০৫ জানুয়ারী ২০১৮

সামবেদঃ দ্বিতীয় অধ্যায় । ঐন্দ্র কাণ্ডঃ ইন্দ্রস্তুতিঃ খণ্ডঃ ০১-০৬

সামবেদ
পুর্বার্চিকঃ ছন্দ আর্চিকঃ
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ
ঐন্দ্র কাণ্ডঃ ইন্দ্রস্তুতি
প্রথম খণ্ড : মন্ত্র সংখ্যা ১০॥
দেবতা ইন্দ্র (৩য় ঋকের দেবতা অগ্নি বা হবীংষি)॥
ছন্দ গায়ত্রী॥
ঋষিঃ ১ শংযুর্বার্হস্পত্য,
২ শ্রুতকক্ষ সুকক্ষ অথবা আঙ্গিরস,
৩ হর্যত প্রাগাথ,
৪।৫ শ্রুতকক্ষ বা সুকক্ষ (৫ সুকক্ষ আঙ্গিরস),
৬ দেবজামি ইন্দ্রমাতা ঋষিকা,
৭।৮ গোষুক্তি-অশ্বসুক্তি কান্বায়ন,
৯।১০ মেধাতিথি কান্ব, আঙ্গিরস প্রিয়মেধ॥

মন্ত্রঃ (১১৫) তদ্‌ বো গায় সুতে সচা পুরুহূতায় সত্বনে। শং যদ্‌ গবে ন শাকিনে॥১॥
অর্থ : (১১৫) হে স্তোতাগণ, গবাদি পশুর কাছে উদ্ভিদ্‌ যেমন সুখকর হয় সেরূপ সোমাভিষবে বহুলোকের বন্দনীয় সর্বশক্তিমান ইন্দ্রের সুখদায়ক স্তোত্র একত্র মিলিত হয়ে গান কর॥
মন্ত্রঃ (১১৬) যস্তে নূনং শতক্রতবিন্দ্র দ্যুম্নিতমো মদঃ ।তেন নূনং মদে মদে॥২॥
অর্থ : (১১৬) হে শতযজ্ঞকারী ইন্দ্র, পরমানন্দদায়ক সোমরস তোমার জন্য আমরা অভিষব করেছি, সেই রস পান ক’রে বারবার মত্ত হয়ে আমাদের আনন্দ দান কর॥
মন্ত্রঃ (১১৭) গাব উপ বটাবটে মহী যজ্ঞস্য রপ্‌সুদা। উভা কর্ণা হিরণ্যয়া॥৩॥
অর্থ : (১১৭) দ্যুলোক ও ভূলোক উভয়ে বাণীযুক্তা, উভয়ের শ্রবণসামর্থ্য দীপ্তিময়ী; হে দেবরশ্মিগণ, পৃথিবীতলে যক্ষক্ষেত্রে অবনমিত হও॥
মন্ত্রঃ (১১৮) অরমশ্বায় গায়ত শ্রুতকক্ষারং গবে। অরমিন্দ্রস্য ধাম্নে॥৪॥
অর্থ : (১১৮) শ্রুতকক্ষ ঋষি তেজ ও বলের জন্য গান করছেন, তিনি ইন্দ্রধাম প্রাপ্তির জন্য আকুল হয়ে গান করছেন॥
মন্ত্রঃ (১১৯) তমিন্দ্রং বাজয়ামসি মহে বৃত্রায় হন্তবে। স বৃষা বৃষভো ভূবৎ॥৫॥
অর্থ : (১১৯) বিপুলাকৃতি বৃত্রকে (=মেঘকে) বধের জন্য আমরা ইন্দ্রকে রহস্যময়বাক্যের দ্বারা স্তব করি॥সেই অভীষ্টবর্ষী ইন্দ্র আমাদের অভিলাষ পূরণ করুন॥
মন্ত্রঃ (১২০) ত্বমিন্দ্র বলাদধি সহসো জাত ওজসঃ।ত্বং সন্‌ বৃষন্‌ বৃষেদসি॥৬॥
অর্থ : (১২০) হে ইন্দ্র, তুমি তেজ ও বল হতে জন্মেছ; হে অভীষ্টবর্ষী তুমিই মনোবাঞ্ছা পূরণকর্তা॥
মন্ত্রঃ (১২১) যজ্ঞ ইন্দ্রমবর্ধয়দ্‌ যদ্‌ ভূমিং ব্যবর্তয়ৎ।চক্রাণ ওপশং দিবি॥৭॥
অর্থ : (১২১) যজ্ঞ ইন্দ্রকে বর্ধিত করেছে কারণ তিনি অন্তরিক্ষ শায়িত মেঘ থেকে বৃষ্টি প্রদান ক’রে পৃথিবীর আগর্তন রক্ষা করেছেন॥
মন্ত্রঃ (১২২) যদিন্দ্রাহং যথা ত্বমীশীয় বস্ব এক ইৎ। স্তোতা মে গোসখা স্যাৎ॥৮॥
অর্থ : (১২২) হে ইন্দ্র, তুমি যেমন একাই ধনের ঈশ্বর সেরূপ আমি ঐশ্বর্যযুক্ত হলে আমার ভক্ত ধনযুক্ত হোত॥
মন্ত্রঃ (১২৩) পন্যং পন্যমিৎ সোতার আ ধাবত মদ্যায়।সোমং বীরায় মুরায়॥৯॥
অর্থ : (১২৩) হে সোমপ্রস্তুতকারিগণ, এই আশ্চর্য সোমকে হর্ষ ও শৌর্যযুক্ত বীর ইন্দ্রের উদ্দেশে উৎসর্গের জন্য দ্রুত আগমন কর॥
মন্ত্রঃ (১২৪) ইদং বসো সুতমন্ধঃ পিবা সুপুর্ণমুদরম্‌ ।অনাভয়িন্‌ ররিমা তে॥১০॥
অর্থ : (১২৪) হে সর্বধন ইন্দ্র, উদরপূর্ণ ক’রে সোম পান কর; হে নির্ভীক, এ দান তোমার জন্য॥
দ্বিতীয় খণ্ড : মন্ত্র সংখ্যা ১০॥
দেবতা ইন্দ্র (৯ অগ্নি ও ইন্দ্র)
ছন্দ গায়ত্রী॥
ঋষিঃ
১।২ সুকক্ষ ও শ্রুতকক্ষ আঙ্গিরস,
৩ ভরদ্বাজ (ঋগ্বেদে শংযু বার্হস্পত্য),
৪ শ্রুতকক্ষ (ঋগ্বেদে সুকক্ষ আঙ্গিরস),
৫।৬ মধুছন্দা বৈশ্বামিত্র,
৭।৯।১০ ত্রিশোক কান্ব,
৮ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি॥
মন্ত্রঃ (১২৫) ঊদ্ধেদভি শুতামঘং বৃষভং নর্যাপসম্‌।অস্তারমেষি সূর্য॥১॥
অর্থ : (১২৫) হে সূর্য কীর্তিযুক্তধনবিশিষ্ট, অভিলাষপূরণকারী, মানুষের হিতকারী উদার পুরুষের জন্য উদিত হও॥
মন্ত্রঃ (১২৬) যদদ্য কচ্চ বৃত্রহন্নুদগা অভি সূর্য। সর্বং তদিন্দ্র তে বশে॥২॥
অর্থ : (১২৬) হে সূর্য, হে বৃত্রবধকারী, হে ইন্দ্র, আজ এই যেসব পদার্থের সামনে উদিত হয়েছ, এ সকলই তোমার বশে এসেছে॥
মন্ত্রঃ (১২৭) য আনয়ৎ পরাবতঃ সুনীতী তুর্বশং যদুম্‌। ইন্দ্রঃ স নো যুবা সখা॥৩॥
অর্থ : (১২৭) যিনি সুষ্টু নীতির দ্বারা পরিচালিত হয়ে দূরদেশ থেকে তুর্বশ ও যদুকে এনেছিলেন সেই যুবা ইন্দ্র আমাদের সখা॥[তুর্বশ=ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষযুক্ত মানুষ॥যদু=আচার্যের উপদেশে বিপথ হতে বিরত মানুষ॥(নিঘন্টু ভাষ্য)]॥
মন্ত্রঃ (১২৮) মা ন ইন্দাভ্যাত দিশঃ সূরো অক্তুম্বা যমৎ।ত্বা যুজা বনেম তৎ॥৪॥
অর্থ : (১২৮) হে ইন্দ্র, প্রবল শত্রু যেন রাত্রির অন্ধকারে চতুর্দিকে আমাদের ঘিরে না ফেলে; তোমার সহায়তায় আমরা তাদের রুখতে পারবো॥
মন্ত্রঃ (১২৯) এন্দ্র সানসিং রয়িং সজিত্বানং সদাসহম্‌।বর্ষিষ্ঠমূতয়ে ভর॥৫॥
অর্থ : (১২৯) হে ইন্দ্র, আমাদের পালনের জন্য, তুল্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে জয় করবার জন্য, নিরন্তর সেবনযোগ্য শত্রুপরাভবকারী প্রচুর ধন আন॥
মন্ত্রঃ (১৩০) ইন্দ্রং বয়ং মহাধন ইন্দ্রমর্ভে হবামহে।যুজং বৃত্রেষু বজ্রিণম্‌॥৬॥
অর্থ : (১৩০) আমরা ইন্দ্রকে প্রচুর ধনের জন্য আহ্বাব করি, আমরা ইন্দ্র অল্পধনের প্রয়োজনেও আহ্বান করি। বজ্রধারী ইন্দ্র শত্রুনিবারণে সহায়ক॥
মন্ত্রঃ (১৩১) অপিবৎ কদ্রুবঃ সুতমিন্দ্রঃ সহস্রবাহ্বে।তত্রাদদিষ্ট পৌংস্যম্‌॥৭॥
অর্থ : (১৩১) ইন্দ্রদেব অমিতবলের জন্য কলসপূর্ণ সোম পান করবেন, তার ভলে ইন্দ্রের পৌরুষ অত্যন্ত বৃদ্ধি পেল॥
মন্ত্রঃ (১৩২) বয়মিন্দ্র ত্বায়বোহভি প্র নোনুমো বৃষন্‌।বিদ্ধী ত্বাতস্য নো বসো॥৮॥
অর্থ : (১৩২) হে ইচ্ছাপূরক ইন্দ্র, তোমার কাছে কামনা ক’রে বারবার তোমার স্তব করি। হে আশ্রয়দাতা, আমাদের স্তুতি অন্তরে গ্রহণ কর॥
মন্ত্রঃ (১৩৩) আ ঘা যে অগ্নিমিন্ধতে স্তৃনন্তি বর্হিরানুষক। যেষামিন্দ্রো যুবা সখা॥৯॥
অর্থ : (১৩৩) যাঁরা অগ্নিকে সন্দীপ্ত করেন, যাঁরা মিলিতভাবে প্রসারিত করেন, যুবা ইন্দ্র তাঁদের সখা॥

তৃতীয় খণ্ড : মন্ত্র সংখ্যা ১০॥
দেবতা ইন্দ্র (১ মরুদ্‌গণ, ৪ বিশ্বদেবগণ; ৫ ব্রহ্মণস্পতি; ৭ সবিতা)॥
ছন্দ গায়ত্রী॥
ঋষিঃ
১ কন্ব ঘৌর,
২ ত্রিশোক কানব,
৩।৯ বৎস কান্ব,
৪ কুসীদো কান্ব,
৫ মেধাতিথি কান্ব,
৬ শ্রুতকক্ষ বা সুকক্ষ আঙ্গিরস,
৭ শাবাশ্ব আত্রেয়,
৮ প্রগাথ কান্ব,
১০ ইরিম্বিঠি কান্ব॥
মন্ত্রঃ (১৩৫) ইহেব শৃন্ব এষাং কশা হস্তেযু যদ্‌ বদান্‌।নি যামং চিত্রমৃঞ্জতে॥১॥
অর্থ: (১৩৫) মরুদ্‌দেবগণের হাতের চাবুকে শন্‌শন্‌ শব্দ শুনতে পাচ্ছি; সে শব্দ (বৃত্রের সঙ্গে) যুদ্ধকে মাতিয়ে তোলে। (মরৎ=বায়ু॥কশা=শব্দ)॥
মন্ত্রঃ (১৩৬) ইম উ ত্বা বি চক্ষতে সখায় ইন্দ্র সোমিনঃ।পুষ্টাবন্তো যথা পশুম্‌॥২॥
অর্থ: (১৩৬) পশুপালক পশুর দিকে যেমন তাকিয়ে থাকে সেরূপ হে ইন্দ্র, সোমপ্রস্তুতকারী সখারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে॥
মন্ত্রঃ (১৩৭) সমস্য মন্যবে বিশ বিশ্বা নমস্ত কৃষ্টয়ঃ।সমুদ্রায়েব সিন্ধবঃ॥৩॥
অর্থ: (১৩৭) বিশাল সমুদ্র অভিমুখে যেমন নদ-নদী ধাবিত হয় তেমনি বিশ্বের সকল মানুষ তাঁর দীপ্ততেজোরাশির জন্য তাঁকে প্রণাম করে॥
মন্ত্রঃ (১৩৮) দেবানামিদবো মহৎ তদা বৃণীমহে বয়ম্‌।বৃষ্ণামস্মভ্য মূতয়ে॥৪॥
অর্থ: (১৩৮) আমাদের রক্ষার জন্য কামবর্ষী দেবগণ সেই মহাপালন আমরা বরণ করি॥
মন্ত্রঃ (১৩৯) সোমানাং স্বরণং কৃণুহি ব্রহ্মণস্পতে।কক্ষীবন্তং য ঔশিজঃ॥৫॥
অর্থ: (১৩৯) হে ব্রহ্মণস্পতি, ঊশিজপুত্র কক্ষীবানের মত সোমপ্রাস্তুতকারী আমাকে প্রখ্যাত কর॥
মন্ত্রঃ (১৪০) বোধন্মনা ইদস্তু নো বৃত্রহা ভূর্যাসুতি॥শৃণোতু শক্র আশিষম্‌॥৬॥
অর্থ: (১৪০) বহুসোম যাঁর জন্য প্রস্তুত হয় সেই বৃত্রহন্তা ইন্দ্রদেব আমাদের অভিলাষ জানুন, আমাদের স্তব শুনুন॥
মন্ত্রঃ (১৪১) অদ্য নো দেব সবিতঃ প্রজাবৎ সাবীঃ সৌভগম্‌।পরা দুঃষ্বপ্ন্যং সুব॥৭॥
অর্থ: (১৪১) হে সবিতাদেব, আজ আমাদের সন্তান সৌভাগ্য দাও; আমাদের দুঃস্বপ্ন দূর কর॥
মন্ত্রঃ (১৪২) কৃতস্য বৃষভো যুবা তুবিগ্রীবো অনানতঃ।ব্রহ্মা কন্তং সপর্যতি॥৮॥
অর্থ: (১৪২) সেই কামবর্ষী চিরতরুণ, বিশালগ্রীব, অনমনীয় ইন্দ্র কোথায়? সেই ব্রহ্মরূপী ইন্দ্রকে কে পরিচর্যা করছে?
মন্ত্রঃ (১৪৩) উপহ্বরে গিরীণা সঙ্গমে চ নদীনাম্‌।ধিয়া বিপ্রো অজায়ত॥৯॥
অর্থ: (১৪৩) পর্বতপ্রান্তে, নদীসঙ্গমে যজ্ঞকর্মের দ্বারা ইন্দ্র জন্মলাভ করেন॥
মন্ত্রঃ (১৪৪) প্র সম্রাজং চর্ষণীনামিন্দ্রং স্তোতা নব্যং গীর্ভিঃ।নরং বৃষাহং মংহিষ্ঠম্‌॥১০॥
অর্থ: (১৪৪) মানুষের সম্রাট, নেতা, শত্রুপরাভবকারী, অতিদাতা ইন্দ্রকে নতুন মন্ত্রে স্তব কর॥
চতুর্থ খন্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১০।।
দেবতা ইন্দ্র (৪ ইন্দ্র ও পূষা)।।
ছন্দ গায়ত্রী।।
ঋষিঃ
১ শ্রুতকক্ষ বা সুকক্ষ আঙ্গিরস,
২ মেধাতিথি কান্ব (ঋগ্বেদ শংযু বার্হস্পত্য),
৩ গোতম রাহুগণ,
৪ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য,
৫ বিন্দু বা পূতদক্ষ অঙ্গিরস,
৬।৭ শ্রুতকক্ষ বা সুকক্ষ আঙ্গিরস,
৮ বৎস কান্ব,
৯ শুনঃশেপ আজীগর্তি,
১০ শুনঃশেপ আজীগর্তি বা বামদেব।।
মন্ত্রঃ
(১৪৫) অপাদু শিপ্র্যন্ধসঃ সুদক্ষস্য প্রহোষিণঃ। ইন্দোরিন্দ্রো যবাশিরঃ।।১।।
(১৪৬) ইমা উ ত্বা পুরূবসোহভি প্র নোনুবুর্গিরঃ। গাবো বৎসং ন ধেনবঃ।।২।।
(১৪৭) অত্রাহ গোরমন্বত নাম ত্বষ্টুরপীচ্যম। ইত্থা চন্দ্রমসো গৃহে।।৩।।
(১৪৮) যদিন্দ্রো অনয়দ্রিতো মহীরপো বষন্তমঃ। তত্র পূষা ভবৎ সচা।।৪।।
(১৪৯) গৌর্ধয়তি মরুতাং শ্রবস্যুর্মাতা মঘোনাম্‌। যুক্তা বহ্নী রথানাম্‌।।৫।।
(১৫০) উপ নো হরিতিঃ সুতং যাহি মদানাং পতে। উপ নো হরিভিঃ সুতম্‌।।৬।।
(১৫১) ইষ্টা হোত্রা অসৃক্ষতেন্দ্রং বৃধন্তো অধ্বরে। অচ্ছাবভৃথমোজসা।।৭।।
(১৫২) অহমিদ্ধি পিতুস্পরি মেধামৃতস্য জগ্রহ। অহং সূর্য ইবাজনি।।৮।।
(১৫৩) রেবতীর্নঃ সধমাদ ইন্দ্রে সন্তু তুবিবাজাঃ। ক্ষুমন্তো যাভির্মদেম।।৯।।
(১৫৪) সোমঃ পূষা চ চেতুতুর্বিশ্বাসাং সুক্ষিতীনাম্‌ দেবত্রা রথ্যোর্হিতা।।১০।।
অনুবাদঃ
(১৪৫) জল বর্ষণের দ্বারা অন্নদাতা ইন্দ্র নিপুণ যজ্ঞকারীর যবমিশ্রিত সোমরস তৃপ্তির সঙ্গে পান করেন।।
(১৪৬) হে বহুজনের আশ্রয়দাতা ইন্দ্র, গোবৎসের প্রতি ধেনুগণ যেমন গমন করে সেরূপ আমাদের এই স্তুতিসকল তোমা অভিমুখে গমন ক’রে।।
(১৪৭) সুর্যমন্ডল হতে স্নিগ্ধরশ্মি যে চন্দ্রমন্ডলে প্রবিষ্ট হয় তা’ ইন্দ্র জানেন।।
(১৪৮) অতি বর্ষণকারী ইন্দ্র যখন ঋতকর্মের দ্বারা মহান বারিরাশিকে প্রেরণ করেন তখন পূষারূপী সূর্য তাঁর সহায়ক হন।।
(১৪৯) বহুধনের স্রষ্টা, যশ ও অন্নের নির্মাতা মাতৃরূপী ইন্দ্র (বর্ষণ ইচ্ছা ক’রে) মরুৎ বায়ুদের সোম পান করাচ্ছেন, তাঁর গমনপথে রশ্মিসমূহকে যুক্ত করছেন।।
(১৫০) হে আনন্দের দেবতা, তোমার রশ্মিরূপ অশ্বের সহায়তায় আমাদের এই সোমযাগে এস, আমাদের এই সোমযাগে এস।।
(১৫১) যজ্ঞের বগৃধি কামনা করে যজ্ঞকামী হোতাগনো ইন্দ্রের উদ্দেশে আহুতি উৎসর্গ করলেন; যজ্ঞান্তে অবগাহন স্নানের জন্য গমন করলেন।
(১৫২) আমিই যজ্ঞের দ্বারা সত্য ও অন্নের অনুগ্রহ লাভ করেছি।। আমি সূর্যের মত প্রকাশিত।।
(১৫৩) সোম মত্ত ইন্দ্রে হোও আমাদের জন্য প্রচুর অন্ন ও জল, যে অন্ন-জলে অন্নবান হয় আমরা হৃষ্ট হবো।।
(১৫৪) সোম ও পূষা বিশ্বের সকল পদার্থকে জানুন, যাঁরা দেবরশ্মিগণের সঙ্গে রথে যোজিত।।

পঞ্চম খন্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।।
দেবতা ইন্দ্র।।
ছন্দ গায়ত্রী।। ঋষিঃ
১।৪ শ্রুতকক্ষ বা সুকক্ষ আঙ্গিরস,
২ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি,
৩ মেধাতিথি কান্ব, প্রিয়মেধ আঙ্গিরস,
৫ ইরিম্বিঠি কান্ব,
৬।১০ মধুচ্ছন্দা বৈশ্বামিত্র,
৭ ত্রিশোক কান্ব,
৮ কুসীদী কান্ব,
৯ শুনঃশেপ আজীগর্তি।।
মন্ত্রঃ
(১৫৫) পান্তমা বো অন্ধস ইন্দ্রমভি প্র গায়ত। বিশ্বাসাহং শতক্রতুং মংহিষ্ঠং চর্ষণীনাম্‌।।১।।
(১৫৬) প্র ব ইন্দ্রায় মাদনং হর্যশ্বায় গায়ত। সখায়ঃ সোমপাব্‌নে।।২।।
(১৫৭) বয়মু ত্বা তদিদর্থা ইন্দ্র ত্বায়ন্তা সখায়ঃ। কন্বা উক্‌থেভির্জরন্তে।।৩।।
(১৫৮) ইন্দ্রায় মদ্ধনে সুতং পরি ষ্টোভন্তু নো গিরঃ। অর্কমর্চন্তু কারবঃ।।৪।।
(১৫৯) অয়ং ত ইন্দ্র সোমো নিপূতো অধি বর্হিষি। এহীমস্য দ্রবা পিব।।৫।।
(১৬০) সুরূপকৃৎনুমূতয়ে সুদুঘামিব গোদুহে। জুহূমসি দ্যবিদ্যবি।।৬।।
(১৬১) অভি ত্বা বৃষভা সুতং সৃজামি পীতয়ে। তৃস্পা ব্যশ্মহী মদম্‌।।৭।।
(১৬২) য ইন্দ্র চমসেম্বা সোমশ্চমূষু তে সুতঃ। পিবেদস্য ত্বমীশিষে।।৮।।
(১৬৩) যোগেযোগে তবস্তরং বাজেবাজে হবামহে। সখায় ইন্দ্রমূতয়ে।।৯।।
(১৬৪) আ ত্বেতা নি ষীদতেন্দ্রমভি প্র গায়ত। সখায়ঃ স্তোমবাহসঃ।।১০।।
অনুবাদঃ
(১৫৫) তোমাদের মঙ্গলের জন্য ইন্দ্রের উদ্দেশে পানযোগ্য সোমরস নিবেদন করে’ গান কর; তিনি বিশ্বজিৎ, শতকর্মা, মানুষের শ্রেষ্ঠদাতা।।
(১৫৬) হে সখাগণ, হরিতবর্ণ রশ্মিযুক্ত (=হর্ষশ্ব); সোমপায়ী (=জলরাশির পালক), ইন্দ্রের উদ্দেশে আনন্দজনক গান গাও।।
(১৫৭) হে ইন্দ্র, আমরা তোমার সখা, তোমাকেই কামনা করি। আমরা কন্বের সন্তান (অথবা বিপ্রগণ) তোমাকে মন্ত্রমালায় স্তুতি করি।।
(১৫৮) ইন্দ্রের উদ্দেশে যে মদকর সোম তাকে ঘিরে আমাদের গান হোক; গায়কেরা সোমকে অর্চনা করুন।।
(১৫৯) হে ইন্দ্র, কুশের উপরে যে পূত সোম রয়েছে তা তোমার জন্য; এখন এস, ওই সোম পান কর।।
(১৬০) পয়স্বিনী গাভীকে দোহনের জন্য দোহনকারী যেমন ডাকে আমরাও তেমনি সুকর্ম ইন্দ্রকে ডাকি আমাদের রক্ষার জন্য।।
(১৬১) হে অভীষ্টবর্ষী ইন্দ্র, সোম প্রস্তুত হলে তোমার পানের জন্য তা’ উৎসর্গ করি; সেই মদকর সোম পান করে’ তৃপ্ত হও।।
(১৬২) হে ইন্দ্র, তোমার জন্য সোম চমসে ও চমূ পাত্রে আছে। তুমি তা’ পান করে প্রভুত্ব কর।।
(১৬৩) আমরা ইন্দ্রের সখা, আমাদের রক্ষার জন্য অতি মহান ইন্দ্রকে প্রত্যেক কর্ম কৌশলে, প্রত্যেক জ্ঞানকর্মে আহ্বান করি।।
(১৬৪) হে সামগানকারী সখাগণ, এস, শীঘ্র এস, উপবেশন কর। ইন্দ্রের উদ্দেশে অন্তর দিয়ে গান কর।।

ষষ্ঠ খন্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।।
দেবতা ইন্দ্র (৭ সদসস্পতি; ১০ মরুদ্‌গণ)।।
ছন্দ গায়ত্রী।।
ঋষিঃ
১ গাথি বিশ্বমিত্র,
২ মধুচ্ছন্দা বৈশ্বামিত্র,
৩ কুসীদী কান্ব,
৪ প্রিয়মেধ আঙ্গিরস,
৫।৮ বামদেব গৌতমি,
৬।৯ শ্রৃবক্ষ বা সুবক্ষ আঙ্গিরস,
৭ মেধাতিথি কান্ব,
১০ বিন্দু বা পূতদক্ষ আঙ্গিরস।।
মন্ত্রঃ
(১৬৫) ইদং হ্যন্বোজসা সুতং রাধানাং পতে। পিবা ত্বতস্য গির্বণ।।১।।
(১৬৬) মহাঁ ইন্দ্রঃ পুরুশ্চ নো মহিত্বমস্তু বজ্রিণে। দ্যোর্ন প্রথিনা শবঃ।।২।।
(১৬৭) আ তূ ন ইন্দ্র ক্ষুমন্তং চিত্রং গ্রাভং সং গৃভায়। মহাহস্তী দক্ষিণেন।।৩।।
(১৬৮) অভি প্র গোপতিং গিরেন্দ্রমর্চ যথা বিদে। সূনুংসত্যস্য সৎপতিম্‌।।৪।।
(১৬৯) কয়া নশ্চিত্র আভুবদুতী সদাবৃধঃ সখা। কয়া শচিষ্ঠয়া বৃতা।।৫।।
(১৭০) ত্যমু বঃ সত্রাসাহং বিশ্বাষু গীর্ম্বাষতম্‌। আ চ্যাবয়স্তূতয়ে।।৬।।
(১৭১) সদসস্পতিমদ ভূতং প্রিয়মিন্দ্রস্য কাম্যম্‌। সনিং মেধামযাসিষম্‌।।৭।।
(১৭২) যে তে পন্থা আধো দিবো যেভির্ব্যশ্বমৈরয়ঃ উত শ্রোষন্তু নো ভুবঃ।।৮।।
(১৭৩) ভদ্রং ভদ্রং ন আ ভরেষমুর্জং শতক্রতো। যদিন্দ্র মৃড়য়াসি নঃ।।৯।।
(১৭৪) অস্তি সোমো অয়ং সুতঃ পিবস্ত্যস্য মরুতঃ। উত স্বরাজ্যে অশ্বিনা।।১০।।
অনুবাদঃ
(১৬৫) হে রাধাপতি (=সর্বসিদ্ধিকর ধনের অধিপতি), হে স্তুতিপ্রিয় ইন্দ্র, বলসহায়ে প্রস্তুত এই সোমরস তোমার পানের জন্য।।
(১৬৬) বজ্রী ইন্দ্রের মহত্ব হোক, বল হোক বিপুল, দ্যুলোকের মত; ইন্দ্র যে শ্রেষ্ঠ ও মহান।।
(১৬৭) এস হে ইন্দ্র, মহাহস্তবিশিষ্ট; আমাদের গ্রহণযোগ্য বিবিধ অন্নধন দানের জন্য তোমার দক্ষিণহস্ত প্রসারিত কর।।
(১৬৮) সত্যের দ্যোতক, সৎকর্মের পালক, রশ্মিসমূহের অধিপতি ইন্দ্র যাতে জানতে পারেন সেইভাবে তাঁকে স্তব কর।।
(১৬৯) সদা বর্ধমান, বিচিত্রকর্মা, সখা ইন্দ্র কোন পূজাতে আমাদের কাছে আসবেন? কোন শ্রেষ্ঠ কর্মের দ্বারা বৃত হয়ে তিনি আমাদের কাছে আসবেন?
(১৭০) সকল কিছু যিনি জয় করেন, সকল স্তোত্র যাঁকে প্রসারিত করে সেই ইন্দ্রকে তোমাদের মঙ্গলের জন্য মন্ত্র উচ্চারণ করে কাছে আন।
(১৭১) মহান ইন্দ্রের প্রিয়, সকলের কার্ম সর্বযজ্ঞাধিপতি অগ্নির কাছে ভক্তি ও প্রজ্ঞা যাচ্‌ঞা করি।।
(১৭২) যে পন্থা অবলম্বন করে তুমি দ্যুলোক থেকে অধোলোকে তোমার অশ্বরশ্মিকে প্রেরণ কর, আমাদের পৃথিবীর জন্যও তুমি সেই ভাবে তোমার কর্মে অপ্রমত্ত থাক।।
(১৭৩) হে ইন্দ্র, যখন তুমি আমাদের সুখী কর তখন হে শতকর্মা, আমাদের জন্য অন্ন বল সম্পাদন করে আমাদের সকল কিছুই ভদ্র কর।।
(১৭৪) এই সোম প্রস্তুত হয়েছে; প্রাণবায়ু মরুদ্‌গণ তা’ পান করুন; আর মহাভোজী অশ্বিদ্বয়ও (=দেশ ও কাল) পান করুন।।

(C) https://www.ebanglalibrary.com
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।