অর্জুন পাণ্ডু ও কুন্তির তৃতীয় পুত্র। অর্জুনের জন্মনাম ছিল কৃষ্ণ। শুভ-কর্মে তাঁর রুচি ছিল বলে পরে তিনি অর্জুন নামে পরিচিত হন। অর্জুনের আরও অনেকগুলি নাম ছিল। পৃথার (কুন্তির জন্মনাম) পুত্র বলে তিনি ওঁকে অনেকে পার্থ বলে সম্বোধন করতেন। ওঁর অন্য নামগুলি হল – ধনঞ্জয়, বিজয়, শ্বেতবাহন, ফাল্গুন, কিরীটী, বিভৎসু , সব্যসাচী , জিষ্ণু ও গুড়াকেশ। অর্জুন ছিলেন কৌরব ও পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের প্রিয়তম শিষ্য। গুরুদক্ষিণা স্বরূপ দ্রোণাচার্য যখন পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের বন্দিত্ব চান, তখন মূলত অর্জুনের বীরত্বতেই তা সম্ভব হয়। ওঁদের শৌর্যবীর্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে ধৃতরাষ্ট্র ও তাঁর পুত্ররা ওঁদের হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন জেনে পাণ্ডবরা বেশ কিছুদিন ছদ্মবেশে ছিলেন।এই সময় ব্রাহ্মণবেশে অর্জুন পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের যজ্ঞবেদিসম্ভূত কন্যা দ্রৌপদী স্বয়ংবর সভায় লক্ষ্যভেদ করে তাঁর বরমাল্য পান। পুত্র ঘরে কি এনেছে না দেখে মাতা কুন্তি, সবাই সমান ভাবে ভাগ করে নেও, বলায় পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গেই দ্রৌপদীর বিবাহ হয়।
দেবর্ষি নারদের উপদেশে পাণ্ডবরা নিয়ম করেছিলেন যে, দ্রৌপদী যে সময়ে এক ভ্রাতার সঙ্গে থাকছেন,সেই সময় অন্য কোনও ভ্রাতা তাঁদের শয়ন-গৃহে প্রবেশ করতে পারবেন না। করলে তাঁকে ১২বছর বনবাস করতে হবে। ঘটনাচক্রে এক ব্রাহ্মণের গোধন রক্ষা করার জন্য অস্ত্র আনতে অর্জুন যুধিষ্ঠির ও কৃষ্ণার শয়ন-গৃহে ঢুকতে বাধ্য হলেন। যুধিষ্ঠির এতে নিয়ম ভঙ্গ হয় নি বললেও, অর্জুন বনবাসে চলে যান।বনবাস সময়কালে একে একে চিত্রাঙ্গদা , সুভদ্রার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় । দ্রুপদ-রাজের কন্যা দ্রৌপদী ছাড়াও অর্জুনের আরও তিনজনকে বিবাহ করেছিলেন। এঁরা হলেন – কৌরব্যনাগের কন্যা উলুপী, মণিপুররাজ চিত্রবাহনের কন্যা চিত্রাঙ্গদা এবং কৃষ্ণ ভগিনী সুভদ্রা। ওঁর চার পুত্রের নাম শ্রুতকীর্তি (দ্রৌপদীর গর্ভজাত) ,ইরাবান্ (উলুপীর গর্ভজাত), বভ্রুবাহন (চিত্রাঙ্গদার গর্ভজাত) ও অভিমন্যু (সুভদ্রার গর্ভজাত)।
অগ্নিদেবের হিতার্থে খাণ্ডব অরণ্য যাতে কৃষ্ণ ও অর্জুন দহনে করতে পারেন,তারজন্য বরুণদেব অর্জুনকে একটি রথ আর সেই সঙ্গে বিখ্যাত গাণ্ডীবধনু ও অক্ষয় তূণ দিয়েছিলেন। এই অস্ত্র পেয়ে অর্জুন বিশেষভাবে বলশালী হন। দ্যূতক্রীড়ায় পরাজিত হয়ে পাণ্ডবরা যখন বনবাস করছিলেন,তখন যুধিষ্ঠিরের আদেশে দিব্যাস্ত্রলাভের জন্য অর্জুন ইন্দ্রলোকে যান। ইন্দ্র তাঁকে মহাদেবের আরাধনা করতে বলেন।তাই করে অর্জুন মহাদেবের কাছ থেকে পাশুপত অস্ত্র পান। এরপর ইন্দ্র নিজেও অর্জুনকে নানাবিধ দিব্যাস্ত্রে শিক্ষা দেন। ইন্দ্রের নির্দেশে ইন্দ্রসখা চিত্রসেন অর্জুনকে গীত ও নৃত্যে পারদর্শী করেন। সেইখানে নৃত্যরতা অপ্সরাদের মধ্যে উর্বশীর দিকে অর্জুন বারবার তাকাচ্ছিলেন বলে, ইন্দ্র উর্বশীকে অর্জুনের সাথে দেখা করতে বলেন। অর্জুন কামনা করে উর্বশী দিকে তাকান নি, উর্বশীকে পুরু বংশের জননী হিসেবে দেখছিলেন। কিন্তু অর্জুন উর্বশীকে প্রত্যাখ্যান করায় উর্বশী অপমানিত হয়ে অর্জুনকে অভিশাপ দিলেন যে, অর্জুনকে নর্তকরূপে স্ত্রীলোকদের মধ্যে নপুংশক হয়ে থাকবেন। উর্বশীর এই অভিশাপ পাণ্ডবরা যখন বিরাটরাজের সভায় অজ্ঞাতবাস করছিলেন,তখন খুব কাজে লেগেছিল। সেখানে অর্জুন বৃহন্নলা সেজে বিরাটরাজের অন্তঃপুরচারিণীগনকে নৃত্য, গীত ইত্যাদি শিক্ষা দিয়েছেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডবদের জয়ের অন্যতম কারণ হল অর্জুনের রণনৈপুন্য। কৌরবদের বহু বীর যুদ্ধকালে ওঁর হস্তে নিহত হয়েছেন। সন্মুখ সমরে ভগদত্ত, জয়দ্রথ, কর্ণকে তিনি বধ করেছেন।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন