১২ এপ্রিল ২০১৫

হিন্দু ধর্মের ' অ-আ-ক-খ' : লেখক-তাপস ঘোষ


হিন্দু ধর্মের প্রকৃত নাম সনাতন ধর্ম । অর্থাৎ যা চিরন্তন , শাশ্বত । স্বামী বিবেকানন্দ একে সকল ধর্মের প্রসূতি স্বরূপ বলে নির্দেশ করেছেন । কারণ এই বিশ্বে প্রচলিত ধর্ম মত গুলির প্রায় সব গুলির মূল ভাব হিন্দু ধর্মে দেখা যায় । সভ্য মানব জাতির বিভিন্ন ধর্ম মত গুলির মধ্যে হিন্দু ধর্মই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ।হিন্দু ধর্মের প্রকৃত নাম সনাতন ধর্ম । অর্থাৎ যা চিরন্তন , শাশ্বত । স্বামী বিবেকানন্দ একে সকল ধর্মের প্রসূতি স্বরূপ বলে নির্দেশ করেছেন । কারণ এই বিশ্বে প্রচলিত ধর্ম মত গুলির প্রায় সব গুলির মূল ভাব হিন্দু ধর্মে দেখা যায় । সভ্য মানব জাতির বিভিন্ন ধর্ম মত গুলির মধ্যে হিন্দু ধর্মই সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ।হিন্দু ধর্মের আকর হল বেদ , যার মুখ্যতঃ দুটি অংশ - ' জ্ঞান কাণ্ড' ও 'কর্ম কাণ্ড' । 'কর্ম কাণ্ড' যুগ ভেদে পরিবর্তন শীল । ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণ যখন বললেন - '' কলি যুগে বেদ মত চলে না '' তখন তিনি এই 'কর্ম কাণ্ড' কেই নির্দেশ করেছেন ।' জ্ঞান কাণ্ড' যুগ ভেদে অপরিবর্তনীয় । অরণ্যচারী ঋষি দের সাধনার দ্বারা আবিষ্কৃত পারমার্থিক সত্য এই ' জ্ঞান কাণ্ড' । এটি কোনও সাম্প্রদায়িক মত নয় । হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন মিলে যেমন জল হয় , এটা যেমন যে কোনও মানুষের দ্বারা পরীক্ষায় সত্য প্রমাণিত হবে , ঠিক তেমনি ' জ্ঞান কাণ্ড ' নির্দেশিত অনুভূতি সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের জন্যে প্রযোজ্য । এখানেই হিন্দু ধর্ম সকল ধর্ম মত কে নিজের মধ্যে গ্রহণ করেছে । অথবা ঐতিহাসিক বিচারে বলতে হয় হিন্দু ধর্ম সকল ধর্ম মতের জন্ম দিয়েছে ।হিন্দু ঋষিগণ ধর্মপথ নির্দেশের সময় মানুষের রুচি ও ক্ষমতার ভিন্নতার কথা চিন্তা করেছেন , তাই মূর্তি পূজা থেকে শুরু করে নিরাকার ব্রহ্ম উপাসনা পর্যন্ত সবই হিন্দু ধর্মে স্বীকৃত হয়েছে । বিভিন্ন মাপের মানুষের জন্য একই মাপের পোশাক এই ধর্ম দেয়না । হিন্দুরা নিজ নিজ রুচি ও ক্ষমতার স্তর অনুযায়ী নিজের উপযুক্ত সাধন পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন । উদ্দেশ্য সবারই এক , এবং তা হল - আত্ম জ্ঞান , অর্থাৎ স্ব-স্বরূপ কে জানা ।হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন সাধন পথ গুলিকে মুখ্যতঃ চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে । এগুলি হল জ্ঞান যোগ , কর্ম যোগ , ভক্তি যোগ ও রাজ যোগ ।জ্ঞান যোগে আত্ম বিশ্লেষণ এবং ' শ্রবণ , মনন ও নিদিধ্যাসনের ' দ্বারা ' নেতি নেতি ' বিচারের মাধ্যমে সাধক লক্ষ্যে উপনীত হন । আচার্য শঙ্কর এই সাধনা প্রচার করেছেন ।কর্ম যোগে নিষ্কাম কর্ম দ্বারা সকাম কর্ম বন্ধন কেটে সাধক লক্ষ্যে উপনীত হন । ভগবান শ্রী কৃষ্ণ অর্জুন কে কুরুক্ষেত্র প্রান্তরে কর্মযোগে উদ্দীপ্ত করেছেন ।ভক্তিযোগে প্রেমের বন্ধনে ভক্ত সাধক ঈশ্বরকে ধরার চেষ্টা করেন । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ-চৈতন্য ( মহাপ্রভু ) এই ভাবের প্রচার করেছেন ।রাজযোগে ধ্যান , প্রাণায়াম প্রভৃতি শারীরিক ও মানসিক প্রক্রিয়ার দ্বারা সাধক স্ব-স্বরূপ লাভ করেন । মহর্ষি পতঞ্জলি এই সাধন পদ্ধতি প্রচার করেছেন । পৃথক পৃথক ভাবে এই চারটি পথের সাধক অনেক ক্ষেত্রে বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন , যেমন জ্ঞান যোগ মানুষকে শুষ্ক বিচার প্রবণ করতে পারে । কর্ম যোগে কর্ম সকাম হয়ে সাধকের অবনতি ঘটাতে পারে । ভক্তি যোগে গোঁড়ামি আসতে পারে । রাজ যোগে সিদ্ধাই বা অলৌকিক ক্ষমতা লাভের দিকে মন চলে যেতে পারে । ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণ এই নবযুগের জন্য তাই নির্দেশ করেছেন যোগ - চতুষ্টয়ের সমন্বয় । স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন - জ্ঞান - কর্ম - ভক্তি অথবা রাজ যোগ এই চারটি পথের যে কোনও একটি অবলম্বন করে সাধক সিদ্ধ হতে পারেন , কিন্তু ' শ্রী রামকৃষ্ণ - রূপ মুষায় ( ছাঁচে) জীবন উৎকীর্ণ করিতে হইলে ( জীবন ঢেলে গঠন করতে গেলে ) সেই জীবনে থাকিবে - চতুর্বিধ যোগের সমন্বয় ' সমন্বয়ের PRACTICAL প্রয়োগ হিসাবে স্বামীজী তুলে ধরেছেন শিব - জ্ঞানে জীব সেবার আদর্শ । এই হল স্বামী বিবেকানন্দ নির্দেশিত 'PRACTICAL বেদান্ত' । বনের বেদান্ত এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সমাজে ও সংসারের সর্বত্র ।
- See more at: http://bangalihindupost.blogspot.in/2012/04/blog-post_5534.html#sthash.Q9bwPEWA.dpuf
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।