০৫ জানুয়ারী ২০১৮

ঋগ্বেদ সংহিতা - প্রথম মণ্ডলঃবিভিন্ন ঋষিঃ সুক্তঃ ১৬-৩০

১৬ সুক্ত ।।
অনুবাদঃ
১। হে অভীষ্টবর্ষী ইন্দ্র! তোমার অশ্বগণ তোমাকে সোমপানাথে এ স্থানে নিয়ে আসুক; সুর্যের ন্যায় প্রকাশযুক্ত বাহকগণ তোমাকে নিয়ে আসুক।
২। যেন হরি নামক অশ্বদ্বয় এ ঘৃতস্রাবী ধান্যের নিকট সুখতম রথে ইন্দ্রকে নিয়ে আসে।
৩। প্রাতঃকালে ইন্দ্রকে আহ্বান করি, যজ্ঞ সম্পাদনকালে ইন্দ্রকে আহ্বান করি এবং যজ্ঞ সমাপন সময়ে সোমপানার্থে আমি ইন্দ্রকে আহ্বান করি।
৪। হে ইন্দ্র! কেশবযুক্ত অশ্বগণের সাথে তুমি আমাদরে অভিযুত সোমরস সমীপে এস; সোমরস অভিযুত হলে আমরা তোমাকে আহ্বান করি।
৫। হে ইন্দ্র! তুম আমাদের এ স্তুতি গ্রহণ করতে এস, হযহেতু যজ্ঞসবন অভিষত হয়েছে, তুষিত গৌর মৃগের ন্যায় পান কর।
৬। এ তাল সোমরস সমূহ আস্তীর্ণ কুণের উপর প্রচুর পরিমাণে অভিষুত হয়েছে; হে ইন্দ্র! বলের জন্য সে সোম পান কর।
৭। হে ইন্দ্র! এই স্তুতি শ্রেষ্ঠ, এ তোমার দয়স্পর্শী ও সৃখকব হোক; পরে অভিষৃত সোম পান কর।
৮। বত্রহা ইন্দ্র সোমপানার্থে ও হর্ষরা মিত্ত সকল অভিষৃত সবনে গমন করেন।
৯। হে শতক্র! গাভী ও অশ্বসমূহ দ্বাশ তুমি আমাদের অভিলাষ সর্বতোভাবে পূরণ কর; আমরা ধ্যানযুক্ত হয়ে তোমার স্তুতি করি।

HYMN XVI. Indra.

-





১৭ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। আমি সম্রাট ইন্দ্র ও বরুণের নিকট রক্ষণের জন্য যাচ্ঞা করি, এরূপে প্রার্থনা করলে তাঁরা উভয়ে আমাদরে সুখী করেন।
২। তোমরা সাদৃশ ঋত্বিকের রক্ষণার্থে আমার আহ্বান গ্রহণ কর; তোমরা মনুষ্যের অধিপতি।
৩। হে ইন্দ্র ও বরুণ। আমাদরে কামনা অনুসারে ধন দিয়ে আমাদরে তৃপ্ত কর; তোমরা সমীপে থাক এ ইচ্ছা করি।
৪। যেহেতু আমাদের যজ্ঞের হব্য মিশ্রিত হয়েছে এবং ঋত্বিকদের স্ত্রোত্রও মিশ্রিত, যেন আমরা যজ্ঞান্নদাতাদের মধ্যে মূখ্য হই।
৫। সহস্র ধনপ্রদদের মধ্যে ইন্দ্র ধনদাতা, স্তুতি ভাজনদের মধ্যে বরুণ স্তুত্য।
৬। তাঁদের রক্ষণদ্বারা আমরা ধন সম্ভোগ করি ও (ধন) সঞ্চয় করি এবং তদ্ব্যতীত প্রচুর ধন হোক।
৭। হে ইন্দ্র ও বরুণ! বিবিধ ধনের জন্য আমি তোমাদের আহ্বান করি, আমাদরে সম্যকরূপে জয়যুক্ত কর।
৮। হে ইন্দ্র ও বরুণ। আমাদরে বুদ্ধি তোমাদের সম্যক সেবা করতে ইচ্ছুক হয়েছে, আমাদরে শীঘ্র সুখ দান কর।
৯। হে ইন্দ্র ও বরুণ! যে স্তুতি দ্বারা আমি তোমাদের আহ্বান করছি। তোমাদের উভয়ের সম্বন্ধীয় যে স্তুতি তোমরা বর্ধন করেছ, যেন সে শোভনীয় স্তুতি তোমাদের প্রাপ্ত হয়।

HYMN XVII. Indra-Varuṇa






১৮ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে ব্রহ্মণস্পতি (১)! সোমরসদাতাকে (অর্থাৎ আমাকে) উশিজ পুত্র কক্ষীবানের (২) ন্যায় দেবগণের নিকট প্রসিদ্ধ কর।
২। যিনি ধনবান, রোগ হস্তা, ধনদাতা, পুষ্টিবর্ধক ও শীঘ্রফলপ্রদ, সে ব্রহ্মণস্পতি আমাদরে অনুগ্রহ করুন।
৩। উপদ্রবকারী মানুষের হিংসাযুক্ত নিন্দা আমাদের যেন স্পর্শ না করে, হে ব্রহ্মণস্পতি! আমাদের রক্ষা কর।
৪। যে মনুষ্যকে ইন্দ্র ও ব্রহ্মণস্পতি ও সোম বর্ধন করেন সে বীর বিনাশ প্রাপ্ত হয় না।
৫। হে ব্রহ্মণস্পতি! তুমিও সোম ও ইন্দ্র ও দক্ষিণা (৩) সে মানুষকে পাপ হতে রক্ষা কর।
৬। বিস্ময়কর, ইন্দ্রপ্রিয় কমনীয় ও ধনদাতা সদসস্পতির নিকট মেধাশক্তি যাচ্ঞা করছি।
৭। যার প্রসাদ ব্যতীত জ্ঞানবানেরও যজ্ঞ সিদ্ধ হয় না, সে সদসস্পতি আমাদের মানসিক প্রবৃত্তি সমূহের যোগ ব্যাপে আছেন।
৮। পরে তিনি হব্য সম্পাদক যজমানকে বর্ধন করেন, যজ্ঞ সম্যকরূপে সমাপন করেন, (তার প্রসাদে) আমাদরে স্তুতি দেবগণকে প্রাপ্ত হয়।
৯। বিক্রমশালী সুবিখ্যাত ও আকাশের ন্যায় প্রাপ্ততেজা নরাশংসকে (৪) আমি দেখেছি।

টীকাঃ
১। ১০ সুক্তের ১ ঋকের টীকায় ও ১৫ সুক্তের ৫ ঋকের টীকায় আমরা বলেছি ব্রহ্মা অর্থে স্তুতিকারী ঋত্বিক। ঋগ্বেদে ব্রহ্ম অর্থে স্তুতি বা প্রার্থনা। সায়ণ এ অর্থ করেছেন এবং ইউরোপীয় পণ্ডিতগণও ঐ অর্থ করেন। পণ্ডিতবর রোথ ব্রহ্ম শব্দের সাতটি অর্থ করেছেন, যথা প্রার্থনা, মন্ত্র, পবিত্রবাক্য, জ্ঞান, সততা, পরমাত্মা, এবং পুরোহিত। মক্ষমুলর বিবেচনা করেন বৃহ ধাতুর একটি অর্থ বর্ধন, আর একটি অর্থ বাক্য এবং ঐ ধাতু হতে বৃহস্পতি ও ব্রহ্মণস্পতি উৎপন্ন হয়েছে। Origin and Growth of Religion (1882)PP, 366, 367 note. ব্রক্ষণস্পতি বা বৃহস্পতি স্তুতিদেব।
২। মহাভারতে, মৎস্য পুরাণে ও বায়ুপুরাণে কক্ষীবানের গল্প আছে। ঋগ্বেদে কক্ষীবান একজন ঋষি, এ মন্ডলের ১১৫ হতে ১২৫ সুক্ত তাঁর রচিত। কলিঙ্গরাজ সন্তান আকাঙ্ক্ষায় তার রাণীকে দীর্ঘ তমা মুনির সঙ্গে সহবাসের আদেশ দিয়েছিলেন। রাণী স্বয়ং না গিয়ে দাসী উশিজকে পাঠিযে দিলেন। মুনি তা বুঝতে পারলেন, এবং উশিজের দ্বারা কক্ষীবান নামক সন্তান উৎপাদন করলেন। এ গল্পটি আধুনিক। প্রকৃত কক্ষীবান একজন বৈদিক ঋষি। এ ঋগ্বেদের প্রথম মন্ডলের ১৫৫ হতে ১২৫ সুক্তের ঋষি কক্ষীবান।
৩। যজ্ঞান্তে দানই দক্ষিণা, এখানে দেবী বলে আহুত হয়েছেন।
৪। অগ্নির নাম বিশেষ।

HYMN XVIII. Brahmaṇaspati.








১৯ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে অগ্নি! এই চারু যজ্ঞে সোমপানার্থে (১) তুমি আহুত হচ্ছ, অতএব মরুৎগণের সাথে এস।
২। হে অগ্নি! তুমি মহৎ তোমার যজ্ঞ উল্লঙ্ঘন করতে পারে এরূপ উৎকৃষ্টতর দেব বা মানুষ নেই, মরুৎগণের সাথে এস।
৩। হে অগ্নি! যে দ্যুতিমান ও হিংসারহিত মরুৎগণ মহাবৃষ্টি বর্ষণ করতে জানেন, সে মরুৎগণের সাথে এস।
৪। যে উগ্র ও অধৃষ্টবলসম্পন্ন মরুৎগণ জল বর্ষণ করেছিলেন (২) হে অগ্নি! সে মরুৎগণের সাথে এস।
৫। যারা শোভমান উগ্ররূপধারী, প্রভূতবলসম্পন্ন ও শত্রুবিনাশক, হে অগ্নি! সে মরুৎগণের সাথে এস।
৬। আকাশের উপরি দাপ্যমান, স্বর্গে যে দীপামান মরুতেরা বাস করেন, হে অগ্নি! সে মরুৎগণের সাথে এস।
৭। যারা মেঘ সমূহকে সঞ্চালন করেন, জলরাশি সমুদ্রকে উৎক্ষিপ্ত করেন, হে অগ্নি! সে মরুৎগণের সাথে এস।
৮। যারা সূর্যকিরণের সাথে (সমগ্র আকাশ) ব্যাপ্ত হন যারা বলদ্বারা সমদ্রকে উৎক্ষিপ্ত করেন, হে অগ্নি! সে মরুৎগণের সাথে এস।
৯। হে অগ্নি! তোমার প্রথম পানার্থে সোম মধু প্রদান করছি, হে অগ্নি! মরুৎগণের সাথে এস।

টীকাঃ
১। মুলে গোপীথায় আছে। সোমপানায়। সায়ণ। কিন্তু মক্ষমুলয় অনুবাদ করেছেন For a draught of milk
২। মুলে অর্কং আনৃচুঃ আছে। বর্ষণেন সম্পাদিতবহঃ সায়ণ। কিন্তু মক্ষমুলর অনুবাদ করেছেন Who sing their song.

HYMN XIX. Agni, Maruts.








২০ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। যে ঋভুগণ (১) জন্মগ্রহণ করেছিলেন যে দেবগণের উদ্দেশে মেধাবী ঋত্বিকগণ এ প্রভূত ধনপ্রদ স্তোত্র নিজ মুখে রচনা করেছেন।
২। আজ্ঞামাত্র যে হরি নামক অশ্বদ্বয় রথে সংযোজিত হয়, সে অশ্বদ্বয় ইন্দ্রের জন্য যারা মানসিক বলে সৃষ্টি করেছিলেন, সে ঋভুগণ গ্রহ চমসাদি উপকরণ দ্রব্যের সাথে আমাদরে যজ্ঞ ব্যেপে আছেন।
৩। তারা নাস্যত্যদ্বয়ের জন্য সর্বতোগামী ও সুখকর একখানি রথ নির্মাণ করেছিলেন এবং একটি ক্ষীরদোগ্ধ্রী গাভী উৎপন্ন করেছিলেন।
৪। ঋজুতাপ্রিয় ও সর্বকর্মে ব্যাপ্ত ঋভুগণের মন্ত্র বিফল হয় না; তারা পিতা মাতাকে পুনরায় যেৌবনসম্পন্ন করেছিলেন।
৫। হে ঋভুগণ! মরুৎগণ সমভিব্যাহারে ইন্দ্রের সাথে ও দীপ্যমান আদিতাদের সাথে তোমাদের একত্রে হর্ষদায়ক সোমরস প্রদান করা যায়।
৬। ত্বষ্টাদেবের নতুন সে চমস নি:শেষিত রূপে নির্মিত হয়েছিল, ঋভুগণ সে চমস পুনরায় চারখানি করেছিলেন।
৭। হে ঋভুগণ তোমরা আমাদরে শোভনীয় স্তুতি প্রাপ্ত হয়ে অভিষবকারীকে তিন গৃণ সপ্ত প্রকার রত্ন এক এক করে প্রদান কর।
৮। যজ্ঞের বাহক ঋভুগণ অবিনশ্বর আয়ুঃ ধারণ করেন; সুকৃতি দ্বারা দেবগণের মধ্যে যজ্ঞের ভাগ সেবন করেন।

টীকাঃ
১। ঋভবো হি মনুষ্যাঃ সন্তস্তপসা দেবত্বং প্রাপ্তাঃ। সায়ণ। অঙ্গিরার পুত্র সুধম্বা, তার ঋভু, বিভু ও বাজ নামে তিন পুত্র ছিল। তারা নিজ কর্মদ্বারা দেবত্ব লাভ করেছিলেন এবং সূর্যলোকে বাস করেন এরূপ আখ্যান। ১১০ সুক্তের ২ ও ৩ ঋক দেখুন।
প্রকৃত ঋভুগণকে? সায়ণ, ১১০ সুক্তের ৬ ঋকের ব্যাখ্যায় একটি বচন উদ্ধৃত করেছেন, যথা আদিত্যরশ্ময়োহপি ঋভব উচ্যন্তে। অর্থাৎ ঋভুগণ সূর্যরশ্মি।
গ্রীকদের মধ্যে গল্প আছে যে Orpheus নামক এক গায়কের স্ত্রীর কাল হলে তিনি তার গীত দ্বারা মৃত্যুরাজকে তুষ্ট করে স্ত্রীকে ফিরে পেলেন, কিন্তু পথে তিনি ঔৎসুক্যের সাথে স্ত্রীর দিকে চাইতে তার স্ত্রী পুনরায় অদৃশ্য হলেন। মক্ষমুলর বলেন Orpheus ঋভু বা অর্ভুর রূপান্তর মাত্র, এবং গল্পের মুল অর্থ এই যে সূর্য ঊষার দিকে চাইলেই অর্থাৎ উদয় হলেই ঊষা অদৃশ্য হয়ে যান। তিনি আরও বলেন ঊর্বষী ও পুরুরবার যে গল্প বেদে ও হিন্দু সাহিত্যে পাোয়া যায়, তারও এই মুল অর্থ ঊর্বষীর আদি অর্থ ঊষা।
২। ত্বষ্টা দেবগণের অস্ত্রাদি নির্মাতা, বিশ্বকর্মা। তিনি ইন্দ্রের বজ্য নির্মাণ করেন। ৩২ সুক্ত দেখুন। ঋভুগণ ত্বষ্টায় শিষ্য। সায়ণ।

HYMN XX. Ṛbhus.












২১ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। এ যজ্ঞে ইন্দ্র ও অপ্নিকে আহ্বান করছি, তাদের স্তোত্র কামনা করি, সে বহু, সোমপায়ীদ্বয় সোমপান করুন।
২। হে মনুষ্যগণ! সে ইন্দ্র ও অপ্নিকে এ যজ্ঞে প্রশংসা কর ও শোভিত কর। গায়ত্রীচ্ছন্দের মস্ত্রে তাদের উদ্দেশে গান কর।
৩। অনুষ্ঠাতার প্রশংসার জন্য আমরা ইন্দ্র ও অপ্নিকে আহ্বান করি, সে সোমপায়ীদ্বয়কে সোমপানার্থে আহ্বান করি।
৪। উগ্রদেবদ্বয়কে এ অভিষবযুক্ত যজ্ঞের সমীপে আহ্বান করি, ইন্দ্র ও অপিন এ যজ্ঞে আগমন করুন।
৫। সে মহৎ ও সভ্যপালক ইন্দ্র ও অপিন রাক্ষসজাতিকে ক্ররুতাশূন্য করুন, ভক্ষক রাক্ষসগণ সন্ততিশূন্য হোক।
৬। হে ইন্দ্র ও অপিন! এ যজ্ঞহেতু তোমরাচৈতন্যালোকে জাগরিত হও; আমাদরে সুখদান কর।

HYMN XXI. Indra-Agni




২২ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। প্রাত:কালে সংযুক্ত অশ্বিদ্বয়কে জাগরিত কর, তারা সোমপানার্থে এ যজ্ঞে আসুন।
২। যে দেব অশ্বিদ্বয় শোভনীয় রথযুক্ত, রথিশ্রেষ্ঠ ও স্বর্গবাসী, তাঁদের আহ্বান করি।
৩। হে অশ্বিদ্বয়! তোমাদের যে অশ্বস্বেদযুক্ত ও সুধনিযুক্ত চাবুক আছে তার সাথে এসে এ যজ্ঞ সোমরসে সিক্ত কর।
৪। হে অশ্বিদ্বয়! সোমদাতা যজমানের যে গৃহের দিকে রথে গমন করছ, সে গৃহ দূরে নহে।
৫। হিরণ্যপাণি সবিতাকে (১) আমি রক্ষণার্থে আহ্বান করি, সে দেব যজম দেব প্রাপ্য পদ জানিয়ে দেবেন।
৬। জলশোষক সবিতাকে রক্ষণার্থে স্তুতি কর; আমরা তাঁর যজ্ঞ কামনা করি।
৭। নিবাসহেতুভূত, বহুবিধ ধনের বিভক্তা ও মনুষদের প্রকাশকারী সবিতাকে আমরা আহ্বান করি।
৮। হে সখাগণ! চারদিকে উপবেশন কর, সবিতাকে আমাদরে শীঘ্র স্তুতি করতে হবে, ধনদাতা সবিতা শোভা পাচ্ছেন।
৯। হে অপিন! দেবগণের আকাঙ্ক্ষিণী পত্নীদের এ যজ্ঞে আন। ত্বষ্টাকে সোমপানার্থে সমীপে আন।
১০। হে অপ্নি! আমাদরে রক্ষার্থে দেবপত্নীদের এ যজ্ঞে আন। হে যবিষ্ঠ! হোত্রা, ভারতী ও বরণীয়া ধিষণাকে (২) আন।
১১। অচ্ছিন্নপক্ষা (৩) মনুষ্যপালয়িত্রী দেবীগণ রক্ষণ ও মহৎ সুখদান দ্বারা আমাদরে প্রতি প্রসন্না হোন।
১২। আমাদরে মঙ্গলের নিমিত্ত সোমপানার্থে ইন্দ্রাণী, বরণানী ও অপ্নায়ীকে আহ্বান করি।
১৩। মহৎ দৌ ও পৃথিবী (৪) আমাদরে এ যজ্ঞ রসে সিক্ত করুন এবং পুষ্টি দ্বারা আমাদের পুর্ণ করুন।
১৪। মেধাবীরা নিজ কর্মগুণে সে দৌ ও পৃথিবীর মধ্যে গন্ধর্বের নিবাস স্থানে অর্থাৎ অন্তরীক্ষে ঘৃতবৎ জল লেহনকরেন।
১৫। হে পৃথিবী! বিস্তীর্ণ, কন্টকরহিতা ও নিবাসভূতা হও; আমাদরে প্রচুর সুখ দাও।
১৬। বিষ্ণু (৫) সপ্তকিরণের সাথে যে ভুপ্রদেশ হতে পরিক্রমা করেছিলেন, সে প্রদেশ হতে দেবগণ আমাদরে রক্ষা করুন।
১৭। বিষ্ণু এ জগৎ পরিক্রমা করেছিলেন, তিন প্রকার পদবিক্ষেপ করেছিলেন, তাঁর ধুলিযুক্ত পদে জগৎ আবৃত হয়েছিল।
১৮। বিষ্ণু রক্ষত, তাকে কেহ আঘাত করতে পারে না, তিনি ধর্ম সমুদয় ধারণ করে তিন পদ পরিক্রমা করেছিলেন।
১৯। বিস্ণুর যে কর্মবলে যজমান ব্রত সমুদয় অনুষ্ঠান করেন, সে কর্ম সকল অবলোকন কর। বিষ্ণু ইন্দ্রের উপযুক্ত সখ্যা।
২০। আকাশে সর্বতো বিচারী যে চক্ষু যেরূপ দৃষ্টি করে, বিদ্বানেরা বিষ্ণুর পরমপদ সেরুপ দৃষ্টি করেন।
২১। স্তুতিবাদক ও সদাজাগরুক মেধাবী লোকেরা যে বিষ্ণুয় পরমপদ প্রদীপ্ত করেন।

টীকাঃ
১। সূর্য আদিম আর্যদের উপাস্য দেব ছিলেন, সুতরাং সেই আর্য জাতির ভিন্ন ভিন্ন শাখায় তার উপাসনা দেখতে পাওয়া যায়। গ্রীকদের Helios শব্দ সূর্য শব্দের রূপান্তর মাত্র, এবং গ্রীকদের যে Helenes বলত তার আদি অর্থ সূর্য বংশীয়। লাটিনদের Sol ও টিউটনদের Tyr ও সূর্য শব্দের রূপান্তর মাত্র। প্রাচীন ইরাণীয়দের খোর সেদ ও সূর্যের রূপান্তর মাত্র। উপরি উক্ত ঋকে সবিতা বা সূর্যকে হিরণ্যপাণি বলে বর্ণনা করেছে। সায়ণ তার এরূপ অর্থ করেছেনঃ যজমানায় দাতুং হস্তে সুবর্ণধারিণং। আবার সূর্যের বাহুই সুবর্ণগঠিত এরূপ আখ্যান আছে। এ আখ্যানের প্রকৃত কারণ অনুভব করা সহজ। স্বর্ণের ন্যায় কিরণসম্পন্ন সূর্যকে প্রথম কবিগণ উপমাচ্ছলে সুবর্ণপাণি বলত, ক্রমে লোকে এ উপমাটি ভুলে গেল, এবং সুন্দর কল্পনাগঠিত বিশেষণ হতে একটি আখ্যান সৃষ্ট হল! কেবল আমরাই যে মুল উপমা ভুলে একটি আখ্যান সৃষ্টি করেছি তা নয়, জার্মান জাতিদের মধ্যেও সেরূপ ঘটেছিল। তবে আমাদের পুরোহিতরা যজ্ঞে সূর্যের হস্ত বিনাশের গল্পসৃষ্টি করলেন, মৃগয়াপ্রিয় জার্মানগণ কল্পনা করলেন যে তাদের Tyr দেব ব্যাঘ্রের মুখে হস্ত স্থাপন করায় ব্যাস সে হস্ত দংশন করে ফেলে। See Max Muller’s Science of Language. সূর্য ও সবিতা সম্বন্ধে আমাদরে আর একটি কথা বলবার আছে। যাস্ক বলেন আকাশ হতে যখন অন্ধকার যায়, কিরণ বিস্তুত হয়, সেই সবিতার কাল। সায়ণ বলেন সূর্যের উদয়ের পূর্বে যে মুর্তি তাই সবিতা, উদয় হতে অস্ত পর্যন্ত যে মুর্তি সেই সূর্য।
২। হোত্রাং হোমনিষ্পাদকাগ্নিপত্নীং। সায়ণ। ভারতীং ভরতনামকস্য আদিত্যস্য পত্নীং। সায়ণ। বরুত্রীং বরণীয়াং ধিষণং বাপ্দেবীং। সায়ণ।
৩। নহি পক্ষিরপাণাং দেবপত্নীনাং পক্ষাঃ কেনচিং ছিন্দ্যন্তে। সায়ণ।
৪। মুলে দ্যৌঃ পৃথিবী চ আছে। দ্যৌঃ আর্যদের প্রাচীন আকাশ দেব। গ্রীকদের Zeus, লাটিনদের Ju (-piter), জার্মানদের Tiu ও Zio, এই দ্যু শব্দের রূপান্তর মাত্র। দ্যৌঃ ও পৃথিবী অনেক দেবের পিতামাতা স্বরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৫। এ স্থান হতে ক্রমান্বয়ে ৬ ঋকে বিষ্ণুর উপাসনা আছে। বেদে উল্লিখিত বিষ্ণুকে? তার তিন প্রকার পদবিক্ষেপ কি? যাস্ক বলেন, যদিদং কিঞ্চ তদ্বিক্রমতে কবষ্ণুঃ। ত্রিধা নিধত্তে পদং। ত্রেধাভাবায় পৃথিব্যাং অন্তরীক্ষে দিবি ইতি শাকপুণিঃ। সমারোহণে বিষ্ণুপদে গয়শিরসি ইতি ঔর্ণবাভঃ। নিরুক্ত ১২।১৯টীকাকার দূর্গাচার্য বলেন, বিষ্ণুরাদিত্যঃ। কথামিতি যত আহত্রেধা নিদধে পদং নিধত্তে পদং নিধানং পদৈঃ। তৎ তাবৎ। পৃথিব্যাং অন্তরীক্ষে দিবি ইতি শাকপুণিঃ। পার্থিবোহগ্নির্ভূত্বা পৃথিব্যাং যৎকিঞ্চিদস্তি তদ্বিক্রমতে তদধিতিষ্ঠিতি। অন্তরীক্ষে বৈদ্যুতাত্মনা। দিবি সূর্যাত্মনা। যদুক্তং তমুঅক্সিম্বন ত্রেধা ভুবে কমিতি। সমারোহণে উদয়গরৌ ইতি ঔর্ণবাভ আচার্য্যো মন্যতে। অতএব স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, সূর্যের উদয়গিরিতে আরোহণ, মধ্য আকাশে স্থিতি এবং অস্তাচলে অন্তগমন, এ তিনটি বিষ্ণুর পদ বিক্ষেপ বলে বণিত হয়েছে। এ উপমা হতে পরে পরে কত পৌরাণিক গল্পের সৃষ্টি হয়েছে।

HYMN XXII. Aśvins and Others








২৩ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে বায়ু! এ তীব্র ও সুপাক বিশিষ্ট সোমরস সমূহ অভিষুত হয়েছে, তুমি এস; সে সোমরস আনীত হয়ছে, পান কর।
২। আকাশবাসী ইন্দ্র ও বায়ু উভয় দেবকে এ সোমপানার্থে আমি আহ্বান করি।
৩। যজ্ঞপালক ইন্দ্র ও বায়ু মনের ন্যায় বেগসম্পন্ন ও সহস্রাক্ষ (১) মেধাবী লোকে রক্ষণার্থে তাদের আহ্বান করেন।
৪। মিত্র ও বরুণ শুদ্ধবল ও যজ্ঞদেশে প্রাদুর্ভূত হন, আমরা তাদের সোমপানার্থে আহ্বান করি।
৫। যে মিত্র ও বরুণ সত্য দ্বারা যজ্ঞ বৃষদ্ধ করেন ও যজ্ঞের জ্যোতি পালন করেন, তাদের আমি আহ্বান করি।
৬। বরুণ ও মিত্র সকল প্রকার রক্ষণ কার্যদ্বারা আমাদের রক্ষা করুন, তারা আমাদরে প্রভূত ধনযুক্ত করুন।
৭। মরুদগণের সাথে ইন্দ্রকে সোমপানার্থে আহ্বান করি, তিনি মরুৎগণের সাথে তৃপ্ত হোন।
৮। হে দেব মরুৎগণ! ইন্দ্র তোমাদের মুখ্য, পুষা (২) তোমাদের দাতা, আমার আহগ্বান সকলে শ্রবণ কর।
৯। হে দানশীল। মরুৎগণ। বলবান ও তোমাদের সহায়ভূত ইন্দ্রের সাথে শত্রুকে বিনাশ কর, যেন সে দুমুখ আমাদের উপর আধিপত্য না পায়।
১০। সমস্ত মরুৎ দেবগণকে সোমপানার্থে আহ্বান করি, তাঁরা উগ্র ও পৃষ্নির (৩) সন্তান।
১১। হে নেতৃগণ? যখন তোমরা শোভনীয় (যজ্ঞকার্য) প্রাপ্ত হও, তখন বিজয়ীদের নাদের ন্যায় মরুৎগণের সদর্প রব আসে।
১২। দীপ্তিকর বিদ্যুৎ হতে উৎপন্ন মরুৎগণ আমাদের রক্ষা করুন ও সুখী করুন।
১৩। হে দীপ্তিযুক্ত শীঘ্রগামী পুষা! পশু হারিয়ে গেলে লোকে যেরূপ তাকে (অন্বেষণ করে) আনে, তুমি সেরূপ আকাশ হতে বিচিত্র কুশসংযুক্ত যজ্ঞ ধারক সোম আন।
১৪। দীপ্তিযুক্ত পূষা গুহাস্থিত ও লুক্কায়িত বিচিত্র কুশসংযুক্ত দীপ্যমান সোম পেলেন।
১৫। এবং সে পূষা আমার জন্য সোমের সাথে ছয়্ঋতু ক্রমান্বয়ে বার বার এনেছিলেন, কৃষক যেরূপ গরু দ্বারা বার বার যব চাষ করে।
১৬।আমরা যজ্ঞ কামনা করি, আমাদরে মাতৃস্থানীয় জল যজ্ঞ পথ দিয়ে যাচ্ছে; সে জল আমাদের হিতকারী বন্ধু এবং দুগ্ধকে মিষ্ট করছে।
১৭। এই যে সমস্ত জল সূর্যের সমীপে আছে, অথবা সূর্য যে সমস্ত জলের সাথে আছেন, সে সমস্ত জল আমাদরে যজ্ঞ প্রীতিকর করুক।
১৮। যে জল আমাদের গাভী সকল পান করে, সে জলদেবীকে আহ্বান করি। যে জল নদীরূপে বয়ে যাচ্ছে, তাদের হব্য দেওয়া কর্তব্য।
১৯। জলের ভিতর অমৃত আছে, জলে ঔষধ আছে, হে ঋষিগণ! সে জলের প্রশংসায় উৎসাহী হও।
২০। সোম আমাকে বলেছেন জলের মধ্যে সকল ঔষধি আছে এবং জগতের সুখকর অগ্নি আছে, এবং সকল প্রকার ভেষজ আছে।
২১। হে জল! আমার শরীরের জন্য রোগ নিবারক ঔষধি পরিপুষ্ট কর, যেন আমরা বহুকাল সূর্যকে দেখতে পাই।
২২। আমাতে যা কিছু দুষ্কৃত আছে, আমি যে কিছু অন্যায়াচরণ করেছি, আমি যে শাপ দিয়েছি, আমি যে অসত্য বলেছি, হে জল! সে সমস্ত ধৌত কর।
২৩। অদ্য স্মান হেতু জলে প্রবেশ করছি, জলরসে সঙ্গত হয়েছি; হে জলস্থিত অগ্নি! এস, আমাকে তেজ:পূর্ণ কর।
২৪। হে অগ্নি! আমাকে তেজ ও সন্ততি ও পরমায়ু দান কর; যেন দেবগণ আমার (অনুষ্ঠান) জানতে পারেন, যেন ইন্দ্র ও ঋষিগণ জানতে পারেন।

টীকাঃ
১। যদিও উভয় বিশেষণই উভয় দেব সম্বন্ধে প্রয়োগ হয়েছে, তথাপি মনের ন্যায় বেগসম্পন্ন বায়ুর সম্বন্ধে ও সহস্রাক্ষ ইন্দ্রের সম্বন্ধে খাটে। ইন্দ্রকে সহস্রাক্ষ বলে কেন? আকাশ বিস্তীর্ণ, অথবা বহুনক্ষত্র বিভূষিত, এ জন্য তাঁকে সহস্রাক্ষ বলা হয়েছে। এ উপমা হতে ইন্দ্রের সহস্রাক্ষ সম্বন্ধীয় পৌরাণিক আখ্যান সৃষ্ট হয়।
২। পুষা সম্বন্ধে ৪২ সূক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।
৩। পৃশ্মি অর্থ নানা বর্ণযুক্ত। নানা বর্ণযুক্তা মরুৎগণের মাতা কে? সায়ণের মতে পৃশ্মি অর্থ পৃথিবী। কিন্তু নিঘন্টু নামক প্রাচীন সংস্কৃত অভিধানে পৃশ্মি অর্থে আকাশ। রোথ প্রভৃতি ইউরোপীয় পন্ডিতগণ পৃশ্মি অর্থে শমঘ করেছেন।

HYMN XXIII. Vāyu and Others.










২৪ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। দেবগণের মধ্যে কোন শ্রেণীর কোন দেবের চারু নাম উচ্চারণ করব? কে আমাকে এ মহতী পৃথিবীতে আবার ছেড়ে দেবেন? (১) যে আমি পিতা ও মাতাকে দর্শন করতে পারি?
২। দেবগণের মধ্যে প্রথম অগ্নিদেবের চারুনাম উচ্চারণ করি; তিনি আমাকে এ মহতী পৃথিবীতে ছেড়ে দিন, যেন আমি পিতাকে ও মাতাকে দর্শন করতে পারি।
৩। হে সদা রক্ষণশীল সবিতা! তুমি বরণীয় ধনের ঈশ্বর, তোমার নিকট সম্ভোগযোগ্য ধন যাচ্ঞা করি।
৪। যে প্রশংসিত, অনিন্দিত, দ্বেষরহিত, ও সম্ভোগযোগ্য ধন তুমি হস্তদ্বয়ের ধারণ করে আছ।
৫। হে সবিতা! তুমি ধনযুক্ত, তোমার বরণে দ্বারা ধনের উৎকর্ষ লাভ করতে ব্যাপৃত থাকি।
৬। হে বরুণ! এ উড্ডীয়মান পক্ষিগণ তোমার ন্যায় বল, তোমার ন্যায় পরাক্রম, তোমার ন্যায় ক্রোধ প্রাপ্ত হয়নি; এ অনিমিষ-বিচারী জল ও বায়ুর গতি তোমার বেগ অতিক্রম করে না।
৭। বিশুদ্ধবল রাজা বরুণ মুলরহিত অন্তরীক্ষ থেকে বর্ণনীয় তেজ:পূঞ্জ ঊর্ধে ধারণ করেন; সে রশ্মিপূঞ্জ অধোমুখ, কিন্তু তাদের মুল ঊর্ধ্বে তদ্বারা যেন আমাদের মধ্যে প্রাণ নিহিত থাকে।
৮। রাজা বরুণ সূর্যের ক্রমান্বয়ে গমনার্থে পথ বিস্তীর্ণ করেছেন; পদরহিত অন্তরীক্ষে সুর্যের পদবিক্ষেপের জন্য পথ করেছেন; তিনি আমার হৃদয়বিদ্ধকারী শত্রুকে তিরস্কার করুন।
৯। হে বরুণরাজ! তোমার শত ও সহস্র ঔষধি আছে, তোমার সুমতি বিস্তীর্ণ ও গভীর হোক; নিঋরইতকে (২) পরাম্মুখ করে রাখ, আমাদের কৃত পাপ হতে আমাদের মুক্ত কর।
১০। ঐ যে সপ্তর্ষি নক্ষত্র (৩) যা উচ্চে স্থাপিত আছে এবং রাতে দৃষ্ট হয়, দিনে কোথায় চলে যায়? বরুণের সর্মসমূহ অপ্রতিহত, তাঁর আজ্ঞায় রাত্রে চন্দ্র দীপামান হয়।
১১। আমি স্ত্রোত্র দ্বারা স্তব করে তোমার নিকট সে পরমায়ু যাচ্ঞা করি, যজমান হব্যদ্বারা তাই প্রার্থনা করে। হে বরুণ! তুমি এ বিষয়ে অনাদর না করে মনোযোগ কর, তুমি বহুলোকের স্তুতিভাজন, আমার আয়ু নিও না।
১২। রাতে ও দিনে লোকে আমাকে এই বলেছে, আমার হৃদয়স্থ জ্ঞানও এরূপ প্রকাশ করছে, আবদ্ধ হয়ে শুন:শেপ যে বরুণকে আহ্বান করছে, সে রাজা আমাদের মুক্তি দান করুন।
১৩। শুন:শেপ ধৃত হয়ে ও তিন পদ কাষ্ঠে বন্ধ হয়ে অদিতির পুত্র বরুণকে আহ্বান করেছিল; অতএব বিদ্বান ও অহিংসিত বরুণ তাকে মুক্তি দিন, তার বন্ধন মোচনকরে দিন।
১৪। বরুণ নমস্কার করে তোমার ক্রোধ অপনয়ন করি, যজ্ঞের হব্যদান করে তোমার ক্রাধ অপনয়ন করি। হে অসুব (৪)! হে প্রচেত:! হে রাজন! আমাদের কৃত পাপ শিথিল কর।
১৫। হে বরুণ! আমার উপরের পাশ উপর দিয়ে খুলে দাও, আমার নীচের পাশ নীচে দিয়ে খুলে দাও, মধ্যের পাশ খুলে শিথিল করে দাও। তৎপরে হে অদিতিপুত্র! আমরা তোমার রত খন্ডন না করে পাপরহিত হয়ে থাকব।

টীকাঃ
১। শুন:শেপকে বলি দেবার কথা ঐতরেয় ব্রাহ্মণ, রামায়ণ ও পুরাণাদি অনেক গ্রন্থে পাওয়া যায়। কিন্তু ঋগ্বেদে শুন:শেপকে বলি দেবে এরূপ কথা কি স্পষ্ট করে লেখা আছে? নরবলি প্রথা কি প্রচলিত ছিল? ঋগ্বেদের অন্য কোনও স্থানে নরবলির স্পষ্ট উল্লেখ নেই, শুন:শেপের এ চতুবিংশ সুক্তেও তাকেঁ বলি দেবার স্পষ্ট কোন কথা নেই। অতএব পন্ডিতবর রোসেন বিবেচনা করেন নরবলি ছিল না। পন্ডিতাগ্রহন্যরাজেন্দ্রলাল মিত্র বিবেচনাকরেন নরবলি প্রথা প্রচলিত ছিল। ঋগ্বেদের সময় নরবলি প্রথা ছিল আমাদের বোধ হয় না, কেন না যে গ্রন্থে সোম অভিষবের ও ঘৃত অভিষবের কথা শত বার বলা হয়েছে, নরবলি প্রথা সে সময়ে প্রচলিত থাকলে সে গ্রন্থে তার বিশেষ উল্লেখ নেই কেন?
২। মুলে নিঋতিং াছে। অস্মদনিষ্টকারিণীং নিঋতিং পাপদেবতাং। সায়ণ। ঋত অর্থ নিয়ম বা সত্য বা যজ্ঞ। নিঋরইত অর্থে অনিয়ম বা অসত্য বা পাপ। তা হতে পাপ দেবীর নাম নিঋরইত হল। Nirriti was concived, it would seem, as going away from the path of right, the German Vergehen. Nirriti has personified as a power of evil or destruction. Max Muller’s Rig Veda, vol. 1.
৩। ঋক্ষাঃ মূলে আছে। ঋক্ষাঃ সপ্ত ঋষয়ঃ! যদ্বা ঋক্ষাঃ সর্বেহপি নক্ষত্র বিশেষাঃ সায়ণ। সপ্তর্ষি নক্ষত্রকে ঋক (ভল্লুক) এবং ইউরোপীয় ভাষায় Great bear বলে কেন? এর একটি অতি রহস্যজনক কারণ আছে। ঋচ বা অর্চ ধাতুর অর্থ উজ্জ্বল হওয়া বা অর্চন করা। উজ্জ্বল হওয়া অর্থে এ ধাতু হতে উজ্জ্বল লোমধারী ভাল্লুকের নাম ঋক্ষ হয়। কালক্রমে লোকে ঋক শব্দের নক্ষত্র অর্থটি ভুলে গেল, এবং যে সপ্তর্ষি নক্ষত্রকে কক্ষ বলত, তার অর্থ ভল্লুক নক্ষত্র করল। Riksha is the sense of bright has become the name of the bear, so called either from his bright eyes or from his brilliant tawny fur…The same name in the sense of the bright ones had been applied by the Vedic poets to the stars in general, and more particularly to that constellation which in northern parts of India was most prominent…And thus it happened that when the Geeks had left their central home and settled in Europe, they retained the name of Arktos for the same unchanging starts… Thus the name of the Arctic regions rests on a misunderstanding of a name framed thousands of years ago in central Asia; and the surprise with which many a thoughtful observer has looked at these seven bright stars, wondering why they were overcalled the Bear, is removed by a reference to the early annals of human speech. Max Muller’s Science of Language.
৪। অস ধাতু অর্থ ক্ষেপণ, অতএব, সায়ণ অসুর অর্থ অনিষ্ট ক্ষেপণশীল করেছেন। কিন্তু বরুণকে অসুর বলবার এ অপেক্ষা গুঢ় কারণ আছে। আদিম আর্যগণ উপাস্যদেবকে অসুর বা দেব বলতেন। পরে সে আর্যদের মধ্যে একটি বিবাদ ও বিচ্ছেদ হয়ে দুটি দল হল এবং এক দলের রোক অন্য দলের উপাস্যদের নিন্দা করতে লাগল। সে দুই দলের এক দল ভারতবর্ষে এলেন, তাঁরা প্রাচীন হিন্দুর অন্য দলে প্রাচীন ইরানীয়। ইরানীয়গণ উপাস্যদেব সাধারণ নাম অসুর দিলেন এবং হিন্দুদের উপাস্য দেবগণকে নিন্দা করতে লাগলেন। এবং হিন্দুগণ উপাস্যদের নাম দেব দিলেন এবং ইরানীয়দের উপাস্য অসুরদের নিন্দা করতে লাগলেন। ৫৪ সুক্তের ৩ ঋকের টীকা দেখুন।

HYMN XXIV. Varuṇa and Others



২৫ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। যেমন লোকে ভ্রম করে, সেরুপ আমরাও দিনে দিনে তোমার রত সাধনে ভ্রম করে থাকি।
২। হে বরুণ! অনাদর করে হননকারী হয়ে তুমি আমাদরে বধ কর না, ক্রুদ্ধ হয়ে আমাদের উপর ক্রোধ প্রকাশ কর না।
৩। হে বরুণ! রথস্বামী যেরূপ শ্রান্ত অশ্বকে (পরিতৃপ্ত করে), আমরা সুখের জন্য সেরূপ স্তুতিদ্বারা তোমার মন প্রসন্ন করি।
৪। পক্ষিগণ যেরূপ নিবাস স্থানের দিকে ধাবমান হয়, আমার ক্রোধরহিত চিন্তা সমূহ সেরূপ ধন প্রাপ্তির জন্য ধাবিত হচ্ছে।
৫। বরুণ বলবান, নেতা ও বহু লোককে দর্শন করেন, কবে আমরা সুখের জন্য তাকে (এ যজ্ঞে) আনতে পারব?
৬। যজ্ঞানুষ্ঠাতা হবাদাতার প্রতি প্রসন্ন হরে (মিত্র ও বরুণ) এ সাধারণ হব্য গ্রহণ করছেন, অগ্রাহ্য করেন না।
৭। যিনি অন্তরীক্ষগামী পক্ষীদের পথ জানেন, যিনি সমুদ্রে নেৌকা সমূহের পথ জানেন।
৮। যিনি ধৃতব্রত হয়ে স্ব স্ব ফলাৎপাদী দ্বাদশ মাস জানেন এবং যে ত্রয়োদশ মাস উৎপন্ন হয় (১) তাও জানেন।
৯। যিনি বিস্তীর্ণ, কমনীয় ও মহৎ বায়ুর পথ জানেন, উপরে যারা বাস করেন তাদেরও জানেন।
১০। ধৃতব্রত ও শোভনকর্মা বরুণ স্বর্গীয় সন্তুতিদের মদ্যে সাম্রাজ্যসিদ্ধির জন্য এসে উপবেশন করেছেন।
১১। জ্ঞানবান লোকে তার প্রসাদে সকল অদ্ভূত ঘটনা, যা সম্পাদিন হয়েছে বা হবে, সমস্তই দেখতে পান।
১২। সে শোভনকর্মা অদিতিপুত্র আমাদের সকল দিনই সুপথগামী করুন, আমাদের আয়ু বর্ধন করুন।
১৩। বরুণ সুবর্ণের পরিচ্ছদ ধারণ করে আপন পৃষ্ট শরীর আচ্ছাদন করেন, হিরণ্যস্পশী রশ্মি চারদিকে বিস্তুত হয়।
১৪। বৈরিগণ যার প্রতি বৈরতা করতে পারে না, মনুষ্য পীড়কগণ যাকে পীড়া দিতে পার না, পাপীরা যে দেবের প্রতি পাপাচারণ করতে পারে না।
১৫। যিনি মানুষের জন্য, আমাদের উদরের জন্য যথেষ্ট অন্ন প্রস্তুত করেছেন।
১৬। বরুণ বহুলোক দ্বারা দৃষ্ট; গাভী যেরূপ গোষ্ঠের দিকে যাব আমার চিন্তা নিবত্তিরহিত হয়ে তার দিকে যাচ্ছে।
১৭। হে বরুণ! যেহেতু আমার মধুর হব্য প্রস্তুত হয়েছে, হোতার ন্যায় তুমি সে প্রিয় হব্য ভক্ষণ কর; পরে আমরা উভয়ে আলাপ করব।
১৮। সকলের দর্শনীয় বরুণকে আমি দেখেছি, ভূমিতে তার রথ বিশেষ করে দেখেছি, আমার স্তুতি তিনি গ্রহণ করেছেন।
১৯। হে বরুণ! আমার এ আহ্বান শ্রবণ কর, অদ্য আমাকে সুখী কর, তোমায় রক্ষণাকাঙ্ক্ষী হয়ে আমি ডাকছি।
২০। হে মেধাবী বরুণ! তুমি দ্যুলোকে, ভূলোকে ও সমস্ত জগতে দীপ্যমান রয়েছে আমাদের ক্ষেমপ্রাপ্তির জন্য প্রার্থনা শ্রবণানন্তর তুমি উত্তর দান কর।
২১। আমাদের উপরের পাশ উপর দিয়ে খুলে দাও, মধ্যের পাশ খুলে দাও, নীচের পাশ খুলে দাও, যেন আমরা জীবিত থাকি।

টীকাঃ
১। সূর্যের চতুর্দিকে পৃথিবীর গতিদ্বারা যে বৎসর গণনা করা যায়, দ্বাদশ অমাবস্যা গণনা করলে তা অপেক্ষা কয়েকদিন কম হয়ে পড়ে; এজন্য সৌরবৎসর ও চান্দ্রবৎসরের মধ্যে ঐক্য বিধান করবার জন্য চান্দ্রবৎসরের প্রতি তৃতীয় বৎসরে একটি অধিক মাস, (মলিলচ বা মলমাস) ধরতে হয়। এ ঋক হতে প্রতীয়মান হয় যে প্রাচীন বৈদিক হিন্দুগণ উভয় বৎসরের গননা জানতেন এবং উভয় বৎসরের মধ্যে ঐক্য বিধান করতেও জানতেন।



HYMN XXV. Varuṇa.







২৬ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে যজ্ঞভাজন অন্নপালক অগ্নি! স্বকীয় তেজ গ্রহণ কর, আমাদের এ যজ্ঞ সম্পাদন কর।
২। হে অগ্নি! তুমি সর্বদা যবিষ্ঠ, বরণীয় ও তেজ:সম্পন্ন, আমাদের হোমনিষ্পাদক হয়ে, দীপ্তিমান বাক্যদ্বারা স্তুত হয়ে উপবেশন কর।
৩। হে বরণীয় অগ্নি! পিতা পুত্রের প্রতি যেরূপ বন্ধু বন্ধুর প্রতি যেরূপ, সখা সখার প্রতি যেরূপ, তুমি আমার প্রতি সেরূপ দানশীল হও।
৪। শত্রু বিনাশক বরুণ, মিত্র ও অর্যমা যেরূপ মনুর যজ্ঞ ্উপবেশন করেছিলেন, সেরূপ আমাদের যজ্ঞের কুশে উপবেশন করুন।
৫। হে পুরাতন হোমনিষ্পাদক! আমাদের এ যজ্ঞে ও মিত্রতায় তুমি হৃষ্ট হও, এ স্তুতি বাক্য শ্রবণ কর।
৬ নিত্য বিস্তীর্ণ হব্য দ্বারা অন্যান্য দেবকে আমরা যে যজ্ঞ করি সে হব্য তোমাকেই প্রদত্ত হয়।
৭। সর্ব প্রজ্যপালক, হোমনিষ্পাদক, হর্ষযুক্ত ও বরণীয় অগ্নি আমাদের প্রিয় হোন, আমরাও যেন শোভনীয় অগ্নিযুক্ত হয়ে তোমার প্রিয় হই।
৮। যেহেতু শোভনীয় অগ্নিযুক্ত দীপ্যমান দেবগণ আমাদের বরণীয় হব্য ধারণ করেছেন, অতএব আমরা শোভনীয় অগ্নিহুক্ত হয়ে যাচ্ঞা করি।
৯। হে অগ্নি! তুমি অমর, আমরা মর্ত্যের মানুষ, এস আমরা পরস্পর প্রশংসা করি।
১০। হে বলের পুত্র অগ্নি! তুমি সমস্ত অগ্নিসমূহের সাথে এ যজ্ঞ ও স্তোত্র গ্রহণ করে অন্ন প্রদান কর।



HYMN XXVI. Agni.







২৭ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। হে অগ্নি তুমি পুচ্ছযুক্ত অম্বসদৃশ এবং যজ্ঞের সম্রাট; আমরা স্তুতি দ্বারা তোমার বন্দনা করতে (প্রবৃত্ত হয়েছি)।
২। অগ্নি বলের পুর পৃথুগমন, তিনি আমাদরে প্রতি প্রসন্ন হোন, আমাদের অভিীষ্ট, বস্তু বর্ণণ করুন।
৩। হে সর্বত্রগামী অগ্নি! তুমি দূরে ও আসন্ন দেশে পাপাচারী মানুষ হতে আমাদের সর্বদা রক্ষা কর।
৪। হে অগ্নি! তুমি আমাদের এ হব্যের কথা এবং নূতন গায়ত্রীিচ্ছন্দে রচিত স্তোত্র দেবগণের নিকটে বলো।
৫। পরম অন্ন ও মধ্যম অন্ন আমাদের প্রদান কর, অন্তিকস্থ ধন প্রদান কর।
৬। হে বিচিত্ররশ্মি অগ্নি! সিন্ধুর সমীপে উর্মির ন্যায় তুমি ধনের বিভাগ কর্তা, হব্যদাতাকে তুমি সদ্য:কর্মফল বর্ষণ কর।
৭। হে অগ্নি! সংগ্রামে তুমি যে মনুষ্যকে রক্ষা কর, যাকে তুমি সংগ্রামে প্রেরণ কর, সে নিত্য অন্ন লাভ করবে।
৮। হে শত্রুপরাজয়ী অগ্নি! তোমার ভক্তকে কেউ আক্রমণ করতে পারে না, কেন না তার প্রসিদ্ধ বল আছে।
৯। সর্ব মনুষ্যপূজিত সেই অগ্নি অশ্ব দ্বারা আমাদের যুদ্ধে পার করে দিন; মেধাবী ঋত্বিকগণের কমে (পরিতুষ্ট হয়ে) ফলদাতা হোন।
১০। হে অগ্নি তুমি স্তুতি দ্বারা জাগরিত হও; ভিন্ন ভিন্ন যজমানকে অনুগ্রহ করে যজ্ঞানুষ্ঠানার্থে যজ্ঞে প্রবেশ কর। তুমি রুদ্র (১) তোমাকে সুন্দর স্ত্রোত্রে স্তুতি করছি।
১১। অগ্নি মহৎ, পরিমাণ রহিত, ধুমরুপ কেতুবিশিষ্ট ও বহুদীপ্তি সম্পন্ন; অগ্নি আমাদের যজ্ঞে ও অন্নে প্রীত হোন।
১২। অগ্নি প্রজাপালক, দেবগণের হোতা, দেবদুত স্তোত্রভাজন ও পৌঢ়রশ্মিসম্পন্ন; তিনি ধনবান লোকের ন্যায় আমাদের স্তুতি শ্রবণ করুন।
১৩। মহৎ দেবগণকে নমস্কার, অর্ভক দেবদের নমস্কার, যুবাদেবগণকে নমস্কার, বৃদ্ধ দেবগণকে নমস্কার; যদি সাধ্য থাকে দেবগণকে অর্চনা করব; হে দেবগণ! যেন সুবিদেবের স্তুতি না ছেড়ে দিই। টীকাঃ
১। রুদ্র সম্বন্ধে ৪৩ সুক্তের ১ ঋকের টীকা দেখুন।



HYMN XXVII. Agni.







২৮ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। যে যজ্ঞেঝ সোমরসের অভিষবার্থে স্থুলমুল প্রস্তর উন্নত করা হয়, হে ইন্দ্র! সে যজ্ঞে উলুখল দ্বারা অভিষুত সোমরস আপনার জেনে পান কর।
২। যে যজ্ঞে দুজঘনের ন্যায় অভিষব ফলকদ্বয় বিস্তুত হয়, হে ইন্দ্র! সে যজ্ঞে উলুখল দ্বারা অভিষূত সোমরস আপনার জেনে পান কর।
৩। যে যজ্ঞে নারী যজ্ঞশালায় প্রবেশ ও তথা হতে বহির্গমন অভ্যাস করে (১) হে ইন্দ্র সে যজ্ঞে উলুখল দ্বারা অভিষুত সোমরস আপনার জেনে পান কর।
৪। যে যজ্ঞে সংযমরুজুর ন্যায় রুজুদ্বারা মথনদন্ডকে বাধা যায়, হে ইন্দ্র! সে যজ্ঞে উলুখল দ্বারা অভিষুত সোমরস আপনার জেনে পান কর।
৫। হে উলুখল! যদিও তুমি গৃহে গৃহে ব্যবহৃত হও, তথাপি এ যজ্ঞে তুমি বিজয়ীদের দুন্দুভির ন্যায় প্রভুর ধ্বনিযুক্ত শব্দ কর।
৬। হে উলুখল রূপ বনস্পতি (২)! তোমার সম্মুখে বায়ু বইছে; অতএব হে উলুখল! ইন্দ্রের পানার্থে সোমরস অভিষব কর।
৭। হে অন্নপ্রদ যজ্ঞের উপকরণযুক্ত (৩) ! খাদ্য চবণকালে ইন্দ্রের অশ্বদ্বয় যেরূপ ধ্বনি করে, সেরূপ পৌঢ় ধ্বনিযুক্ত হয়ে তোমরা পুন:পুন: বিহার কর।
৮। হে দর্শনীয় বনস্পতিদ্বয়! দর্শনীয় অভিষব যন্ত্র দ্বারা তোমরা অদ্য ইন্দ্রের জন্য মধুর সোমরস প্রস্তুত কর।
৯। হে ঋত্বিক! অভিষব ফলকদ্বয় হতে অবশিষ্ট সোম উঠাও, পবিত্রে রাখ, গোচর্মে স্থাপন কর।

টীকাঃ
১। নারী অপচ্যবম, উপব্যবম চ শিক্ষতে মুলে এরূপ আছে। The scholiast explairs the terms Apachyava and Upachyava, going in the going out of the hall (Sala); but it would perhaps rather be moving up and down with reference to the action of the Pestle-Wilson.
২। উলূখল কাষ্ঠ নির্মিত, এ জন্য বনস্পতি শব্দের প্রয়োগ।
৩। মূলে আয়জী আছে। হে উলুখল মুসলে আয়জী সর্বতো যজ্ঞ সাধনে। সায়ণ।



HYMN XXVIII. Indra, Etc.




২৯ সুক্ত।।

অনুবাদঃ
১। হে সোমপায়ী সত্যবাদী ইন্দ্র! যদিও আমরা প্রসিদ্ধ না হয়ে থাকি, তথাপি হে বহধনশালী ইন্দ্র! শোভনীয় ও সহস্র গো অশ্বদ্বারা আমাদের প্রশংসনীয় কর।
২। হে

শক্তিমান সুশিপ্র অন্নপালক ইন্দ্র! তোমার অনুগ্রহ চিরস্থায়ী! হে বহধনশালী ইন্দ্র! শোভনীয় ও সহস্র গো ও অশ্ব দ্বারা আমাদের প্রশংসনীয় কর।
৩। যে (যমদুতী দ্বয়) পরস্পর পরস্পরকে দেখে তাদের সুপ্ত কর, তারা যেন অচেতন হয়ে থাকে। হে বহুধনশালী ইন্দ্র! শোভনীয় ও সহস্র গো ও অশ্ব দ্বারা আমাদের প্রশংসনীয় কর।
৪। হে শুর! আমাদরে অরাতিগণ সুপ্ত থাকুক, বন্ধুগণ জাগরিত থাকুক। হে বহুধনশালী ইন্দ্র! শোভনীয় ও সহস্র গো ও অশ্বদ্বারা আমাদের প্রশংসনীয় কর।
৫। হে ইন্দ্র! ঐ গর্দভ পাপ বচনদ্বারা তোমার নিন্দা করছে, োকে বধ কর। হে বহুধনশালী ইন্দ্র! শোভনীয় ও সহস্র গো ও অশ্ব দ্বারা আমাদেরপ্রশংসনীয় কর।
৬। প্রতিকুল বায়ু কুটিল গতির সাথে বন হতেও দুরে পড়ুক। হে বহধনশাল ইন্দ্র! শোভনীয় ও সহস্র গো অশ্বদ্বারা আমাদের প্রশংসনীয় কর।
৭। সমস্ত আক্রাশকারীকে হনন কর, হিংসাকারীদের বিনাশ কর। বহুধনশালী ইন্দ্র! শোভনীয় ও সহস্র গো ও অশ্বদ্বারা আমাদের প্রশংসনীয় কর।



HYMN XXIX. Indra.







৩০ সুক্ত ।।

অনুবাদঃ
১। লোকে যেরূপ কূপকে (জলপূর্ণ করে), আমরা অন্নাকাঙ্ক্ষী হয়ে সেরূপ তোমাদের শতক্রুতু বিশিষ্ট ও অতি প্রবদ্ধ ইন্দ্রকে সোম রসের দ্বারা সেচন করি।
২। তিনি শতবিশুদ্ধ সোমরসের নিকট এবং আশীর নামক সহস্র শ্রপণ দ্রব্য মিশ্রিত সোমরসের নিকট আসেন, যেরূপ (জল) নিম্নভূমিতে যায়।
৩। এ (শত বা সহস্র সোম) বলবান ইন্দ্রের হর্ষের জন্য একত্রিত হয়, এর দ্বারা ইন্দ্রের উদর সমুদ্রের ন্যায় ব্যাপ্ত হয়।
৪। যেরূপ কপোত গর্ভধারিণী কপোতীকে গ্রহণ করে, হে ইন্দ্র! এ (সোম) তোমার, তুমিও সেরূপ একে গ্রহণ কর ও সে কারণে আমাদের বচন গ্রহণ কর।
৫। হে ধনপালক স্তুতিভাজন বীর! তোমার এরূপ স্ত্রোত্র; তোমার বিভূতি প্রিয় ও সত্য হোক।
৬। হে শতক্রতু! এ সংগ্রামে আমাদের রক্ষার্থে উৎসুক হও; অন্য কার্যের বিষয় (তুমি ও আমি) মিলিত হয়ে বিচার করব।
৭। ভিন্ন ভিন্ন কর্মের উপক্রমে, ভিন্ন ভিন্ন যুদ্ধে আমরা অতিশয় বলবান ইন্দ্রকে রক্ষার জন্য সখার ন্যায় আহ্বান করি।
৮। যদি ইন্দ্র আমাদের আহ্বান শ্রবণ করেন তবে নিশ্চয়ই সহস্য রক্ষণ কার্যের সাথে ও অন্নের সাথে নিকটে আসুন।
৯। ইন্দ্র বহুলোকের নিকট গমন করেন, পুরাতন আবাস হতে (১) আমি সে পুরুষকে আহ্বান করি, যাকে পিতা পূর্বে আহ্বান করেছিলেন।
১০। হে ইন্দ্র! তুমি সকলের বরণীয় ও বহুলোকদ্বারা আহুত, তুমি সখা ও নিবাসহেতু তোমার স্তোতদের প্রতি অনুগ্রহার্থে তোমার নিকট প্রার্থনা করি।
১১। হে সোমপায়ী, সখা, বজ্রধারী ইন্দ্র ! আমরাও তোমার সখা ও সোমপায়ী; আমাদের দীর্ঘ নাসিক (গাভীদল বৃদ্ধি হোক)
১২। হেসোমপায়ী, সখা, বজ্রধারী! এরূপই হোক, তুমি এরূপ আচরণ কর, যেন আমরা মঙ্গলার্থে তোমার (অনুগ্রহ) কামনা করি।

১৩। ইন্দ্র আমাদের প্রতি হৃন্ট হলে আমাদের (গাভীগণ) দুগ্ধবতী ও প্রভূত বলশালিনী হবে, (সে গাভী) হতে খাদ্য পেয়ে আমরা হৃষ্ট হব।
১৪। হে সাহসী ইন্দ্র! তোমার ন্যায় দেব স্বয়ং হৃষ্ট হয়ে, আমাদরে দ্বারা যাচিত হয়ে স্ত্রোতুদের প্রার্থিত ধন তাদরে কামনা অনুসারে অর্পণ কর।
১৫। ?
১৬। ইন্দ্রের যে অশ্বগণ আহারের পর পর্যাপ্তিসূচক শব্দ করে, হ্রেষাবর করে ও ঘন ঘন শ্বাস নিক্ষেপ করে সে অশ্বগণ দ্বারা ইন্দ্র সর্বদাই ধন জয় করেছেন; কর্মবান ও দানশীল ইন্দ্র আমাদের গ্রহণার্থে হিরণায় রথ দিয়েছেন।
১৭। হে অশ্বিদ্বয়! বহু অশ্বের দ্বারা প্রেরিত অন্নের সাথে এস; হে শত্রুবিনাশক! (আমাদের গৃহ) গাভীযুক্ত ও হিরণ্যযুক্ত (হোক!)
১৮। হে শত্রুবিনাশক! তোমাদের উভয়ের জন্য সংযোজিত রথ বিনাশরহিত; এ রথ অন্তরীক্ষে গমন করে।
১৯। তোমরা রথের এক চক্র বিনাশরহিত পর্বতের উপর স্থির করেছ, অন্য চক্র্আকাশের চারদিকে ভ্রমণ করছে।
২০। হে স্তুতিপ্রিয়া অমর ঊষা! কোন মানুষ তোমার সম্ভোগের জন্য! হে প্রভাবযুক্ত! তুমি কাকে প্রাপ্ত হও?
২১। হে ব্যাপনশীল বিচিত্র দীপ্যমান ঊষা! আমরা নিকট হতে অথবা দূর হতে তোমাকে বুঝতে পারি না।
২২। হে স্বর্গ দুহিতে! সে অন্নের সাথে তুমি আগমন কর, আমাদের ধন প্রদান কর (২)।

টীকাঃ
১। কার পুরাতন আবাস হতে? পুরাতনস্য োকস: স্থানস্য স্বর্গরূপস্য সকাশাৎ সায়ণ। কিন্তু কৃষ্ণমোহন, বন্দো্যাপাধ্যায় অর্থ করেছেন From the site of our ancient home.
২। ঊষা আর্যদের এক অতি প্রাচীন উপাস্য দেব ছিলেন, সুতরাং আর্য জাতির ভিন্ন ভিন্ন শাখার মধ্যে তাঁর নাম ও উপাসনা দেখা যায়। Her names in the Rig Veda are Arjuni, Brisaya, Dahana, Ushas, Sarama, and Saranyu, and all these names reappear among the Greeks as Argynoris, Briseis, Daphne, Eos, Helen and Erinys. Rajendra Lal Mitra’s Indo-Aryans. কিন্তু কেবল যে নামে সাদৃশ্য আছে তা নয়, ঊষা সম্বন্ধ এক প্রকারই কয়েকটি গল্প হিন্দু ও গ্রীকদের মধ্যে পাওয়া যায়। ২০ সুক্তের ৬ ঋকের টীকায় সরণ্যুর কথা দেখুন। ১১৫ সুক্তের ২ ঋকে সূর্য ঊষার পশ্চাৎ ধাবমান হচ্ছেন এরূপ কথা আছে; গ্রীকদের মধ্যেওপ্রসিদ্ধ গল্প আছে যে Apollo (সূর্য) Daphne (অর্থাৎ দহন্া) দেবীর পশ্চাৎধাবন করেছিলেন এবং তাকে ধরা মাত্র Daphne বিনাশ প্রাপ্ত হলেন। এ গল্পের অর্থও সরল, সূর্য উদয় হলেই ঊষা শেষ হয়। আবার ঋগ্বেদে ঊষাকে এক স্থানে অহনা নাম দেওয়া হয়েছে; গ্রীকদের সুবুদ্ধির দেবী Athena এইঅহনায় রূপান্তর মাত্র। অতএব Athenians অর্থ ঊষার সন্তানগণ। বেদে হ্রস্ব উ দিয়ে উষা লেখা আছে, কিন্তু বাঙলা ভাষার রীতি অনুসারে আমরা দীর্ঘ উ ব্যবহার করলাম।



HYMN XXX. Indra.

(C) https://www.ebanglalibrary.com
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।