শিক্ষা ও দর্শন:-
স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বাস করতেন যে আদি শঙ্করের ভাষ্যের ভিত্তিতে বেদান্ত দর্শনে হিন্দু ধর্মের সারাংশ সবচেয়ে ভালভাবে প্রকাশিত হয়েছে । তিনি নিম্নলিখিতভাবে বেদান্তের শিক্ষাসমূহের সারসংক্ষেপ করেন, প্রত্যেক আত্মাই সম্ভাব্যরুপে ঐশ্বরিক/দেবসুলভ । লক্ষ্য হচ্ছে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের দ্বারা এ দেবত্বকে সুষ্পষ্টভাবে দেখানো । কর্ম, বা পূজা, বা মন নিয়ন্ত্রণ, বা দর্শন- একটির দ্বারা, বা অধিকের দ্বারা, বা এ সকলগুলির দ্বারা এটি কর – এবং মুক্ত হ্ও । এটি হচ্ছে ধর্মের সমগ্রতা । মতবাদ, বা গোঁড়া মতবাদ, বা ধর্মীয় আচার, বা গ্রন্থ, বা মন্দির, বা মূর্তি হচ্ছে গৌণ খুঁটিনাটি বিষয় ছাড়া কিছুই নয় । যতক্ষণ পর্যন্ত আমার দেশের একটি কুকুরও ক্ষুধার্ত, আমার সমগ্র ধর্মকে একে খাওয়াতে হবে এবং এর সেবা করতে হবে, তা না করে অন্য যাই করা হোক না কেন তার সবই অধার্মিক । জেগে ওঠো, সচেতন হও এবং লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না । শিক্ষা হচ্ছে মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে থাকা উৎকর্ষের প্রকাশ । ধর্ম হচ্ছে মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে থাকা দেবত্বের প্রকাশ । মানুষের সেবা করা হচ্ছে ঈশ্বরের সেবা করা । বিবেকানন্দের মতানুসারে, রামকৃষ্ণ থেকে পাওয়া তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে “জীব হচ্ছে শিব” । এটি তাঁর মন্ত্রে পরিণত হয়, এবং দরিদ্র নারায়ণ সেবার ধারণা উদ্ভাবন করেন- (দরিদ্র) মানুষের মধ্যে এবং মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সেবা । “যদি সত্যিই সকল ইন্দ্রিয়গোচর বস্ত্তু বা বিষয়ের নিমিত্তে ব্রহ্মের একতা থাকে, তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমরা অন্যদের থেকে আমাদের ভাল বা মন্দ বিবেচনা করব?”- এ প্রশ্ন তিনি নিজেকে করতেন । শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে এ পার্থক্য বা স্বাতন্ত্র্যসমূহ একতা/সমগ্রতার মধ্যস্থিত আলোর শূন্যতায় মিলিয়ে যায় যখন ভক্ত মোক্ষে পৌঁছেন । তখন এ একতা/সমগ্রতা সম্পর্কে অসচেতন “ব্যক্তিদের” জন্য সমবেদনা এবং তাদের সাহায্য করার দৃঢসংকল্প জাগ্রত হয় । বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল রাত্রে, কন্যাকুমারী, তামিলনাড়ু স্বামী বিবেকানন্দ বেদান্তের সে শাখার অঙ্গীভূত বলে নিজেকে মনে করতেন যে শাখার মতে কেউই প্রকৃতভাবে মুক্ত হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের সকলেই মুক্ত হচ্ছি । এমনকি ব্যক্তিগত পাপমোচনের আকাঙ্খা ত্যাগ করতে হবে, এবং শুধুমাত্র অন্যদের পাপমোচনের জন্য ক্লান্তিহীন কর্ম আলোকিত মানুষের প্রকৃত চিহ্ন । আত্মনো মোক্ষার্থম জগতহিতায় চ (নিজের পাপমোচনের জন্য এবং জগতের মঙ্গলের জন্য)- এ নীতিতে তিনি শ্রী রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন প্রতিষ্ঠা করেন । বিবেকানন্দ তাঁর শিষ্যদের পবিত্র, অস্বার্থপর হতে এবং শ্রদ্ধা/বিশ্বাস যাতে থাকে সে উপদেশ দেন । তিনি ব্রহ্মাচর্য চর্চা করতে উপদেশ দেন । তাঁর শৈশবের বন্ধু প্রিয় নাথ সিনহার সাথে এক আলোচনায় তিনি তার দৈহিক ও মানসিক শক্তি এবং বাগ্মিতার উৎস/কারণ হিসেবে ব্রহ্মাচর্য চর্চাকে অভিহিত করেন । বিবেকানন্দ প্যারাসাইকোলজি এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের আবির্ভূত ক্ষেত্রকে সমর্থন করেননি (এর এক দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় তাঁর এ বক্তৃতায় মানুষ নিজেই তাঁর ভাগ্য নির্মাতা, সম্পূর্ণ কর্ম, ভলিউম ৮, নোটস অফ ক্লাস টকস এবং বক্তৃতাসমূহ) এ কারণে যে তাঁর মতে এ ধরণের কৌতুহল আধ্যাত্মিক অগ্রগতিকে সাহায্য করে না বরং তা ব্যাহত করে ।
প্রভাব:-
স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্ণর জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালচারী একদা লক্ষ্য করেন যে “বিবেকানন্দ হিন্দু ধর্মকে বাঁচিয়েছেন, ভারতকে বাঁচিয়েছেন ।” -সুভাষ চন্দ্র বোসের মতে বিবেকানন্দ “আধুনিক ভারতের নির্মাতা” এবং মহাত্মা গান্ধীর জন্য, বিবেকানন্দের প্রভাব বাড়িয়েছে তাঁর “দেশের জন্য ভালবাসা কয়েক হাজার গুণ ।” তাঁকে স্মরণ করতে ভারতে ১২ই জানুয়ারী তাঁর জন্মদিনে ভারতীয় যুব দিবস পালিত হয় । এটা ছিল ভারতীয় যুবকদের সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দের সবচেয়ে যথাযথ ইঙ্গিত এবং কিভাবে আধুনিক জগতে সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণের সাথে সাথে তাদের প্রাচীন মূল্যবোধসমূহ ধরে রাখতে লড়াই করা উচিত । স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের স্বাধীনতা লড়াইয়ের আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছেন বলে ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা হয় । তাঁর লেখাসমূহ সুভাষ চন্দ্র বোস, অরবিন্দ ঘোষ এবং বাঘা যতীনসহ স্বাধীনতা যোদ্ধাদের এক পুরো প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছিল । বিবেকানন্দ ছিলেন বিপ্লবী স্বাধীনতা যোদ্ধা ভুপেন্দ্রনাথ দত্তের ভাই । ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব সুভাষ চন্দ্র বোস বলেছিলেন, আমি বিবেকানন্দ সম্পর্কে না লিখে পারছি না । এমনকি তাঁর সঙ্গে যারা অন্তরঙ্গ হবার বিশেষাধিকার পেয়েছে তাদের মধ্যে খুব অল্প কয়েকজনই তাঁকে বুঝতে পারত বা তাঁর গভীরতা মাপতে পারত । তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল সমৃদ্ধ, সুগভীর, জটিল… ত্যাগে তিনি বেপরোয়া, কর্মে তিনি বিরতিহীন, ভালবাসায় তিনি সীমাহীন, জ্ঞানে তিনি প্রগাঢ় ও বিচিত্রগামী, আবেগে তিনি প্রাণোচ্ছ্বল, আক্রমণে তিনি করুণাহীন তথাপি শিশুর মত সরল, আমাদের পৃথিবীতে তিনি ছিলেন এক বিরল ব্যক্তিত্ব । অরবিন্দ ঘোষ বিবেকানন্দকে তাঁর আধ্যাত্মিক বিষয়ে বিজ্ঞ পরামর্শদাতা হিসেবে বিবেচনা করতেন । বিবেকানন্দ ছিলেন এক সক্ষম আত্মা যদি কখনও এ ধরণের কিছু থেকে থাকে, মানুষের মধ্যে এক সিংহ, কিন্ত্তু তাঁর সৃষ্টিশীল ক্ষমতা ও শক্তির যে নিশ্চায়ক কর্ম তিনি রেখে গেছেন তা আমাদের ধারণায় তুলনায় অযোগ্য । তাঁর প্রভাব এখনও প্রচন্ডভাবে কাজ করছে বলে আমরা মনে মনে উপলব্ধি করি, আমরা ভালভাবে জানি না কিভাবে, আমরা ভালভাবে জানি না কোথায়, কোন কিছুতে যার এখনও আকার দেয়া হয়নি, কিছুটা সিংহসদৃশ, মহিমান্বিত, অন্তর্জ্ঞানী, বৈপ্লবিক উত্থান যা ভারতের আত্মায় প্রবেশ করেছে এবং আমরা বলি, “লক্ষ করো, বিবেকানন্দ এখনও তাঁর মাতার আত্মায় বেঁচে আছে এবং তাঁর শিশু-সন্তানদের আত্মায় বেঁচে আছে । যদিও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো প্রবন্ধে বিবেকানন্দের সরাসরি উল্লেখ নেই, কবি রোমা রোলাকে বলেছিলেন, “যদি আপনি ভারতকে জানতে চান, তবে বিবেকানন্দ পড়ুন, তাঁর মধ্যে সবকিছুই ইতিবাচক এবং কিছুই নেতিবাচক নয় ।” এটি বিবেকানন্দের ব্যপারে ঠাকুর যে উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন তা দেখায় । বিবেকানন্দের গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সম্পর্কে ঠাকুর একটি কবিতা লেখেন: “রামকৃষ্ণ পরমহংস রামকৃষ্ণ দেবের প্রতি”
বহু সাধকের
বহু সাধনার ধারা,
ধেয়ানে তোমার
মিলিত হয়েছে তারা;
তোমার জীবনে
অসীমের লীলাপথে
নূতন তীর্থ
রূপ নিল এ জগতে;
দেশ বিদেশের
প্রণাম আনিল টানি
সেথায় আমার
প্রণতি দিলাম আনি।।
স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বাস করতেন যে আদি শঙ্করের ভাষ্যের ভিত্তিতে বেদান্ত দর্শনে হিন্দু ধর্মের সারাংশ সবচেয়ে ভালভাবে প্রকাশিত হয়েছে । তিনি নিম্নলিখিতভাবে বেদান্তের শিক্ষাসমূহের সারসংক্ষেপ করেন, প্রত্যেক আত্মাই সম্ভাব্যরুপে ঐশ্বরিক/দেবসুলভ । লক্ষ্য হচ্ছে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের দ্বারা এ দেবত্বকে সুষ্পষ্টভাবে দেখানো । কর্ম, বা পূজা, বা মন নিয়ন্ত্রণ, বা দর্শন- একটির দ্বারা, বা অধিকের দ্বারা, বা এ সকলগুলির দ্বারা এটি কর – এবং মুক্ত হ্ও । এটি হচ্ছে ধর্মের সমগ্রতা । মতবাদ, বা গোঁড়া মতবাদ, বা ধর্মীয় আচার, বা গ্রন্থ, বা মন্দির, বা মূর্তি হচ্ছে গৌণ খুঁটিনাটি বিষয় ছাড়া কিছুই নয় । যতক্ষণ পর্যন্ত আমার দেশের একটি কুকুরও ক্ষুধার্ত, আমার সমগ্র ধর্মকে একে খাওয়াতে হবে এবং এর সেবা করতে হবে, তা না করে অন্য যাই করা হোক না কেন তার সবই অধার্মিক । জেগে ওঠো, সচেতন হও এবং লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না । শিক্ষা হচ্ছে মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে থাকা উৎকর্ষের প্রকাশ । ধর্ম হচ্ছে মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে থাকা দেবত্বের প্রকাশ । মানুষের সেবা করা হচ্ছে ঈশ্বরের সেবা করা । বিবেকানন্দের মতানুসারে, রামকৃষ্ণ থেকে পাওয়া তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে “জীব হচ্ছে শিব” । এটি তাঁর মন্ত্রে পরিণত হয়, এবং দরিদ্র নারায়ণ সেবার ধারণা উদ্ভাবন করেন- (দরিদ্র) মানুষের মধ্যে এবং মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সেবা । “যদি সত্যিই সকল ইন্দ্রিয়গোচর বস্ত্তু বা বিষয়ের নিমিত্তে ব্রহ্মের একতা থাকে, তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমরা অন্যদের থেকে আমাদের ভাল বা মন্দ বিবেচনা করব?”- এ প্রশ্ন তিনি নিজেকে করতেন । শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে এ পার্থক্য বা স্বাতন্ত্র্যসমূহ একতা/সমগ্রতার মধ্যস্থিত আলোর শূন্যতায় মিলিয়ে যায় যখন ভক্ত মোক্ষে পৌঁছেন । তখন এ একতা/সমগ্রতা সম্পর্কে অসচেতন “ব্যক্তিদের” জন্য সমবেদনা এবং তাদের সাহায্য করার দৃঢসংকল্প জাগ্রত হয় । বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল রাত্রে, কন্যাকুমারী, তামিলনাড়ু স্বামী বিবেকানন্দ বেদান্তের সে শাখার অঙ্গীভূত বলে নিজেকে মনে করতেন যে শাখার মতে কেউই প্রকৃতভাবে মুক্ত হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের সকলেই মুক্ত হচ্ছি । এমনকি ব্যক্তিগত পাপমোচনের আকাঙ্খা ত্যাগ করতে হবে, এবং শুধুমাত্র অন্যদের পাপমোচনের জন্য ক্লান্তিহীন কর্ম আলোকিত মানুষের প্রকৃত চিহ্ন । আত্মনো মোক্ষার্থম জগতহিতায় চ (নিজের পাপমোচনের জন্য এবং জগতের মঙ্গলের জন্য)- এ নীতিতে তিনি শ্রী রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন প্রতিষ্ঠা করেন । বিবেকানন্দ তাঁর শিষ্যদের পবিত্র, অস্বার্থপর হতে এবং শ্রদ্ধা/বিশ্বাস যাতে থাকে সে উপদেশ দেন । তিনি ব্রহ্মাচর্য চর্চা করতে উপদেশ দেন । তাঁর শৈশবের বন্ধু প্রিয় নাথ সিনহার সাথে এক আলোচনায় তিনি তার দৈহিক ও মানসিক শক্তি এবং বাগ্মিতার উৎস/কারণ হিসেবে ব্রহ্মাচর্য চর্চাকে অভিহিত করেন । বিবেকানন্দ প্যারাসাইকোলজি এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের আবির্ভূত ক্ষেত্রকে সমর্থন করেননি (এর এক দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় তাঁর এ বক্তৃতায় মানুষ নিজেই তাঁর ভাগ্য নির্মাতা, সম্পূর্ণ কর্ম, ভলিউম ৮, নোটস অফ ক্লাস টকস এবং বক্তৃতাসমূহ) এ কারণে যে তাঁর মতে এ ধরণের কৌতুহল আধ্যাত্মিক অগ্রগতিকে সাহায্য করে না বরং তা ব্যাহত করে ।
প্রভাব:-
স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্ণর জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপালচারী একদা লক্ষ্য করেন যে “বিবেকানন্দ হিন্দু ধর্মকে বাঁচিয়েছেন, ভারতকে বাঁচিয়েছেন ।” -সুভাষ চন্দ্র বোসের মতে বিবেকানন্দ “আধুনিক ভারতের নির্মাতা” এবং মহাত্মা গান্ধীর জন্য, বিবেকানন্দের প্রভাব বাড়িয়েছে তাঁর “দেশের জন্য ভালবাসা কয়েক হাজার গুণ ।” তাঁকে স্মরণ করতে ভারতে ১২ই জানুয়ারী তাঁর জন্মদিনে ভারতীয় যুব দিবস পালিত হয় । এটা ছিল ভারতীয় যুবকদের সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দের সবচেয়ে যথাযথ ইঙ্গিত এবং কিভাবে আধুনিক জগতে সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণের সাথে সাথে তাদের প্রাচীন মূল্যবোধসমূহ ধরে রাখতে লড়াই করা উচিত । স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের স্বাধীনতা লড়াইয়ের আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছেন বলে ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা হয় । তাঁর লেখাসমূহ সুভাষ চন্দ্র বোস, অরবিন্দ ঘোষ এবং বাঘা যতীনসহ স্বাধীনতা যোদ্ধাদের এক পুরো প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছিল । বিবেকানন্দ ছিলেন বিপ্লবী স্বাধীনতা যোদ্ধা ভুপেন্দ্রনাথ দত্তের ভাই । ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব সুভাষ চন্দ্র বোস বলেছিলেন, আমি বিবেকানন্দ সম্পর্কে না লিখে পারছি না । এমনকি তাঁর সঙ্গে যারা অন্তরঙ্গ হবার বিশেষাধিকার পেয়েছে তাদের মধ্যে খুব অল্প কয়েকজনই তাঁকে বুঝতে পারত বা তাঁর গভীরতা মাপতে পারত । তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল সমৃদ্ধ, সুগভীর, জটিল… ত্যাগে তিনি বেপরোয়া, কর্মে তিনি বিরতিহীন, ভালবাসায় তিনি সীমাহীন, জ্ঞানে তিনি প্রগাঢ় ও বিচিত্রগামী, আবেগে তিনি প্রাণোচ্ছ্বল, আক্রমণে তিনি করুণাহীন তথাপি শিশুর মত সরল, আমাদের পৃথিবীতে তিনি ছিলেন এক বিরল ব্যক্তিত্ব । অরবিন্দ ঘোষ বিবেকানন্দকে তাঁর আধ্যাত্মিক বিষয়ে বিজ্ঞ পরামর্শদাতা হিসেবে বিবেচনা করতেন । বিবেকানন্দ ছিলেন এক সক্ষম আত্মা যদি কখনও এ ধরণের কিছু থেকে থাকে, মানুষের মধ্যে এক সিংহ, কিন্ত্তু তাঁর সৃষ্টিশীল ক্ষমতা ও শক্তির যে নিশ্চায়ক কর্ম তিনি রেখে গেছেন তা আমাদের ধারণায় তুলনায় অযোগ্য । তাঁর প্রভাব এখনও প্রচন্ডভাবে কাজ করছে বলে আমরা মনে মনে উপলব্ধি করি, আমরা ভালভাবে জানি না কিভাবে, আমরা ভালভাবে জানি না কোথায়, কোন কিছুতে যার এখনও আকার দেয়া হয়নি, কিছুটা সিংহসদৃশ, মহিমান্বিত, অন্তর্জ্ঞানী, বৈপ্লবিক উত্থান যা ভারতের আত্মায় প্রবেশ করেছে এবং আমরা বলি, “লক্ষ করো, বিবেকানন্দ এখনও তাঁর মাতার আত্মায় বেঁচে আছে এবং তাঁর শিশু-সন্তানদের আত্মায় বেঁচে আছে । যদিও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো প্রবন্ধে বিবেকানন্দের সরাসরি উল্লেখ নেই, কবি রোমা রোলাকে বলেছিলেন, “যদি আপনি ভারতকে জানতে চান, তবে বিবেকানন্দ পড়ুন, তাঁর মধ্যে সবকিছুই ইতিবাচক এবং কিছুই নেতিবাচক নয় ।” এটি বিবেকানন্দের ব্যপারে ঠাকুর যে উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন তা দেখায় । বিবেকানন্দের গুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সম্পর্কে ঠাকুর একটি কবিতা লেখেন: “রামকৃষ্ণ পরমহংস রামকৃষ্ণ দেবের প্রতি”
বহু সাধকের
বহু সাধনার ধারা,
ধেয়ানে তোমার
মিলিত হয়েছে তারা;
তোমার জীবনে
অসীমের লীলাপথে
নূতন তীর্থ
রূপ নিল এ জগতে;
দেশ বিদেশের
প্রণাম আনিল টানি
সেথায় আমার
প্রণতি দিলাম আনি।।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন