১২ এপ্রিল ২০১৫

দ্যূতক্রিয়া


জুয়া খেলা বা দ্যূতক্রিয়া যা পাশাখেলা নামেও প্রাচীন ভারতবর্ষে পরিচিত ছিল।পৃথিবীর যতগুলো প্রাচীনতম ক্রীড়া প্রচলিত ছিল তার মধ্যে একটি এই দ্যূতক্রিয়া।


মহাভারতে আমরা দেখতে পাই জীবনঘনিষ্ঠ ঘটনার সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে কিভাবে এই পাশাখেলার কবলে পড়ে পঞ্চপাণ্ডবরা রাজ্য হারিয়েছিলেন,সী মাহীন দুঃখকষ্টে পতিত হয়েছিলেন।


পবিত্র বেদে মদ্যপান,নেশাদ্র ব্য গ্রহনের পাশাপাশি এই দ্যূতক্রিয়াকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে মানবজাতির কল্যানের জন্য ই।আমাদের এক পাঠকের প্রশ্ন ছিল পবিত্র বেদাদি শাস্ত্রে এই দ্যূতক্রিয়া সম্পর্কে কি বলা হয়েছে।


ঋগ্বেদ এর দশম মণ্ডলের ৩৪ তম সুক্তের নাম ‘অক্ষকিতব নিন্দা’ সুক্ত।সংস্কৃত অক্ষকিতব অর্থ ই হল দ্যূতক্রিয়া করে যে বা জুয়াড়ি।অক্ষ হচ্ছে ‘বিভিতক’ নামক একধরনের বৃক্ষের অপর নাম যার বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia bellirica.এই গাছ থেকেই তখনকার সময় এ অক্ষ তথা পাশাখেলার গুটি বানানো হত তাই এই খেলার নাম অক্ষ(অক্ষক্রীড় া বা পাশাখেলা))।


তাই অক্ষকিতব সুক্ত এর তৃতীয় হতে দ্বাদশ মন্ত্র পর্যন্ত জুয়া খেলার কুফল বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে-


“একজন জুয়াড়িকে(যে অক্ষ খেলে) কেউ পছন্দ করেনা।তার বাবা-মা,স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন,বন ্ধুবান্ধব কেউ না,একটি বৃদ্ধ,ক্লান্ত অশ্বের মত ই সে মুল্যহীন হয়ে পড়ে,কেউ ই তাকে গুরুত্ব দেয়না,কেনই বা দেবে?
অক্ষক্রীড়া অনুচিত তা জেনেও বারবার ওই ব্যাক্তি এই নেশা ছাড়তে পারেনা,এই দুর্দশা ক্রমশ তাকে ছুরির ন্যায় বিদ্ধ করতে থাকে,আগুনের ন্যায় দগ্ধ করতে থাকে,অসহ্য ব্যথার ন্যায় ভোগাতে থাকে,এই খেলায় জয়ী যা লাভ করে তাও একসময় ঠিক ই হারিয়ে যায়,প্রথমে অনেক মধুর মনে হলেও তা একসময় তাকে টুকরো টুকরো করে দেয়......।“
(১০.৩৪.৩-১২)


তাই ঋগ্বেদ ১০.৩৪.১৩ বলছে,
অক্ষৈর্মা দিব্যঃ কৃষিমিত কৃষস্ব বিত্তে রমস্ব বহু মন্যমানঃ।
তত্র গাবঃ কিতব তত্র জায়া তন্মে বি চষ্টে সবিতায়মর্য।।


অনুবাদ-
“হে মনুষ্য,পাশা খেলোনা,তোমার ভুমি আছে,অর্থ-সম্পত্ তি আছে।যা তোমাদের আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাক।তোমার পরিবার আছে, স্ত্রী আছে,এসব নিয়ে সুখে থাক।এটাই আলোকপ্রদর্শনকার ী পরমাত্মার প্রদত্ত জ্ঞান।”


উল্লেখ্য যে পবিত্র বেদের এই অক্ষকিতব সুক্ত কে মানবইতিহাসের প্রাচীনতম কাব্যরত্ন হিসেবে অভিহিত করা হয়।Arthur Anthony Macdonell তাঁর A History of Sanskrit Literature গ্রন্থে বলেছিলেন,
"বেদকে পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থ ধরে বলা যায় যে এই কাব্যটি(সুক্তটি ) প্রাচীনতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কর্ম।"


মহাঋষি মনু তাই বলেছিলেন,
“দ্যূতমেতৎ পুরাকল্পে দৃষ্টং বৈরকরং মহৎ।
তস্মাদ্ দ্যুতং ন সেবেত হাস্যর্থমপি বুদ্ধিমান্।।
(মনুসংহিতা ৯.২২৭)


অনুবাদ-দ্যূতক্র ীড়া অত্যন্ত অনিষ্টকর একটি অভ্যাস।তাই বুদ্ধিমান ব্যাক্তির কখনো দুষ্টামির ছলেও পাশাখেলা উচিৎ নয়।


ওম শান্তি শান্তি শান্তি
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।