প্রভুপাদ : প্রকৃতপক্ষে, শ্রীকৃষ্ণ সকলের কাছে প্রকাশিত হননি । শ্রীকৃষ্ণ যখন এই বসুন্ধরায় অবতরণ করেছিলেন, তখন কয়েকজন দুর্লভ মহাত্মাই কেবল তাঁকে পরমেশ্বর ভগবান বলে জনতে পেরেছিলেন । সকলে পারেনি । অভক্ত ও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি প্রকাশিত হননি। তাই ভগবদ্গীতাতে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, তাঁর শুদ্ধ ভক্তও ছাড়া আর সকলেই তাঁকে তাদেরই মতো একজন মনে করে । তিনি কেবল তাঁর ভক্তদেরই কাছে সমস্ত আনন্দের উৎসরূপে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন । কিন্তু অল্প-বুদ্ধিসম্প ন্ন অভক্তদের কাছে তিনি নিজেকে যোগমায়ার দ্বারা আবৃত করে রেখেছিলেন ।
শ্রীমদ্ভাগবতে (১/৮/১৯) কুন্তীদেবী তাঁর প্রার্থনায় বলেছেন যে, ভগবান যোগমায়ার যবনিকার দ্বারা নিজেকে আবৃত করে রাখেন, তাই সাধারণ মানুষ তাঁকে জানতে পারে না ।
যোগমায়ার আবরণ সম্পর্কে শ্রীঈশোপনিষদেও (মন্ত্র ১৫) প্রতিপন্ন করা হয়েছে, যেখানে ভক্ত প্রার্থনা করছেন- হিরন্ময়েন পাত্রেণ সত্যস্যাপিহিতং মুখম্ । তৎ ত্বং পুযন্নপাবৃণু সত্যধর্মায় দৃষ্ট্যে ।। "হে ভগবান ! তুমিই সমস্ত ব্রক্ষাণ্ডের প্রতিপালক । তোমাকে ভক্তি করাই হচ্ছে পরম ধর্ম । তাই, আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি যেন তুমি আমাকেও পালন কর । তোমার অপ্রাকৃত রুপ যোগমায়ার দ্বারা আচ্ছাদিত । ব্রক্ষ্যজ্যোতিই তোমার অন্তরঙ্গা শক্তির আবরণ । কৃপা করে তুমি তোমার এই জ্যোতির্ময় আবরণকে উন্মোচিত করে তোমার সচ্চিদানন্দ ব্রিগ্রহের দর্শন দান কর ।" ভগবানের সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ তাঁর চিন্ময়-শক্তি ব্রক্ষজ্যোতির দ্বারা আচ্ছাদিত এবং এই কারণেই অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন নির্বিশেষবাদীরা ভগবানকে দেখতে পায় না ।
শ্রীমদ্ভাগবতেও (১০/১৪/৭) ব্রক্ষা তাঁর প্রার্থনায় বলেছেন, "হে পরম পুরষোত্তম ভগবান !
হে পরমাত্মন্ ! হে সমস্ত রহস্যের স্বামীন্ ! এই জগতে আপনার শক্তি ও লীলা কে হিসাব করতে পারে ? আপনি সর্বদাই আপনার অন্তরঙ্গা শক্তির বিস্তার করছেন, তাই কেউই আপনাকে বুঝতে পারে না ।বিদ্বান বৈজ্ঞানিকেরা ও পণ্ডিতেরা এই পৃথিবীর ও অন্যান্য গ্রহের সমস্ত অণূ-পরমাণূর হিসাব করতে পারে না, যদিও তুমি সকলের সামনে বিদ্যমান ।" পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেবল অজই নন, তিনি অব্যয়ও । তাঁর শ্রীবিগ্রহ সচ্চিদানন্দময় এবং তাঁর সমস্ত শক্তি অক্ষয় অব্যয় ।
{শ্রীমদ্ভাবদ্গী তা যথাযথ ।|। সপ্তম অধ্যায় “ বিজ্ঞান-যোগ ” । শ্লোক -২৫ এর তাৎপর্য ।}
সৌজন্যে [ কৃষ্ণভাবনামৃত ]
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন