০৫ জানুয়ারী ২০১৮

সামবেদঃ তৃতীয় অধ্যায় । ঐন্দ্র কান্ডঃ ইন্দ্রস্তুতিঃ খণ্ডঃ ০১-০৬

প্রথম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।।
দেবতা ইন্দ্র (৯ম ঋকের দেবতা মরুদ্‌গণ)।।
ছন্দ বৃহতী।।
ঋষিঃ ১।৬।৯ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি, ২ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য (ঋগ্বেদে শংযু বার্হস্পত্য, ৩ প্রস্কণ্ব কাণ্ব (বালখিল্য সুক্তমন্ত্র), ৪ নোধা গৌতম, ৫ কলি প্রাগাথ, ৭ মেধাতিথি কাণ্ব, ৮ ভর্গ প্রাগাথ, ১০ প্রাগাথ ঘৌর কাণ্ব।।
মন্ত্রঃ (২৩৩) অভি ত্বা শূর নোনুমোহদুগ্ধা ইব ধেনবঃ। ঈশানমস্য জগতঃ স্বর্দৃশমীশানমিন্দ্র তস্থুষঃ।।১।। (২৩৪) ত্বামিদ্ধি হবামহে সাতৌ বাজস্য কারবঃ। ত্বাং বৃত্রেম্বিন্দ্র সৎপতিং নরস্তাং কাষ্ঠাস্বর্বতঃ।। (২৩৫) অভি প্র বঃ সুরাধসমিন্দ্রমর্চ যথা বিদে। যো জরিতৃভ্যো মধবা পুরূবসুঃ সহস্রেণেব শিক্ষতি।।৩।। (২৩৬) তং বো দস্মমৃতীষহং বসোর্মন্দানমন্ধসঃ। অভি বৎসং ন স্বসরেষু ধেনব ইন্দ্রং গীর্ভির্নবামহে।।৪।। (২৩৭) তরোভির্বো বিদদ্বসুমিন্দ্রং সবাধ ঊতয়ে।। বৃহদ্‌ গায়ন্তঃ সুতসোমে অধ্বরে হুবে ভরং ন কারিণম্‌।।৫।। (২৩৮) তরণিরিৎ সিষাসতি বাজ পুরন্ধ্যা আ ব ইন্দ্রয় পুরুহূতং নমে গিরা নেমিং তষ্টেব সুদ্রুবম্‌।।৬।। (২৩৯) পিবা সুতস্য রসিনো মৎস্বা ন ইন্দ্র গোমতঃ। আপির্নো বোধি সধমাদ্যে বৃধেতহস্মাঁ অবন্তু তে ধিয়ঃ।।৭।। (২৪০) ত্বং হ্যেহি চেরবে বিদা ভগং বসুত্তয়ে। উদ্‌বাবৃযস্বমধবন গবিষ্টয় উদিন্দ্রাশ্বমিষ্টয়ে।।৮।। (২৪১) ন হি বশ্চরমং চ ন বসিষ্ঠঃ পরিমংসতে। অস্মাকমদ্য মরুতঃ মরুতঃ সুতে সচা বিশ্বে পিবন্তু কামিনঃ।।৯।। (২৪২) মা চিদন্যদ্‌ বি শংসত সখায়ো মা রিষণ্যত। ইন্দ্রমিৎ স্তোতা বৃষণং সচা সুতে মুহুরুক্‌থা চ শংসত।।১০।।
অনুবাদঃ (২৩৩) দোহন করা হয় নি এমন পয়স্বিনীদের মত আমরা স্তুতিভারে অবনত হয়ে, হে শূর, তোমার কাছে এসেছি। হে ইন্দ্র, তুমি জঙ্গমের ঈশ্বর, তুমি স্থাবরের ঈশ্বর, তুমি সর্বদর্শী।। (২৩৪) আমরা স্তোতারা তোমাকেই ডাকি অন্নবল লাভের আশায়, হে ইন্দ্র, যে তুমি মেঘপুঞ্জে অবস্থিত জলরাশির মধ্যে অশ্বরশ্মিরূপে অবস্থান করে মেঘবিদারণের দ্বারা সৎকর্মসাধক হও, নরগণ সেই তোমাকেই ডাকে।। (২৩৫) আমি যেমন করি তোমরাও তোমাদের মঙ্গলের জন্য শোভন সর্বসিদ্ধিকর ধনবিশিষ্ট ইন্দ্রের কাছে সেইভাবে প্রার্থনা কর, তিনি মহানদাতা বহুধনযুক্ত এবং স্তোতাকে সহস্র প্রকারে দান করে থাকেন।। (২৩৬) তোমাদের জন্য সেই দর্শনীয় জগৎনিয়ামক, সোমে বাসকারী, অন্নের দ্বারা হৃষ্ট ইন্দ্রকে মন্ত্ররূপ শব্দের দ্বারা স্তুতি করি যেমন গোষ্ঠে ধেনুগণ বাছুরকে (সন্তানকে) ডাকে।। (২৩৭) তোমাদের সব কিছু রক্ষার জন্য ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ও আন্তরিকতার সঙ্গে, অহিংসিত সোমযজ্ঞে, বৃহৎ সামগানে, সেই ইন্দ্রকে আহ্বান করি যিনি প্রচুর লাভে হৃষ্ট ব্যক্তির ন্যায় ধনশালী।। (২৩৮) প্রজ্ঞার দ্বারা যুক্ত হয়ে ক্ষিপ্রকারী ব্যক্তিই ধনসেবা করে থাকেন। বহু ব্যক্তির দ্বারা আহুত ইন্দ্রকে স্তুতির দ্বারা নত হয়ে তোমাদের জন্য বেষ্টিত করি, যেমন সূর্য সুগমনের দ্বারা সংবৎসরকে বেষ্টন করেন।। (২৩৯) হে ইন্দ্র, আমাদের দেওয়া উদকযুক্ত এই রসাল সোম পান করে হৃষ্ট হও। তুমি আমাদের বন্ধু বলে মনে কর; সোমপানে হৃষ্ট হয়ে তোমার ধী বৃদ্ধি হোক আমাদের রক্ষার জন্য।। (২৪০) তুমি ভজনীয় একথা জেনে শ্রদ্ধা নিবেদনকারীর কাছে, ধনকামীর কাছে এস; হে উত্তমদাতা ইন্দ্র, ইচ্ছাপূরণের জন্য, মহাগতির জন্য ঊর্ধ্বে অবস্থান করে বারবার বর্ষণ কর।। (২৪১) বসিষ্ঠ তোমাদের কাউকেই অবহেলা করেন না। হে প্রাণরূপী মরুদ্‌গণ, সোম কামনা করে তোমরা সকলে মিলিত হয়ে আজ আমাদের সোমযাগে এস।। (২৪২) হে সখাগণ, তোমার অন্যের পূজা করো না। কাউকে হিংসাও করো না। বর্ষণকারী ইন্দ্রকেই একত্র মিলত হয়ে স্তোত্র ও গানের দ্বারা মুহুর্মুহু স্তব কর।।

দ্বিতীয় খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।।
দেবতা ইন্দ্র ।। ছন্দ বৃহতী ।।
ঋষিঃ ১ পুরুহন্মা আঙ্গিরস, ২।৩ মেধাতিথি ও মেধ্যাতিথি কাণ্ব, ৪ গাথি বিশ্বামিত্র, ৫ গোতম রাহুগণ, ৬ নৃমেধ ও পুরুমেধ আঙ্গিরস, ৭।৮।৯। মেধাতিথি বা মেধ্যাতিথি কাণ্ব (ঋগ্বেদে মেধাতিথি), ১০ দেবাতিথি কাণ্ব।।
মন্ত্রঃ (২৪৩) নকিষ্টং কর্মণা নশদ্‌ যশ্চকার সদাবৃধম্‌। ইন্দ্রং ন যজ্ঞৈর্বিশ্বগূর্তমৃন্বসমধৃষ্টং ধৃষ্ণুমোজস্য।।১।। (২৪৪) য ঋতে চিদভিশ্রিষঃ পুরা জক্রুভ্যঃ আতৃদঃ সন্ধাত্য সন্ধিং মধবা পুরূবসুর্নিষ্ক্রর্তা বিহবুতং পুনঃ।।২।। (২৪৫) আ ত্ব সহস্রমা শতং যুক্তা রথে হিরণ্যয়ে। ব্রহ্মযুজ্যে হরয় ইন্দ্র কেশিনো বহস্তু সোমপীতয়ে।।৩।। (২৪৬) আ মন্দৈরিন্দ্র হরিভির্যাহি ময়ূররোমভিঃ। মা ত্বা কে চিন্নি যেমুরিন্ন পশিনোহতি ধন্বেব তাঁ ইহি।।৪।। (২৪৭) ত্বমঙ্গ প্র শংসিষো দেবঃ শবিষ্ঠ মর্ত্যম্‌। ন ত্বদন্যো মঘবন্নস্তি মর্ডিতেন্দ্র ব্রবীমি তে বচঃ।।৫।। (২৪৮) ত্বমিন্দ্র যশা অস্যৃজীষী শবসস্পতিঃ। ত্বং বৃত্রাণি হংস্যপ্রতীন্যেক ইৎ পুর্বনুত্তশ্চর্ষণীধৃতিঃ।।৬।। (২৪৯) ইন্দ্রমিন্দ্‌ দেবতাতয় ইন্দ্রং প্রযত্যধ্বরে। ইন্দ্রং সমীকে বনিনো হবামহ ইন্দ্রং ধনস্য সাতয়ে।।৭।। (২৫০) ইমা উ ত্বা পুরূবসো গরো বর্ধন্তু যা মম। পাবকবর্ণাঃ শুচয়ো বিপশ্চিতোহভিস্তোমৈরনূষত।।৮।। (২৫১) উদু ত্যে মধুমত্তমা গিরঃ স্তোমাস ঈরতে। সত্রাজিতো ধনসা অক্ষিতোতয়ো বাজয়ন্তো রথা ইব।।৯।। (২৫২) যথা গৌরো অপ্রা কৃতম্‌ তৃষ্যন্নেত্যবেরিণম্‌। আপিত্বে নঃ প্রপিত্বে তূয়মা গহি কণ্বেষু সু সচা পিব।।১০।।
অনুবাদঃ (২৪৩) যিনি সদা বৃদ্ধিশীল, যিনি যজ্ঞেয় দ্বারা সর্বস্তুতিযোগ্য, মহান, অপরাজিত ও অতিনিপুণ, সেই ইন্দ্রকে কেহই বলের দ্বারা বা কর্মের দ্বারা জানতে পারে না।। (২৪৪) যিনি পূর্বেই, সংযোগকারী বস্তু ব্যতিরেকেই, বস্তু ব্যতিরেকেই, বিচ্ছিন্ন অস্থিকে জোড়া দেন, যিনি বিচ্ছিন্ন বস্তুকে বারবার সংস্কার করেন, সেই সংস্কারকর্তা, সংযোগকারীই বহুধন অতিদাতা ইন্দ্র।। (২৪৫) হে ইন্দ্র, উদকহরণের জন্য বেগবান, স্তুতিযুক্ত, শতসহশ্র কিরণরাশি তোমাকে সোমপানের জন্য বহন করুক।। (২৪৬) হে ইন্দ্র, ময়ূরপেখমের মত উজ্জ্বল, বিচিত্র রশ্মিযুক্ত হয়ে আনন্দে মত্ত হয়ে এস; ব্যাধ যেমন তার শিকারকে ঘিরে ফেলে সেভাবে তোমার আগমনে যেন কেউ বাধা না দেয়; মরুপ্রান্তর অতিক্রমকারীর মত সকল বাধা দূর করে এস।। (২৪৭) হে অতিবলইন্দ্র, তুমি দীপ্যমান, (তাই) স্তুতিরত মানুষকে অবিলম্বেই প্রশংসিত কর; হে মঘবা, তুমি ভিন্ন আর কেউ সুখদাতা নেই; আমি তোমারই স্তুতি করে থাকি।। (২৪৮) হে ইন্দ্র, তুমি বলপতি, সোমবান ও যশস্বী; তুমি একাই অপ্রতিহতগতিতে বৃত্রহনন কর; তুমিই জনগণপালক।। (২৪৯) একমাত্র ইন্দ্রকেই যজ্ঞের জন্য, ইন্দ্রকে যজ্ঞকালে দান উৎসর্গের জন্য, ইন্দ্রকে সকলে মিলিতভাবে ভজনার জন্য, ইন্দ্রকে ধনলাভের জন্য আমরা আহ্বান করি।। (২৫০) হে বহুধন, আমার এই যা কিছু স্তুতি তোমাকে বর্ধিত করুক, অগ্নির মত তেজোদীপ্ত ও শুচি বিদ্বান্‌গণ তোমাকেই স্তুতি করেন।। (২৫১) আর অতি মধুর বাক্যের মন্ত্রমালা যা শত্রুকে জয় করে, যা ধনদ, যা অক্ষয়রক্ষাকারী ও অথের মত বেগবান্‌ তা ঊর্ধ্বে যাচ্ছে (ইন্দ্রকে পাবে বলে)।। (২৫২) মৃগ তৃষ্ণার্ত হলে যেমন জলপুর্ণ স্থানের অভিমুখে যায়, তুমিও তেমনি, হে ইন্দ্র, তোমার সোমপানের সময় হলে আমাদের কাছে অবশ্যই এস। আমরা কণ্বগণ, আমাদের সঙ্গে একত্র সোমপন কর।।

তৃতীয় খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।।
দেবতা ইন্দ্র; ৩য় দেবতা মিত্রাবরুণ ও আদিত্যগণ।।
ছন্দ বৃহতী।।
ঋষিঃ ১ ভর্গ প্রাগাথ, ২।৮। রেভ কাশ্যপ, ৩ জমদগ্নি ভার্গব, ৪।৯ মেধাতিথি কান্ব (ঋগ্বেদে মেধ্যাতিথি কান্ব), ৫।৬ নৃমেধ ও পুরুমেধ আঙ্গিরস, ৭ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি, ১০ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য (ঋগ্বেদে শংবু বার্হস্পত্য)।।
মন্ত্রঃ (২৫৩) শগ্‌ধ্যূতষু শবীপত ইন্দ্র বিশ্বাভিরুতিভিঃ। ভগং ন হি ত্বা যশসং বসুবিদমনু শূর চরামসি।।১।। (২৫৪) যা ইন্দ্র ভুজ আভরঃ স্বর্বাং অসুরেভ্যঃ। স্তোতারমিন্মঘবন্নস্য বর্ধয় যে চ ত্বে বৃক্তবর্হিষঃ।।২।। (২৫৫) প্র মিত্রায় প্রার্যম্‌ণে সচথ্যমৃতাবসো। বর্‌থোতবর্‌ণে ছন্দ্যং বচঃ স্তোত্রং রাজসু গায়ত।।৩।। (২৫৬) অভি ত্বা পূর্বরীতয় ইন্দ্র স্তোমেভিরায়বঃ। সমীচীনাস ঋভবঃ সমস্বরন্‌ রুদ্রা গৃণন্ত পূর্ব্যম্‌।।৪।। (২৫৭) প্র ব ইন্দ্রায় বুহতে মরুতো ব্রহ্মার্চত। বৃত্রং হনতি বৃণহা শশকৃতুর্বজ্রেণ শতপর্বণা।।৫।। (২৫৮) বৃহদিন্দ্রায় গায়ত মরুতো বৃত্রহন্তমম্‌। যেন জ্যোতিরজনয়ন্নৃতাবৃধো দেবং দেবায় জাগৃবি।।৬।। (২৫৯) ইন্দ্র ক্রতুং ন আ ভর পিতা পুত্রেভ্যো যথা। ষিক্ষা ণো অস্মিন্‌ পুরুহূত যামনি জীবা জ্যোতিরশীমহি।।৭।। (২৬০) মা ন ইন্দ্র পরা বৃণগ্‌ ভবা নঃ সধমাদ্যে। ত্বং ন ঊতী ত্বমিন্ন আপ্যং মা ন ইন্দ্র প্রাবৃণক্‌।।৮।। (২৬১) বয়ং ঘ ত্বা সুতাবন্ত আপো ন বৃক্তবর্হিষঃ। পবিত্রসা প্রস্রবণেষু বৃত্রহন্‌ পরি স্তোতার আসতে।।৯।। (২৬২) যদিন্দ্র নাহুষীস্বা অজো বৃম্‌ণং চ কৃষ্টিষু। যদ্‌ বা পঞ্চক্ষিতীনাং দ্যুম্নমা ভর সত্রা বিশ্বানি পৌংস্যা।।১০।।
অনুবাদঃ (২৫৩) সকল বল ও কর্মের অধিপতি হে ইন্দ্র, তুমি সকল বলকর্মে অবস্থিত থেকে সমস্ত প্রকারে আমাদের রক্ষা কর। হে শূর, উদয়কালীন সূর্যের জ্যোতিকে যেমন লোকে ভজনা করে সেরূপ যশস্বী ও ধনপ্রাপক তোমাকে ভজনা করি।। (২৫৪) হে ইন্দ্র, অসুররূপী মেধ হতে (=মেঘ বিদীর্ণ করে’) যে প্রাণধন (=বারিরাশি) সকলের ভোগের জন্য আহরণ করেছ তার দ্বারা, হে ধনবান্‌, যারা তোমার স্তবকারী ও যজ্ঞকারী মিত্রদেবের উদ্দেশে, অন্ধকারনাশক দেব অর্যমার উদ্দেশে, আশ্রয়দাতা দেব বরুণের ছন্দে বাক্যে স্তোত্রে গান কর।। (২৫৬) হে ইন্দ্র, তুমিই প্রথমে সোমপান করবে বলে মানুষেরা তোমার উদ্দেশে বারবার গান করছে; আর একত্র মিলিতভাবে অবস্থিত বৈদ্যুতিক জ্যোতিসমূহ ও শব্দায়মান রুদ্রগণ প্রথমাবধি সমস্বরে তোমার আনুকূল্যের জন্য গম্ভীর গর্জন করে চলেছেন। (২৫৭) হে প্রাণবায়ু মরুদ্‌গণ, মহান ইন্দ্রের উদ্দেশে ব্রহ্মসঙ্গীতে উপাসনা কর; শতকর্মা বৃত্রনাশকারী ইন্দ্র শতপর্ববিশিষ্ট বজ্রের দ্বারা বৃত্রমেধকে বধ করেন।। (২৫৮) বৃত্রবিনাশকারী মহান সঙ্গীত শুরু কর, হে মরুদ্‌গণ; সদাদীপ্ত ইন্দ্রকে জাগরুক ভাখবার জন্য সকল দেবরশ্মিগণ যেন জ্যোতিঃ উৎপন্ন করতে পারেন।। (২৫৯) হে ইন্দ্র, পিতা যেমন পুত্রদের জ্ঞানদান করেন তেমনি তুমিও আমাদের জ্ঞান দাও; হে বহুস্তুত দেবতা, আমাদের চলার পথ এমন ভাবে অভ্যস্ত কর যেন আমরা জ্যোতিষ্মান সূর্যকে নিত্যই প্রাপ্ত হই।। (২৬০) হে ইন্দ্র, আমাদের পরিত্যাগ করো না, আমাদের সঙ্গে আনন্দহৃদয়ে মত্ত হও; তুমিই আমাদের রক্ষা, তুমিই বন্ধু; আমাদের ছেড়ে যেও না।। (২৬১) হে বৃত্রহন্তা (=মেঘবিদারণকারী ইন্দ্র), সম্প্রতি তুমি অন্তরিক্ষে বিস্তৃত যে বারিরাশি দান করলে, আমরা সোমবান স্তোতারা সেই পবিত্র প্রস্রবণকে ঘিরে বসেছি। আর আমাদের মনও তোমা অভিমুখে নিম্নগতি বারির মত যাচ্ছে।। (২৬২) হে ইন্দ্র, মনুষ্যসমাজে যে কিছু ধন ও বল আছে, আর যা কিছু অন্নধন আছে পঞ্চভূতে, তুমি তা সকলই অমিতবলে আমাদের জন্য নিয়ে এস।।

চতুর্থ খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১০।।
দেবতা ইন্দ্র।। ছন্দ বৃহতী।।
ঋষিঃ ১ মেধাতিথি কাণ্ব (ঋগ্বেদে মেধ্যাতিথি কাণ্ব), ২ রেভ কাশ্যপ, ৩ বৎস (ঋগ্বেদে অশ্বপুত্র বশ), ৪ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য (ঋগ্বেদে শংযু বার্হস্পত্য), ৫ বৃমেধ আঙ্গিরস, ৬ পুরুহন্মা আঙ্গিরস, ৭ বৃমেধ ও পুরুমেধ আঙ্গিরস, ৮ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি, ৯ মেধাতিথি ও মেধ্যাতিথি কাণ্ব, ১০ কলি প্রাগাথ।।
মন্ত্রঃ (২৬৩) সত্যমিত্থা বৃষেদসি বৃষজুতির্নোহবিতা। বৃষাহ্যুগ্র শৃন্বিষে পরাবতি বৃষো অর্বাবতি শ্রুতঃ।।১।। (২৬৪) যচ্ছক্রাসি পরাবতি যদর্বাবতি বৃত্রহিন্‌। অতস্তা গীর্ভির্দ্যুগদিন্দ্র কেশিভিঃ সুতাবাঁ আ বিবাসতি।।২।। (২৬৫) অভি বো বীরমন্ধসো মদেষে গায় গিরা মহাবিচেতসম্‌। ইন্দ্রং নাম শ্রুত্যং শাকিনং বচো যথা।।৩।। (২৬৬) ইন্দ্র ত্রিধাতু শরণং ত্রিবরূথং স্বস্তয়ে। ছর্দির্যচ্ছ মঘবদ্‌ভ্যশ্চ মহ্যং চ যাবয়া দিদ্যুমেভ্যঃ।।৪।। (২৬৭) শ্রায়ন্ত ইব সূর্যং বিশ্বেদিন্দ্রস্য ভক্ষত। বসূনি জাতো জনিমান্যোজসা প্রতি ভাগং ন দীধিম।।৫।। (২৬৮) ন সীমদেব আপ তদিষং দীর্ঘায়ো মর্ত্যঃ। এতগ্বা চিদ্য এতশো যুযোজত ইন্দ্রো হরী যুযোজতে।।৬।। আ নো বিশ্বাসু হব্যমিন্দ্রং সমৎসু ভূষত। উপ ব্রহ্মাণি সবনানি বৃত্রহন্‌ পরমজ্যা ঋচীষম।।৭।। (২৭০) তবেদিন্দ্রাবমং বসু ত্বং পুষ্যসি মধ্যমম্‌। সত্রা বিশ্বস্য পরমস্য রাজসি নকিষ্ট্বা গোষু বৃন্বতে।।৮।। (২৭১) ক্বেয়থ ক্বেদসি পুরুত্রা চিদ্ধি তে মনঃ। অলর্ষি যুধ্‌ম খজকৃৎ পুরন্দর প্র গায়ত্রা অগাসিষুঃ।।৯।। (২৭২) বয়মেনমিদা হ্যোতপীপেমেহ বজ্রিণম্‌। তস্মা ঊ অদ্য সবনে সুতং ভরা নূনং ভূষত শ্রুতে।।১০।।
অনুবাদঃ (২৬৩) একথা সত্য যে, তুমি ইচ্ছাপূরণকারী এবং উদ্যোগী পুরুষের মত উৎসাহযুক্ত; তুমি আমাদের রক্ষক। হে উগ্রবল, তুমি ইচ্ছাপূরণকারী, এরূপ খ্যাতি তোমার আছে; দূরে এবং কাছে সর্বত্র তোমার খ্যাতি শোনা যায়।। (২৬৪) হে সামর্থ্যযুক্ত ইন্দ্র, তুমি দূরে থাক আর কাছে থাক, সেখান থেকে অশ্বরশ্মিযুক্ত তোমাকে স্তুতির দ্বারা ক্ষিপ্রতার সঙ্গে নিকটে আনছেন তাঁরা যাঁরা সোমবান।। (২৬৫) তোমরা সেই শক্তিমান ইন্দ্রের কাছে নত হয়ে, অন্নলাভে হৃষ্ট হয়ে বিশ্ববিশ্রুত অন্নদাতা ও আনন্দে আত্মহারা মহাচৈতন্য ইন্দ্রের উদ্দেশে, যেরূপ বাক্যে স্ফূর্তি হয় সেরূপ বাক্যে গান মহাসঙ্গীত কর।। (২৬৬) হে ইন্দ্র, আমাদের কল্যাণের জন্য অন্ন-জল-তেজরূপ তিনপ্রকার আশ্রয় থেকে উৎপন্ন তনূত্রাণকারী মন-প্রাণ-বাক্‌ দাও; প্রচুর ধনসম্পদ রক্ষার জন্য গৃহ দাও; আর আমার জন্য আমার তেজস্বী দীপ্তিমান কান্তির জন্য এই সকল একত্র সমবেত কর।। (২৬৭) রশ্মিগণ যেমন সূর্যের সেবা করেন তেমনি, যারা জন্মেছে এবং যারা জন্মাবে তাদের মধ্যে নিজ মাহাত্মবলে রশ্মিগণ ইন্দ্রের সমস্ত ধন ভাগ করে দেবেন বলে ইন্দ্রের সেবা করেন; আর আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ধনের মত সেই ধন গ্রহণ করি।। (২৬৮) হে চিরজীবী ইন্দ্র, মর্ত্যের মানুষ সেই কাম্যধনকে বিচ্ছিন্নভাবে (=স্বার্থপর ব্যক্তির মত একাকী) ভোগ করতে পারে না, কারণ ইন্দ্রই (জীবাত্মা-পরমাত্মা অথবা দেশ-কালরূপ) হরি নামক বিচিত্র দীপ্ত অশ্বরশ্মি দুটিকে সর্বদাই একত্র যুক্ত করে রেখেছেন।। (২৬৯) আমাদের মঙ্গলের জন্য সকল যজ্ঞে আহবানযোগ্য, বৃত্রনাশক (মেঘবিদারণকারী), স্তুতিদ্বারা সম্বোধনযোগ্য ইন্দ্রকে সকল ভক্ষণীয় বস্তু নিবেদনের দ্বারা অলঙ্কৃত কর।। (২৭০) হে ইন্দ্র, অধম ধন তোমারই; মধ্যপ ধনও তুমি পালন কর; বিশ্বের পরমধনে তুমিই বিরাজ কর। রশ্মিসমূহের দ্বারাই তুমি এ সমস্ত কর আর সে বিষয়ে তোমাকে কেঊ বাধা দিতে পারে না।। (২৭১) হে বহুজনের ত্রাতা ইন্দ্র, তুমি কোথায় গিয়েছ? এখন কোথায় আছো? তোমার মন নানাদিকে। হে সংক্ষুব্ধকারী ধর্মযোদ্ধা, হে দেহপুরবিদারক আত্মা, সামগানকারীরা তোমার উদ্দেশে গান করছেন; তুমি এস।। (২৭২) আমরা আজ এবং কাল বজ্রযুক্ত ইন্দ্রকে যজ্ঞে আপ্যায়িত করবো। আজ এই প্রখ্যাত যজ্ঞে তাঁরই উদ্দেশে অভিষুত সোম অবশ্যই আন, তাঁকে ভূষিত কর।।

পঞ্চম খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১০।।
দেবতা ইন্দ্র (৩ মন্ত্রের দেবতা ইন্দ্র বা বাস্তোস্পতি; ৪ সূর্য, ৯ ইন্দ্রাগ্নী)।।
ছন্দ বৃহতী।।
ঋষিঃ ১।৬ পুরুহন্মা আঙ্গিরস, ২ ভর্গ প্রাগাথ, ৩ ইরিম্বিঠি কাণ্ব, ৪ জমদগ্নি ভার্গব, ৫।৭ দেবাতিথি কাণ্ব, ৮ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি, ৯ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য, ১০ মেধ্য কাণ্ব।।
মন্ত্রঃ (২৭৩) যো ভাজা চর্ষণীনাং যাতা রথেবিরধ্রিণ্ডঃ। বিশ্বাসাং তরুতা পূতনানাং জ্যেষ্ঠো যো বৃত্রহা গৃণে।।১।। (২৭৪) যত ইন্দ্র ভয়ামহে ততো নো অভয়ং কৃধি। মঘবঞ্ছগ্ধি তব তন্ন ঊতয়ে বি দ্বিষো বি মৃধো জহি।।২।। (২৭৫) বাস্তোস্পতে ধ্রুবা স্থূণাংসত্রং সোম্যানাম্‌। দ্রন্সঃ পুরাং ভেত্তা শশ্বতীনামিন্দ্রো মুনীনাং সখা।।৩।। (২৭৬) বণ্‌মহাঁ অসি সূর্য বলাদিত্য মহাঁ অসি। মহন্তে সতো মহিমা পনিষ্টম মহ্না দেব মহাঁ অসি।।৪।। (২৭৭) অশ্বী রথী সুরূপ ইদ্‌ গোমান্‌ যদিন্দ্র তে সখা। শ্বাত্রভাজা বয়সা সচতে সদা চন্দ্রৈর্যাতি সভামুপ।।৫।। (২৭৮) যদ্‌ দ্যাব ইন্দ্র তে শতং শতং ভূমীরুত স্যুঃ। ব ত্বা বজ্রিন্‌ৎসহস্রং সূর্যা অনূ ন জাতমষ্ট রোদসী।।৬।। (২৭৯) যদিন্দ্র প্রাগপাণ্ডদংন্যগ্‌বা হূয়সে নূভিঃ। সিমা পুরূ নৃযূতো অস্যানবেহসি প্রশর্ধ তুর্বশে।।৭।। (২৮০) কস্তমিন্দ্র ত্বা বসবা মর্ত্যা দধর্ষতি। শ্রদ্ধা হি তে মঘবন্‌ পার্যে দিবি বাজী বাজং সিষাসতি।।৮।। (২৮১) ইন্দ্রাগ্নী অপাদিয়ং পূর্বাগাৎ পদ্বতীভ্যঃ। হিত্বা শিরো জিহ্বয়া রারপচ্চরৎ ত্রিংশৎ পদা ন্যক্রমীৎ।।৯।। (২৮২) ইন্দ্র নেদীয় এদিহি মিতমেধাভিরূতিভিঃ। আ শন্তম শন্তমাভিরভিষ্টিভিরা স্বাপে স্বাপিভিঃ।।১০।।
অনুবাদঃ (২৭৩) যিনি মানুষের রাজা, রশ্মিসহায়ে অপ্রতিহতগতিযুক্ত ও পুনঃ পুনঃ ভ্রমণকারী, যিনি সকল সংগ্রামে ত্রাণকর্তা সেই শ্রেষ্ঠ ও বৃত্রহননকারী ইন্দ্রকে স্তব করি। (২৭৪) হে ইন্দ্র, যা থেকে আমরা ভয় পাই তা থেকে আমাদের অভয় কর। হে মঘবা, তুমি ক্ষমতাশালী, আমাদের রক্ষার জন্য তোমার সামর্থ্যের দ্বারা হিংসাকারী শত্রুদের বিনাশ কর। (২৭৫) হে গৃহপালক দেবতা, সোমযজ্ঞকারীদের সোমযজ্ঞরূপ স্তম্ভকে দৃঢ় ও অবিচল কর। (পরমাত্মা) ইন্দ্র সকল দেহ ভেদ করে প্রবেশ করে প্রতি জীবদেহে বিন্দুবৎ (আত্মারূপে) অবস্থান করেন, তিনি মুনিগণের সখা।। (২৭৬) হে সূর্য, তুমি সত্যই মহান; হে আদিত্য, তুমি সত্যই মহান; তোমাকে লক্ষ্য করে যে মহাসঙ্গীত তা’ তোমারই মতই মহান; হে দেব, বৃষ্টি প্রভৃতি দানরূপ মহৎ কর্মের দ্বারা তুমি মহান হয়েছ।। (২৭৭) হে ইন্দ্র, যাঁরা তোমার সখা তাঁরা ব্যাপ্তিযুক্ত, পৌরুষযুক্ত রূপবান ও জ্ঞানবান; তারা সর্বদা পাখীর মত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে গমন করেন এবং সভাস্থলে চন্দ্রের মতন স্নিগ্ধকান্তিযুক্ত হয়ে শোভিত হন।। (২৭৮) হে ইন্দ্র, দ্যুলোক এবং পৃথিবী যদি শতশতও হয় তবু তারা তোমার মহিমা প্রকাশ করতে পারে না। হে বজ্রধারী, সহস্র সূর্যও তোমাকে প্রকাশ করতে পারে না; যারা জন্মেছে তারা, এবং দ্যুলোক ও পৃথিবী কেহই তোমাকে ব্যাপ্ত করতে পারে না।। (২৭৯) হে ইন্দ্র, যখন তুমি পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ সকল দিকের সকল মানুষের দ্বারা আহূত হও তখন উদ্যোগী সেই সকল মানুষের যজ্ঞকর্মের কাছে তাদের প্রীতির জন্য তুমি উপস্থিত থাক।। (২৮০) হে ইন্দ্র, কোন্‌ মানুষ তোমার ধনকে অতিক্রম করতে পারে? হে মঘবা, যাঁরা তোমার প্রতি শ্রদ্ধাশীল তাঁরাই ঊর্ধ্বে দ্যুলোকস্থিত অন্ন-বল-বাক্‌রূপ ধনকে লাভ করতে পারেন।। (২৮১) হে ইন্দ্র ও অগ্নিদেব, এই সেই ঊষা যিনি পাদরহিত হয়েও পাদযুক্ত প্রাণিবর্গের নিদ্রা ত্যাগ করিয়ে মস্তক উত্তোলন করাচ্ছেন, তারা এখন কথা বলতে আরম্ভ করেছে; আর এইভাবেই ঊষাদেবী প্রতিদিন তিরিশ পা অতিক্রম করেন। (২৮২) হে ইন্দ্র, কাছে এস সকল প্রজ্ঞা ও কল্যাণের সঙ্গে। হে অতি সুখপ্রদ, সকল সুখ ও অভিলষিত বস্তুর সঙ্গে এবং নিদ্রাকালে আত্মার অতীন্দ্রিয় সুখানুভূতির সঙ্গে এস। [স্বাপ=নিদ্রা]। স্বাপেভিঃ স্বাপম্‌=নিদ্রাজনিত আত্মার নির্গুণ অতিন্দ্রিয় সুখ (শ্রীধর – ভাগবত ৬।১৬।৫৫)।

ষষ্ঠ খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।।
দেবতা ইন্দ্র (৫ মন্ত্রের দেবতা অশ্বিদ্বয়)।।
ছন্দ বৃহতী।
ঋষিঃ ১ নৃমেঘ আঙ্গিরস, ২।৩ বসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি, ৪ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য (ঋগ্বেদে শংযু বার্হস্পত্য), ৫ পরুচ্ছেপ দৈবদাসি, ৬ বামদেব গৌতম, ৭ মেধ্যাতিথি কান্ব, ৮ ভর্গ প্রাগাধ, ৯।১০ মেধাতিথি ও মেধ্যাতিথি কাণ্ব।।
মন্ত্রঃ (২৮৩) ইত ঊতী বো অজরং প্রহেতারমপ্রহিতম্‌। আশুং জেতারং রথীরমমতূর্তং তুগ্রিয়াবৃধম্‌।।১।। (২৮৪) মো যু ত্বা বাঘতশ্চ নারে অস্মন্নি রীরমন্‌। আরাত্তাদ, বা সধমাদ ন আ গহীহ বা সন্নুপ শ্রুধি।।২।। (২৮৫) সুনোত সোমপাব্‌নে সোমমিন্দ্রায় বজ্রিণে। পচতা পক্তীরবসে কৃণুধ্বমিৎ পৃণন্নিৎ পৃণতে ময়ঃ।।৩।। (২৮৬) যঃ সত্রাহা বিচর্ষণিরিন্দ্রং তং হূমহে বয়ম্‌। সহস্রমন্যো তুবিনূম্‌ণ সৎপতে ভবা সমৎসু নো বৃধে।।৪।। (২৮৭) শচীভির্নঃ শচীবসূ দিবা নক্তং দিশস্বতম্‌। মা বাং রাতিরুপ দসৎ কদাচনাস্মদ্রাতিঃ কদাচন।।৫।। (২৮৮) যদা কদা চ মীঢ়ুষে স্তোতা জরেত মর্ত্যঃ। আদিদ্‌ বন্দেত বরুণং বিপা গিরা ধর্তারং বিব্রতানাম্‌।।৬।। (২৮৯) পাহি গা অন্ধসো মদ ইন্দ্রায় মেধ্যাতিথে। যঃ সম্মিশ্লো হর্যোর্যো হিরণ্যয়ঃ।।৭।। (২৯০) উভয়ং শৃণবচ্চ ন ইন্দ্রো অবাগিদং বচঃ। স্ত্রাচ্যা মঘবান্‌ৎ সোমপীতয়ে ধিয়া শবিষ্ঠ আ গমৎ।।৮।। (২৯১) মহে চ ন ত্বাদ্রিবঃ পরা শুল্কায় দীয়সে। ন সহস্রায় নাযুতায় বজ্রিবো ন শতায় শতামঘ।।৯।। (২৯২) বস্যাং ইন্দ্রাসি মে পিতুরুত ভ্রাতুরভুঞ্জতঃ মাতা চ মে ছদয়থঃ সমা বসো বসুত্বনা রাধসে।।১০।।
অনুবাদঃ (২৮৩) তোমাদের মঙ্গলের জন্য তোমরা জরারহিত (অবিনাশী), সংবৎসরচক্রের প্রবর্তক, অপ্রতিহত, ক্ষিপ্রগামী, জয়শীল, যজ্ঞ নির্বাহক, অহিংস, জলবর্ধক ইন্দ্রের পথে চল (=সত্যপথে চল)।। (২৮৪) হে ইন্দ্র, তুমি উদকের দ্বারা সমস্ত হবির প্রভু; আমাদের থেকে দূরে অবস্থিত উদকবহনকারী রশ্মিগণই যেন তোমার সঙ্গে বারবার আনন্দে মত্ত না থাকে। আমাদের সঙ্গে আনন্দে মত্ত হবে বলে, হে ইন্দ্র, তুমি কাছে এস; আমাদের প্রার্থনা শোন।। (২৮৫) যিনি জলরাশি পালনের দ্বারা সকল দ্রব্যকেই সিদ্ধবস্তুতে পরিণত করেন সেই বজ্রধারী সোমরক্ষক ইন্দের উদ্দেশে সোমরস প্রস্তুত কর ও নিবেদন কর; তিনিই প্রীত হয়ে সুখ দান করবেন।। (২৮৬) যিনি বিধ্ননাশক ও সর্বদর্শী সেই ইন্দ্রকে আমরা ডাকি। হে অশেষ ক্ষমতাশালী, অতুলবিত্ত, সৎকর্মা ইন্দ্র, তুমি আমাদের বৃদ্ধির জন্য আমাদের সকল প্রয়াসে থাক।। (২৮৭) হে জ্ঞান-কর্ম-বাক্যরূপ ধনের অধিপতি অশ্বিদ্বয় (=অহোরাত্র অথবা দেশ ও কাল), তোমরা দুজন জ্ঞান-কর্ম-বাক্যের দ্বারা দিবারাত্র আমাদের অনুগ্রহ কর। তোমাদের দুজনের দান যেন কখনও ক্ষয় না হয়, আমাদের দানও যেন কখনও নিঃশেষ না হয়।। (২৮৮) যখন যে সময়ে স্তুতিশীল মানুষ মুক্তহস্তে দানকারী দেবতার উদ্দেশে গান করতে চায় তখনই সে সকল ব্রতকর্মের ধারক বরুণদেবের (=সূর্যের) উদ্দেশে নিবিষ্টচিত্তে গান করুক।। (২৮৯) হে মেধাতিথি যিনি (বৃষ্টিদানের জন্য উদক ও বিদ্যুতের মিশ্রণকর্তা, যিনি হিরণ্যবর্ণ ব্রজধারী সেই হিরণ্যরূপ আনন্দে মত্ত ইন্দ্রের দান অন্ন-ধনকে রক্ষা কর।। (২৯০) ইন্দ্র আমাদের মুখের বাণী ও অন্তরের বাণি শ্রবণ করুন। আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অতিদাতা অতিবল ইন্দ্র কর্ম ও প্রজ্ঞাসহায়ে সোমপানের জন্য আসুন।। (২৯১) হে মেঘবিদারণকারী ইন্দ্র, তোমার মহৎ দান শুল্কের (=মূল্যের) বিনিময়ে পাওয়া যায় না, হে বজ্রহস্ত, হে শতধন, শত-সহস্র-অযুত দানের বিনিময়েও নয়।। (২৯২) হে ইন্দ্র, তুমি আমার পিতা ও ভ্রাতা অপেক্ষা অনেক উদার ও ধনসম্পন্ন। হে বসু, তুমি মায়ের মত এবং সংবৎসররূপে আমাকে সর্বসিদ্ধিকর ধনে আচ্ছাদিত কর।।

(C) https://www.ebanglalibrary.com


Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (3) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (82) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।