেন। হে বৈশ্বানর! তুমি দেব, দেবগণ আর্যের জন্য তোমাকে জ্যোতি:পূপে উ:পন্ন করেছিলেন।
৩। সূর্যে যেরূপ ধ্রুব রশ্মিসমূহ স্থাপিত আছে, বৈশ্বানর অগ্নিতে সেরূপ ধনসমূদয় স্থাপিত হয়েছিল। পর্বতসমূহে, ওষধি সমূহে, জলসমূহে ও সকল মানুষে যে (ধন) তুমি তার রাজা।
৪। উভয় পৃথিবী পুত্র বৈশ্বানর বারা যেন বৃহ: হয়ে উঠল। বন্দী যেরূপ প্রভুর স্তুতি করে, সেরূপ এ সুদক্ষ হোতা শোভনগতি যুক্ত, প্রকৃত বল সম্পন্ন এবঙ নেতৃশ্রেষ্ঠ বৈশ্বানরের উদ্দেশে বহুবিধ মহ: স্তুতিবাক্য প্রয়োগ করেছে।
৫। হে বৈশ্বানর! তুমি সমুৎপন্ন সকল প্রাণীকেই জান, তোমার মাহাত্ম্য মহৎ আকাশ হতেও অধিক; আমি মানব প্রজাদিগের রাজ্য, তুমি যুদ্ধ দ্বারা দেবগণের জন্য ধন উদ্ধার করেছ।
৬। মানুষরা যে বৃত্রহস্তা বৈশ্বানরকে বৃষ্টির জন্য অর্চনা করে, সে জলবর্ষী বৈশ্বানরের মাহাত্ম্য আমি শীঘ্র বলছি। বৈশ্বানর অগ্নি দস্যুকে হনন করেছেন, বৃষ্টির জল নীচে প্রেরণ করেছেন এবং শশ্বরকে ভেদ করেছেন।
৭। বৈশ্বানর মাহাত্ম্য দ্বারা সকল মানুষের অধিপতি ও সুনুতবাক্যসম্পন্ন। শতবনি পুত্র পুরুণীথ (১) রাজ্য বহু স্তুতির সাথে সে অগ্নিকে স্তব করেন।

টীকাঃ
১। শতবনি অর্থে যিনি শত যজ্ঞ সম্পাদন করেছেন, পুরুণীথ অর্থে যিনি অনেকের নেতা। সায়ণ। এ রাজাদের ইতিহাস সম্বন্ধে সায়ণ কিছু বলেননি।








৬০ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। অগ্নি হব্যবাহক ও যশস্বী, যজ্ঞপ্রকাশক এবং সম্যক রক্ষণশীল, তিনি দেবগণের দূত এবং সদাই দেবগণের নিকট হব্য নিয়ে গমন করেন, তিনি দুটি কাষ্ঠ হতে জাত এবং ধনের ন্যায় প্রশংসিত: মাতরিবা (১) এ অগ্নিকে মিত্রের ন্যায় ভুগুবংশীয়দের নিকট আনলেন।
২। উভয় দেব ও মানুষগণ এ শাসনকর্তাকে সেবা করে, হব্যগ্রাহী দেবগণ এবং মানুষেরা এ’র সেবা করে। কেন না এ পূজ্য প্রজাপালক এবং ফলদাতা আহ্বানকারী অগ্নি সূর্যের পূর্বে ঊষাকালে বর্তমান থকে যজমানদের মধ্যে স্থাপিত হয়েছেন।
৩। আমাদরে নতুন স্তুতি হৃদয়জাত ও মিষ্ট জিহ্ব অগ্নির সম্মুখে ব্যাপ্ত হোক; মনুর সন্তান মানুষগণ যথাকালে যজ্ঞ সম্পাদন করে ও যজ্ঞান্ন প্রদান করে সে অগ্নিকে সংগ্রামকালে উৎপন্ন করে।
৪। অগ্নি কামনার পাত্র এবং বিশুদ্ধকারী, তিনি নিবাস হেতু এবং বরণীয় ও দেবগণের আহ্নকারী; যজ্ঞগৃহে প্রবিষ্ট মানুষদের মধ্যে তাকে স্থাপন করা হয়েছে। তিনি শত্রুদের দমনে কৃতসঙ্কল্প হয়ে এবং আমাদরে গৃহসমূহের পালনকর্তা হয়ে যজ্ঞগৃহে ধনাধিপতি হোন।
৫। হে অগ্নি! আমরা গৌতম গোত্রীয়; তুমি ধনপতি, রক্ষণশীল ও যজ্ঞান্নের কর্তা। আরোহী যেরূপ অশ্বকে হস্ত দ্বারা মার্জিত করে, আমরা তোমাকে সেরূপ মার্জিত করে মননীয় স্তোত্র দ্বারা প্রশংসা করব। অগ্নি প্রজ্ঞা দ্বারা ধন প্রাপ্ত হয়েছেন, এ প্রাত:কালে শীঘ্র আসুন।

টীকাঃ
১। যাস্ক মাতরিবা অর্থে বায়ু করেছেন, সায়ণও বলেন মাতরি অন্তরীক্ষে শ্বসিতি প্রাণিতি বত’তে ইতি যাবৎ ইতি মাতরিশ্বা বায়ুঃ। কিন্তু আধুনিক পন্ডিতগণ এ অর্থ গ্রহণে অসম্মত। আচার্য বোটলিং এবং রোথ তাদের জগদ্বিখ্যাত অভিধানে বলেন যে মাতরিশ্বার দুটি অর্থ বেদে দেখা যায়। প্রথম, মাতরিশ্বা একজন দেব যিনি বিরুস্বানের দূতরূপে আকাশ হতে অগ্নি এনে ভূগুবংশীয়দের দেন। দ্বিতীয় মাতরিশ্বা অগ্নিরই একটি গুপ্ত নাম। তারা আরও বলেন যে, মাতরিশ্বা বায়ু অর্থে বেদের কোথাও ব্যবহৃত হয়নি। মাতরিশ্বা যে বেদে অগ্নির একটি নাম তা ৩ মন্ডলের ২৬ সুক্তের ২ ঋকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, সে ঋকটি এই তং শুভ্রং অগ্নিং অবসে হবামহে বৈশ্বানরং মাতরিশ্বানং উক খ্যং। আবার এই ১ মন্ডলের ১৬ সুক্তের ৪ ঋকে ও টীকা দেখুন। মাতরিশ্বা অর্থে অগ্নি তা সায়ণ সে ঋকের ব্যাখ্যায় স্বীকার করেছেন। এবং ৩ মন্ডলের ২৬ সুক্তের ২ ঋকের টীকা দেখুন। যদি মাতরিশ্বা ঋগ্বেদে প্রকৃতই অগ্নির একটি নাম হয় তবে এ মাতরিশ্বা কর্তৃক স্বর্গ হতে অগ্নি আনার আখ্যান হতে কি গ্রীকদের Prometheus দেবের গল্প উৎপন্ন হয়েছে? আর ভৃগুবংশীয়দের নিকট মাতরিশ্বা অগ্নিকে এনে দিয়েছিলেন এরই বা অর্থ কি? পন্ডিতবর মিউয়র বিবেচনা করেন ভারতবর্ষে ভৃগু, মনু, অঙ্গিরা প্রভৃতি কয়েকটি ঋষিবংশদ্বারা অগ্নির পূজা প্রচার হয়েছিল।

(C) https://www.ebanglalibrary.com

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।