০৫ জানুয়ারী ২০১৮

সামবেদঃ দ্বিতীয় অধ্যায় । ঐন্দ্র কাণ্ডঃ ইন্দ্রস্তুতিঃ খণ্ডঃ ০৭-১২

সপ্তম খন্ড।। মন্ত্র সংখ্যা ১০।।
দেবতা ইন্দ্র (৪ অশ্বিদ্ব্য, ১০ বায়ু)।।
ছন্দ গায়ত্রী।।
ঋষিঃ
১ ইন্দ্রমাতা দেবজামিগণ,
২ গোধা ঋষিকা,
৩ দধ্যঙ্‌ আথর্বণ,
৪ প্রস্কন্ব কান্ব,
৫ গোতম রাহুগণ,
৬ মধুচ্ছন্দা বৈশ্বামিত্র,
৭ বামদেব গৌতম,
৮ বৎস কান্ব,
৯ শুনঃশেপ আজীগর্তি,
১০ উল বাতায়ন।।
মন্ত্রঃ (১৭৫) ঈঙ্খয়ন্তীরপস্যুব ইন্দ্রয় জাতমুপাসতে। বন্বানাসঃ সুবীর্যম্‌।।১।। (১৭৬) নকি দেবা ইনীমসি ন ক্যা যোপয়ামসি। মন্ত্রশ্রুত্যং চরামসি।।২।। (১৭৭) দোষো আগাদ্‌ বৃহদ্‌গায় দ্যুমদ্‌ গামন্নাথর্বণ। স্তুতি দেবং সবিতারম্‌।।৩।। (১৭৮) এসো ঊষা অপূর্ব্যা ব্যুচ্ছতি প্রিয়া দিবঃ। স্তুষে বামশ্বিনা বৃহৎ।।৪।। (১৭৯) ইন্দ্রো দধীচো অস্থভির্বত্রাণ্যপ্রতিমঙ্কুতঃ। জধান নবতীর্নব।।৫।। (১৮০) ইন্দ্রেহি মৎস্যন্ধসো বিশ্বেভিঃ সোমপর্বভিঃ। মহাঁ অভিষ্টিরোজসা।।৬।। (১৮১) আ তূ ন ইন্দ্র বৃত্রহন্নস্মাকমর্ধমা গহি। মহান্‌ মহীভিরূতিভিঃ।।৭।। (১৮২) ওজন্তদস্য তিত্বিষ উভে যৎ সমবর্তয়ৎ। ইন্দ্রশ্চর্মেব রোদসী।।৮।। (১৮৩) অয়মু তে সমতসি কপোত ইব গর্ভধিম্‌। বচস্তচ্চিন্ন ওহসে।।৯।। (১৮৪) বাত আ বাতু ভেষজং শম্ভু ময়োভু নো হৃদে। প্র ন আয়ুংষি তারিষৎ।।১০।
অনুবাদঃ (১৭৫) কর্মকে পরিচালনা করতে ইচ্ছা করে অন্তরিক্ষে অবস্থিত পরিচালিকা শক্তিগণ সুবীর্য ইন্দ্রকে জন্মমাত্রই উপাসনা করলেন।। (১৭৬) হে দেবগণ, আমাদের কর্মে ত্রুটি করিনি কোন কাজে শৈথিল্য প্রকাশ করিনি; আমরা শ্রুত মন্ত্র অনুসারে আচরণ করি।। (১৭৭) স্বীয় কর্মে অবিচল, মহাগতিসম্পন্ন, দীপ্ত সূর্য অন্ধকার নাশ করে এসেছেন; সবিতাদেবকে স্তব কর।। (১৭৮) প্রিয় ঊষা যাঁকে এর আগে দেখা যায় নি, তিনি এখন আকাশ থেকে অন্ধকার দূর করছেন। হে অহোরাত্ররূপী অশ্বিদ্বয়, তোমাদের দু’জনকে প্রভূত স্তুতি করি।। (১৭৯) অপরাজিত ইন্দ্র লোকপালনের জন্য ধ্যানস্থ সূর্য (দধীচি) থেকে বজ্র (-অস্থি) আহরণ ক’রে অসংখ্যবার বৃত্রকে (মেঘকে) বধ করে থাকেন। (১৮০) হে ইন্দ্র এস; সকল সোমযাগে সোমপানে হৃষ্ট হয়ে বলের দ্বারা মহান হয়ে শত্রুপরাভবকারী হয়।। (১৮১) হে বৃত্রহন্তা ইন্দ্র, মহান তুমি; তোমার মহৎ পালনের জন্য আমাদের কাছে শীঘ্র এস। (১৮২) ইন্দ্রের বল বিশেষভাবে দীপ্তি লাভ করে, যখন দ্যু ও পৃথিবী উভয়ে মিলিতভাবে মেঘ সৃষ্টি করেন শরীরচর্মের মত ইন্দ্র দ্যু ও পৃথিবীকে আবৃত করে আছেন। (১৮৩) হে ইন্দ্র, এই সোম তোমার জন্য কপোত যেমন কপোতীর প্রতি বকম্‌ শব্দে ধাবমান হয়, তুমিও তেমনি গুরুগুরু গর্জনে সোমের প্রতি ধাবমান হও; আর সেই মেঘধ্বনিরূপ বাক্যের দ্বারা আমাদের প্রাপ্ত হও।।। (১৮৪) বায়ু আমাদের অভিমুখে প্রবাহিত হোন; তিনি ভেষজকে সকল কালেই আমাদের জন্য সুখপ্রদ করুন; তিনি আমাদের আয়ু বৃদ্ধি করুন।।

অষ্টম খন্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ৯।।
দেবতা ইন্দ্র।। ছন্দ গায়ত্রী।।
ঋষিঃ
কান্ব, ২।৩ বৎস কান্ব (ঋগ্বেদে ২।৯ বশোহশ্ব্য),
৪ শ্রুতকক্ষ বা সুকক্ষ আঙ্গিরস,
৫ মধুচ্ছন্দা বৈশ্বামিত্র,
৬ বামদেব গৌতম,
৭ ইরিম্বিঠি কান্ব,
৮ সত্যধৃতি বারুণি।।
মন্ত্রঃ
(১৮৫) যং রক্ষন্তি প্রচেতসো বরুণো মিত্রো অর্যমা। নকিঃ স দভ্যতে জনঃ।।১।। (১৮৬) গব্যো ষু ণো যথা পুরাশ্বযোত রথয়া। বরিবষ্যা মহোনাম্‌।।২।। (১৮৭) ইমাস্ত ইন্দ্র পৃশ্নয়ো ঘৃতং দুহত আশিরম্‌। এনামৃতস্য পিপ্যুষীঃ।।৩।। (১৮৮) অয়া ধিয়া চ গব্যয়া পুরুণামন্‌ পুরুষ্টুত। যৎ সোমেসোম আভুবঃ।।৪।। (১৮৯) পাবকা নঃ সরস্বতী বাজের্ভিবাজিনীবতী। যজ্ঞং বষ্টু ধিয়াবসুঃ।।৫।। (১৯০) ক ইমং নাহুষীম্বা ইন্দ্রং সোমস্য তর্পয়াৎ। স নো বসূন্যা ভরাৎ।।৬।। (১৯১) আ যাহি সুষুমা হি ত ইন্দ্র সোমং পিবা ইমম্‌। এদং বর্হিঃ সদো মম।।৭।। (১৯২) মহি ত্রীণামবরস্তু দ্যুক্ষং মিত্রস্যার্যম্‌ণঃ। দুরাধর্ষং বরুণস্য।।৮।। (১৯৩) ত্বাবতঃ পুরূবসো বয়মিন্দ্র প্রণেতঃ। স্মসি স্থাতর্হরীণাম।।৯।।
অনুবাদঃ
(১৯৫) প্রকৃষ্টজ্ঞানযুক্ত বরুণ মিত্র ও অর্যমা যাঁকে রক্ষা করেন তাঁকে কোন মানুষই দ্বেষ করতে পারে না। (১৮৬) হে ইন্দ্র, গো অশ্ব ও রথলাভের ইচ্ছা হলে পূর্বে যেমন দান করতে তেমনি মহৎ দানে আমাদের ইচ্ছা পূরণ কর।। (১৮৭) হে ইন্দ্র, জাগতিক সুনিয়ন্ত্রিত ঋতকর্মে নিযুক্ত তোমার দেবরশ্মিগণ অমৃত বারিরাশি দোহন করে।। (১৮৮) হে বহুস্তুত বহুনামবিশিষ্ট ইন্দ্র, আমরা অমৃত বারিরাশির দ্বারা ধী‑বিশিষ্ট কর্মে নিযুক্ত হব যেহেতু তুমি প্রতি সোমকর্মে (=বারিসৃষ্টিকর্মে) উপস্থিত থাক।। (১৮৯) পবিত্রা অন্নবর্তী কর্মফলদাত্রী বাক্‌ জলের অধিষ্ঠাত্রী সরস্বতী দেবী আমাদের যজ্ঞকে কামনা করুন।। (১৯০) মানুষের মধ্যে কে ইন্দ্রকে সোমের দ্বারা প্রীত করতে পারে? তিনিই আমাদের সর্বসম্পদে পূর্ণ করেছেন।। (১৯১) হে ইন্দ্র, এস; তোমার জন্য এই চারু সোম, তুমি পান কর; এই যজ্ঞাসনে বস।। (১৯২) দ্যুলোকস্থ দুরাধর্ষ মিত্র অর্যমা ও বরুণ এই তিনি মহান্‌ দেবের পালন আমাদের রক্ষা করুক।। (১৯৩) হে বহুধন, উদক ও যজ্ঞের নেতা ইন্দ্র, তোমাসদৃশ দেবকেই আমরা কামনা করি, তুমি সকল দেবরশ্মিরূপ অশ্বের অধিষ্ঠাতা।।
নবম খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১০।।
দেবতা ইন্দ্র।।
ছন্দ গায়ত্রী।।
ঋষিঃ
১ প্রগাথ কান্ব,
২ গাথি বিশ্বামিত্র,
৩।১০ বামদেব গৌতম,
৪।৬ শ্রুতকক্ষ আঙ্গিরস,
৫ মধুচ্ছন্দা বৈশ্বামিত্র,
৭ গৃৎসমদ শৌনক,
৮।৯ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য।।
মন্ত্রঃ
(১৯৪) উত্বা মন্দন্তু সোমাঃ কৃণুম্ব রাধো অদ্রিবঃ।। অব ব্রহ্মদ্বিষো জহি।।১।। (১৯৫) গির্বণঃ পাহি নঃ সুতং মধ্যের্ধারাভিরজ্যসে। ইন্দ্র দ্বাদাতমিদ্‌ যশঃ।।২।। (১৯৬) সদা ব ইন্দ্রশ্চর্কৃষদা উপো নু স সপর্যন্‌। ন দেবো বৃতঃ শূর ইন্দ্রঃ।।৩।। (১৯৭) আ ত্বা বিশন্ত্বিন্দবঃ সমুদ্রমিব সিন্ধবঃ। ন ত্বামিন্দ্রাতিরিচ্যতে।।৪।। (১৯৮) ইন্দ্রমিদ্‌ গাথিনো বৃহদিন্দ্রমর্কেভিরর্কিণঃ। ইন্দ্রং বাণীরনূষত।।৫।। ইন্দ্র ইষে দদাতু ন ঋভুক্ষণমৃভুং রয়িম্‌। বাজী দদাতু বাজিনম্‌।।৬।। (২০০) ইন্দ্রো অঙ্গ মহদ্‌ভয়মভীষদপ চুচ্যবৎ। স হি স্থিরো বিচর্ষণিঃ।।৭।। (২০১) ইমা উ ত্বা সুতেসুতে নক্ষন্তে গির্বণো গরঃ। গাবো বৎসং ন ধেনবঃ।।৮।। (২০২) ইন্দ্রা নু পূষণা বয়ং সখ্যায় স্বস্তয়ে। হিবেম বাজসাতয়ে।।৯।। (২০৩) ন কি ইন্দ্র ত্বদুত্তরং ন জ্যায়ো অস্তি বৃত্রহন্‌। ন ক্যেবং যথা ত্বম্‌।।১০।।
অনুবাদঃ
(১৯৪) হে বজ্রধারী ইন্দ্র, সোমসকল তোমাকে উত্তমরূপে হর্ষান্বিত করুক; আমাদের ধন প্রদান কর; আর ব্রহ্মদ্বেষীকে বিনাশ কর।। (১৯৫) হে স্তুতিপ্রিয় ইন্দ্র, মধুর সোমধারায় তোমার পূজা হয়ে থাকে; তুমি আমাদের সোম পান কর। হে ইন্দ্র, যশরূপ অন্ন তোমারই দান।। (১৯৬) ইন্দ্র সর্বদাই তোমাদের জন্য পুনঃ পুনঃ কর্ষণের ব্যবস্থা করেন; সেই যথার্থ অনুষ্ঠাতাকেই কামনা কর; কোন দেবতাই শূর ইন্দ্রের মত আচ্ছাদিত করতে পারেন না।। (১৯৭) নদীসকল যেমন সমুদ্রে মেশে তেমনি সকল সোমধারাই তোমাতে মিলিত হয়; হে ইন্দ্র, তোমাকে কেহ অতিক্রম করতে পারে না।। (১৯৮) সাম গায়কেরা (=সামগান গায়কেরা) বৃহৎ সামে, ঋগ্বেদীয় হোতাগণ ঋক্‌ মন্ত্রে, যজুর্বেদীগণ যজুর্মন্ত্রে ইন্দ্রকেই স্তব করেন।। (১৯৯) ইন্দ্র আমাদের অন্নদান ইচ্ছা করে অন্তরিক্ষে নিবাসী সূর্যরশ্মিসমূহ থেকে আহৃত বৈদ্যুতিক জ্যোতিরূপ ধন দান করেন; (বাজী=) অন্ন বল ও বাকের অধিকর্তা ইন্দ্র, (সেই বৈদ্যুতিক জ্যোতি থেকে সৃষ্ট) অন্ন বল ও বাক্‌ দান করুন।। (২০০) ইন্দ্র অবিলম্বে মহৎ ভয়ে ভীতগ্রস্ত অবস্থা থেকে মুক্ত করুন; তিনি স্থিরপ্রজ্ঞ ও বিশ্বদ্রষ্টা।। (২০১) হে স্তুতিপ্রিয় ইন্দ্র, প্রতি সোম অভিষবে আমাদের সকিল স্তুতি তোমা অভিমুখে ধাবিত হয়, গোবৎসের প্রতি গাভী যেমন যায়।। (২০২) ইন্দ্র ও পূষাকে আমরা সখ্যতার জন্য, মঙ্গলের জন্য ও বিপুল ধনের জন্য আহ্বান করি।। (২০৩) হে বৃত্রহন্তা ইন্দ্র, তোমার ওপরে কোন দেবতা নেই, তোমার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন দেবতা নেই, আর তুমি যেমন, তেমন কোন দেবতাও নেই।।

দশম খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ১০।।
দেবতা ইন্দ্র।। ছন্দ গায়ত্রী।।
ঋষি
১।৪ ত্রিশোক কান্ব,
২ মধুচ্ছন্দা বৈশ্বামিত্র,
৩ বৎস কান্ব (ঋগ্বেদে অশ্বপুত্র বশ),
৫ সুকক্ষ আঙ্গিরস,
৬।৯ বামদেব গৌতম,
৭ গাথি বিশ্বামিত্র,
৮ গোষুক্তি ও অশ্বসুক্তি কান্ব,
১০ শ্রুতকক্ষ বা সুকক্ষ আঙ্গিরস।।
মন্ত্রঃ
(২০৪) তরণিং বো জনানাং ত্রদং বাজস্য গোমতঃ। সমানমু প্র শংসিষম্‌।।১।। (২০৫) অসৃগ্রমিন্দ্র তে গিরঃ প্রতি ত্বামুদহাসত। সজোষা বৃষভং পতিম্‌।।২।। (২০৬) সুনীথো ঘা স মর্ত্যো যং মরুত যমর্যমা। মিত্রাস্পান্ত্যদ্রুহঃ।।৩।। (২০৭) যদ্‌বীডাবিন্দ্র যৎ স্থিরে যৎ পর্শানে পরাভূতম্‌। বসু স্পার্হং তদা ভর।।৪।। (২০৮) শ্রুতং বো বৃত্রহন্তমং প্র শর্ধং চর্ষণীনাম্‌। আশিষে রাধসে মহে।।৫।। (২০৯) অরং ত ইন্দ্র শ্রবসে গমেম শূর ত্বাবতঃ। অরং শক্র পরেমণি।।৬।। (২১০) ধানাবন্তং করম্ভিণমপূবন্তমুক্‌থিনম্‌। ইন্দ্র প্রাতর্জুষস্ব নঃ।।৭।। (২১১) অপাং ফেনেন নমুচেঃ শির ইন্দ্রোদবর্তয়ঃ। বিশ্বা যদজয় স্পৃধঃ।।৮।। ইমে ত ইন্দ্র সোমাঃ সুতাসো যে চ সোত্বাঃ। তেষাং মৎস্ব প্রভূবসো।।৯।। (২১৩) তুভ্যং সুতাসঃ সোমাঃ স্তীর্ণং বর্হির্বিভাবসো। স্তোতৃভ্য ইন্দ্র মৃড়য়।।১০।।
অনুবাদঃ
(২০৪) তোমাদের সকলের জন্য উদকযুক্ত অন্ন-বলের অবাধ উদ্‌ঘাটক, সমদৃষ্টিসম্পন্ন, দক্ষ, আদরণীয় ইন্দ্রকে স্তব করি। (২০৫) হে ইন্দ্র, আমি তোমার উদ্দেশে মন্ত্র উচ্চারণ করছি; তুমি বর্ষণশীল, রক্ষক; তোমাকে প্রাপ্ত হবে বলে এই স্তুতি ঊর্ধ্বলোকে গমন করছে; তুমি তা প্রীতির সঙ্গে গ্রহণ করেছ। (২০৬) হিংসাশূন্য, দ্বাষশূন্য প্রাণবায়ু মরুৎগণ যাঁকে রক্ষা করেন, শত্রুভূত অন্ধকারনাশক অর্যমা (=আদিত্য) যাঁকে রক্ষা করেন, মরণ থেকে ত্রাণকারী মিত্র (=আদিত্য) যাঁকে রক্ষা করেন, সেই মানুষই দেবতার স্তুতিকরণে সুসমর্থ হয়। (২০৭) হে ইন্দ্র, দৃঢ় দুর্গম স্থানে, স্থাবর, মেঘের মধ্যে যে ধন তুমি গুপ্ত রেখেছ সেই স্পৃহণীয় ধন আমাদের জন্য আন। (২০৮) শ্রুতকীর্তি, বৃত্রহন্তা, জনগণের যজ্ঞকর্মে উৎসাহী ইন্দ্রের কাছে তোমাদের জন্য সর্বসিদ্ধিকর মহাধন কামনা করি। (২০৯) হে শূর, হে ইন্দ্র, তোমার মত প্রচুর যশ ইচ্ছা করে তোমার কাছে এসেছি। হে দানসমর্থ দেব, এমন ভাবে দাও যেন উছলে পড়ে।। (২১০) হে ইন্দ্র, আমাদের এই প্রাতঃকালীন যজ্ঞে তোমার উদ্দেশে ভাজা যবের ছাতু, দধিমিশ্রিত সোম ও আস্‌কে পিঠে যা নিবেদন করলাম এবং যে স্তুতি করলাম তা’ তুমি গ্রহন কর। (২১১) হে ইন্দ্র, যখন বর্ষণবিমুখ মেঘের (=নমুচির) মস্তক আকাশে অবস্থিত জলরাশির ফেনার আঘাতে ছিন্ন করলে তখন তুমি সকল স্পর্ধমান মেঘকেই জয় করলে। (২১২) হে ইন্দ্র, এই যা কিছু সোম (=বারিরাশি) সৃষ্ট হয়েছে, তা’ তোমার জন্যই হয়েছে। হে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধনের ঈশ্বর, তুমি তাদের পেয়ে হর্ষান্বিত হও। (২১৩) হে বিভাবসু, তোমার জন্যই অভিষুত সোম অন্তরিক্ষ বিস্তৃত হয়েছে; হে ইন্দ্র, স্তুতিকারকদের জন্য সুখপ্রদ হও।

একাদশ খণ্ডঃ মন্ত্রসংখ্যা ৯।।
দেবতা ইন্দ্র।। ছন্দ গায়ত্রী।।
ঋষি –
১ শুনঃশেপ আজীগর্তি,
২ শ্রুতকক্ষ বা সুকক্ষ আঙ্গিরস,
৩ ত্রিশোক কান্ব,
৪।৯ মেধাতিথি কান্ব,
৫ গোতম রাহুগণ,
৬ ব্রাহ্মতিথি কান্ব,
৭ গাথি বিশামিত্র বা জমদগ্নি ভার্গব, প্রস্কন্ব কান্ব।
মন্ত্রঃ
(২১৪) আ ব ইন্দ্রং ক্রিবিং যথা বাজয়ন্তঃ শতক্রতুম্‌। মংহিষ্ঠং সিঞ্চ ইন্দুভিঃ।।১।।
(২১৫) অতশ্চিদিন্দ্রি ন উপা যাহি শতবাজয়া। ইষা সহস্রবাজয়।।২।।
(২১৬) আ বুন্দং বৃত্রহা দদে জাতঃ পৃচ্ছাদ্ব বি মাতরম্‌। ক উগ্রাঃ কে হ শৃন্বিরে।।৩।।
(২১৭) বৃবদুক্‌থং হবামহে সুপ্রকরস্নমূতয়ে। সাধঃ কৃন্বন্তমবসে।।৪।।
(২১৮) ঋজুনীতী নো বরুণো মিত্র নয়তি বিদ্বান্‌। অর্যমা দেবৈঃ সজোষাঃ।।৫।।
(২১৯) দূরাদিহেব যৎসতোহরুণপ্‌সুরশিশ্বিতৎ। বি ভাণুং বিশ্বথাতনম্‌।।৬।।
(২২০) আ নো মিত্রাবরুণা গৃতৈর্গব্যুতিমুক্ষতম্‌। মধ্বা রজাংসি সুক্রতু।।৭।।
(২২১) ঊদু ত্যেঁ সূনবো গিরঃ কাষ্ঠা যজ্ঞেম্বত্নত। বাশ্রা অভিজ্ঞু যাতবে।।৮।।
(২২২) ইদং বিষ্ণুর্বিচক্রমে ত্রেধা নি দধে পদম্‌। সমূঢ়স্য পাংসুরে।।৯।।
অনুবাদঃ
(২১৪) অন্নকামিগণ যেমন কূপকে সেচন করে তেমনি তোমাদের জন্য শতকর্মা শ্রেষ্ঠদাতা ইন্দ্রকে সোমরসে সিক্ত করি।।
(২১৫) হে ইন্দ্র, শতবল ও সহস্র অন্নের সঙ্গে দ্যুলোক হতে আমাদের কাছে এস।।
(২১৬) মেঘবিদারণকারী ইন্দ্র জন্মেই তীক্ষ্ণ বাণ ধারণ করলেন, আর জিজ্ঞাসা করলেন মাতাকে, কারা উগ্র বলে খ্যাত, কেই বা তাদের কথা শুনেছে?
(২১৭) উদকরূপ প্রসারিত বাহুর দ্বারা পালনের জন্য, রশ্মিদানরূপ সুকর্মের দ্বারা আশ্রয়দানের জন্য মহান স্তুতিযুক্ত ইন্দ্রকে ডাকি।।
(২১৮) বরুণ ও মিত্র আমাদের ভক্তিভাব জেনে আমাদের ঋজুপথে নিয়ে যায়; দেবগণসহ অর্যমাও প্রীতির সঙ্গে আমাদের ঋজুপথে নিয়ে চলুন।।
(২১৯) দূরে থেকেও উজ্জ্বলদীপ্তি ঊষা তাঁর শ্বেতরূপ বিশ্ব আকাশে ছড়িয়ে দেন।।
(২২০) হে শোভনকর্ম-বিশিষ্ট মিত্র ও বরুণ, আমাদের গোষ্ঠ ঘৃতপূর্ণ কর; পৃথিবী মধুময় হোক।।
(২২১) মরুদগণ সকল বাণী সৃষ্টি করেন; তাঁরা ধেনুর মত শব্দ করতে করতে বারিরাশির বিস্তারের দ্বারা কর্ম সাধন করেন।।
(২২২) বিষ্ণুর স্থান অন্তরিক্ষে দৃঢ়রূপে স্থাপিত; তিনি সেইখানে অবস্থিত থেকেই তিনি প্রকার পদ স্থাপনের দ্বারা (=উত্তরায়ণ, দক্ষিণায়ণ ও বিষুবসংক্রান্তি) এই চরাচর বিশ্ব পরিক্রমা করেন।। [বিষ্ণু=সূর্য]।।

দ্বাদশ খণ্ডঃ মন্ত্র সংখ্যা ১০।।
দেবতা ইন্দ্র।।
ছন্দ গায়ত্রী।
ঋষিঃ
১।৭।৮ মেধাতিথি কান্ব,
২ বামদেব গৌতম,
৩।৫ মেধাতিথি কান্ব ও প্রিয়মেধ আঙ্গিরস,
৪ গাথি বিশ্বামিত্র,
৬ দুর্মিত্র বা সুমিত্র কৌৎস,
৯ গাথি বিশ্বামিত্র বা অভীপাদ্‌ উদল,
১০ শ্রুতকক্ষ আঙ্গিরস।।
মন্ত্রঃ (২২৩) অতীহি মন্যুষাবিণং সুষুবাংসমুপেরয়। অস্য রাতৌ সুতং পিব।।১।। (২২৪) কদু প্রচেতসে মহে বচো দেবায় শস্যতে। তদিধ্যস বর্ধনম্‌।।২।। (২২৫) উক্‌থং চ ন শস্যমানং বাগোরয়িরা চিকেত। ন গায়ত্রং গীয়মানম্‌।।৩।। (২২৬) ইন্দ্র উক্‌থেভির্মন্দিষ্ঠো বাজানাং চ বাজপতিঃ। হরিবান্‌ৎসুতানাং সখা।।৪।। (২২৭) আ যাহ্যুপ নঃ সুতং বাজেভির্মা হৃণীযথাঃ। মহাঁ ইব যুবজানিঃ।।৫।। (২২৮) কদা বসো স্তোত্রং হর্যত আ অব শ্মসা রুধদ্‌বাঃ। দীর্ঘং সুতং বাতাপ্যায়।।৬।। (২২৯) ব্রাহ্মণাদিন্দ্র রাধসঃ পিবা সোমমৃতুঁরনু। তবেদং সখ্যমস্তৃতম্‌।।৭।। (২৩০) বয়ং ঘা তে অপি স্মসি স্তোতার ইন্দ্র গির্বণঃ। ত্বং নো জিন্ব সোমপাঃ।।৮।। (২৩১) এন্দ্র পৃক্ষু কাসু চিন্‌নৃম্‌ণং তনূষু ধেহি নঃ। সত্রাজিদুগ্র পৌংস্যম্‌।।৯।। (২৩২) এবাহ্যসি বীরযুরেবা শূর উত স্তিরঃ। এবা তে ভাধ্যং মনঃ।।১০।।
অনুবাদঃ (২২৩) হে ইন্দ্র, তুমি সব সময়ে এস; আন্তরিকতার সঙ্গে প্রস্তুত আমাদের সোম গ্রহণের জন্য এস। আর এই সোম আমাদের ধনদান করবে বলে পান কর।। (২২৪) প্রকষ্টজ্ঞানী মহান দেবতার উদ্দেশে কেনই বা এই স্তুতি? কারণ তা’ স্তুতিকারীর ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে।। (২২৫) স্তুতিকারীর স্তুতি আর গায়কের গায়ীছন্দের গান অসমর্থ ও বিদ্বেষীর বোধগম্য হয় না।। (২২৬) স্তুতি দ্বারাই ইন্দ্র অত্যন্ত হৃষ্ট হন; তিনিই সকল অন্ন বল ও বাকের অধিপতি; তিনিই রশ্মির অধিপতি; তিনিই সোমজ্ঞদের (=আনন্দবোধ-প্রাপ্তদের) সখা।। (২২৭) যুবতী পত্নীর প্রতি মহান স্বামীর মত আমাদের সঙ্গে ব্যবহার কর, ক্রুদ্ধ হয়ো না; হে ইন্দ্র, আমাদের অন্ন-বল দেবে বলে আমাদের এই অভিষুত সোমের কাছে এস।। (২২৮) নদী, খাল, বিল যেমন বারিরাশিকে বদ্ধ করে তেমনি কবে আমাদের স্তোত্র তোমাকে আমাদের বশে আনতে পারবে? হে ধনস্বামী, আমাদের এই সোমযাগ প্রচুর বারিবর্ষণ কামনা করে।। (২২৯) হে ইন্দ্র, তুমি ঋতুদের সোম পানের পর ব্রহ্মজ্ঞ স্তুতিকারীর ধনভূত সোমপাত্র থেকে সোম পান কর; হে ইন্দ্র, তোমার সখ্যতাই অবিচ্ছিন্ন।। (২৩০) হে স্তুতিপ্রিয় ইন্দ্র, আমরা তোমার স্তোতা বলেই হে সোমপায়ী, আমাদের প্রীত কর।। (২৩১) হে ইন্দ্র, কিরূপ সংগ্রামে তুমি আমাদের দেহে বল দেবে? হে সকল সোমযজ্ঞজয়ী, হে উগ্রবল, আমাদের বল দাও।। (২৩২) হে শূর, তুমি অবিচল, তুমি বীর্যকামী, তুমি এইরূপ; তোমার আরাধ্য মনও এইরূপ।।

(C)https://www.ebanglalibrary.com

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।