বর্ণপ্রথা-বর্তমান সময়ে হিন্দুসমাজের অন্যতম বড় শত্রু।কিন্তু প্রকৃত সত্য কি?অনেকেই হয়তো জানেন।তবু যারা জানেন না তাদের জন্য আরেকবার বেদের আলোকে আলোচনা করছি।
প্রথমেই নামের বিষয়টা খেয়াল করা যাক।মূল এবং সঠিকনাম হচ্ছে বর্ণাশ্রম।এখানে বর্ণ শব্দটি এসেছে 'Vrn' root থেকে যার অর্থ 'To choose বা পছন্দ করা অর্থাত্ পছন্দ অনুযায়ী আশ্রম বা পেশা নির্ধারন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সমাজে এখন একে জন্মসূত্রে বিবেচনা করা হয়।ভট্যাচার্য, চট্যপাধ্যায় নামের পাশে থাকলেই ব্রাক্ষ্মন অথবা দাস,রায় থাকলেই শূদ্র এরকম হাস্যকর কিছু ধারনা প্রচলিত।আমি বুঝিনা কি করে মানসিকভাবে সুস্থ বলে পরিচিত এই আমরা এগুলো বিশ্বাস করি!চলুন দেখা যাক বেদ এ ব্যাপারে কি বলে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের সমাজে এখন একে জন্মসূত্রে বিবেচনা করা হয়।ভট্যাচার্য, চট্যপাধ্যায় নামের পাশে থাকলেই ব্রাক্ষ্মন অথবা দাস,রায় থাকলেই শূদ্র এরকম হাস্যকর কিছু ধারনা প্রচলিত।আমি বুঝিনা কি করে মানসিকভাবে সুস্থ বলে পরিচিত এই আমরা এগুলো বিশ্বাস করি!চলুন দেখা যাক বেদ এ ব্যাপারে কি বলে।
ঋগবেদ ১.১১৩.৬
"একজন জ্ঞানের উচ্চ পথে(ব্রাক্ষ্মন ,অপরজন বীরত্বের গৌরবে(ক্ষত্রিয়) , একজন তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে(পেশাভিত্তিক), আরেকজন সেবা এর পরিশ্রম এ(শূদ্র)। সকলেই তার ইচ্ছামাফিক পেশায়,সকলের জন্যই ঈশ্বর জাগ্রত।
"একজন জ্ঞানের উচ্চ পথে(ব্রাক্ষ্মন ,অপরজন বীরত্বের গৌরবে(ক্ষত্রিয়) , একজন তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে(পেশাভিত্তিক), আরেকজন সেবা এর পরিশ্রম এ(শূদ্র)। সকলেই তার ইচ্ছামাফিক পেশায়,সকলের জন্যই ঈশ্বর জাগ্রত।
ঋগবেদ ৯.১১২.১
একেকজনের কর্মক্ষমতা ও আধ্যাত্মিকতা একেকরকম আর সেঅনুসারে কেউ ব্রাক্ষ্মনকেউ ক্ষত্রিয় কেউ বেশ্য কেউ শূদ্র।
একেকজনের কর্মক্ষমতা ও আধ্যাত্মিকতা একেকরকম আর সেঅনুসারে কেউ ব্রাক্ষ্মনকেউ ক্ষত্রিয় কেউ বেশ্য কেউ শূদ্র।
ব্রাক্ষ্মন কে?
ঋগবেদ ৭.১০৩.৮
যে ঈশ্বরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত, অহিংস,সত্,নিষ্ ঠাবান, সুশৃঙ্খল,বেদ প্রচারকারী, বেদ জ্ঞানী সে ব্রাক্ষ্মন।
যে ঈশ্বরের প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত, অহিংস,সত্,নিষ্ ঠাবান, সুশৃঙ্খল,বেদ প্রচারকারী, বেদ জ্ঞানী সে ব্রাক্ষ্মন।
ক্ষত্রিয় কে?
ঋগবেদ ১০.৬৬.৮
দৃড়ভাবে আচার পালনকারী, সত্কর্মের দ্বারা শূদ্ধ, রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন,অহিংস,ঈ শ্বর সাধক,সত্যের ধারক ন্যায়পরায়ন,বিদ্ বেষমুক্ত ধর্মযোদ্ধা,অসত্ এর বিনাশকারী সে ক্ষত্রিয়।
দৃড়ভাবে আচার পালনকারী, সত্কর্মের দ্বারা শূদ্ধ, রাজনৈতিক জ্ঞান সম্পন্ন,অহিংস,ঈ শ্বর সাধক,সত্যের ধারক ন্যায়পরায়ন,বিদ্ বেষমুক্ত ধর্মযোদ্ধা,অসত্ এর বিনাশকারী সে ক্ষত্রিয়।
বৈশ্য কে?
অথর্ববেদ ৩.১৫.১
দক্ষ ব্যবসায়ী দানশীল চাকুরীরত এবং চাকুরী প্রদানকারী
দক্ষ ব্যবসায়ী দানশীল চাকুরীরত এবং চাকুরী প্রদানকারী
শূদ্র কে?
ঋগবেদ ১০.৯৪.১১
যে অদম্য,পরিশ্রমী, অক্লান্ত জরা যাকে সহজে গ্রাস করতে পারেনা,লোভমুক্ত কষ্টসহিষ্ণু সেই শূদ্র।
যে অদম্য,পরিশ্রমী, অক্লান্ত জরা যাকে সহজে গ্রাস করতে পারেনা,লোভমুক্ত কষ্টসহিষ্ণু সেই শূদ্র।
এ হচ্ছে নির্ভেজাল যোগ্যতা অনুযায়ী ব্যবস্থা। যেমনভাবে এখনকার সময়ে ডিগ্রী প্রদান করা হয়, যজ্ঞপবিত দেয়া হতো বৈদিক নিয়ম অনুসারে। তাছাড়া, আচরণবিধির সাথে অসম্মতি ঘটলে যজ্ঞপবিত নিয়ে নেয়া হতো বর্ণগুলোর। ডাক্তার এর ছেলে যেমন ডাক্তার হবেই এমন কোন কথা নেই।ডাক্তার এর ঘরে জন্ম নিলেই এম.বি.বি.এস এর সার্টিফিকেট যেমন পাওয়া যায়না ঠিক তেমন ব্রাহ্মন এরঘরে জন্ম নিলেই ব্রাহ্মন হওয়া যায়না।বৈদিক বর্নাশ্রম ও একই।
বৈদিক ইতিহাসে অনেক উদাহরণ রয়েছে এ ধরনের-
(১) ঋষি ঐতরেয়া ছিলেন দাস বা অপরাধীর পুত্র কিন্তু তিনি পরিণত হন শীর্ষ ব্রাহ্মণদের মধ্যে একজন এবং লেখেন ঐতরেয়া ব্রাহ্মনএবং ঐতরেয়াপোনিষদ। ঐতরেয়া ব্রাহ্মনকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয় ঋগবেদ বোঝারজন্য।
(২) ঋষি ঐলুশ জন্মেছিলেন দাসীর ঘরে যিনি ছিলেন জুয়াখোর এবং নিচু চরিত্রের লোক। কিন্তু এই ঋষি ঋগবেদের উপর গবেষণা করেন এবং কিছু বিষয়আবিষ্কার করেন। তিনি শুধুমাত্র ঋষিদের দ্বারা আমন্ত্রিতই হতেন না এমনকি আচার্য্য হিসেবেও অধিষ্ঠিতহন। (ঐতরেয়া ব্রহ্ম ২.১৯)
(৩) সত্যকাম জাবাল ছিলেন এক পতিতার পুত্র যিনি পরে একজনব্রাহ্মণ হন।
(৪) প্রীষধ ছিলেন রাজা দক্ষের পুত্র যিনি পরে শূদ্র হন। পরবর্তীতে তিনি তপস্যা দ্বারা মোক্ষলাভ করেন প্রায়ঃশ্চিত্তে র পরে। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৪) যদি তপস্যা শূদ্রদের জন্য নিষিদ্ধ হতো যেমনভাবে উত্তররামায়ণের নকল গল্প বলে, তাহলে প্রীষধ কিভাবে তা করল?
(৫) নবগ, রাজা নেদিস্থের পুত্র পরিণত হন বৈশ্যে। তার অনেক পুত্র হয়ে যান ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.১.১৩)
(৬) ধৃষ্ট ছিলেন নবগের (বৈশ্য) পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং তার পুত্র হন ক্ষত্রিয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.২.২)
(৭) তার পরবর্তী প্রজন্মে কেউ কেউ আবার ব্রাহ্মণ হন। (বিষ্ণু পুরাণ ৯.২.২৩)
(৮) ভগবদ অনুসারে অগ্নিবেশ্য ব্রাহ্মণ হন যদিও তিনি জন্মনেন এক রাজার ঘরে।
(৯) রাথোটর জন্ম নেন ক্ষত্রিয় পরিবারে এবং পরে ব্রাহ্মণ হন বিষ্ণু পুরাণ ও ভগবদ অনুযায়ী।
(১০) হরিৎ ব্রাহ্মণ হন ক্ষত্রিয়ের ঘরে জন্ম নেয়াসত্ত্বেও। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৩.৫)
(১১) শৌনক ব্রাহ্মণ হন যদিও ক্ষত্রিয় পরিবারে জন্ম হয়। (বিষ্ণু পুরাণ ৪.৮.১) এমনকি বায়ু পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ ও হরিবংশ পুরাণ অনুযায়ী শৌনক ঋষির পুত্রেরা সকল বর্ণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
একই ধরনের দৃষ্টান্ত পাওয়াযায় গ্রীতসমদ, বিতব্য ও বৃৎসমতির মধ্যে।
একই ধরনের দৃষ্টান্ত পাওয়াযায় গ্রীতসমদ, বিতব্য ও বৃৎসমতির মধ্যে।
(১২) মাতঙ্গ ছিলেন চন্ডালের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন।
(১৩) রাবণ জন্মেছিলেন ঋষি পুলৎস্যের ঘরে কিন্তু পরে রাক্ষস হন।
(১৪) প্রবৃদ্ধ ছিলেন রাজা রঘুর পুত্র কিন্তু পরে রাক্ষস হন।
(১৫) ত্রিশঙ্কু ছিলেন একজন রাজা যিনি পরে চন্ডাল হন।
(১৬) বিশ্বামিত্রের পুত্রেরা শূদ্র হন। বিশ্বামিত্র নিজেছিলেন ক্ষত্রিয় যিনি পরে ব্রাহ্মণ হন।
(১৭) বিদুর ছিলেন এক চাকরের পুত্র কিন্তু পরে ব্রাহ্মণ হন এবং হস্তিনাপুর রাজ্যের মন্ত্রী হন।
(১৮) "শূদ্র" শব্দটি বেদে দেখা গেছে প্রায় ২০ বারের মতো। কোথাও এটি অবমাননাকরভাবে ব্যবহৃত হয়নি। কোথাও বলা হয়নি শূদ্রেরা হলো অস্পর্শযোগ্য, জন্মগতভাবে এই অবস্থাণে, বেদ শিক্ষা হতেঅনুনোমোদিত, অন্যান্য বর্ণের তুলনায় নিম্ন অবস্থাণের, যজ্ঞে অনুনোমোদিত।
(১৯) বেদে বলা হয়েছে শূদ্র বলতেবোঝায় কঠিন পরিশ্রমী ব্যক্তি। (তপসে শূদ্রম্ - যজুর্বেদ ৩০.৫)
একারণেই পুরুষ সুক্ত এদের বলে পুরো মানব সমাজের কাঠামো।
একারণেই পুরুষ সুক্ত এদের বলে পুরো মানব সমাজের কাঠামো।
এজন্যেই পবিত্র বেদ ঘোষনা করেছে সাম্যের বানী-
ঋগবেদ ৫.৬০.৫
অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাস
এতে সং ভ্রাতারো তাবৃধুঃ সৌভগায়
যুবা পিতা স্বপা রুদ্র
এযাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ ॥
অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাস
এতে সং ভ্রাতারো তাবৃধুঃ সৌভগায়
যুবা পিতা স্বপা রুদ্র
এযাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ ॥
বঙ্গানুবাদ :কর্ম ও গুনভেদেকেউ ব্রাহ্মন,কেউ ক্ষত্রিয়,কেউ বৈশ্য,কেউ শুদ্র।তাদের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয় ।ইহারা ভাই ভাই ।সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযত্ন করে ।ইহাদের পিতা তরুন শুভকর্ম ঈশ্বর এবং জননীরুপ প্রকৃতি ।পুরুষার্থী সন্তানকেই সুদিন প্রদান করে ।
তাহলে দেখুন কি পাপটাই না করে চলেছি আমরা!
Pritilata Waddedar
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন