এ কথাটা শুনেছি মানুষ পৃথিবীর সবথেকে বুদ্ধিমান প্রানী। কিন্তু কজন ভেবে দেখেছি কি সেই কারন? বুদ্ধি বেশি? কোন দিক দিয়ে? আসুন একটি আলোচনা করা যাক। আচ্ছা, কোন মানুষ কি পারে ভুমিকম্পের আগে তা জানতে? নিশ্চয়ই পারে। তবে মেশিনের সাহায্যে। তাই তো? মানুষ বুদ্ধিমান প্রানী। তাই সেই বুদ্ধির সাহায্যে মেশিন বানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু জানেন কি পিঁপড়েরা কিন্তু ওইটুকু প্রানী হয়েও আগে থেকেই ভুমিকম্পের খবর বুঝতে পারে। তাই মাটির ওপরে বেরিয়ে আসে। তাদের কিন্তু কোন মেশিন লাগেনা। আচ্ছা, পরিযায়ী পাখির কথা নিশ্চয়ই জানেন। তারা শীত কালে নিজেদের যায়গা ছেরে বহু দুরের পথ অতিক্রম করে চলে আসে আমাদের দেশে। আচ্ছা, ভেবে দেখুন তো, এদের তো কোন কম্পাস লাগে না। তবুও এত হাজার কিলোমিটার কিভাবে খুঁজে চলে আসে? আর ছোট পাখিও আসে, এটা বলতে পারবেন না যে তারা অভিজ্ঞ, পথ চেনে। ওদের মধ্যে এমনি প্রযুক্তি আছে জন্ম থেকেই যা পৃথিবীর চৌম্বকীয় শক্তির মাধ্যমেই তাকে কাজে লাগিয়ে দিক চিনতে সক্ষম হয়। ভাবুন। আরেকটি কথা ভাবুন। বিভিন্ন পশুদের দেখুন যেমন বাঘ সিংহ ইত্যাদির শিশুদের শিকার করা, কোন খাবার খাবে কোনটা খাবেনা তা শেখান ইত্যাদির প্রয়োজন পরেনা। নিজেদেরই সেই শক্তি জন্ম থেকেই ততৈরি। আর হাঁটা? তাও সেখাতে হয়েনা। মানুষের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দেখুন। এবার আরো সাঙ্ঘাতিক। আমাদের পাঁচটা ইন্দ্রিয় আছে, তা আমরা জানি। এবার দেখুন, একটা কুকুরের ঘ্রাণশক্তি আমাদের চেয়ে বেশি। মানেন তো? আর দৃষ্টি শক্তি? সেটাও তো প্রমান হয়েছে যে কুকুররা এমন কিছু বেশি দেখতে পায় যা আমরা পারিনা। ওরা শুনতেও পায় বুঝি আমাদের চেয়ে বেশি। রাতে চোর পরলে টের পাওয়া যায়। কত্তা জাগার আগেই ওরা কিন্তু চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। রইল বাকি দুই। আস্বাদ গ্রহন আর ত্বকের কথা জানিনা। তবুও দেখুন ৫ এ কিন্তু ৩ এই ওরা এগিয়ে গেল। নাঃ বুঝছি ভাবছেন আমি মানুষের সাথে বিভিন্ন জন্তুদের তুলোনা করছে মানুষকে অপমান করার জন্যে। না, তা নয়। আসলে আমি এটাই এবার তুলতে যাচ্ছি যে মানুষ হয়ে তো জন্মালাম, তা করলামটা কি? কিসে আমরা ওদের চেয়ে বেশি হলাম? বিজ্ঞানের উন্নতি করলাম? অবশ্যই করলাম। সেবিষয় সন্দেহ নেই। কিন্তু সেতো বিজ্ঞানিরা করল। আপনি আমি কি করলাম? আমি সাধারন মানুষের কথাই বলতে চাইছি। বিজ্ঞানিরা খেটে খুটে আবিষ্কার করে চলেছেন, আমরা কজন তারই বা হদিস রাখি? পরের নিন্দা করব না ভাল কথা আলোচনা করব। তখন কোন খেলোয়ার একটু খারাপ খেলায় দেশ হারল তা নিয়ে বিদ্বেশ ছড়াতেই ব্যাস্ত। কিন্তু দেখুন একদিনও ব্যাট নিয়ে মাঠে নামলেননা। এদিকে এমন করে বলছেন যেন ওর যায়গায় আপনাকে নামালে আপনি ম্যাচটা জিতিয়ে দিতেন। এই চলছে আরকি। ভালো কাজ করব এসব ভাবার সময় কোথায়? “আরে ধুর মশায়, আপনি বাঁচলে বাপের নাম। শোনেননি? নিজেকে নিয়ে ভাবতেই দিন কেটে যাচ্ছে, পরকে নিয়ে ভাববার সময় কোথায়। ওসব আপনি ভাবুন। পেটে ভাত জোটার চিন্তা না থাকলে এসব ভাবার সময় থাকে।”
এই ধারনাই আজ আমাদের ধ্বংস করছে। করে চলেছে। ভেবে দেখবেন। এর মাধ্যমের আমরা কি স্বার্থপর হয়ে যাইনি? এই স্বার্থপরতা কি মানুষের ভালো করে না ক্ষতি করে? কেন, পারিনা আমরা এর থেকে বেরিইয়ে আসতে, নতুন কিছু করতে? অন্যের জন্যে কিছু করতে? এবার শুনুন তাহলে আমরা ওদের চেয়ে কোথায় কোথায় আলাদা।
মানুষ সৃষ্টিশীল, সে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে। ওরা পারেনা। মানুষ নতুন আবিষ্কার করে দেশকে, জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, ওরা পারেনা। কবিতা, গল্প, গান, আঁকা, ইত্যাদি কে পারে? সে এই মানুষ। নিজের জীবনকে, পরের জীবনকে কোন পথে চালনা করলে পাবে আলোকের সন্ধান, সত্যের সন্ধান, তা জানাতে ও জানতে পারে একমাত্র মানুষ। মানুষই পারে, নিজেকে দেবতা করতে। জন্তু নয়। মানুষই পারে নিজের জ্ঞানের আলোয় দেশকে উজ্জ্বল করতে। জাতির অভভুত্থান ঘটাতে। জানোয়ার পারেনা। এখানেই মানুষের সাথে তাদের পার্থক্য। আরো অনেক কিছুই আছে কিন্তু এখানে এটুকুই বললাম কারন আগামী আলোচনা এর ওপরে ভিত্তি করেই করতে চলেছি।
শুধু খাওয়া, ঘুম আর গতানুগোতিক কাজই যদি করে যাব সারাজীবন ধরে, তাহলে আর মানুষ হলাম কিকরতে। ভাবুন, একটা স্টেশনের কুকুর, রোজ নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে উঠে স্টেশনের দোকানটায় গিয়ে দাঁড়ায়, ওই সময় একজন আসে সে রোজ তাকে বিস্কুট খাওয়ায়। এভাবে সারাদিন খাওয়ার খুঁজে দিন কেটে যায়, রাত হলে ঘুমিয়ে পরে আবার পরের দিন সকালে একই কাজ। মাঝে সন্তান সন্ততি হয়, সেতো প্রাকৃতিক নিয়মেই হচ্ছে। এই ভাবেই একদিন মৃত্যু এসে যায়। জীবনের সমাপ্তি হয়। এবার ভেবে দেখুনতো, আমাদের জীবনও কি এরকমই কিছু একটা হয়ে যাচ্ছেনা? সকালে উঠে অফিস ছোটা, স্টেশনের লোকটার বিস্কুটের মতই মাসের শেষে মাইনে পাওয়ার জন্যে কাজ করে যাওয়া। এভাবেই সংসার, ছেলেমেয়ে, শেষে মৃত্যু। বাকিটা কি করলাম? কজন মনে রাখলো মৃত্যুর পর আমায়? কেউ না। নিজের লোককটা বাদে। তাহোলে গীতায় ভগবান যে কর্মের কথা বলেছেন তা কি শুধু এই কর্ম? ভেবে দেখবেন। নিজের লোক কারা? পরের লোকই বা কারা? কেউ কি নিজের? বা কেউ কি পরের? কি জানি। ভেবে দেখু। গীতাতেই এর উত্তর আছে। বইটা একটু পরবেন। তুলসি পাতা হাতে নিয়ে পরতে হবেনা। মনে প্রেম নিয়ে, ভক্তি নিয়ে পরবেন। সত্যকে জানবার ইচ্ছা নিয়ে, এবং তা জানতে পারবেন সেই বিশ্বাস নিয়ে পরবেন। আর একবার যদি এর মানে বোঝেন, জানবেন সত্যের ছোঁয়া লেগেছে আপনার চোখে। একটা কথাই শুধু বলি, মানুষ হয়ে জন্মেছি যখন মানুষের কর্মই করতে চাই। আর রামকৃষ্ণ ঠাকুরের একটা কথা মাথায় রাখবেন যে সব কাজই তার জন্যে (পরমেশ্বরের জন্যে) করবেন, নিজের জন্যে নয়। সবই তাতেই সমর্পন করবেন। তাই বুঝতেই পারছেন, এমন কিছু করবেন না যা তাকে সমর্পন করতে লজ্জা পাবেন। এমন কিছু করুন যাতে এই ভাগ্য করে পাওয়া মানুষের জীবনটা স্বার্থক হয়। তাতে তিনিও খুশি হবেন। যে, তাঁর সবথেকে বড় সৃষ্টি বিফলে যায়নি।
- See more at: http://bangalihindupost.blogspot.in/2012/04/blog-post_06.html#sthash.f2QH0YoT.dpuf
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন