সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলাধীন হাটিকুমরুল ইউনিয়নের নবরত্নপাড়া গ্রামে নবরত্ন মন্দির নামে একটি পুরার্কীতি আছে। এর আশপাশে আরো কয়েকটি ছোট ছোট মন্দির রয়েছে। এ মন্দিরগুলো আনুমানিক ১৭০৪-১৭২০ সালের মধ্যে নবাব মুর্শিদকুলি খানের শাসনামলে তার জনৈক নায়েব দেওয়ান রামনাথ ভাদুরী নামক ব্যক্তি স্থাপন করেন।
মূল মন্দিরটি তিনতলা বিশিষ্ট এবং অন্যান্য মন্দির সমূহ দোচালা এবং মঠাকৃতি আটকোনা বিশিষ্ট। এ মন্দির নির্মাণকালে প্রতিটি ইট ঘিয়ে ভেজে তৈরী করা হয়েছিল মর্মে জনশ্রুতি রয়েছে। নবরত্ন মন্দির ও আশপাশের অন্যান্য মন্দিরের প্রকৃত অবয়ব অনেকাংশে ধবংস প্রাপ্ত হলেও এর গঠন আকৃতি ও নির্মাণ শৈলী অভূতপূর্ব।
জানা গেছে, মথুরার রাজা প্রাণনাথের অত্যন্ত প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন জমিদার রামনাথ ভাদুরী। মথুরার রাজা প্রাণনাথ দিনাজপুর জেলার ঐতিহাসিক কান্তজির মন্দির নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় করে সংকটে পড়ে যান, এতে করে তিনি বাৎসরিক রাজস্ব পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। এদিকে রামনাথ ভাদুরী মথুরা থেকে অর্থশূন্য হাতে ফিরে এসে, বন্ধুত্বের খাতিরে নিজ কোষাগার থেকে টাকা দিয়ে রাজা প্রাণনাথের বকেয়া দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরের আদলে হাটিকুমরুলে ১টি মন্দির নির্মাণের শর্তে পরিশোধ করে দেন।
শর্ত মোতাবেক রাজা প্রাণনাথ কান্তজির মন্দিরের অবিকল নকশায় হাটিকুমরুলে এ নবরত্ন মন্দির নির্মাণ করে দেন। অন্যমতে, রাখাল জমিদার নামে পরিচিত রামনাথ ভাদুরী তার জমিদারি আয়ের সঞ্চিত কোষাগারের অর্থ দিয়েই এ মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরের বিশাল চত্বরে বিক্ষিপ্তভাবে আরও ৩টি মন্দির রয়েছে। নবরত্ন মন্দিরের উত্তর পাশেই শিব-পার্বতী মন্দির, তার পাশেই রয়েছে দোচালা চণ্ডি মন্দির, দক্ষিণপাশে পুকুরের পাড় ঘেঁষে রয়েছে পোড়ামাটির টেরাকোটা কারুকার্যখচিত শিবমন্দির।
বহুকাল ধরে মহা ধুমধামে এ ৪টি মন্দিরেই পূজা অর্চনা করা হতো। কালের বিবর্তনে ভারত উপমহাদেশে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি, দেশ বিভাগ ও নানা রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে হারিয়ে যায় জমিদারের পূর্ব পুরুষরা। অরক্ষিত এ নবরত্নের অনেক মূল্যবান প্রাচীন সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায় দেশি-বিদেশি দুর্বৃত্তরা। স্বাধীনতার পর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ পর্যায়ক্রমে বের করে নিয়ে আসে এর প্রাচীন সৌন্দর্য।
-----------
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন