১২ এপ্রিল ২০১৫

গুরু কে? দেবাশীষ ভট্টাচার্য


অনেকের মনে এই প্রশ্নটি থাকে যে গুরু কে? গুরুকরণ করার প্রয়োজনীয়তাই বা কি? গুরু ছাড়া কি সেই উদ্দেশ্য সফল হয়না যা গুরু থাকলে হয়? ইত্যাদি। আমি এ বিষয় কিছু সহজ উদাহরন দিয়ে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি। শুরুতেই বলে রাখি যারা আমার লেখা পরেছেন জানেন। কিন্তু যারা নতুন পরছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলি যে আমি বিরাট জ্ঞানী বা যোগী সাধকগনের জন্যে লিখিনা।কারন আমি নিজে তা নই। আর আমার তাদের ন্যায় অপার জ্ঞান ও নেই। আমি লিখি জনসাধারনের জন্যে। যারা সেই অর্থে আধ্যাত্মিক জগতের রসাস্বাদন করতে পারেননি। সাধক যোগী পন্ডিতগণতো সেই রস পেয়েইছেন। আমি আর তাদের কি জানাব। বরং আমারি জানা বাকি আছে। আমিও জ্ঞানের সন্ধানী। সত্যজ্ঞানসন্ধানী। কিন্তু আমি সাধারন মানুষদের কাছে সরল আলোচনার মাধ্যমে তাদেরও এই সুন্দর জগতটির প্রতি একটু আকর্ষন জন্মে তুলতে সহায়তা করতে চাই। কারন আমি নিজে জানি যে এই জগত সত্যের জগত। আর সত্যকে জানা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। তাই যারা আধ্যত্মীক বইগুলিকে ভাষা উদ্ধারের অসুবিধায় দূরে সরিয়ে রাখে, না বুঝে বলে এই জগত বয়স্কদের জন্যে তাদের বোঝাতে চাই তা সত্য নয়। সত্যটাকে দেখুন। কারন সত্যই শিব। আর শিবই সুন্দর। সত্যম শিবম সুন্দরম।
ছাত্রাবস্থায় আমাদের শিক্ষকের প্রয়োজন হয়। শিক্ষন কে? জিনি সেই বিষয় আমার অধিক পড়াশোনা করেছেন এবং যাঁর অভিজ্ঞতা আমার চেয়ে অধিক। আমি তখন ছাত্র। তিনি শিক্ষক। এই শিক্ষক সেক্ষেত্রে আমার গুরু। শিক্ষাগুরু। এই শিক্ষা কিসের? সেই বিষয়ের। ধরি আমি অঙ্কের শিক্ষক রাখলাম। তিনি অঙ্কটা অন্তত আমার চেয়ে বেশি জানেন। তাই তিনি সেখাতে পারছেন আর আমি শিখতে যাচ্ছি তার কাছে। মানে এই গুরু বিশেষ কোন বিষয় শেখাচ্ছেন। ঠিক তেমনি যে শিক্ষক আমাদের আধ্যাত্ম জগতের শিক্ষা দেন, যিনি আমাদের চেয়ে সেই শিক্ষায় অনেক বেশি জ্ঞানী, তিনিই গুরু। বিষয় আধ্যাত্মীকতা। তাহলে প্রশ্ন হল, সাধারন বিষয়গুলি যা স্কুলে পড়ান হয়েথাকে সেগুলির শিক্ষক যেমন প্রচুর আছে, এই শিক্ষক অর্থাৎ গুরু সেই তুলনায় কম কেন? আর সেই শিক্ষা কি এইসব বিষয়গুলির থেকে বেশি কঠিন? উত্তর হল ধরি যেকোন একটি বিষয় যেমন ইংরাজী। এখন এই বিষয়টির ওপর যদি আপনাকে মাস্টার ডিগ্রি করতে হয় আপনাকে কত বছরের অধ্যাবসায় এর পেছনে খরচ করতে হবে ভেবে দেখুন তো? ২ বছর? না। ৫ বছর? তাও না। কারন আপনি শুধু স্নাতক এবং মাস্টার এই দুটির হিসাব করলে হবেনা।কারন তার আগে আপনি যদি মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাশটা না করতেন তাহলে এগুলি সম্ভব হত না।তার আগের ক্লাসগুলির ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই। তারমানে আপনি যদি ক্লাস ১ থেকে ধরেন তাহলে প্রাএ ১৭বছর লাগল আপনার এই ডিগ্রী পেতে। আর এই বছরগুলিতে যদি শুধু ইংরাজী শিক্ষকের কথাই ভাবেন তাহলে ভেবে বলুনতো কজন শিক্ষক শিখিয়েছে ইংরাজি আপনাকে? হয়েতো এখন গুনে সাথে সাথে বলতেও পারবেন না। তাহলে ভেবে দেখুন যে একটি বিষয়, যা একটি বিশেষ ভাষা এবং যা মানুষেরই সৃষ্টি তা শিখতেই যদি আপনাকে এতগুলো বছর দিতে হয়, এতজন শিক্ষকের সম্মুখিন হতে হয় তাহলে সেই জ্ঞান, যা সয়ং পরমাত্মার জ্ঞান, যা সাধারন মানুষের ধারনারও বাইরে সেই জ্ঞান লাভ করে যিনি গুরু হয়েছেন তিনি কতটা শিক্ষিত। ভেবে দেখুন সেই জ্ঞান শিক্ষা পেতে কত বছর লাগতে পারে? হয়েত এক জীবনেও সেই জ্ঞান লাভ সম্ভব নয়। যে বিষয়টি এই বিশ্বব্রম্ভান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করছে তা জানতে কতবছর লাগতে পারে? ভেবে দেখুন। আর এবিষয়টি নিয়ে যদি জানতে চান তাহলে কোন শিক্ষক ছাড়া শিখতে পারবেন তা কি সম্ভব?
আরেকটি উদাহরন দিচ্ছি। ধরুন আপনাকে কোন একটি স্থানের কোন এক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে হবে। ধরুন তার বাড়ি আপনার চেনা এলাকাতেই। তাহলে তাকে খুঁজে বের করতে আপনাকে বেশি বেগও পেতে হবেনা। হয়েতো পথে কাউকে জিজ্ঞাসা না করেই আপনি তাকে খুজে বের করতে সক্ষম হলেন। এবার ভেবে দেখুন সেই বাড়ি অন্য কোন লোকালয়। আপনাকে ট্রেনে বাসে সেই স্থানে পৌঁছে তাকে খুঁজতে হবে। আপনি তখন ট্রেন বা বাস থেকে নেমে কাউকে সেই স্থানের ঠিকানা জানতে চাইলেন। মানে আপনি যখন একটু দূরে গেলেন যা আপনার পরিচিতির বাইরে তখন আপনি সেই স্থান সম্পর্কে আপনার জ্ঞানের সল্পতার কারনে একজন স্থানীয়ের সাহায্য নিলেন। যার সাহায্য নিলেন সে সেই স্থান সম্পর্কে অবগত হলে আপনাকে সেই স্থানের নির্দেশ দেখিয়ে দিল। আপনিও পৌঁছোলেন। এভাবে যদি আপনাকে দূর দেশে যেতে হলে তখন দেখবেন পথে পথে অনেকক্ষেত্রেই আপনার অজানার কারনে আপনাকে অনেকেরই সাহায্য নিতে হচ্ছে। কোথায় যাব, কোথা দিয়ে যাব, কোন বাস বা ট্রেন ধরব ইত্যাদি ইত্যাদি। মানের জ্ঞানের গন্ডী কমতে থাকলেই সাহায্যের প্রয়োজনও বেরে যায়।আবার উলটো দিকদিয়ে ভাবলে আপনি যার সাহায্যপ্রার্থী তাকেও কিন্তু সেই বিশয় অবগত থাকতে হবে।তবেই সে আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। যাত্রার দুরত্ব যত বৃদ্ধি পাবে ততই এই সাহায্যের প্রয়োজন বারবে। এবার ভাবুন, যে স্থানটি এই পৃথিবিরই মধ্যে রয়েছে আপনার থেকে কিছুটা দুরেই সেইকাহ্নে যেতেই যদি আপনার সাহায্য লাগে জানার বিভিন্ন ক্ষেত্রে, তাহলে যে স্থান এসবের উর্দ্ধে, সেখানে যেতে আপনি কিভাবে ভাবছেন কারও সাহায্য ছাড়াই পৌঁছোতে পারবেন? সেই পথের আপনি স্বরুপ বা অবস্থান কিছুই যানেন না। কোথাদিয়ে কিভাবে যাবেন তাও ঠিক জানা নেই। তাহোলে? এই স্থলে আপনাকে সেই মানুষটিই সাহায্য করতে পারেন যিনি সেই রাস্তা সম্পর্কে অবগত। আর তা বুঝতেই পারছেন যেকোন মানুষেরই চেনার কথা নয়। কারন সাধারন জ্ঞানে তা জানার কথাও নয়, কারন তার জন্যে লাগে বিশেষ শিক্ষা, উচ্চস্তরের অধ্যাবশায় ও অনুশীলন। আর সেই শিক্ষা দিতে পারেন, আপনাকে সেই পথের সন্ধান যিনি বলতে পারেন, সেই স্থান সম্পর্কে যিনি অবগত তিনিই হলেন গুরু। আশা করি গুরুর আবশ্যকতা সম্পর্কিত প্রশ্নটি কিছুটা হলেও সমাধান হতে পারবে।
- See more at: http://bangalihindupost.blogspot.in/2012/04/blog-post_06.html#sthash.f2QH0YoT.dpuf
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।