এরপর দীর্ঘদিন কেটে গেছে। পুজোর সময়ও এসে গেল। কিন্তু পুজোর এক সপ্তাহ আগেও এ নিয়ে কোনও কথাবার্তা বা উদ্যোগ দেখা গেল না। হয়ত এ বারও বিবেকানন্দের ইচ্ছাটির পূরণ হল না। কিন্তু হঠাৎই একদিন, তখন পুজোর আর মাত্র চার-পাঁচ দিন বাকি, স্বামীজি কলকাতা থেকে নৌকা করে বেলুড়মঠে ফিরেই ‘রাজা কোথায়? রাজা কোথায়?’ বলে স্বামী ব্রহ্মানন্দ মহারাজের খোঁজ করতে লাগলেন। (স্বামী ব্রহ্মানন্দকে স্বামী বিবেকানন্দ রাজা বলে সম্বোধন করতেন)। স্বামী ব্রহ্মানন্দকে দেখতে পেয়েই বিবেকানন্দ বলে উঠলেন, ‘এবার মঠে প্রতিমা এনে দুর্গাপূজা করতে হবে, তুমি সব আয়োজন করে ফেল।’ সবে আর মাত্র চার-পাঁচটা দিন বাকি রয়েছে। এত কম সময়ের মধ্যে সব আয়োজন কীভাবে করবেন, প্রতিমাই বা পাওয়া যাবে কি না, এই সব ভেবে ব্রহ্মানন্দজি বিবেকানন্দের কাছে দুটো দিন সময় চাইলেন। বিবেকানন্দ বললেন, ‘আমি ভাব-চক্ষে দেখেছি এবার মঠে দুর্গোৎসব হচ্ছে এবং প্রতিমায় মার পূজা হচ্ছে।’ স্বামী ব্রহ্মানন্দজিও তাঁর এক অদ্ভুত কথা স্বামী বিবেকানন্দকে জানালেন। দিন চারেক আগের ঘটনা। ব্রহ্মানন্দজি বেলুড়মঠের গঙ্গাতীরে বসেছিলেন। হঠাৎই দেখলেন দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে মা দুর্গা গঙ্গা পার হয়ে মঠের বেলগাছতলায় এসে উঠলেন।
স্বামীজি আর ব্রহ্মানন্দ মহারাজের মধ্যেকার এই সব কথাবার্তা বেলুড়মঠের অন্যান্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তেই বেশ হই হই পড়ে গেল। ব্রহ্মানন্দ মহারাজ ব্রহ্মাচারী কৃষ্ণলালকে কলকাতার কুমারটুলিতে পাঠালেন কোনও প্রতিমা পাওয়া যাবে কি না দেখে আসতে। আর কী আশ্চর্য! ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল কুমারটুলিতে গিয়ে দেখলেন যে মাত্র একটিই সুন্দর প্রতিমা সেখানে অবশিষ্ট রয়েছে। যিনি বা যাঁরা সেই প্রতিমাটি তৈরি করতে দিয়েছিলেন, সে দিনও পর্যন্ত তাঁরা সেটি নিতে আসেননি। ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল শিল্পীকে ওই প্রতিমাটি পাওয়া যাবে কি না জিজ্ঞাসা করতে শিল্পী একটি দিন দেখে নেওয়ার সময় চাইলেন। বেলুড়মঠে ফিরে এসে এই খবর স্বামী বিবেকানন্দকে জানাতেই তিনি ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলালকে বললেন, ‘যেমন করেই হোক তুমি প্রতিমাখানি নিয়ে আসবে।’
....................................... মণীশ সিংহরায়
ক্রমশ..........................................।
সংগ্রহেঃ-কৃষ্ণকমল
সৌজন্যঃ আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ আশ্বিন ১৪০৯ রবিবার ১৩ অক্টোবর ২০০২
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন