নিম্নোক্ত এ্যক্টগুলো বাংলাদেশে প্রযোজ্য হিন্দু আইনকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছে-
- ১৮৫০ সালের কাসট্ ডিসএ্যবিলিটিস রিমুভাল এ্যক্ট। n নাতন হিন্দু আইন ও
প্রথা অনুযায়ী যদি কোন হিন্দু তার ধর্ম পরিত্যাগ করত, অথবা ধর্মসভা হতে
বহিস্কৃত হতো অথবা জাতিচ্যুত হতো তাহরে এই পরিহার, বহিস্কার অথবা বঞ্চনার
ফলে তার অধিকার ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়ে যেত এবং তাকে তার উত্তরাধিকার
লাভের অধিকার হতে বঞ্চিত করা হতো। উপরোক্ত এ্যক্টের ফলে ব্রিটিশ ভারতের
আদালতসমূহ ধর্মত্যাগের জন্য সৃষ্ট এই পরিণতিগুলো রহিত করে। এই এ্যক্ট
ফ্রিডম অব রিলিজিয়ান এ্যক্ট নামেও পরিচিত।
- ১৮৫৬ সালের হিন্দু উইডোজ রিম্যারেজ এ্যক্ট। কতিপয় ক্ষেত্রে এই এ্যক্ট হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহ অনুমোদন করেছে।
- ১৯২৫ সালের সাকসেশন এ্যক্টের ধারা ৫৭, ২১৪ এবং তৃতীয় তফসীল। এই ধারা দুইটি এবং তফশীলে হিন্দু উইল সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে।
- ১৮৬৬ সালের নেটিভ কনভার্টস ম্যারেজ ডিসসলিউশন এ্যক্ট। এই এ্যক্টের
অধিনে কতিপয় অবস্থায় খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত একজন হিন্দু তার বিবাহ
বিচ্ছেদ করতে পারে।
- ১৮৭২ সালের স্পেশাল ম্যারেজ এ্যক্ট। এই এ্যক্ট ১৯২৩ সালে সংশোধন করা হয়েছে এবং কতিপয় বিবাহের ক্ষেত্রে এই এ্যক্ট প্রযোজ্য।
- ১৮৮২ সালের ট্রান্সফার অব প্রপার্টি (১৯২৯ সালে যেভাবে সংশোধিত
হয়েছে)। এই এ্যক্টের ১২৯ ধারায় উল্লেখিত কতিপয় বিষয় ব্যতীত এই এ্যক্ট
সম্পত্তি হস্তান্তর বিষয়ে সমুদয় হিন্দু আইন বাতিল করে দিয়েছে।
- ১৮৭৫ সালের মেজরিটি এ্যক্ট। এই এ্যক্ট নাবালত্বের বয়সসীমা নির্ধারণ
করে দিয়েছে এবং তা বিবাহ, বিবাহ-চিচ্ছেদ ও দত্তক গ্রহণের বিষয় ব্যতীত
অন্যান্য বিষয়ে হিন্দুদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
- ১৮৯০ সালের হিন্দু গার্ডিয়ানস এ্যন্ড ওয়ার্ডস এ্যক্ট। যে সকল
ক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক অভিভাবক নিযুক্ত হয়ে সেই সকল ক্ষেত্রে এই এ্যক্ট
প্রযোজ্য।
- ১৯২৮ সালের হিন্দু ইনহেরিট্যান্স (রিমুভাল অব ডিসএ্যবিলিটিস)এ্যক্ট। যে
সকল অযোগ্যতা কোন হিন্দুকে উত্তরাধিকার ও পার্টিশনের মাধ্যমে অংশ লাভে
বঞ্চিত করত এ এ্যক্ট যে সকল অযোগ্যতাকে সীমিত করেছে।
- ১৯২৯ সালের হিন্দু ল’ অব ইনহেরিট্যান্স (এ্যামেন্ডমেন্ট) এ্যক্ট। এ
এ্যক্ট পিতামহ বা পিতার-পিতার পরে এবং পিতার ভ্রাতার পূর্বে পুত্রের কন্যা,
দৌহিত্রী, ভগিনি এবং ভগিনির পুত্রকে পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকার
করেছে।
- ১৯২৯ সালের ট্রান্সফার অব প্রপার্টি(এ্যামেন্ডমেন্ট) সাপ্লিমেন্টারী
এ্যক্ট। এই এ্যক্ট অজাত ব্যক্তির অনুকূলে হস্তান্তর ও রিকোয়েষ্ট সম্পর্কিত
১৯১৪ ও ১৯২১ সালের মাদ্রাজ এ্যক্ট এবং ১৯১৬ সালের হিন্দু ডিসপজিশন অব
প্রপার্টি এ্যক্টকে সংশোধন করেছে।
- ১৯৩০ সালের হিন্দু গেনস অব লানিংস এ্যক্ট। এই এ্যক্ট শিক্ষার সাহায্য
অর্জিত সকল সম্পত্তিই অর্জনকারীর পৃথক সম্পত্তিতে রূপান্তর করেছে।
- ১৯৩৭ সালের হিন্দু উইমেনস রাইটস্ টু প্রপার্টি এ্যক্ট। এই এ্যক্ট ১৯৩৭
সালের ১৪ এপ্রিল হতে কার্যকরী হয় এবং ইহা হিন্দু বিধবাদের উত্তরাধিকারের
নতুন অধিকার দান করে মিতাক্ষরাসহ উত্তরাধিকারীত্বের মূলে কুঠারাঘাত করেছে।
- ১৮৭২ সালের কন্ট্রাক্ট এ্যক্ট। এই এ্যক্ট হিন্দু চুক্তি আইনকে বাতিল করেছে। তবে ‘দামদুপাত’ নীতি চুক্তি আইনের দ্বারা বাতিল হয়নি।
- ১৮৭২ সালের এভিডেন্স এ্যক্ট। এই আইন হিন্দু সাক্ষ্য আইনকে বাতিল করে দিয়েছে।
- ১৮৬০ সালের পেনাল কোড। এই আইন সমুদয় হিন্দু দন্ড আইনকে বাতিল করেছে।
উপরোক্ত পরিবর্তন ছাড়াও ১৯৫৫ ও ১৯৫৬ সালে নিম্নোক্ত এ্যক্টসমূহের
দ্বারা স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের হিন্দু আইনে মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ
পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, স্মর্তব্য যে, এই আইনগুলো বাংলাদেশী হিন্দুদের
ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
- ১৯৫৫ সালের হিন্দু ম্যারেজ এ্যক্ট। এই আইন স্বাধীনতাপূর্ব হিন্দু
ম্যারেজ সংক্রান্ত আইনে যা, বাংলাদেশে প্রযোজ্য রয়েছে, আমুল পরিবর্তন সাধন
করেছে। ভারতে এই আইনের পরিপন্থী পূর্বস্থিত সকল আইনই বাতিল বলিয়া বিবেচিত
হবে।
- ১৯৫৬ সালের হিন্দু সাকসেশন এ্যক্ট। এই আইন ভারতে হিন্দু উত্তরাধিকার
আইনকে আমুল পরিবর্তন করেছে। এই আইন হিন্দু আইনের উত্তরাধিকার আইনকে এমন
একটি অভিন্ন ও ব্যাপক ব্যবস্থায় পরিণত করেছে যা সকল হিন্দুদের ক্ষেত্রে
সমভাবে প্রযোজ্য। ২০০৫ সালের দ্য হিন্দু সাকসেসন এ্যক্ট হিন্দু মহিলাদের
হিন্দু কোপার্সনারীর সদস্যরূপে স্বীকৃতি দান করেছে।
- ১৯৫৬ সালের হিন্দু মাইনরিটি এ্যন্ড গার্ডিানশিপ এ্যক্ট। এই আইন যে সকল
মৌলিক পরিবর্তন আনয়ন করেছে তাদের মধ্যে স্বাভাবিক অভিভাবকের তালিকা সীমিত
করণ, স্বাভাবিক ও উইলমূলে নিযুক্ত অভিভাবকের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন, ডি
ফ্যাক্টো অভিভাবকের ক্ষমতা রহিতকরণ, মাতার অভিভাবক নিয়োগের ক্ষমতা প্রদান
এবং ৫ বছর বয়সের নিম্নের নাবালক শিশুর তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব মাতাকে
প্রদান ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
- ১৯৫৬ সালের হিন্দু এ্যডপশনন্স এন্ড মেনটেনেন্স এ্যক্ট। এই আইনের অধীনে
পুরুষ ও নারী সকল হিন্দু পুত্র কিংবা কন্যা দত্তক গ্রহণ করতে পারে অথচ
প্রাক-স্বাধীনতা আইনে কেবলমাত্র স্বামী ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত বিধবা দত্তকপুত্র
গ্রহণ করিতে পারিত। এই আইনের অধীনে দত্তকগ্রহণে স্ত্রীর অনুমতির কোন
প্রয়োজন নাই। এই আইনে অবিবাহিতা মহিলা পুত্র দত্তক লইতে পারে এবং দত্তক
গ্রহণে যে কোন গোত্রের পুত্রকে দত্তক লইকে পারবেন।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন