জুয়া খেলা বা দ্যূতক্রিয়া যা পাশাখেলা নামেও প্রাচীন ভারতবর্ষে পরিচিত ছিল।পৃথিবীর যতগুলো প্রাচীনতম ক্রীড়া প্রচলিত ছিল তার মধ্যে একটি এই দ্যূতক্রিয়া।
মহাভারতে আমরা দেখতে পাই জীবনঘনিষ্ঠ ঘটনার সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে কিভাবে এই পাশাখেলার কবলে পড়ে পঞ্চপাণ্ডবরা রাজ্য হারিয়েছিলেন,সী মাহীন দুঃখকষ্টে পতিত হয়েছিলেন।
পবিত্র বেদে মদ্যপান,নেশাদ্র ব্য গ্রহনের পাশাপাশি এই দ্যূতক্রিয়াকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে মানবজাতির কল্যানের জন্য ই।আমাদের এক পাঠকের প্রশ্ন ছিল পবিত্র বেদাদি শাস্ত্রে এই দ্যূতক্রিয়া সম্পর্কে কি বলা হয়েছে।
ঋগ্বেদ এর দশম মণ্ডলের ৩৪ তম সুক্তের নাম ‘অক্ষকিতব নিন্দা’ সুক্ত।সংস্কৃত অক্ষকিতব অর্থ ই হল দ্যূতক্রিয়া করে যে বা জুয়াড়ি।অক্ষ হচ্ছে ‘বিভিতক’ নামক একধরনের বৃক্ষের অপর নাম যার বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia bellirica.এই গাছ থেকেই তখনকার সময় এ অক্ষ তথা পাশাখেলার গুটি বানানো হত তাই এই খেলার নাম অক্ষ(অক্ষক্রীড় া বা পাশাখেলা))।
তাই অক্ষকিতব সুক্ত এর তৃতীয় হতে দ্বাদশ মন্ত্র পর্যন্ত জুয়া খেলার কুফল বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে-
“একজন জুয়াড়িকে(যে অক্ষ খেলে) কেউ পছন্দ করেনা।তার বাবা-মা,স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন,বন ্ধুবান্ধব কেউ না,একটি বৃদ্ধ,ক্লান্ত অশ্বের মত ই সে মুল্যহীন হয়ে পড়ে,কেউ ই তাকে গুরুত্ব দেয়না,কেনই বা দেবে?
অক্ষক্রীড়া অনুচিত তা জেনেও বারবার ওই ব্যাক্তি এই নেশা ছাড়তে পারেনা,এই দুর্দশা ক্রমশ তাকে ছুরির ন্যায় বিদ্ধ করতে থাকে,আগুনের ন্যায় দগ্ধ করতে থাকে,অসহ্য ব্যথার ন্যায় ভোগাতে থাকে,এই খেলায় জয়ী যা লাভ করে তাও একসময় ঠিক ই হারিয়ে যায়,প্রথমে অনেক মধুর মনে হলেও তা একসময় তাকে টুকরো টুকরো করে দেয়......।“
(১০.৩৪.৩-১২)
তাই ঋগ্বেদ ১০.৩৪.১৩ বলছে,
অক্ষৈর্মা দিব্যঃ কৃষিমিত কৃষস্ব বিত্তে রমস্ব বহু মন্যমানঃ।
তত্র গাবঃ কিতব তত্র জায়া তন্মে বি চষ্টে সবিতায়মর্য।।
অনুবাদ-
“হে মনুষ্য,পাশা খেলোনা,তোমার ভুমি আছে,অর্থ-সম্পত্ তি আছে।যা তোমাদের আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাক।তোমার পরিবার আছে, স্ত্রী আছে,এসব নিয়ে সুখে থাক।এটাই আলোকপ্রদর্শনকার ী পরমাত্মার প্রদত্ত জ্ঞান।”
উল্লেখ্য যে পবিত্র বেদের এই অক্ষকিতব সুক্ত কে মানবইতিহাসের প্রাচীনতম কাব্যরত্ন হিসেবে অভিহিত করা হয়।Arthur Anthony Macdonell তাঁর A History of Sanskrit Literature গ্রন্থে বলেছিলেন,
"বেদকে পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থ ধরে বলা যায় যে এই কাব্যটি(সুক্তটি ) প্রাচীনতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কর্ম।"
মহাঋষি মনু তাই বলেছিলেন,
“দ্যূতমেতৎ পুরাকল্পে দৃষ্টং বৈরকরং মহৎ।
তস্মাদ্ দ্যুতং ন সেবেত হাস্যর্থমপি বুদ্ধিমান্।।
(মনুসংহিতা ৯.২২৭)
অনুবাদ-দ্যূতক্র ীড়া অত্যন্ত অনিষ্টকর একটি অভ্যাস।তাই বুদ্ধিমান ব্যাক্তির কখনো দুষ্টামির ছলেও পাশাখেলা উচিৎ নয়।
ওম শান্তি শান্তি শান্তি
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন