০৫ জানুয়ারী ২০১৮

সামবেদঃ চতুর্থ অধ্যায় । ঐন্দ্র কান্ড : ইন্দ্রস্তুতিঃ খণ্ডঃ ০৭-১২

সপ্তম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।।
দেবতা ১-৮ ইন্দ্র, ৯ বিশ্বদেবগণ, ১০ অশ্বিদ্বয়।।
ছন্দ পঙ্‌ক্তি।।
ঋষি ১-৮ গোতম (বা সম্মদ) রাহূগণ, ৯ ত্রিত আপ্ত্য অথবা কুৎস আঙ্গিরস, ১০ আত্রেয়।।
মন্ত্রঃ-
(৪০৯) স্বাদোরিত্থা বিষূবতো মধোঃ পিবন্তি গৌর্যঃ।
যা ইন্দ্রেণ সয়াবরীর্বৃষ্ণা মদন্তি শোভথা বস্বীরনু স্বরাজ্যম্‌।।১।।
(৪১০) ইত্থা হি সোম ইন্মদো ব্রহ্ম চকার বর্ধনম্‌।
শবিষ্ঠ বজ্রিন্নোজসা পথিব্যা নিঃ শশা অহিমর্চন্ননু স্বরাজ্যম্‌।।
(৪১১) ইন্দ্রো মদায় বাবৃধে শবসে বৃত্রহা নৃভিঃ।
নিঃ শশা অহিমর্চন্ননু স্বরাজ্যম্‌।।
(৪১১) ইন্দ্রো মদায় বাবৃধে শবসে বৃত্রহা নৃভিঃ।
তমিন্মমহৎস্বাজিষূতিমর্ভে হবামহে স বাজেষু প্র নোহবিষৎ।।৩।।
(৪১২) ইন্দ্র তুভ্যমিদদ্রিবোহনুত্তং বজ্রিন্‌ বীর্যম্‌ যদ্ধ ত্যং মায়িনং
মৃগং তব ত্যন্মায়য়া বধীরর্চন্ননু স্বরাজ্যম্‌।।৪।।
(৪১৩) প্রেহ্যভীহি ধৃষ্ণুহি ন তে বজ্র নি যংসতে।
ইন্দ্র নৃমণং হি তে শবো হনো বৃত্রং জয়া অপোর্চন্ননু স্বরাজ্যম্‌।।৫।।
(৪১৪) যদুদীরত আজয়ো ধৃষ্ণবে ধীয়তে ধীয়তে ধনম্‌।
যুঙ্‌ ক্ষ্মা মদচ্যুতা হরী কং হনঃ কং বসৌ দধোহস্মাঁ ইন্দ্র বসৌ দধঃ।।৬।।
(৪১৫) অক্ষন্নমীমদন্ত হ্যব প্রিয়া অধুষত।
অস্তোষত স্বভানবো বিপ্রা নবিষ্ঠয়া মতী যোজা ন্বিন্দ্র তে হরী।।৭।।
(৪১৬) উপো ষু শৃণুহী গিরো মঘবন্‌ মা তথা ইব।
কদা নঃ সূনৃতাবতঃ কর ইদর্থয়াস ইদ্‌ যোজা ন্বিন্দ্র তে হরী।।৮।।
(৪১৭) চন্দ্রমা অপ্‌স্বাংন্তরা সুপর্ণো ধাবতে দিবি।
ন বো হিরণ্যনেময়ঃ পদং নিন্দন্তি বিদ্যুতো বিত্তং মে অস্য রোদসী।।৯।।
(৪১৮) প্রতি প্রিয়তমং রথং বৃষণং বসুবাহনম্‌।
স্তোতা বামশ্বিনাবৃষিঃ স্তোমেভির্ভূষতি প্রতি মাধ্বী মম শ্রুতং হবম্‌।।১০।।
অনুবাদঃ (৪০৯) হলুদবরণ কিরণরাশি এই বিষুববিন্দুতে মধুর জলের স্বাদ আস্বাদন করেন; সেই বর্ষণশীলা কিরণরাশি ইন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত থেকে বর্ষণকর্মে মত্ত হন আর ইন্দ্রের অনুগমন করে তাঁর রাজ্যকে শোভিত করেন। (৪১০) তোমার বৃদ্ধি কামনা করে স্তুতিকার এই সোম এই মদকর সোম প্রস্তুত করেছেন। হে বলিষ্ঠ, হে বজ্রী, তুমি বলের দ্বারা পৃথিবী থেকে মেঘকে নিঃশেষে বিদারিত করলে, তারপর স্বরাজ্যে দীপ্তি লাভ করে বিরাজিত হলে।। (৪১১) মেঘহননকারী ইন্দ্র নরগণের দ্বারা আনন্দের জন্য বৃদ্ধির জন্য ও বলের জন্য স্তুত হন। তাঁকেই আমরা ক্ষুদ্র মহৎ সকল সংগ্রামেই ডাকি, তিনিই সংগ্রামে আমাদের সুন্দরভাবে রক্ষা করেন। (৪১২) হে ইন্দ্র, হে মেঘবিদারণকারী, হে বজ্রী, তোমার জন্যই অভেদ্য বীর্য, যার দ্বারা সেই মৃগরূপী মেঘমায়াকে তুমি তোমার প্রজ্ঞারূপে মায়ার দ্বারা বধ করলে, আর তারপর নিজ রাজ্যে দীপ্তি লাভ করে বিরাজিত হলে।। (৪১৩) এস, এখানে এস, প্রগলভের মত, কারণ তোমার বজ্র বৃষ্টি প্রদান করে। হে ইন্দ্র, তোমার সেনাবলই (=রশ্মিগণই) এবং তোমার বল বৃত্রমেঘকে হনন করে বারিরাশিকে জয় করেছে, তারপর তুমি তোমার স্বরাজ্যকে দীপ্তি দিতে থাকলে।। (৪১৪) সাহসের সঙ্গে এগিয়ে গেলেই সংগ্রামে (=জীবনসংগ্রামে) ধনলাভ হয়। হে ইন্দ্র, সোমপানে মত্ত তোমার অশ্ব দুটির (=দেশ ও কাল) সহযোগিতায় কাউকে বধ কর, কাউকে ধন দান কর। হে ইন্দ্র, তুমি আমাদের ধনসম্পদে রাখ।। (৪১৫) ব্যাপ্তিকে লক্ষ্য করেই তোমার প্রিয় দুই অশ্বরশ্মিকে দীপ্তিকারক হন। হে ইন্দ্র, স্বীয় দীপ্তিতে উজ্জ্বল বিদ্বানগণ নবতম স্তোত্রে তোমার স্তুতি করেছেন; অতএব এখনই তুমি তোমার বুদ্ধিদীপ্ত দুই অশ্বকে যুক্ত কর (=বর্ষণ কর্মে নিযুক্ত কর)।। (৪১৬) হে মঘবা ইন্দ্র, নিকটে এস, আমার স্তুতি শোন, যেমন শুনেছিলে আগে সেইভাবে শোন। কবে আবার তুমি আমাদের অন্ন ও বাক্যযুক্ত করবে? তাই যাচ্‌ঞা করছি এখনই তোমার দুই অশ্বকে যুক্ত কর।। (৪১৭) স্নিগ্ধ উজ্জ্বল রশ্মিযুক্ত চন্দ্রমা মেঘের মধ্য দিয়ে আকাশে ধেয়ে চলেছেন। হে সুবর্ণ-বজ্রগণ, বিদ্যুৎ হতে উৎপন্ন তোমাদের স্থান মানুষেরা জানতে পারে না। হে দ্যু ও পৃথিবী, আমার স্তোত্র শোন।। (৪১৮) হে অশ্বিদ্বয়, বৃষ্টিকামী স্তোতা তোমাদের দুজনের ধনবাহন বর্ষণকারী প্রিয়তম রথকে (=সূর্যকে) স্তোমের দ্বারা (=সামগানে) ভূষিত করছে। হে মধুবিদ্যাবিশারদ অশ্বিদ্বয়, তোমরা আমার আহবান শোন।

অষ্টম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ৮।।
দেবতা ১।২।৭ অগ্নি, ৩ ঊষা, ৪ সোম, ৫।৬ ইন্দ্র, ৮ বিশ্বদেবগণ।।
ছন্দ ১-৭ পঙ্‌ক্তি, ৮ উপরিষ্টাদ্‌ বৃহতী।।
ঋষি ১।৭ বসুশ্রুত আত্রেয়, ২।৪ বিমদ ঐন্দ্র, বা প্রাজাপত্য বা বাসুক বসুকৃৎ, ৩ সত্যশ্রবা আত্রেয়, ৫।৬ গোতম রাহ্‌গণ ৮ অঙ্ঘোমুক বামদেব্য বা কুল্মল শৈলুষি।।
মন্ত্রঃ-
(৪১৯) আ তে অগ্ন ইধীমহি দ্যুমন্তং দেবাজরম্‌। যদ্ধ স্যা তে পনীয়সী।
সমিদ্‌দীদয়তি দ্যবীষং স্তোতৃভ্য আ ভর।।১।।
(৪২০) আগ্নিং ন স্ববৃক্তিভির্হোতারং ত্বা বৃণীমহে।
শীরং পাবকশোচিষং বি বো মদে যজ্ঞেষু স্তীর্ণবর্হিষং বিবক্ষসে।।২।।
(৪২১) মহে নো অদ্য বোধযোষো রেয়ে দিবিৎমতী।
যথা চিন্নো অবোধয়ঃ সত্যশ্রবসি বায্যে সুজাতে অশ্বসূনুতে।।৩।।
(৪২২) ভদ্রং নো অপি বাতয় মনো দক্ষমুত ক্রতুম্‌।
অথা তে সখ্যে সন্ধসো বি বো মদে রণা গাবো ন যবসে বিবক্ষসে।।৪।।
(৪২৩) ক্রত্বা মহাঁ অনুষ্বধং ভীম আ বাবৃতে শবঃ।
শ্রিয় ঋষ্ব উপাকযোর্নি শিপ্রী হরিবান্‌ দধে হস্তয়োর্বজ্রমায়সম্‌।।৫।।
(৪২৪) স ঘা তং বৃষণং রথমধি তিষ্ঠাতি গোবিদম্‌।
যো পাত্রং হারিযোজনং পূর্ণমিন্দ্রা চিকেততি যোজা ন্বিন্দ্র তে হরী।।৬।।
(৪২৫) অগ্নিং তং মন্যে যো বসুরন্তং যং যন্তি ধেনবঃ।
অস্তমর্বন্ত আশাবোহস্তং নিত্যাসো বাজিন ইষং স্তোতৃভ্য আ ভর।।৭।।
(৪২৬) ন অমংহো ন দুরিতং দেবাসো অষ্ট মর্ত্যম্‌।
সজোষসো যমর্যমা মিত্রো নয়তি বরুণো অতি দ্বিষঃ।।৮।।
অনুবাদঃ (৪১৯) হে দেব অগ্নি, তোমার দীপ্ত অজর রূপকে সন্দীপ্ত করি। তোমার সেই অর্চনীয় সম্যক্‌দীপ্তরূপ দ্যুলোকে অনুক্ষণ জ্বলে; তুমি স্তুতিকারীর জন্য অন্ন আন। (৪২) হে অগ্নি, অগ্নির ন্যায় উজ্জ্বল স্বরচিত স্তোত্রের দ্বারা দেবগণের আহবানকর্তা তোমাকে বরণ করি। বিস্তীর্ণ নক্ষত্রখচিত আকাশে জগতের মস্তক শুদ্ধপাবকরূপে তোমার যে রূপ প্রকাশিত তা আহ্লাদকর সকল যজ্ঞকর্মে প্রসারিত কর। (৪২১) হে দ্যুলোকবাসিনী ঊষা, হে সুজাতা, হে ঋজুগমনের দ্বারা সৎকর্মের ব্যাপ্তিকারিণী দেবী, যেমন তুমি নিত্যই সৎকর্মের দ্বারা অন্নসংগ্রহের জন্য ও বন্ধুত্বে বাস করার জন্য আমাদের জাগরিত কর, সেরূপ আজও প্রচুর ধনলাভের জন্য আমাদের জাগ্রত কর। (৪২২) হে সোমদেবতা, আমাদের মন বা ইন্দ্রিয়কে ভদ্র, দক্ষ ও কর্মের উপযুক্ত করে পরিচালিত কর। তুমি যখন তোমার রূপ প্রকাশিত কর তখন আমরা অন্নের জন্য তোমার সখ্যতা লাভ করে হৃষ্ট হই যেমন গবাদিপশু তৃণাদি ভক্ষণে আনন্দিত হয়। (৪২৩) ইন্দ্র যজ্ঞকর্মের দ্বারা নিজের ইচ্ছামত বিপুল আকার ধারণ করে ভয়ঙ্কর বলশক্তিকে বরণ করেন। উদকবান রশ্মিযুক্ত ইন্দ্র দুই হাতে লৌহবজ্রকে ধারণ করে সুন্দর মনোজ্ঞ জল আমাদের কাছে আনেন। (৪২৪) যে ইন্দ্র রশ্মিযুক্ত পাত্রকে পূর্ণ বলে জানেন (- রশ্মির দ্বারা আকৃষ্ট জলবাস্পে আকাশ পূর্ণ) তিনিই তাঁর গমনপথে জলবর্ষণকারী জল আকর্ষণকারী রশ্মিকে স্থাপনা করেন। হে ইন্দ্র, এখনই তোমার অশ্বরশ্মি দুইটিকে যুক্ত কর (=বর্ষণকার্যে নিযুক্ত কর)। (৪২৫) আমি সেই অগ্নিকে জানি যিনি রশ্মিধন (=যাতে সকলরশ্মি বাস করে), যাঁকে আশ্রয় (বা গৃহ) মনে করে বাক্‌সমূহ যাঁর প্রতি গমন করে। তিনি আকাশে বিচরণকারী ব্যাপ্ত রশ্মিদের আশ্রয়; তিনিই আশ্রয় চিরন্তন রশ্মিগণের। হে অগ্নি, স্তোতাদের জন্য অন্নধন আন (যা স্তোতাদের ইচ্ছা পূরণ কর)। (৪২৬) পরস্পর প্রীতিসম্পন্ন অন্ধকারনাশক (-অর্যমা), মৃত্যু থেকে ত্রাণকারী (-মিত্র) ও বর্ষনকারী (বরুণ)[সূর্য] যে মানুষকে হিংসা অতিক্রম করে নিয়ে যান সেই মানুষকে কোন পাপ কোন দুস্কর্ম স্পর্শ করতে পারে না; দেবগণ তাঁকে ব্যাপ্ত করেন।

নবম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।।
মন্ত্রঃ-
