সনাতনধর্মের ( প্রকৃত হিন্দু ধর্মের ) প্রাচীন মুনি ঋষি গণ এবং তাঁদের উত্তরসূরি হিন্দু সাধক গণ তাঁদের সাধনার মধ্যে দিয়ে বহুত্বময় এই জগতের কারণ স্বরূপ এক , অখণ্ড , অনন্ত চৈতন্যকে ( consciousness ) উপলব্ধি করেছেন । এই চিৎ সত্তা বা চৈতন্যকেই তাঁরা জগতের নিমিত্ত ও উপাদান কারণ রূপে চিহ্নিত করেছেন । জগতের ভিত্তি স্বরূপ এই অখণ্ড অনন্ত চৈতন্যকেই ঈশ্বর বলা হয় ।
বেদের উপমা অনুযায়ী বলা যায় , মাকড়সা নিজদেহ থেকে জাল উৎপন্ন করে স্বয়ং সেই জালে অবস্থান করে । এখানে জালের উপাদান হল মাকড়সার দেহ , কাজেই মাকড়সাই জালের উপাদান কারণ । আবার মাকড়সা নিজেই জাল তৈরী করেছে তাই জালের নিমিত্ত-কারণও ( কর্মের কর্তা ) মাকড়সা । ঠিক তেমনই চৈতন্য স্বরূপ ঈশ্বর এই জগতের নিমিত্ত ও উপাদান কারণ দুইই ।
হিন্দু দর্শন ঈশ্বরের বিশেষণ হিসাবে ‘ সচ্চিদানন্দ ‘ শব্দটি প্রয়োগ করে ।
সচ্চিদানন্দ শব্দটি বিশ্লেষণ করলে আমরা সৎ ( শাশ্বত বা সনাতন ) , চিৎ (
চেতনা বা জ্ঞানময়তা ) এবং আনন্দ ( প্রেমময়তা ) এই শব্দ গুলি পাই । এই
শাশ্বত চৈতন্যময় সত্তাই জগৎ কারণ ঈশ্বর ।জগতের সবকিছুর মুল উপাদান হওয়ায়
তিনি আমাদের সকলের আত্মস্বরূপ বা ‘ আত্মা ‘ ( self ) । হিন্দু শাস্ত্রে এই
চৈতন্যময় সত্তাকে ‘ আত্মা ‘ নামেও অভিহিত করা হয় । এই আত্মাই জগত রূপে
প্রতিভাত হচ্ছেন ।
শ্রী ভগবান গীতায় শিক্ষা দিচ্ছেন , ” সমং সর্বেষু ভূতেষু তিষ্ঠন্তং পরমেশ্বরম্ ।/ বিনশ্বৎস্ববিনশ্যন্তং যঃ পশ্যতি স পশ্যতি।। / সমং পশ্যন্ হি সর্বত্র সমবস্থিতমীশ্বরম্ । / ন হিনস্ত্যাত্মনাত্মানং ততো যাতি পরাং গতিম্ ।। / ” ( গীতা – ১৩ /২৮-২৯ )
অর্থাৎ, বিনাশশীল সর্বভূতে অবিনাশী ঈশ্বরকে যিনি সমভাবে দেখেন তিনিই যথার্থ দর্শন করেন ; কারণ সর্বত্র সমভাবে সেই ঈশ্বর অবস্থিত দেখে সেই সমদর্শী আর কাউকে হিংসা করতে পারেননা । সেইজন্য তিনি পরম গতি প্রাপ্ত হন ।
আমাদের উপনিষদে এই জাগতিক সবকিছুর স্বরূপ হিসাবে সেই অনন্ত চৈতন্যময় ঈশ্বরকেই চিহ্নিত করা হয়েছে । ” ত্বং স্ত্রী ত্বং পুমানসি ত্বং কুমার উত বা কুমারী । / ত্বং জীর্ণো দন্ডেন বঞ্চসি ত্বং জাতো ভবসি – বিশ্বতোমুখঃ ।। / ( শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৪/৩) অর্থাৎ তুমি স্ত্রী , তুমি পুরুষ , তুমি কুমার , তুমি কুমারী , তুমি বৃদ্ধ – দণ্ডহস্তে ভ্রমণ করছ , তুমি জাত হয়ে নানা রূপ ধারণ করেছ ।
সুতরাং দেখাযাচ্ছে হিন্দুধর্ম তত্ত্ব অনুযায়ী এই বহুত্ব পূর্ণ জগতের পিছনে একত্ব রয়েছে । এবং জগতের ভিত্তি স্বরূপ সেই একত্ব হল অখণ্ড চৈতন্য বা ঈশ্বর ।
আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান quantum potential ভিত্তিক holistic approach দ্বারা জগতের এই একত্বের দিকে , এই স্বরূপতঃ অখণ্ডতার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছে । বিজ্ঞানী ডেভিড বোহম্ , বিজ্ঞানী বেসিল হিলি প্রমুখ বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানীর গবেষণা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য । বিজ্ঞানী বোহম্ পরীক্ষা করে প্রমাণ করেছেন Bell’s Theorem কে , যা জগতের এক ও অখণ্ড সত্তার কথা বলে । এই তত্ত্ব অনুসারে বিশ্বের সবকিছু যুক্ত আছে unbroken wholeness এর সঙ্গে ।
আমাদের বেদান্ত দর্শনে জগতের কারণ স্বরূপ নিত্যমুক্ত অখণ্ড চৈতন্যের কথা বলা হয় । আধুনিক বিজ্ঞানীগণ নিত্যমুক্ত অখণ্ড চৈতন্য ( consciousness )কে মূল হিসাবে ধরে জীবের individual চৈতন্যের ব্যাখ্যা করতে চাইছেন । বিজ্ঞানের এই নতুন পদক্ষেপকে বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী অমিত গোস্বামী চিহ্নিত করেছেন ‘ monistic ontological approach ‘ নামে । এই monistic ontological approach আসলে চৈতন্যের বিজ্ঞান ( science within consciousness ) যা অধ্যাত্ম সাধকের তুরীয় অনুভূতির সমর্থক ।
হাজার হাজার বছর আগে ভারতীয় ঋষি গণ তাঁদের অধ্যাত্ম গবেষণার ফলাফল রেখে গেছেন বেদ নামক পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থে । বেদান্ত বা উপনিষদ হল এই বেদেরই সারভাগ বা নির্যাস । এই যুক্তি ও প্রত্যক্ষ অনুভূতি নির্ভর অধ্যাত্মতত্ত্বের উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সনাতন হিন্দু ধর্ম । বর্তমান জড় বিজ্ঞানও ভিন্ন পথে এগিয়ে চলেছে একই সত্যের দিকে । বিজ্ঞানের এই অগ্রগতি এখনও শেষ হয়নি । হয়তো এমন দিন আসতে চলেছে যেদিন জড় বিজ্ঞানীরা তাঁদের ভাষায় তাঁদের মতো করে ঘোষণা করবেন , ” শৃন্বতু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ । / আ যে ধামানি দিব্যানি তস্থূঃ ।। / বেদাহমেতাং পুরুষং মহান্তম্/ আদিত্য বর্ণং তমসঃ পরস্তাৎ । / তমেব বিদিত্বাহতিমৃত্যুমেতি / নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেহনায় ।। / ” {শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ (২/৫ ও ৩/৮ ) }
— ” হে দিব্যধামবাসী অমৃতের সন্তানগণ তোমরা শ্রবণ কর , আমি পথ খুঁজে পেয়েছি । যিনি সকল অন্ধকারের পারে , তাকে জানলেই মৃত্যুকে অতিক্রম করা যায় ।
শ্রী ভগবান গীতায় শিক্ষা দিচ্ছেন , ” সমং সর্বেষু ভূতেষু তিষ্ঠন্তং পরমেশ্বরম্ ।/ বিনশ্বৎস্ববিনশ্যন্তং যঃ পশ্যতি স পশ্যতি।। / সমং পশ্যন্ হি সর্বত্র সমবস্থিতমীশ্বরম্ । / ন হিনস্ত্যাত্মনাত্মানং ততো যাতি পরাং গতিম্ ।। / ” ( গীতা – ১৩ /২৮-২৯ )
অর্থাৎ, বিনাশশীল সর্বভূতে অবিনাশী ঈশ্বরকে যিনি সমভাবে দেখেন তিনিই যথার্থ দর্শন করেন ; কারণ সর্বত্র সমভাবে সেই ঈশ্বর অবস্থিত দেখে সেই সমদর্শী আর কাউকে হিংসা করতে পারেননা । সেইজন্য তিনি পরম গতি প্রাপ্ত হন ।
আমাদের উপনিষদে এই জাগতিক সবকিছুর স্বরূপ হিসাবে সেই অনন্ত চৈতন্যময় ঈশ্বরকেই চিহ্নিত করা হয়েছে । ” ত্বং স্ত্রী ত্বং পুমানসি ত্বং কুমার উত বা কুমারী । / ত্বং জীর্ণো দন্ডেন বঞ্চসি ত্বং জাতো ভবসি – বিশ্বতোমুখঃ ।। / ( শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ৪/৩) অর্থাৎ তুমি স্ত্রী , তুমি পুরুষ , তুমি কুমার , তুমি কুমারী , তুমি বৃদ্ধ – দণ্ডহস্তে ভ্রমণ করছ , তুমি জাত হয়ে নানা রূপ ধারণ করেছ ।
সুতরাং দেখাযাচ্ছে হিন্দুধর্ম তত্ত্ব অনুযায়ী এই বহুত্ব পূর্ণ জগতের পিছনে একত্ব রয়েছে । এবং জগতের ভিত্তি স্বরূপ সেই একত্ব হল অখণ্ড চৈতন্য বা ঈশ্বর ।
আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান quantum potential ভিত্তিক holistic approach দ্বারা জগতের এই একত্বের দিকে , এই স্বরূপতঃ অখণ্ডতার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করছে । বিজ্ঞানী ডেভিড বোহম্ , বিজ্ঞানী বেসিল হিলি প্রমুখ বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানীর গবেষণা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য । বিজ্ঞানী বোহম্ পরীক্ষা করে প্রমাণ করেছেন Bell’s Theorem কে , যা জগতের এক ও অখণ্ড সত্তার কথা বলে । এই তত্ত্ব অনুসারে বিশ্বের সবকিছু যুক্ত আছে unbroken wholeness এর সঙ্গে ।
আমাদের বেদান্ত দর্শনে জগতের কারণ স্বরূপ নিত্যমুক্ত অখণ্ড চৈতন্যের কথা বলা হয় । আধুনিক বিজ্ঞানীগণ নিত্যমুক্ত অখণ্ড চৈতন্য ( consciousness )কে মূল হিসাবে ধরে জীবের individual চৈতন্যের ব্যাখ্যা করতে চাইছেন । বিজ্ঞানের এই নতুন পদক্ষেপকে বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী অমিত গোস্বামী চিহ্নিত করেছেন ‘ monistic ontological approach ‘ নামে । এই monistic ontological approach আসলে চৈতন্যের বিজ্ঞান ( science within consciousness ) যা অধ্যাত্ম সাধকের তুরীয় অনুভূতির সমর্থক ।
হাজার হাজার বছর আগে ভারতীয় ঋষি গণ তাঁদের অধ্যাত্ম গবেষণার ফলাফল রেখে গেছেন বেদ নামক পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থে । বেদান্ত বা উপনিষদ হল এই বেদেরই সারভাগ বা নির্যাস । এই যুক্তি ও প্রত্যক্ষ অনুভূতি নির্ভর অধ্যাত্মতত্ত্বের উপরই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সনাতন হিন্দু ধর্ম । বর্তমান জড় বিজ্ঞানও ভিন্ন পথে এগিয়ে চলেছে একই সত্যের দিকে । বিজ্ঞানের এই অগ্রগতি এখনও শেষ হয়নি । হয়তো এমন দিন আসতে চলেছে যেদিন জড় বিজ্ঞানীরা তাঁদের ভাষায় তাঁদের মতো করে ঘোষণা করবেন , ” শৃন্বতু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ । / আ যে ধামানি দিব্যানি তস্থূঃ ।। / বেদাহমেতাং পুরুষং মহান্তম্/ আদিত্য বর্ণং তমসঃ পরস্তাৎ । / তমেব বিদিত্বাহতিমৃত্যুমেতি / নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেহনায় ।। / ” {শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ (২/৫ ও ৩/৮ ) }
— ” হে দিব্যধামবাসী অমৃতের সন্তানগণ তোমরা শ্রবণ কর , আমি পথ খুঁজে পেয়েছি । যিনি সকল অন্ধকারের পারে , তাকে জানলেই মৃত্যুকে অতিক্রম করা যায় ।
1 Comments:
ভাল লাগল
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন