০৬ জানুয়ারী ২০১৮

ঋগ্বেদ সংহিতা - প্রথম মণ্ডলঃবিভিন্ন ঋষিঃ সুক্তঃ ১৩১-১৪৫

১৩১ সুক্ত।।
অনুবাদঃ
১। অসুর দ্যৌ স্বয়ং ইন্দ্রের নিকট নত হয়েছে। সুবিস্তৃতা পৃথিবী বরণীয় স্তুতি দ্বারা ইন্দ্রের নিকট নত হয়েছে। অনেনর নিমিত্ত (যজমানগণ) বরণীয় হব্য দ্বারা নত হয়েছে। সমস্ত দেবগণ একমতে ইন্দ্রকে অগ্রণী করেছেন। মানুষদের সমস্ত যজ্ঞ এবং মানুষদের সমস্ত দানাদি ইন্দ্রের সুখের জন্য হোক।
২। হে ইন্দ্র! তোমার নিকট অভিমত ফললাভ করবার আশায় যজমানগণ প্রত্যেক সবনে তোমাকে হব্য প্রদান করে। তুমি সকলের প্রতি একরূপ। স্বর্গলাভার্থ তোমাকেই পৃথক করে হব্য প্রদান করে। পার হবার সময় যেরূপ নৌকা স্থাপন করে, আমরা সেনাগণের অগ্রদেশে সেরুপতোমাকে স্থাপন করব। মানুষগণ যজ্ঞদ্বারা ইন্দ্রকেই চিন্তা করে। মানুষগণ স্তুতিদ্বারা ইন্দ্রকে চিন্তা করে।
৩। হে ইন্দ্র! তোমার সেবক এবং পাপদ্বেষী যজমান দম্পতী (১) তোমার তৃপ্তির অভিলাষে অধিক পরিমাণে হব্যদান করতঃ তোমার উদ্দেশে বহুসংখ্যক গোধন লাভের জন্য যজ্ঞ বিস্তার করছে। তারা গোধন ইচ্ছা করে এবং স্বগৃ গমনে উৎসুক, তুমিই তাদের অভীষ্ট প্রদান কর। হে ইন্দ্র! তুমি অভীস্টবর্ষী, তুমি তোমার সহজন্মা এবং চিরসহচর বজ্রকে আবিস্কার করে রয়েছ।
৪। হে ইন্দ্র, মানুষেরা তোমার বীর্য জানত। তুমি যে শত্রুদের শারদীপুরি (২) সমূহ নষ্ট করেছিলে, তাদের পরাজিত করে নষ্ট করেছিলে সে কথা মানুষেরা জানত। হে বরপতি ইন্দ্র! তুমি যজ্ঞ বিঘাতী মানুষকে শাসন করেছিলে, তুমি সুবিস্তৃত পৃথিবী ও এবং জলরাশিকে জয় করেছিলে, তুমি আনন্দ সহকারে জল কেড়ে নিয়েছিলে।
৫। হে ইন্দ্র! সোম পানে হৃষ্ঠ হলে তুমি অভীষ্টবর্ষী হও, যেহেতু তুমি যজমানদের রক্ষা করে থাক, তোমর বন্ধুতাভিলাষী যজমানদের রক্ষা করে থাক। অতএব তারা তোমার বীর্য বৃদ্ধির জন্য বার বার হব্য প্রদান করছে। তুমি যুদ্ধ সুখভোগের জন্য সিংহনাদ করেছিলে। তারা তোমার নিকট নানাবিধ ভোগ্য বস্তু প্রাপ্ত হয়। অন্নবথী হয়ে তোমার নিকট প্রাপ্ত হয়।
৬। ইন্দ্র আমাদের প্রাত:কালের যজ্ঞ সেবা করবেন কি? হে ইন্দ্র! আহ্বান মন্ত্র দ্বারা প্রদত্ত পূজার্থ হব্য অবগত হও। আহ্বান মন্ত্রদ্বারা আহূত হয়ে সুখ ভোগের স্থানে উপস্থিত হও। হে বজ্রযুক্ত ইন্দ্র! ন্দিুকদের নাগের জন্য অভীষ্টবর্ষী হয়ে প্রবুদ্ধ হও। হে ইন্দ্র! আমি মেধাবী ও নুতন লোক, তুমি স্তুতিমান, আমার মনোহর স্তোত্র শোন।
৭। হে বহুগুণাম্বিত ইন্দ্র হে শুর! তুমি আমাদরে স্তুতিদ্বারা বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়েছ এবং আমাদরে প্রতি সন্তুষ্ট আছ। যে ব্যক্তি আমাদরে প্রতি শত্রুতাচরণ করে এবং যে আমাদের দুঃখ ইচ্ছা করে, বজ্রদ্বারা তাকে বিনাশ কর। হে শ্রবণোৎসুক! শ্রবণ কর। হে ইন্দ্র! পথে পরিশ্রান্ত ব্যক্তিকে যে দুর্মতিগণ পীড়া দেয় সেরূপ সমস্ত দুর্মতি (৩) আমাদের নিকট হতে দূর হোক, দূর হোক।
টীকাঃ
১। এ থেকে প্রতীয়মান হয়ে যে স্ত্রী পুরুষে একত্রে যজ্ঞ সম্পন্ন করতেন।
২। শারদীসম্বৎসরসম্বন্ধিনী সম্বৎসরপর্যান্তং প্রাকারপরিখাদিভি দৃঢ়ীক্বতা সায়ণঃ Perennial, Wilson. Les villes (celestes) de lautomne.- Langlois.
৩। সে সময় আর্য গ্রামপ্রান্তে ও ভ্রমণ পথে অনেক অনার্য দস্যু বাস করত এবং সুবিধে অনুসারে আর্য দের প্রতি অহিতাচরণ করত, তা ঋগ্বেদের অনেক স্থলেই দেখা যায়।
১৩২ সুক্ত।।
অনুবাদঃ
১। হে মঘবন ইন্দ্র! আমরা তোমার দ্বারা রক্ষিত হয়ে প্রবল সেনাযুক্ত শত্রুদের পরাভব করব। প্রহারোদাত শত্রুকে প্রহার করব। হে ইন্দ্র! পূর্ব ধনবিশিষ্ট এ যজ্ঞ নিকটবর্তী, অতএব অদ্য সবনকারী যজমানের উৎসাহ বর্ধনার্থে কথা কও। হে ইন্দ্র! তুমি যুদ্ধজয়ী, আমরা তোমার উদ্দেশে হব্য আহরণ করি। তুমি যুদ্ধজয়ী।
২। শত্রু বধের জন্য ইন্তস্ততঃ ধাবমান বীরপুরুষের স্বর্গসাধন এবং কপটাদি রহিত পথস্বরূপ সংগ্রামের অগ্রভাগে ইন্দ্র প্রাত:কালে প্রবৃদ্ধ যাজ্ঞিক দের শত্রুগণকে নাশ করেন। ইন্দ্রকে সর্বজ্ঞের ন্যায় অবনত মন্তরক স্তব করা সকলের কর্তব্য। হে ইন্দ্র। তোমার প্রদত্ত ধন একযোগে আমাদেরই হোক। তুমি ভদ্র তোমার প্রদত্ত ধন অবিচালিত হোক।
৩। হে ইন্দ্র! পূর্বের ন্যায় এখনও অতি বীপ্ত প্রসিদ্ধ হব্যরূপ অন্ন তোমারই হতে হবে। তুমি যজ্ঞের নিবাসস্থানস্বরূপ। ঋত্বিকগণ যে অশ্নদ্বারা স্থান সুশোভিত করে, সে অন্ন তোমারই হবে। তুমি (যজ্ঞের) কথা বল, তা হলে লোকে আকাশ ও পৃথিবীর মাধ্য সূর্য কিরণদ্বারা দেখতে পায়। ইন্দ্র জরাগ্বেষণে তৎপর। তিনি স্বীয় বন্ধু যজমানদের জন্য গো অন্বেষণ করেন। তিনি উক্ত ক্রমে সকল কথা জানেন।
৪। হে ইন্দ্র! তোমার কর্ম পূর্বকালের ন্যায় এখনও সকলের স্তুতির যোগ্য। তুমি অঙ্গিরাগনের জন্য মেঘ উদ্ঘাটন করেছিলে, তুমি অপহৃত গোধন উদ্ধার করে তাদের অর্পণ করেছিলে। হে ইন্দ্র! তুমি উক্ত ঋষিদের ন্যায় আমাদের জন্য যুদ্ধ কর এবং জয়লাভ কর। যারা অভিষবন করে তাদরে জন্য যজ্ঞ বিঘ্নকারীদের অবনত কর। যে যজ্ঞবিঘ্নকারীগণ রোষ প্রকাশ করে, তাদরে (অবনত কর)।
৫। যেহেতু শুর ইন্দ্র কর্মদ্বারা মানুষদের বিষয়ে যথার্থ বিচার করেন সেজন্য অন্নাভিলাষী যজমানগণ, অভিমত ধনলাভ করে শত্রুদের বিনাশ করে। অন্মাভিলাষী হয়ে তারা বিশেষরূপে যজ্ঞ করে। ইন্দ্রের উদ্দেশে প্রদত্ত অগ্ন পুত্তাদি লাভের কারণ। নিজ বলে শত্রু নিবারণার্থ লোকে ইন্দ্রের পূজা করে। যজ্ঞকারীগণ ইন্দ্রের সমীপে বাসস্থান প্রাপ্ত হয়, যজ্ঞকারীগণ যেন দেবতাদের সম্মুখেই থাকে।
৬। হে ইন্দ্র ও গর্জন্য! তোমরা দুজনে অগ্রগামী হয়ে যে শত্রু আমাদরে বিরুদ্ধে সেনা সংগ্রহ করে তাদের সকলকেই বনাশ কর। বজ্র প্রহারদ্বারা তাদের সকলকেই বিনাশ কর। এ বজ্র অতিদূরগামী শত্রুকেও বিনাশ করতে ইচ্ছা করে এবং অতি গহন স্থানেও ব্যাপ্ত হয়। হে শুর ইন্দ্র! তুমি আমাদরে সমস্ত শত্রুদের বিবিধ উপায় বিদীর্ণ কর। শত্রু বিদারক বজ্র বিবিধ উপায়ে বিদীর্ণ করে।
১৩৩। সুক্ত।।
অনুবাদঃ
১। আমি যজ্ঞদ্বারা আকাশ ও পৃথিবী উভয়কে পবিত্র করি। ইন্দ্রশুন্যা বিদ্রোহিণী পৃথিবীকে (পৃথিবীর যে অংশে ইন্দ্রের পুজা না হয়) সন্দগ্ধ করি। শত্রুরা যেখানেই একত্রিত হয়েছিল সেখানেই হত হয়েছে। সম্পূর্ণ রূপে বিনষ্ট হয়ে তারা শ্মশানের চারদিকে পড়ে আছে।
২। হে শত্রু ভক্ষক ইন্দ্র! তুমি হিংসাবতী সেনার মন্তব একত্র করে তোমার বিস্তৃত পথদ্বারা ছেদন কর। তোমার পদ মহা বিস্তীর্ণ।
৩। হে মঘবন! এ হিংসাবতী সেনার বল চুর্ণু কর এবং কুৎসিত শ্মশানে অথবা মহা শ্মশানে নিক্ষেপ কর।
৪। হে ইন্দ্র! তুমি এরূপ ত্রিগুণিত পশ্চাশৎ সংখ্যক সেনা নাশ করেছ। লোকে তোমার এ কার্যকে অত্যন্ত ভাল মনে করে। কিন্তু তোমার এ কার্য সামান্য।
৫। হে ইন্দ্র! তুমি ঈষৎ রক্তবর্ণ অতি ভয়ঙ্কর শব্দকারী পিশাচকে বিনাশ কর এবং সমস্ত রাক্ষসগণকে নিঃশেষ কর।
৬। হে ইন্দ্র! তুমি প্রকান্ড মেঘকে নিষ্মমুখ করে বিদীর্ণ কর। আমাদের কথা শোন। হে মেঘবিশিষ্ট ইন্দ্র! পৃথিবী যেরূপ ভয়ে শোক করছে স্বর্গ ও সেরূপ শোক করছে। হে মেঘবিশিষ্ট ইন্দ্র! তাদের ভয় ঘণের ভয়ের ন্যায় (১)। হে ইন্দ্র! তুমি নিজবলে মহা বলবান এজন্য তুমি অতীব ক্রুর বধোপায় অবলম্বন করছ; তুমি যজমানদের বিনাশ কর না, তুমি শুর প্রাণিগণ তোমাকে আক্রমণ করতে পারে না। তুমি একবিংশীত অনুচরযুক্ত।
৭। হে ইন্দ্র! অভিষবকারী যজমান গৃহলাভ করে, সোমযাগকারী চারদিগের শত্রুদের বিনাশ করে, দেবতাদের শত্রুগণকেও বিনাশ করে। অন্নবান ও শত্রুর আক্রমণশূন্য অভিষবকারী অপরিমিত (ধন) লাভ করে। ইন্দ্র সোমযাগকারী যজমানকে চারদিকে উৎপন্ন ও অতি সমৃদ্ধ ধন প্রদান করেন (২)।
টীকাঃ
১। সায়ণ বলেন ঘৃণ দীপ্ত অগ্নির তির্তি বিশেষ ত্বষ্টা, পূর্বকালে জগৎ মহান্ধকারে আবৃত হলে ত্বষ্টৃরূপে পৃথিবী ও আকাশের অন্ধকার বিনাশ করেছিলেন।
২। ১২৯ হইতে ১৩৩ পাচটি সুক্তে আর্যদের সাথে ভারতবর্ষের আদিমবাসী অনার্য বর্বরদের যুদ্ধ ও বৈরতার অনেক উল্লেখ দেখা যায়। অনার্যদের কথার সাথে পিশাচ ও রাক্ষসদের কথা মিশ্রিত আছে।
১৩৪ সুক্ত।
অনুবাদঃ
১। হে বায়ু! শীঘ্রগামী বলবান অশ্বগণ তোমাকে অন্নের উদ্দেশে ও দেবতাদরে মধ্যে প্রথমেই সোমপানার্থ এ যজ্ঞে আনুক। আমাদের প্রিয় সত্য ও উন্নতি স্তুতি তোমার গুণ বিশেষরূপে ব্যাখ্যা করে, তা তোমার অভিমত হোক। হে বায়ু! যজ্ঞের হব্য স্বীকারার্থ এবং আমাদের অভীষ্টদানার্থ তুমি নিযুৎযোজিত (১) রথে এস।
২। হে বায়ু! মত্ততাজনক, হর্যোৎপাদক, সম্যক প্রস্তুত, উজ্জ্বল এবং মন্ত্রদ্বারা হুয়মান সোমবিন্দু সকল তোমার অভিমুখে গমন করে হর্ষ উৎপাদন করুক। যেহেতু স্বকর্মকুশল প্রীতিযুক্ত, তোমার নিরন্তর সহগামী নিযুৎগণ তোমায় উৎসাহ দেখে হবাস্বীকারের জন্য তোমাকে যজ্ঞভূমিতে আনয়নার্থে মিলিত হচ্ছে। বৃদ্ধিমান যজমানগণ তোমার নিকটে এসে মনোগতভাব ব্যক্ত করছে।
৩। বায়ু লোহিতবর্ণ অশ্ব ভারবহনার্থে যোজনা করেন। বায়ু অরৃণ অশ্ব যোজনা করেন। বায়ু অজিরবর্ণ অশ্ব (২) যোজনা করেন। কারণ তারা ভারবহনে অত্যন্ত সমর্থ। জার ঈষৎ নিদ্রাযুক্ত রমণীকে যেরূপ প্রবোধিত করে সেরূপ তুমি বহুপ্রজ্ঞ যজমানকে প্রবোধিত কর। আকাশ ও পৃথিবীকে প্রকাশ কর। উষাকে স্থাপন কর। হব্যস্বীকারার্থ ঊষাকে স্থাপন কর।
৪। দীপ্তিযুক্ত ঊষাগণ দুরদেশে তোমারই জন্যে গৃহাচ্ছাদক রশ্মিসমূহে কল্যাণকর বস্ত্র বিস্তার করছেন, নুতন রশ্মিতে বিচিত্র বস্ত্র বিস্তার করছেন। অমৃত নিসান্দিনী গাভী সবল তোমারই জন্য সমস্ত ধন দান করে। তুমি বৃষ্টি ও নদীদের উৎপাদনার্থ অন্তরীক্ষ হতে মরুৎগণকে উৎপাদন করেছ।
৫। দীপ্ত, শুদ্ধ, উগ্র, প্রবাহবিশিষ্ট সোম তোমার আনন্দের নিমিত্ত আহ্বানীয় অগ্নির নিকট যাচ্ছে এবং জলভারবাহী মেঘকে আকাঙ্ক্ষা করছে। হে বায়ু! যজমান অত্যন্ত ভীত ও ক্ষীণকায় হয়ে তস্করেরা যাতে অন্যত্র যায় সেজন্য তোমার পূজা করছে। আমাদের ধর্মহেতু আমাদরে সমস্ত ভূবন হতে রক্ষা কর আমাদের ধর্ম হেতু অসুর্য (৩) হতে রক্ষা কর।
৬। হে বায়ু! তোমার পূবে কেউ পান করে না, তুমিই প্রথমেই আমাদের এ সোম পান করবার যোগ্য; অভিযুত সোমপান করবার যোগ্য। তুমিই হোমবান পাপত্যাগী লোকের (হব্য স্বীকার কর)! সমস্ত ধেনুগণ তোমার জন্য দুগ্ধ প্রধান করে এবং তোমার জন্য ঘৃত প্রদান করে।
টীকাঃ
১। বায়ুর অশ্বের নাম নিযুৎ।
২। অজিরা অজিরৌ গমনশীলৌ যুক্তৌ যম্বা এতদুভয়ত্র সম্বধ্যত। সায়ণ;
৩। অসুর্যাৎ অর্থ অসুরসম্বন্ধিনো ভয়াৎ। সায়ণ। কিন্তু অসুর্য সম্বন্ধে ১৬৭ সুক্তের ৫ ঋকের টীকা ও ১৬৮ সুক্তের ৭ ঋক দেখুন।
১৩৫ সুক্ত।।
অনুবাদঃ
১। হে নযুৎবান বায়! তুমি সহস্র নিযুতে আরোহণ করে তোমার জন্য প্রস্তুত হব্যভক্ষনার্থ আমাদের আস্তীর্ণ কুশোপরি অগমন কর। অসংখ্য নিুতে আরোহণ করে আগমন কর। তুমি নিযুৎবান তুমিই পূর্বে পান কর যে বলে অন্য দেবগণ সংযত হয়ে আছে। অভিষুত মধুর সোম তোমার আনন্দের জন্য অবস্থিতি করছে। যজ্ঞসিদ্ধির জন্য অবস্থিতি করছে।
২। হে বায়ু! তোমার জন্য প্রস্তরে পরিশোধিত ও স্পৃহনীয় তেজোবিশিষ্ট সোম, স্বীয় পাত্রে গমন করছে এবং শুক্রতেজোবিশিষ্ট হয়ে তোমার নিকট গমন করছে। এ সুন্দর সোম মনুষ্যগণ দেবতাদের মধ্যে তোমার জন্য প্রদান করে। হে বায়ু! তুমি আমাদের জন্য নিযুৎকে যোজনা কর এবং প্রস্থান কর, আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করে প্রীত হয়ে প্রস্থান কর।
৩। হে বায়ু! তুমি শত ও সহস্র সংখ্যক নিযুতে আরোহণ করে অভিমত সিদ্ধির জন্য এবং হবি ভক্ষণের জন্য আমার যজ্ঞে উপস্থিত হও। এ তোমার প্রাপ্যভাগ, এ সূর্যের তেজে তেজোবান। ঋত্বিক হস্তস্থিত সোম প্রস্তুত হয়েছে। হে বায়ু! পবিত্র সোম প্রস্তুত হয়েছে।
৪। আমাদের রক্ষার্থ আমাদের সুগৃহীত অন্নভক্ষণের নিমিত্ত এবং আমাদের হব্য সেবার্থ, হে বায়ু নিযুৎ যোজিত রথ তোমাদের দুজনকে অর্থাৎ ইন্দ্র ও বায়ুকে আনুক। তোমরা দুজনে মধুর সোম পান কর। অগ্রে পান করাই তোমাদের উপযুক্ত। হে বায়ু! তুমি মনোহর ধনের সাথে এস। ইন্দ্রও ধনের সাথে আসুন।
৫। হে ইন্দ্র! হে বায়ু! আমাদের স্তোত্রাদি তোমাকে যজ্ঞস্থলে আসিবার জন্য প্রবর্তিত করছে। আশুগামী অশ্বকে যেরূপে মার্জনা করে সেরূপ কলস হতে আনীত সোমকে ঋত্কিগণ মার্জনা করছে। অধর্যুদের সোমপান কর, আমাদের রক্ষার্থ যজ্ঞে এস। আমাদের প্রতি প্রসন্ন হয়ে আনন্দের জন্য প্রস্তর খন্ডে অভিষুত সোমপান কর, কারণ তোমরা উভয়েই অন্নদাতা।
৬। আমাদের এ যজ্ঞ কার্যে অভিযুত অধ্যর্যুগণের গৃহীত সোম নিশ্চয়ই তোমাদের দুজনের। এদীপ্ত সোম নিশ্চয়ই তোমাদের এ প্রভূত সোম নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য উর্ণাময় পবিত্রে পরিস্কৃত হয়েছে। তোমাদের সোম অছিন্ন লোম অতিক্রম করে প্রচুর পরিমাণে গমন করছে
৭। হে বায়ু। তুমি নিদ্রালু যজমানদের অতিক্রম করে যে গৃহ প্রস্তর শব্দ হচ্ছে সেখানে যাও। ইন্দ্রও সে গৃহে আসুন। যে গৃহে প্রিয় সত্য স্তুতি উচ্চারিত হচ্ছে, যে গৃহে ঘৃত গমন করছে পুষ্টাঙ্গ নিযুৎগণের সাথে সে অধুরস্থানে এস, ইন্দ্র। সেই স্থানে এস।
৮। হে বায়ু! তোমরা এ যজ্ঞে মধু সদৃশ আহুতি ধারণ কর, যে আহুতির জন্য জেত যজমানেরা পর্বতাদি প্রদেশ গমন করেন। আমাদরে জেতৃগণ যজ্ঞ নির্বাহে সমর্থ হোক। হে ইন্দ্র! হে বায়ু! ধেনুগণ যুগপৎ দুগ্ধ দান করছে এবং যব নিমিত হব্য প্রস্তুত হচ্ছে। এ ধেনুগণ ক্ষীণ হবে না এবং নষ্ট হবে না।
৯। হে বায়ু। এই যে তোমার বলশালী, অল্পবয়স্ক, বৃষসদৃশ অতিশয় হৃষ্টপুষ্ট অশ্বগণ আছে, এরা স্বর্গ ও পৃথিবীর মধ্যে তোমাকে বহন করছে, এরা অন্তরীক্ষে বিলম্ব করে না এরা অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতি, ভৎসনায় এদের গতি রোধ হয় না। সূর্যকিরণের ন্যায় এদের গতি রোধ করা দুৎসাধ্য, হস্তদ্বারা এদের গতি রোধ করা দুঃসাধ্য।

১৩৬ সুক্ত।।
অনুবাদঃ
১। হে ঋত্বিকগণ! চিরন্তন মিত্রাবরুণের উদ্দেশে প্রশংসনীয় ও প্রবৃদ্ধ পরিচর্যা কর এবং হব্য প্রদানে কৃতনিশ্চয় হও। মিত্রাবরুণ যজমানদের সুখদানের কারণ এবং সুস্বাদু হব্য ভক্ষণ করেন। এরা সম্রাট, এদের জন্য ঘৃত গৃহীত হয়। প্রতি যজ্ঞেই এদের স্তব হয়। এদের শক্তি কেউ অতিক্রম করতে পারে না এবং এদের দেবত্বে কেউ সন্দেহ করে না।
২। বরীয়সী ঊষা বিস্থীর্ণ যাত্রাভিমুখে গমন করেছেন, দৃষ্ট হল। দ্রুতগতি আদিত্যের পথ আলোক ব্যাপ্ত হল। ভগের কিরণে মনুষ্যের চক্ষুঃ উন্নীলিত হল। মিত্র অর্যমা এবং বরুণের উজ্জ্বল গৃহ আলোকে পরিপূর্ণ হল, অতএব তোমরা দুজনে স্তুতিযোগ্য প্রভূত অন্ন ধারণ কর, প্রশংসনীয় এবং প্রভূত অন্নধারণ কর।
৩। যজমান জ্যোতিস্মতী সম্পূর্ণলক্ষণা স্বর্গপ্রদায়িনী বেদি প্রস্তুত করেছেন। তোমরা সর্বদা জাগরুক থেকে প্রতিদিন সেখানে উপস্থিত হয়ে তেজঃ ও বললাভ কর। তোমরা অদিতির পুত্র এবং সর্ব প্রকার দানের কর্তা। মিত্র বরুণ লোকদের স্ব স্ব ব্যাপারে নিয়োজিত করেন, অর্যমাও স্ব স্ব ব্যাপারে লোকদের নিয়োজিত করেন।
৪। এ সোম মিত্র ও বরুণের প্রীতিপ্রদ হোক। মিত্রাবরুণ নিন্মমুখ হয়ে এ পান করুন। দীপ্য মান সোম, দেবগণের সেবার উপযুক্ত। সমস্ত দেবগণ অত্যন্ত প্রীতিযুক্ত হয়ে এ পান করুন। হে দীপ্তিযুক্ত মিত্রাবরুণ। আমরা যেরূপ প্রার্থনা করি, তোমরা সেরূপ কর। তোমরা সত্যবাদী যা প্রার্থনা করি তা কর।
৫। যে ব্যক্তি মিত্র ও বরুনের পরিচর্যা করে তাকে তোমরা পাপ হতে রক্ষা কর। দ্বেষ রহিত হব্যদাতা মর্তাকে সমস্ত পাপ হতে রক্ষা কর। ঋজুস্বভাব সে ব্যক্তিকে তার ব্রতের উদ্দেশে অর্যমা রক্ষা করেন। সে যজমান উকথদ্বারা মিত্র ও বরুণের ব্রত গ্রহণ করেন এবং স্তোমের দ্বারা তা রক্ষা করেন।
৬। আমি দ্যুতিমান মহান সূর্যকে নমস্কার করি পৃথিবী ও আকাশকে নমস্কার করি, মিত্র ও বরুণকে এবং রুদ্রকে নমস্কার করি। এরা সকলেই অভিমত ফলদায়ী এবং সুখদায়ী। ইন্দ্র, অগ্নি, দীপ্তিমান অর্ধমা ও ভগকে স্তব কর। বহুকাল জীবন ধারণ করে আমরা প্রজা কর্তৃক পরিবেষ্টিত হব এবং সোম কর্তৃক রক্ষিত হব।
৭। আমরা ইন্দ্রকে প্রাপ্ত হয়েছি, মরুৎগণ আমাদের অনুগ্রহ করেন), দেবতারা যেন আমাদরে রক্ষা করেন। ইন্দ্র, অগ্নি, মিত্র, ও বরুণ আমাদের সুখপ্রদ হোন, আমরা অন্নবান হয়ে সে সুখভোগ করি।

১৩৭ সুক্ত।।
অনুবাদঃ
১। বহুজন পূজিত পুযার শক্তির মহিমা সর্বত্র প্রশংসিত হয়। কেউ তার হিংসা করে না। পূষার স্তোত্রের বিরাম নেই। আমি সুখলাভের ইচ্ছায় পূষার পূজা করি, তিনি শীঘ্রই আশ্রয় দান করেন ও সুখ উৎপাদন করেন। পূযা যজ্ঞবানু তিনি সমস্ত লোকের মনের সাথে মিশ্রিত হন।
২। শীঘ্রগমনে অশ্বের যেরূপ প্রশংসা হয়, সেরূপ হে পুষা। স্তোম মন্ত্রদ্বারা তোমার প্রশংসা করি। তুমি যুদ্ধে যাও এ উদ্দেশে তোমার প্রশংসা করি। তুমি উষ্ট্রের ন্যায় আমাদরে যুদ্ধে পার কর। তুমি সুখোৎপাদক দেবতা, আমি মর্ত্য, সখালাভের জন্য তোমাকে আহ্বান করি। আমার আহ্বানসমূহকে দ্যুতিমান কর এবং সংগ্রামে জয়শীল কর।
৩। হে পূষা! তোমার সখ্যলাভ করে বিশেষ ক্রতুদ্বারা তোমায় প্রীতি উৎপাদন করে স্তোত্রশীল যজমানগণ তোমাকর্তৃক রক্ষিত হয়ে নানা ভোগ উপভোগ করে। নুতন আশ্রয় লাভ করে তোমার নিকট অসংখ্য ধন প্রার্থনা করি। হে বহুজন স্তুত্য পুষা অনাদর না করে আমাদের অভিগম্য হও, যুদ্ধকালে আমাদের অগ্রগামী হও।
৪। হে অজাশ্ব (১) পুষা! আমাদের লাভ বিষয়ে অনাদর না কের, দানশীল হয়ে সমীপন্থ হও। হে অজাশ্ব! আমরা অশ্মাভিলাষী, আমাদের সমীপস্থ হও। হে শত্রুনাশক পুষা। তোমারই চার দিকে আমরা স্তোম পাঠ করে অবস্থিতি করি। হে বৃষ্টিপ্রদ পূষা। তোমার কখনও অপমান করি না এবং তোমার সখ্যের কখনও অপলাপ করি না।
টীকাঃ
১। অর্থাৎ অজই যার বাহন। অজাশ্বেতি পুষণমাহ। যাস্ক। পূষা সম্বন্ধে ৪২ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন। সূর্যকে পশুপালকগণ যেরূপ ভাবে দর্শন করত ও পুজা করত সে সূর্যই পূষা।

১৩৯ সুক্ত।।
অনুবাদঃ
১। আমি ভক্তিপূর্বক অগ্নিকে সম্মুখে স্থাপন করেছি, তার স্বগীর্য় শক্তি বরণ করি। ইন্দ্র ও বায়ুকে বরণ করি। যেহেতু পৃথিবীর দীপ্তিমান নাভির, (যজ্ঞস্থানের), উদ্দেশে অর্থবতী নুতন স্তুতি রচিত হয়েছে অতএব অগ্নি তা শুনুন। অনন্তর আমাদের ক্রিয়াকম, যেরূপ অন্যান্য দেবতাগণের নিকট যায় সেরূপ তোমাদের অর্থাৎ ইন্দ্র ও বায়ুর নিকট যাক।
২। হে কর্মদক্ষ মিত্র। হে বরুণ। তোমরা নিজ শক্তি দ্বারা সূর্যের নিকট হতে যে নশ্বর জল লাভ কর, তা আমাদের প্রচুর পরিমাণে দাও; অতএব আমরা ক্রিয়া, কর্ম জ্ঞান, সোমরসে (আসক্ত) ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে যজ্ঞশালায় তোমাদের কিরণময় রূপ দর্শন করি।
৩। হে অশ্বিদ্বয়। স্তুতি দ্বারা তোমাদের আপনার অভিমুখে আসছে। হে সবর্চধনসম্পন্ন অশ্বিদ্বয় তারা সর্বপ্রকার ধনবান্যাদি ও অন্ন তোমাদের প্রসাদে প্রাপ্ত হচ্ছে। হে দস্র। তোমার হিরময় রথের নেমি সকল মধূক্ষরণ করে। সে রথে হবে গ্রহণ কর।
৪। হে দস্রদ্বয়! তোমাদের (মনোগত ভাব) সকলে জানে তোমরা স্বর্গে যেতে চাও। তোমাদের সারথিরা স্বর্গপথে রথযোজনা করে। অশ্বগণ রথ নষ্ট করে না। হে দস্রদ্বয়! আমরা তোমাদের সারথিরা স্বর্গ পথে রথযোজনা করে। অশ্বগণ রথ নষ্ট করে না। হে দস্রদ্বয়! আমরা তোমাদের বন্ধুর যুক্ত হিরময় রথে স্থাপন করেছি। তোমরা সুখগম্য পথে স্বর্গে যাচ্ছ। তোমরা শত্রুদের পবাভুত কর এবং নবিশেষরূপে বুষ্টির ব্যবস্থা কর।
৫। আমাদের ক্রিয়াকর্মই তোমাদের ধন। আমাদের কির্মে রক্রয়ী জন্য দিনরাত অভীষ্ট প্রদান কর। তোমাদের ধন যেন বন্ধ হয় না, আমাদের দানো যেন বন্ধ না হয়।
৬। হে অভীষ্টবর্ষী ইন্দ্র! এ সোম অভীষ্টবর্ষীর পানার্থ অভিষুত হয়েছে, প্রস্তরখন্ডদ্বারা অভিষুত হয়েছে। সোম সকল পর্বতে উৎপন্ন হয়েছে, এ তোমার জন্য অভিষুত হয়েছে। বহুবিধ বিচিত্র লাভের জন্য যজ্ঞস্থানে প্রদ্ত্ত সোম তোমার তৃপ্তি সাধন করুক। হে স্তুতিযোগ্য! আমরা তোমার স্তুতি করি, তুমি এস, আমাদের প্রতি তুষ্ট হয়ে এস।
৭। হে অগ্নি! তোমাকে স্তুতি করি, তুমি আমাদের স্তুতি শ্রবণ কর। দীপ্যমান যজ্ঞার্হ দেবগণের নিকট যজা মানের কথা বল, যেহেতু দেবগণ অঙ্গিরাদের প্রসিব্ধ ধেনু দিয়েছিলেন। অর্যম দেবতাগণের সাথে সে ধেনু সর্বোৎপাদক অগ্নির জন্য দোহন করেন। অর্যমা জানেন সে ধেনু আমাদের সাথে সমবেত।
৮। হে মরুৎগণ! তোমাদের নিত্য প্রসিদ্ধ বল যেন আমাদের রপরাভূত না করে। আমাদের ধন যেন ক্ষীণ না হয়, আমাদের নগর ক্ষীণ না হয়। তোমাদের নতুন, বিচিত্র মনুষ্য দুলর্ভ, শব্দায়মান, যা কিছু আছে তা যুগে যুগে আমাদের হোক। তোমরা যে দুর্লভ ধন ধারণ কর, তা আমাদের হোক। শত্রুরা যে ধন নষ্ট করতে পারে না তা আমাদের হোক।
৮। প্রাচীন দধীচি, অঙ্গিরা,প্রিয়মেধ কন্ব, অত্রি এবং মনু আমারজন্ম কথা জানেন। এ পূর্বকালীন ঋষিগণ ও মনু আমার পূর্ব পুরুষগণকে জানেন। কারণ মহর্ষি গণের (১ মধ্যে তারা দীর্ঘায়ুঃ এবং আমার জীবনের সাথে তাঁদের সম্বন্ধ আছে। আমি তাঁদের মহৎপদ হেতু তাঁদের স্তৃতি করি ও নমস্কার করি। আমি ইন্দ্র ও অপিনকে স্তুতি করি ও নমস্কার করি।
১০। হোতা যজ্ঞ করুন, হব্য লাভেচ্ছু দেবগণ বরণীয়সোম গ্রহণ করুন। বহুপতি নিজে ইচ্ছা করে প্রভুত, বরণীয়সোমদ্বারা যাগ করছেন। আমরা দুরদেশে প্রস্তর খন্ডের ধ্বনি শ্রবণ করলাম। সুক্রুতু যজমান নিজে জল ধারণ করেন এবং বহু বাসযোগ্য গৃহ ধারণ করেন।
১১। যে দেবগণ, স্বর্গে একাদশ পৃথিবীর উপরেও একাদশ, যখন অন্তরীক্ষে বাস করেন তখও একাদশ (৩), তাঁরা নিজ মহিমায় যজ্ঞ সেবা করেন।
টীকাঃ
১। এ ঋষিগণ বেদ রচনার সময় ও ‘পূর্ব কালীন ঋষি’ ও ‘দেব’ বলে বর্ণিত হয়েছেন। ভারতবর্ষে পূজা পদ্ধতি তাঁরাই অনেকটা প্রচার করেছিলেন তা অন্য স্থানে বলা হয়েছে। এই ৩৩ দেব সম্বন্ধে ৩৪ সুক্তের ১১ ঋকের টীকা দেখুন।

১৪০সুক্ত।।
অনুবাদঃ
১। হে অধ্বর্য্য! বেদীতে আসীন, নিজ প্রিয়ধামে প্রীতিহুক্তে এবং দ্যোতমান অপ্নির উদ্দেশে তুমি অন্নবৎ স্থান প্রস্তুত কর। সে পবিত্র জ্যোতিবিশিষ্ঠ দীপ্তবর্ণ, তমোবিনাশক স্থানের উপর বস্ত্রের ন্যায় মনোহর কুশ বিস্তার কর।
২। দ্বিজন্মা (১) অপ্নি তিন প্রকার অশ্ন সন্মুখে এনে ভক্ষণ করছেন। অপ্নির ভক্ষিত বস্তু অর্থাৎ ধনবান্যাদি, সম্বৎসরের মধ্যে আবার বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। অভীষ্টবর্ষী অপ্নি একই রপে ধারণ করে মুখো জিহবান সাহায্যে প্রবৃদ্ধ হন এবং অন্যরুপ ধারণ করে সকলকে নিবারণ করে বনবৃক্ষ সকলকে দপ্ধ করেন।
৩। অপ্নির মাতৃদ্বয় (কাষ্ঠদ্বয়) চলছে। এরা কৃষ্ণবর্গ হয়ে, দুজনেই এক কার্যক রছে এবং শিণু অপ্নিকে প্রাপ্ত হচ্ছ এ শিশুর শিখারুপ জিহ্বান পূর্বাভিমুখী। ইনি তমো নিবারণ করেন শীঘ্র উৎপন্ন হন, অল্পে অল্পে মিলিত হন। অতি যত্নে একে রক্ষঅ করতে হয়্ ইনি পালকে র সমৃদ্ধি সাধন করেন।
৪। অপ্নির শিখাগণ লঘুপতি কৃষ্ণপন্থা, শীঘ্রকারী অস্থির চিত্ত, গমনশীল স্পন্দমান, বায়ুচালিত ব্যাপ্তিবিশিষ্ট ও মোক্ষপ্রদ এবং মনস্বী যজমানের উপযোগী।
৫। যে সময়ে অপ্নি গর্জন করে, শ্বাস প্রক্ষেপ করে, বারবার বিস্তীর্ণ পৃথিবীকে স্পর্শ করে শব্দ করে, সেই সময়ে অগ্নির স্ফুলিঙ্গ সকল যুগপৎ চারদিকে গমন করে; অন্ধকার ধ্বংস করে চারদিকে গমন করে ও কৃষ্ণবর্ণ পথে উজ্জ্বল রূপ প্রকাশ করে।
৬। অগ্নি, পিঙ্গলবর্ণ ওষধিদের ভূষিত করে তন্মধ্যে অবতরণ করছেন। বৃষভ যেরূপ পত্নীদের দিকে ধাবন করে, সেরূপ শব্দ করতঃ অগ্নি ধাবিত হচ্ছেন; ক্রমে অধিকতর তেজস্বী হয়ে স্বশরীর দীপ্ত করছেন; দুধর্ষ রূপ ধারণ করে ভয়ঙ্কর পশুর ন্যায় শৃঙ্গ চালন করছেন।
৭। অগ্নি কখন প্রচ্ছন কখন দিন্তীর্ণ হয়ে ওষধিসমূহে ব্যাপ্ত হন; যজমানের অভিপ্রায় জেনেই যেন অভিপ্রায়জ্ঞ শিখাকে আশ্রয় করেন। শিখাগণ পুনরায় বর্ধিত হয়ে যাগযোগ্য অগ্নিকে প্রাপ্ত হন এবং সকলে মিলিত হয়ে পিতৃস্থানীয়া স্বর্গ ও পৃথিবীর অপূর্ব রূপ বিস্তার করেন।
৮। কেশস্থানীয় অগ্রেস্থিত শিখাগণ অগ্নিকে আলিঙ্গন করছে; অগ্নি আসছেন দেখে মৃতপ্রায় হলেও উর্ধ্বমুখ হয়ে প্রত্যুদুগমন করছে। অগ্নি তাদের জরা মোচন করে উৎকৃষ্ট সামর্থ ও অখন্ড জীবন প্রদান করে গর্জন করতে করতে আসছেন।
৯। অগ্নি মাতা পৃথিবীর উপরিভাগের আচ্ছাদন তৃণগুষ্মালি লেহন করতে করতে প্রভূত শব্দকারী প্রাণীগণের সাথে বেগে গমন করছেন: পাদবিশিষ্ট পশুদের আহার প্রদান করছেন; সর্বদা লেহন করছেন এবং ক্রমশঃ যে পথে যাচ্ছেন তা কৃষ্ণবর্ণ করে যাচ্ছেন।
১০। হে অগ্নি! তুমি অভীষ্টবর্ষী ও দানশীল হয়ে শ্বাস প্রক্ষেপ করে আমাদের ধনাঢ্য গৃহে দীপ্ত হও; শিশুমতি ত্যাগ করে যুদ্ধকালে বর্মের ন্যায় বারবার (শত্রুদের) দূর করে দিয়ে জ্বলে ওঠ।
১১। হে অগ্নি! এ যে কঠিন কাষ্ঠোপরি যত্নপূর্বক হব্য স্থাপিত হয়েছে এ তোমার মনোমত প্রিয়বস্তু হতেও প্রিয়তর হোক। তোমার শরীরের শিখা হতে যে নির্মল ও দীপ্ত তেজ নির্গত হচ্ছে তার সাথে তুমি আমাদরে রত্ন প্রদান কর।
১২। হে অগ্নি! আমাদের রথ ও গৃহের জন্য দৃঢ় দাড় ও পাদ বিশিষ্ট নৌকা প্রদান কর। এ আমাদের বীরগণকে, ধনবাহীদের ও অন্য লোকদের পার করবে এবং আমাদের সুখে রাখবে।
১৩। হে অগ্নি! আমাদের উকথ মন্ত্রের উৎসাহ বর্ধন কর। দ্যাবাপৃথিবী ও স্বয়ং গামিনী নদী সকল আমাদের গব্য ও শস্য প্রদান করে উৎসাহ বর্ধন করুক; অরুণবর্ণ ঊষাগণ, সর্বকাল লভ্য বরণীয় অন্নাদি প্রদান করুন।
টীকাঃ
১। দুখানি কাষ্ঠ ঘর্ষণ, করে যে অগ্নি উৎপাদন করা যায়, সেই অগ্নিকে দ্বিজন্মা বলে।
১৪১ সুক্ত।।
অনুবাদঃ
১। দ্যুতিমান অগ্নির দর্শনীয় তেজঃ সত্যই এরূপে শরীরের জন্য লোকে ধারণ করে, এ শরীর বলে উৎপন্ন হয়েছে (১)। আমার জ্ঞান অগ্নির তেজকে আশ্রয় করে তা দিয়ে স্বীয় অভীষ্ট সিদ্ধি করতে পারে অতএব সে অগ্নির উদ্দেশে স্তুতি ও হব্য অর্পণ করা যায়।
২। প্রথমতঃ অন্নসাধক, বপৃষ্মান ও নিত্য অগ্নি রয়েছেন, দ্বিতীয়তঃ শুভকরী সপ্তমাতৃকাতে রয়েছেন, তৃতীয়তঃ এ অভীষ্টবর্ষীর দোহনার্থ রয়েছেন। পরস্পর সংসক্ত দশদিক দশদিকেই পূজ্য অগ্নিকে উৎপন্ন করছেন (২)।
৩। যেহেতু মহাযজ্ঞের মুল হতে যজ্ঞের রূপসিদ্ধি করণে সমর্থ ঋত্বিকগণ বলপ্রয়োগ দ্বারা অগ্নিকে উৎপন্ন করছেন এবং অনাদিকাল হতে সুন্দররূপে প্রক্ষেপ করবার নিমিত্ত গৃহাস্থিত অগিনকে মাতরিশ্বা চালন করছেন।
৪। যেহেতু অন্নের উৎকৃষ্টতা লাভের জন্য অগ্নি প্রণীত হয়, যেহেতু আহারের জন্য অভিলষিত লতাসকল এর দন্তে আরোহণ করে, যেহেতু অধুর্য, এবং যজমান উভয়েই অগ্নির যাতে উৎপত্তি হয় তার চেষ্টা করে, অতএব পবিত্র অগ্নি যজমানের প্রতি অনুগ্রহ পুরঃসর ষবিষ্ট হলেন।
৫। যে মাতৃস্থানীয় দিক সমূহ মধ্যে অগ্নি অহিংসিত হয়ে বর্ধিত হচ্ছেন, এক্ষণে প্রদীপ্ত হয়ে তারাই মধ্যে প্রবেশ করছেন। স্থাপনকালে প্রথমতঃ যে সকল ওষধি প্রক্ষিপ্ত হয়েছিল অগ্নি তার উপরে আরোহণ করেছেন, এক্ষণে নুতন ও নিকৃষ্ট ওষধির প্রতি ধাবিত হচ্ছেন।
৬। হবিঃসম্পর্ককারী যজমান দ্যুলোকবাসীদের প্রীতির নিমিত্ত হোম নিম্পাদক অগ্নিকে বরণ করছেন এবং রাজার ন্যায় তার প্রসাধন করেছেন। যেহেতু অগ্নি বহুকালের স্তুত্য ও বিশ্বাত্মক, তিনি ক্রতু সম্পন্ন ও বলযুক্ত দেবগণ এবং স্তুতিযোগ্য মত্য যজমান উভয়কেই অন্নের জন্য কামনা করেন।
৭। বাচাল বিদুষকাদি যেরূপ অবাধে তোষামোদ করতে থাকে সেরূপ বায়ু কর্তৃক তাড়িত হয়ে যজনীয় অগ্নি চারদিকে ব্যপ্ত হন। অগ্নি দাহকারী, তার জন্ম পবিত্র, তার পথ কৃষ্ণবর্ণ এবং তার পথের কিছুই স্থিরতা নাই। অতএব তার মার্গ অন্তরীক্ষ অবস্থিত আছে।
৮। অগ্নি রুজুবন্ধ রথের ন্যায় স্বীয় চঞ্চল অঙ্গের সাহায্যে স্বর্গে গমন করেন। তার পথ কৃষ্ণবর্ণ হয়, তিনি কাষ্ঠ দহন করেন। বীরের ন্যায় অগ্নির প্রদীপ্ত তেজের সম্মুখ হতে পক্ষীগণ পলায়ন করে।
৯। হে অগ্নি! তোমার সাহায্যে বরুণ স্বীয় ব্রত ধারণ করেছেন, মিত্র অন্ধকার নাশ করেন এবং অর্যমা দানশীল হন। রথের নেমি যেরূপ অরসমূহকে ব্যপ্ত করে থাকে, তুমি যজ্ঞকার্যদ্বারা সেরূপ বিশ্বাত্মক, সর্বব্যাপি ও সকলের পরাভবকারী হয়ে জন্ম গ্রহণ করেছ।
১০। হে তরুণ অগ্নি! যিনি তোমর স্তব করেন এবং তোমর জন্য অভিষব করেন তুমি তার রমণীয় হব্য নিয়ে দেবতাগণের নিকট বিস্তার কর। হে তরুণ, মহাধন, বলপুত্র। তুমি স্তুত্য ও হবিভূক, আমরা স্তোত্র সময়ে রাজার ন্যায় তোমাকে স্থাপন করি।
১১। হে অগ্নি। তুমি যেমন আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং উপাস্য ধন প্রদান কর সেরূপ উৎসাহশীল জনপ্রিয়, বিদ্যাভ্যাসে কুশল পুত্র প্রদান কর। অগ্নি যেমন আপনার কিরণসমূহকে বিস্তার করেন সেরূপ আপনার জন্মধার (আকাশ পৃথিবীকে) বিস্তার করে থাকেন। সুক্রতু অগ্নি আমাদের যজ্ঞে দেবতাগণের স্তুতি বিস্তার করে থাকেন
১২। অগ্নি অত্যন্ত দ্যুতিশীল দ্রুতগামী অশ্বিবশিষ্ট, হোতা, আনন্দময়, সুবর্ণ রথবিশিষ্ট, অক্ষুন্ন বল ও প্রসন্ন স্বভাব। তিনি কি আমাদের আহ্বান শ্রবণ করবেন? তিনি কি আমাদের সিদ্ধিপ্রদ কর্মদ্বারা অনায়াস লভ্য ও অভিলষিত স্বর্গ অভিমুকে নিয়ে যাবেন?
১৩। আমরা অগ্নিকে হব্য প্রদানাদি কর্ম ও অর্চনা সাধন মন্ত্র দ্বারা স্তব করছি। অগ্নি প্রকৃষ্টরূপে দীপ্তি যুক্ত হয়েছেন। উপস্থিত সকলে এবং আমরা, সূর্য যেমন মেঘের শব্দ উৎপন্ন করেন, সেরূপ (অগ্নির উদ্দেশে) শব্দ করি।
টীকাঃ
১। অর্থাৎ অরণি ঘর্ষণে।
২। এ ঋকের অর্থ অতিশয় অস্পষ্ট; সায়ণ এরূপ অর্থ করেছেন, যথা প্রথমাগ্নির স্থান পৃথিবী। দ্বিতীয়াগ্নির স্থান অন্তরীক্ষ যেখানে মাতৃস্থানীয় বৃষ্টি আছে, এ অগ্নির নাম দৈ্যুতাগ্নি; ইনি অভিষ্টবর্ষী। একে দোহনের জন্য আদিত্য রশ্মিরূপ তৃতীয় স্থানে অগ্নির আবশ্যক করে তিনিই তুতীয়াগ্নি।
১৪২ সুক্ত।।
অনুবাদঃ
১। হে সমিদ্ধ নামক অগ্নি! যে যজমান স্রুক উন্নত করে তার জন্য তুমি অদ্য দেবগণকে আহ্বান কর। যে হব্যপ্রদায়ী যজমান হোমাভিষব করেছেন তার উপকারার্থে পূর্বকালীন যজ্ঞ বিস্তার কর।
২। হে অনুনপাৎ নামক অগ্নি। আমার মত হব্যপ্রদায়ী ও মেধাবী যে যজমান তোমাকে স্তব করে তার ঘৃতমধুরসবিশিষ্ট যজ্ঞে উপস্থিত হয়ে যজ্ঞ সমাপ্তি পর্যন্ত অবস্থিতি কর।
৩। দেবগণের মধ্যে শুচি, পাবক, অন্ভূত, দ্রুতিমান, যজ্ঞসম্পাদক নরাশংস নামক অগ্নি দ্যুলোক হতে এসে তিনবার আমাদের যজ্ঞ মধুর সাথে মিশ্রিত করুন।
৪। হে ইলিত অগ্নি! তুমি বিচিত্র ও প্রিয় ইন্দ্রকে এখানে নিয়ে এস। হে সুজিহ্ব। তোমার উদ্দেশে আমি স্তোত্র পাঠ করছি।
৫। স্রুকধারী ঋত্বিকগণ এ যজ্হে অগ্নিরূপ বর্হি বিস্তার করে ইন্দ্রের জন্য বিস্তীর্ণ সুখসাধন গৃহ সম্পাদন করছেন, এ গৃহে দেবগণ সর্বদা যাতায়াত করবেন।
৬। অগ্নিরূপে দেবী দ্বার খুলে দাও, দেবতাগণের আগমনের জন্য যজ্ঞের দ্বার খুলে দাও। দ্বারগুলি যজ্ঞের বর্ধক, যজ্ঞের শোধক, বহুলোকের স্পৃহণীয় এবং পরস্পর সংলগ্ন নহে।
৭। সকল লোকের স্তুতির যোগ্য, পরস্পর সন্নিহিত, সুন্দর রূপবিশিষ্ট, মহান, যজ্ঞের নির্মাতা অগ্নিরূপ নক্ত এবং উষা স্বয়ং এসে বিস্তৃত কুশে উপবেশন করুন।
৮। দেবতাগণের উন্মাদক শিক্ষাবিশিষ্ট, সর্বদা স্তুতিশীল যজমানগণের মিত্র, মেধাবী, অগ্নিরূপ দৈব্য হোতম্বের আমাদরে এ সিদ্ধিপ্রদ স্বর্গস্পর্শী যাগের অনুষ্ঠান করুন।
৯। শুচি এবং দেবগণের মধ্যস্থা, হোমনিষ্পাদিকা ভারতী, ইলা এবং সরস্বতী (২) (অগ্নির মুর্তিত্রয়) যজ্ঞের উপযুক্তা হয়ে কুশের উপর উপবেশন করুন।
১০। ত্বষ্টা (অগ্নিমূর্তি বিশেষ) আমাদরে মিত্র। তিনি স্বয়ং বহু প্রকারে আমাদরে পুষ্টি ও সমৃদ্ধির জন্য (মেঘের) নাভিস্থিত ব্যাপ্ত, অদ্ভূত এবং বহুসংখ্যক প্রাণির হিতকারী (জল) প্রেরণ করুন।
১১। হে অগ্নিরূপ বনস্পতি। ঋত্বিকগণকে ইচ্ছানুসারে প্রেরণ করে নিজেই দেবগণের যাগ কর। দ্যুতিমান, মেধাবান অগ্নি দেবগণের মধ্যে হব্য প্রেরণ করেন।
১২। উষা ও মরুৎবিশিষ্ট বিশ্বদেবগণ, বায়ু ও গায়ত্র্যশরীর ইন্দ্রের উদ্দেশে হব্য প্রদানার্থ অগ্নিরূপ স্বাহা শব্দ উচ্চারণ কর।
১৩। হে ইন্দ্র! আমাদের স্বাহাকার বিবিষ্ট হব্য ভক্ষণের জন্য এস। যজ্ঞে ঋত্বিকগণ তোমাকে আহ্বান করেছে।
টীকাঃ
১। ১৩ সুক্তের ন্যায় এ ১৪২ সুক্তও আপ্রীসুক্ত। কাতথক্য বলেন যে মীমৎ, অনুনপাৎ প্রভৃতি শব্দ যজ্ঞের অবয়ব বাচী, অতএব এ সুক্তের দেবতা যজ্ঞই হওয়া উচিত। শাকপুণি বলেন এরা অগ্নির রূপান্তর, অতএব অগ্নিই এ সুক্তের দেবতা।
১৩। সুক্তের ঋকগুলিতে অগ্নির যে বারটি রূপের স্তুতি করা হয়েছে, এ সুক্তের প্রথম বারটি ঋকেও সে সমস্ত রূপের স্তুতি করা হয়েছে।
২। ভারতী স্বর্গস্থ বাক, ইলা পৃথিবীস্থ বাক, সরস্বতী অন্তরীক্ষস্থ বাক। সায়ণ।

১৪৪ সুক্ত।।
অনুবাদঃ
১। বহুদর্শী হোতা উন্নত এবং অনবদ্য প্রজ্ঞাবলে অগ্নির উপর্যার জন্য গমন করছেন ও প্রদীক্ষণ করে স্রুক ধারণ করছেন। এ সকল স্রুক অগ্নিতে প্রথমাহুতি প্রদান করে।
২। সুর্যকিরণে সর্বতো ব্যাপ্ত জলের ধারা তাদের উৎপত্তিস্থান আদিত্যলোকে আবার নতুন হয়ে জন্মাচ্ছে। অগ্নি যখন জলের ক্রোড়ে আদরের সাথে বাস করে সে সময়ে লোকে তামৃতময় জলপান করে এবং অগ্নি তার সাথে মিলিত হয়।
৩। সমান বয়স্ক দু জনে (১) এক প্রয়োজন সাধনের উদ্দেশে পরস্পরকে সাহায্য করে অগ্নির শরীরে নিজ নিজ কার্য সম্পাদন করছে, অনপ্তর ভগ যেরূপ আমাদের রশ্মি অর্থাৎ প্রদ্ত্তঘৃত ধারা গ্রহণ করেন আহবনীর অগ্নি করে, আহবনীয় অগ্নি সেরুপ আমাদের রশ্মি বিস্তার করেন, অথবা সারথি যেরুপে রশ্মি গ্রহণ করে, আহবনীয় অগ্নি সেরুপ আমাদের রশ্মি অর্থাৎ প্রদত্তঘৃত ধারা গহ্রণ করেন (২)
৪। সমান বয়স্ক, এক যজ্হে বর্তমান এবং এক কার্যে নিযুক্ত দুজন যে অগ্নিকে দিনরাত পূজা করে, সে অগ্নি পলিতই হোন বা যুবাই হোন মনুষ্য যুগ্মের হব্য ভক্ষণ করে অজর হয়েছেন।
৫। দশ আঙ্গুলি পরস্পর বিশ্লিষ্ট হয়ে সেই দ্যোতমান অগ্নিকে প্রীত করে। আমরা মানুষ, রক্ষালাভার্থ অগ্নিকে আহ্বান করি। ধনুক হতে যেরূপ বাণ বহির্গত হয়, অগ্নি সেরূপ রম্মি প্রেরণ করেন। অগ্নি চতুর্দিকবর্তী যজমানগণের স্তুতি ধারণ করেন।
৬। হে অগ্নি! তুমি পশুপালকের ন্যায় নিজ সামার্থে স্বর্গীয়দের ঈশ্বর এবং পার্থিবদের ঈশ্বর, এজন্য মহতী ঐশ্বর্যবতী, হিরম্ময়ী, মঙ্গল শব্দকারিণী, শুভ্রবর্ণা ও প্রসন্না দ্যাবা পৃথিবী তোমার যজ্ঞে উপস্থিত হন।
৭। হে অগ্নি! তুমি হব্য সেবা কর, তোমার স্তোত্র শ্রবণ করতে ইচ্ছা কর। হে স্তুত্য, অন্নবানযজ্ঞার্থ উৎপন্ন, সুক্রতুঅগ্নি! তুমি সমস্ত জগতের অনুকুলে সকলের দর্শনীয়, তুমি আনন্দোৎপাদক এবং প্রভূত অন্নবান ব্যক্তির ন্যায় সকলের আশ্রয় স্থান।
টীকাঃ
১। হোতা ও অধর্যু। অথবা এ স্থলে সমান বয়স্ক এবং এক উদ্দেশে পরিশ্রমকারী পরস্পর সংলগ্ন জায়া ও পতিও বুঝাতে পারে।
২। রশ্মি শব্দের তিন অর্থ, যথা কিরণ, লাগাম এবং ঘৃত ধারা।

১৪৫ সুক্ত।।
অনুবাদঃ
১। অগ্নিকে জিজ্ঞাসা কর তিনিই জানেন, তিনিই গিয়েছিলেন, তারই চৈতন্য আছে তিনিই যান, তার গভি দ্রুত, শাসন ক্ষমতা তারই সাছে, ইস্ট বস্তুও তাতেই আছে। তিনিই অন্ন, বল এবং বলবানের পালক।
২। তাকেই সকল লোকে জিজ্ঞাসা করে, অন্যায় জিজ্ঞাসা করে না। ধীরব্যক্তি নিজের মনে যা স্থির করে তার পূর্বে ও কথা সহ্য করতে পারে না, পরেও কথা সহ্য করত পা রনা; এ জন্যই দাস্তিকতাশুন্য লোক অগ্নির আশ্রয় প্রাপ্ত হয়।
৩। জ্বহুসমূহ তার উদ্দেশে যায়, স্তুতিও তারই জন্য, এক অগ্নি আমার সমস্ত স্তুতি শোনেন। তিনি অনেকের প্রবর্তক, তারয়িতা ও যজ্ঞের সাধনভূত, তার লক্ষা ছিদ্রশূন্য; তিনি অনেকের প্রবর্তক, তারয়িতা ও যজ্ঞের সাধনভূত, তার রক্ষা ছিদ্রশুন্য; তিনি শিশুর ন্যায় (শান্ত) এবং যজ্ঞাদির অনুষ্ঠান কর্তা।
৪। যখনই যজমান অগ্নি উৎপন্ন করবার চেষ্টা করে তখনই অগ্নি আবির্ভূত হন, উৎপন্ন হয়েই সদ্য যুজ্য বস্তুর সাথে মিলিত হন। তার আনন্দজনক কর্ম শ্রান্ত যজমানের সন্তাষের জন্য অভিমত ফল প্রদান করেন।
৫। অন্বেষণশীল, অধিগম্য, বনগামী অগ্নি, ত্বকের ন্যায় ইন্ধনের মধ্যে স্থাপিত হয়েছেন। বিদ্বান যাগাভিজ্ঞ, যথার্থবাদী অগ্নি মর্তদের বিশেষ করে জ্ঞান প্রদান করেছেন।

(C) https://www.ebanglalibrary.com




Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।