(৪২৭) পরি প্র ধন্বেন্দ্রায় সোম স্বাদুর্মিত্রায় পুষ্ণে ভগায়।।১।।
(৪২৮) পর্যু যু প্র ধন্ব বাজসাতয়ে পরি বৃত্রাণি সক্ষণিঃ।
দ্বিষস্তরধ্যা ঋণয়া ন ঈরসে।।২।।
(৪২৯) পরস্ব সাম মহান্‌ৎসমুদ্রঃ পিতা দেবানাং বিশ্বাভি ধাম।।৩।।
(৪৩০) পবস্ব সোম মহে দক্ষায়াশ্বো ন নিক্তো বাজী ধনায়।।৪।।
(৪৩১) ইন্দুঃ পবিষ্ট চারুর্মদায়াপামুপস্থে কবির্ভগায়।।৫।।
(৪৩২) অনু হি ত্বা সুতং সোম মদামসি মহে সমর্যরাজ্যে।
বাজাঁ অভি পবমান প্র গাহসে।।৬।।
(৪৩৩) ক ঈং ব্যক্তা নরঃ সনীডা রুদ্রস্য মর্যা অথা স্বশ্বাঃ।।৭।।
(৪৩৪) অগ্নে তমদ্যাশ্বং ন স্তোমৈঃ ক্রতুঃ ন ভদ্র হৃদিস্পৃশম্‌।
ঋধ্যামা ত ওহৈঃ।।৮।।
(৪৩৫) আবির্মর্য্যা আ বাজং বাজিনো অগ্মন্‌ দেবস্য সবিতুঃ সবম্‌।
স্বর্গাং অর্বন্তো জয়ত।।৯।।
(৪৩৬) পবস্ব সোম দ্যুম্নী দুধারো মহাঁ অবীনামনুপূর্ব্যঃ।।১০।।
অনুবাদঃ (৪২৭) হে সোম, তুমি মধুরসযুক্ত হয়ে ইন্দ্র মিত্র পূষা ও ভগ দেবতার উদ্দেশে গমন কর। [এই সকল দেবতা একই সূর্যের বিভিন্নরূপ]। (৪২৮) হে সোম, মেঘের দ্বারা পরিবৃত বারিরাশিকে অন্নধনের জন্য বিজয়ীর মত প্রাপ্ত হও। (অন্নের দ্বারা) আমাদের দ্বেষ ও ঋণ দূর করে আমাদের প্রাপ্ত হও। (৪২৯) হে সোম, তুমি মহান সমুদ্রের মত (বা অন্তরিক্ষের মত) ব্যাপ্ত, সকল দেবগণের পিতা, তুমি সকলস্থানে ক্ষরিত হও। (৪৩০) হে সোম, তুমি রশ্মির মত শুদ্ধ ও গতিশীল; মহান সঙ্কল্পসিদ্ধির জন্য ও ধনের জন্য ক্ষরিত হও। (৪৩১) ইন্দু (=সোম=জল) সর্বাপেক্ষা শুদ্ধিকারক, সুশ্রী, কবি; তিনি বারিরাশির উপস্থানে (=আকাশে অবস্থিত বারিরাশির মধ্যে) ভগদেবতার (=সূর্যের) আনন্দের জন্য বাস করেন। (৪৩২) হে সোম, ঈশ্বরের মহান রাজ্যে (বা লোকাকীর্ণ যজ্ঞস্থানে) সুতসোম তোমাকে অনুসরণ করে (=সোমরস প্রস্তুতকালে) আমরাও হর্ষান্বিত হই। হে পবমান সোম (=বিশুদ্ধরূপে ক্ষরিত সোম), অন্নবলের জন্য উত্তম গতিশীল হও। (৪৩৩) এই ব্যক্ত (=ইন্দ্রিয়বিষয়ীভূত) নেতা সমানস্থানবাসী, সুন্দরগতিবিশিষ্ট রুদ্রের পুত্রগণ (=মরুদ্‌গণ) এঁরা কে? (৪৩৪) হে অগ্নি, যে তুমি সামগানের দ্বারা স্তুত হলে অশ্বের ন্যায় বেগবান এবং যজ্ঞের মত কল্যাণকর ও হৃদয়গ্রাহী হও, সেই তোমাকে আজ উহগানে (=সামগানে) বর্ধিত করবো। (৪৩৫) গতিশীল স্বপ্রকাশিত দেবরশ্মিগণ অন্নসৃষ্টির কারণে সবিতাদেবের (=সূর্যদেবের) ক্ষরিত জল অভিমুখে গমন করলেন এবং আকাশে স্থিত জলকে রশ্মিগণ জয় করলেন। (৪৩৬) হে সোম, তোমার মহান অনুগ্রহের উজ্জ্বল ও সুন্দর ধারা পূর্বের মত পর্যায়ক্রমে ক্ষরিত কর।

দশম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।।
দেবতা ১-৫, ৮-১০ ইন্দ্র, ৬ বিশ্বদেবগণ, ৭ ঊষা।।
ছন্দ দ্বিপদা বিরাট্‌ (কোন কোন পুস্তকে ১।৬।৯ পঙ্‌ ক্তি বিরাট্‌ বা গায়ত্রী), ২ দ্বিপদা অনুষ্টুপ্‌, ৩।৪ ত্রিষ্টুপ্‌, ৫ বৃহতী ১০ জগতী বা গায়ত্রী।।
ঋষি ৩ ত্রসদস্যু, পৌরকুৎস্য, ৭ সম্পাত (সংবর্ত আঙ্গিরস), অন্য মন্তের ঋষি কোন পুস্তকে বসিষ্ঠ, কোন পুস্তকে বামদেব গৌতম।।
মন্ত্রঃ-
(৪৩৭) বিশ্বতোদাবন্‌ বিশ্বতো ন আ ভর যং ত্বা শবিষ্ঠমীমহে।।১।।
(৪৩৮) এষ ব্রহ্মা য ঋত্বিয় ইন্দ্রো নাম শ্রুতো গুণে।।২।।
(৪৩৯) ব্রহ্মাণ ইন্দ্রং মহয়ন্তো অর্কৌরবর্ধয়ন্নহয়ে হন্তবা উ।।৩।।
(৪৪০) অনবস্তে রথমস্বায় তক্ষুস্তষ্টা বজ্রং পুরুহূতং দ্যুমন্তম্‌।।৪।।
(৪৪১) শং পদং মঘং রয়ীষিণে ন কামমব্রতো হিনোতি ন স্পৃশদ্রয়িম্‌।।৫।।
(৪৪২) সদা গাবঃ শুতয়ো বিশ্বধায়সঃ সদা দেনা অরেপসঃ।।৬।।
(৪৪৩) আ যাহি বনসা সহ গাব; সচন্ত বর্তনিং যদূধভিঃ।।৭।।
(৪৪৪) উপ প্রক্ষে মধুমতি ক্ষিয়ন্তঃ পুষ্যেম রয়িং ধীমহে ইন্দ্র।।৮।।
(৪৪৫) অর্চন্ত্যর্কং মরুতঃ স্বর্কাঃ আ স্তোভতি শ্রুতো যুবা স ইন্দ্রঃ।।৯।।
(৪৪৬) প্র ব ইন্দ্রায় বৃত্রহন্তমায় বিপ্রায় গাথং গায়ত যং জুজোষতে।।১০।।
অনুবাদঃ (৪৩৭) হে সদাদানশীল ইন্দ্র, সকল ধন বল আমাদের জন্য আহরণ কর যে ধন বলিষ্ঠ তোমার কাছে যাচ্‌ঞা করি। (৪৩৮) ইনিই ব্রহ্মা (=শ্রেষ্ঠ যজ্ঞ-কর্তা) যিনি প্রতি ঋতুতে যথাকালে কর্ম করেন, যিনি ইন্দ্র নামে বিখ্যাত; আমি তাঁকেই স্তব করি। (৪৩৯) মহান যাজ্ঞিকগণ মেঘনহনের জন্য ইন্দ্রকে ঋকের দ্বারা স্তুতি করে ইন্দ্রের বল বর্ধিত করেছেন। (৪৪০) হে ইন্দ্র, অশ্বরশ্মির দ্বারা ব্যাপ্তির জন্য ত্বষ্টা (=সূর্য) তোমার রথ (=গমনপথ) ও বজ্র প্রস্তুত করেছেন; মানুষেরা বহুস্তুত দীপ্তিমান ইন্দ্রকেই স্তব করে। (৪৪১) ধনকামীর জন্যই ধন ও সুখকর স্থান; কর্মহীন ব্যক্তির কামনা পূর্ণ হয় না, সে ধনকে স্পর্শও করতে পারে না। (৪৪২) রশ্মিগণ সর্বদাই শুচি ও সকলকিছুর পোষক, রশ্মিগণ সর্বদাই পাপশূন্য। (৪৪৩) এস হে ঊষা শুভ্রকান্তি রশ্মিগণের সঙ্গে যে রশ্মিগণ রাত্রির সহায়তায় ভ্রমণপথকে ভজনা করেছিলেন (=রাত্রির পথে তোমার আগমনের অপেক্ষায় ছিলেন)। (৪৪৪) হে ইন্দ্র, তোমার মধুময় প্রবাহের নিকট নিবাস করে আমরা যেন পুষ্টি লাভ করি ও ধন ধারণ করতে পারি। (৪৪৫) সুদীপ্ত মরুদ্‌গণ সূর্যকে অর্চনা করেন এবং সূর্যকেই আর যিনি অর্চনা করেন তিনি প্রখ্যাত যুবা (=সর্বকর্ম-মিশ্রণকারী অনেককর্মা) ইন্দ্র। (৪৪৬) লোকে যাঁকে বারবার সেনা করে সেই মেঘবিদারক দীপ্তকান্তি ইন্দ্রের উদ্দেশে তোমরা সাম গান কর।

একাদশ খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।।
দেবতা ১।২ অগ্নি, ৩।৪।৮।১০ ইন্দ্র, ৫ ঊষা, ৬।৭।৯ বিশ্বদেবগণ।।
ছন্দ ১।২।৫।৭ দ্বিপদা পঙ্‌ ক্তি ৩।৪ পঞ্চদশাক্ষরা আসুরী গায়ত্রী, ৬।৮।৯ দ্বিপদা, ত্রিষ্টুপ্‌, ১০ একপদা অষ্টাক্ষরা গায়ত্রী।।
ঋষি ১ পৃষধ্র কান্ব বা সম্পাত, ২।৩।৪ বন্ধু সুবন্ধু বিপ্রবন্ধু গোপায়ন, ৫ সংবর্ত আঙ্গিরস, ৬ ভৌবন আপ্ত্য, ৭ কবষ ঐলুষ, ৮ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য, ৯ আত্রেয়, ১০ বাসিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি।।
মন্ত্রঃ-
(৪৪৭) অচেত্যগ্নিশ্চিকিতির্হব্যবাড্‌ ন সমুদ্রথঃ।।১।।
(৪৪৮) অগ্নে ত্বং নো অন্তম উত ত্রাতা শিবো ভূবো বরুথ্যঃ।।২।।
(৪৪৯) ভগো ন চিত্রো অগ্নির্মহোনাং দধাতি রত্নম্‌।।৩।।
(৪৫০) বিশ্বস্য প্র স্তোভ পুরো বা সন্‌ যদি বেহ নূনম্‌।।৪।।
(৪৫১) ঊষা অপ স্বসুষ্টমঃ সং বর্তয়তি বর্তনিং সুজাততা।।৫।।
(৪৫২) ইমা নু কং ভুবনা সীষধেমেন্দ্রশ্চ বিশ্বে চ দেবাঃ।।৬।।
(৪৫৩) বি সুতয়ো যথা পথা ইন্দ্র ত্বদ্যন্তু রাতয়ঃ।।৭।।
(৪৫৪) অয়া বাজং দেবহিতং সনেম মদেম শতহিমাঃ সুবীরাঃ।।৮।।
(৪৫৫) ঊর্জা মিত্রো বরুণঃ পিম্বতেডাঃ পীবরীমিষং কৃণুহী ন ইন্দ্র।।৯।।
(৪৫৬) ইন্দ্রো বিস্বস্য রাজতি।।১০।।
অনুবাদঃ (৪৪৭) গতিযুক্ত দীপ্ত হব্যবাহী অগ্নি আমাদের জন্য স্বয়ং রথযুক্ত। (৪৪৮) হে অগ্নি, তুমি আমাদের সর্বাপেক্ষা নিকটে বাসকারী এবং ত্রাতা; তুমি সুখদায়ক (বা মঙ্গলময়) ও ভূলোকে নিবাসকারী। (৪৪৯) সূর্যের ন্যায় বিচিত্রদীপ্ত ও পূজনীয় অগ্নি রমণীয় ধন ধারণ করেন। (৪৫০) হে ইন্দ্র, যদি তুমি পূর্বে সকলের পূজ্য থেকে থাক তবে এখনও তাই আছ। (৪৫১) সুন্দররূপে জাত ঊষাদেবী ভগিনী রাত্রির অন্ধকার দূর করে (আকাশরূপ) গমনমার্গকে সম্যক্‌রূপে বেষ্টন করলেন। (৪৫২) ইন্দ্র এবং বিশ্বের সকল দেবতা (=সর্বরশ্মিগণ) এই নিখিল ভূবনকে যেন আমাদের জন্য সুখকর করেন। (৪৫৩) হে ইন্দ্র, সকল পথ যেমন রাজপথে গিয়ে মেশে তেমনি সকল ধন তোমাতেই মেশে। (৪৫৪) হে ইন্দ্র, দেবদত্ত এই অন্নবল লাভ করে আমরা যেন সুবীর্যশালী হয়ে শত হেমন্ত আনন্দে ভোগ করতে পারি। (৪৫৫) মিত্র ও বরুণ জলবৃদ্ধিকারক; হে ইন্দ্র, তুমি আমাদের জন্য প্রচুর অন্ন উৎপন্ন কর। ইন্দ্র বিশ্বের রাজা।

দ্বাদশ খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।।
১।৩।৪।১০ ইন্দ্র, ২ সূর্য ৫ বিশ্বদেবগণ, ৬ মরুদ্‌গণ ৭ পবমান সোম, ৮ সবিতা, ৯ অগ্নি।।
ছন্দ ১।৩।৫।৭।৯ অত্যষ্টি (কোন কোন পুস্তকে ১ অষ্টি) ২।৪।৬ অতি জগতী, ৮।১০ অতিশক্করী (কোন কোন পুস্তকে ৮ অত্যষ্টি)।।
ঋষি ১।১০ গৃৎসমদ শৌনক, ২ গোউরাঙ্গিরস, ৩।৫।৯ পরুচ্ছেপ দৈবদাসি, ৪ রেভ কাশ্যপ, ৬ এবয়ামরুৎ আত্রেয়, ৭ অনানত পারুচ্ছেপি, ৯ নকুল।।
মন্ত্রঃ-
(৪৫৭) ত্রিকদ্রুকেষু, মহিষো যবাশিরং তুবিশুষ্মস্তৃম্পং সোমমপিবদ্বিষ্ণুনা সুতং যথাবশম্‌।
স ঈং মমাদ মহি কর্ম কর্তবে মহামুরুং সৈনং সশ্চদ্‌দেবো দেবং সত্যং ইন্দুঃ সত্যমিন্দ্রম্‌।।১।।
(৪৫৮) অয়ং সহস্রমানবো দৃশঃ কবীনাং মতির্জ্যোতির্বিধর্ম।
ব্রধ্নঃ সমীচীরূষসঃ সমৈরয়দরেপসঃ সচেতসঃ স্বসরে মন্যুমন্ত গোঃ।।২।।
(৪৫৯) এন্দ্র যাহ্যুপ নঃ পরাবতো নায়মচ্ছা বিদথানবি সৎপতিরস্তা রাজেব সৎপতিঃ।
হবামহে ত্বা প্রযস্বন্তঃ সুতেষ্বা পুত্রাসো ন পিতরং বাজসাতয়ে মংহিষ্ঠং বাজসাতয়ে।।৩।।
(৪৬০) তমিন্দ্রং জোহবীমি মঘবানমুগ্রং সত্রা দধানমপ্রতিষ্কুতং শ্রবাংসে ভুরি।
মংহিষ্ঠো গীর্ভিরা চ যজ্ঞিয়ো ববর্ত রায়ে নো বিশ্বা সুপথা কৃণোতু বজ্রী।।৪।।
(৪৬১) অস্তু শ্রৌষট্‌ পুরো অগ্নিং ধরা দধা আ নু ত্যচ্ছর্ধো দিব্যং বৃণীমহ ইন্দ্রবায়ূ বৃণীমহে।
যদ্ধ ক্রাণা বিবস্বতে নাভা সন্দায় নব্যসে।
অধ প্র নূনমুপযন্তি ধীতয়ো দেবাঁ অচ্ছ ন ধীতয়ঃ।।৫।।
(৪৬২) প্র বো মহে মতয়ো যন্তু বিষ্ণবে মরুত্বতে গিরিজা এবয়ামরুৎ।
প্র শর্ধায় প্র যজ্যবে সুখাদয়ে তবসে ভন্দদিষ্টয়ে ধুনিব্রতায় শবসে।।৬।।
(৪৬৩) অয়া রুচা হরিণ্যা পুনানো বিশ্বা দ্বাষাংসি ভরতি সয়ুগ্বভিঃ সুরো ন সযুগ্বভিঃ।
ধারা পৃষ্ঠস্য রোচতে পুনানো অরুষো হরিঃ।
বিশ্বা যদ্‌রূপা পরিয়াস্যৃভির্ঝকৃভিঃ।।৭।।
(৪৬৪) অভি তং দেবং সবিতারমোন্যোঃ।
কবিক্রতুমর্চামি সত্যসবং রত্নধামভি প্রিয়ং মতিম্‌।
ঊর্ধ্বা যস্যামতির্ভা অদিদ্যুতৎ সবীমনি হিরণ্যপাণিরমিমীত সুক্রতুঃ কৃপা স্বঃ।।৮।।
(৪৬৫) অগ্নি হোতারং মন্যে দাস্বন্তং বসোঃ সূনুং সহসো জাতবাদসং বিপ্রং ন জাতবেদসম্‌।
য ঊর্ধ্বয়া স্বধ্বরো দেবো দেবাচ্য কৃপা।
ঘৃতস্য বিভ্রাষ্টিমনু শুক্রোশোচিষ আজুহ্বনস্য সর্পিষঃ।।৯।।
(৪৬৬) তব ত্যং নর্ষং নৃতোহপ ইন্দ্র প্রথমং পূর্ব্যং দিবি প্রবাচ্যং কৃতম্‌।
যো দেবস্য শবস্য প্রারিণা অসু রিণন্নপঃ।
ভুবো বিশ্বমভ্যদেবমোজসা বিদেদূর্জং শতক্রতুর্বিদেদিষম্‌।।১০।।
অনুবাদঃ (৪৫৭) অতিবল মহান ইন্দ্র ইচ্ছানুযায়ী তিন যজ্ঞেই (বা তিন লোকেই) বিষ্ণুর সঙ্গে (=সূর্যের সঙ্গে) অভিষুত সোমপান করে তৃপ্ত হয়েছিলেন। সেই সোমই এই অতিব্যাপ্ত ইন্দ্রকে মহৎ কর্তব্যকর্ম সাধনে হর্ষান্বিত করেছিলেন। দীপ্ত সত্য সোম সত্য ইন্দ্রের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। (৪৫৮) সহস্রমানবের দর্শনীয়, কবিগণের বুদ্ধি ও জ্যোতিকে বিশেষরূপে ধারণকারী এই সূর্য পাপশূন্যা দীপ্তিমতী ঊষার সঙ্গে দিনের বেলায় সূর্যের সঙ্গে যুক্ত রশ্মিকে প্রেরণ করলেন (=রাত্রি অবসানে দিন আরম্ভে ঊষার সঙ্গে রশ্মিদের আগমন)। (৪৫৯) রাজা যেমন সজ্জনের পালক সেইরূপ ইন্দ্র শত্রুনাশের দ্বারা (=মেঘহননের দ্বারা) সকলজীবের পালনকর্তা; হে ইন্দ্র, তুমি দূর হতে নিজ নিজ কর্মে নিযুক্ত আমাদের কাছে এস; অন্নবান আমরা সকল যজ্ঞকর্মে মহান দাতা তোমাকে ধনদানের জন্য প্রার্থনা করি যেমন পুত্রগণ ধনের জন্য পিতার কাছে যাচ্‌ঞা করে। (৪৬০) সেই ধনবান উগ্রবল যজ্ঞকর্মের ধারক অপ্রতিহতগতি ইন্দ্রকে প্রচুর অন্নধনের জন্য আহবান করি; বজ্রধারী যজ্ঞযোগ্য পূজ্যতম ইন্দ্র আমাদের স্তুতির দ্বারা আবর্তিত হয় ধনদানে আমাদের সকল পথ কল্যাণযুক্ত করুন। (৪৬১) জ্ঞানবৃদ্ধির দ্বারা অগ্নিকে পুরোভাগে ধারণ করেছি; তিনি আমাদের কথা শুনুন; সেই দিব্য শক্তিকে বরণ করি; ইন্দ্র ও বায়ুকে বরণ করি। যেহেতু জগতের নাভিস্বরূপ সূর্যের উদ্দেশে এই নতুন স্তুতি স্বত-প্রণোদিতভাবে উচ্চারিত হচ্ছে সুতরাং দেবগণ (=রশ্মিগণ) যেমন ধারণশক্তির দ্বারা অন্য কর্মকে বহন করেন, তেমনি এই স্তুতিও নিশ্চয়ই ধীশক্তিসম্পন্ন দেবগণের কাছে পৌঁছাবে। (৪৬২) হে মরুদ্‌গণ্‌, বলশালী পূজনীয় সুখদাতা শীঘ্রগামী মেঘসঞ্চালনকারী স্তুতিপ্রিয় তোমাদের উদ্দেশে, মরুদ্‌যুক্ত (=প্রাণবায়ু সমন্বিত) বিষ্ণুর উদ্দেশে এই উত্তম স্তোত্রগান গমন করুক। (৪৬৩) সূর্য যেমন কিরণরাশির সহযোগে অন্ধকার নাশ করেন, সেরূপ এই শুদ্ধা শোভনা হরিৎবর্ণা সোমধারাসকল মিলিত হয়ে সকল হিংসাকে দূর করেছেন। সেই সোমধারার ঊর্ধ্বে দীপ্তিমান পবিত্র সূর্য উজ্জ্বল শোভা ধারণ করেন; তাঁর সেই বিশ্বরূপ সপ্তছন্দের দ্বারা ছন্দায়িত হয়ে তাঁকে বেষ্টন করে ভ্রমণ করে। (৪৩৬) দ্যুলোক ও পৃথিবী উভয়ের মধ্যে বর্তমান সবিতাদেব (=সূর্য); সেই সর্বকর্মে ব্যাপ্ত, সৎকর্মের প্রেরক, রমণীয় রত্ন ধারণকারী, সর্বজন প্রিয়, মননযোগ্য সবিতাদেবকে আমি অর্চনা করি। যার স্বপ্রকাশময়ী দীপ্তি গমনাভিমুখী হয়ে উদ্‌ভাসিত, যার অনুশাসনে জগৎ প্রবর্তিত, তিনি হিরণ্যহস্ত (=স্বর্ণবর্ণ কিরণ-যুক্ত) সুকর্মা, জলনির্মাণকারী আদিত্য সূর্য। (৪৬৫) আমিই সেই অগ্নিকে জানি যিনি দানাদিগুণযুক্ত, সকলের নিবাসের কারণ, বলের পুত্র (=বলের দ্বারা উৎপন্ন), জ্ঞানপ্রজ্ঞান, কৃতবিদ্য বিপ্রের মত প্রজ্ঞাবিশিষ্ট। সেই উজ্জ্বলশিখাযুক্ত ঘৃতযুক্ত অগ্নি গৃতাহূতির দ্বারা বেষ্টিত হয়ে ঊর্ধ্বগতির দ্বারা দেবগণের প্রতি হব্যবহনে সমর্থ হন। (৪৬৬) হে ইন্দ্র, প্রথমেই আকাশে তুমি মানুষের হিতকর যে বীরোচিত কর্ম পূর্ব-কালে সম্পাদন করেছিলে তা’ অত্যন্ত প্রশংসনীয় কার্য। তুমি প্রাণের কারণে নিরুদ্ধ জলকে দেবশক্তির দ্বারা (=রশ্মির বলের দ্বারা) মুক্ত করেছিলে, বলের দ্বারা পৃথিবী হতে সকল আদেবমায়াকে (অদেব=মেঘ) দূর করে জলপ্রদান করলে; হে শতকর্মা ইন্দ্র, (সেই জলের দ্বারা) অন্নকে প্রাপ্ত হলে।।

(C) https://www.ebanglalibrary.com
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।