০৫ জানুয়ারী ২০১৮

ঋগ্বেদ সংহিতা - প্রথম মণ্ডলঃবিভিন্ন ঋষিঃ সুক্তঃ ০১-১৫

১ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। অগ্নি (১) যজ্ঞের পুরোহিত (২) এবং দীপ্তিমান; অগ্নি দেবগণের আহ্বানকারী ঋত্বিক এবং
প্রভূতরত্নধারী: আমি অগ্নির স্তুতি করি।
২। অগ্নি পূর্ব ঋষিদের স্তুতিভাজন ছিলেন, নুতন ঋষিদেরো স্তুতিভাজন; তিনি দেবগণকে এ যজ্ঞে আনুন
৩। অগ্নিদ্বারা যজমান ধনলাভ করেন, সে ধন দিন দিন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও যশোযুক্ত হয় ও তা দিয়ে অনেক বীরপুরুষ নিযুক্ত করা যায়।
৪। হে অগ্নি! তুমি যে যজ্ঞ চারদিকে বেষ্টন করে থাক সে যজ্ঞ কেউ হিংসা করতে পারে না এবং সে যজ্ঞ নি:সন্দেহেই দেবগণের নিকটে গমন করে।
৫। অগ্নি দেবগণের আহ্বানকারী; সিদ্ধকর্মা, সভ্যপরায়ণ ও প্রভূত ও বিবিধ কীর্তিযুক্ত; সে দেব দেবগণের সঙ্গে এ যজ্ঞে আগমন করুন।
৬। হে অগ্নি! তুমি হব্যদাতা যজমানের যে কল্যাণ সাধন করবে, হে অঙ্গিরা সে কল্যাণ প্রকৃত তোমারই।
৭। হে অগ্নি! আমরা দিনে দিনে দিনরাত মনের সাথে নমস্কার সম্পাদন করে তোমার সমীপে আসছি।
৮। তুমি দীপ্যমান, তুমি যজ্ঞের রক্ষক, যজ্ঞের অতিশয় দীপ্তিকারক, এবং যজ্ঞশালায় বর্ধনশীল।
৯। পুত্রের নিকট পিতা যেরূপ অনায়াসে অধিগম্য, হে অগ্নি! তুমি আমাদের নিকট সেরূপ হো; মঙ্গলার্থ আমাদরে নিকটে বাস কর।

টীকাঃ
১। নৈরুক্তদের মতে দেব তিন জন, পৃথিবীতে অগ্নি, অন্তরিক্ষে ইন্দ্র বা বায়ু এবং আকাশে সূর্য। তাঁদের মহাভাগ্য কারণ এক জনের অনেকগুলি নাম, অথবা এটি পৃথক পৃথক কর্মের জন্য, যথা হোতা, অধ্বর্যু, ব্রহ্মা, উদগাতা অথবা তাঁরা পৃথক পৃথক দেবই ছিলেন, কেন না তাঁদের পৃথকরূপে স্তুতি করা হয়েছে এবং পৃথক পৃথক নাম দেওয়া হয়েছে। নিরুক্ত ৭।। ৫। এ থেকে বোঝা যায় যে সে সময়ে ভারতবর্ষের তিনজন অগ্রগন্য দেবের মধ্যে অগ্নি একজন ছিলেন। ঋগ্বেদ সংহিতায় অগ্নি সমন্ধে যতগুলি সুক্ত আছে, ইন্দ্র ভিন্ন অন্য কোনো দেব সম্বন্ধে ততগুলি নেই।
২। অগ্নি না হলে যজ্ঞ হয় না, এ জন্য ঋগ্বেদে অনেক স্থলে অগ্নিকে পুরোহিত বলা হয়েছে। যথা রাজ্ঞ: পুরোহিত: তদভীষ্টং সম্পাদয়তি তথা অগ্নিরপি অপেক্ষিতং হোমং সম্পাদয়তি যদ্বা যজ্ঞস্য সম্বন্ধিনি পূর্বভাগে আহবনীয়রূপেণ অবস্থিতম। সায়ণ।


২ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে দর্শনীয় বায়ু (১) এস, এ সোমরস সমূহ (২) অভিযুত হয়েছে; এ পান কর, আমাদের আহ্বান শ্রবণ কর।
২। হে বায়ু! যজ্ঞাভিজ্ঞ স্তোতাগণ সোমরস অভিযুত করে তোমার উদ্দেশ্য স্তুতিবাক্য প্রয়োগ স্তব করছে।
৩। হে বায়ু! তোমার সোমগুণপ্রকাশক বাক্য সোম পানার্থ হব্যদাতা যজমানের নিকট আসছে, অনেকের নিকট আসছে।
৪। হে ইন্দ্র (৩) ও বায়ু! এ সোমরস অভিযুত হয়েছে, অন্ন নিয়ে এস: সোমরস তোমাদরে কামনা করছে।
৫। হে বায়ু ও ইন্দ্র! তোমরা অভিযুত সোমরস জান, তোমরা অন্নযুক্ত হব্যে বাস কর; শীঘ্র নিকটে এস।
৬। ?
৭। হে বায়ু ও ইন্দ্র! অভিষবকারী যজমানের অভিযুত সোমরসের নিকটে এস; হে বীরদ্বয়! এ কাজ ত্বরায় সম্পন্ন হবে।
৮। পবিত্রবল মিত্র ও হিংসকশত্রুনাশক বরুণকে (৪) আমি আহ্বান করি; তাঁরা ঘৃতাহুতি প্রদান রূপ কর্ম সাধন করেন।
৯। হে যজ্ঞ বর্ধয়িতা যজ্ঞস্পর্শী মিত্র ও বরুণ! তোমরা যজ্ঞফল দানার্থ এ বৃহৎ লোকের আশ্রয়ভূত; তাঁরা আমাদের বল ও কর্ম পোষণ করেন।

টীকাঃ
১। বায়ুও আদিম আর্যগণের আরাধ্য দেব ছিলেন, সুতরাং সে জাতির ভিন্ন ভিন্ন শাখার মধ্যে পূজনীয় ছিলেন। প্রাচীন ইরানীয়দের অবস্থা নামক জেন্দ ভাষায় লিখিত ধর্ম পুস্তকে বায়ু দেবের উল্লেখ আছে। প্রথম সুক্তের প্রথম ঋকের টীকার যাস্কের নিরুক্ত হতে যে অংশ উদ্বৃত হয়েছে তাতে প্রাচীন হিন্দুদের প্রধান দেবগণের মধ্যে বায়ুর নাম আছে।
২। সোমলতা পেষণ করলে দুগ্ধের ন্যায় শ্বেতবর্ণ এবং ঈষৎ অম্লরস নির্গত হয়, তাই মাদক অবস্থায় পরিণত করে পূর্বকালে যজ্ঞে ব্যবহৃত হত। প্রাচীন আর্যদের মধ্যে সোমরসের ব্যবহার ছিল, অতএব সে আর্য জাতির শাখা ইরানীদের মধ্যে সোমের ব্যবহার ও উপানসা ছিল। তারা সোমকে হওমা বলতেন ও যজ্ঞে এর অভিষব দিতেন। বোধ হয় ইরানীয় আর্যগণ সোমরস স্বাভাবিক অবস্থায় (unfermented)ব্যবহার করতেন এবং হিন্দু আর্যগণ সোমরস মাদক অবস্থায় (fermented) পান করতে ভাল বাসতেন এবং ঐ দুই আর্যজাতির বিবাদের এটি একটি কারণ।
৩। ভারতবর্ষে নদীর জল ভূমির উর্বরতা, ধান ও খাদ্য দ্রব্য, মানুষের সুখ ও জীবন; সমস্তই বৃষ্টির উপর নির্ভর করে, অতএব বৃষ্টিদাতা আকাশদেব ইন্দ্রের গেৌরব অধিক। তাঁর নাম যাস্ক হতে উদ্বৃত সূত্রে আছে, এবং তাঁর সম্বন্ধে যত সুক্ত আছে, অন্য কোন দেব সন্বন্ধে তত নেই।
৪। মিত্র আর্যদিগের একজন উপাস্য দেবতা ছিলেন সুতরাং প্রাচীন হিন্দু ও ইরানীয় উভয় শাখার মধ্যে তাঁর অর্চনা দেখা যায়। ইরানীয়দের মধ্যে মিথ্যা আলোক বা সূর্য বলে পুজিত হতেন, হিন্দুদের মধ্যে মিত্্আলোকে বা দিবা বলে পূজিত হতেন। বরুণ আর্যদের আরও পুরান দেবতা। আবরণকারী (বৃধাতু হতে) নৈশ আকাশকেই আর্যগণ বরুণ বলে পূজা করতেন, এবং সে দেবকে গ্রীকগণ Uranos, ইরানীয়গণ বরণ ও হিন্দুগণ বরুণ নামে জানেন। মৈত্রং বৈ অহরিতি শ্রুতো** শ্রুয়তে



৩ সুক্তঃ

অনুবাদঃ
১। হে ক্ষিপ্রপাণি, শুভকর্মপালক, বিস্তীর্ণ ভুজ বিশিষ্ট অশ্বিদ্বয় (১) ! তোমরা যজ্ঞের অন্ন কামনা কর।
২। হে বহুকর্মা, নেতা, ও বিক্রমশালী অশ্বিদ্বয়! অপ্রতিহত বুদ্ধির সঙ্গে আমাদের স্তুতি গ্রহণ কর।
৩। হে দস্রদ্বয়! হে নাসত্যদ্বয় (২) ! হে রুদ্রবর্ত্মন, অশ্বিদ্বয়! মিশ্রিত সোমরস অভিযুত হয়েছে, ছিন্ন কুশে স্থাপিত হয়েছে, তোমরা এস।
৪। হে বিচিত্র দীপ্তিবিশিষ্ট ইন্দ্র! আঙুল দিয়ে অভিষুত নিত্যশুদ্ধ এ (সোমরস) তোমাকে কামনা করছে, তুমি এস।
৫। হে ইন্দ্র! আমাদের ভক্তিদ্বারা আকৃষ্ট হয়ে, মেধাবীদের দ্বারা আহুত হয়ে অভিষবকারী ঋত্বিকের স্তোত্র গ্রহণ করতে এস। ৬। হে অশ্বযুক্ত ইন্দ্র! তরান্বিত হয়ে স্তোত্র গ্রহণ করতে এস; এ সোমাভিষবযুক্ত যজ্ঞে আমাদের অন্ন ধারণ কর।
৭। হে বিশ্বদেবগণ (৩) ! তোমরা রক্ষক, মনুষ্যগণের পালক, তোমরা হব্যদাতা যজমানের অভিষুত সোম গ্রহণ করতে এস; তোমরাই যজ্ঞের ফলদাতা।
৮। রেপ সূর্য রশ্মি দিনে আসে, বৃষ্টিদাতা বিশ্বদেবগণ ত্বরান্বিত হয়ে সেরুপ অভিযুত সোমরসে আগমন করুন।
৯। বিশ্বদেবগণ ক্ষয়রহিত ও সদা বর্তমান; তাঁরা অকল্যাণরহিত ও ধনবাহক; তাঁরা যেন এ যজ্ঞ সেবন করেন।
১০। পবিত্রা, অন্নযুক্তষজ্ঞবিশিষ্টা, ও যজ্ঞফলরূপধনদাত্রী সরস্বতী (৪) আমাদের অন্নবিশিষ্ট যজ্ঞ কামনা করুন।
১১। সুনৃত বাক্যের উৎপাদয়িত্রী, সুমতি লোকদের শিক্ষয়িত্রী সরস্বতী আমাদের যজ্ঞ গ্রহণ করেছেন।
১২। সরস্বতী প্রবাহিত হয়ে প্রভূত জল সৃজন করেছেন, এবং সকল জ্ঞান উদ্দীপন করেছেন।

টীকাঃ
১। প্রকৃতির কোন দৃশ্যকে অশ্বিদ্বয় নাম দিয়ে প্রাচীন হিন্দুগণ উপাসনা করতেন? যাস্ক নিরুক্ততে সে বিষয়ে লিখেছেন তৎ কৌ অশ্বিনৌ। দ্যাবা পৃথিব্যো ইতি একে, অহোরত্রৌ ইতি একে, সূর্যাচন্দ্রমসৌ ইতি একে। রাজনৌ পুণ্যকৃতৌ ইতি ঐতিহাসিকাঃ। যাস্কের নিজের মত যতদুর বুঝা যায বোধ হয় অর্ধরাত্রির পর ও প্রাত:কালের পূর্বে যে আলোক ও অন্ধকারে বিজড়িত থাকে তাই অশ্বিদ্বয়। ঊষার পূর্বে মিশ্রিত আলোক ও অন্ধকার যদি যমজদেব বলে উপাসিত হন তবে তাঁদের অশ্বী নাম দেওয়া হল কেন? এটি একটি বৈদিক উপম মাত্র। সূর্যের আলোক আকাশে ধাবমান হয়, উষার আলোক আকাশে ধাবমান হয়, সে জন্য সে আলোক বা রশ্মি সমূহকে ঋগ্বেদে সর্বদাই অশ্বি বলে বর্ণনা করা হয়েছে, এবং সূর্য ও ঊষাকে অশ্বযুক্ত বলে সম্বোধন করা হয়েছে। অশ্বিন শব্দেরও সেই অর্থ, অশ্বযুক্ত অর্থাৎ আলোকযুক্ত।
২। দস্রা। শত্রুণামুপক্ষয়িতারৌ যদ্বা দেববৈদ্যত্বেন রোগাণামুপক্ষয়িতারৌ । অশ্বিনৌ বৈ দেবানাং ভিষজৌ ইতি শ্রুতে:। সায়ণ। নাসত্যা। অসত্যমনৃতভাষণং। তদ্রহিতৌ। সায়ণ। দস্রা ও নাসতা এ দৃষ্টি শব্দ সর্বদাই অশ্বিদ্বয় সম্বন্ধে প্রয়োগ হয়।
৩। বিশ্বোদেবাস এতন্নামকা দেববিশেষা:। সায়ণ।
৪। সর: অর্থ জল, সরস্বতীর প্রথম অর্থ নদী এতে সন্দেহ নেই; আর্যাবর্তে সরস্বতী নামে যে নদী আছে তাই প্রথমে সরস্বতী দেবী বলে পূজিত হয়েছিলেন। এক্ষণে গঙ্গা যেরূপ হিন্দুদের উপাস্যা দেবী, প্রথম হিন্দুদের পক্ষে সরস্বতী সেরূপ ছিলেন। অচিরে সরস্বতী বাপ্দেবীও হলেন। যাস্ক বলেছেন তত্র সরস্বতী ইতি এতস্য নদীবন্দোতাবচ্চ নিগমা ভবন্তি। মূল ঋগ্বেদেও সরস্বতীর উভয় প্রকার গুণ লক্ষিত হয়। পুরাকালে সরস্বতী নদীতীরে যজ্ঞ সম্পাদন হত এবং মন্ত্র উচ্চারিত হত, ক্রমে সে সরস্বতী নদী সে পবিত্র মন্ত্রের দেবী ও বাপ্দেবী বলে পরিণত হলেন।



৪ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। যেরূপ দোহক দোহন হেতু সুদুপ্ধবতী গাভীকে আহ্বান করে, আমরাও সেরূপ রক্ষার্থে দিনে দিনে শোভনকর্মা ইন্দ্রকে আহ্বান করি।
২। হে সোমপায়ী ইন্দ্র! আমাদের অভিষবের নিকট এস, সোমপান কর; তুমি ধনবান তুমি হৃষ্ট হলে গাভী দান কর।
৩। আমরা যেন তোমার সমীপবর্তী সুমতিদের মধ্যে থেকে তোমাকে জানতে পারি; আমাদের অতিক্রমে করে অন্যের মধ্যে আপনাকে প্রকাশ করো না; আমাদের নিকট এস।
৪। অজেয় ও মেধাবী ইন্দ্রের সমীপে যাও। এ মেধাবীর কথা জিজ্ঞাসা কর; সে ইন্দ্র তোমার বন্ধুদের শ্রেষ্ঠ ধন দান করেন।
৫। আমাদরে ঋত্বিকেরা ইন্দ্রের পরিচর্যা করে তাঁকে স্তুতি করুন। হে নিন্দুকগণ! এ দেশ হতে এবং অন্য দেশ হতেও দুর হয়ে যাও।
৬। হে শত্রুক্ষয়কারক! শত্রুও যেন আমাদের সৌভাগ্যশালী বলে; আমাদের মিত্রপক্ষীয় মনুষ্যেরা (১) ত বলবেই; যেন আমরা ইন্দ্রের প্রসাদলব্ধ সুখে বাস করি।
৭। এ সোমরস ব্যাপনশীল ও যজ্ঞের সম্পদরূপ এ মানুষকে হৃষ্ট করে, কার্যসাধন করে এবং হর্ষদাতা ইন্দ্রের সখা; যজ্ঞব্যাপী ইন্দ্রকে এ দান কর।
৮। হে শতক্রতু! এ সোমপান করে তুমি বৃত্র প্রভৃতি শত্রুদের হনন করেছিলে, যুদ্ধে (তোমার ভক্ত) যোদ্ধাদের রক্ষা করেছিলে।
৯। হে শতক্রতু! তুমি সে যোদ্ধা! হে ইন্দ্র! ধনলাভার্থ তোমাকে অন্নবান করি।
১০। যিনি ধনের রক্ষক, এবং মহান যিনি কর্মের পুরয়িতা এবং অভিষবকারীর সখা, সে ইন্দ্রের উদ্দেশে গাও।

টীকাঃ ১। কৃষ্টয়ঃ শব্দের অর্থ মনুষ্যা অশ্মিন্মিত্রভূতাঃ। সায়ণ। কৃষ্ ধাতু অর্থ কর্ষণ বা চাষ করা; আর্যেরা কৃষিজীবী ছিলেন সেজন্য বোধ হয় কৃষ্টয়ঃ অর্থ মনুষ্য।



৫ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে স্তুতিবাদক সখাগণ! শীঘ্র এস উপবেশন কর, ইন্দ্রকে লক্ষ্য করে গাও।
২। এ সোমরস অভিযুত হলে সকলে একত্র হয়ে বহন শত্রুর দমনকারী, বহু বরণীয় ধনের স্বামী ইন্দ্রকে লক্ষ্য করে গাও।
৩। তিনি আমাদের উদ্দেশ্য সাধন করুন, তিনি ধন প্রদান করুন, তিনি স্ত্রী প্রদান করুন, তিনি অন্ন নিয়ে আমাদের নিকটে আগমন করুন।
৪। যুদ্ধে শতুরা যার রথযুক্ত অশ্বদ্বয়ের সম্মুখীন হতে পারে না, সে ইন্দ্রকে লক্ষ্য করে গাও।
৫। এ অভিযুত পবিত্র, দধিমিশ্রিত সোমরস সমূহ অভিযুত সোমপায়ীর পানার্থ তার নিকট যাচ্ছে।
৬। হে সুক্রতু ইন্দ্র! তুমি অভিযুত সোম পানের জন্য ও দেবগণের মধ্যে জ্যেষ্ঠত্ব প্রাপ্তির জন্য একেবারেই বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়েছ।
৭। হে স্তুতিভাজন ইন্দ্র। ব্যাপনশীল অর্থাৎ শীঘ্রমাদক সোমরস সমূহ তোমাতে প্রবেশ করুক, প্রকৃষ্ট জ্ঞানলাভে তোমার মঙ্গলকারী হোক।
৮। হে শতক্রতু। স্মোম সমূহ তোমাকে বর্ধন করেছে, উকুথ সমূহ তোমাকে বর্ধন করেছে, আমাদের স্তুতি তোমাকে বর্ধন করুক।
৯। ইন্দ্র রক্ষণে বিরত না হয়ে এ সহস্রসংখ্যক অন্ন গ্রহণ করুন, যে অন্নে সমস্ত পৌরুষ অবস্থিতি করে।
১০। হে স্তুতিভাজন ইন্দ্র। বিরোধী মনুষ্যেরা আমাদের শরীরে যেন আঘাত না করে, তুমি ক্ষমতাশালী, আমাদের বধ নিবারণ কর।




সুক্ত ৬ ।।

অনুবাদঃ
১। চারদিকের লোকেরা সূর্যরূপে ইন্দ্রের প্রতাপান্বিত, অরুষ ও বিচরণকারী অশ্ব যোজনা করছে। আলোকগণ আকাশে দীপ্যমান রয়েছে (১)।
২। তারা ইন্দ্রের কমনীয়, রক্তবর্ণ, তেজ:পূর্ণ ও পুরুষবাহক হরি নামক অশ্বদ্বয় রথের উভয় পার্শ্বে সংযোজিত করে।
৩। হে মনুষ্যগণ। সূর্যরূপ ইন্দ্র নিদ্রায় সংজ্ঞারহিতকে সংজ্ঞাদান করে, অন্ধকারে রূপরহিতকে রূপ দান করে, জলন্ত রশ্মির সাথে উদিত হন।
৪। তারপর মরুৎগণ (২) যজ্ঞার্হ নাম ধারণ করে স্বীয় প্রকৃতি অনুসারে মেঘের মধ্যে জলের গর্ভাকার রচনা করলেন।
৫। হে ইন্দ্র! দৃঢ় স্থানের ভেদকারী এবং বহনশীল মরুৎদের সাথে তুমি গুহায় লুকান গাভী সমূদয় অন্বেষণ করে উদ্ধার করেছিলে (৩)
৬। স্তোতাগণ দেবতা কামনা করে ধনযুক্ত ও মহৎ ও বিখ্যাত মরুৎগণকে লক্ষ্য করে সুমন্ত্রী ইন্দ্রের ন্যায় স্তুতি করে।
৭। হে মরুৎগণ। যেন তোমাদের ভীতিরহিত ইন্দ্রের সঙ্গে মিলিত দেখা যায়; তোমরা নিত্য প্রমুদিত ও তুল্যদীপ্তি বিশিষ্ট।
৮। দোষ রহিত, স্বর্গাভিগত ও কাময়িতব্য মরুৎগণের সাথে ইন্দ্রকে বলসম্পন্ন বলে এ যজ্ঞ অর্চনা করছে।
৯। হে চতুর্দিকব্যাপী মরুৎগণ! ঐ অন্তরিক্ষ হতে অথবা আকাশ হতে, অথবা দীপ্যমান আদিত্যমন্ডল হতে এস; এ যজ্ঞে ঋত্বিক সম্যকরূপে স্তুতি সাধন করছে।
১০। এ পৃথিবী হতে অথবা আকাশ হতে অথবা মহৎ অন্তরিক্ষ হতে ধন দানের জন্য ইন্দ্রের নিকট যাঞ্জা করি।

টীকাঃ
১। এ ঋকের অর্থ অপরিস্কার। যথা মুলে অরুষ শব্দ আছে, সায়ণ তার অর্থ করেছেন হিংসক রহিত। পণ্ডিত মক্ষমূলর বলেন অরুষের আদি অর্থ লোহিতবর্ণ এবং অরুষ বিশেষ্য হয়ে ব্যবহৃত হলে সূর্যের একটি অশ্বের নাম। তিনি আরও বলেন এ সূর্যের লোহিত বর্ণ অশ্ব অরুষ গ্রীসদেশে রূপান্তর প্রাপ্ত হয়ে Eros নাম ধারণ করে প্রেমের দেবতা বলে পূজিত হতেন!- Chips from a German Workshop সূর্যের অশগণের সাধারণ নাম হরিৎ সেজন্য সূর্যকে হরিদশ্ব বলে। মক্ষমূলর বিবেচনা করেন এ হরিৎগণ গ্রীসদেশে রূপান্তর প্রাপ্ত হয়ে Charites নাম ধারণ করে পরম রূপবতী ও কমনীয় দেবীরূপে পূজিত হতেন। Science of Language

২। মরুৎগণ কে? মরুৎ শব্দ মৃ ধাতু হতে উৎপনন সে ধাতুর অর্থ আঘাত করা বা হনন করা। মরুৎগণ আঘাতকারী বা ধ্বংসকর ঝড়বায়ু। ঐ ধাতু হতে লাটিনদের যুদ্ধদেব Mars ঐ নাম পেয়েছেন।

৩। পণিঃ নামক অসুরেরা দেবলোক হতে গাভী অপহরণ করে অন্ধকারে রেখেছিল, ইন্দ্র মরুৎদের সাথে তা উদ্ধার করেছিলেন। গাভীর অন্বেষনার্থ সরমা নাম্নী এক দেব কুক্কুরীকে নিযুক্ত করেছিলেন, এবং সরমা অসুরদের সাথে বন্ধুত্ব করে গাভীর অনুসন্ধান পেয়েছিল। সায়ণ। ইউরোপীয় পণ্ডিত মহ্মমূলর বিবেচনা করেন এ বৈদিক উপাখ্যানটি প্রাত:কালে প্রকৃতি সম্বন্ধীয় একটি উপমা মাত্র। তিনি বলেন, সরমা ঊষার একটি নাম। দেবগণের গাভীগণ অর্থাৎ সূর্যরশ্মি সমুদয় অন্ধকার দ্বারা অপহৃত হয়েছে। দেবগণ ও মানুষেরা তাদের উদ্ধারের জন্য ব্যস্ত হয়েছেন। অবশেষে ঊষা দেখা দিলেন। তিনি বিদ্যুৎগতিতে, গন্ধ পেয় কুক্কুরী যেরূপ যায় সেরূপ ইতস্ততঃ ধাবমান হতে লাগলেন। তিনি সন্ধান নিয়ে ফিরে এলে আলোকদেব ইন্দ্র প্রকাশ হয়ে অন্ধকারের সাথে যুদ্ধ করলেন এবং তাদের দুর্গ হতে সে দেবগাভী উদ্ধার করলেন। মহ্মমলর আরও বিবেচনা করেন ট্রয়ের যুদ্ধের যে গল্প নিয়ে চিরস্মরনীয় কবি হোমর গ্রীক ভাষায় মহাকাব্য লিখেছেন, সে গল্প এই পণিঃ ও সরমার গল্পের রূপান্তর মাত্র। The siege of Troy is but a repetition of the daily siege of the East, by the solar powers that every evening are robbed of their brightest treasures in the west.-Science of Language.

HYMN VI. Indra.



সুক্ত ৭ ।।

অনুবাদঃ
১। গাথাকারেরা বৃহৎ গাথা দ্বারা, অর্কীগণ অর্ক দ্বারা, বাণীকারেরা বাণীদ্বারা ইন্দ্রকে স্তুতি করেছেন।
২। ইন্দ্র হরিদ্বয়কে বচনমাত্রে যোজিত করে সকলের সাথে মিশছেন, তিনি বজ্রযুক্ত ও হিরস্ময়।
৩। ইন্দ্র বহুদূর দর্শনের জন্য আকাশে সূর্যকে আরোহণ করিয়েছিলেন; সূর্য কিরণ দ্বারা পর্বত আলোকিত করেছেন।
৪। হে উগ্র ইন্দ্র! তোমার আমোঘ রক্ষণাবেক্ষণ দ্বারা আহবে এবং (গজাশ্বাদি) লাভযুক্ত সহস্র মহাযুদ্ধে আমাদের রক্ষা কর।
৫। ইন্দ্র আমাদের সহায় এবং শত্রুদের পক্ষে বজ্রধারী আমরা মহাধনের জন্য এবং স্বল্প ধনের জন্যও ইন্দ্রকে আহ্বান করি।
৬। হে সর্ব ফলদাতা, হে বৃষ্টিপ্রদ ইন্দ্র! তুমি আমাদের জন্য ঐ মেঘ উদঘাটন করে দাও; তুমি আমাদরে যাচঞা কখনও অগ্রাহ্য করনি।
৭। ভিন্ন ভিনন ফলদাতা ভিন্ন ভিন্ন দেবতা সম্বন্ধে যে স্তুতিবাক্য প্রয়োগ উৎকৃষ্ট হয়, সে সমস্ত স্তোমই বজ্রধারী ইন্দ্রের; তাঁর যোগ্য স্তুতি আমি জানি না।
৮। যেরূপ বননীয়গতি বৃষভযুথকে বলপুর্ণ করে অভীন্টবর্ষী ইন্দ্র সেরূপ মনুষ্যদের বলপূর্ণ করেন; ইন্দ্র ক্ষমতাশালী ও যাচঞা অগ্রাহ্য করেন না।
৯। যে ইন্দ্র একাকী মনুষ্যদের ধন সমূহের এবং পঞ্চক্ষিতির (১) উপর শাসন করেন।
১০। সর্বজনের উপরিস্থিত ইন্দ্রকে তোমাদের জন্য আহ্বান করি, তিনি কেবল আমাদেরই হোন।

টীকাঃ ১। পঞ্চক্ষিতি সম্বন্ধে ৮৯ সুক্তের ১০ ঋকের টীকা দেখ।



৮ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে ইন্দ্র! আমাদরে রক্ষণার্থে সম্ভোগযোগ্য, জয়শীল, সদা শত্রুবিজয়ী ও প্রভূত ধন দাও।
২। যে ধনদ্বারা (নিযুক্ত সৈন্যদিগের) নিরন্তর মুষ্টিপ্রহার দ্বারা আমরা শত্রুকে নিবারণ করব অথবা তোমার দ্বারা রক্ষিত হয়ে অশ্ব দ্বারা শত্রুকে নিবারণ করব।
৩। হে ইন্দ্র! তোমার দ্বারা রক্ষিত হয়ে আমরা কঠিন অস্ত্র ধারণ করি, যুদ্ধে স্পর্দ্ধাযুক্ত শত্রুকে জয় করব।
৪। হে ইন্দ্র! তোমার সহায়তায় আমরা বীর অস্ত্রধারীদের সাথে সৈন্যসজ্জাযুক্ত শত্রুকেও পরাভব করতে পারি।
৫। ইন্দ্র মহৎ এবং সর্বোৎকৃষ্ট, বজ্রধারী ইন্দ্রে মহত্ত্ব অবস্থিতি করুক; তাঁর সৈন্য আকাশের ন্যায় প্রভূত।
৬। যে পুরুষেরা সংগ্রামে লিপ্ত হন, অথবা পুত্র লাভ ইচ্ছা করেন অথবা যে বিজ্ঞ লোকেরা জ্ঞানাকাঙ্ক্ষায় থাকেন (তাঁরা সকলেই ইন্দ্রের স্তুতি দ্বারা সিদ্ধি লাভ করেন)।
৭। ইন্দ্রের যে উদরদেশ অতিশয় সোমরসপানে তৎপর সে উদর সমুদ্রের ন্যায় স্ফীত হয়, মুখের প্রচুর জলের ন্যায় (কখনও শুষ্ক হয় না)।
৮। ইন্দ্রের সুনৃত বাক্য প্রকৃতই সুনৃত এবং বিবিধ (মিষ্ট) বচনযুক্ত, সে বাক্য মহৎ এবং গাভীদান করে; এবং হব্যদাতার পক্ষে সে বাক্য পরিপক্ক ফলপুর্ণ শাখার ন্যায়।
৯। হে ইন্দ্র! তোমার ঐশ্বর্য প্রকৃতই এরূপ, এবং আমার মত হব্যদাতার রক্ষণে হেতু, এবং তৎক্ষণফলদায়ী।
১০। তাঁর স্তোম ও উক্থ প্রকৃতই এরূপ, অর্থাৎ কাম্য, এবং ইন্দ্রের সোমপানের জন্য কথনীয়।

HYMN VIII. Indra.



৯ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে ইন্দ্র ! এস. সোমরসরূপ খাদ্য সমূহে হৃষ্ট হও; মহাবল হয়ে শত্রুদের পরাজয়ী হও।
২। হর্ষজনক ও কার্যকরণে উত্তেজক সোমরস প্রস্তুত হলে হর্ষযুক্ত ও সর্ব কর্মকারক ইন্দ্রকে উৎসর্গ কর।
৩। হে সুশিপ্র ইন্দ্র! সকল মানুষের অধীশ্বর! হর্ষজনক স্তুতি সমূহদ্বারা হর্ষযুক্ত হও; দেবগণের সাথে এ সবন সমূহে এস।
৪। ?
৫। হে ইন্দ্র! শ্রেষ্ঠ ও বহুবিধ ধন আমাদের অভিমুখে প্রেরণ কর; পর্যাপ্ত ও প্রভূত ধন তোমারই আছে।
৬। হে প্রভূত ধনশালী ইন্দ্র! ধন সিদ্ধির জন্য আমাদের এ কর্মে নিযুক্ত কর; আমরা উদ্যোগবান ও কীর্তিমান।
৭। হে ইন্দ্র! গাভীযুক্ত অন্নযুক্ত প্রভূত ও বৃহঃ সমস্ত আয়ুর কারণ ও বিনাশরহিত ধন আমাদের প্রদান কর।
৮। হে ইন্দ্র ! আমাদের মহৎ কীর্তি এবং সহস্রদানযুক্ত ধন এবং বহুরথপূর্ণ সে অন্ন দান কর।
৯। ধনরক্ষার্থ আমরা স্তুতি দ্বারা স্তব করতে করতে ইন্দ্রকে আহ্বান করি, তিনি ধনপালক, ঋকপ্রিয়, এবং যজ্ঞে গমন করেন।
১০। প্রত্যেক সবনে যজমানগণ নিত্যনিবাস ও পৌঢ় ইন্দ্রের বৃহৎ পরাক্রমের প্রশংসা করে।

HYMN IX. Indra.


।১০ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে শতক্রতু! গায়কেরা তোমার উদ্দেশে গান করে, অর্চকেরা অর্চনীয় ইন্দ্রকে অর্চনা করে; নর্তকেরা যেরূপ বংশখণ্ডকে উন্নত করে, স্তুতিকারেরা (১) তোমাকে সেরূপ উন্নত করে।
২। যজমান সোমলতা আহরণার্থ যখন সানু হতে অপর সানুতে আরোহণ করে, এবং প্রভূত কর্ম উপক্রম করে, তখন ইন্দ্র যজমানের প্রয়োজন জানতে পারেন, এবং অভীষ্টবর্ষণে উৎসুক হয়ে মরুৎদলের সাথে যজ্ঞস্থানে আগমনার্থ উদ্যত হন।
৩। তোমার কেশরযুক্ত, পরাক্রান্ত এবং পৃষ্টাঙ্গ অশ্বদ্বয় সংযোজিত কর; তারপর হে সোমপায়ী ইন্দ্র! আমাদের স্তুতি শ্রবণার্থ নিকটে এস।
৪। হে নিবাসকারণভূত ইন্দ্র! এস আমাদের স্তুতির প্রশংসা কর, অনুমোদন কর ও শব্দদ্বারা আনন্দ প্রকাশ কর; আমাদের অন্ন ও যজ্ঞ এককালে বর্ধন কর।
৫। বহু শত্রুনিষেধকারী ইন্দ্রের উদ্দেশে বর্ধনকারী উকথ গীত হবে; যেন সে ক্ষমতাশালী ইন্দ্র আমাদের পুত্র ও বন্ধুদের মধ্যে মহানাদ করেন।
৬। আমরা মিত্রতার জন্য, ধনের জন্য সূবীর্যের জন্য তাঁর নিকট যাই; সে ক্ষমতাশালী ইন্দ্র আমাদের ধন দান করে আমাদরে রক্ষণসথর্থ হয়েছেন।
৭। হে ইন্দ্র! তোমার প্রদত্ত অন্ন সর্বত্র প্রসারিত এবং সুখপ্রাপ্য, হে বজ্রধারী ইন্দ্র! গাভীর নিবাসস্থান খুলে দাও ধন সম্পাদন কর।
৮। হে ইন্দ্র! শত্রুবধ কালে এ উভয় জগৎ তোমাকে ধারণ করতে পার না; তুমি স্বর্গীয় জল জয় কর, আমাদের সম্যকরূপে গাভী প্রেরণ কর।
৯। হে ইন্দ্র! তোমার কর্ণ চারদিক হতে শুনতে পায়, আমাদরে আহ্বান শীঘ্র শ্রবণ কর; আমার স্তুতি ধারণ কর, আমার এ স্তোত্র ও আমার সখার স্তোত্র আপনার নিকটে ধারণ কর।
১০। আমরা তোমাকে জানি; তুমি প্রভূতরূপে অভীষ্ট বর্ষণ কর, তুমি সংগ্রামে আমাদরে আহ্বান শ্রবণ কর; নব্য আয়ুঃ সম্যকরূপে বর্ধন কর, এ ঋষিকে সহস্রধনোপেত কর।
১১। ?
১২। হে স্তুতিভাজন ইন্দ্র! চারদিক হতে এ স্তুতি তোমার নিকট উপনীত হোক; তুমি দীর্ঘায়ুঃ; তোমাকে অনুসরণ করে সে স্তুতি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হোক; তোমার প্রীতি সাধন করে সে স্তুতি আমাদরে প্রীতিকর হোক।

টীকাঃ
১। মুলে ব্রহ্মাণঃ আছে। ঋগ্বেদে ব্রহ্ম অর্থে স্তুতি এবং ব্রহমা অর্থে স্তুতিকারী পুরোহিত। ১৫ সুক্তের ৫ ঋক, ১৮ সুক্তের ১ ঋক দেখুন।
২। ষদ্যপি কিবামিত্রঃ কুশিকসা পত্রজ্ঞথাপি তদ্রুপেণ ইন্দ্রস্যৈবোৎপন্নত্বাৎ কুশিকপুত্রত্বমবিরুদ্ধম। কুশিকস্তৈষীরথিরিন্দ্রতুলাং পুত্রমিচ্ছন ব্রহ্মচর্যং চচার। তসোন্দ্র এর গাথীপুত্র যজ্ঞে। সায়ণ।



১১ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। সমুদ্রবৎ ব্যাপ্তিবিশিষ্ট, রথীদের মধ্যে রথিশ্রেষ্ঠ, অন্নপতি ও সজনপালক ইন্দ্রকে আমাদের সমস্ত স্তুতি বর্ধন করেছে।
২। হে বলপতি ইন্দ্র! তোমার মিত্রতায় অন্নবান হয়ে আমরা যেন না ভয় করি। তুমি জয়শীল ও অপরাজিত, তোমাকে আমরা স্তুতি করি।
৩। ইন্দ্রের ধনদান পূর্বকাল সিদ্ধ; যদি তিনি স্তোতাদের গাভীযুক্ত ও অন্নযুক্ত ধন দান করন, তা হলে তাঁর রক্ষণাবেক্ষণ ক্ষান্ত হবে না।
৪। যুবা, মেধাবী, প্রভূতবলসম্পন্ন, সকল কর্মের ধর্তা, বজ্রযুক্ত ও বহু স্তুতিভাজন ইন্দ্র (অসুরদের) নগর বিদারকরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
৫। হে বজ্রযুক্ত ইন্দ্র! তুমি গাভী হরণকারী বলনামক শত্রুর গহ্বর উদঘাটিত করেছিলে (১) তখন বলাসুরনিপীড়িত দেবতাগণ ভরশূন্য হয়ে তোমাকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন।
৬। হে বীর ইন্দ্র! আমি স্যন্দমান সোমরসের গুণ সর্বত্র ব্যক্ত করে তোমার ধন দানে আকৃষ্ট হয়ে প্রর্ত্যাগত হয়েছি। হে স্তুতিভাজন ইন্দ্র! পূর্ব যজ্ঞকর্তাগণ তোমার নিকট উপনীত হত, এবং তোমার বদান্যতা জেনেছিল।
৭। হে ইন্দ্র! তুমি মায়াবী শুষ্ণ (২) (নামক অসুরকে) মায়াদ্বারা বধ করেছিলে; মেধাবিগণ তোমার (মহিমা) জানে, তাদের অন্ন বর্ধন কর।
৮। বলপ্রবাবে জগতের নিয়ন্তা ইন্দ্রকে স্তোতাগণ স্তুতি করেছিল; তাঁর ধনদান সহস্রসংখ্যক অথবা তা অপেক্ষাও অধিক।

টীকাঃ
১। বলনামক কোন এক অসুর দেবতাগণের গাভী অপহরণ করে কোন এক গহব্বরে গোপন করে রেখেছিল। তখন ইন্দ্র স্বসৈন্যে সে গহব্বর বেষ্টন করে সে গহব্বর হতে গাভী বার করেছিলেন। সায়ণ। চতুর্থ মন্ডলের ৫০ সুক্ত এবং অন্যান্য সুক্ত পাঠ করলে বোঝা যায় যে বল অসুরের উপাখ্যান একটি উপমা মাত্র, মেঘই বলের গাভী, ইন্দ্র তাদের উদ্ধার করে দোহন করেন, অর্থাৎ বৃষ্টি দান করেন। এ নৈসর্গিক ব্যাপার সম্বন্ধে আর একটি উপমা হতে বৃত্রের উপাখ্যান উৎপন্ন হয়েছে; ৩২ সুক্ত দেখুন। ডাক্তার কৃষ্ণমোহন বন্দো্যাপাধ্যায় আসিরীয় ইতিহাসের বাবিলনাধিপতি বল দের সাথে বৈদিক বলের ঐক্য সাধন করেন। এবং তিনি আসিরীয় অসরের সাথে অসুরের ঐক্য সাধনে উৎসুক। তাঁর প্রণীত ঋগ্বেদের প্রথম দুই অধ্যায়ের ভূমিকা দেখুন। এবং তাঁর প্রণীত Aryan Witness দেখুন।
২। শুষ্ণং ভূতানাং শোষণহেতুং এতন্নামকং অসুরং। সায়ণ। অর্থাৎ অনাবৃষ্টিরূপ অকল্যাণ। শুষ্ণের উপাখ্যান বৃষ্টিপাতের আর একটি উপমা। ইন্দ্র শুষ্ণকে হনন করলেন, অর্থাৎ অনাবৃষ্টি প্রতিরোধ করে বৃষ্টি দান করলেন। বৃত্র, অহি, শুষ্ণ, নমুচি, পিপ্রু, শুম্বর, উরণ, কুযব, বর্চী, অর্বুদ প্রভৃতি দনুপুত্রদের সাথে ইন্দ্রের যুদ্ধের এই আদিম অর্থ। ৩২ সুক্ত দেখুন।



১২ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। অগ্নি দেবদুত ও দেবগণের আহ্বানকারী, তিনি সর্বধনযুক্ত এবং এ যজ্ঞের সুনিষ্পাদক আমরা অগ্নিকে বরণ করি।
২। প্রজাপালক, হব্যবাহী, এবং বহু লোকের প্রিয়অগ্নিকে যজ্ঞের অনুষ্ঠাতাগণ নিরুতর আহ্বান মন্ত্র দ্বারা আহ্বান করে থাকে।
৩। হে কাষ্ঠোৎপন্ন অগ্নি! এ ছিন্নকুশযুক্ত যজ্ঞস্থলে দেবতাদের আন, তুমি আমাদের স্তুতিভাজন ও দেবতাদের আহ্বানকারী।
৪। হে অপ্নি! যেহেতু তুমি দেবতাদের দুতকর্ম প্রাপ্ত হয়েছ, অতএব হব্যাকাঙ্ক্ষ দেবগণকে জাগরিত কর; দেবগণের সাথে এ কুশযুক্ত যজ্ঞস্থলে উপবেশন কর।
৫। হে অপ্নি! তুমি ঘৃতের দ্বারা আহুত ও দীপ্যমান; আমাদের বিদ্বেষিগণ রাক্ষুসের সাথে যুক্ত হয়েছে, তুমি তাদেরদহন কর।
৬। অপ্নি অপ্নিদ্বারা প্রজ্বলিত হন, তিনি মেধাবী, গৃহপালক, যুবা (১) হব্যবাহী ও জুহু মুখ (২)
৭। মেধাবী, সত্যধর্মা, শত্রুনাশক, দেব অপ্নির নিকটে এসে যজ্ঞ কর্মে তাঁর স্তুতি কর।
৮। হে দেব অগ্নি! তুমি দেবদূত, যে হরিষ্পতি তোমার পরিচর্যা করে তুমি তার সম্যক রক্ষক হও।
৯। হে হরিষ্পতি, দেবগণের হব্যভক্ষনার্থে অগ্নির নিকটে এসে সম্যক পরিচর্যা করে, হে পাবক! তাকে সুখী কর।
১০। হে দীপ্যমান পাবক অগ্নি! তুমি আমাদের জন্য দেবতাগণকে এখানে নিয়ে এস, এবং আমাদের যজ্ঞ ও হব্য দেবসমীপে নিয়ে যাও।
১১। হে অগ্নি! নতুন গায়ত্রীছন্দের মন্ত্র দ্বারা স্তুত হয়ে আমাদের জন্য ধন ও বীরযুক্ত অন্ন প্রদান কর।
১২। হে অগ্নি! তুমি শুভ্র দীপ্তিযুক্ত ও দেবগণের আহ্বানসমর্থ স্তোত্রসমন্বিত। তুমি আমাদের এ স্ত্রোত্র গ্রহণ কর।

টীকাঃ
১। অগ্নিকে অনেক স্থানে যুবা বলে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি সকল দেবগণের মধ্যে যবিষ্ঠ। এই মন্ডলের ২২।১০, ২৬।২, ১৪১।১৪ প্রভৃতি ঋক দেখুন। গ্রীকদের বিশ্বকর্মার নাম Hephaistos, এবং পন্ডিতগণ বিবেচনা করেন, এ Hephaistos, নাম যবিষ্ঠ নামের রূপান্তর মাত্র। দুটি কাষ্ঠ ঘর্ষণ বা মন্থন করলে অগ্নি উৎপন্ন হয় সে জন্য অগ্নিকে প্রমস্থ নাম দেওয়া যায়। গ্রীকদের ধর্মে যে দেব মানুষের হিতার্থে স্বর্গ হতে অগ্নি চুরি করে এনেচিলেন, পন্ডিতদের মতে সে Prometheous দেবের নাম প্রমন্থের রূপান্তর মাত্র। অগিনর আর একটি নাম ভরণু পণ্ডিতেরা বলেন তারই রূপান্তর গ্রীকদের অগ্নিদাতা ও সদাচার নিয়ন্তা Phoroneus এবং পন্ডিতগণ আরও বিবেচনা করেন রোমকদের, Vulcan রূপান্তর মাত্র। In this name Yavishtha, whicn is never given to any other Vedic god, we may recognize the Hellenic Heyhaistos. Note- Thus with the exception of Agni all the names of the fire and the fire god were carried away by the western Aryans; and we have Promotheus answering to Pramantha, Phoroneus to Bharanyu, and the Latin Vulcanus to the Sanscrit Ulka.- Cox’s Mythology of the Aryan nations.
২। জুহ কাষ্ঠ নির্মিত হাতা যজ্ঞকালে ব্যবহার হয়ে থাকে। সে হাতাই অগ্নির মুখস্বরূপ, কেন না তা দিয়ে অগ্নিকে ঘৃত ভোজন করান যায়।

HYMN XII. Agni.


১৩ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে সুসমিদ্ধ (১) নামক অগ্নি! আমাদরে যজমানের নিকট দেবগণকে আন; হে পাবক। হে দেবগণের আহ্বানকারী। তুমি যজ্ঞ সম্পাদন কর।
২। হে মেধাবী তনুনপাৎ (২) নামক অগ্নি! আমাদের রসবৎ যজ্ঞ অদ্য ভক্ষণার্থে দেবগণের নিকট নিয়ে যাও।
৩। এ যজনদেশে, এ যজ্ঞে, প্রিয়, মধুজিহ্ব, হব্যনিষ্পাদক, নরাশংস (৩) নামক অগ্নিকে আহ্বান করি।
৪। হে ঈলিত (৪) অগ্নি। সুখতমরথে দেবগণকে নিয়ে এস; মানুষদ্বারা তুমি দেবগণের আহ্বানকারী রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছ।
৫। হে বুদ্ধিমান ঋত্বিকগণ। পরস্পরসংযুক্ত এবং ঘৃতাচ্ছাদিত বহি (৫) কুশ বিস্তার কর, সে কুশের উপর ঘৃত দৃষ্ট হয়।
৬। দেবীদ্বার (৬) উদ্ঘাটিত হোক; সে দ্বার যজ্ঞের বর্ধন সাধক; দ্যুতিমান, এবং এতদিন জনশূন্য ছিল; অদ্য অবশ্যই যজ্ঞ সাধন করতে হবে।
৭। শোভনরূপযুক্ত নক্ত ও ঊষাকে (৭) এ আমাদের কুশে বসবার জন্য এ যজ্ঞে আহ্বান করছি।
৮। ঐ সুজিহ্ব, মেধাবী, হোতা দেবদ্বয়কে (৮) আহ্বান করছি; তাঁরা আমাদের এ যজ্ঞ সম্পাদন করুন।
৯। সুখপ্রদ ও ক্ষয়রহিত ইলা, সরস্বতী ও মহী (৯) এ দেবীত্রয় এ কুশে উপবেশন করুন।
১০। শ্রেষ্ঠ ও বহুবিধ রূপসম্পন্ন ত্বষ্টাকে (১০১) এ যজ্ঞে আহ্বান করছি; তিনি কেবল আমাদের পক্ষেই থাকুন।
১১। হে দেব বনষ্পতি (১১)! দেবতাদের হব্য সমর্পণ কর; হব্য দাতার যেন পরম জ্ঞান জন্মে।
১২। ইন্দ্রর জন্য যজমানের গৃহে স্বাহা (১২) দ্বারা যজ্ঞ সম্পন্ন কর; সে যজ্ঞে দেবগণকে আহআন করছি।

টীকাঃ
১। এ সুক্তটি আপ্রীসুক্ত অর্থাৎ পশুযজ্ঞে এর নিয়োগ হত। এ সুক্তের বারটি ঋকে অগ্নিকে বারটি ভিন্ন নামে স্তুতি করা হয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন ঋষি গোত্রের ভিন্ন ভিন্ন আপ্রী সুক্ত ছিল। মেধাতিথি দীর্ঘ তমা প্রভৃতি ঋষিদিগের আপ্রীসুক্তে নরাশংস ও তনুনপাৎ, এ উভয় নামেরই উল্লেখ আছে। গৃৎসমদদের আপ্রীসুক্তে নরাশংসের উল্লেখ আছে, তনুনপাতের উল্লেখ নেই। অন্যঋষি গোত্রের আপ্রীসক্তে তনুনপাতের উল্লেখ আছে, নরাশংসের উল্লেখ নেই। ঋগ্বেদে সর্বসুদ্ধ দশটি আপ্রীসুক্ত আছে, যথা- ১ মন্ডলের ১৩, ১৪২, ও ১৮৮ সুক্ত। ২ মন্ডলের ৩ সুক্ত। ৩ মন্ডলের ৪ সুক্ত। ৫ মন্ডলের ৫ সুক্ত। ৭ মন্ডলের ২ সুক্ত। ৯ মন্ডলের ৫ সুক্ত। ১০ মন্ডলের ৭০ ও ১১০ সুক্ত।
২। তনু+উন=তনুন, অর্থাৎ দুর্বলাকলেবর। তনুন+প=তনুনপ, অর্থাৎ দুর্বলাকারের পালক, অর্থাৎ ঘৃত। তুননপ+অৎ=তনুনপাৎ আঘৃতভোজী অগ্নি।
৩। নরাশংস অর্থ মানবপ্রশংসিত। এ নরাশংস নামের রূপান্তর জেন্দ অবস্থা গ্রন্থে পাওয়া যায়।
৪। ঈলিত অর্থাৎ স্তুত। অগ্নির একটি নাম ইলা সে নাম সুচনার্থে ঈলিত বিশেষণ প্রয়োগ হয়েছে। সায়ণ।
৫। বহিঃ অগ্নির একটি নাম, সে নাম সূচনার্থে এ শব্দ প্রয়োগ হয়েছে।
৬। দেবীদ্বার শব্দদ্বারা অগ্নির একটি নাম সূচিত হচ্ছে। সায়ণ।
৭। নক্ত ও উষা অর্থে রাত্রি ও প্রাত:কাল, কিন্তু এখানে এই দুই শব্দ তৎকালসম্ভুত অপ্নি বোঝাচ্ছে। সায়ণ।
৮। মুলে হোতারা দৈব্যা আছে এ শব্দদ্বারা অগ্নি সূচিত হচ্ছে। সায়ণ। ৯। তিনটি দেবীর নাম, এখানে অগ্নি বোঝাচ্ছে। সায়ণ।
১০। এখানে ত্বষ্টা শব্দদ্বারা অগি বোঝাচ্ছে। সায়ণ।
১১। অর্থাৎ বনষ্পতি নামক অগ্নি। সায়ণ। (*১২) সু+আ+হেব। যজ্ঞে হব্য প্রদানের সময় স্বাহা শবদ উচ্চারণ করতে হয়, এখানে এ শব্দে অগ্নিবেোঝাচ্ছে। সায়ণ।

HYMN XIII. Agni

১৪ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে অগ্নি! এ বিশ্বদেবগণের সাথে সোমপানার্থে আমাদের পরিচর্যা ও স্তুতি গ্রহণ করতে এস, আমাদের যজ্ঞ সম্পাদন কর।
২। হে মেধাবী অগ্নি! কশ্বপুত্রেরা তোমাকে আহ্বান করছে, এবং তোমার কর্ম সমূহ প্রশংসা করছে; তুমি দেবগণের সাথে এস।
৩ ইন্দ্র ও বায়ু, বৃহস্পতি, মিত্র ও অগ্নি, পুষ্য ও ভগ এবং আদিত্য সমূহ ও মরুৎগণকে যজ্ঞভাগ দান কর (১)
৪। তোমাদের জন্য তৃপ্তিকর, হর্ষকর, বিন্দুরূপ, মধুর ও পাত্রস্থিত সোমরস সমূহ প্রস্তুত হচ্ছে।
৫। হে অগ্নি! হব্যযুক্ত এবং অলষ্কৃত কশ্বপুত্রেরা কুশ ছিন্ন করে তোমার রক্ষণ কামনায় তোমার স্তুতি করে।
৬। হে অগ্নি সস্কল্প মাত্রেই রথে সংযোজনীয়, যে ঘৃতপৃষ্ঠ বাহকগণ তোমাকে বহন করে, তা দিয়ে দেবগণকে সোমপানার্থে আন।
৭। হে অগ্নি! সে যজনীয় যজ্ঞবর্ধক দেবগণকে পত্নীযুক্ত কর। হে সুজিহব! দেবগণকে মধুর সোমরস পান করাও।
৮। যে দেবগণ যজনীয়, যে দেবগণ স্তুতিভাজন, হে অগ্নি! তাঁরা বষটকার কালে তোমার জিহ্বা দ্বারা মধুর সোমরস পান করুন।
৯। মেধাবী ও দেবগণের আহ্বানকারী অগ্নি ঊষাকালে জাগরিত সমস্ত দেবগণকে সূর্যদীপ্ত স্বর্গলোক হতে এ স্থানে নি:সন্দেহরূপে আনুন।
১০। হে অগ্নি! তুমি সমস্ত দেবগণের সাথে, ইন্দ্র ও বায়ুর সাথে ও মিত্রের তেজসমূহের সাথে সোমমধু পান কর।
১১। হে অগ্নি! তুমি মনুষ্য নিযুক্ত দেবগণের আহ্বানকারী যজ্ঞে উপবেশন কর; তুমি আমাদের যজ্ঞ সম্পাদন কর।
১২। হে দেব অগিন! অরুষী, হরিৎ ও রোহিত অশ্বী (২) দের রথে যোগ কর; তা দিয়ে দেবগণকে এ যজ্ঞে আন।

টীকাঃ
১। আদিত্যগণ অদিতির সন্তান। ঋগ্বেদে ২ মন্ডলের ২৭ সুক্তে কেবল ছ জন আদিত্য এরূপ লেখা এছ, যথা মিত্র, অর্যমা, ভগ, বরুণ, দক্ষ এবং অংশ। ৯ মন্ডলের ১১৪ সুক্তে ৭ জন আদিত্য এরূপ লেখা আছে, ১০ মন্ডলের ৭২ সুক্তে আছে যে, অদিতির আট পুত্র অতএব ঋগ্বেদ অনুসারে আদিত্যের সংখ্যা ছয় কিম্বা সাত, কিম্বা আট। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে আদিত্য আটজন এরূপ লিখিত আছে, যথা ধাতা, অর্যমা, মিত্র, বরুণ, অংশ, ভগ, ইন্দ্র, ও বিবস্বান। শতপথ ব্রাহ্মণে দ্বাদশ আদিত্যের কথা লেখা আছে, এবং সে দ্বাদশ আদিত্য দ্বাদশ মাস (অথবা দ্বাদশ মাসের সূর্য।) কতমে আদিত্যা ইতি। দ্বাদশ মাসাঃ সম্বৎসরস্য এতে আদিত্যাঃ। শতপথ ব্রাহ্মণ। ১১।৬।৩।৮। অদিতির অর্থ কি? দিত ধাতু বন্ধনে বা খন্ডনে বা ছেদনে। যা অখন্ড, অচ্ছিন্ন, অসীম, তাই অদিতি। অতএব অদিতি অর্থে অনন্ত আকাশ বা অনন্ত প্রকৃতি, সুতরাং অদিতি সকল দেবের জনয়িত্রী এবং যাস্ক তাকে আদিমা দেবমাতা বলেছেন। Adit, an ancient god or goddess, is in reality the earliest name invented to express the Infinite. Max Muller, Aditi, eternity or the eternal. This eternal and inviolable principle…is the celestial light.-Roth.
২। মুলে অরুষী হরিতঃ রোহিতঃ আছে। সায়ণ রোহিতঃ অগ্নির অশ্বের নাম করেছেন, এবং অরুষী অর্থে গতিশীল ও হরিতঃ অর্থে বহনসমর্থ করেছেন। মক্ষমুলর অরুষী অর্থে অগ্নির রক্তবর্ণ অশ্ব করেছেন এবং হরিতঃ ও রোহিত দুটি বিশেষণ করেছেন। অরুষ ও হরিৎ সম্বন্ধে ৬ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।

HYMN XIV. Viśvedevas.


১৫ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে ইন্দ্র! ঋতুর (১) সাথে সোম পান কর; তৃপ্তিকর ও ত্বদবস্থিত সোমরস তোমাতে প্রবেশ করুক।
২। হে মরুৎগণ! ঋতুর সাথে পোতু নামক ঋত্বিকের পাত্র হতে সোম পান কর, আমাদরে যজ্ঞ পবিত্র কর; তোমরা প্রকৃতই দানশীল।
৩। হে পত্নীযুক্ত নেষ্টা (২) দেবগণের সমীপে আমাদরে যজ্ঞের প্রশংসা কর; ঋতুর সাথে সোমপান কর; কেন না তুমি রত্নদাতা।
৪। হে অগ্নি! দেবগণকে এ স্থানে আন, তিনটি যজ্ঞঝস্থানে তাদের উপবেশন করাও, তাদের অলঙ্কৃত কর, তুমি ঋতুর সাথে সোম পান কর।
৫। হে ইন্দ্র! স্তুতিকারের (৩) ধনযুক্ত পাত্র হতে ঋতুদের পর তুমি সোম পান কর, যেহেতু তোমার মিত্রতা অবিচ্ছিন্ন।
৬। হে ধৃতব্রত মিত্র ও বরুণ। তোমরা ঋতুর সাথে আমাদের এই প্রবৃদ্ধ ও অদহনীয় যজ্ঞে ব্যাপ্ত হও।
৭। অধুরে এবং যজ্ঞ সমূহে ধনার্থী ঋত্বিকেরা সোমরস প্রস্তুত করবার প্রস্তুর হস্তে করে ধনপ্রদ অগ্নিদেবকে স্তুতি করে।
৮। যে সমস্ত ধনের কথা শোনা যায়, দ্রবিণোদা আমাদরে সে ধন দান করুন, সে ধন দেবগনের যজ্ঞেরজন্য আমরা গ্রহণ করব।
৯। দ্রবিণোদ্য ঋতুদের সাথে নেষ্টার পাত্র হতে সোমপান করতে ইচ্ছা করেন; হে ঋত্বিকগণ! (যজ্ঞস্থানে) গমন কর, হোম কর, পরে প্রস্থান কর।
১০। হেদ্রবিণোদা! যেহেতু ঋতুদের সাথে তোমাকে চতুর্থ বার অর্চনা করছি, অতএব তুমি নি:সন্দেহরূপে আমাদের ধন প্রদান কর।
১১। হেদ্যুতিমান অগ্নিযুক্ত বিশুদ্ধকর্মাঅশ্বিদ্বয়। মধুর সোম পান কর; তোমরাই ঋতুর সাথে যজ্ঞ নির্বাহক।
১২। হে গৃহপতি, রূপমুক্ত, ফলপ্রদ অগ্নি! তুমি ঋতুর সাথে যজ্ঞের নিবাহক; দেবাকাঙ্ক্ষীযজমানের জন্য দেবগণকে অর্চনা কর।

টীকাঃ
১। বৎসরের ঋতুগণ দেবরূপে উপাসিত হয়েছেন।
২। নেষ্ট শব্দোহত্র ত্বষ্টারং দেবামহ। সায়ণ। ত্বষ্টাসম্বন্ধে ২০ সক্তের ৬ ঋকের টীকা দেখুন।
৩। মুলে ব্রহ্মাশব্দ আছে। ১০ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।

HYMN XV. Ṛtu.

(C) https://www.ebanglalibrary.com
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।